জাতীয়
ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে সরকার কাজ করছে: অর্থ উপদেষ্টা
ভারতের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক স্বাভাবিক আছে, রাজনৈতিক সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে সরকার কাজ করছে বলে জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।
মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) সচিবালয়ে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠক শেষে তিনি এসব কথা বলেন।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘ভারতে সঙ্গে রাজনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়নে প্রধান উপদেষ্টা নিজেও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। কোনো প্রতিবেশীর সঙ্গেই তিক্ত সম্পর্ক চায় না বাংলাদেশ।’
সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘ভারতের রাজনৈতিক সম্পর্ক খুব যে খারাপ হয়ে গেছে তা নয়। তবে আমরা চেষ্টা করছি কোনোভাবে যেন অস্বাভাবিক না হয়।’
এমকে
জাতীয়
বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে পাল্টা তলব করল ভারত
দিল্লিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার রিয়াজ হাদিদুল্লাহকে তলব করেছে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মাকে তলবের কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে বাংলাদেশের দূতকে পাল্টা তলব করেছে দিল্লি।
ভারতীয় গণমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের কূটনৈতিক মিশনগুলোকে লক্ষ্য করে ভারতে সংঘটিত ধারাবাহিক ঘটনাপ্রবাহের বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ভারতের হাইকমিশনারকে তলবের কয়েক ঘণ্টা পরেই মঙ্গলবার ভারত বাংলাদেশের হাইকমিশনার রিয়াজ হামিদুল্লাহকে তলব করেছে।
আজ ঢাকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মাকে পররাষ্ট্রসচিব আসাদ আলম সিয়ামের দপ্তরে তলব করা হয়। ভারতীয় দূতকে তলব করে পররাষ্ট্রসচিব নয়াদিল্লি ও শিলিগুড়িতে বাংলাদেশের কূটনৈতিক স্থাপনায় হামলা এবং ভাঙচুরের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ জানিয়েছেন। একই সঙ্গে দেশটিতে থাকা বাংলাদেশের কূটনীতিকদের নিরাপত্তা বিষয়ে জোর দেওয়া হয়েছে।
এর আগে ১৪ ডিসেম্বর প্রণয় ভার্মাকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব করা হয়েছিল। সেদিন ভারতে অবস্থানরত ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অব্যাহত উসকানিমূলক বক্তব্যে সরকারের উদ্বেগের কথা জানানো হয়েছে। পাশাপাশি ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান হাদির ওপর হামলাকারীদের ভারতে পালিয়ে যাওয়া প্রতিরোধে দেশটির সহযোগিতা কামনা করা হয়।
অন্যদিকে ১৭ ডিসেম্বর নয়াদিল্লিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার রিয়াজ হামিদুল্লাহকে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাল্টা তলব করা হয়। ফের সপ্তাহ না যেতেই বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে আজ আবারও পাল্টা তলব করেছে ভারত।
এমকে
জাতীয়
দীপু দাসের পরিবারের দেখাশোনার দায়িত্ব রাষ্ট্র গ্রহণ করল: শিক্ষা উপদেষ্টা
ময়মনসিংহের ভালুকায় পিটিয়ে ও আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করা গার্মেন্টস শ্রমিক দিপু চন্দ্র দাসের পরিবারের পাশে সরকার রয়েছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. সি আর আবরার।
মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) বিকেলে মংমনসিংহের তারাকান্দা উপজেলার মোকামিয়াকান্দা গ্রামে দীপু চন্দ্র দাসের বাড়িতে গিয়ে পরিবারের সদস্যদের খোঁজখবর নেন শিক্ষা উপদেষ্টা। এ সময় দীপু দাসের বাবা রবি চন্দ্র দাস নিজেদের অসহায় অবস্থার কথা তুলে ধরে উপদেষ্টার কাছে ছেলের হত্যাকারীদের বিচার দাবি করেন।
শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক সি আর আবরার বলেন, দীপু দাসের সন্তান ও স্ত্রী এবং বাবা-মায়ের দেখভালের দায়িত্ব রাষ্ট্র গ্রহণ করল। আমি আসার আগে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা হয়েছে। তিনি আমাকে পরিবারটির সঙ্গে কথা বলতে বলেছেন। পরিবারের কী চাহিদা, তা পরিবারের সঙ্গে আলাপ করে নিরূপণ করা হবে। আমাদের স্থানীয় প্রশাসন আছে, তাদের মাধ্যমে এই যোগাযোগ হবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষ দীর্ঘদিন ধরে পারস্পরিক সম্মান ও সহাবস্থানের মধ্য দিয়ে বসবাস করে আসছে। একটি রাষ্ট্র ও সমাজ হিসেবে আমরা সব ধর্ম, জাতিগোষ্ঠী ও সম্প্রদায়ের মতপ্রকাশের অধিকারকে সম্মান করি। যতক্ষণ পর্যন্ত তা অন্যের প্রতি সম্মান বজায় রেখে করা হয়। মতের আপত্তির মুহূর্তেও কোনো ব্যক্তি আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার অধিকার রাখেন না। বাংলাদেশ একটি আইনশাসিত রাষ্ট্র। অভিযোগ তদন্ত করা ও দায় নির্ধারণ করার একমাত্র কর্তৃত্ব রাষ্ট্রের। বিশ্বাস বা মতের পার্থক্য কখনো সহিংসতার কারণ হতে পারে না।
উপদেষ্টা আরও বলেন, দীপু চন্দ্র দাসের হত্যাকাণ্ড একটি নৃশংস অপরাধ। এর কোনো অজুহাত নেই। আমাদের সমাজে এর কোনো স্থান নেই। বাংলাদেশ সরকার এই সহিংসতার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে। অভিযোগ, গুজব বা বিশ্বাসগত পার্থক্য— এ ধরনের বর্বরতার অজুহাত হতে পারে না। আইনের শাসন বজায় রাখা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। এ ঘটনায় জড়িত ১২ জনকে ইতিমধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তদন্ত চলমান রয়েছে এবং যারা দায়ী, যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তাদের বিচারের আওতায় আনা হবে। এ ধরনের সহিংসতার বিরুদ্ধে আইন তার পূর্ণ শক্তি প্রয়োগ করবে।
সি আর আবরার বলেন, ধর্ম বা পরিচয়নির্বিশেষে সব নাগরিকের নিরাপত্তা ও মর্যাদা রক্ষায় রাষ্ট্র অঙ্গীকারবদ্ধ। একই সঙ্গে রাষ্ট্র আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং সমাজ একসঙ্গে কাজ করে নিশ্চিত করবে, যেন সহিংসতা কখনোই সহ্য করা না হয় বা জায়গা করে নিতে না পারে। বর্তমানে কিছু দুষ্কৃতকারী গোষ্ঠী বিভাজন সৃষ্টি ও অস্থিরতা উসকে দেওয়ার চেষ্টা করছে। আমাদের এসব অপশক্তির বিরুদ্ধে সতর্ক থাকতে হবে।
এ সময় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) রেজা মো. গোলাম মাসুম প্রধান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) আবদুল্লাহ আল মামুন, তারাকান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আমিনুল ইসলাম, সহকারী কমিশনার (ভূমি) এস এম নাজমুস ছালেহীন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
ময়মনসিংহের ভালুকার হবিরবাড়ী ইউনিয়নের ডুবালিয়াপাড়া এলাকায় গত বৃহস্পতিবার রাতে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে পাইওনিয়ার নিটওয়্যারস (বিডি) লিমিটেড কারখানার কর্মী দীপু চন্দ্র দাসকে ধরে নিয়ে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। পরে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের বিভাজকের একটি গাছে বিবস্ত্র করে ঝুলিয়ে মরদেহে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। এ ঘটনায় তার ভাই অপু চন্দ্র দাস বাদী হয়ে গত শুক্রবার অজ্ঞাতপরিচয় ১৪০ থেকে ১৫০ জনকে আসামি করে একটি মামলা করেন।
এদিকে, নিহত দীপু চন্দ্রের পরিবারকে অর্থসহায়তা দিয়েছে শ্রীশ্রী জন্মাষ্টমী উদ্যাপন পরিষদ। মঙ্গলবার দুপুরে দীপু চন্দ্রের বাড়িতে গিয়ে ৫০ হাজার টাকার অর্থসহায়তার চেক তুলে দেওয়া হয়। এ সময় সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সহসভাপতি আশুতোষ দাশ, কার্যকরী সাধারণ সম্পাদক বিপ্লব দে পার্থ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লায়ন রবিশংকর আচার্য্য, চট্টগ্রাম জেলা সৎসঙ্গের সাধারণ সম্পাদক সুমন ঘোষ বাদশা প্রমুখ উপস্থিত।
এমকে
জাতীয়
প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকদের দশম গ্রেডের প্রজ্ঞাপন জারি
