জাতীয়
১ জানুয়ারি বই পাচ্ছে না কোটির বেশি শিক্ষার্থী
নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরু হতে বাকি মাত্র তিন দিন। অথচ মাধ্যমিক স্তরের সাড়ে ১১ কোটির বেশি পাঠ্যবই এখনো ছাপাই হয়নি। ফলে ১ জানুয়ারি নতুন বইয়ের ঘ্রাণ থেকে বঞ্চিত হতে যাচ্ছে মাধ্যমিকের ১ কোটির বেশি শিক্ষার্থী। জানা গেছে, পাঠ্যবই ছাপানোর দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তুক বোর্ডের (এনসিটিবি) এক প্রভাবশালী সদস্যের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা একটি সিন্ডিকেটের কারণেই এ অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে বই হাতে পেতে অন্তত মার্চ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে শিক্ষার্থীদের।
এনসিটিবির তথ্যমতে, ২০২৬ শিক্ষাবর্ষের জন্য প্রায় ৩০ কোটি পাঠ্যবই ছাপানো হবে। এর মধ্যে ২১ কোটি ৪৩ লাখ ২৪ হাজার বই মাধ্যমিকের, বাকিগুলো প্রাথমিক স্তরের। এরই মধ্যে প্রাথমিক ও ইবতেদায়ির পাঠ্যবই ছাপিয়ে উপজেলা পর্যায়ে পাঠানো হলেও ঘাপলা বেধেছে মাধ্যমিক স্তরের বই নিয়ে। বছর শেষ হলেও এখনো ছাপার বাকি সাড়ে ১১ কোটি পাঠ্যবই। ফলে বই ছাড়া ক্লাসে যেতে হবে ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির বেশিরভাগ শিক্ষার্থীকে।
অভিযোগ উঠেছে, এনসিটিবিতে বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের সুবিধাভোগী একজন সদস্য ও তার বলয়ে থাকা আরও চারজন কর্মকর্তা বই আটকে সরকারকে বেকায়দায় ফেলার তৎপরতায় লিপ্ত। বই ছাপার কাজে গতি বাড়ানোর পরিবর্তে গতি কমিয়ে দেওয়ার কাজ করছেন প্রতিষ্ঠানটির সদস্য ড. রিয়াদ চৌধুরী, ঊর্ধ্বতন ভান্ডার কর্মকর্তা আসাফ-উদ-দৌলা, সচিব ও তার দপ্তরের ‘আ’ আদ্যক্ষরের এক কর্মকর্তা। পাঁচটি পেপার মিলের সঙ্গে অঘোষিত চুক্তি করে বড় অঙ্কের কমিশন বাণিজ্যে লিপ্ত এই চক্র। তাদের পছন্দের বাইরের মিল থেকে কাগজ কিনলে ইন্সপেকশন এজেন্ট দিয়ে তা বাতিল করানো হচ্ছে। ফলে প্রেস মালিকরা ওইসব পেপার মিল থেকে কাগজ কিনতে বাধ্য হচ্ছে।
এনসিটিবির কর্মকর্তারা বলছেন, শ্রেণিভিত্তিক বই ছাপানোর ক্ষেত্রে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা অষ্টম শ্রেণিতে। এই শ্রেণিতে ৪ কোটি ২ লাখ বইয়ের বিপরীতে ছাপা হয়েছে মাত্র ১৮ লাখ ৯ হাজার বই, যা মোট বইয়ের মাত্র সাড়ে ৪ শতাংশ। সপ্তম শ্রেণিতে ৪ কোটি ১৫ লাখ বইয়ের মধ্যে ছাপা হয়েছে ৭০ লাখ ৫৫ হাজার। ষষ্ঠ ও নবম শ্রেণির অবস্থা কিছুটা ভালো হলেও তা সন্তোষজনক নয়। ষষ্ঠ শ্রেণিতে ৪ কোটি ৪৩ লাখ বইয়ের মধ্যে ছাপা হয়েছে ২ কোটি ৪৩ লাখ ৬৫ হাজার বই আর নবম শ্রেণিতে ৫ কোটি ৭০ লাখ বইয়ের বিপরীতে ছাপা হয়েছে ৩ কোটি ৪৭ লাখ ৭০ হাজার বই। নবম শ্রেণিতে এখনো ছাপার বাকি ২ কোটি ২০ লাখের বেশি বই।
