রাজনীতি
জাতিকে নতুন আশার আলো দেখাচ্ছেন তারেক রহমান: মির্জা ফখরুল
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান জাতিকে নতুন আশার আলো দেখাচ্ছেন বলে মন্তব্য করেছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
রোববার (২ নভেম্বর) নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ৭ নভেম্বর সিপাহী-জনতার বিপ্লব উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভা শেষে তিনি এ মন্তব্য করেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান যেমন জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন, আজ তারই উত্তরসূরি তারেক রহমানও সুদূর প্রবাস থেকে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে যে সংগ্রামের ধারাবাহিকতা গড়ে উঠেছিল, সেটিই আজ অব্যাহত রেখেছেন তারেক রহমান। জাতিকে নতুন আশার আলো দেখাচ্ছেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, ৭ নভেম্বর আমাদের কাছে এবং গোটা জাতির কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি দিন। আজকের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে যখন মানুষ অনিশ্চয়তা ও হতাশার মধ্যে রয়েছে, তখন আবারও দেশের শত্রুরা মাথা তুলে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে, নৈরাজ্য সৃষ্টি করছে, সোশ্যাল মিডিয়ায় মিথ্যা প্রচারণা চালাচ্ছে। এ অবস্থায় ৭ নভেম্বরের ঐক্যের চেতনা আরও বেশি প্রাসঙ্গিক।
৭ নভেম্বরের দিনটি রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ১৯৭৫ সালে সিপাহী-জনতার বিপ্লবের মধ্য দিয়ে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে গৃহবন্দী অবস্থা থেকে মুক্ত করা হয়। দেশের বিরুদ্ধে চক্রান্তকারীরা শহীদ প্রেসিডেন্টকে বন্দি করে রেখেছিল। সেই অবস্থা থেকে দেশপ্রেমিক সৈনিক ও জনগণ তাকে মুক্ত করে নিয়ে আসে। এরপরই ইতিহাসে শুরু হয় বাংলাদেশের সাফল্যের নতুন অধ্যায়।
তিনি বলেন, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনের কেন্দ্রবিন্দুতে আসেন এবং দ্রুতই দেশকে এমন এক অবস্থানে নিয়ে যান, যেখানে পূর্বে যেভাবে বাংলাদেশকে ‘বটমলেস বাস্কেট’ বলা হতো, সেখান থেকে তিনি দেশকে সম্ভাবনার এক নতুন দিগন্তে তুলে ধরেন। তার আমলেই শুরু হয় বাংলাদেশের পুনর্জাগরণ, একটি ইমাজিন টাইগার হিসেবে আত্মপ্রকাশের সূচনা।
বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ছিলেন বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের এক ক্ষণজন্মা পুরুষ। আমরা সবাই জানি, ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ যখন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী নিরস্ত্র বাঙালির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিল, তখন ২৬শে মার্চ চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে অকুতোভয় সেই সামরিক কর্মকর্তা ঘোষণা দেন, “I hereby declare the independence of Bangladesh.”। এরপরের পাঁচ বছর ছিল আওয়ামী লীগের দুঃশাসনের ইতিহাস। শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে তখন দেশে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল একদলীয় শাসনব্যবস্থা-বাকশাল।
তিনি আরও বলেন, সেই সময় বাংলাদেশে প্রশাসনিক ব্যর্থতা, দুর্নীতি ও অপশাসনের কারণে ১৯৭৪ সালে ঘটে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ, যেখানে লাখ লাখ মানুষ না খেতে পেয়ে মারা যায়।
