রাজনীতি
জামায়াতের সঙ্গে জোট নিয়ে এনসিপিতে বিভক্তি
জামায়াতে ইসলামীসহ সমমনা আট দলের সঙ্গে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জোট বা আসন সমঝোতা প্রায় চূড়ান্ত। দলটির কেন্দ্রীয় নেতাদের সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতের ভিত্তিতে এমন সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন তরুণদের গড়া দলের নেতারা। তবে এ সমঝোতা নিয়ে বিভক্তি দেখা দিয়েছে এনসিপিতে। নির্বাহী পরিষদ ও কেন্দ্রীয় কমিটির অধিকাংশ সদস্য জামায়াতের সঙ্গে সমঝোতার পক্ষে থাকলেও আপত্তি জানিয়ে আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামকে চিঠি দিয়েছেন ৩০ নেতা। এছাড়া ডা. তাসনিম জারা গতকাল শনিবার দল থেকে পদত্যাগ করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
গণমাধ্যমে কথা বলায় নিষেধাজ্ঞা থাকায় নাম প্রকাশ না করে এনসিপির ডজনখানেক গুরুত্বপূর্ণ নেতা বলেন, সার্বিক পরিবেশ-পরিস্থিতি বিবেচনা করে জামায়াতের সঙ্গে জোট-সমঝোতার পক্ষে কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের ৯০ শতাংশ এবং কেন্দ্রীয় কমিটির ৮০ শতাংশ নেতা মত দিয়েছেন। ফলে ব্যাপক সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে সমঝোতার সিদ্ধান্ত প্রায় চূড়ান্ত করা হয়েছে। আজ রোববার এ-সংক্রান্ত আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসতে পারে।
একই কারণে নাম প্রকাশ না করে এনসিপির এক যুগ্ম আহ্বায়ক ও যুগ্ম সদস্য সচিব বলেন, জামায়াতের সঙ্গে জোটের বিষয়ে শীর্ষ নেতৃত্ব এককভাবে সিদ্ধান্ত নেয়নি। এ বিষয়ে এজেন্ডা আকারে আনা হয় ৫৯ সদস্যের দলের নির্বাহী পরিষদের সভায়। সেখানে সবার মতামত চাওয়া হলে মাত্র চারজন বিরোধিতা করেন। এছাড়া বিরোধিতা করতে পারেন, এমন কয়েকজন সভায় অনুপস্থিত ছিলেন।
কয়েকটি সূত্র জানায়, গত বুধবার এনসিপির নির্বাহী পরিষদের বৈঠকে উপস্থিত থাকা নেতাদের ৯০ শতাংশই জামায়াতের সঙ্গে তাদের জোটের প্রস্তাবের পক্ষে মত দেন। এরপর জামায়াত আমিরের সঙ্গে বৈঠকে করেন এনসিপির শীর্ষ নেতারা। সবশেষ গতকাল এর বিরুদ্ধে নীতিগত আপত্তি জানিয়ে দলটির আহ্বায়ক নাহিদকে আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি দেন ৩০ কেন্দ্রীয় নেতা। তবে এনসিপির কেন্দ্রীয় কমিটিতে বর্তমানে ২১৪ জনের মতো সদস্য আছেন। সে হিসাবে সমঝোতার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন ২০ শতাংশের কম নেতা।
এনসিপির আসন সমঝোতা নিয়ে দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম এবং সদস্য সচিব আখতার হোসেন ছাড়া অন্যদের গণমাধ্যমে কথা বলায় নিষেধজ্ঞা আছে। সে কারণে কেউ নাম প্রকাশ না করলেও কয়েকজন নেতা জানান, সময়ের প্রয়োজন অনুধাবন করেই সমঝোতার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা। এর আগে বিএনপির সঙ্গে সমঝোতার চেষ্টা করা হলেও অবমূল্যায়িত হতে হয়েছে। জুলাই বিপ্লবীদের জন্য ক্রমবর্ধমান ঝুঁকি এবং সামনের সম্ভাব্য বিভিন্ন শঙ্কার বিষয় বিবেচনা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
জামায়াতের সঙ্গে জোট করার বিরুদ্ধে নীতিগত আপত্তি জানানো ৩০ জনের মধ্যে অন্যতম এনসিপির যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক খান মুহাম্মদ মুরসালীন। তিনি বলেন, জামায়াতের জোটে যাওয়া না যাওয়া দলের একটি নীতিগত সিদ্ধান্তের বিষয়। এক্ষেত্রে দুই শতাধিক নেতার মধ্যে মত-দ্বিমত বা ভিন্নমত থাকতেই পারে। কিন্তু আমরা আমাদের আপত্তির কথা জানিয়েছি। এটা পদত্যাগ নয়।