সময়মতো বই ছাপা না হওয়ার কারণ হিসেবে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ভাষ্য, নভেম্বরের মধ্যে সব বই উপজেলা পৌঁছানোর লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয় বছরের শুরুতে। গত মে মাসে দরপত্র আহ্বান করা হয়। কিন্তু সেখানে এক কোটির বেশি বই ছাপার কাজ পায় আওয়ামী লীগের সাবেক মন্ত্রী মোস্তফা জব্বারের ভাই রব্বানী জব্বার। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের ঘনিষ্ঠ মাস্টার সিমেক্স প্রেসের মালিক দেওয়ান আলী কবীর, শেখ হাসিনাকে নিয়ে একাধিক বই ছাপানো প্রতিষ্ঠান আগামী প্রকাশনী, তার ভাইয়ের প্রতিষ্ঠান অনিন্দ্য প্রেস, ডিএমপির পলাতক পুলিশ কমিশনার হাবিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠের প্রেস বারতোবাসহ অন্তত ১৫টি আওয়ামীপন্থি প্রেস মালিককে কাজ দেয় এনসিটিবি। পরে এসব অভিযোগ আসার পর ষষ্ঠ-অষ্টম শ্রেণির ৬০৩ কোটি টাকার দরপত্র আটকে দেয় সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ (পারচেজ কমিটি)।
সূত্রমতে, পরে দৃশ্যমান পরিবর্তন না এনে এনসিটিবি পুনঃদরপত্র আহ্বান করে। সেই দরপত্রেই এনসিটিবির সদস্য রিয়াদ চৌধুরীর বলয়ের থাকা দুটি বড় প্রেসকে একচেটিয়া কাজ পাইয়ে দেওয়ার রফাদফা হয় এবং সে অনুযায়ী প্রেস দুটি ষষ্ঠ শ্রেণি দরপত্রে ফর্মাপ্রতি (৮ পৃষ্ঠায় এক ফর্মা) দর দেয় ২ টাকা ২০ পয়সা। অথচ আগের দর ছিল গড়ে ফর্মাপ্রতি ৩ টাকা ১৯ পয়সা। অর্থাৎ ফর্মাপ্রতি প্রায় ১ টাকা কম দরে ষষ্ঠ শ্রেণির ১০০ লটের মধ্যে ৮৬টি লট বাগিয়ে নেন সিন্ডিকেটভুক্ত দুটি প্রতিষ্ঠান। অস্বাভাবিকভাবে কম দরের এই প্রস্তাব দেখে অন্য প্রেসগুলো প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির দরপত্রে আরও কমে ফর্মাপ্রতি গড়ে ১ টাকা ৮০ পয়সা দর দেয়। এখন লোকসান সামাল দিতে এসব প্রেস নিম্নমানের কাগজে বই ছাপার কৌশল নিচ্ছে।
দুটি প্রেসকে সুবিধা দিতে কাগজের মানে ছাড়: ২০২৬ শিক্ষাবর্ষে মানসম্মত বই ছাপার কথা বলে কাগজের মানে একাধিক কঠোর শর্ত আরোপ করে এনসিটিবি। এর মধ্যে ছিল শিশুদের চোখের সুরক্ষায় কাগজের বাস্টিং ফ্যাক্টর ১৬ থেকে বাড়িয়ে ২০ শতাংশ, জিএসএম ৮২ থেকে ৮৫ গ্রাম এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণভাবে অপটিক্যাল ব্রাইটনিং এজেন্টমুক্ত (ওবিএ) কাগজ ব্যবহারের শর্ত। পাশাপাশি কাগজের ‘অপাসিটি (কাগজের এক পৃষ্ঠার লেখা যেন অন্য পৃষ্ঠা থেকে দেখা না যায়) ৭০ জিএসএম কাগজের জন্য ৮৫ এবং ৮০ জিএসএমের জন্য ৯০ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়, যেখানে মিল মালিকরা বলছেন, এমন কাগজ উৎপাদন করা পেপার মিলের পক্ষে অসম্ভব।
এনসিটিবি সূত্র জানায়, আগের দরপত্রে প্রাথমিক স্তর, নবম শ্রেণি ও ইবতেদায়ির ১৮ কোটি বেশি বই ছাপানো প্রায় শেষ। কিন্তু ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণির দরপত্র বাতিল হওয়ার পরপরই হঠাৎ করে কাগজের মানে শিথিলতা আনা হয়। বাস্টিং ফ্যাক্টর ২০ থেকে কমিয়ে ১৮ এবং ওবিএমুক্ত কাগজের পরিবর্তে ওবিএযুক্ত কাগজ ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হয়। অর্থাৎ, একই শিক্ষাবর্ষ, একই প্রাক্কলন ঠিক রেখে কোনো সুস্পষ্ট কারণ ছাড়াই কাগজের মানে ছাড় দেয় এনসিটিবি।
দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, এনসিটিবির সদস্য রিয়াদ চৌধুরী বাতিল হওয়া তিনটি শ্রেণির বইয়ে নির্দিষ্ট কয়েকটি পছন্দের প্রেসকে বেশি কাজ পাইয়ে দিতে এমন সিদ্ধান্ত নেন। এতে তার পছন্দে দুটি প্রেস শুধু ষষ্ঠ শ্রেণিতে ১০০ লটের বিপরীতে ৭০ লটের কাজ পায়। অন্যদিকে এনসিটিবির একাধিক কর্মকর্তার দাবি, বাস্টিং ফ্যাক্টর ২০, ওবিএমুক্ত এবং ৮৫-৯০ শতাংশ অপাসিটি—এই তিনটি শর্ত একসঙ্গে পূরণ করার সক্ষমতা বাংলাদেশের কোনো পেপার মিলেরই নেই। বাস্তবে বাস্টিং ফ্যাক্টর বাড়ালে ওবিএ আসে, আবার ওবিএমুক্ত হলে কাঙ্ক্ষিত অপাসিটি পাওয়া যায় না। তারপরও কেন কাগজের এমন মান ঠিক করা হয় জানতে চাইলে রিয়াদ চৌধুরী বলেন, পেপার মিল, প্রেস মালিক, বিএসটিআই ও বিসিএসআইআরের বিশেষজ্ঞদের একাধিক বৈঠকের পরই মান নির্ধারণ করা হয়; কিন্তু কাজ শুরু হলে সবাই সেই মানের কাগজ দিতে পারছিল না। পরে সবার মতামতের ভিত্তিতে স্পেসিফিকেশন (মান) কিছুটা কমানো হয়েছে। যাতে কয়েকটি প্রেসের কাছে জিম্মি না হই।
আগের মানে কাগজ দিয়ে প্রাথমিক, নবম ও ইবতেদায়ি স্তরে প্রায় ১৭ কোটি বই কীভাবে ছাপানো হলো—এমন প্রশ্নের সরাসরি উত্তর দিতে পারেননি রিয়াদ চৌধুরী। তিনি বলেন, পরিস্থিতির কারণে অনেক কিছু করতে হয়। যদি দরপত্র বাতিল না হতো তাহলে কী করতেন—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘যদি’র কোনো উত্তর নেই। তবে ছাপা হওয়া বইয়ে বাস্টিং এবং অপাসিটিতে আনঅফিসিয়ালটি বিশেষ ছাড় দিয়েছে এনসিটিবি।
সূত্র বলছে, গত বছর বই ছাপা নিয়ে বড় ধরনের কেলেঙ্কারি ঘটে। বহিষ্কৃত এনসিপি নেতা গাজী সালাউদ্দিন তানভীরের নেতৃত্বে একটি সিন্ডিকেট নির্দিষ্ট পেপার মিল থেকে কাগজ কিনতে বাধ্য করা হয় প্রেসগুলোকে। একপর্যায়ে ২৮ শতাংশ শুল্ক মওকুফ করে বিদেশ থেকে ১০ হাজার টন কাগজ আমদানি করার সুযোগ দেয় এনসিটিবি। সেখানে তানভীর এবং রিয়াদ চৌধুরী সিন্ডিকেট ২৮ কোটি টাকা কমিশন বাণিজ্য করে। এ নিয়ে গণমাধ্যমে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। এরপর দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), এনসিপির বহিষ্কৃত নেতা তানভীর এবং ৩৬টি প্রেসের মালিক জিজ্ঞাসাবাদ করেন দুদকের সহকারী পরিচালক এস এম রাশেদুল হাসানের নেতৃত্বে একটি দল। লেটার এন কালার প্রেসে মালিক শেখ সিরাজ উদ্দিন, মাস্টার সিমেক্স মালিক দেওয়ান আলী কবীরসহ একাধিক প্রেস জিজ্ঞাসাবাদে কাগজ কেনাকাটায় দুর্নীতির তথ্য পায় সংস্থাটি। অথচ এই দুর্নীতিতে সরাসরি যুক্ত থেকেও অদৃশ্য কারণে ছাড় পায় এনসিটিবির ওই সময়ের চেয়ারম্যান রিয়াজুল হাসান, সচিব আল ফিরোজ ফেরদৌস ও সদস্য (পাঠ্যপুস্তক) ড. রিয়াদ চৌধুরী। যদিও চেয়ারম্যানের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ আটকে যায় আর সচিব আল ফিরোজ ফেরদৌসকে ওএসডি করা হয়, তবে রিয়াদ চৌধুরী আছেন বহাল তবিয়তে। এনসিটিবিতে বসে এখনো সব কলকাঠি নাড়েন তিনি। তাকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় ৯ বার ফাইল উঠালেও সচিবের দপ্তরে থাকা একজন কর্মকর্তা তা আটকে দেন।