মির্জা ফখরুল বলেন, ৭৫ সালের পরবর্তী সময়ে অবস্থার পরিবর্তন ঘটান শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। তিনি প্রথম রাজনৈতিক সংস্কারের হাত দেন একদলীয় শাসনব্যবস্থা থেকে দেশকে নিয়ে আসেন বহুদলীয় গণতন্ত্রে। সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিশ্চিত করেন, নিষিদ্ধ হওয়া পত্রিকা পুনরায় চালু করেন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠা করেন, গঠন করেন সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল। অর্থনীতিতে তিনি সূচনা করেন নতুন যুগের। তার হাত ধরে গড়ে ওঠে গার্মেন্টস শিল্প, বিদেশে শ্রমিক প্রেরণের প্রক্রিয়া শুরু হয়, যার মাধ্যমে রেমিট্যান্স আজ বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম স্তম্ভ।
তিনি বলেন, নারী শিক্ষা ও নারীর ক্ষমতায়নে জিয়াউর রহমান নেন যুগান্তকারী পদক্ষেপ। কৃষিতে বিপ্লব ঘটে তার খাল খনন কর্মসূচি, উচ্চফলনশীল বীজের আমদানি এবং সার ব্যবস্থার সংস্কারের মাধ্যমে। শিল্পে তিন শিফটে উৎপাদন শুরু হয়, কর্মসংস্থান বাড়ে, নতুন উদ্দীপনা তৈরি হয়, দেশ তখন এক কর্মযজ্ঞে মেতে ওঠে।
বিএনপির এই মহাসচিব বলেন, কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে চট্টগ্রামের সার্কিট হাউসে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। তবুও তার দর্শন, তার আদর্শ আজও বেঁচে আছে। তার প্রদত্ত বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের দর্শন কখনও পরাজিত হয়নি আর তাই বিএনপিও পরাজিত হয়নি। বারবার ধ্বংসস্তূপ থেকে ফিনিক্স পাখির মতো জেগে উঠেছে।
তিনি আরও বলেন, সবশেষে আবারও বলি, ৭ নভেম্বর আমাদের রাজনৈতিক ও জাতীয় জীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি দিন। আমরা এই দিনটিকে স্মরণ করি, কারণ এর মধ্য দিয়েই জেগে ওঠে জাতির চেতনা। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সেই দর্শনকে সামনে নিয়েই আমরা এগিয়ে যাব গণতন্ত্র, স্বাধীনতা ও সার্বভৌম বাংলাদেশের স্বপ্ন পূরণের পথে।
রাজনীতি
আগে ক্যাপাসিটি বিল্ড আপ, তারপর এলডিসি ভাবনা: আমীর খসরু
অন্তর্বর্তী সরকারের দায়বদ্ধতা ও জনগণের কাছে জবাবদিহি না থাকায় দেশের অর্থনৈতিক খাতে কোনো শৃঙ্খলা নেই বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
স্বল্পোন্নত দেশ বা এলডিসি থেকে বাংলাদেশের উত্তরণ বিষয়ে তিনি বলেন, আমাদের মৌলিক বিষয়গুলো এখনো সুরাহা হয়নি। আমাদের দেশে গণতন্ত্র উত্তরণ হয়নি। গত ১৫ মাস ধরে অনির্বাচিত সরকার, এখনো আমরা ঝুলে আছি। এই সরকার যে সবকিছু খারাপ করছে, তা বলছি না। তবে সরকারের কোনো দায়বদ্ধতা নেই, জনগণের কাছে জবাবদিহি নেই। এ কারণে দেশের অর্থনৈতিক খাতে কোনো শৃঙ্খলা নেই।
তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, দেশে কোনো শেয়ারবাজার আছে? দেশে ব্যবসার কোনো পলিসি আছে? ব্যাংকিং সেক্টরে কোনো স্থিতিশীলতা আছে? এমতাবস্থায় এলডিসি উত্তরণ করে কী লাভ? আমাদের অবস্থান ক্লিয়ার—আমরা আগে ক্যাপাসিটি বিল্ড আপ করবো, তারপর এলডিসি নিয়ে ভাবনা।
রোববার (২ নভেম্বর) রাজধানীর একটি অভিজাত হোটেলে এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন তিনি। ‘বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের বর্তমান সংকট ও পুনরুদ্ধারের পথ’ শীর্ষক এ সভার আয়োজন করে বাংলাদেশ গার্মেন্ট বায়িং হাউস অ্যাসোসিয়েশন (বিজিবিএ)।
