শিল্প-বাণিজ্য
রিকন্ডিশন্ড গাড়ি আমদানিতে সমন্বিত নীতিমালার দাবি বারভিডার
বাংলাদেশ রিকন্ডিশন্ড ভেহিক্যালস ইম্পোর্টার্স অ্যান্ড ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বারভিডা) বার্ষিক সাধারণ সভায় সংগঠনের নেতৃবৃন্দ দেশের সার্বিক গাড়ি আমদানি বাণিজ্য এবং সরকারের অটোমোবাইল শিল্প উন্নয়ন নীতিমালার আলোকে একটি সমন্বিত নীতিমালা প্রণয়নের উপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন। বারভিডা নেতৃবৃন্দ রিকন্ডিশন্ড গাড়ি আমদানি বাণিজ্যে স্থানীয় বিনিয়োগ, ব্যাপক কর্মসংস্থান, ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ শিল্পসমূহে বিনিয়োগ এবং সরকারকে প্রদত্ত রাজস্ব কাঠামোর প্রেক্ষিতে দেশের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে রিকন্ডিশন্ড গাড়ি আমদানি খাতের অবদান তুলে ধরেন।
মঙ্গলবার (০৯ ডিসেম্বর) রাতে রাজধানীর একটি ক্লাবে অনুষ্ঠিত বার্ষিক সাধারণ সভায় সংগঠনের প্রায় সাড়ে ৫০০ সদস্য উপস্থিত ছিলেন। বুধবার সংগঠনটির সেক্রেটারি জেনারেল রিয়াজ রহমানের স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।
বারভিডা প্রেসিডেন্ট আবদুল হকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় অ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি জেনারেল রিয়াজ রহমান, ভাইস প্রেসিডেন্টবৃন্দ, প্রাক্তন প্রেসিডেন্টবৃন্দ এবং কার্যনির্বাহী সদস্যবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
সভায় বারভিডা প্রেসিডেন্ট আবদুল হক বলেন, বারভিডা একটি সমাজ তথা রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ পরিবহন খাতে গত ৪ দশক ধরে সর্বাধুনিক প্রযুক্তির মানসম্পন্ন যানবাহন সরবরাহ করে দেশের পরিবহন খাতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে। বারভিডা আমদানিকৃত গাড়িগুলো জাপানের অভ্যন্তরীণ (Japanese Domestic Model)মডেলের, যা দেশের সিংহভাগ জনগোষ্ঠী ও প্রতিষ্ঠানের চাহিদা ও প্রয়োজন মিটিয়ে মানসম্পন্ন সেবা প্রদান করতে সক্ষম হচ্ছে। বারভিডা প্রেসিডেন্ট বলেন যে, রিকন্ডিশন্ড গাড়ি আমদানি ব্যবসা একটি ‘সোশ্যাল বিজনেস’, শুধুমাত্র মুনাফাকারী ব্যবসা নয়।
তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান প্রশাসন কর্তৃক বিভিন্ন দেশের পণ্য রপ্তানিতে পাল্টা শুল্ক আরোপের ফলে বিশ্ব বাণিজ্যের হিসাব-নিকাশ বদলে গেছে, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বিভিন্ন দেশকে নতুন করে সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রয়োজন হচ্ছে। বিনিয়োগ-শিল্প স্থানান্তরিত হচ্ছে। বিশ্ব বাণিজ্যে চীনের প্রভাব বলয় এবং দেশটির বিভিন্নমূখী উৎপাদন ক্ষমতা লক্ষণীয়ভাবে বিস্তৃত হওয়ায় ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে নতুন করে চিন্তাভাবনা শুরু হয়েছে। এ অবস্থায় বাংলাদেশকে জাতীয় স্বার্থ ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে সতর্কতার সাথে ভূকৌশলগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে।
