অর্থনীতি
পাঁচ ব্যাংকের গ্রাহকরা ডিসেম্বরেই পাবেন সর্বোচ্চ ২ লাখ টাকা
সংকটে থাকা পাঁচ শরিয়াভিত্তিক ব্যাংকের আমানতকারীরা চলতি ডিসেম্বরের মধ্যেই ইন্স্যুরেন্স ফান্ড থেকে সর্বোচ্চ দুই লাখ টাকা ফেরত পাবেন। তবে টাকা তুলতে হলে তাদের ‘সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক’-এর নামে নতুন অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক ও সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংকের একাধিক সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী, গ্লোবাল ইসলামী, সোশ্যাল ইসলামী, এক্সিম এবং ইউনিয়ন ব্যাংক একীভূত হয়ে গঠিত সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক ২ ডিসেম্বর থেকে আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংক রেজোলিউশন ডিপার্টমেন্টের একজন কর্মকর্তা জানান, টাকা ফেরত দেওয়ার ক্ষেত্রে তিনটি চ্যালেঞ্জ সামনে রয়েছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে—নতুন ব্যাংকের নিজস্ব ডেটা সফটওয়্যার তৈরি, গ্রাহকের তথ্য যাচাই এবং নতুন অ্যাকাউন্ট খোলা ও সেখান থেকে অর্থ প্রদান। এ ছাড়া একীভূতকরণ স্কিম, বিশেষ নিরীক্ষা প্রতিবেদন এবং আইটি অবকাঠামো নিয়েও মঙ্গলবার গভর্নরের সঙ্গে ব্যাংকের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আয়ুব মিয়ার বৈঠকে আলোচনা হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা এ বিষয়ে জানান, এক্সিম ব্যাংকের নিরীক্ষা রিপোর্ট বিশেষ সতর্কতার সঙ্গে পর্যালোচনা করতে নির্দেশ দিয়েছেন গভর্নর। আইটি অবকাঠামো আপাতত ভাড়ায় নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে; পুরো সমন্বয় সম্পন্ন হতে তিন বছর পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।
ডিসেম্বরে টাকা দেওয়ার আশা
সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আয়ুব মিয়া বলেন, ইনসুরেন্স ফান্ডের টাকা পাওয়া গেছে। এখন গ্রাহকদের নামে নতুন অ্যাকাউন্ট খোলা, পুরোনো অ্যাকাউন্ট একীভূত করা এবং শাখাভিত্তিক ছাড় প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলেই অর্থ দেওয়া যাবে। ডিসেম্বরের মধ্যেই গ্রাহকরা টাকা পাবেন বলে আশা করছি।
আগামী সপ্তাহেই অনুষ্ঠিত হবে বোর্ড মিটিং, আর চলতি মাসেই নতুন এমডি নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ হবে। টাকা গ্রাহকের হাতে যাওয়ার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক একটি পূর্ণাঙ্গ স্কিম প্রস্তুত করছে। স্কিম চূড়ান্ত হলে তা প্রকাশ করা হবে।
যারা তুলতে পারবেন
যাদের হিসাবে সর্বোচ্চ দুই লাখ টাকা রয়েছে, তারা পুরো টাকা তুলতে পারবেন। এখানে দুই লাখের বেশি থাকলে আপাতত দুই লাখ দেওয়া হবে। বাকি অংশ পরে নির্ধারিত নীতিমালা অনুযায়ী ফেরত দেওয়া হবে।
যে নিয়মগুলো মানতে হবে
একই ব্যাংকে একজনের একাধিক হিসাব থাকলে জাতীয় পরিচয়পত্র-ভিত্তিক মাত্র একটি হিসাবের বিপরীতে টাকা মিলবে। পাঁচ ব্যাংকে আলাদা আলাদা হিসাব থাকলে প্রত্যেক ব্যাংক থেকেই সর্বোচ্চ দুই লাখ টাকা পাওয়া যাবে। কোনো হিসাবের বিপরীতে ঋণ থাকলে আপাতত টাকা মিলবে না—ঋণ সমন্বয়ের পর সিদ্ধান্ত হবে।
