জাতীয়
অন্তর্বর্তী সরকার থাকাকালীনই হাদি হত্যার বিচার সম্পন্ন হবে: সৈয়দা রিজওয়ানা
অন্তর্বর্তী সরকার থাকাকালীনই শহীদ শরীফ ওসমান হাদিকে যারা হত্যা করেছে, তাদের বিচার সম্পন্ন করা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) দিবাগত রাতে রাজধানীর শাহবাগ মোড়ে ইনকিলাব মঞ্চের অবস্থান কর্মসূচিতে এসে তিনি এই আশ্বাস দেন।
রিজওয়ানা হাসান বলেন, আমরা শহীদ হাদির পরিবারের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছি। এই বাংলাদেশের মাটিতে, অন্তর্বর্তী সরকার থাকাকালীন সময়ের মধ্যেই যারা আমাদের হাদিকে হত্যা করেছে, তাদের বিচার সম্পন্ন করে যাব।
তিনি বলেন, শহীদ হাদির মৃত্যু ছিল অত্যন্ত করুণ ও হৃদয়বিদারক। হাদিকে আমি আমার ভাই মনে করতাম। দেশের জন্য তার শহীদ হয়ে যাওয়াটা আমাদের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি। যে মানুষের জানাজায় ১২ থেকে ১৫ লাখ মানুষ অংশ নেয়, তার হত্যার বিচার নিশ্চিত করা একটি জাতীয় দায়িত্ব।
উপদেষ্টা আরও বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার হয়তো আন্দোলনকারীদের মতো শাহবাগে বসে নেই, তবে সরকার এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত প্রত্যেককে চিহ্নিত করে বিচারের মুখোমুখি করতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। আমরা শত্রুপক্ষের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে তদন্ত করছি। তাই এমন কোনো তথ্য প্রকাশ করছি না, যা প্রতিপক্ষকে শক্তিশালী করে তুলতে পারে।
রেজওয়ানা হাসান জানান, সব পরীক্ষা-নিরীক্ষা সম্পন্ন করে এই হত্যাকাণ্ডের চার্জশিট সুনির্দিষ্টভাবে দাখিল করা হবে। ইনশাআল্লাহ, ৭ জানুয়ারি ২০২৫-এর পর চার্জশিট দেওয়া হবে এবং অন্তর্বর্তী সরকার থাকাকালীন সময়েই দ্রুত বিচার সম্পন্ন করা হবে।
তিনি বলেন, অতীতে আসিয়া হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মাত্র ছয় কার্যদিবসের মধ্যে বিচার সম্পন্ন হয়েছে। সে অভিজ্ঞতা থেকেই সরকার এবারও নির্ভুল ও শক্তিশালী চার্জশিট দিতে চায়, যাতে কোনো ধরনের ফাঁকফোকর না থাকে।
রিজওয়ানা হাসান আরও জানান, অভিযুক্তরা দেশত্যাগ করে থাকলেও তাদের বিরুদ্ধে ইন অ্যাবসেনশিয়া (অনুপস্থিতিতে) বিচার চালানো হবে। পাশাপাশি কূটনৈতিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে পলাতকদের দেশে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ভারত সরকারকে বিষয়টি স্পষ্টভাবে জানানো হয়েছে এবং তারা সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন।
তদন্তের স্বার্থে কিছু তথ্য প্রকাশ করা সম্ভব নয় উল্লেখ করে তিনি জানান, আগামীকাল সকাল সাড়ে ৬টায় ডিবি পুলিশ একটি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেছে, যেখানে হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে আরও বিস্তারিত তথ্য জানানো হবে।
এমকে
জাতীয়
ফয়সাল দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন, স্বীকার করলো পুলিশ
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শহীদ শরীফ ওসমান বিন হাদি হত্যা মামলার মূল অভিযুক্ত ফয়সাল দেশের বাইরে চলে গেছে বলে জানিয়েছেন ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) এস এন মো. নজরুল ইসলাম।
