আইন-আদালত
তিন শতাধিক বিচারককে পদোন্নতির সিদ্ধান্ত
সারাদেশের অধস্তন আদালতের তিন শতাধিক বিচারককে জেলা জজ পদে পদোন্নতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সুপ্রিম কোর্টের ফুলকোর্ট সভা।
মঙ্গলবার বিকেলে সুপ্রিম কোর্টের সব বিচারপতিদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত ফুলকোর্ট সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এছাড়া দুই শতাধিক বিচারককে অতিরিক্ত জেলা জজ পদে পদোন্নতির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ফুলকোর্ট সভার একাধিক সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
সূত্র জানায়, ফুলকোর্ট সভায় আলোচিত রেইনট্রি মামলায় আপিল বিভাগের নিষেধ থাকা সত্ত্বেও এক আসামিকে জামিন দেওয়ার ঘটনায় বিচারিক ক্ষমতা হারানো জেলা জজ কামরুন্নাহার ক্ষমতা ফিরে পাবেন কি না, এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে জিএ কমিটিকে দায়িত্ব অর্পণ করা হয়েছে।
প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের সভাপতিত্বে বিকেল ৩টা থেকে ৫টা পর্যন্ত ফুলকোর্ট সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় ২০টির অধিক অ্যাজেন্ডা নিয়ে আলোচনা হয়। তবে, সময় স্বল্পতার কারণে সুপ্রিম কোর্টের বার্ষিক ক্যালেন্ডার অনুমোদনের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি ফুলকোর্ট সভায়।
সভায় আপিল ও হাইকোর্ট বিভাগের অধিকাংশ বিচারপতি উপস্থিত ছিলেন।
আইন-আদালত
আবু সাঈদ হত্যা: সাক্ষী না আসায় আবারো পেছাল সাক্ষ্যগ্রহণ
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শিক্ষার্থী আবু সাঈদ হত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) সাবেক ভিসি হাসিবুর রশীদসহ ৩০ আসামির বিরুদ্ধে দশম দিনের সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য ছিল আজ। তবে সাক্ষী না আসায় সাক্ষ্যগ্রহণ পিছিয়ে আগামী ১০ নভেম্বর দিন ধার্য করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) বেলা সোয়া ১১টার পর এ দিন ধার্য করেন ট্রাইব্যুনাল-২। এদিন প্রসিকিউশনের পক্ষে সময় চেয়ে আবেদন করা হয়। পরে আবেদন মঞ্জুর করে নতুন দিন ধার্য করেন আদালত।
ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউশনের পক্ষে ছিলেন প্রসিকিউটর সহিদুল ইসলাম ও প্রসিকিউটর আবদুস সাত্তার পালোয়ান।
এ প্রসঙ্গে কনস্টেবল সুজনের আইনজীবী আজিজুর রহমান দুলু বলেন, সাক্ষী না আসার অর্থ হলো মামলায় ‘রিলাক্টেন্স অব দ্য প্রসিকিউশন’ বা যাদের সাক্ষী করা হয়েছে তাদের যথাসময় উপস্থিত করার দায়িত্ব। কিন্তু এটা প্রসিকিউশনের ব্যর্থতা বলে আমি মনে করি।
গত ১৩ অক্টোবর সাক্ষ্যগ্রহণের কথা ছিল। তবে সাক্ষী হাজির করতে পারেনি প্রসিকিউশন। এজন্য সময় চেয়ে আবেদন করেন প্রসিকিউটর মঈনুল করিম। তিনি বলেছিলেন, ‘শারীরিক অসুস্থতার কারণে আমাদের সাক্ষী আসতে পারেননি। বাকি প্রসিকিউটররা ট্রাইব্যুনাল-১ এ অন্য মামলা নিয়ে ব্যস্ত রয়েছেন। তাই আমাদের এ মামলায় ২০ অক্টোবরের পর সাক্ষী উপস্থাপন করতে চাই।’
ওই সময় প্রসিকিউশনের উদ্দেশে ট্রাইব্যুনাল বলেন, ‘সাক্ষী ব্যক্তিগত সমস্যার কারণে হাজির হতে পারেনি, এটা কি লেখা যায়? আপনারা যা বলছেন, এটা কি বলতে পারেন? এটা যে আদালত অবমাননা তা কি জানেন? যদি কাজই করতে না পারেন, ব্যস্তই থাকেন, তাহলে দুটি ট্রাইব্যুনাল কেন করা হলো? আপনাদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলার প্রক্রিয়া শুরু করা উচিত।’
গত ৬ অক্টোবর নবম দিনের সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরা শেষ হয়। ওইদিন জবানবন্দি দেন পুলিশের দুই উপপরিদর্শক। তারা হলেন– এসআই রফিক ও এসআই রায়হানুল রাজ দুলাল। দুজনই জব্দ তালিকার সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দিয়েছেন। পরে তাদের জেরা করেন পলাতক ২৪ আসামির পক্ষে চার স্টেট ডিফেন্সসহ গ্রেপ্তারদের আইনজীবীরা।
ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানি করেন প্রসিকিউটর মঈনুল করিম ও আবদুস সোবহান তরফদার। সঙ্গে ছিলেন প্রসিকিউটর সুলতান মাহমুদ।
এর আগে গত ২৯ সেপ্টেম্বর অষ্টম দিনের মতো সাক্ষ্য ও জেরা শেষ হয়। ওইদিন জবানবন্দি দিয়েছেন তিনজন। ২২ সেপ্টেম্বর সপ্তম দিনে প্রথমে ছয় নম্বর সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দেওয়া সিয়াম আহসান আয়ানকে জেরা করেন স্টেট ডিফেন্স ও আসামিপক্ষের আইনজীবীরা। ২১ সেপ্টেম্বর এ মামলায় সাক্ষ্য দেন আয়ান। গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর তিনিই আবু সাঈদকে হাসপাতালে নিতে সর্বপ্রথম এগিয়ে আসেন। নিজের সাক্ষ্যেও পুরো বর্ণনা তুলে ধরেছেন এই সাক্ষী।
গত ১৪ সেপ্টেম্বর পঞ্চম দিনের মতো জেরা শেষ হয়। ওইদিন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার লাইব্রেরিয়ান আনিসুর রহমানকে জেরা করা হয়। ৯ সেপ্টেম্বর চতুর্থ দিনে পাঁচ নম্বর সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দেন তিনি। একইদিন এসআই মো. তরিকুল ইসলামও জবানবন্দি দেন।
৮ সেপ্টেম্বর এ মামলায় সাক্ষ্য দেওয়া রংপুর মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. রাজিবুল ইসলামের জেরা শেষ করেন স্টেট ডিফেন্স ও আসামিপক্ষের আইনজীবীরা। ৭ সেপ্টেম্বর তিনি জবানবন্দি দেন। ওইদিন দ্বিতীয় সাক্ষী রংপুরে কর্মরত এনটিভির সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট একেএম মঈনুল হককেও জেরা করা হয়।
গত ২৮ আগস্ট জুলাই আন্দোলনের প্রথম শহীদ আবু সাঈদের বাবা মকবুল হোসেনের জবানবন্দির মধ্য দিয়ে শুরু হয় এ মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ। একইদিন সাংবাদিক মঈনুল হকও সাক্ষ্য দেন।
এ মামলার গ্রেপ্তার ছয় আসামি হলেন– এএসআই আমির হোসেন, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) সাবেক প্রক্টর শরিফুল ইসলাম, কনস্টেবল সুজন চন্দ্র রায়, ছাত্রলীগ নেতা ইমরান চৌধুরী, রাফিউল হাসান রাসেল ও আনোয়ার পারভেজ।
গত ২৭ আগস্ট সূচনা বক্তব্যের মাধ্যমে এ মামলার আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হয়। সূচনা বক্তব্য উপস্থাপন করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। ৬ আগস্ট ৩০ আসামির বিরুদ্ধে ফর্মাল চার্জ (আনুষ্ঠানিক অভিযোগ) গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। তবে এ মামলায় বেরোবির সাবেক ভিসিসহ ২৪ জন এখনো পলাতক রয়েছেন। তাদের পক্ষে গত ২২ জুলাই সরকারি খরচে চারজন আইনজীবী নিয়োগ দেওয়া হয়।
গত ৩০ জুলাই পলাতক আসামিদের পক্ষে শুনানি করেন রাষ্ট্রনিযুক্ত চার আইনজীবী। এর মধ্যে পাঁচজনের হয়ে লড়েন আইনজীবী সুজাত মিয়া। নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগ নেতাদের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মামুনুর রশীদ। এ ছাড়া শুনানি করেন আইনজীবী ইশরাত জাহান ও শহিদুল ইসলাম। ২৯ জুলাই তিন আসামির পক্ষে শুনানি হয়। এর মধ্যে শরিফুলের হয়ে লড়েন আইনজীবী আমিনুল গণি টিটো। কনস্টেবল সুজনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী আজিজুর রহমান দুলু ও ইমরানের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী সালাহউদ্দিন রিগ্যান।
২৮ জুলাই এ মামলার ৩০ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের ওপর শুনানি শেষ করে প্রসিকিউশন। ৩০ জুন আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আমলে নেন ট্রাইব্যুনাল। আর ২৪ জুন মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন তদন্ত সংস্থার কর্মকর্তারা। এ মামলায় মোট সাক্ষী ৬২ জন।