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, বিএনপি যখনই ক্ষমতায় এসেছে দেশের সামষ্টিক অর্থনীতি স্থিতিশীল ছিল। আমরা ক্ষমতায় এসে দেশে ব্যাপকহারে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছি, ব্যবসার ক্ষেত্রে সব বাধা দূর করেছি, দেশীয় উদ্যোক্তাদের নানাভাবে প্রণোদনা দিয়েছি, বিদেশি বিনিয়োগকে উৎসাহিত করেছি।
সাবেক এ বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ব্যবসার জন্য জরুরি হচ্ছে ‘ফিল গুড ফ্যাক্টর’। বিএনপি যতবারই ক্ষমতায় এসেছে ব্যবসার ক্ষেত্রে ‘ফিল গুড ফ্যাক্টর’ দিয়েছে। বিদেশি বিনিয়োগকারীরা যদি দেখেন স্থিতিশীলতা নেই, বিনিয়োগের উপযোগী পরিবেশ নেই, তখন তারা স্বাভাবিকভাবেই আগ্রহী হবেন না।
তিনি বলেন, বিএনপির স্লোগান অর্থনীতির গণতান্ত্রয়ন। অর্থনীতিতে যদি গণতন্ত্র না থাকে, কারও হাতে একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ থাকে—সেক্ষেত্রে অর্থনীতি বিকশিত হবে না। অর্থনীতিতে যতো নিয়ন্ত্রণ আরোপ হবে ততো দুর্নীতি বাড়বে।
আমীর খসরু আরও বলেন, বাংলাদেশ ওভার রেগুলেডেট কান্ট্রি। এতে অসুবিধা ব্যবসায়ীদের। আর সুবিধা হচ্ছে চোরদের। তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, ভিয়েতনাম কেন অর্থনীতিতে আমাদের ছাড়িয়ে গেল। তারা ডিরেগুলেট করেছে।
সভায় সভাপতির বক্তব্যে বিজিবিএ সভাপতি মোফাজ্জল হোসেন পাভেল বলেন, অস্থিতিশীলতার কারণে আমরা অর্ডার হারাচ্ছি। পোশাকশিল্পের সুনাম ক্ষুণ্ন হচ্ছে। বিদেশি বিনিয়োগকারীরা আমাদের ওপর আস্থা রাখতে পারছেন না। তৈরি পোশাক খাতের ক্রয়াদেশ তারা পাশের দেশকে দিয়ে দিচ্ছে।
তিনি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে ‘পলিসি সাপোর্ট’ দিতে রাজনীতিবিদদের প্রতি আহ্বান জানান।
রাজনীতি
বিএনপির বিজয় ঠেকাতে অপপ্রচার-অপকৌশল দৃশ্যমান: তারেক রহমান
ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশেও বর্তমানে বিএনপির বিজয় ঠেকাতে সংঘবদ্ধ অপপ্রচার ও অপকৌশল দৃশ্যমান রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
রোববার (২ নভেম্বর) গুলশানের লেকশোর হোটেলে বিএনপির প্রবাসী সদস্যদের জন্য অনলাইন পেমেন্ট গেটওয়ে কার্যক্রমের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এমন মন্তব্য করেছেন।
তারেক রহমান বলেন, “শুধুমাত্র বিএনপির পরাজয় ঠেকাতে গিয়ে পতিত পলাতক স্বৈরাচার দেশে ফ্যাসিবাদ কায়েম করেছিল। দেশের নির্বাচন ব্যবস্থাকে বিগত ১৫ বছর সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দিয়েছিল। উদ্বেগ এবং আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশেও বর্তমানে বিএনপির বিজয় ঠেকাতে সংঘবদ্ধ অপপ্রচার ও অপকৌশল দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে।”
তিনি দৃঢ়তার সঙ্গে জানান, “আমি বিশ্বাস করি, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদীতে বিশ্বাসী প্রতিটি মানুষ ঐক্যবদ্ধ থাকলে বিএনপিকে কোনোভাবেই জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করতে পারবে না।”
পতিত পলাতক স্বৈরাচারের শাসনামলে জনগণের নির্বাচনের প্রতি কোনো আগ্রহ ছিল না জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, “বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আমলে কোনো কোনো সময় জনমনে প্রশ্ন বাড়ছে—যথাসময় কি নির্বাচন হবে?”