রোববার (২৮ ডিসেম্বর) সকালেই ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে শহীদ শরীফ ওসমান বিন হাদি হত্যা মামলার তদন্তের অগ্রগতি নিয়ে তিনি এ তথ্য জানান।
ডিএমপি কর্মকর্তা বলেন, হত্যাকাণ্ডটি সম্পূর্ণভাবে পূর্বপরিকল্পিত ছিল। ফয়সালসহ আরও একজন ময়মনসিংহ হয়ে সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে পলাতক রয়েছে। মামলায় এ পর্যন্ত মোট ১১ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে ছয়জন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। দ্রুতই এই মামলার অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করা হবে। আশা করা যাচ্ছে, আগামী ৭–৮ দিনের মধ্যে অভিযোগপত্র সম্পূর্ণভাবে দাখিল করা সম্ভব হবে।
হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে গত ১২ ডিসেম্বর দুপুর আনুমানিক ২টা ২০ মিনিটে। পল্টন থানার বক্স কালভার্ট রোডে হামলার শিকার হন শহীদ শরীফ ওসমান বিন হাদি। মতিঝিল মসজিদ থেকে জুমার নামাজ শেষে প্রচারণা কার্যক্রম চালিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের দিকে যাওয়ার সময়, মোটরসাইকেলে থাকা প্রধান আসামি ফয়সাল করিম মাসুদ রাহুল দাউদ ও তার অজ্ঞাত পরিচয় সহযোগী হাদিকে লক্ষ্য করে চলন্ত অবস্থায় গুলি চালায়। গুরুতর আহত অবস্থায় প্রথমে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং পরে এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে ১৫ ডিসেম্বর তাকে সিঙ্গাপুরে পাঠানো হয়। সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৮ ডিসেম্বর রাত ৯টা ৪৫ মিনিটে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
এই ঘটনায় ১৪ ডিসেম্বর ইনকিলাব মঞ্চের সদস্যসচিব আব্দুল্লাহ আল জাবের পল্টন থানায় হত্যাচেষ্টার মামলা দায়ের করেন। মামলায় অভিযোগ আনা হয় অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র, হত্যাচেষ্টা ও বিপজ্জনক অস্ত্র ব্যবহারের। হাদির মৃত্যুর পর ২০ ডিসেম্বর আদালতের আদেশে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সিদ্দিক আজাদ দণ্ডবিধির ৩০২ ধারা (হত্যা) সংযোজনের নির্দেশ দেন।
এমকে
জাতীয়
১ জানুয়ারি বই পাচ্ছে না কোটির বেশি শিক্ষার্থী
নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরু হতে বাকি মাত্র তিন দিন। অথচ মাধ্যমিক স্তরের সাড়ে ১১ কোটির বেশি পাঠ্যবই এখনো ছাপাই হয়নি। ফলে ১ জানুয়ারি নতুন বইয়ের ঘ্রাণ থেকে বঞ্চিত হতে যাচ্ছে মাধ্যমিকের ১ কোটির বেশি শিক্ষার্থী। জানা গেছে, পাঠ্যবই ছাপানোর দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তুক বোর্ডের (এনসিটিবি) এক প্রভাবশালী সদস্যের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা একটি সিন্ডিকেটের কারণেই এ অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে বই হাতে পেতে অন্তত মার্চ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে শিক্ষার্থীদের।