গতকাল এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদের বরাবর ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানের দায়বদ্ধতা ও দলীয় মূল্যবোধের আলোকে সম্ভাব্য জোট বিষয়ে নীতিগত আপত্তিসংক্রান্ত স্মারকলিপি’ দেন দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির ৩০ সদস্য। নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে ও এক ধরনের প্রচার চালিয়ে ৩০ জন একমত হতে পেরেছেন। তবে চিঠিতে সই থাকা একাধিক নেতা বলেন, তারা চিঠির সঙ্গে একমত নন। মৌখিক কথা বলে তাদের নাম যুক্ত করা হয়েছে।
চিঠিতে নেতারা তাদের আপত্তির কারণ হিসেবে এনসিপির ঘোষিত আদর্শ, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের চেতনার দায়বদ্ধতা এবং গণতান্ত্রিক নৈতিকতার কথা বলেছেন। এর সঙ্গে জামায়াত-শিবিরের ভূমিকা, ধর্মকেন্দ্রিক সামাজিক ফ্যাসিবাদের উত্থানের শঙ্কা এবং জামায়াতের একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের স্বাধীনতাবিরোধী ভূমিকার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এ কারণে জামায়াতের সঙ্গে জোট করলে এনসিপির নৈতিক অবস্থান দুর্বল হবে এবং দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
চিঠিতে স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেনÑএনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক খালেদ সাইফুল্লাহ, যুগ্ম সদস্য সচিব মুশফিক উস সালেহীন, কেন্দ্রীয় সংগঠক আরমান হোসাইন, যুগ্ম আহ্বায়ক নুসরাত তাবাসসুম, যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক খান মোহাম্মদ মুরসালীন, সংগঠক রফিকুল ইসলাম আইনী প্রমুখ।
বিএনপির সঙ্গে আলোচনায় অগ্রগতি না হলেও জামায়াতের সঙ্গে সমঝোতার ক্ষেত্রে এগিয়েছে এনসিপি। আজ এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসতে পারে। শুরুর দিকে এনসিপির নেতারা খুব আগ্রহ নিয়ে বিএনপির সঙ্গে যোগাযোগ রাখলেও শেষ পর্যন্ত হতাশ হয়েছেন। ফলে গত কয়েক দিনে জামায়াতের সঙ্গে এনসিপির সমঝোতার আলোচনায় গতি আসে এবং দুই দলের দায়িত্বশীল নেতাদের মধ্যে অনানুষ্ঠানিক আলোচনায় বিষয়টি ইতিবাচকভাবে এগিয়েছে। কোন কোন আসনে দুই দলের কোন কোন প্রার্থীর জেতার সম্ভাবনা বেশি, সেটি মূল্যায়ন করা হচ্ছে। সে অনুযায়ী আসন সংখ্যাও চূড়ান্ত হয়েছে।
তফসিল অনুযায়ী, আগামীকাল সোমবার মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন। দলীয় প্রার্থী হতে হলে মনোনয়ন ফরমের সঙ্গে দলের প্রত্যয়নপত্রও জমা দিতে হয়। সেজন্য এই সময়ের মধ্যেই আসন সমঝোতার বিষয়টি চূড়ান্ত হওয়ার ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে। তবে সমঝোতা হলেও দলীয় প্রতীকে ভোট হওয়ার কারণে এ ব্যাপারে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন পর্যন্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ আছে।
গণমাধ্যমে বক্তব্য দেওয়ার অনুমতি না থাকায় নাম প্রকাশ না করে এনসিপির এক যুগ্ম আহ্বায়ক ও যুগ্ম সদস্য সচিব বলেন, তারেক রহমান দেশে আসার পরও এনসিপির সঙ্গে বিএনপির আসন সমঝোতার চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ায় আগামী সংসদে জুলাই বিপ্লবীদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে জামায়াতের সঙ্গে আলোচনা হয়।
এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনিম জারা দল ছেড়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। গতকাল সন্ধ্যা ৭টার দিকে দলটির হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে পদত্যাগের কথা জানান তিনি। পরে ঢাকা-৯ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করার কথা জানিয়ে নিজের ফেসবুক আইডিতে একটি পোস্ট দেন ডা. জারা। এছাড়া তার স্বামী দলটির যুগ্ম আহ্বায়ক খালেদ সাইফুল্লাহও এনসিপি থেকে পদত্যাগ করবেন বলে জানিয়েছেন। তবে তিনি ব্যক্তিগত কারণে এনসিপি থেকে পদত্যাগের কথা জানিয়েছেন।
জামায়াতের সঙ্গে দলটির নির্বাচনি জোট বা আসন সমঝোতার আলোচনার মধ্যেই এমন সিদ্ধান্ত এলো। কয়েকটি সূত্র জানায়, জামায়াতের সঙ্গে এনসিপির সমঝোতায় আপত্তি থাকায় পদত্যাগ করেছেন জারা। তবে ঢাকা-৯ আসনে এনসিপির প্রার্থী হতে পারেন দলটির যুগ্ম সদস্য সচিব হুমায়রা নুর।
ফেসবুক পোস্টে তাসনিম জারা জানান, আমার স্বপ্ন ছিল একটি রাজনৈতিক দলের প্ল্যাটফর্ম থেকে সংসদে গিয়ে আমার এলাকার মানুষ ও দেশের সেবা করা। তবে বাস্তব প্রেক্ষাপটে আমি কোনো নির্দিষ্ট দল বা জোটের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করতে ১ শতাংশ ভোটারের স্বাক্ষর প্রয়োজন হওয়ায় আজ রোববার থেকে স্বাক্ষর অভিযানে নামার কথা জানিয়েছেন জারা। তবে একদিনে এত মানুষের স্বাক্ষর নেওয়া অসম্ভব হওয়ায় স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করতে আগ্রহীদের স্বতঃস্ফূর্ত সাহায্য চেয়ে একটি ফেসবুক গ্রুপে যুক্ত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
এর আগে আগামী সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে ৪৭ লাখ টাকা গণচাঁদা সংগ্রহ করেছেন ডা. জারা। এখন স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার পরিবর্তিত সিদ্ধান্তের কারণে অনুদান ফেরত নিতে চাইলে ফেসবুকে দেওয়া একটি ফরম পূরণ করার অনুরোধ করে জারা বলেছেন, আপনাদের ট্রানজেকশন আইডি ও ডিটেইলস ভেরিফাই করার পর অর্থ ফেরত দেওয়া হবে। আর যারা ব্যাংকের মাধ্যমে পাঠিয়েছিলেন, তাদের শিগগির জানাব কী প্রক্রিয়ায় আপনাদের অর্থ ফেরত দেওয়া হবে।
গতকাল রাত সাড়ে ১২টার দিকে এনসিপির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক পোস্টে জামায়াতের সঙ্গে সমঝোতার বিষয়ে ব্যাখ্যা দিয়েছেন দলটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন। সেখানে লেখা হয়, ‘ঐকমত্য কমিশনে সংস্কার প্রশ্নে বিএনপির সঙ্গেই অন্য দলগুলোর মতভিন্নতা পরিলক্ষিত হতো। সেখানে সংস্কারের পয়েন্টগুলোয় ন্যাচারালি (স্বাভাবিকভাবেই) এনসিপি, জামায়াত ও অন্য দলগুলো একমত হয়েছে।’
তিনি আরো লেখেন, ‘সেক্ষেত্রে সংস্কারের বিষয়, দেশকে নতুন করে গড়া, নতুনভাবে বাংলাদেশের রাষ্ট্র কাঠামোকে গড়ে তোলার জন্য যে রাজনীতি, সে রাজনীতির প্রতি যে কমিটমেন্ট সেটাকেই নির্বাচনি রাজনীতিতে জোটের বা সমঝোতার ক্ষেত্রে সবচেয়ে প্রধানতম বিবেচ্য বিষয় হিসেবে এটাকে মূল্যায়ন করছি।’