এমন হওয়ার কথা ছিল না জানিয়ে তিনি বলেন, “নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে গণমনে সৃষ্ঠ সংশয়-সন্দেহ গণতন্ত্র উত্তরণের পথকে হয়তোবা সংকটপূর্ণ করে তুলতে পারে।”
“একটি দায়িত্বশীল গণতান্ত্রিক দল হিসেবে বিএনপি শুরু থেকেই ফ্যাসিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্য বজায় রাখার স্বার্থে সর্বোচ্চ ছাড় দিয়ে একদিকে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সমঝোতার পথ বেছে নিয়েছে, অপরদিকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকেও যথাসাধ্য সম্ভব আমাদের অবস্থান থেকে আমরা সহযোগিতা করে আসছি। অথচ আমরা দেখছি, একের পর এক নতুন শর্ত জুড়ে দিয়ে গণতন্ত্র উত্তরণের পথকে সংকটাপন্ন করে তোলা হচ্ছে। এর পরিণতি সম্পর্কেও আমাদের সতর্ক থাকা অবশ্যই প্রয়োজন।”
কৌশল এবং অপকৌশলের মধ্যে পার্থক্য বুঝতে ব্যর্থ হলে কোনো অগণতান্ত্রিক এবং অপশক্তির কাছে বিনা শর্তে আত্মসমর্পণের পথে হাঁটতে হয় কি না সন্দেহ প্রকাশ করে তারেক রহমান বাংলাদেশের সমস্ত গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলকে এমন বিপদের বিষয়ে সতর্ক করেন।
আগামী বছর ফেব্রুয়ারি মাসে নির্বাচনের লক্ষ্যে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে বিএনপি সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করছে জানিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, “দেশের ৩০০ সংসদীয় আসনে বিএনপির দলীয় প্রার্থী অথবা বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী মনোনয়ন প্রক্রিয়া প্রায় চূড়ান্ত ধাপে রয়েছে।”
জনসমর্থিত এবং জনপ্রিয় দল হিসেবে প্রতিটি আসনে বিএনপির একাধিক যোগ্য প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, “দেশের প্রতিটি আসনে বিএনপির একাধিক যোগ্য প্রার্থী থাকলেও প্রত্যেকের নিশ্চয়ই মনোনয়ন পাওয়া সম্ভব নয়। ভিন্ন রাজনৈতিক দলের যারা ফ্যাসিবাদ আন্দোলনে আমাদের সঙ্গে রাজপথে সঙ্গী ছিলেন, এমন প্রার্থীদেরও বিএনপি সমর্থন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই বাস্তবতার কারণে কিছু কিছু আসনে বিএনপির প্রার্থীরা মনোনয়ন বঞ্চিত হবেন।”
সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের প্রতি দেশ ও জনগণের স্বার্থে এই বাস্তবতা মেনে নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি। এ সময় দলের সিদ্ধান্তকেই চূড়ান্ত হিসেবে সবাইকে মেনে নেওয়ার আহ্বানও জানান তারেক রহমান।
শিগগিরই পর্যায়ক্রমে বিএনপির মনোনীত প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করা হবে বলে জানান তিনি। নেতাকর্মীদের আবারও সতর্ক করে দিয়ে তারেক রহমান বলেন, “আপনাদের চারপাশে সুপ্ত আকাঙ্ক্ষা নিয়ে গুপ্ত স্বৈরাচারেরা ওত পেতে রয়েছে।“ নিজেদের মধ্যে কোনো বিবাদ-বিরোধ না রাখতে অনুরোধ করে তিনি জানান, এসবের কারণে প্রতিপক্ষ যেন কোনো সুযোগ নিতে না পারে।
প্রতিষ্ঠাকাল থেকে সবসময় বিএনপি দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছে জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, “বিএনপির প্রতি দেশের গণতন্ত্রকামী জনগণের অকুণ্ঠ সমর্থনের কারণে ষড়যন্ত্রকারীরা অধিকাংশ সময় প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। বাস্তবতা হচ্ছে, গণতন্ত্রকামী জনগণের কাছে বিএনপি একটি বিশ্বস্ত রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান। যুগের পর যুগ ধরে বিএনপি জনপ্রিয়তার ধারা ধরে রেখেছে, ধরে রাখার চেষ্টা করেছে।”
