আন্তর্জাতিক
গাজা থেকে সেনা সরিয়ে নিতে রাজি ইসরায়েল: ট্রাম্প
ফিলিস্তিনের গাজায় দীর্ঘ প্রায় দুই বছর আগ্রাসন চালানোর পর অবশেষে ভূখণ্ডটি থেকে নিজেদের কিছু সেনা সরিয়ে নিতে রাজি হয়েছে ইসরায়েল। এখন ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস তাদের পক্ষ থেকে শর্ত অনুযায়ী পদক্ষেপ নিলেই তাৎক্ষণিকভাবে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হবে।
শনিবার (৪ অক্টোবর) সামাজিক মাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে দেওয়া এক পোস্টে এমনই ঘোষণা দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। খবর বিবিসির।
সম্প্রতি গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকরে মার্কিন প্রেসিডেন্টের দেওয়া ২০ দফা প্রস্তাবের কিছু অংশ মেনে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে হামাস। স্বাধীনতাকামী সংগঠনটির এমন ঘোষণার পর গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন বন্ধে নতুন আরেক অগ্রগতির কথা জানালেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।
যুদ্ধবিরতির অংশ হিসেবে হোয়াইট হাউস গত সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) একটি মানচিত্র প্রকাশ করেছিল। ইসরায়েলি সেনাদের প্রত্যাহারের বিভিন্ন সীমারেখা দেখানো হয় সেখানে।
ট্রাম্প জানান, এই সীমারেখার মধ্যেই ইসরায়েল প্রাথমিক ধাপে কিছু সেনা প্রত্যাহারে সম্মত হয়েছে। হামাস নিশ্চিত করলেই যুদ্ধবিরতি তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর হবে।
তাড়াতাড়ি পদক্ষেপ না নিলে সব চুক্তি বাতিল হয়ে যাবে বলেও হুঁশিয়ার করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
বিবিসি ভেরিফাইয়ের হিসাব অনুযায়ী, যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলে হোয়াইট হাউসের প্রকাশিত মানচিত্র অনুযায়ী প্রথম ধাপে সেনা প্রত্যাহারের পরও গাজার প্রায় ৫৫ শতাংশ এলাকা ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণে থেকে যাবে।
এদিকে খুব শিগগিরিই গাজায় আটক জিম্মিদের মুক্তির ঘোষণা দিতে পারবেন, এমন আশা প্রকাশ করেছেন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। তিনি দাবি করেছেন, কূটনৈতিক ও সামরিক চাপে ট্রাম্পের প্রস্তাব মেনে নেওয়া ছাড়া হামাসের কাছে অন্য কোনো বিকল্প নেই। দ্রুতই উপত্যকাটি থেকে হামাসের শাসনের সমাপ্তি ঘটানো হবে। এ সময় হামাসকে নিরস্ত্র করার অঙ্গীকারও পুনর্ব্যক্ত করেন নেতানিয়াহু।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, শিগিগিরই মিশরে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। বন্দি বিনিময় এবং যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়ন সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে আলোচনায় বসবে দুই পক্ষ। মার্কিন মধ্যপ্রাচ্য দূত স্টিভ উইটকফ এবং জারেড কুশনারও বৈঠকে অংশ নেবেন।
তবে, হামাসের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের হামলা ও হত্যাযজ্ঞ এখনও চলছে। ফ্লিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠনটি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে এবং দুই বছরের এই হত্যাযজ্ঞ ও অবরোধ অবিলম্বে বন্ধ করার অনুরোধ করেছে।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের নিদের্শ উপেক্ষা করে গাজায় এখনও হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। সবশেষ একদিনে আরও ৭০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হওয়ার পরও গাজার বেসামরিক এলাকা ও শরণার্থী শিবিরগুলোতে একদিনেই ৯৩টি বিমান হামলা চালিয়েছে নেতানিয়াহু বাহিনী।