এনসিটিবির তথ্যমতে, ২০২৬ শিক্ষাবর্ষের জন্য প্রায় ৩০ কোটি পাঠ্যবই ছাপানো হবে। এর মধ্যে ২১ কোটি ৪৩ লাখ ২৪ হাজার বই মাধ্যমিকের, বাকিগুলো প্রাথমিক স্তরের। এরই মধ্যে প্রাথমিক ও ইবতেদায়ির পাঠ্যবই ছাপিয়ে উপজেলা পর্যায়ে পাঠানো হলেও ঘাপলা বেধেছে মাধ্যমিক স্তরের বই নিয়ে। বছর শেষ হলেও এখনো ছাপার বাকি সাড়ে ১১ কোটি পাঠ্যবই। ফলে বই ছাড়া ক্লাসে যেতে হবে ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির বেশিরভাগ শিক্ষার্থীকে।
অভিযোগ উঠেছে, এনসিটিবিতে বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের সুবিধাভোগী একজন সদস্য ও তার বলয়ে থাকা আরও চারজন কর্মকর্তা বই আটকে সরকারকে বেকায়দায় ফেলার তৎপরতায় লিপ্ত। বই ছাপার কাজে গতি বাড়ানোর পরিবর্তে গতি কমিয়ে দেওয়ার কাজ করছেন প্রতিষ্ঠানটির সদস্য ড. রিয়াদ চৌধুরী, ঊর্ধ্বতন ভান্ডার কর্মকর্তা আসাফ-উদ-দৌলা, সচিব ও তার দপ্তরের ‘আ’ আদ্যক্ষরের এক কর্মকর্তা। পাঁচটি পেপার মিলের সঙ্গে অঘোষিত চুক্তি করে বড় অঙ্কের কমিশন বাণিজ্যে লিপ্ত এই চক্র। তাদের পছন্দের বাইরের মিল থেকে কাগজ কিনলে ইন্সপেকশন এজেন্ট দিয়ে তা বাতিল করানো হচ্ছে। ফলে প্রেস মালিকরা ওইসব পেপার মিল থেকে কাগজ কিনতে বাধ্য হচ্ছে।
এনসিটিবির কর্মকর্তারা বলছেন, শ্রেণিভিত্তিক বই ছাপানোর ক্ষেত্রে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা অষ্টম শ্রেণিতে। এই শ্রেণিতে ৪ কোটি ২ লাখ বইয়ের বিপরীতে ছাপা হয়েছে মাত্র ১৮ লাখ ৯ হাজার বই, যা মোট বইয়ের মাত্র সাড়ে ৪ শতাংশ। সপ্তম শ্রেণিতে ৪ কোটি ১৫ লাখ বইয়ের মধ্যে ছাপা হয়েছে ৭০ লাখ ৫৫ হাজার। ষষ্ঠ ও নবম শ্রেণির অবস্থা কিছুটা ভালো হলেও তা সন্তোষজনক নয়। ষষ্ঠ শ্রেণিতে ৪ কোটি ৪৩ লাখ বইয়ের মধ্যে ছাপা হয়েছে ২ কোটি ৪৩ লাখ ৬৫ হাজার বই আর নবম শ্রেণিতে ৫ কোটি ৭০ লাখ বইয়ের বিপরীতে ছাপা হয়েছে ৩ কোটি ৪৭ লাখ ৭০ হাজার বই। নবম শ্রেণিতে এখনো ছাপার বাকি ২ কোটি ২০ লাখের বেশি বই।
সময়মতো বই ছাপা না হওয়ার কারণ হিসেবে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ভাষ্য, নভেম্বরের মধ্যে সব বই উপজেলা পৌঁছানোর লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয় বছরের শুরুতে। গত মে মাসে দরপত্র আহ্বান করা হয়। কিন্তু সেখানে এক কোটির বেশি বই ছাপার কাজ পায় আওয়ামী লীগের সাবেক মন্ত্রী মোস্তফা জব্বারের ভাই রব্বানী জব্বার। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের ঘনিষ্ঠ মাস্টার সিমেক্স প্রেসের মালিক দেওয়ান আলী কবীর, শেখ হাসিনাকে নিয়ে একাধিক বই ছাপানো প্রতিষ্ঠান আগামী প্রকাশনী, তার ভাইয়ের প্রতিষ্ঠান অনিন্দ্য প্রেস, ডিএমপির পলাতক পুলিশ কমিশনার হাবিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠের প্রেস বারতোবাসহ অন্তত ১৫টি আওয়ামীপন্থি প্রেস মালিককে কাজ দেয় এনসিটিবি। পরে এসব অভিযোগ আসার পর ষষ্ঠ-অষ্টম শ্রেণির ৬০৩ কোটি টাকার দরপত্র আটকে দেয় সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ (পারচেজ কমিটি)।