রাজনীতি
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদকের পদত্যাগ
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন হাসান ইনাম। রোববার (২ নভেম্বর) সন্ধ্যায় সভাপতি রিফাত রশিদ বরাবর পদত্যাগপত্র পাঠান তিনি।
পদত্যাগপত্রে দেশব্যাপী পরিব্যাপ্ত সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক হওয়ার মতো মানসিক অবস্থায় না থাকার কথা উল্লেখ করে স্বেচ্ছায়, স্বপ্রণোদিতভাবে এই দায়িত্ব থেকে ইস্তফা নেওয়ার কথা জানান তিনি। একইসঙ্গে শূন্য পদে বর্তমান সাংগঠনিক সম্পাদক মুঈনুল ইসলামকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নিযুক্ত করার জন্য অনুরোধ জানান তিনি।
পদত্যাগপত্রে তিনি লিখেছেন, আমি গত চার মাস জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সংগঠন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করার চেষ্টা করেছি। আমি এই সংগঠনকে বুদ্ধিবৃত্তিক ও সাংস্কৃতিক পরিসরে তুলে ধরার জন্য একদল কর্মঠ কর্মী নিয়ে নিরলসভাবে কাজ করেছি। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর থেকে এ অবধি দীর্ঘ সময় নানা পরিসরে কাজে লিপ্ত থেকে আমি শারীরিক ও মানসিকভাবে অসুস্থ অনুভব করছি। সংগঠনের নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সারা দেশের সকল কমিটি পুনর্গঠনের ঘোষণা দেখার পর মনে হচ্ছে দেশব্যাপী পরিব্যাপ্ত সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক হওয়ার মতো মানসিক অবস্থায় আমি এখন নেই। তাই আমি স্বেচ্ছায়, স্বপ্রণোদিতভাবে এই দায়িত্ব থেকে ইস্তফা নিচ্ছি। তবে, জুলাইকে সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক অঙ্গনে স্থায়ীভাবে প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আমার যে লড়াই সেটি চলমান থাকবে।
তিনি আরও লিখেছেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সংগঠনে সাধারণ সম্পাদক ভিন্ন অন্যকোনো পরিচয়ে বা বেনামে আমি সংগঠনের এ-সংক্রান্ত কাজে নিজেকে জড়িত রাখতে ইচ্ছুক। এ বিষয়ে আপনার সুমর্জি কামনা করছি। একই সঙ্গে সাধারণ সম্পাদক পদে আমি ইস্তফা নেওয়ার দরুন শূন্য পদে বর্তমান সাংগঠনিক সম্পাদক মুঈনুল ইসলামকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নিযুক্ত করার জন্য অনুরোধ করছি।
রাজনীতি
সংস্কার হলেই ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে: হাসনাত আবদুল্লাহ
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেছেন, সংস্কার ছাড়া নির্বাচন হবে না, সংস্কার হলেই ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে।
রোববার (২ নভেম্বর) ভোলা জেলা পরিষদ মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন তিনি।
হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, এই সমন্বয় সভা না হলে যেমন প্রেস কনফারেন্স হতো না, তেমনি সংস্কার না হলে নির্বাচন হতে পারে না। এই সরকারের যদি সংস্কারের ম্যান্ডেট না থাকে, এই সরকারের জুলাই সনদ ঘোষণার ম্যান্ডেট না থাকে, তাহলে এই সরকার কোন ম্যান্ডেটে নির্বাচন দেবে। নির্বাচন অবশ্যই ফেব্রুয়ারিতে হওয়া উচিত। নির্বাচনকে তারাই পিছিয়ে দিতে চায়, যারা এই সরকারের সঙ্গে জুলাই সনদকে মুখোমুখি দাঁড় করাতে চায়। এ সরকারের যেমন নির্বাচনের ম্যান্ডেট রয়েছে, এই সরকারের জুলাই সনদের ম্যান্ডেট রয়েছে, তেমনি সংস্কারেরও ম্যান্ডেট রয়েছে। সুতরাং সংস্কার যথাসময়ে হলে ফেব্রুয়ারিতেই নির্বাচন হবে।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা উচ্চকক্ষে পিআর চাই, তবে জামায়াতের মতো পিআর চাই না। আমাদের অবস্থান দৃঢ় ও স্পষ্ট—বাংলাদেশের পুনর্গঠনে ঐক্যবদ্ধ রাজনীতির বিকল্প নেই।
তিনি আরও বলেন, দীর্ঘদিন ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বিএনপির তৃণমূল নেতা-কর্মীরা রক্ত দিয়েছেন, গুম-হত্যার শিকার হয়েছেন। তাঁদের রক্ত ও ত্যাগকে অসম্মান করা মানে জনগণের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা। আসুন, আমরা মতপার্থক্যের ঊর্ধ্বে উঠে ঐক্যবদ্ধভাবে দেশ পুনর্গঠন করি।
হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, আমরা সাংগঠনিক সমস্যাগুলো শুনেছি, সমাধানের পথ নির্ধারণ করেছি। শিগগিরই আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হবে। পাশাপাশি ভোলার সমস্যা যেমন নদীভাঙন প্রতিরোধ, গ্যাস ব্যবহার করে শিল্প স্থাপন, ভোলা-বরিশাল সেতু নির্মাণ, চিকিৎসকসংকট ও মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। এসব যৌক্তিক দাবিতে এনসিপি ভোলাবাসীর পাশে থাকবে।
আগামী নির্বাচনে এনসিপি কারও সঙ্গে জোট গঠন করবে কি না, এমন প্রশ্নে দলটির এই নেতা বলেন, আমাদের সঙ্গে জোট হবে কেবল সংস্কারের পক্ষে থাকা দলগুলোর সঙ্গে। ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে যারা লড়েছেন, তারাই এনসিপির প্রকৃত সহযোদ্ধা।
হাসনাত আবদুল্লাহ জানান, গণভোটের আদেশ রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের মাধ্যমে তার দল পেতে চায় না।
তিনি বলেন, গণভোটের আদেশ দেবেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। যারা ফ্যাসিবাদের প্রতীক চুপ্পুর (রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন) কাছ থেকে সনদ নিতে চায়, তারা দেশকে বিপথে নিতে চায়। আমাদের লক্ষ্য, গণ-আকাঙ্ক্ষার রাষ্ট্র গড়া, তৃণমূলের রক্ত ও ত্যাগের মর্যাদা রক্ষা করা।
ভোলার পর আজ বিকেলে বরিশাল শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে এনসিপির বরিশাল জেলা ও মহানগর কমিটির সমন্বয় সভা করেন হাসনাত আবদুল্লাহ। সভার পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গণভোটের পাশাপাশি জুলাই সনদসংক্রান্ত আদেশ প্রধান উপদেষ্টাকেই জারি করতে হবে। এ বিষয়ে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন আদেশ দিলে জুলাই বিপ্লব প্রশ্নবিদ্ধ হবে।
হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, গণভোটের পাশাপাশি জুলাই সনদের আদেশ জারি করতে হবে। এই আদেশ অবশ্যই প্রধান উপদেষ্টাকে জারি করতে হবে। যদি চুপ্পুর (রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন) কাছ থেকে নিতে হয়, সেটি হবে বিপ্লবের কফিনে শেষ পেরেক। যিনি ‘হেড অফিস ফ্যাসিজম’, তাঁর কাছ থেকে যদি অভ্যুত্থানের স্বীকৃতি নিতে হয়, এর চেয়ে লজ্জাজনক কিছু হতে পারে না।