আবদুল হক বলেন, বিভিন্নধর্মী গবেষণা ও প্রযুক্তিগত উৎকর্ষতার মধ্য দিয়ে বিশ্বের মোটরগাড়ি নির্মাণ এবং বিপণন শিল্পে বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটছে। বিশ্বে মার্সিডিজ, বিএমডব্লিউ ইত্যাদি নামকরা গাড়ির বিক্রি কমে যাচ্ছে। ক্রেতাদের সামর্থ্য, পছন্দ ও চাহিদা পরিবর্তিত হচ্ছে। আবার বিশ্বজুড়ে পরিবেশ সচেতনতার প্রেক্ষাপটে জ¦ালানি সাশ্রয়ী বৈদ্যুতিক গাড়ির চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ ফসিল ফুয়েল ও হাইব্রিড গাড়ি থেকে ক্রমান্বয়ে বৈদ্যুতিক গাড়ি ব্যবহারের পথে অগ্রসর হচ্ছে। বাংলাদেশ সরকারও দেশে বৈদ্যুতিক গাড়ি শিল্প প্রসারে ‘ইলেকট্রিক ভেহিকেল শিল্প উন্নয়ন নীতিমালা ২০২৫’ প্রণয়ন করেছে।
তিনি মনে করেন, বৈদ্যুতিক গাড়ি শিল্পে তুলনামূলক অনেক কম শুল্ক-কর ধার্য্য করায় বারভিডা আমদানিকৃত হাইব্রিড গাড়ির সাথে প্রতিযোগিতায় পড়তে হবে। এ অবস্থায়, রিকন্ডিশন্ড গাড়ি আমদানি বাণিজ্যে স্থানীয় বিনিয়োগ, ব্যাপক কর্মসংস্থান, ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ শিল্পসমূহে বিনিয়োগ এবং সরকারের রাজস্ব কাঠামোয় রিকন্ডিশন্ড গাড়ি আমদানি খাতের সার্বিক অবদানের প্রেক্ষিতে তিনি ভারসাম্য রক্ষা করে দেশের অটোমোবাইল শিল্পের জন্য সমন্বিত নীতিমালা প্রণয়নের দাবি জানান। বারভিডা প্রেসিডেন্ট আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সংগঠনে আধুনিক ও যুগোপযোগী জ্ঞানসম্পন্ন এবং অভিজ্ঞ নেতৃত্ব গড়ে তোলার উপর গুরুত্ব আরোপ করেন।
বার্ষিক সাধারণ সভায় অ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি জেনারেল রিয়াজ রহমান তার উপস্থাপিত ২০২৫ সালের বার্ষিক প্রতিবেদনে সংগঠনের গত ১ বছরের উল্লেখযোগ্য কার্যক্রমসমূহ তুলে ধরেন। সংগঠনের ট্রেজারার বারভিডার গত ১ বছরের আয়-ব্যয়ের হিসাব উপস্থাপন করেন। এছাড়াও সভায় বারভিডার আগামী অর্থবছরের বার্ষিক বাজেট অনুমোদন করা হয় এবং আগামী অর্থবছরের জন্য অডিটর নিয়োগ করা হয়।
সাধারণ সভার উন্মুক্ত আলোচনা পর্বে অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সদস্যবৃন্দ দেশের রিকন্ডিশন্ড গাড়ি আমদানি খাত এবং সংগঠনের স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় নিয়ে মতামত দেন। বারভিডাকে আরও গতিশীল, কার্যকর এবং যুগোপযোগী একটি বাণিজ্য সংগঠন হিসেবে গড়ে তুলতে তারা সর্বাত্মক সহযোগিতা ও সমর্থন দেন।
উল্লেখ্য, বারভিডা দেশের রিকন্ডিশন্ড গাড়ি আমদানি ও বিপণন খাতের জাতীয়ভিত্তিক বাণিজ্য সংগঠন। সংগঠনটি গত তিন দশকেরও বেশী সময় ধরে দেশের পরিবহন খাতে গাড়ি সরবরাহে প্রায় ৮৫ শতাংশ অবদান রেখে আসছে।
এমকে
অর্থনীতি
আজ থেকে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দিচ্ছে সরকার
দেশের বাজার সহনীয় রাখতে আজ রবিবার (০৭ ডিসেম্বর) থেকে সীমিত আকারে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেওয়া হবে। প্রতিদিন ৫০টি করে আইপি (আমদানি অনুমতি) ইস্যু করা হবে। প্রত্যেকটি আইপিতে সর্বোচ্চ ৩০ টন পেঁয়াজের অনুমোদন দেওয়া হবে।