এ বিষয়ে যুগ্ম সচিব (কলেজ-১) খোদেজা খাতুন বলেন, উনার বিষয়ে আমাদের কাছে প্রচুর অভিযোগ আছে। তার বদলির বিষয়টি নিয়ে কী হচ্ছে, তা সচিব ও উপদেষ্টার দপ্তর ভালো বলতে পারবেন।
৪৫ কোটি টাকা কমিশন বাণিজ্যে মন্ত্রণালয়-এনসিটিবির ৬ কর্মকর্তা: প্রেস মালিকদের অভিযোগ, মাধ্যমিক পর্যায়ে চারটি শ্রেণির বই ছাপানো ঘিরে মন্ত্রণালয় ও এনসিটিবির ছয়জন কর্মকর্তার সিন্ডিকেট কমিশন বাণিজ্য যুক্ত হয়েছেন। ২১ কোটি বই ছাপাতে ৬৫ হাজার টন কাগজ লাগবে। দেশে শতাধিক কাগজ মিল থাকলেও এনসিটিবি মাত্র পাঁচটি ছাড়া অন্য মিলের কাগজ অনুমোদন দিচ্ছে না। সিন্ডিকেট কাগজের টনপ্রতি ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা কমিশন বাণিজ্য করছে। শুধু মাধ্যমিক স্তরেই তারা ৪৫ কোটি টাকা কমিশন বাণিজ্য করছে।
প্রেস মালিকরা বলছেন, বর্তমান কাগজের দাম টনপ্রতি ১ লাখ ১৫ হাজার থেকে ১ লাখ ১৭ হাজারের মধ্যে। এনসিটিবি সব পেপার মিল থেকে কাগজ কেনার সুযোগ দিলে কাগজের দাম টনপ্রতি ১ লাখ ১০ হাজার টাকার নিচে নেমে আসবে। কিন্তু এনসিটিবির কাগজ সিন্ডিকেট বাণিজ্যের কারণে তা সম্ভব হচ্ছে না। এ সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করেন ভান্ডার কর্মকর্তা
আসাফ-উদ-দৌলা এবং অন্য দপ্তর থেকে সচিবের দপ্তরে আসা এক কর্মকর্তা, যিনি এনসিটিবির ওই সিন্ডিকেটকে রক্ষায় ফান্ড তৈরি করে বিভিন্ন জায়গায় বিতরণ করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
সার্বিক বিষয়ে এনসিটিবির চেয়ারম্যানের অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করা মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. মাহবুবুল হক পাটওয়ারী বলেন, দরপত্র বাতিল হওয়ায় ষষ্ঠ-অষ্টম শ্রেণিতে একটু দেরি হচ্ছে। এই তিন শ্রেণি বাদে অন্য ক্লাসের বই শিক্ষার্থীরা পেয়ে যাবে এমন আশা তার। এনসিটিবির কাগজ সিন্ডিকেটের বিষয়ে তার জানা নেই মন্তব্য করে চেয়ারম্যান বলেন, আমরা চেষ্টা করছি সব প্রেসের প্রতি সমান আচরণ করতে।
এনসিটিবি সিন্ডিকেট করে পেপার মিল থেকে কাগজ কেনাচ্ছে বলে ওঠা অভিযোগটি সঠিক নয় বলে দাবি করেছেন এনসিটিবির সচিব মো. সাহতাব উদ্দিন। এমন সুযোগ এনসিটিবির আছে কি না, সে বিষয়ে তিনি এই প্রতিবেদককে আরও খোঁজ নিতে বলেন।
এমকে
জাতীয়
হাদি হত্যার বিচার ২৪ দিনের মধ্যে শেষ করাসহ চার দাবি
শহীদ শরিফ ওসমান বিন হাদি হত্যার বিচার ২৪ দিনের মধ্যে শেষ করাসহ চার দফা দাবি জানিয়েছে ইনকিলাব মঞ্চ। রবিবার (২৮ ডিসেম্বর) রাত পৌনে ১১টার দিকে মঞ্চের ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে এসব দাবি তুলে ধরা হয়।
চার দফা দাবি হলো-
১. খুনি, খুনের পরিকল্পনাকারী, খুনের সহায়তাকারী, পলায়নে সহযোগী, আশ্রয়দাতাসহ পুরো খুনিচক্রের আগামী ২৪ দিনের মধ্যে বিচারকার্য সম্পন্ন করতে হবে।