আসন্ন সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য জামায়াতসহ বিভিন্ন দলের আসন সমঝোতার চূড়ান্ত ঘোষণা আসতে পারে আজ। এ প্রক্রিয়ায় জামায়াত ও ইসলামী আন্দোলনসহ আট দলের পাশাপাশি এনসিপি ও নতুন কিছু দল যুক্ত হচ্ছে বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এবং কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের প্রধান এহসানুল মাহবুব জুবায়ের গতকাল রাতে জানান, আসন সমঝোতার বিষয়টি নিয়ে নেতারা কাজ করছেন। রাতেই বিষয়টি চূড়ান্ত হয়ে যাওয়ার কথা। আজও এ নিয়ে বৈঠক শেষে চূড়ান্ত ঘোষণা আসতে পারে।
এমকে
রাজনীতি
খালেদা জিয়া-তারেক রহমান মনোনয়ন জমা দেবেন আগামীকাল
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষে মনোনয়ন জমা দেওয়া হবে আগামীকাল সোমবার। রবিবার (২৮ ডিসেম্বর) বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান এ তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি জানান, সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষে ঢাকা-১৭ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া হবে। বেলা ১১টায় ঢাকার সেগুনবাগিচায় ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার ও রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে এ মনোনয়ন জমা কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হবে।
এতে নেতৃত্ব দেবেন বিএনপির প্রধান নির্বাচন সমন্বয়ক ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আব্দুস সালাম এবং অধ্যাপক ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার।
একই দিন দুপুর ১২টায় বগুড়া-৭ আসনে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষে এবং বগুড়া-৬ আসনে তারেক রহমানের পক্ষে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া হবে। বগুড়া জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এ কার্যক্রমে নেতৃত্ব দেবেন বগুড়া জেলা বিএনপির সভাপতি রেজাউল করিম বাদশা।
এছাড়া ফেনী-১ সংসদীয় আসনে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া হবে। এ কার্যক্রমে নেতৃত্ব দেবেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক রফিকুল ইসলাম মজনু।
এর আগে আজ রোববার দিনাজপুর-৩ সংসদীয় আসনে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষে মনোনয়নপত্র জমা দেন জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক।
বিএনপি মহাসচিব ও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যসহ সব প্রার্থী নিজ নিজ সংসদীয় আসনের রিটার্নিং অফিসারের কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেবেন।
রাজনীতি
কেউ পদত্যাগ করলে সেটা তার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত: নাহিদ ইসলাম
কেউ এনসিপি থেকে পদত্যাগ করলে সেটা তার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত বলে মন্তব্য করেছেন দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। রবিবার (২৮ ডিসেম্বর) রাতে রাজধানীর বাংলামোটরে দলের অস্থায়ী কার্যালয়ে জরুরি সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, সংখ্যাগরিষ্ঠ নেতাকর্মীরা এনসিপির সঙ্গেই আছেন, যারা পদত্যাগ করছেন বা পরিকল্পনা করছেন তাদের সঙ্গে ভবিষ্যতে কথা বলবে এনসিপি।’
সংবাদ সম্মেলনে জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বাধীন জোটে যুক্ত হওয়ার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।