আন্তর্জাতিক
যুক্তরাষ্ট্রে ১ লাখ কোটি ডলার বিনিয়োগের ঘোষণা সৌদির
আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি পুনর্গঠন এবং ওয়াশিংটনের সঙ্গে সম্পর্ক আরও জোরদার করতে সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান (এমবিএস) বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র সফর করছেন। দেশটিতে সফরকালে সৌদি বিনিয়োগ ৬০০ বিলিয়ন ডলার থেকে বাড়িয়ে ১ ট্রিলিয়ন ডলারে নেওয়ারে বড় ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।
বুধবার (১৯ নভেম্বর) এ তথ্য জানায় বার্তাসংস্থা আনাদোলু।
এর আগের দিন ওয়াশিংটনের হোয়াইট হাউসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে যৌথ ব্রিফিংয়ে এমবিএস বলেন, আমরা আশা করছি আজ বা আগামীকাল ঘোষণা দিতে পারবো যে ৬০০ বিলিয়ন ডলারের প্রকৃত বিনিয়োগ বাড়িয়ে প্রায় ১ ট্রিলিয়ন বা ১ লাখ কোটি ডলারে উন্নীত করছি।
তিনি আরও জানান, প্রযুক্তি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই)সহ বিভিন্ন খাতে দুই দেশের মধ্যে একাধিক বড় চুক্তি হবে, যা ভবিষ্যতে আরও বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি করবে।
ক্রাউন প্রিন্সের বক্তব্যে বিস্ময় প্রকাশ করে ট্রাম্প বলেন, মানে, ৬০০ বিলিয়ন এখন ১ ট্রিলিয়ন হবে? জবাবে এমবিএস বলেন, হ্যাঁ, অবশ্যই। আজ যে চুক্তিগুলো স্বাক্ষর হচ্ছে, সেগুলোই এই বৃদ্ধিকে সম্ভব করবে।
ট্রাম্প সৌদি বিনিয়োগের প্রশংসা করে বলেন, আপনি যুক্তরাষ্ট্রে ৬০০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগে সম্মত হয়েছেন-এজন্য ধন্যবাদ। আর যেহেতু আমার বন্ধু, তাই হয়তো এই অঙ্ক ১ ট্রিলিয়নেও পৌঁছাতে পারে। তবে এ বিষয়ে আমাকে আরও কিছু কাজ করতে হবে।
যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত সৌদি রাষ্ট্রদূত প্রিন্সেস রিমা বিনত বান্দার আল সউদ এ বৈঠককে সৌদি-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের জন্য গুরুত্বপূর্ণ দিন বলে উল্লেখ করেন।
তিনি জানান, দুই দেশ বেশ কয়েকটি বড় দ্বিপক্ষীয় চুক্তি করেছে। যদিও এসব চুক্তির বিস্তারিত তিনি প্রকাশ করেননি।
রিমা বলেন, এই চুক্তিগুলো দুই দেশে বিনিয়োগ বাড়ানোর পাশাপাশি সৌদি ও মার্কিন নাগরিকদের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে এবং আঞ্চলিক-আন্তর্জাতিক নিরাপত্তায় আমাদের যৌথ প্রতিশ্রুতি আরও জোরদার করবে।
আন্তর্জাতিক
বিশ্ববাজারে ফের বাড়লো স্বর্ণের দাম
যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভের সর্বশেষ বৈঠকের কার্যবিবরণী এবং আসন্ন চাকরি প্রতিবেদনের দিকে বিনিয়োগকারীদের গভীর মনোযোগের মধ্যেই বিশ্ববাজারে সোনার দাম বৃদ্ধি দেখিয়েছে। নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে মূল্যবান ধাতুটির প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ স্পষ্ট হওয়ায় দাম ১ শতাংশের বেশি বেড়ে গেছে। বুধবার (১৯ নভেম্বর) রয়টার্সের এক প্রতিবেদন থেকে এই তথ্য জানা যায়।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, বুধবার বাংলাদেশ সময় বিকাল ৪টা ৪৭ মিনিট (১০.৪৭ জিএমটি) পর্যন্ত স্পট সোনার দাম ১ দশমিক ১ শতাংশ বেড়ে প্রতি আউন্সে ৪ হাজার ১১২ দশমিক ৫০ ডলারে দাঁড়িয়েছে। একইসঙ্গে ডিসেম্বরে সরবরাহযোগ্য মার্কিন ফিউচার সোনার দামও ১ দশমিক ১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৪ হাজার ১১২ দশমিক ৯০ ডলার হয়েছে।