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের চাকরি দশম গ্রেডে উন্নীত করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। গত ১৫ ডিসেম্বর থেকে দশম গ্রেডে বেতন-ভাতা পাবেন শিক্ষকরা।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়ে, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিদ্যমান বেতন স্কেল-২০১৫ অনুযায়ী বর্তমান গ্রেড ১১ (স্কেল ১২৫০০-৩০২৩০) থেকে দশম গ্রেড (স্কেল ১৬০০০-৩৮৬৪০) (গেজেটেড কর্মকর্তা)-এ উন্নীত করা হলো।
শিক্ষকরা জানান, নভেম্বর মাসের বেতন-ভাতা ১১তম গ্রেড শিক্ষকরা উত্তোলন করেছেন।
১৫ ডিসেম্বর থেকে প্রাপ্য নতুন গেডের বেতন পরবর্তী মাসে জানুয়ারিতে যুক্ত হবে।
প্রসঙ্গত, দীর্ঘদিন আন্দোলন-সংগ্রামের পর প্রধান শিক্ষকদের দাবি আদায় হলো। তবে সহকারী শিক্ষকরা ১১তম বা ১২তম গ্রেডের দাবি আদায় করতে পারেননি। সর্বশেষ তারা আন্দোলন কর্মসূচি চালিয়ে শিক্ষার্থীদের তৃতীয় প্রান্তিক মূল্যায়নের কারণে ডিসেম্বরের আন্দোলন কর্মসূচি স্থগিত করেন।
এমকে
জাতীয়
নির্বাচনে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা চায় পুলিশ
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা চেয়েছে পুলিশ।
মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) নির্বাচন ভবনের ডিসি-এসপি, সব রেঞ্জের ডিআইজি, বিভাগীয় কমিশনার ও আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তাদের আয়োজিত এক সভায় এ ক্ষমতা প্রদানের দাবি জানানো হয়।
বিভিন্ন জেলা থেকে আগত পুলিশ সুপাররা (এসপি) বলেন, আমরা প্রতিনিয়ত অভিযান চালিয়ে আসামিসহ অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করছি। আমাদের পর্যাপ্ত যানবাহন সংকট রয়েছে।
জনবল সংকটের কারণে পর্যাপ্ত জনবল বাড়ানো প্রয়োজন। একই দিনে দুটি নির্বাচন, বড় একটা চ্যালেঞ্জ হবে। নির্বাচনের দিন অসুস্থ, প্রতিবন্ধী লোক ভোট দিতে গেলে পুলিশকে বলা হয় সহযোগিতা করার জন্য। এখানে রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির কর্মীদের রাখলে সুবিধা হবে। তারা বলেন, বিগত নির্বাচনগুলোতে পুলিশের যে বাজেট ছিল এটা বৈষম্য ছিল। এই নির্বাচনে বাজেট বাড়ানো প্রয়োজন। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বাড়ানোর পাশাপাশি পুলিশেরও ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেওয়া প্রয়োজন।
জেলা প্রশাসকরা (ডিসি) বলেন, মাঠপর্যায়ে এখনো যে বৈধ অস্ত্র রয়েছে। দ্রুত অস্ত্রগুলো রিকভারি করতে আপনাদের (নির্বাচন কমিশনের) সহযোগিতা চাই। দূর অঞ্চলে যাতায়াতের জন্য হেলিকপ্টার দেওয়া দরকার।
তারা বলেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে অপতথ্য প্রচার আমাদের বড় চ্যালেঞ্জ। আমরা আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করছি। আইনের বাইরে আমরা একটি কাজও করতে রাজি নই। আমাদের অনেক উপজেলায় গাড়ি পুড়ে গেছে। সেসব উপজেলায় গাড়ি প্রয়োজন। এ ছাড়া গণভোটের প্রচারের জন্য সময় বাড়ানো দরকার। আবার সীমান্ত জেলাগুলোতে নিরাপত্তা বাড়ানো প্রয়োজন বলেও উল্লেখ করেন তারা।
এমকে
জাতীয়
১৬ পৃষ্ঠার বই ৫০০ টাকায় কিনতে সরকারের নির্দেশ
মাত্র ১৬ পৃষ্ঠার বই, ‘জুলাই ২০২৪ গণঅভ্যুত্থান স্মৃতিস্মারক’। শুভেচ্ছা মূল্য ৫০০ টাকা। প্রকাশ না হলেও বইটির প্রচার-প্রসারে নির্দেশ দিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম। এরপর এটি কিনতে সরকারি কর্মকর্তারা আদাজল খেয়ে নেমেছেন। অর্থ থেকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, শিক্ষা দপ্তর– সবখানে বইটি কেনার অনুরোধে চলছে চিঠি চালাচালি।
মজার ব্যাপার, বইটির প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ‘জুলাই চেতনা পাবলিকেশন’। এটির কর্ণধার আশরাফুল আলম। জুলাই চেতনা পাবলিকেশনের অফিস পর্যন্ত নেই। সরকারি দপ্তরের নিবন্ধনের কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
বইটি এখনো প্রকাশ হয়নি বলে স্বীকার করেন জুলাই চেতনা পাবলিকেশনের কর্ণধার আশরাফুল আলম। প্রকাশের আগেই কিনতে সরকারি নির্দেশনার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ৮৪৪ শহীদের প্রতি সহানুভূতি দেখানো একটি সামাজিক দায়িত্ব। সরকার একা সব কাজ করতে পারবে না। এজন্য আমরা সহযোগী হিসেবে কাজ করছি।’