আইন-আদালত
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলা থেকে অব্যাহতি পেলেন ডিএসই পরিচালক
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় অভিযোগ গঠনের আদেশের বিরুদ্ধে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বর্তমান পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমনের আপিল মঞ্জুর করে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। গতকাল বৃহস্পতিবার বিচারপতি এ এস এম আব্দুল মোবিন ও বিচারপতি মো. যাবিদ হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন।
এ রায়ের ফলে ওই মামলা থেকে মিনহাজ মান্নান অব্যাহতি পেলেন বলে জানিয়েছেন তাঁর আইনজীবী মঈন ফিরোজী।
আইনজীবীর তথ্য অনুসারে, ওই মামলায় ২০২২ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোর, রাষ্ট্রচিন্তার সদস্য দিদারুল ইসলাম ভূঁইয়া ও মিনহাজ মান্নান ইমনসহ সাতজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে আদেশ দেন ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনাল। অপর চারজন হলেন সুইডেনপ্রবাসী সাংবাদিক তাসনিম খলিল, হাঙ্গেরিপ্রবাসী সামিউল ইসলাম খান ওরফে স্যাম ওরফে জুলকার নাইন, আশিক ইমরান ও ওয়াহিদুন নবী।
দিদারুল ইসলাম ও মিনহাজ মান্নান নারাজি আবেদন দিলে তা নামঞ্জুর হয়। এই আদেশের বিরুদ্ধে মিনহাজ মান্নান একই বছর হাইকোর্টে আপিল করেন। ২০২২ সালের ২৪ আগস্ট হাইকোর্ট আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেন। একই সঙ্গে মিনহাজ মান্নানের ক্ষেত্রে মামলাটির কার্যক্রম স্থগিত করেন। শুনানি শেষে আপিল মঞ্জুর করে এ রায় দেওয়া হয়।
আদালতে মিনহাজ মান্নানের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মঈন ফিরোজী। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সুলতানা আক্তার রুবী।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক কথাবার্তা ও গুজব ছড়ানোর অভিযোগ তুলে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে রাজধানীর রমনা থানায় ১১ জনের বিরুদ্ধে ২০২০ সালের ৫ মে মামলাটি করা হয়। ২০২১ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি)। এতে কার্টুনিস্ট কিশোর, লেখক মুশতাক আহমেদ ও রাষ্ট্রচিন্তার দিদারুল ইসলামকে আসামি করা হয় এবং আটজনকে অব্যাহতি দেওয়ার আবেদন করা হয়।
এ মামলায় কারাবন্দী মুশতাক আহমেদ ২০২১ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি মারা যান। এ কারণে তাঁকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার সুপারিশ করা হয়। তবে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ মামলা অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেন ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনাল।
মামলার নথি থেকে জানা গেছে, অভিযোগ গঠনের সময় ২০২২ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি আদালতে হাজির ছিলেন দিদারুল ইসলাম ও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সাবেক পরিচালক মিনহাজ মান্নান। তাঁরা নিজেদের নিরপরাধ দাবি করে আদালতের কাছে ন্যায়বিচার চান। সেদিন কার্টুনিস্ট কিশোর আদালতে হাজির না থাকায় তাঁর জামিন বাতিল করা হয়।
আইন-আদালত
অস্ত্র মামলায় সম্রাটের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড
অস্ত্র আইনের মামলায় ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাবেক সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) ঢাকার দ্বিতীয় বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. ইব্রাহিম মিয়া এ রায় ঘোষণা করেন। সম্রাট নিজে আত্মসমর্পণ বা গ্রেফতারের তারিখ থেকে তার সাজা শুরু হবে। মামলায় আদালতে ১০ জন সাক্ষী সাক্ষ্য দিয়েছিলেন।