এফএক্সটিএম-এর সিনিয়র রিসার্চ অ্যানালিস্ট লুকমান ওটুনুগা বলেন, আগের সেশনে সোনার দাম মনস্তাত্ত্বিক সীমা ৪ হাজার ডলারের কাছ থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর পর বাজারে সতর্কতার মধ্যেও আজ সোনা কিছুটা ঝলমল করছে।
বিনিয়োগকারীরা এখন অপেক্ষা করছেন ফেডের অক্টোবর বৈঠকের কার্যবিবরণী এবং বৃহস্পতিবার প্রকাশিত হতে যাওয়া সেপ্টেম্বরের চাকরি প্রতিবেদনের জন্য। রয়টার্স জরিপ অনুযায়ী, সেপ্টেম্বর মাসে যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৫০ হাজার নতুন চাকরি সৃষ্টির প্রত্যাশা করা হচ্ছে।
ওটুনুগা আরও বলেন, যদি নতুন অর্থনৈতিক তথ্য সুদের হার কমানোর পক্ষে যায়, তাহলে সোনার দাম ৪ হাজার ১৩০ থেকে ৪ হাজার ২০০ ডলার পর্যন্ত উঠতে পারে। তবে ফেড কর্মকর্তাদের কঠোর মন্তব্য বা প্রত্যাশার চেয়ে শক্তিশালী অর্থনৈতিক তথ্য এলে দাম আবার ৪ হাজার ডলারের নিচে নামতে পারে।
নতুন তথ্য অনুযায়ী, অক্টোবরের মধ্যভাগে যুক্তরাষ্ট্রে বেকারভাতা গ্রহণকারীর সংখ্যা দুই মাসের মধ্যে সর্বোচ্চে পৌঁছেছে। অন্যদিকে, সুদের হার কমানোর সম্ভাবনা নিয়ে ট্রেডারদের প্রত্যাশা কমে ৪৬ শতাংশে নেমেছে, যা এক সপ্তাহ আগেও ৬৩ শতাংশ ছিল।
বিশ্লেষকদের মতে, ফেডের বৈঠকের কার্যবিবরণী থেকে নীতিনির্ধারকদের মধ্যে মুদ্রাস্ফীতি ও শ্রমবাজার নিয়ে মতপার্থক্য কতটা গভীর—সে বিষয়ে ধারণা পাওয়া যাবে। সুদহার কমার সম্ভাবনা থাকলে সোনার জন্য তা ইতিবাচক পরিবেশ তৈরি করে, আর শ্রমবাজার শক্তিশালী থাকলে সোনার দাম চাপের মুখে পড়ে।
অন্যান্য মূল্যবান ধাতুর বাজারেও উত্থান দেখা গেছে। স্পট সিলভারের দাম ৩ দশমিক ১ শতাংশ বেড়ে ৫২ দশমিক ২৭ ডলার, প্লাটিনাম ২ দশমিক ১ শতাংশ বেড়ে ১ হাজার ৫৬৬ দশমিক ৩২ ডলার এবং প্যালাডিয়াম ২দশমিক ৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ১ হাজার ৪৩৩ দশমিক ৪৬ ডলার প্রতি আউন্স হয়েছে।
আন্তর্জাতিক
বিশ্বে ক্ষুধার্তদের খাবার সরবরাহে ১৩ বিলিয়ন ডলার ঘাটতি: জাতিসংঘ
জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) সতর্ক করে বলেছে, অর্থায়ন কমে যাওয়ায় ২০২৬ সালে তীব্র ক্ষুধার মুখে থাকা ৩১ কোটি ৮০ লাখ মানুষের মধ্যে এক-তৃতীয়াংশকে খাদ্য সরবরাহ কঠিন হয়ে পড়বে।
রোম থেকে এএফপি জানায়, মঙ্গলবার ডব্লিউএফপির এক বিবৃতিতে বলা হয়, বিশ্বব্যাপী মানবিক সহায়তার অর্থায়ন হ্রাস পাওয়ায় ডব্লিউএফপি প্রায় এক-তৃতীয়াংশ (প্রায় ১১ কোটি) ক্ষুধার্ত মানুষকে খাদ্য সহায়তায় অগ্রাধিকার দিতে বাধ্য হচ্ছে।
এতে আনুমানিক ১৩ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন হবে। তবে সংস্থাটি সতর্ক করে বলেছে, ‘বর্তমান অর্থায়নের পূর্বাভাস অনুযায়ী ডব্লিউএফপি হয়তো লক্ষ্যকৃত অর্থের অর্ধেকের কাছাকাছি পাবে।’
ডব্লিউএফপি’র সবচেয়ে বড় দাতা যুক্তরাষ্ট্র। তবে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জাতিসংঘ সংস্থাগুলোর অধীনে বিদেশি সহায়তা কমিয়ে দিয়েছেন। অন্যান্য বড় দাতা, বিশেষ করে কিছু ইউরোপীয় অনেক দেশও তাদের মানবিক বাজেট কমিয়েছে।
ডব্লিউএফপি জানিয়েছে, সংঘাত, চরম আবহাওয়া এবং অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে ২০১৯ সালের তুলনায় তীব্র ক্ষুধার মুখোমুখি মানুষের সংখ্যা দ্বিগুণ হয়ে ৩১ কোটি ৮০ লাখে পৌঁছেছে।
জাতিসংঘের সংস্থাগুলো এ বছর গাজা ও সুদানের কিছু অংশে দুর্ভিক্ষ ঘোষণা করেছে। ডব্লিউএফপি’র নির্বাহী পরিচালক সিন্ডি ম্যাককেইন এটিকে ‘একবিংশ শতাব্দীতে সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য’ বলে অভিহিত করেছেন।