২. বাংলাদেশে অবস্থানরত সব ভারতীয়দের ওয়ার্ক পারমিট বাতিল করতে হবে।
৩. ভারত তার অভ্যন্তরে আশ্রয় নেওয়া সব খুনিদের ফেরত দিতে অস্বীকৃতি জানালে ভারতের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা দায়ের করতে হবে।
৪. সিভিল মিলিটারি ইন্টেলিজেন্স এর মধ্যে ঘাপটি মেরে লুকিয়ে থাকা ফ্যাসিস্টের দোসরদের চিহ্নিত করে গ্রেফতার ও বিচারের মুখোমুখি করতে হবে।
এদিকে, ওসমান হাদি হত্যার বিচার দাবিতে চলমান অবরোধ কর্মসূচি বিষয়ে নতুন ঘোষণা দিয়েছে ইনকিলাব মঞ্চ। এতে বলা হয়েছে, ঢাকা বাদে বিভাগীয় শহরগুলোতে অবরোধ কর্মসূচি রাত ৮টায় সমাপ্ত করার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে। পরবর্তী কর্মসূচি জানিয়ে দেওয়া হবে।
গত ১২ ডিসেম্বর শুক্রবার দুপুরে জুমার নামাজের পর গণসংযোগ শেষে ফেরার পথে রাজধানীর বিজয়নগরে বক্স কালভার্ট সড়কে চলন্ত রিকশায় থাকা ওসমান হাদিকে গুলি করে সন্ত্রাসীরা।
উন্নত চিকিৎসার জন্য ওসমান হাদিকে সিঙ্গাপুরে পাঠিয়েছিল অন্তর্বর্তী সরকার। তবে তাকে বাঁচানো যায়নি। গত ১৮ ডিসেম্বর সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
১৯ ডিসেম্বর তার মরদেহ দেশে আনা হয়৷ ২০ ডিসেম্বর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে লাখো মানুষের অংশগ্রহণে হাদির জানাজা হয়৷ এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের সমাধির পাশে তাকে শায়িত করা হয়।
জাতীয়
উত্তরা-এয়ারপোর্ট সড়ক ছেড়ে দেওয়ার অনুরোধ ইনকিলাব মঞ্চের
বিদেশগামী যাত্রীদের বিবেচনায় রাজধানীর উত্তরা-এয়ারপোর্ট এলাকায় শহীদ শরীফ ওসমান হাদি হত্যার বিচারের দাবিতে আন্দোলনরতদের উত্তরা-বিমানবন্দরের মূল সড়ক ছেড়ে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে ইনকিলাব মঞ্চ। সংগঠনটি বলছে, বিচার দাবির আন্দোলন চললেও সাধারণ মানুষের বিদেশযাত্রা ব্যাহত করার কোনো সুযোগ নেই। এয়ারপোর্টে যাতায়াত নির্বিঘ্ন রাখা আন্দোলনের নৈতিক দায়িত্বের অংশ।
রবিবার (২৮ ডিসেম্বর) রাতে শাহবাগের কর্মসূচি থেকে ইনকিলাব মঞ্চের সদস্য সচিব আবদুল্লাহ আল জাবের উত্তরা এলাকায় অবস্থান নেওয়া আন্দোলনকারীদের উদ্দেশ্যে এমন বার্তা দেন।
আবদুল্লাহ আল জাবের বলেন, আপনাদের মাধ্যমে আমরা একটা বার্তা পৌঁছাতে চাই। উত্তরা যারা অবস্থান গ্রহণ করেছেন আমার ভাইয়েরা, আপনাদের উদ্দেশে আমরা ইনকিলাব মঞ্চের পক্ষ থেকে একটা বার্তা দিতে চাই। আপনারা দয়া করে এয়ারপোর্টে যাওয়ার যে রাস্তা, সেই রাস্তা আটকাবেন না। আপনারা ঠিক রাস্তার অন্য পাশে অবস্থান করবেন। কোনো ভাইয়ের ভবিষ্যৎ যাতে নষ্ট না হয়, সেই ব্যাপারে সহযোগিতা করার জন্য বিনীত অনুরোধ করছি।
তিনি আরও বলেন, উত্তরা থেকে এয়ারপোর্টে যাওয়ার দিকের যে রাস্তা, আপনারা দয়া করে সেই রাস্তাটা ছাড়বেন। সেই রাস্তা কেউ কোনোভাবে আটকে রাখবেন না। কারো যাতে কোনো ফ্লাইট মিস না হয়, সেজন্য আপনাদের একান্ত সহযোগিতা প্রয়োজন।