শনিবার (৬ ডিসেম্বর) কৃষি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য অফিসার মোহাম্মদ জাকির হোসেনের পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়, চলতি বছরের ১ আগস্ট থেকে যে সব আমদানিকারক আমদানি অনুমতির জন্য আবেদন করেছেন তারাই কেবল আবেদন পুনরায় দাখিল করতে পারবেন। একজন আমদানিকারক একবারের জন্য আবেদনের সুযোগ পাবেন।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, পেঁয়াজের বাজার সহনীয় রাখতে পুনরাদেশ না দেওয়া পর্যন্ত এ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।
জানা গেছে, মাসখানেক আগে হঠাৎ অস্থির হয়ে ওঠে পেঁয়াজের বাজার। চার-পাঁচ দিনের ব্যবধানে ৪০ টাকার মতো বেড়ে যায় দাম। প্রতি কেজির দর ওঠে ১১৫ থেকে ১২০ টাকায়। এরপর সরকার আমদানির অনুমতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলে দর কিছুটা কমতে থাকে। ধীর ধীরে কমে ১০৫ থেকে ১১০ টাকায় নেমে আসে।
গত সপ্তাহে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, পেঁয়াজের পর্যাপ্ত মজুত আছে। নতুন পেঁয়াজও শিগগিরই বাজারে চলে আসবে। তাই কৃষকের স্বার্থ রক্ষায় আমদানির অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না। সরকারের এমন পদক্ষেপের সুযোগ নিচ্ছেন মজুতদার ব্যবসায়ীরা। ফলে ফের দাম বাড়ছে।
তবে টিসিবির হিসাবে, গত বছরের চেয়ে এখনও ১০ শতাংশ কম দর রয়েছে পেঁয়াজের। এদিকে বাজারে নতুন মুড়িকাটা পেঁয়াজ না এলেও পাতাযুক্ত পেঁয়াজ এসেছে। প্রতি কেজি কেনা যাচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকায়।
পেঁয়াজ ব্যবসায়ীরা জানান, আমদানি করা হবে না এমন খবরে দর বেড়েছে। মজুতদার ও কৃষক পর্যায়ে দর বাড়ার কারণে পাইকারি ও খুচরা বাজারে এর প্রভাব পড়েছে।
বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন গত ৯ নভেম্বর সাংবাদিকদের বলেছিলেন, চার-পাঁচ দিনের মধ্যে পেঁয়াজের দাম না কমলে আমদানির অনুমোদন দেওয়া হবে। তিনি বলেছিলেন, ‘আমরা বাজারে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখছি। দেশে প্রচুর পরিমাণ পেঁয়াজের মজুত রয়েছে। আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে নতুন পেঁয়াজ উঠবে। তারপরও যদি আগামী চার-পাঁচ দিনের মধ্যে দাম না কমে তাহলে আমদানির অনুমোদন দেওয়া হবে।
শিল্প-বাণিজ্য
বিদেশ থেকে চিনি আমদানি আপাতত বন্ধ: শিল্প উপদেষ্টা
অন্তর্বর্তী সরকারের শিল্প, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান বলেছেন, বিদেশ থেকে চিনি আমদানি করা আপাতত বন্ধ। দেশের চিনিকলের উৎপাদিত চিনি আগে বিক্রি হবে।
আজ শনিবার সকালে নাটোর উত্তরা গণভবনের উন্নয়নমূলক সংস্কারকাজের অগ্রগতি পরিদর্শনে এসে এসব কথা বলেন এ উপদেষ্টা।
চিনি নিয়ে শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান বলেন, ‘বিদেশ থেকে চিনি আমদানি করা আপাতত বন্ধ। কারণ, আমাদের দেশের চিনিকলগুলোতে উৎপাদিত যে চিনি জমা রয়েছে, সে চিনি আগে টিসিবির মাধ্যমে বিক্রি করছি। এটা চলমান রয়েছে। চিনিতে লাভ খুব দ্রুত আসে না। আমাদের দেশের চিনিকলগুলো ব্রিটিশ আমলের তৈরি। সারা দেশের যে চাহিদা, তার ছোট অংশ আমরা স্থানীয়ভাবে পূরণ করতে পারি। সক্ষমতা শুধু চিনির ওপর না থেকে চিনির সঙ্গে সঙ্গে অন্য কিছু উৎপাদনের চিন্তা করছে সরকার।’
শিল্প উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘ভর্তুকি দিয়ে চালানো চিনিকল চালানো সম্ভব নয়। আমরা চেষ্টা করছি। তাই আমাদের সময়ে বা আগামী সরকারের সময় ভালো খবর আসবে। দেশি উদ্যোক্তাদের প্রতি আমাদের আগ্রহ বেশি।’