সূত্রমতে, পরে দৃশ্যমান পরিবর্তন না এনে এনসিটিবি পুনঃদরপত্র আহ্বান করে। সেই দরপত্রেই এনসিটিবির সদস্য রিয়াদ চৌধুরীর বলয়ের থাকা দুটি বড় প্রেসকে একচেটিয়া কাজ পাইয়ে দেওয়ার রফাদফা হয় এবং সে অনুযায়ী প্রেস দুটি ষষ্ঠ শ্রেণি দরপত্রে ফর্মাপ্রতি (৮ পৃষ্ঠায় এক ফর্মা) দর দেয় ২ টাকা ২০ পয়সা। অথচ আগের দর ছিল গড়ে ফর্মাপ্রতি ৩ টাকা ১৯ পয়সা। অর্থাৎ ফর্মাপ্রতি প্রায় ১ টাকা কম দরে ষষ্ঠ শ্রেণির ১০০ লটের মধ্যে ৮৬টি লট বাগিয়ে নেন সিন্ডিকেটভুক্ত দুটি প্রতিষ্ঠান। অস্বাভাবিকভাবে কম দরের এই প্রস্তাব দেখে অন্য প্রেসগুলো প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির দরপত্রে আরও কমে ফর্মাপ্রতি গড়ে ১ টাকা ৮০ পয়সা দর দেয়। এখন লোকসান সামাল দিতে এসব প্রেস নিম্নমানের কাগজে বই ছাপার কৌশল নিচ্ছে।
দুটি প্রেসকে সুবিধা দিতে কাগজের মানে ছাড়: ২০২৬ শিক্ষাবর্ষে মানসম্মত বই ছাপার কথা বলে কাগজের মানে একাধিক কঠোর শর্ত আরোপ করে এনসিটিবি। এর মধ্যে ছিল শিশুদের চোখের সুরক্ষায় কাগজের বাস্টিং ফ্যাক্টর ১৬ থেকে বাড়িয়ে ২০ শতাংশ, জিএসএম ৮২ থেকে ৮৫ গ্রাম এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণভাবে অপটিক্যাল ব্রাইটনিং এজেন্টমুক্ত (ওবিএ) কাগজ ব্যবহারের শর্ত। পাশাপাশি কাগজের ‘অপাসিটি (কাগজের এক পৃষ্ঠার লেখা যেন অন্য পৃষ্ঠা থেকে দেখা না যায়) ৭০ জিএসএম কাগজের জন্য ৮৫ এবং ৮০ জিএসএমের জন্য ৯০ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়, যেখানে মিল মালিকরা বলছেন, এমন কাগজ উৎপাদন করা পেপার মিলের পক্ষে অসম্ভব।
এনসিটিবি সূত্র জানায়, আগের দরপত্রে প্রাথমিক স্তর, নবম শ্রেণি ও ইবতেদায়ির ১৮ কোটি বেশি বই ছাপানো প্রায় শেষ। কিন্তু ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণির দরপত্র বাতিল হওয়ার পরপরই হঠাৎ করে কাগজের মানে শিথিলতা আনা হয়। বাস্টিং ফ্যাক্টর ২০ থেকে কমিয়ে ১৮ এবং ওবিএমুক্ত কাগজের পরিবর্তে ওবিএযুক্ত কাগজ ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হয়। অর্থাৎ, একই শিক্ষাবর্ষ, একই প্রাক্কলন ঠিক রেখে কোনো সুস্পষ্ট কারণ ছাড়াই কাগজের মানে ছাড় দেয় এনসিটিবি।
দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, এনসিটিবির সদস্য রিয়াদ চৌধুরী বাতিল হওয়া তিনটি শ্রেণির বইয়ে নির্দিষ্ট কয়েকটি পছন্দের প্রেসকে বেশি কাজ পাইয়ে দিতে এমন সিদ্ধান্ত নেন। এতে তার পছন্দে দুটি প্রেস শুধু ষষ্ঠ শ্রেণিতে ১০০ লটের বিপরীতে ৭০ লটের কাজ পায়। অন্যদিকে এনসিটিবির একাধিক কর্মকর্তার দাবি, বাস্টিং ফ্যাক্টর ২০, ওবিএমুক্ত এবং ৮৫-৯০ শতাংশ অপাসিটি—এই তিনটি শর্ত একসঙ্গে পূরণ করার সক্ষমতা বাংলাদেশের কোনো পেপার মিলেরই নেই। বাস্তবে বাস্টিং ফ্যাক্টর বাড়ালে ওবিএ আসে, আবার ওবিএমুক্ত হলে কাঙ্ক্ষিত অপাসিটি পাওয়া যায় না। তারপরও কেন কাগজের এমন মান ঠিক করা হয় জানতে চাইলে রিয়াদ চৌধুরী বলেন, পেপার মিল, প্রেস মালিক, বিএসটিআই ও বিসিএসআইআরের বিশেষজ্ঞদের একাধিক বৈঠকের পরই মান নির্ধারণ করা হয়; কিন্তু কাজ শুরু হলে সবাই সেই মানের কাগজ দিতে পারছিল না। পরে সবার মতামতের ভিত্তিতে স্পেসিফিকেশন (মান) কিছুটা কমানো হয়েছে। যাতে কয়েকটি প্রেসের কাছে জিম্মি না হই।
আগের মানে কাগজ দিয়ে প্রাথমিক, নবম ও ইবতেদায়ি স্তরে প্রায় ১৭ কোটি বই কীভাবে ছাপানো হলো—এমন প্রশ্নের সরাসরি উত্তর দিতে পারেননি রিয়াদ চৌধুরী। তিনি বলেন, পরিস্থিতির কারণে অনেক কিছু করতে হয়। যদি দরপত্র বাতিল না হতো তাহলে কী করতেন—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘যদি’র কোনো উত্তর নেই। তবে ছাপা হওয়া বইয়ে বাস্টিং এবং অপাসিটিতে আনঅফিসিয়ালটি বিশেষ ছাড় দিয়েছে এনসিটিবি।