রায়ে বলা হয়েছে, অভিযুক্ত ইসমাইল চৌধুরী সম্রাটকে অস্ত্র আইন, ১৮৭৮ এর ১৯ (ক) ধারার অধীনে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে এবং তার অধীনে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়েছে। সেই অনুযাযী দোষী সাব্যস্ত করার পরোয়ানা জারি করা হচ্ছে। এই মামলার সঙ্গে সম্পর্কিত তার আত্মসমর্পণ বা গ্রেফতারের তারিখ থেকে তার সাজা শুরু হবে।
আদালত সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম থেকে সম্রাটকে গ্রেফতার করে র্যাব। পরে তাকে নিয়ে কাকরাইলের কার্যালয়ে অভিযান চালানো হয়। এ সময় সেখান থেকে বিপুল পরিমাণ বিদেশি মদ, পিস্তল ও বিরল প্রজাতির বন্যপ্রাণীর চামড়া উদ্ধার করা হয়। বন্যপ্রাণীর চামড়া রাখার দায়ে তাকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।
পরদিন ৭ অক্টোবর র্যাব-১-এর ডিএডি আব্দুল খালেক বাদী হয়ে রমনা থানায় মাদক ও অস্ত্র আইনে মামলা করেন। তদন্ত শেষে ২০২০ সালের ৬ নভেম্বর আদালতে অস্ত্র মামলায় অভিযোগপত্র জমা দেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা র্যাব-১ এর উপপরিদর্শক (এসআই) শেখর চন্দ্র মল্লিক।
চলতি বছরের ১৬ জানুয়ারি ঢাকার বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক মো. ইব্রাহিম মিয়া তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন।
আইন-আদালত
জামায়াতের ৩৬ বছর আগের ফর্মুলা এখনও গ্রহণযোগ্য: শিশির মনির
তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ফেরাতে চূড়ান্ত আপিল শুনানি তৃতীয় দিনের মতো শেষ হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) তৃতীয় দিনের শুনানি শেষে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে সাত বিচারপতির আপিল বেঞ্চে ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত শুনানি মুলতবি করা হয়েছে।
আদালতে ইন্টারভেনার হিসেবে শুনানি করছেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এহসান এ সিদ্দিক। আর জামায়াতে ইসলামী সেক্রেটারির পক্ষে আইনজীবী শিশির মনির।
শুনানি শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আজ থেকে ৩৬ বছর আগে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের গণতন্ত্রের জন্য একটি নিরপেক্ষ নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ফর্মুলা দিয়েছিল। এ ফর্মুলায় তিনটি নির্বাচন হয়েছিল। এরপর এ ফর্মুলা বাদ দেওয়া হয়। এতদিন পরে এসে আজও সবাই মনে করছে, এটাই বাংলাদেশের গণতন্ত্রের জন্য সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য ফর্মুলা। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন করলেই বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব। যে প্রক্রিয়ায় এই তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাদ দেওয়া হয়েছে, তা ছিল সম্পূর্ণভাবে পূর্বপরিকল্পিত নকশার আলোকে। এ-সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটিও তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাদ দিতে চায়নি। এক ব্যক্তির ইচ্ছায় তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাদ দিয়ে দেশে একনায়কতান্ত্রিক শাসন কায়েম করা হয়েছিল।
