অর্থনীতি
শীতের সবজিতে স্বস্তি, কমেছে ডিম-মুরগির দাম
পুরোদমে শীতের আবহ এখনো তৈরি না হলেও এরইমধ্যে বাজারে সরবরাহ বেড়েছে শীতকালীন শাক-সবজির। যে কারণে গত সপ্তাহের তুলনায় সবজির দামে স্বস্তি ফিরেছে। গত সপ্তাহের তুলনায় কমতে শুরু করেছে ডিমের দামও। তবে তেল, চিনি, লবণের দামে তেমন হেরফের দেখা যায়নি।
বিক্রেতারা বলছেন, অধিক লাভের আশায় কৃষকরা এখন আগাম শীতকালীন সবজি চাষ করে থাকেন। এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলনও ভালো হয়েছে। এতে মৌসুমের শুরু থেকেই আসতে শুরু করেছে হরেক রকম শীতের সবজি। এতে গত কয়েক সপ্তাহের তুলনায় বাজারে সব ধরনের সবজির দাম কমেছে।
রাজধানীর তালতলা, মালিবাগ ও সেগুনবাগিচা বাজার ঘুরে ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে এই চিত্র পাওয়া গেছে।
এসব বাজারে শিম কেজি প্রতি ১২০-১৪০ টাকা, মুলা ৬০-৮০ টাকা, মানভেদে বাজারে এক একটি ফুলকপি ও বাঁধাকপি ৫০-৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে এসব কপির আকার ছোট। লাউয়ের ক্ষেত্রেও তা-ই। আকার ও মানভেদে প্রতিটি লাউয়ের দাম ৫০ থেকে ৮০ টাকা।
এদিকে ক্রেতারা বলছেন, এসব ফুলকপি, বাঁধাকপি আকারের তুলনায় কিছুটা খরুচে হলেও বাজারে সবজির সরবরাহ বেড়েছে। যে কারণে টানা কয়েক মাস ধরে সবজির দামের যে তেজিভাব ছিল, সেটা কমতে শুরু করেছে।
কিছু পদের শীতের সবজি কিনে এনামুল হোসেন নামের একজন ক্রেতা বলেন, নতুন সবজি একটু দাম বেশি হলেও কিনতে ইচ্ছে করে। তবে এখন দাম গত সপ্তাহের চেয়ে কম। কারণ গত সপ্তাহে ২০০ টাকা কেজিতে শিম কিনেছি, আজ কিনলাম ১২০ টাকা কেজি দরে। মুলা ও কপির দামও প্রায় ২০ টাকা কম নিল।
বিক্রেতারা বলছেন, ক্রেতাদের আকর্ষণ এখন শীতের সবজির ওপর। দিন যত যাবে শীতের সবজিসহ অন্যান্য সবজির দামও কমে আসবে। ১-২ সপ্তাহের মধ্যে এসব সবজির সরবরাহ বেড়ে যাবে।
এদিকে বাজারে গরমের সময়কার সবজিগুলোর দামও অল্প অল্প করে কমতে শুরু করেছে শীতের সবজির সরবরাহ থাকায়। এর মধ্যে মান ও বাজারভেদে প্রতি কেজি লম্বা বেগুণ বিক্রি হচ্ছে ৮০-৯০ টাকা কেজি দরে। যদিও গোল বেগুণ বিক্রি হচ্ছে ১০০-১২০ টাকার মধ্যে, যা সপ্তাহ দুয়েক আগেও ১৫০ টাকায় উঠেছিল।
এছাড়া চিচিঙ্গা, করলা, ঝিঙ্গা, ধুন্দল, পটল বিক্রি হচ্ছে ৬০-৮০ টাকার মধ্যে। পেপে ৩০-৩৫ টাকা। তবে বরবটি আগের মতই ৯০-১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে।
অন্যদিকে, আলুর দামও বরাবরের মতোই কম, প্রতি কেজি মিলছে ২৫-৩০ টাকায়। আর পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে মানভেদে ৬০ থেকে ৮০ টাকা পর্যন্ত।
এদিকে, ঢাকার বাজারে গত সপ্তাহে হুট করেই ফার্মের মুরগির ডিমের দাম বেড়ে গিয়েছিল, তা এখন কমতে শুরু করেছে। কয়েকদিন আগে প্রতি ডজন ডিম ১৫০ টাকায় বিক্রি হলেও সেটি আবারও ১৪০ টাকায় এসেছে। যদিও পাড়া-মহল্লার কিছু দোকানে এখনো ১৫০ টাকায় ডিম বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া বাজারে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা এবং সোনালি মুরগি ২৮০ থেকে ৩০০ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে।