১২ হাজার কোটি লাগবে ফেরতে
বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে, গ্রাহকদের টাকা ফেরত দিতে লাগবে প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা—যা আসবে ডিপোজিট ইন্স্যুরেন্স স্কিম থেকে। সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধন নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৫ হাজার কোটি টাকা। যেখানে ২০ হাজার কোটি দেবে সরকার আর ১৫ হাজার কোটি আসবে গ্রাহকের আমানতকে শেয়ারে রূপান্তর করে। ইতোমধ্যে সরকারের বরাদ্দ এবং ইনসুরেন্স ফান্ডের অংশ নতুন ব্যাংকের হিসাবে ছাড় হয়েছে।
নতুন ব্যাংকের প্রস্তুতি
নতুন ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় চালু হয়েছে মতিঝিলের সেনাকল্যাণ ভবনে। চেয়ারম্যানসহ পর্ষদে সরকারের সাবেক ও বর্তমান আমলারা নিয়োগ পেয়েছেন। খুব শিগগিরই স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দিয়ে পর্ষদ আরও শক্তিশালী করা হবে।
অর্থনীতি
আরও ১৫ কোটি ডলার কিনলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক
দেশের বৈদেশিক মুদ্রাবাজার স্থিতিশীল রাখতে এবং রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয়ের প্রবাহকে সহায়তা দিতে ব্যাংকগুলো থেকে অতিরিক্ত ডলার কিনছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) ১৬টি ব্যাংক থেকে প্রায় ১৫ কোটি মার্কিন ডলার (১৪৯ মিলিয়ন ডলার) কেনা হয়েছে।
এ সময় প্রতি ডলারের বিনিময় হার ছিল ১২২.২৫ টাকা থেকে ১২২.২৯ টাকা পর্যন্ত। কাট-অফ রেট ১২২.২৯ টাকা, যা মাল্টিপল প্রাইস নিলাম (Multiple Price Auction) পদ্ধতির মাধ্যমে সম্পন্ন হয়েছে।
চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরে এ পর্যন্ত নিলাম পদ্ধতির মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংক মোট ২৬৬ কোটি ৩০ লাখ (২.৬৬ বিলিয়ন ডলার) ডলার কিনেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংক গত ১৩ জুলাই থেকে নিলামের মাধ্যমে ডলার কেনা শুরু করে। ওই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবেই এখন পর্যন্ত এই বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা সংগ্রহ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান জানান, মাল্টিপল প্রাইস অকশনের মাধ্যমে ১৬ ব্যাংক থেকে ১৪৯ মিলিয়ন বা ১৪ কোটি ৯০ লাখ ডলার কেনা হয়েছে। এ সময় ডলারের দর নির্ধারণ হয় প্রতি ডলারে ১২২.২৫ টাকা থেকে ১২২.২৯ টাকা পর্যন্ত। এখন পর্যন্ত এ নিয়ে চলতি অর্থবছরে নিলাম পদ্ধতির মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংক মোট ২৬৬ কোটি ৩০ লাখ ডলার কিনেছে।
অর্থনীতি
একীভূত ৫ ব্যাংকের গ্রাহকদের টাকা ফেরত সময়ের ব্যাপার মাত্র: বাংলাদেশ ব্যাংক
নবগঠিত সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক থেকে আমানতকারীদের টাকা ফেরত দেওয়া এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা। এ বিষয়ে গ্রাহকদের উদ্বিগ্ন হওয়ার কোনো কারণ নেই বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান।