সূত্র বলছে, গত বছর বই ছাপা নিয়ে বড় ধরনের কেলেঙ্কারি ঘটে। বহিষ্কৃত এনসিপি নেতা গাজী সালাউদ্দিন তানভীরের নেতৃত্বে একটি সিন্ডিকেট নির্দিষ্ট পেপার মিল থেকে কাগজ কিনতে বাধ্য করা হয় প্রেসগুলোকে। একপর্যায়ে ২৮ শতাংশ শুল্ক মওকুফ করে বিদেশ থেকে ১০ হাজার টন কাগজ আমদানি করার সুযোগ দেয় এনসিটিবি। সেখানে তানভীর এবং রিয়াদ চৌধুরী সিন্ডিকেট ২৮ কোটি টাকা কমিশন বাণিজ্য করে। এ নিয়ে গণমাধ্যমে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। এরপর দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), এনসিপির বহিষ্কৃত নেতা তানভীর এবং ৩৬টি প্রেসের মালিক জিজ্ঞাসাবাদ করেন দুদকের সহকারী পরিচালক এস এম রাশেদুল হাসানের নেতৃত্বে একটি দল। লেটার এন কালার প্রেসে মালিক শেখ সিরাজ উদ্দিন, মাস্টার সিমেক্স মালিক দেওয়ান আলী কবীরসহ একাধিক প্রেস জিজ্ঞাসাবাদে কাগজ কেনাকাটায় দুর্নীতির তথ্য পায় সংস্থাটি। অথচ এই দুর্নীতিতে সরাসরি যুক্ত থেকেও অদৃশ্য কারণে ছাড় পায় এনসিটিবির ওই সময়ের চেয়ারম্যান রিয়াজুল হাসান, সচিব আল ফিরোজ ফেরদৌস ও সদস্য (পাঠ্যপুস্তক) ড. রিয়াদ চৌধুরী। যদিও চেয়ারম্যানের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ আটকে যায় আর সচিব আল ফিরোজ ফেরদৌসকে ওএসডি করা হয়, তবে রিয়াদ চৌধুরী আছেন বহাল তবিয়তে। এনসিটিবিতে বসে এখনো সব কলকাঠি নাড়েন তিনি। তাকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় ৯ বার ফাইল উঠালেও সচিবের দপ্তরে থাকা একজন কর্মকর্তা তা আটকে দেন।
এ বিষয়ে যুগ্ম সচিব (কলেজ-১) খোদেজা খাতুন বলেন, উনার বিষয়ে আমাদের কাছে প্রচুর অভিযোগ আছে। তার বদলির বিষয়টি নিয়ে কী হচ্ছে, তা সচিব ও উপদেষ্টার দপ্তর ভালো বলতে পারবেন।
৪৫ কোটি টাকা কমিশন বাণিজ্যে মন্ত্রণালয়-এনসিটিবির ৬ কর্মকর্তা: প্রেস মালিকদের অভিযোগ, মাধ্যমিক পর্যায়ে চারটি শ্রেণির বই ছাপানো ঘিরে মন্ত্রণালয় ও এনসিটিবির ছয়জন কর্মকর্তার সিন্ডিকেট কমিশন বাণিজ্য যুক্ত হয়েছেন। ২১ কোটি বই ছাপাতে ৬৫ হাজার টন কাগজ লাগবে। দেশে শতাধিক কাগজ মিল থাকলেও এনসিটিবি মাত্র পাঁচটি ছাড়া অন্য মিলের কাগজ অনুমোদন দিচ্ছে না। সিন্ডিকেট কাগজের টনপ্রতি ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা কমিশন বাণিজ্য করছে। শুধু মাধ্যমিক স্তরেই তারা ৪৫ কোটি টাকা কমিশন বাণিজ্য করছে।
প্রেস মালিকরা বলছেন, বর্তমান কাগজের দাম টনপ্রতি ১ লাখ ১৫ হাজার থেকে ১ লাখ ১৭ হাজারের মধ্যে। এনসিটিবি সব পেপার মিল থেকে কাগজ কেনার সুযোগ দিলে কাগজের দাম টনপ্রতি ১ লাখ ১০ হাজার টাকার নিচে নেমে আসবে। কিন্তু এনসিটিবির কাগজ সিন্ডিকেট বাণিজ্যের কারণে তা সম্ভব হচ্ছে না। এ সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করেন ভান্ডার কর্মকর্তা
আসাফ-উদ-দৌলা এবং অন্য দপ্তর থেকে সচিবের দপ্তরে আসা এক কর্মকর্তা, যিনি এনসিটিবির ওই সিন্ডিকেটকে রক্ষায় ফান্ড তৈরি করে বিভিন্ন জায়গায় বিতরণ করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