সোমবার মনোনয়নের বিষয়ে চূড়ান্ত ঘোষণা দেয়া হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সমঝোতার ভিত্তিতে আমাদের যারা প্রার্থী তারাই মনোনয়ন জমা দেবেন। সারা দেশে আমরা একসঙ্গে নির্বাচনে অংশ নেব। জাতীয় নাগরিক পার্টি এবং সহযোগী সংগঠন গণভোটের পক্ষে ক্যাম্পেইন করবে। যেখানে আমাদের প্রার্থী থাকবে না সেখানে জোটের যারা প্রার্থী থাকবেন তাদের পক্ষে ক্যাম্পেইন করবে। গণভোটে ‘হ্যাঁ’-এর পক্ষেই প্রচারণা চালাবে এনসিপি।’
আসন্ন নির্বাচনে এককভাবেই অংশ নেয়ার সিদ্ধান্ত ছিল জানিয়ে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘পরবর্তীতে শরিফ ওসমান হাদি হত্যাকাণ্ডের ফলে দেশের রাজনীতিতে পরিবর্তন এসেছে। আধিপত্যবাদী শক্তি এখনো দেশে আছে। তারা চায় নির্বাচন বানচাল করে জুলাই যোদ্ধাদের শেষ করে ফেলতে। তাই এমন পরিস্থিতিতে এনসিপি বৃহত্তর ঐক্যের জন্য জামায়াতের সঙ্গে নির্বাচনী সমঝোতায় এসেছে।’
তিনি বলেন, আধিপত্যবাদী শক্তি থেকে নিজেদের রক্ষা করতে এবং বৃহত্তর ঐক্যের জন্য ১০ দলীয় জোটে অংশ নিচ্ছে এনসিপি।
নাহিদ বলেন, ঐকমত্য কমিশনে দৃঢ় অবস্থানে ছিল এনসিপি। এটি দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা। আমরা চাই গণভোটের পক্ষে সবাইকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধ রাজনীতি করতে। আমরা বিএনপিকেও আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম। আমরা চাই দেশ গঠনের জন্য জুলাই সনদ অনুযায়ী পরিকল্পনা করতে।
এদিকে, ডা. তাসনিম জারা ও তাজনূভা জাবীনের পদত্যাগে দলে কোনো প্রভাব পড়বে না বলে মনে করেন এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন।
রোববার (২৮ ডিসেম্বর) দুপুরে ফ্যাসিবাদী আমলের নিপীড়নমূলক মামলায় জামিন নিতে আদালতে যান আখতার হোসেন।
পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, দলের ভেতর ভিন্ন মত থাকবে, তা আমরা স্বাগত জানাই। একটা রাজনৈতিক দলে পদত্যাগ এবং যোগদান খুবই স্বাভাবিক ঘটনা। ব্যক্তির সিদ্ধান্তকে আমরা শ্রদ্ধা জানাই, সমর্থন করি।
রাজনীতি
তিন লক্ষ্য সামনে রেখে জামায়াতের সঙ্গে জোটে গেলো এনসিপি
ইসলামী ৮ দলসহ জামায়াতের সঙ্গে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জোট হচ্ছে তিনটা লক্ষ্যকে সামনে রেখে।
রবিবার (২৮ ডিসেম্বর) রাতে এনসিপির যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আরিফুর রহমান তুহিন ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডিতে পোস্ট দিয়ে বিষয়টি তুলে ধরেন।
ফেসবুক পোস্টে তিনি লেখেন, পূর্ণাঙ্গ সংস্কার, অপরাধীদের বিচার এবং ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম এই বৃহত্তর লক্ষ্য সামনে রেখে আগামী দিনে জনগণ ঐক্যবদ্ধভাবে আধিপত্যবাদ, ফ্যাসিবাদবিরোধী শক্তির বিরুদ্ধে আন্দোলন অব্যাহত রাখবে।
এদিকে, এনসিপির যোগদানের দিনের এই সংবাদ সম্মেলনে আটটি দলের শীর্ষ নেতাসহ কর্নেল অলি আহমেদও উপস্থিত ছিলেন। বিবিসি জানিয়েছে, এনসিপির কোনো নেতা সংবাদ সম্মেলনে ছিলেন না।
জামায়াতের আমির বলেন, এনসিপির সঙ্গে কিছুক্ষণ আগেই আমাদের বৈঠক হয়েছে। সেখানে তারা আমাদের সঙ্গে এই সমঝোতা বা জোটে যুক্ত হয়েছে। তারা আজ রাতের মধ্যেই সংবাদ সম্মেলনে সেই ঘোষণা দেবেন।
তিনি বলেন, ‘এটা আমাদের মজবুত নির্বাচনী সমঝোতা।’
এদিকে, জামায়াতের সঙ্গে জোটে অংশ নেওয়ার আলোচনার প্রেক্ষাপটে গত দুইদিনে এনসিপির পরপর শীর্ষ পর্যায়ের দুইজন নেতা তাসনিম জারা ও তাসনূভা জাবীন পদত্যাগ করেছেন। এছাড়া আরো ৩০ জন নেতা এনসিপির নাহিদ ইসলামের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন।