গৃহায়ণ ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান বলেন, ‘আমাদের কাজ হচ্ছে উত্তরা গণভবনকে তৈরি রাখা। সভা কখন হবে তার নির্ধারিত তারিখ নেই। প্রত্যেক সরকারের আমলে সাধারণত একটি সভা হয়। বা তার চেয়ে বেশি হয়। দীর্ঘদিন এ গণভবনটি অবহেলিত ছিল। তাকে আমরা তৈরি করলাম।’
এ সময় পরিদর্শনে উপস্থিত ছিলেন শিল্প মন্ত্রণালয়ের উপসচিব আকন্দ মোহাম্মদ ফয়সাল উদ্দীন, নাটোরের জেলা প্রশাসক আসমা শাহীন, পুলিশ সুপার মুহাম্মদ আবদুল ওয়াহাবসহ বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
জাতীয়
ফ্রেশ সুগারে ক্ষতিকর রাসায়নিক: মেঘনা গ্রুপ চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে পরোয়ানা
মেঘনা গ্রুপের কোম্পানি মেঘনা সুপার রিফাইনারীর উৎপাদিত ব্র্যান্ড ‘ফ্রেশ সুগারে’ চিনির চেয়ে ‘সালফার ডাই অক্সাইড’-এর মাত্রা অনেক পরিমাণ বেশি বলে প্রমাণ পেয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নিরাপদ খাদ্য আদালত। ‘সালফার ডাই অক্সাইড সমৃদ্ধ’ নিম্নমানের চিনি তৈরি ও বাজারজাত করায় মেঘনা গ্রুপের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোস্তফা কামালের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।
সোমবার (২৪ নভেম্বর) বাংলাদেশের নিরাপদ খাদ্য আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট নুসরাত সাহারা বীথি গ্রেফতারের আদেশ দেন। মামলার বাদী ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নিরাপদ খাদ্য পরিদর্শক (স্যানিটারী ইন্সপেক্টর) মোহাং কামরুল হাসানের আবেদনের প্রেক্ষিতে এই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, চিনি প্রক্রিয়াকরণে সালফার ডাই অক্সাইড একটি ব্লিচিং এবং সংরক্ষণকারী উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হয়, যা চিনির রঙ উন্নত করে এবং এর স্থায়িত্ব বাড়ায়। এই রাসায়নিকটি ব্যবহার করে তৈরি চিনিকে ‘সালফিটেড চিনি’ বলা হয় এবং এটি একটি সাধারণ প্রক্রিয়াকরণ পদ্ধতি, যদিও এতে কিছু পরিমাণ সালফার থাকতে পারে। সালফার-মুক্ত চিনি তৈরি করা হয় সালফার ডাই অক্সাইড ব্যবহার না করে, যা স্বাস্থ্যকর বিকল্প হিসেবে বিবেচিত হয়।
মামলার বাদী খাদ্য পরিদর্শক কামরুল যাচাই বাছাইয়ে পাওয়া তথ্যের বরাতে বলেন, খাদ্য উৎপাদনকারী কোম্পানি মেঘনা গ্রুপের মেঘনা রিফাইনারি জনস্বাস্থ্যের ঝুঁকি তৈরি করে নিম্নমানের চিনি পণ্য বিক্রি করছে। এ কোম্পানির চিনিতে ‘চিনির মাত্রা কম ও সালফারের উপস্থিতি’ পাওয়া গেছে।
মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, মেঘনা সুগার মিলের উৎপাদিত চিনির একটি নমুনায় ন্যূনতম অনুমোদিত ৯৯.৭০ শতাংশের বিপরীতে ৭৭.৩৫ শতাংশ সুক্রোজ পাওয়া গেছে। একই চিনির নমুনায় সালফার ডাই-অক্সাইড পরীক্ষায় ০.০৮ পিপিএম পাওয়া যায়। বিএসটিআই মানদণ্ড অনুযায়ী, চিনিতে সালফার ডাই-অক্সাইডের কোনো উপস্থিতি থাকার কথা নয় বলে মামলার আবেদনে বলা হয়েছে।