সার্বিক বিষয়ে এনসিটিবির চেয়ারম্যানের অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করা মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. মাহবুবুল হক পাটওয়ারী বলেন, দরপত্র বাতিল হওয়ায় ষষ্ঠ-অষ্টম শ্রেণিতে একটু দেরি হচ্ছে। এই তিন শ্রেণি বাদে অন্য ক্লাসের বই শিক্ষার্থীরা পেয়ে যাবে এমন আশা তার। এনসিটিবির কাগজ সিন্ডিকেটের বিষয়ে তার জানা নেই মন্তব্য করে চেয়ারম্যান বলেন, আমরা চেষ্টা করছি সব প্রেসের প্রতি সমান আচরণ করতে।
এনসিটিবি সিন্ডিকেট করে পেপার মিল থেকে কাগজ কেনাচ্ছে বলে ওঠা অভিযোগটি সঠিক নয় বলে দাবি করেছেন এনসিটিবির সচিব মো. সাহতাব উদ্দিন। এমন সুযোগ এনসিটিবির আছে কি না, সে বিষয়ে তিনি এই প্রতিবেদককে আরও খোঁজ নিতে বলেন।
এমকে
জাতীয়
বিচার না হলে ধরে নেবো হাদি হত্যায় রাষ্ট্রের একটি অংশ জড়িত: সাদিক কায়েম
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) ভিপি আবু সাদিক কায়েম বলেছেন, শহিদ শরিফ ওসমান হাদির হত্যাকারীরা গ্রেফতার না হলে ও এ হত্যার বিচার না হলে আমরা ধরে নেবো এই হত্যার সঙ্গে রাষ্ট্রের একটি অংশ জড়িত রয়েছে।
শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) মাস্টারদা সূর্যসেন হলে শহিদ শরিফ ওসমান হাদির গ্রাফিতি উন্মোচন অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন ডাকসুর সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্পাদক মুসাদ্দিক আলী ইবনে মোহাম্মদ, স্বাস্থ্য ও পরিবেশ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মিনহাজ, মাস্টারদা সূর্যসেন হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. রফিকুল ইসলাম, হল সংসদের ভিপি আজিজুল হক প্রমুখ।
সাদিক কায়েম বলেন, “ওসমান হাদি বলে গিয়েছিলেন—‘জান দেবো কিন্তু জুলাই দেবো না’। তিনি তার কথা রেখেছেন। ওসমান হাদির ওপর হামলার ১৬ দিন পার হয়েছে। কিন্তু সরকার এখনো তার হত্যাকারীদের গ্রেফতার করতে পারেনি।”
তিনি বলেন, ‘আমরা খবর পেয়েছি হামলার পাঁচ ঘণ্টার মধ্যে খুনি ভারতে চলে গেছে। দেশের এত ইন্টেলিজেন্স ফাঁকি দিয়ে সে কীভাবে গেলো? এ ঘটনার এত দিন পার হলেও সরকার হত্যাকারীদের গ্রেফতার করতে পারলো না।’
ডাকসু ভিপি বলেন, ‘বাংলাদেশে আর কোনো দিল্লির তাবেদারি চলবে না, ফ্যাসিবাদের জায়গা হবে না। ওসমান হাদির বিচার এই স্বাধীন বাংলাদেশে হবে ইনশাআল্লাহ। যারা এই বিচার প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করবে তাদের সবাইকে আমরা দেখে নেবো। আমরা কথা দিচ্ছি, শহীদ ওসমান হাদির বিচার এই বাংলাদেশে হবে। যারা এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত তাদের কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।’
ডাকসুর সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্পাদক মুসাদ্দিক আলী ইবনে মোহাম্মদ বলেন, ‘ওসমান হাদির লড়াই ইনসাফের লড়াই, জুলাই বিপ্লবকে পূর্ণতা দানের লড়কি, আধিপত্যবাদ বিরোধী লড়াই। এই লড়াই একটি দীর্ঘ লড়াই। আমাদের এই লড়াই চালিয়ে যেতে হবে।’
এমকে
জাতীয়
ধর্মীয় বিভাজনের রাজনীতি দুর্বল করবে বাংলাদেশকে: দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য
ধর্মীয় বিভাজনের রাজনীতির যে প্রবণতা দৃশ্যমান হচ্ছে, বাংলাদেশের এগিয়ে চলার পথে যে কতটা অন্তরায় তৈরি করবে, তা তুলে ধরলেন নাগরিক প্ল্যাটফর্ম বাংলাদেশের আহ্বায়ক ও সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।