তিনি আরও বলেন, এর ফলে রাজনীতি, অর্থনীতি ও সমাজনীতিসহ সব ক্ষেত্রে বড় ধ্বংসের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ গেছে। আবার আমরা এখন আলোচনা করে এর প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছি। যদি নির্বাচন ব্যবস্থাকে সঠিক নিয়মে দাঁড় করাতে হয়, তাহলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ফর্মুলার মধ্যেই যদি আমরা যেতে পারি— এটি হবে আমাদের জন্য জাতিগতভাবে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য মাধ্যম। ইতোমধ্যে ঐকমত্য কমিশন ও সংস্কার প্রক্রিয়ার মধ্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান নিয়ে জুলাই সনদে একটি নতুন বিধানের প্রস্তাব করা হয়েছে। আগামীতে আদালত যে আদেশই দিক না কেন, তা যেন জুলাই সনদের সঙ্গে বা তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে জুলাই সনদে যে আলোচনা হয়েছে, তার সঙ্গে মিল রেখে হয়। নইলে সংস্কার প্রক্রিয়া অনেকটাই ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত করে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী জাতীয় সংসদে গৃহীত হয় ১৯৯৬ সালে। এ সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ১৯৯৮ সালে অ্যাডভোকেট এম. সলিম উল্লাহসহ তিনজন আইনজীবী হাইকোর্টে রিট করেন। ২০০৪ সালের ৪ আগস্ট হাইকোর্ট বিভাগ এ রিট খারিজ করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থাকে বৈধ ঘোষণা করে।
এই সংশোধনীর বৈধতা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এম. সলিম উল্লাহসহ অন্যরা ১৯৯৮ সালে হাইকোর্টে রিট করেন। প্রাথমিক শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট রুল দেন। হাইকোর্টের বিশেষ বেঞ্চ চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০০৪ সালের ৪ আগস্ট রায় দেন।
এ রায়ের বিরুদ্ধে সরাসরি আপিলের অনুমতি দেওয়া হয়। এর ধারাবাহিকতায় ২০০৫ সালে আপিল করে রিট আবেদনকারী পক্ষ। এই আপিল মঞ্জুর করে আপিল বিভাগের সাত বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ ২০১১ সালের ১০ মে সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতের ভিত্তিতে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল ঘোষণা করে রায় দেন।
ঘোষিত রায়ের পর তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার বিলোপসহ বেশ কিছু বিষয়ে আনা পঞ্চদশ সংশোধনী আইন ২০১১ সালের ৩০ জুন জাতীয় সংসদে পাস হয়। ২০১১ সালের ৩ জুলাই এ–সংক্রান্ত গেজেট প্রকাশ করা হয়।
৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর এ রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে আবেদন করেন সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারসহ পাঁচ বিশিষ্ট ব্যক্তি। অন্য চারজন হলেন-তোফায়েল আহমেদ, এম. হাফিজউদ্দিন খান, জোবাইরুল হক ভূঁইয়া ও জাহরা রহমান।
আপিল বিভাগের ওই রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে ১৬ অক্টোবর একটি আবেদন করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
এছাড়া রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে গত বছরের ২৩ অক্টোবর আরেকটি আবেদন করেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার।
পরবর্তীতে নওগাঁর রানীনগরের নারায়ণপাড়ার বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মোফাজ্জল হোসেন আপিল বিভাগের রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে গত বছর একটি আবেদন করেন।
আইন-আদালত
শেখ হাসিনার মামলার রায়ের তারিখ জানা যাবে ১৩ নভেম্বর
জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ তিনজনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আগামী ১৩ নভেম্বর রায়ের দিন ধার্য করবেন।
বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) দুপুরে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল এ তারিখ ঘোষণা করেন।