অন্যদিকে মুদি পণ্যের বাজারে তেল, চিনি, লবণের দামে তেমন কোনো হেরফের দেখা যায়নি।
অর্থনীতি
বেপজা ইজেডে ১ হাজার ২২৩ কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে চীন
চট্টগ্রামের মীরসরাইয়ে অবস্থিত বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চলে (বেপজা ইজেড) পোশাক কারখানা স্থাপনে মোট ১০ দশমিক ৩২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করবে চীনা মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান উইং তাই গার্মেন্টস (বাংলাদেশ) কোম্পানি লিমিটেড। বাংলাদেশি মুদ্রায় (ডলার প্রতি ১২২ টাকা হিসেবে) যার পরিমাণ ১ হাজার ২২৩ কোটি ৯০ লাখ টাকা। এই বিনিয়োগ সম্পন্ন হলে পোশাক কারখানাটিতে ৩ হাজার ১৫৮ জন বাংলাদেশির কাজের সুযোগ তৈরি হবে।
মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর) ঢাকার বেপজা কমপ্লেক্সে চীনা প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষের (বেপজা) মধ্যে এ-সংক্রান্ত চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। বেপজার পক্ষে সদস্য (বিনিয়োগ উন্নয়ন) মো. আশরাফুল কবীর এবং চীনা প্রতিষ্ঠানটির পক্ষে মহাব্যবস্থাপক লি কিংকি চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন।
চুক্তি অনুযায়ী, চীনা প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন ধরনের পোশাক পণ্য যেমন- নারী, পুরুষ ও বাচ্চাদের জন্য বার্ষিক ১ দশমিক ৫৬ মিলিয়ন পিস টপস, টি-শার্ট, ট্রাউজার ও শর্টস এবং ৪ দশমিক শূন্য ১ মিলিয়ন পিস জ্যাকেট, প্যান্ট ও শর্টস উৎপাদন করবে।
চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে বেপজার নির্বাহী চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মোয়াজ্জেম হোসেন উপস্থিত ছিলেন। তিনি চীনা প্রতিষ্ঠানটিকে স্বাগত জানান এবং ব্যবসা পরিচালনার জন্য নিরবচ্ছিন্ন সহযোগিতা ও ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ প্রদানে বেপজার পক্ষে দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।
চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে বেপজার সদস্য (অর্থ) আ ন ম ফয়জুল হক, নির্বাহী পরিচালক (এন্টারপ্রাইজ সার্ভিসেস) খুরশিদ আলম, নির্বাহী পরিচালক (প্রশাসন) সমীর বিশ্বাস, নির্বাহী পরিচালক (জনসংযোগ) এএসএম আনোয়ার পারভেজ ও নির্বাহী পরিচালক (বিনিয়োগ উন্নয়ন-অতিরিক্ত দায়িত্ব) ফজলুল হক মজুমদার এবং উইং তাই গার্মেন্টস (বাংলাদেশ)-এর কোম্পানি এডভাইজর এজেডএম আজিজুর রহমানসহ বেপজার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
এমকে
অর্থনীতি
১৩ ব্যাংক থেকে ২০২ মিলিয়ন ডলার কিনেছে বাংলাদেশ ব্যাংক
দেশে রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয়ের প্রবাহকে সহায়তা দিতে এবং বৈদেশিক মুদ্রার বাজার স্থিতিশীল রাখতে ব্যাংকগুলো থেকে অতিরিক্ত ডলার কিনছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। মঙ্গলবার ১৩টি ব্যাংক থেকে মোট ২০ কোটি ২০ লাখ মার্কিন ডলার (২০২ মিলিয়ন ডলার) কেনা হয়েছে।