তিনি বলেন, একীভূত হওয়া পাঁচ ব্যাংকের সব তথ্য নতুন ব্যাংকের ডাটাবেসে যুক্ত করা হবে। পুরোনো সব গ্রাহকই এখন নবগঠিত ব্যাংকের গ্রাহক হিসেবে বিবেচিত হবেন। নতুন ব্যাংকের আইটি ও এইচআর কাঠামো গড়ে তোলার কাজ চলমান। প্রয়োজনে বাংলাদেশ ব্যাংকের আইটি টিম তাদের সহায়তা করবে।
বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে এসব কথা বলেন তিনি।
আরিফ হোসেন খান বলেন, প্রথমে যে ব্যাংকের গ্রাহক তিনি তার নিজের ব্যাংক থেকেই টাকা পাবেন। এক ব্যাংকের গ্রাহককে অন্য ব্যাংক থেকে টাকা দেওয়ার প্রশ্নই আসে না। ডেটা স্থানান্তর সম্পন্ন হলেই ধাপে ধাপে টাকা ফেরত দেওয়া শুরু হবে।
নির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা না করার কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, আজ যদি বলি ১৭ ডিসেম্বর থেকে টাকা দেওয়া হবে, তাহলে সেদিন পাঁচ ব্যাংকের সব শাখায় ভয়াবহ ভিড় তৈরি হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষেও সেটি সামাল দেওয়া কঠিন হবে। তাই তারিখ ঘোষণা না করে ধীরে ধীরে টাকা দেওয়া হবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র বলেন, নতুন কোনো অ্যাকাউন্ট খোলার প্রয়োজন নেই। সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নতুন ব্যাংকের নামে বাংলাদেশ ব্যাংকে যে কারেন্ট অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে, তাতে ২০ হাজার কোটি টাকা এরই মধ্যে জমা দেওয়া হয়েছে। ফলে টাকা ফেরত দিতে আর কোনো বাধা নেই।
গ্রাহকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, যাদের খুব প্রয়োজন, তারা টাকা তুলবেন। কিন্তু যার প্রয়োজন নেই, শুধু অন্য ব্যাংকে সরানোর উদ্দেশ্যে উত্তোলন না করাই ভালো। সবাই অপ্রয়োজনে টাকা তুলতে গেলে নতুন ব্যাংকটি ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ পাবে না।
সবশেষ তিনি নবগঠিত সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংকের প্রতি আস্থা রাখতে গ্রাহকদের প্রতি আহ্বান জানান।
অর্থনীতি
প্রথমবার মুনাফা দিল দেশের প্রথম স্যাটেলাইট
২০১৮ সালে বিশাল প্রত্যাশা নিয়ে উৎক্ষেপণের পর টানা কয়েক বছর লোকসানে ছিল দেশের প্রথম স্যাটেলাইট বাংলাদেশ স্যাটেলাইট-১। তবে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এসে প্রথমবারের মতো স্যাটেলাইটটি লাভের মুখ দেখেছে। আর এই মুনাফা এসেছে সক্ষমতার মাত্র অর্ধেক ব্যবহার করেই।
স্যাটেলাইটটি পরিচালনাকারী রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেড (বিএসসিএল) সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে ৩৮.৩৫ কোটি টাকা নিট মুনাফা করেছে। এর মাধ্যমে বিগত বছরগুলোর ধারাবাহিক লোকসান কাটিয়ে উঠেছে কোম্পানিটি। গত ১ ডিসেম্বর কোম্পানির পর্ষদ সভায় নিরীক্ষিত হিসাব অনুমোদন করা হয়।
এই তথ্য বলছে, প্রতিষ্ঠানটি ধীরে ধীরে নিজেদের বাজার খুঁজে পাচ্ছে। গত বছরের তুলনায় আয় ৯.২৪ শতাংশ বেড়ে ১৮৭.০৭ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। এই আয়ের মূল উৎস হলো টেলিভিশন চ্যানেল, রেডিও স্টেশন, ডিটিএইচ অপারেটর, সশস্ত্র বাহিনী ও বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সংস্থার কাছে ব্যান্ডউইথ বিক্রি। স্যাটেলাইটের মোট ৪০টি ট্রান্সপন্ডারের মধ্যে ২৬টি এখন বাণিজ্যিকভাবে সক্রিয় রয়েছে।
বিএসসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইমাদুর রহমান বলেন, ‘দেশে-বিদেশে অব্যবহৃত ক্যাপাসিটি বিক্রি করার জন্য আমরা বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছি।’
তিনি জানান, এজন্য আলাদা বাণিজ্যিক দল গঠন করা হয়েছে এবং সেবার মান বাড়াতে বিনিয়োগ করা হয়েছে। পাশাপাশি ব্যয় ব্যবস্থাপনা, দক্ষতা বৃদ্ধি ও পরিচালন ব্যবস্থায় কঠোর শৃঙ্খলা মেনে চলায় প্রতিষ্ঠানটি স্থিতিশীল হতে পেরেছে।
তারপরও বিএসসিএল বর্তমানে তাদের স্যাটেলাইটের সক্ষমতার মাত্র ৫০ শতাংশ ব্যবহার করছে। ইমাদুর রহমান বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী কোনো স্যাটেলাইটের ৮০ শতাংশ সক্ষমতা ব্যবহৃত হলে সেটিকে সফল হিসেবে গণ্য করা হয়। আমাদের লক্ষ্য হলো ব্যবহারের হার সেই পর্যায়ে উন্নীত করা।’
স্টারলিংকের অনুমোদিত রিসেলার হিসেবে কাজ করার সুযোগ কোম্পানিটির জন্য বড় সম্ভাবনা হতে পারে। ইমাদুর রহমান মনে করেন, সঠিকভাবে পরিচালনা করা গেলে এই অংশীদারিত্ব বিএসসিএলের সামগ্রিক ব্যবসায়িক অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করবে।
চলতি বছরে এই ঘুরে দাঁড়ানোর পেছনে একাধিক কারণ রয়েছে। বিএসসিএল প্রথমবারের মতো ২.৬১ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফা করেছে। অন্যদিকে, এফডিআর ও ব্যাংক আমানত থেকে আসা আয়ের ফলে অপরিচালন মুনাফা ৫৮ শতাংশ বেড়ে ৫৮.০৬ কোটি টাকায় পৌঁছেছে—যা মূলত নিট মুনাফায় বড় ভূমিকা রেখেছে। কোম্পানিটি ট্রান্সপন্ডার ও ব্যান্ডউইথ ব্যবহারের জন্য মাসিক ফি নিয়ে থাকে, যা ব্যান্ড ও সেবার ধরন অনুযায়ী ভিন্ন হয়।
সম্প্রচার সেবার বাইরেও বিএসসিএল এখন স্যাটেলাইটভিত্তিক ডেটা সংযোগ, নৌ ও বিমান চলাচল সেবা, জরুরি যোগাযোগ এবং সরকারি-বেসরকারি গ্রাহকদের জন্য কাস্টমাইজড সমাধানে কার্যক্রম সম্প্রসারিত করছে। কর্মকর্তারা বলছেন, আয়ের টেকসই ভিত্তি তৈরির জন্য সেবার এই বহুমুখীকরণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
দীর্ঘমেয়াদে সক্ষমতা বাড়াতে বিশ্ববিদ্যালয়, গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর সঙ্গে সহযোগিতামূলক সম্পর্ক জোরদার করেছে বিএসসিএল। এর উদ্দেশ্য দক্ষ স্যাটেলাইট প্রকৌশলী ও মহাকাশ প্রযুক্তিবিদ তৈরি করা।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের অধীনে ২০১৭ সালে বিএসসিএল গঠিত হয়। ২০১৮ সালে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের পর এটি পূর্ণাঙ্গ বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করে।
তাদের পরবর্তী লক্ষ্য এখনই দৃশ্যমান। সরকার বাংলাদেশ স্যাটেলাইট-২-এর সম্ভাব্যতা যাচাই করছে। দ্বিতীয় স্যাটেলাইটটি আবহাওয়ার পূর্বাভাস, কৃষি, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, রিমোট সেন্সিং ও জাতীয় নিরাপত্তার মতো ক্ষেত্রে উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহারে সহায়তা করতে পারে।
এমকে
অর্থনীতি
৫ ইসলামী ব্যাংকের গ্রাহকরা আমানত ফেরত পাবেন যেভাবে