পরে ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে এক সংবাদ সম্মেলনে তাজুল ইসলাম বলেন, আগামী ১৩ নভেম্বর আদালত রায়ের তারিখ ঘোষণার জন্য ধার্য করা হয়েছে। সেদিন আদালত জানাবেন সংক্ষিপ্ত কত দিনের মধ্যে রায় ঘোষণা করা হবে।
এদিন মামলায় প্রসিকিউশনের পক্ষে যুক্তি খণ্ডনের পর সমাপনী বক্তব্য উপস্থাপন করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম এবং অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান।
বুধবার (২২ অক্টোবর) বিকেলে ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত প্রেস ব্রিফিংয়ে প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম জানান, এ মামলায় পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী এবং উপস্থিত রাজসাক্ষী সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন সম্পন্ন হয়েছে। প্রসিকিউশনের পক্ষে জবাব দেওয়া হবে, যদিও কিছু অংশ ইতোমধ্যেই উপস্থাপন করা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, চিফ প্রসিকিউটর এবং অ্যাটর্নি জেনারেল সমাপনী বক্তব্য উপস্থাপন করবেন। এরপর আনুষ্ঠানিকভাবে মামলার রায় ঘোষণার দিন ধার্য করা হবে।
ওই দিন বিকেল সোয়া ৩টার পর আসামিপক্ষে যুক্তিতর্ক শেষ করেন স্টেট ডিফেন্স আইনজীবী মো. আমির হোসেন। টানা তিনদিনের যুক্তি উপস্থাপন শেষে নিজের মক্কেলদের নির্দোষ দাবি করে খালাসের আবেদন করেন তিনি। দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে বিকেল সোয়া ৩টা পর্যন্ত ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেলে তার যুক্তিতর্ক চলে।
এদিকে জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ তিনজনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আগামী ১৩ নভেম্বর রায়ের দিন ধার্য করবেন।
বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) দুপুরে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল এ তারিখ ঘোষণা করেন।
এদিন মামলায় প্রসিকিউশনের পক্ষে যুক্তি খণ্ডনের পর সমাপনী বক্তব্য উপস্থাপন করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম এবং অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান।
এর আগে গত ১৬ অক্টোবর টানা পঞ্চম দিনে প্রসিকিউশন শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ করে। পরে সেদিনই আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের জন্য ২০ অক্টোবর দিন ধার্য করেন বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। পরবর্তীতে ২০ অক্টোবর শেখ হাসিনার পক্ষে যুক্তি উপস্থাপনকালে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমীর হোসেন তাকে নিরপরাধ দাবি করে খালাসের আবেদন করেন।
এই মামলায় প্রসিকিউশন ৫৪ জন সাক্ষী উপস্থাপন করেছে। এর মধ্যে তদন্ত কর্মকর্তা ছাড়াও সাক্ষ্য দিয়েছেন দৈনিক আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। তবে মামলার মূল দুই আসামি পলাতক থাকায় তারা কোনো সাফাই সাক্ষী উপস্থাপনের সুযোগ পাননি।
গত ১০ জুলাই শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান খান কামাল ও চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর নির্দেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। প্রসিকিউশন তাদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের পাঁচটি অভিযোগ আনে। আনুষ্ঠানিক অভিযোগপত্র মোট ৮ হাজার ৭৪৭ পৃষ্ঠার, যার মধ্যে তথ্যসূত্র ২ হাজার ১৮ পৃষ্ঠা, জব্দতালিকা ও দালিলিক প্রমাণাদি ৪ হাজার ৫ পৃষ্ঠা এবং শহীদদের তালিকার বিবরণ ২ হাজার ৭২৪ পৃষ্ঠা। এ ছাড়া সাক্ষী করা হয়েছে ৮১ জনকে। গত ১২ মে চিফ প্রসিকিউটরের কাছে এ মামলার প্রতিবেদন জমা দেন ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার কর্মকর্তারা।