এ বিষয়ে হাসনাত আবদুল্লাহ আরও বলেন, কোনো অধ্যাদেশ নয়, অর্ডার জারি করতে হবে এবং তা অবশ্যই প্রধান উপদেষ্টাকেই দিতে হবে। আমরা আমাদের জায়গা থেকে আমাদের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করছি। কোনো অধ্যাদেশ বা প্রজ্ঞাপন নয়, আদেশ (অর্ডার) জারি করতে হবে। এটি অবশ্যই প্রধান উপদেষ্টাকে জারি করতে হবে। অভ্যুত্থান-পরবর্তী সরকারের যে ম্যান্ডেটে এই সরকার গঠিত হয়েছে, সেই একই ম্যান্ডেটেই প্রধান উপদেষ্টা অর্ডার দিতে পারেন।
আগামী জাতীয় নির্বাচনে ৩০০ আসনে প্রার্থী দেওয়ার প্রসঙ্গে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, আমাদের সাংগঠনিক বিস্তার পরিকল্পনা সেই ভিত্তিতেই নীতি নির্ধারণ করব। আমরা এমন পলিসি তৈরি করছি, যাতে ৩০০ আসনেই আমাদের সাংগঠনিক উপস্থিতি সুসংহত থাকে এবং তা নিশ্চিত করা যায়।
রাজনীতি
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সব কমিটির স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সব কমিটির স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করা হয়েছে। রোববার (২ নভেম্বর) এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছেন সংগঠনটির সভাপতি রিফাত রশিদ।
এতে বলা হয়, আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি, ’২৪-এর জুলাই ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান যে আকাঙ্ক্ষা ও উদ্দেশ্য নিয়ে সংঘটিত হয়েছিল, তার পূর্ণ বাস্তবায়ন এখনো হয়নি। বরং দেখা যাচ্ছে, জুলাইয়ের শহীদ পরিবার ও আহতদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসন যেমন নিশ্চিত করা হয়নি, তেমনি তাদের নিরাপত্তাও যথাযথভাবে নিশ্চিত করতে ব্যর্থ অভ্যুত্থানের সরকার।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ইতোমধ্যে বিভিন্ন স্থানে শহীদ পরিবার ও আহতদের ওপর হামলার ঘটনাও ঘটেছে, যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এ ছাড়া জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচারিক প্রক্রিয়া সম্পর্কেও কোনো সুস্পষ্ট রোডম্যাপ আমরা এখনো প্রত্যক্ষ করিনি, যা হাজারও শহীদ ও আহতদের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে থাকা অন্তর্বর্তী সরকারের চরম ব্যর্থতা। তাই জুলাই অভ্যুত্থানের বৈপ্লবিক রূপান্তর নিশ্চিতে এবং ঐতিহাসিক এক দফা, অর্থাৎ ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ ও নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত বিনির্মাণের নিমিত্তে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দেশের বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ, মহানগর, জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ের সব ইউনিট কমিটির স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করা হলো।
একই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব ইউনিটকে সাংগঠনিক কার্যক্রম পুনরায় সচল করার নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে এবং সারা দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়, মহানগর ও জেলা ইউনিটকে আগামী ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে কমিটি পুনর্গঠন সম্পন্ন করার নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে।