খাদ্য পরিদর্শক কামরুল বলেন, সালফার ডাই-অক্সাইড হলো একটি প্রিজারভেটিভ এবং এটি কৃত্রিমভাবে চিনি সাদা করতে ব্যবহৃত হয়। আর চিনিতে কমমাত্রার সুক্রোজ থাকার অর্থ এতে চিনির বদলে কৃত্রিম মিষ্টি করার উপাদান ব্যবহার করা হয়েছে, ব্যাখায় বলেন ওই কর্মকর্তা। নিরাপদ খাদ্য আদালত মামলার পরবর্তী শুনানির জন্য ১৫ ডিসেম্বর ঠিক করেছে।
উল্লেখ্য, চিনির বাজারে মেঘনা গ্রুপ বর্তমানে শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে, যা সিটি গ্রুপের সাথে প্রতিযোগিতা করছে। মেঘনা গ্রুপ এবং সিটি গ্রুপ বাংলাদেশের চিনির বাজারের শীর্ষস্থানীয় দুটি প্রতিষ্ঠান। গত বছর মেঘনা গ্রুপের বাজার হিস্যা ছিল ১৭%, যা সিটি গ্রুপের ১৫% এর চেয়ে বেশি ছিল।
এমকে
শিল্প-বাণিজ্য
অ্যামাজন-আলিবাবায় সরাসরি পণ্য বিক্রি করতে পারবেন বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা
দেশের রপ্তানিকারকদের সামনে এখন বিশ্বব্যাপী সুপরিচিত অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ও মার্কেটপ্লেসের মাধ্যমে পণ্য বিক্রির সুযোগ তৈরি হয়েছে। গতকাল অনলাইনভিত্তিক রপ্তানি বাড়াতে বিজনেস-টু-বিজনেস-টু-কনজিউমার (বি২বি২সি) কাঠামোর মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির অনুমতি দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রানীতি বিভাগ এ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। নতুন নিয়মে রপ্তানিকারকেরা এখন বিশ্বের যেকোনো সুপরিচিত অনলাইন প্ল্যাটফর্ম, আন্তর্জাতিক মার্কেটপ্লেস, সাবসিডিয়ারি বা তৃতীয় পক্ষের ওয়্যারহাউসের মাধ্যমে পণ্য পাঠাতে পারবেন। অর্থাৎ দেশি উদ্যোক্তা বা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো এখন অ্যামাজন, আলিবাবা ও ফ্লিপকার্টের মতো বৈশ্বিক বিভিন্ন ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মগুলোর মাধ্যমে সরাসরি পণ্য বিক্রি করতে পারবেন।
এ ক্ষেত্রে বিদেশি কনসাইনি (যার ঠিকানায় রপ্তানিকৃত পণ্য পাঠানো হয় ও যিনি পণ্যটি গ্রহণ করেন) চূড়ান্ত ক্রেতা না হয়ে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করবে।
নতুন সার্কুলার অনুযায়ী, পণ্য রপ্তানি করতে হলে উদ্যোক্তাদের ওই অনলাইন প্ল্যাটফর্ম বা আন্তর্জাতিক ওয়্যারহাউসে নিবন্ধনের প্রমাণ এডি (অনুমোদিত ডিলার) ব্যাংকের কাছে জমা দিতে হবে। যেহেতু বি২বি২সি মডেলে সাধারণ বিক্রয় চুক্তি থাকে না, তাই রপ্তানিকারকেরা প্রফর্মা ইনভয়েসের (প্রাথমিক বা অগ্রিম বিল) ভিত্তিতে পণ্যের ন্যায্যমূল্য ঘোষণা করতে পারবেন। ওয়্যারহাউজিং বা অন্যান্য সেবা প্রদানকারী কনসাইনির নামে শিপিং ডকুমেন্টও গ্রহণ করতে পারবে এডি ব্যাংক।
রপ্তানি আয়ের অর্থ এডি ব্যাংকের মাধ্যমে স্বাভাবিক ব্যাংকিং চ্যানেল ছাড়াও আন্তর্জাতিক পেমেন্ট সার্ভিস অপারেটরের মাধ্যমে আনতে পারবেন রপ্তানিকারকেরা। অনলাইন প্ল্যাটফর্মভিত্তিক রপ্তানিতে একাধিক চালানের অর্থ একত্রে আসতে পারে। এ ক্ষেত্রে এডি ব্যাংক ফার্স্ট-ইন, ফার্স্ট-আউট নীতিতে রপ্তানি আয় সমন্বয় করবে। অর্থাৎ আগের চালানগুলো আগে সমন্বয় হবে।