এসময় প্রতি ডলারের বিনিময় হার ছিল ১২২.২৭ টাকা থেকে ১২২.২৯ টাকা পর্যন্ত। কাট-অফ রেট ১২২.২৯ টাকা, যা মাল্টিপল প্রাইস নিলাম পদ্ধতির মাধ্যমে সম্পন্ন হয়েছে।
চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরে এ পর্যন্ত নিলাম পদ্ধতির মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংক মোট ২৫১ কোটি ৪০ লাখ (২.৫১ বিলিয়ন ডলার) ডলার কিনেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংক গত ১৩ জুলাই থেকে নিলামের মাধ্যমে ডলার কেনা শুরু করে। ওই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবেই এখন পর্যন্ত এই বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা সংগ্রহ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান জানান, আজ মঙ্গলবার মাল্টিপল প্রাইস অকশনের মাধ্যমে ১৩ ব্যাংক থেকে ২০২ মিলিয়ন বা ২০ কোটি ২০ লাখ ডলার কেনা হয়েছে। এসময় ডলারের দাম নির্ধারণ হয় প্রতি ডলারে ১২২.২৭ টাকা থেকে ১২২.২৯ টাকা পর্যন্ত।
এমকে
অর্থনীতি
দুর্নীতিবাজদের আগে মানুষ ঘৃণা করতো, এখন লাফ দিয়ে যাই সম্মান করতে: অর্থ উপদেষ্টা
দুর্নীতি প্রতিরোধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, দুর্নীতি বন্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। আগে দুর্নীতিগ্রস্ত লোককে সামাজিকভাবে অ্যাভয়েড করা হতো, মানুষ ঘৃণা করতো। তারা ছেলে-মেয়েদের বিয়ে দিতে পারতো না। আর এখন লাফ দিয়ে আমরা যাই বিয়ে দিতে, সম্মান জানাতে।
মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর) সকালে শিল্পকলা একাডেমিতে আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস উপলক্ষে দুর্নীতি দমন কমিশন আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, সমাজে দুর্নীতিকে ঘৃণা করতে হবে। বর্তমানে দুর্নীতিবাজ পুরষ্কৃত হচ্ছে। সমাজের সব ব্যক্তির পক্ষ থেকে দুর্নীতির তথ্য আসতে হবে। এনফোর্সমেন্ট একটি কঠিন বিষয়। বর্তমানে দুদক আগের চেয়ে বেশি দৃশ্যমান।
ড. সালেহউদ্দিন বলেন, রাজনীতিবিদদের সদিচ্ছা থাকলে সমাজে পচন ধরবে না, কমে আসবে দু্র্নীতি। আর্থিক ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি বড় বিষয়। হাজার হাজার কোটি টাকা দুর্নীতি হয়েছে, শাস্তি কী দেবেন? সারাজীবন কারাগারে থাকলেও সাজা হয় না। কারণ দেশের অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে। শুধু শাস্তি দিয়েই নয়, সামাজিকভাবে দুর্নীতিবাজদের প্রতিরোধ করলে দুর্নীতি কমে আসবে।
সভাপতির বক্তব্যে দুদক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেন বলেন, গত ১৫ বছরে যেসব দেশে আমাদের বিপুল পরিমাণ অর্থ চলে গেছে, সেখানে আজ আমাদের কার্যকর যোগাযোগ নেই; এমনকি যোগাযোগের পথও খুঁজে পাচ্ছি না। বিদেশে আমাদের কষ্টার্জিত অর্থ ‘ডার্টি মানি’ হিসেবে পড়ে আছে, আর সেসব দেশে এই অর্থ উদ্ধার বা ব্যবস্থাপনার মতো লোকবলও আমাদের নেই।