তিনি বলেছেন, ধর্মভিত্তিক যে বিভাজনের রাজনীতি হচ্ছে, এটা শেষ বিচারে দেশের সার্বভৌমত্বকে দুর্বল করবে। এটা শেষ বিচারে বাংলাদেশের সমাজকে দুর্বল করবে। ধর্মভিত্তিক বা জাতিগত পরিচয়ের রাজনীতি আগামী দিনে দেশের অর্থনীতিকে কিন্তু দুর্বল করবে। বৈশ্বিক অবস্থানের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সম্পর্ককেও দুর্বল করবে।
আজ শনিবার সিরডাপ মিলনায়তনে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের আয়োজনে ‘সংখ্যালঘুদের মানবাধিকার: বর্তমান বাস্তবতা ও প্রত্যাশা’ শীর্ষক গোলটেবিল সংলাপে এ কথা বলেন দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তাঁর মতে, দেশে এখন নিরাপত্তাবোধের অভাব শুধু ধর্মীয় সংখ্যালঘু বা জাতিগত সংখ্যালঘুর মধ্যে সীমিত নেই। এটি সার্বিক বিষয়ে পরিণত হয়েছে।
নিরাপত্তার বিষয়টি এখন বড় হয়ে দেখা দেওয়ার বিষয়টি তুলে ধরে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, এই নিরাপত্তাবোধের অভাবটা শুধু ধর্মীয় সংখ্যালঘু বা জাতিগত সংখ্যালঘুর মধ্যে সীমিত নয়। নিরাপত্তাবোধের অভাব নারী, মাজার ও সুফির মতো বিভিন্ন ধরনের দার্শনিক চিন্তাভাবনার মানুষ, ট্রান্সজেন্ডার কমিউনিটি, আহমদিয়া সম্প্রদায় ইত্যাদি অনেকের জন্য সত্য। এটা একটা সার্বিক বিষয়ে পরিণত হয়েছে।
ভারতে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের প্রতি আচরণ বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের জীবনে বিপত্তি সৃষ্টি করছে বলে উল্লেখ করেন দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, খ্রিষ্টানদের বড়দিনের উৎসবে ভারতের বিভিন্ন জায়গায় অত্যাচার হয়েছে। এগুলো বাংলাদেশের যারা সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী আছে, তাদেরকে একই ধরনের আচরণ করার ক্ষেত্রে উৎসাহ জোগায়। ভারতবর্ষে কী হচ্ছে—এ দায়দায়িত্ব বাংলাদেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের দেওয়া উচিত নয়।
তবে সার্বিক বিষয়গুলোতে সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতা, সম্প্রীতি ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার দৃষ্টিভঙ্গি থেকে যে মানুষ দেখছে, তা তুলে ধরে তিনি বলেন, এই নতুন একতাবোধকে যদি ধারণ করা না যায়, তাহলে স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, দেশপ্রেম অসম্পূর্ণ থেকে যাবে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশে ফেরার পর সংক্ষিপ্ত বক্তৃতায় নিরাপদ বাংলাদেশ গড়ে তোলার যে কথা বলেছেন, তা তুলে ধরে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, নিরাপত্তার বিষয়টিকে গুরুত্বসহকারে সামনে আনার উপলব্ধিটা সঠিক। নিরাপদ বাংলাদেশ করার ক্ষেত্রে নির্বাচনপূর্ব এবং নির্বাচন–পরবর্তী সময়ে পদক্ষেপ কী হবে, এটা এখন বোঝার বিষয়। তিনি মার্টিন লুথার কিংয়ের শব্দকে নিজের মতো করে বলেছেন। ওই প্ল্যানের (উই হ্যাভ অ্যা প্ল্যান) ভেতরে ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের অবস্থান কী হবে? মানবাধিকারের ভিত্তিতে দেশে একটি নাগরিক সমাজ গড়ে উঠবে—এ কথা কি থাকবে?
ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শহীদ শরিফ ওসমান বিন হাদি হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, আন্দোলনকারীদের একটি স্লোগান তাঁর মনে নাড়া দিয়েছে। সেটি হলো সুশীলতার দিন শেষ, জবাব চায় বাংলাদেশ।
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য সেই সঙ্গে বলেন, বাংলাদেশ শুধু জবাব চায় না যে হাদির হত্যাকারীদের বিচার হোক। বাংলাদেশ এই জবাব চায়, তার নিজস্ব নাগরিকদের অধিকার কীভাবে রক্ষিত হবে, সেই জবাবটাও একই সঙ্গে দিতে হবে। যে নারীকে অত্যাচার করা হয় শুধু তাঁর পোশাকের জন্য, তার বিচারটা কী হবে? যে বাউলগান গাইতে পারে না, তাঁর অধিকারটা কী হবে? এসবের জবাব দিতে হবে।
আবার বাংলাদেশে চলমান নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় উত্তরণের প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করতে ধর্মীয় বা জাতিগত সংখ্যালঘুদের কেউ যাতে যুক্ত না হয়, সেই সতর্কবার্তাও দেন দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।
এই সংলাপে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মনীন্দ্র কুমার নাথ। পরিষদের অন্যতম সভাপতি নির্মল রোজারিওর সভাপতিত্বে এই সংলাপে আরও বক্তব্য দেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও মানবাধিকারকর্মী সারা হোসেন, হিন্দুধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ভাইস চেয়ারম্যান তপন চন্দ্র মজুমদার, এএলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ফওজিয়া মোসলেম, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের অন্যতম সভাপতি নিমচন্দ্র ভৌমিক, আইনজীবী সুব্রত চৌধুরী, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক এম এ আজিজ, বাংলাদেশ সনাতন পার্টির সাধারণ সম্পাদক সুমন কুমার রায়, বাংলাদেশ খ্রিষ্টান অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব হেমন্ত আই কোড়াইয়া, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ভিক্ষু সুনন্দপ্রিয়, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জয়ন্ত কুমার দেব প্রমুখ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা পরিষদের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য রঞ্জন কর্মকার।
জাতীয়
একই পরিবারের হিন্দিভাষী ১৪ জনকে ঠেলে পাঠাল বিএসএফ
চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার দর্শনা এলাকার সীমান্ত দিয়ে ভারতের ওডিশা রাজ্যে বসবাসরত একই পরিবারের ১৪ জনকে বাংলাদেশে ঠেলে পাঠিয়েছে বিএসএফ। তাদের মধ্যে ছয়জন নারী ও চারজন শিশু।
গত বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) রাতে সীমান্ত দিয়ে তাদের বাংলাদেশে ঠেলে পাঠানো হয়।
স্থানীয় সূত্র জানায়, ঠেলে পাঠানোর পর দর্শনা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় খোলা আকাশের নিচে ঠাঁই হয় তাদের।
পরদিন শুক্রবার রাতে খবর পেয়ে কনকনে শীত নিবারণের জন্য চুয়াডাঙ্গা জেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা ভুক্তভোগীদের হাতে শীতবস্ত্র তুলে দেন। পরে পুলিশ ও বিজিবি তাদেরকে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে পাঠায়।
ভুক্তভোগীদের দাবি, তারা ভারতের স্থায়ী বাসিন্দা। দেশটির ওডিশা রাজ্যের সাতকুড়া ধনিপুরে ৭০ বছর ধরে সপরিবারে বসবাস করে আসছিলেন।
তারা সবাই মুসলিম ও ভারতের ওডিশার নাগরিক। সেখানে তাদের বাড়িঘর রয়েছে।
ভুক্তভোগীদের মধ্যে আব্দুল জব্বার নামের একজন জানান, আড়াই বছর বয়সে বাবা-মায়ের হাত ধরে তারা ওডিশায় বসবাস শুরু করেন। সেখানেই তাদের বিয়ে ও সংসার শুরু হয়।
বাংলাদেশের কোন জেলায় তাদের বাড়ি ছিল, তার কিছুই জানেন না তিনি। মাসখানেক আগে এক গভীর রাতে সেখানকার পুলিশ জব্বারসহ তাঁর পরিবারের ১৪ সদস্যকে ধরে নিয়ে যায়। আটগড় জেলখানায় এক মাস পাঁচ দিন হাজতবাস শেষে গত বৃহস্পতিবার সবাই মুক্তি পান। ওইদিন রাত ৩টার দিকে বিএসএফ সদস্যরা তাদের জোর করে বাংলাদেশে ঠেলে পাঠায়। ভারতীয় পুলিশ তাদের ‘বাংলাদেশি’ অপবাদ দিয়ে ধরে জেলে পাঠায়।
এ সময় তাদের আধার কার্ড, রেশন কার্ড কেড়ে নেওয়া হয়। এরপর সীমান্তে এনে কাঁটাতারের বেড়ার গেট খুলে তাদের ঠেলে পাঠায় বিএসএফ। তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী দর্শনা নীমতলা সীমান্ত গলিয়ে বাংলাদেশে ঠেলে পাঠানো হয়েছে তাদের। শুক্রবার ভোরে তারা অবস্থান নেন দর্শনা বাসস্ট্যান্ড এলাকায়। তবে ওইদিন রাতে বিষয়টি জানাজানি হয়। এদিন রাত সাড়ে ১০টার দিকে পুলিশ ও বিজিবি সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছান। তাদের উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নেন তাা।
দর্শনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মেহেদী হাসান বলেন, ঠেলে পাঠানো ভুক্তভোগীদের মধ্যে কয়েকজন অসুস্থ। তাদের সবাইকে উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। চিকিৎসা করানো হবে। চিকিৎসা শেষে জেলা প্রশাসক ও দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।