২০২৬ সালের গ্লোবাল আউটলুক প্রতিবেদনের ভূমিকায় তিনি লিখেছেন, বিশ্বের প্রতিক্রিয়া ‘ধীর, বিচ্ছিন্ন এবং অর্থায়নহীন’ রয়ে গেছে।
তিনি লিখেছেন, ‘বিশ্বব্যাপী সহায়তা এখন মোট চাহিদার অর্ধেকেরও কম পূরণ করছে। খাদ্য সহায়তায় ব্যাপক কাটছাঁট হয়েছে। প্রায় সব কার্যক্রমেই খাদ্য ও নগদ অর্থ কমাতে হয়েছে এবং কোন ঝুঁকিপূর্ণ গোষ্ঠীকে সহায়তা দেওয়া হবে তা অগ্রাধিকার দিতে হয়েছে।’
একই সময়ে সহায়তা কর্মীদের ওপর হামলা বেড়েছে, যা আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের প্রতি ক্রমবর্ধমান অবহেলা প্রকাশ করছে।
২০২৬ সালে ক্ষুধার মুখে থাকা মানুষের মধ্যে ৪১ মিলিয়নকে জরুরি বা তারও বেশি সংকটাপন্ন অবস্থায় শ্রেণিবদ্ধ করা হয়েছে।
গত সপ্তাহে জাতিসংঘের দুটি খাদ্য সংস্থা-ডব্লিউএফপি এবং খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) হাইতি থেকে দক্ষিণ সুদান পর্যন্ত ১৬টি ‘ক্ষুধার হটস্পট’ চিহ্নিত করেছে। তারা বলেছে, তহবিল ঘাটতি ইতোমধ্যেই পরিস্থিতিকে আরও খারাপের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।
এক যৌথ প্রতিবেদনে সংস্থাগুলো জানিয়েছে, ঝুঁকিপূর্ণদের সহায়তায় প্রয়োজনীয় ২৯ বিলিয়ন ডলারের বিপরীতে তারা এখন পর্যন্ত মাত্র ১০.৫ বিলিয়ন ডলার পেয়েছে।
এমকে
আন্তর্জাতিক
যুক্তরাষ্ট্রে ১ লাখ কোটি ডলার বিনিয়োগের ঘোষণা সৌদির
যুক্তরাষ্ট্রে বিনিয়োগ ব্যাপকভাবে বাড়াচ্ছে সৌদি আরব। দেশটির ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান (এমবিএস) এই ঘোষণা দিয়ে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রে তাদের বিনিয়োগ ৬০০ বিলিয়ন ডলার থেকে বাড়িয়ে প্রায় ১ ট্রিলিয়ন বা ১ লাখ কোটি ডলারে নেওয়া হবে।
বুধবার (১৯ নভেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা আনাদোলু।
মঙ্গলবার ওয়াশিংটনে হোয়াইট হাউসে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পাশে দাঁড়িয়ে সাংবাদিকদের মোহাম্মদ বিন সালমান বলেন, “আমার মনে হয়, আজ বা আগামীকাল আমরা ঘোষণা করতে পারবো যে এই ৬০০ বিলিয়ন ডলারের প্রকৃত বিনিয়োগে বাড়িয়ে আমরা প্রায় ১ ট্রিলিয়ন ডলারে উন্নীত করতে যাচ্ছি।”
এমবিএস জানান, প্রযুক্তি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) থেকে শুরু করে বিভিন্ন খাতে দুই দেশ বহু চুক্তি স্বাক্ষর করবে, যা “বড় ধরনের বিনিয়োগ সুযোগ তৈরি করবে।”
এ সময় ট্রাম্প কিছুটা বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, “মানে আপনি বলছেন, ৬০০ বিলিয়ন এখন ১ ট্রিলিয়ন হবে?” জবাবে এমবিএস বলেন, “নিশ্চিতভাবেই, কারণ আজ যে চুক্তিগুলো আমরা করছি, সেগুলোই এ বিনিয়োগ বৃদ্ধিকে সহজ করবে।”
ট্রাম্প এসময় সৌদি ক্রাউন প্রিন্সকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, “আমি আপনাকে ধন্যবাদ জানাতে চাই, কারণ আপনি যুক্তরাষ্ট্রে ৬০০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগে সম্মত হয়েছেন। আর যেহেতু তিনি আমার বন্ধু, তাই হয়তো এটি ১ ট্রিলিয়নও হতে পারে— তবে আমাকে একটু এটা নিয়ে কাজ করতে হবে।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা ৬০০ বিলিয়ন নিশ্চিত ভাবেই ধরতে পারি, তবে এই অংক আরও কিছুটা বাড়তেও পারে।”
যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূত প্রিন্সেস রিমা বিনত বান্দার আল সউদ প্রোসডেন্ট ট্রাম্প ও ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের বৈঠককে “সৌদি-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের জন্য গুরুত্বপূর্ণ দিন” বলে উল্লেখ করেছেন।