মোমেন আরও বলেন, আগে মধ্যপ্রাচ্য ও আমেরিকা থেকে বাংলাদেশে টাকা আসতো। এখন বাস্তবতা উল্টো—বাংলাদেশ থেকে অর্থ আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশে যায় এবং পরে কোনো না কোনোভাবে আবার দেশে ফিরে আসে। এসব লেনদেনে বিভিন্ন ধরনের ‘ইনসেনটিভও’ থাকে। এত বড় কাঠামো একদিনে, এক মাসে বা এক বছরে বদলানো সম্ভব নয়।
ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেন বলেন, গত ১৫ বছর ধরে যারা অপরাধ করেছেন, আমাদের দেশের রাজনৈতিক এলিটরা কোটি টাকার বিনিময়ে তাদের সীমান্ত পার করে দিয়েছেন। এসব লোককে আপনারা নির্বাচিত করবেন কি না তা চিন্তা করতে হবে। এখন সময় এসেছে—এমন লোকদের আমরা নির্বাচিত করবো কি না এটা ভাবার।
তিনি বলেন, ভোট হলে শতভাগ লোক দুর্নীতির বিরুদ্ধে ভোট দেবে, তারপরও দুর্নীতি দূর করা কঠিন। আগামী নির্বাচন পরবর্তী শাসন করার জন্য দুঃশাসক, চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসী রাখলে উন্নত দেশ পাওয়া কঠিন। ক্ষমতাচ্যুতরা পালিয়ে যাওয়ার সময় তাদের কে যারা সহযোগিতা করেছে টাকার বিনিময়ে, তাদের ভোট না দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন দুদক চেয়ারম্যান।
দুদক চেয়ারম্যান বলেন, গত ১৫ বছরে যেসব দেশে টাকা পাচার হয়েছে, সেসব দেশের সঙ্গে দুদকের যোগাযোগ নেই। এসব টাকা ফিরিয়ে আনার জন্য সেসব দেশে ফাস্ট সেক্রেটারি পদমর্যাদার কর্মকর্তা পাঠাতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
চেয়ারম্যান আরও বলেন, গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকে অনেকেই দেশ ছেড়েছেন—পালিয়ে গেছেন। সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি থেকে শুরু করে বায়তুল মোকাররমের খতিব—এটিই দেখায় দুর্নীতি কত গভীরে পৌঁছেছে। যদি শুরুতেই দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া যেতো, তাহলে আমাদের ১৫–১৬ বছরের ভোগান্তি হতো না।
তিনি বলেন, ২০০৮ সালের নির্বাচনের সময় সাবেক প্রধানমন্ত্রী সম্পদ বিবরণী জমা দিয়েছিলেন। সেখানে কৃষিজমির পরিমাণ দেখানো হয়েছিল ৫ দশমিক ২১ একর। ইনকাম ট্যাক্স রিটার্ন যাচাই করেও তাতে সমস্যা পাওয়া যায়নি। কিন্তু তদন্তে দেখা যায়, জমি রয়েছে ২৯ একর। গাড়ির বিবরণীতেও অসংগতি পাওয়া যায়—অতিরিক্ত দুটি গাড়ি যুক্ত ছিল, যার একটি তৎকালীন এক এমপি এবং অন্যটি সাবেক যুব প্রতিমন্ত্রীর নামে, যা কিনা ‘পাঁচ নম্বর সুধা সদন’ এর নামে কেনা হয়েছিল এবং সরকারের ভর্তুকিও দেওয়া হয়নি।
মোহাম্মদ আবদুল মোমেন বলেন, যদি তখনই এসব অসংগতি ধরা হতো, সেক্ষেত্রে তার নমিনেশন বাতিল হতো। নমিনেশন বাতিল হলে তিনি এমপি বা প্রধানমন্ত্রী—কিছুই হতে পারতেন না। এমনকি তার দল ক্ষমতায় আসতো কি না সেটাও প্রশ্ন ছিল।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের মহাপরিচালক ড. এ কে এনামুল হক বলেন, বাংলাদেশে ১৪ থেকে ১৫ ধরনের দুর্নীতি রয়েছে। আমরা শুধু ঘুস নিয়ে কাজ করছি, দুর্নীতির অনেকগুলো ধরনের মধ্যে ঘুস মাত্র একটি ধরণ।