খাত–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মতে, বাংলাদেশ ব্যাংকের এই সিদ্ধান্তের ফলে আন্তসীমান্ত ই-কমার্স সহজ হবে এবং বৈশ্বিক অনলাইন বাজারে বাংলাদেশের উপস্থিতি বাড়বে। পাশাপাশি ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের জন্য নতুন বাজার তৈরি হবে। নতুন কাঠামোটি আন্তর্জাতিক ডিজিটাল খুচরা বিক্রিতে বাংলাদেশি পণ্যের অংশগ্রহণ বাড়িয়ে বহুমুখী রপ্তানিতে সহায়তা করবে।
শিল্প-বাণিজ্য
দ্রুত বাড়ছে আমদানি ব্যয়, বাণিজ্য ঘাটতি ২৩ শতাংশ বৃদ্ধি
রপ্তানির তুলনায় দ্রুতগতিতে আমদানি ব্যয় বাড়ায় দেশের বাণিজ্য ঘাটতি আরও বিস্তৃত হয়েছে। এর প্রভাবে বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবও ঋণাত্মক অবস্থায় পড়েছে। খাত সংশ্লিষ্টদের মতে, এই ধারা অব্যাহত থাকলে টাকার মান ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে চাপ সৃষ্টি হতে পারে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের চলতি হিসাবের ভারসাম্য (ব্যালান্স অব পেমেন্ট) সংক্রান্ত সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ থেকে এক হাজার ১০৮ কোটি ৭০ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। একই সময়ে আমদানি ব্যয় দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৬৮০ কোটি ডলার, ফলে বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৫৭১ কোটি ২০ লাখ ডলার। আগের অর্থবছরের একই সময়ে এই ঘাটতির পরিমাণ ছিল ৪৬৪ কোটি ডলার। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে বাণিজ্য ঘাটতি বেড়েছে প্রায় ২৩ শতাংশ।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে চলতি হিসাব উদ্বৃত্ত থাকলেও চলতি অর্থবছরে তা ৪ কোটি ৮০ লাখ ডলারের ঘাটতিতে পরিণত হয়েছে। তবে সামগ্রিক লেনদেন ভারসাম্যে (ওভারঅল ব্যালান্স) কিছুটা উন্নতি দেখা গেছে। গত বছরের একই সময়ে যেখানে ১৪৮ কোটি ডলারের ঘাটতি ছিল, সেখানে এ বছর জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে ৮৫ কোটি ৩০ লাখ ডলারের উদ্বৃত্ত রেকর্ড হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, ‘রমজান সামনে রেখে ভোগ্যপণ্য আমদানি বেড়েছে। ফেব্রুয়ারি মাসের দ্বিতীয়ার্ধে রমজান শুরু হওয়ায় আগে থেকেই এলসি খোলা হয়েছে। ফলে রপ্তানির তুলনায় আমদানি বেশি হওয়ায় চলতি হিসাব ও বাণিজ্য ঘাটতি বেড়েছে।’
তিনি আরও জানান, সব ধরনের আমদানি নেতিবাচক নয়—উৎপাদনমুখী কাঁচামালও আমদানি হয়েছে, যা পরে রপ্তানি বা দেশীয় বাজারে বিক্রির মাধ্যমে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স প্রবাহে ইতিবাচক প্রবণতা দেখা গেছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) প্রবাসীরা ৭ দশমিক ৫৯ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৫ দশমিক ৯ শতাংশ বেশি। গত বছর একই সময়ে রেমিট্যান্স ছিল ৬ দশমিক ৫৪ বিলিয়ন ডলার।
এদিকে, প্রত্যক্ষ বৈদেশিক বিনিয়োগ (এফডিআই) বাড়লেও শেয়ারবাজারে বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে এফডিআই এসেছে ৩১ কোটি ৮০ লাখ ডলার, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ১১ কোটি ৪০ লাখ ডলার। তবে শেয়ারবাজারে বিদেশি পোর্টফোলিও বিনিয়োগ ঋণাত্মক অবস্থায় আছে। গত অর্থবছরের একই সময়ে ৫০ লাখ ডলারের বিনিয়োগ এলেও চলতি সময়ে নিট বিনিয়োগ ঋণাত্মক হয়ে দাঁড়িয়েছে ৪ কোটি ২০ লাখ ডলারে।