আইনি বৈধতা ছাড়া এভাবে ভুঁইফোঁড় প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান খুলে বই বিক্রির বিষয়ে জানতে চাইলে আশরাফুল রেগে যান। প্রতিবেদক জুলাইয়ের চেতনা ধারণ (ওন) করেন কিনা প্রশ্ন ছুড়ে তিনি বলেন, ‘শহীদদের প্রতি হৃদয় থেকে আবেগ থাকলে ছাপানোর আগেই উদ্যোগ নেওয়া যায়।’
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আওয়ামী লীগের আমলে এমন চিত্র ছিল বেশ চেনা। বইয়ের পাতায় শেখ মুজিবুর রহমান বা তাঁর পরিবারের কেউ থাকলেই সরকারি দপ্তরে সেটি কেনার হিড়িক পড়ত। মান বা দাম দেখা হতো না। রাষ্ট্রীয় অর্থে অনেক ভুঁইফোঁড় প্রকাশনী রাতারাতি আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়েছে। গণঅভ্যুত্থানের পরে পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে এমনটি কাম্য নয়।
কথাসাহিত্যিক জিয়া হাশান বলেন, দুঃখজনক হলো, আওয়ামী আমলের মতোই জুলাই নিয়ে বাণিজ্য শুরু হয়েছে। বাজারেই আসেনি, সেই বই কীভাবে মন্ত্রণালয় কেনার নির্দেশ দেয়?
অপ্রকাশিত বই কিনতে সরকারি তোড়জোড়
সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে ঘুরছে একটি ‘অত্যন্ত জরুরি’ চিঠি। তার বিষয় হিসেবে লেখা, ‘জুলাই ২০২৪ গণ-অভ্যুত্থান স্মৃতিস্মারক’ নামের একটি বিশেষ বই কেনা।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব কাজী শরীফ উদ্দিন আহমেদ স্বীকার করেছেন, তিনি অধীন প্রতিষ্ঠানগুলোকে বইটি কেনার জন্য চিঠি দিয়েছেন। তবে কাজী শরীফ বইটি দেখেছেন কিনা, কত কপি কিনতে বলেছেন– প্রশ্নে উত্তর না দিয়ে কল কেটে দেন। একাধিকবার কল করলেও রিসিভ হয়নি।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব সারমিন সুলতানা এবং মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটির যুগ্ম পরিচালক ফরিদুল হকের সই করা পৃথক চিঠিতে বইটি কেনার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তবে অদৃশ্য বই কেনার বিষয়ে বিস্তারিত জানতে বেশ কয়েকবার ফোন দিলেও দুজনের কেউই রিসিভ করেননি।
অবশ্য জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের পরিচালক আফসানা বেগম জানিয়েছেন, এ ধরনের কোনো প্রস্তাব মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় বা অন্য কোনো মন্ত্রণালয় থেকে তাদের কাছে আসেনি।
যেভাবে এলো নির্দেশনা
জানা যায়, গত ১৫ সেপ্টেম্বর ‘জুলাই চেতনা পাবলিকেশন’ মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টার কাছে একটি আনুষ্ঠানিক আবেদন জমা দেয়। এতে উল্লেখ করা হয়, ২০২৪ সালের জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ইতিহাস ধরে রাখতে বইটি গুরুত্বপূর্ণ। এতে ৮৪৪ শহীদের ছবি, পরিচয় ও তথ্য থাকবে। বলা হয়, এটি দেশের শিক্ষার্থী, গবেষক ও সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য একটি ‘মূল্যবান দলিল’ হবে।
আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম বইটি কেনার জন্য ‘ডিও লেটার’ (আধা সরকারিপত্র) ইস্যু করেন। তাঁর নির্দেশের পরপরই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, কারিগরি শিক্ষা বোর্ড, অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি), আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ (এফআইডি) এবং স্বাস্থ্য শিক্ষা সম্পর্কিত সব দপ্তরের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় বইটি কিনে সংরক্ষণের নির্দেশনা দেওয়া হয়।
প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান সূচিপত্রের কর্ণধার সাঈদ বারী বলেন, যে বই এখনো ছাপা হয়নি, তা কিনতে তোড়জোড় কেন, বুঝতে পারছি না। অপ্রকাশিত বই কিনতে উপদেষ্টার নির্দেশনা খুবই খারাপ দৃষ্টান্ত হয়ে থাকল।
তিনি আরও বলেন, এভাবে বই কেনার নিয়মও বোধ হয় নেই। বই তারা জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র বা এ রকম প্রতিষ্ঠানে দিতে পারতো। সরাসরি মন্ত্রণালয় থেকে এমন নির্দেশনা ভালো হলো না।
এমকে