দুদক কমিশনার (অনুসন্ধান) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) হাফিজ আহসান ফরিদ বলেন, দুর্নীতি বন্ধ করতে হলে সরকারি সব প্রকল্পের ডিটেইলস অনলাইনে পাবলিশ করতে হবে। এমনকি কোনো তথ্য আপডেট হলেও তা জনগণকে জানাতে হবে। টাকা একবার চুরি হয়ে গেলে তা উদ্ধার করা কঠিন। বাংলাদেশে দুর্নীতি পদ্ধতি ভিন্ন, এখানে বিদেশি পদ্ধতি কাজ করবে না। আমাদের নিজস্ব মডেল তৈরি করতে হবে।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন- দুদক কমিশনার মিঞা মুহাম্মদ আলি আকবার আজিজী, দুদক সচিব মোহাম্মদ খালেদ রহীম, দুদক মহাপরিচালক মীর মো. জয়নুল আবেদীন শিবলী, আব্দুল্লাহ আল জাহিদ, আক্তার হোসেন, আবু হেনা মুস্তফা জামান, মোকাম্মেল হকসহ দুদকের পরিচালক, উপপরিচালক, সহকারী পরিচালক, উপসহকারী পরিচালকসহ পাঁচ শতাতিক কর্মকর্তা-কর্মচারী।
অর্থনীতি
ভ্যাট দিবস ও ভ্যাট সপ্তাহ উদযাপন করছে এনবিআর
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) আগামী ১০ ডিসেম্বর ভ্যাট দিবস এবং ১০-১৫ ডিসেম্বর ভ্যাট সপ্তাহ-২০২৫ পালন করছে। প্রতি বছরের মতো এবারও নানা কর্মসূচির মাধ্যমে দিবসটি উদযাপন করা হবে। ভ্যাট নিবন্ধনকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে এ বছরের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে- ‘সময়মত নিবন্ধন নেব, সঠিকভাবে ভ্যাট দিব’।
এ প্রতিপাদ্যের আলোকে ১০ থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সারাদেশে বিশেষ নিবন্ধন ক্যাম্পেইন পরিচালনা করবে এনবিআর। এবারের লক্ষ্য- ১ লাখ নতুন ভ্যাট নিবন্ধন। বর্তমানে দেশে ভ্যাট নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৬ লাখ ৪৪ হাজার।
এনবিআর সূত্র জানায়, গত অর্থবছরে মোট রাজস্ব আদায়ের ৩৮ শতাংশ এসেছে ভ্যাট থেকে। চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে ভ্যাট আদায় বেড়েছে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২২ শতাংশ। ভ্যাট ব্যবস্থাপনা জোরদার করতে পারলে রাজস্ব আদায় আরও বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করছে এনবিআর।
জনগণের পরিশোধিত রাজস্ব দিয়ে বার্ষিক উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নসহ শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সড়ক-রেল অবকাঠামো নির্মাণ, ঋণ পরিশোধ, সামাজিক সুরক্ষা, কৃষি, বিদ্যুৎ ও শিল্পে ভর্তুকি প্রদানসহ বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক খাতে ব্যয় করা হয়।
তবে ভ্যাট আদায় ব্যবস্থায় এখনও বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ রয়েছে। অনিবন্ধিত ব্যবসা, পূর্ণাঙ্গ অটোমেশনের ঘাটতি, রেয়াত-শৃঙ্খল অকার্যকর, অতিরিক্ত অব্যাহতি, ম্যানুয়াল অডিট পদ্ধতি, ই-কমার্স ও ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম থেকে ভ্যাট সংগ্রহের সীমাবদ্ধতা ইত্যাদি।
এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় এনবিআর ইতোমধ্যে অনলাইন নিবন্ধন, অনলাইন রিটার্ন দাখিল, ই-সহগ, অনলাইন পেমেন্ট, ই-রিফান্ড, ই-অডিট, ভ্যাট স্মার্ট চালান, এবং ভ্যাট ফাঁকি রোধে ‘রিস্ক-বেসড অডিট সিস্টেম’ চালুসহ নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
এনবিআর মনে করে, স্বেচ্ছায় কর প্রদানের সংস্কৃতি গড়ে তোলা এবং কর ফাঁকি কমানোই টেকসই রাজস্ব ব্যবস্থার মূল চাবিকাঠি। উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে শক্তিশালী ও আধুনিক ভ্যাট ব্যবস্থা অপরিহার্য এ লক্ষ্যে ভোক্তা, ব্যবসায়ী, শিল্প মালিক ও গণমাধ্যমের সহযোগিতা কামনা করেছে সংস্থাটি।
অন্যান্য
অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের আশাব্যঞ্জক লক্ষণ দেখা দিয়েছে: জিইডি
২০২৫ অর্থবছরের শেষ ছয় মাসে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে পুনরুদ্ধারের আশাব্যঞ্জক লক্ষণ দেখা গেছে।
পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগে (জিইডি) প্রকাশিত ‘বাংলাদেশ স্টেট অব দ্য ইকোনমি ২০২৫’ প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে সোমবার (৮ ডিসেম্বর) আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বিভিন্ন পূর্বাভাসে প্রবৃদ্ধি শ্লথ হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করা হলেও বর্তমানে প্রধান সূচকগুলো ধীরে ধীরে পুনরুদ্ধারের দিকেই ইঙ্গিত করছে।
জিইডির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ২০২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি আগের বছরের তুলনায় কম থাকবে বলে বড় উন্নয়ন সহযোগীরা ধারণা করছে।
বিশ্বব্যাংক ৩.৩ শতাংশ থেকে ৪.১ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছে, আর এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) পূর্বাভাস দিয়েছে ৩.৯ শতাংশ। তবে ২০২৬ অর্থবছরে অর্থনীতি গতি সঞ্চার করবে এবং প্রবৃদ্ধি ৫.১ শতাংশ থেকে ৫.৩ শতাংশে উন্নীত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
প্রতিবেদনটিতে বাংলাদেশের বহিঃখাতের উল্লেখযোগ্য স্থিতিশীলতার কথা বলা হয়েছে। শক্তিশালী রেমিট্যান্স প্রবাহ, আমদানি স্থিতিশীলতা এবং মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানির পুনরুদ্ধার অভ্যন্তরীণ চাহিদা বৃদ্ধির পাশাপাশি বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরার ইঙ্গিত দিচ্ছে।
রপ্তানি আয়ও শক্তিশালী রয়েছে, যা তৈরি পোশাক (আরএমজি) খাতের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বৃদ্ধি, নীতি মেনে চলা এবং বাজার বহুমুখীকরণের মাধ্যমে সম্ভব হয়েছে।
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ তিন মাসের বেশি আমদানি ব্যয় মেটাতে সক্ষম অবস্থায় স্থিতিশীল রয়েছে, যা বিচক্ষণ সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার প্রতিফলন।