সম্মিলিত ইসলামী পাঁচ ব্যাংকের আমানতকারীদের টাকা ফেরত দিতে বিশেষ স্কিমের খসড়া চূড়ান্ত করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। স্কিম অনুযায়ী প্রথম ধাপে একজন গ্রাহক একবারে সর্বোচ্চ ২ লাখ টাকা তুলতে পারবেন। এই অর্থ দেওয়া হবে আমানত বিমা তহবিল থেকে। এরপর যাদের আমানত দুই লাখ টাকার বেশি, তারা প্রতি তিন মাসে সর্বোচ্চ ১ লাখ টাকা করে তুলতে পারবেন।
গভর্নর আহসান এইচ. মানসুরের সভাপতিত্বে মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংকে একীভূত হওয়া ‘সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক পিএলসির’ চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আইয়ুব মিয়াকে নিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে চার ডেপুটি গভর্নর, পাঁচ সমস্যাগ্রস্ত ইসলামী ব্যাংকের প্রশাসক এবং সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা অংশ নেন।
বৈঠকে থাকা বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা জানান, একীভূত ব্যাংকের গ্রাহকদের টাকা ফেরত দেওয়ার ক্ষেত্রে জটিলতা তৈরি হয়েছে। কারণ নতুন ব্যাংক থেকে টাকা ফেরত দেওয়ার কথা থাকলেও এখনো সেই ব্যাংকের ডাটাবেজ তৈরি হয়নি এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালকও নিয়োগ করা হয়নি। ফলে আইনি একটি বাধা দাঁড়িয়েছে। তবুও গভর্নর নির্দেশ দিয়েছেন—ডিসেম্বরের মধ্যেই টাকা ফেরত দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে।
এমন পরিস্থিতিতে আমানতকারীদের অর্থ ফেরত দেওয়ার ক্ষেত্রে যেসব জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে সেগুলো সমাধানে কি করা যায়, এসব বিষয়ে আলোচনা হয়। পাশাপাশি আমানতকারীদের টাকা ফেরত দিতে বিশেষ স্কিমের খসড়া চূড়ান্ত করা হয়।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানান, যেসব গ্রাহকের হিসাবে ২ লাখ টাকা বা এর কম আছে, স্কিম কার্যকর হওয়ার পর তারা পুরো টাকা একবারেই তুলতে পারবেন।
আর যাদের হিসাবে ২ লাখ টাকার বেশি রয়েছে, তারা প্রতি তিন মাস অন্তর সর্বোচ্চ ১ লাখ টাকা করে দুই বছর পর্যন্ত তুলতে পারবেন।
তবে ৬০ বছরের বেশি বয়সী গ্রাহক অথবা ক্যানসার বা জটিল রোগে আক্রান্ত আমানতকারীদের জন্য এই সীমা শিথিল রাখা হয়েছে—তারা প্রয়োজন অনুযায়ী যেকোনো পরিমাণ টাকা তুলতে পারবেন।
এদিকে প্রয়োজন ছাড়া টাকা তুলতে নিরুসাহিত করেছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা। তারা বলছেন ব্যাংকটি সম্পূর্ণ নতুন হওয়ায় মৌলিকভাবে কোনো জটিলতা নেই। তাই সবার টাকা তোলা বাধ্যতামূলক নয়; তবে কেউ চাইলে স্কিম অনুযায়ী তুলতে পারবেন। এই স্কিমের মূল লক্ষ্য হলো আমানতকারীদের মধ্যে তৈরি হওয়া আস্থাহীনতা দূর করা এবং ধাপে ধাপে ব্যাংকিং খাতে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা।
স্কিমের সুবিধা পেতে গ্রাহকের অবশ্যই জাতীয় পরিচয়পত্রের বিপরীতে খোলা বৈধ হিসাব থাকতে হবে। এক ব্যাংকে একাধিক হিসাব থাকলেও একজন গ্রাহক একটি হিসাব থেকেই এ সুবিধা পাবেন। তবে পাঁচ ব্যাংকে একজনের আলাদা আলাদা হিসাব থাকলে প্রতিটি হিসাবের বিপরীতে পৃথকভাবে টাকা পাওয়ার সুযোগ থাকবে। যেসব আমানতকারীর ঋণ রয়েছে, তারা ঋণ সমন্বয় না করা পর্যন্ত স্কিমের আওতায় টাকা তুলতে পারবেন না।