তিনি জানান, দুই দেশ কয়েকটি বড় দ্বিপক্ষীয় চুক্তি করেছে। যদিও এসব চুক্তির বিস্তারিত তিনি উল্লেখ করেননি।
সৌদি এই রাষ্ট্রদূত আরও বলেন, “এই চুক্তিগুলো দুই দেশে বিনিয়োগ বাড়াবে, সৌদি ও মার্কিন নাগরিকদের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে এবং আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক নিরাপত্তায় আমাদের যৌথ প্রতিশ্রুতি আরও শক্তিশালী করবে।”
আন্তর্জাতিক
গাজায় আন্তর্জাতিক বাহিনী মোতায়েনে জাতিসংঘের সমর্থন
ফিলিস্তিনের গাজা ইস্যুতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ২০ দফা পরিকল্পনাকে সমর্থন করে যুক্তরাষ্ট্রের খসড়া প্রস্তাব পাস করেছে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ।
নিরাপত্তা পরিষদের ১৩টি সদস্য দেশ এই প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেয়। তবে গাজার শাসকদল হামাস এই প্রস্তাবকে সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছে। মঙ্গলবার (১৮ নভেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, গাজা সংকট সমাধানে ডোনাল্ড ট্রাম্পের ২০ দফা পরিকল্পনা অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রের খসড়া প্রস্তাবটির পক্ষে ভোট দিয়েছে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ। এই পরিকল্পনায় গাজার জন্য একটি আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা বাহিনী (আইএসএফ) গঠনের কথা রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে, একাধিক দেশ এই বাহিনীতে সদস্য পাঠাতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে, তবে দেশগুলোর নাম প্রকাশ করা হয়নি। নিরাপত্তা পরিষদের ভোটাভুটিতে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও সোমালিয়াসহ ১৩টি দেশ প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেয়। কোনও দেশ বিরোধিতা করেনি। তবে রাশিয়া ও চীন ভোটদানে বিরত থাকে।
অবশ্য হামাস এই প্রস্তাবটি প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের দাবি, এটি ফিলিস্তিনিদের অধিকারের দাবি পূরণ করে না। টেলিগ্রামে দেওয়া বিবৃতিতে হামাস বলেছে, পরিকল্পনাটি গাজায় “আন্তর্জাতিক অভিভাবকত্ব চাপিয়ে দিচ্ছে”, যা ফিলিস্তিনি জনগণ ও তাদের বিভিন্ন গোষ্ঠী মানতে রাজি নয়।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, গাজার ভেতরে আন্তর্জাতিক বাহিনীকে দায়িত্ব দেওয়া — যেমন প্রতিরোধ গোষ্ঠীগুলোকে নিরস্ত্র করা — এই বাহিনীকে নিরপেক্ষ অবস্থান থেকে সরিয়ে দেবে।
খসড়া অনুযায়ী, আইএসএফ-এর একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব হবে হামাসসহ “অ-রাষ্ট্রীয় সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর অস্ত্র স্থায়ীভাবে নিষ্ক্রিয় করা”। পাশাপাশি বেসামরিক মানুষের সুরক্ষা নিশ্চিত করা এবং মানবিক সহায়তার রুটগুলো নিরাপদ রাখা।
আর এজন্য ট্রাম্পের শান্তি পরিকল্পনা অনুযায়ী হামাসকে অস্ত্র জমা দিতে হবে। এছাড়া আইএসএফ ইসরায়েল ও মিসরের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। একই সঙ্গে গাজায় নতুন করে প্রশিক্ষিত একটি ফিলিস্তিনি পুলিশ গঠনের কথাও বলা হয়েছে। যদিও এতদিন পুলিশ বাহিনী হামাসের আওতাধীন ছিল।
জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মাইক ওয়াল্টজ বলেন, আইএসএফ-এর কাজ হবে “এলাকা সুরক্ষিত রাখা, গাজাকে সামরিকীকরণমুক্ত করা, সন্ত্রাসী অবকাঠামো ভেঙে ফেলা, অস্ত্র অপসারণ এবং ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।”
এমকে