জাতীয়
পোস্টাল ব্যালটে ভোট দিতে প্রায় ৯ লাখ প্রবাসীর নিবন্ধন
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটে পোস্টাল ব্যালটে ভোট দেওয়ার জন্য ‘পোস্টাল ভোট বিডি’ অ্যাপে ৮ লাখ ৯৩ হাজার ১৫৫ জন নিবন্ধন করেছেন।
রবিবার (২৮ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে ইসির ওয়েবসাইট থেকে এ তথ্য জানা গেছে। গত ১৯ নভেম্বর থেকে নিবন্ধন শুরু হয়েছে, চলবে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত।
ওয়েবসাইটে দেখা গেছে, নিবন্ধনকারীদের মধ্যে পুরুষ ৮ লাখ ১ হাজার ৪৩৫ জন ও নারী ৯১ হাজার ৭১৮ জন। প্রবাসীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সৌদি আরব থেকে ১ লাখ ৭০ হাজার ৪৯০ জন নিবন্ধন করেছেন।
যেসব দেশে নিবন্ধন চলছে তার মধ্যে রয়েছে- দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, দক্ষিণ আফ্রিকা, চীন, মিশর, মোজাম্বিক, লিবিয়া, মরিশাস, হংকং, ব্রাজিল, উগান্ডা, ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গো, ইথিওপিয়া, নাইজেরিয়া, লাইবেরিয়া, বতসোয়ানা, কেনিয়া, রুয়ান্ডা, আলজেরিয়া, অ্যাঙ্গোলা, তানজানিয়া, সোমালিয়া, ঘানা, গিনি, মরক্কো, দক্ষিণ সুদান, চিলি, সিয়েরা লিওন, ইকুয়েডর, তাইওয়ান, আর্জেন্টিনা, অস্ট্রেলিয়া, মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র, গাম্বিয়া, পেরু, জিম্বাবুয়ে, যুক্তরাষ্ট্র, সৌদি আরব, বাংলাদেশ ইত্যাদি।
ইসি জানিয়েছে, অ্যাপে নিবন্ধনকারীদের ঠিকানায় পোস্টাল ব্যালট ডাকযোগে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। ভোটার ভোট দিয়ে ফিরতি খামে তা আবার রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে পাঠাবেন।
আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট অনুুষ্ঠিত হবে।
জাতীয়
হাদি পরিবার থেকে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না কেউ
ইনকিলাব মঞ্চের প্রতিষ্ঠাতা ও মুখপাত্র শহীদ শরিফ ওসমান হাদির পরিবারের কেউ জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন না। ওসমান হাদির শাহাদাতের পরে তার আসন থেকে কে নির্বাচন করবেন সে নিয়ে জল্পনাকল্পনা চলছিল। হাদি পরিবার থেকে ওসমান হাদির বড় বোনের নাম শোনা যাচ্ছিল। কিন্তু এবার পারিবারিক সিদ্ধান্তে কেউ জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না বলে জানা গেছে। শহীদ ওসমান হাদির শোক এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেনি হাদি পরিবার।
ওসমান হাদির বড় ভাই ওমর হাদি বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। ঢাকা-৮ আসনে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়েছিলেন শহীদ শরিফ ওসমান হাদি।