গত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে কয়েকটি প্রভাবশালী গ্রুপ জালিয়াতির মাধ্যমে ডজনখানেক ব্যাংক থেকে বিপুল পরিমাণ ঋণ তুলে নেয়। এসব অনিয়ম ও ঋণ কেলেঙ্কারির চাপেই ব্যাংকগুলো ধীরে ধীরে গভীর সংকটে পড়ে। এরমধ্যে সংকটে থাকা পাঁচটি ব্যাংক একত্রিত করে ‘সম্মিলিত ইসলামি ব্যাংক’ গঠনের অনুমতি দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ব্যাংকগুলো হলো– এক্সিম, সোশ্যাল ইসলামী, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী, গ্লোবাল ইসলামী ও ইউনিয়ন ব্যাংক।
সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক পিএলসির পরিশোধিত মূলধন নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৫ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকার দিচ্ছে ২০ হাজার কোটি এবং আমানতকারীদের শেয়ার থেকে আসবে বাকি ১৫ হাজার কোটি টাকা। অনুমোদিত মূলধন রাখা হয়েছে ৪০ হাজার কোটি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, পাঁচ ব্যাংকে বর্তমানে ৭৫ লাখ আমানতকারীর প্রায় ১ লাখ ৪২ হাজার কোটি টাকা জমা রয়েছে। বিপরীতে ঋণ রয়েছে ১ লাখ ৯৩ হাজার কোটি টাকা, যার বড় অংশ ইতোমধ্যে খেলাপি হয়ে পড়েছে।
সারা দেশে এসব ব্যাংকের ৭৬০টি শাখা, ৬৯৮টি উপশাখা, ৫১১টি এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট এবং ৯৭৫টি এটিএম বুথ রয়েছে। একীভূত হওয়ার পর একই এলাকার একাধিক শাখা মিলে একটি বা দুটি করা হবে। ব্যাংকগুলোর পরিচালন খরচ কমাতে এরই মধ্যে কর্মীদের বেতন–ভাতা ২০ শতাংশ কমানো হয়েছে।
সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংকের জন্য প্রাথমিকভাবে রাজধানীর মতিঝিল সেনা কল্যাণ ভবনে অফিস নেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মতিঝিল শাখায় একটি চলতি হিসাব খোলা হয়েছে। শিগগিরই পরিচালনা পর্ষদ গঠন ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগ দেওয়া হবে। এর আগে বিভিন্ন প্রক্রিয়া শেষে ৫ নভেম্বর প্রশাসক নিয়োগ ও ব্যাংকগুলোর শেয়ার শূন্য ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
এমকে
অর্থনীতি
হজযাত্রীদের বিমান টিকিটের ওপর আবগারি শুল্ক অব্যাহতি
২০২৬ সালের হজযাত্রীদের বিমান টিকিটের ওপর আবগারি শুল্ক অব্যাহতি দিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। হজের ব্যয় হ্রাস করতে এবং ধর্মপ্রাণ সাধারণ মানুষের হজ পালনের আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
বুধবার (১০ ডিসেম্বর) এ বিষয়ে প্রেস বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে সংস্থাটি। এর আগে রোববার অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
হজ পালনের ব্যয় হ্রাসের অভিপ্রায় বাস্তবায়নের স্বার্থে ২০২৫ সালের মতো ২০২৬ সালের হজ পালনের লক্ষ্যে সৌদি আরব গমনকারী যাত্রীদের বিমান টিকিটের ওপর প্রযোজ্য আবগারি শুল্ক অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
এতে করে প্রত্যেক হজযাত্রীর পবিত্র হজ পালনে সৌদি আরবে যাওয়া এবং আসা বাবদ বিমান টিকিটের খরচ প্রায় ৫ হাজার টাকা খরচ সাশ্রয় হবে।