প্রতিবেদনটিতে আরও বলা হয়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) দুই বিভাগে ভাগ করার সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে এনবিআর কর্মকর্তাদের কর্মবিরতির কারণে জুন মাসে রাজস্ব সংগ্রহ মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হয়। পরে কর্মসূচি প্রত্যাহারের ফলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয় এবং রাজস্ব আদায় পুনরায় শুরু হয়।
জিইডি জোর দিয়ে বলেছে, মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, বিনিয়োগকারীদের আস্থা পুনরুদ্ধার এবং আর্থিক খাত স্থিতিশীল করা ২০২৫-২৬ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি বাড়ানোর জন্য অপরিহার্য। যদিও অনেক পূর্বাভাস পুনরুদ্ধারের ইঙ্গিত দিচ্ছে, তবে প্রবৃদ্ধি কতটা কর্মসংস্থান সৃষ্টি, দারিদ্র্য হ্রাস এবং জীবনমান উন্নয়নে রূপান্তরিত হবে তা কার্যকর নীতি, শক্তিশালী আর্থিক খাতের শাসন ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন কৌশলের ওপর নির্ভর করবে।
প্রতিবেদনটিতে দুর্বল বেসরকারি বিনিয়োগ ও শিল্প কার্যক্রমকে প্রবৃদ্ধির বড় বাধা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। বিপরীতে, রেমিট্যান্স প্রবাহ, রপ্তানি কার্যকারিতা এবং উৎপাদন খাতের আউটপুট-বিশেষ করে তৈরি পোশাক শিল্প-প্রবৃদ্ধির প্রধান চালিকা শক্তি হিসেবে কাজ করছে ও ২০২৬ অর্থবছরেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে।
তবে বাংলাদেশকে সীমিত রিজার্ভ, বিনিয়োগকারীদের আস্থার সংকট, ক্রেতাদের পরিবর্তিত পছন্দ এবং বৈশ্বিক বাণিজ্য উত্তেজনা ও ভূরাজনৈতিক অনিশ্চয়তার মতো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে।
প্রতিবেদনটিতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশ এখন একটি গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছে। বৃহৎ ও ক্রমবর্ধমান শ্রমবাজারের চাহিদা মোকাবিলা, উৎপাদনশীলতা বাড়ানো-বিশেষত পোশাক ও এসএমই খাতে রেমিট্যান্স বৃদ্ধি এবং মানবসম্পদ উন্নয়নে বিনিয়োগকে জাতীয় অগ্রাধিকার দিতে হবে।
উদীয়মান দুর্বলতাগুলো- বিশেষ করে মূল্যস্ফীতি, আর্থিক খাতের অস্থিরতা, দুর্বল বিনিয়োগ পরিবেশ, সুশাসন সংকট এবং বৈদেশিক ঝুঁকি সমাধান করতে ব্যর্থ হলে প্রবৃদ্ধি মন্থর হতে পারে, জীবনমান খারাপ হতে পারে, দারিদ্র্য বাড়তে পারে এবং বৈষম্য দেখা দিতে পারে।
অন্যদিকে, সময়োপযোগী ও সমন্বিত নীতি সংস্কার, শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান এবং স্পষ্ট নীতিগত বার্তা প্রদান নিশ্চিত করতে পারলে বাংলাদেশ পুনরায় গতি ফিরে পাবে এবং আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি অর্জনের সুযোগ তৈরি হবে।
জিইডি উপসংহারে বলেছে, কাঠামোগত সংস্কার ও উদ্ভাবন-নির্ভর অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি দ্বারা সমর্থিত একটি সুপরিকল্পিত জাতীয় টেকসই উন্নয়ন কৌশল ভবিষ্যৎ উন্নয়ন পরিকল্পনাকে পরিচালিত করবে, যা স্থিতিস্থাপকতা ও দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক শক্তি বাড়াবে।