বিএনপির মির্জা আব্বাস এবং জামায়াতের হেলালুদ্দিনের বিপরীতে ঢাকার প্রাণকেন্দ্রে নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছিলেন শহীদ শরিফ ওসমান হাদি। সে লক্ষ্যে কাজও করছিলেন। প্রতিদিন নির্বাচনী এলাকায় কার্যক্রম পরিচালনা করতেন তিনি। অল্প কয়েকদিনের মধ্যেই এলাকাবাসীর মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছিলেন ওসমান হাদি। নির্বাচনী এলাকার জনগণও ওসমান হাদিকে আপন করে নিয়েছিলেন। আপামর সাধারণ জনতা টাকা, সাহস ও সমর্থন দিয়ে সহযোগিতা করছিলেন। কেউ কেউ বাসা থেকে ময়লা পানি ফেললে ওসমান হাদি তাদেরকেও আপন করে নিয়েছিলেন।
ওসমান হাদির বড় ভাই ওমর হাদি বলেন, আমরা পারিবারিকভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছি এবারের নির্বাচনে আমরা পরিবার থেকে কেউ অংশগ্রহণ করছি না।
উল্লেখ্য, গত ১২ ডিসেম্বর জুমার নামাজের পরে পল্টন এলাকায় গুলিকাঘাতে আক্রান্ত হন শহীদ শরিফ ওসমান হাদি। এরপর দেশে চিকিৎসা চলছিল। কিন্তু দেশে সম্ভব না হওয়ায় পরবর্তীতে সিঙ্গাপুর নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৮ ডিসেম্বর শাহাদাত বরণ করেন ওসমান হাদি। ১৯ ডিসেম্বর তার লাশ ঢাকায় নিয়ে আসা হয়। ২০ তারিখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবরের পাশে ওসমান হাদিকে সমাহিত করা হয়।
জাতীয়
ভারতে সংখ্যালঘু হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বাংলাদেশের উদ্বেগ
সাম্প্রতিক সময়ে ভারতে সংখ্যালঘু হত্যাকাণ্ড ও সহিংসতার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ। এসব ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত এবং দোষীদের বিচারের আওতায় আনার আহ্বান জানিয়েছে ঢাকা।
রবিবার (২৮ ডিসেম্বর) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র এস এম মাহবুবুল আলম এ উদ্বেগের কথা জানান।
তিনি বলেন, ভারতে মুসলিম, খ্রিস্টানসহ বিভিন্ন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে সংঘটিত নৃশংস হত্যাকাণ্ড, গণপিটুনি, নির্বিচার আটক এবং ধর্মীয় অনুষ্ঠানে বাধা দেওয়ার ঘটনা গভীর উদ্বেগের বিষয়।
মাহবুবুল আলম বলেন, চলতি মাসে ভারতের ওড়িশায় মুসলিম যুবক জুয়েল রানাকে নৃশংসভাবে হত্যা, বিহারে মুহাম্মদ আতাহার হোসেনের হত্যাকাণ্ড, কেরালায় বাংলাদেশি সন্দেহে এক নিরীহ ব্যক্তিকে হত্যার ঘটনা এবং বিভিন্ন স্থানে মুসলিম ও খ্রিস্টানদের ওপর গণপিটুনি ও সহিংসতার খবর পাওয়া গেছে।
তিনি আরও বলেন, গত সপ্তাহে খ্রিস্টানদের ধর্মীয় উৎসব বড়দিন উদযাপনকালে ভারতের বিভিন্ন স্থানে তাদের বিরুদ্ধে সংঘটিত গণ-সহিংসতার ঘটনাতেও বাংলাদেশ গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। এসব ঘটনাকে আমরা ঘৃণাজনিত অপরাধ ও লক্ষ্যভিত্তিক সহিংসতা হিসেবে দেখি।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন, আমরা প্রত্যাশা করি, ভারতের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এসব ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত করবে এবং দোষীদের বিচারের আওতায় আনবে। প্রত্যেক দেশেরই দায়িত্ব তার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সুরক্ষা ও মর্যাদা নিশ্চিত করা।