রাজনীতি
আরও এক আসনে বিএনপির প্রার্থী পরিবর্তন
চট্টগ্রাম-৬ (রাউজান) আসনে দলীয় প্রার্থী পরিবর্তন করেছে বিএনপি। এই আসনে কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান (বর্তমানে পদ স্থগিত) গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীকে বাদ দিয়ে চূড়ান্ত মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য গোলাম আকবর খোন্দকারকে।
রবিবার (২৮ ডিসেম্বর) গোলাম আকবর খোন্দকারের ছেলে তারেক আকবর খোন্দকার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
জানা গেছে, চট্টগ্রাম-৬ আসনে আজ (রবিবার) গোলাম আকবর খোন্দকারকে চূড়ান্ত মনোনয়ন দিয়েছে বিএনপি। গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয় থেকে চূড়ান্ত মনোনয়নের চিঠি সংগ্রহ করেছেন তিনি।
এর আগে গত ৪ ডিসেম্বর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই আসনে প্রাথমিকভাবে মনোনীত কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান (বর্তমানে পদ স্থগিত) গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর নাম ঘোষণা করেছিলেন।
রাজনীতি
নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেন এনসিপির আরেক শীর্ষ নেত্রী
ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচন থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করেছেন নওগাঁ-৫ আসনে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মনোনীত প্রার্থী মনিরা শারমিন। রোববার (২৮ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা ৫টা ৪৫ মিনিটে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে এক পোস্টে তিনি এই ঘোষণা দিয়েছেন।
মনিরা শারমিন লিখেছেন, নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের আঙ্কাক্ষায় গড়া দল জাতীয় নাগরিক পার্টি গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী একমাত্র মধ্যপন্থি রাজনীতির ভরসাস্থল ছিলো। এই দল থেকে ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচনে নওগাঁ-৫ থেকে আমি মনোনীত প্রার্থী। তবে মনোনয়ন পাওয়ার আগে আমি জানতাম না, এই দল জামায়াতের সাথে ৩০ সিটের আসন সমঝোতা করবে। আমি জানতাম, ৩০০ আসনে প্রার্থী দিয়ে একক নির্বাচনের সিদ্ধান্ত ছিলো। যেহেতু এখন দলের পজিশন পরিবর্তন হয়েছে, তাই আমি নিজেকে নির্বাচন থেকে প্রত্যাহার করছি। নির্বাচনে আমি অংশগ্রহণ করছি না। আমি এনসিপির স্বতন্ত্র শক্তিতে বিশ্বাসী। দলের প্রতি আমার কমিটমেন্ট আমি ভাঙি নাই। কিন্তু এই মুহূর্তে দলের প্রতি কমিটমেন্টের থেকে গণঅভ্যুত্থানের প্রতি কমিটমেন্ট ও দেশের মানুষের প্রতি কমিটমেন্ট বড় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তিনি আরও লিখেন, আমি দল থেকে পদত্যাগ করার ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত নেইনি। এনসিপি কারো একার সম্পত্তি না। এনসিপি যতখানি শীর্ষ নেতৃত্বের, তার থেকে অনেক বেশি আমার। আজ পর্যন্ত এমন কিছু বলিনি বা করিনি যাতে দল বিতর্কিত হয়। তবে নিজের নৈতিকতা বিক্রি করে রাজনীতি করতে চাই না, ক্ষমতায় যেতে চাই না।
উল্লেখ্য, গত ১০ ডিসেম্বর নওগাঁ-৫ (সদর) আসনে দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক মনিরা শারমিনকে মনোনয়ন দেওয়া হয়।




