অর্থনীতি
দেশের ব্যবসার পরিবেশে তেমন উন্নতি হয়নি: বিবিএক্স জরিপ

বাংলাদেশের ব্যবসার পরিবেশে গত এক বছরে বড় কোনো অগ্রগতি হয়নি; বরং কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। বাংলাদেশ বিজনেস ক্লাইমেট ইনডেক্স বা ব্যবসা জলবায়ু সূচকের (বিবিএক্স) সর্বশেষ জরিপ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
বিবিএক্স জরিপের চতুর্থ সংস্করণটি যৌথভাবে পরিচালনা করেছে মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই) এবং পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশ। উদ্যোগটিকে সহায়তা করেছে অস্ট্রেলিয়ান সরকারের ডিপার্টমেন্ট অব ফরেন অ্যাফেয়ার্স অ্যান্ড ট্রেড (ডিএফএটি)।
প্রতিবেদনটি বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) বিকেলে গুলশানে এমসিসিআই কার্যালয়ে প্রকাশ করা হয়। অনুষ্ঠানে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। ৮০০টি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৬৫০টি প্রতিষ্ঠান জরিপে অংশ নেয়, যার আওতায় ক্ষুদ্র, মাঝারি ও বড় ব্যবসা অন্তর্ভুক্ত ছিল।
২০২৪-২৫ অর্থবছরের বিবিএক্স প্রতিবেদনে দেখা যায়, নিয়ন্ত্রক তথ্যপ্রাপ্তি, অবকাঠামো, শ্রমনীতি, বাণিজ্য সুবিধা, প্রযুক্তি গ্রহণ, পরিবেশগত মান রক্ষা—এসব ক্ষেত্রেই আগের বছরের তুলনায় সূচকের মান কমেছে।
তবে সামগ্রিকভাবে দেশের ব্যবসার পরিবেশ সূচক ৫৯ দশমিক ৬৯ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে, যা আগের অর্থবছরের ৫৮ দশমিক ৭৫ পয়েন্ট থেকে সামান্য বেড়েছে। মাত্র ০.৯৪ পয়েন্ট বৃদ্ধিকে বিশেষ কোনো ইতিবাচক পরিবর্তন হিসেবে দেখা যাচ্ছে না।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাজনৈতিক অস্থিরতা, ভূরাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি, বিনিয়োগে অনিশ্চয়তা, মুদ্রাস্ফীতি, ব্যাংকের সুদের হার বৃদ্ধি ও মুদ্রা বিনিময় হারের অস্থিরতা—এসবই বাংলাদেশের ব্যবসার পরিবেশকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে। গত অর্থবছরে সূচকটি উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গিয়েছিল, যেখানে তার আগের দুই বছর ছিল ৬১ পয়েন্টের ওপরে।
জরিপে দেশের ১২টি খাত অন্তর্ভুক্ত করা হয়—খুচরা ও পাইকারি বাণিজ্য, পরিবহন, নির্মাণ, ইলেকট্রনিক্স ও লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং, চামড়া ও ট্যানারি, কৃষি ও বনজ, রিয়েল এস্টেট, খাদ্য ও পানীয়, ওষুধ ও রাসায়নিক, তৈরি পোশাক, বস্ত্র ও আর্থিক মধ্যস্থতা।
অনুষ্ঠানে পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ও সিইও ড. মসরুর রিয়াজ বলেন, ব্যবসার পরিবেশ উন্নয়নে এখনই সংস্কারমূলক পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।
জরিপে ১১টি মূল স্তম্ভ ধরে সূচক নির্ধারণ করা হয়েছে—ব্যবসা শুরু, ভূমি প্রাপ্তি, নিয়ন্ত্রক তথ্য, অবকাঠামো, শ্রমনীতি, বিরোধ নিষ্পত্তি, বাণিজ্য সুবিধা, কর প্রদান, প্রযুক্তি গ্রহণ, অর্থায়ন ও পরিবেশ বিধিমালা।
ড. মসরুর রিয়াজ জানান, ঢাকা ও চট্টগ্রাম দেশের ব্যবসার ৫৮ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এ দুই শহরে ব্যবসার পরিবেশের উন্নতি হয়নি। নতুন ব্যবসা শুরু করাও এখানকার বড় চ্যালেঞ্জ। অন্যদিকে, সিলেট ১১টির মধ্যে ৪টি স্তম্ভে এবং বরিশাল ৩টি স্তম্ভে শীর্ষে রয়েছে।
৭৮ শতাংশ প্রতিষ্ঠান জানিয়েছে, মুদ্রাস্ফীতি ও আর্থিক অনিশ্চয়তার কারণে তাদের উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে, বিশেষ করে তৈরি পোশাক, ওষুধ ও পাইকারি বাণিজ্যে। ৫৮ শতাংশ প্রতিষ্ঠান আর্থিক সংকটে এবং ৬০ শতাংশ দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনায় সমস্যায় পড়েছে।
ড. রিয়াজ বলেন, সরকারি কর্মকর্তারা অনেক সময় সমস্যাগুলো স্বীকার করেন, তবে সেগুলো সমাধানে দ্রুত পদক্ষেপ প্রয়োজন। বিবিএক্স তথ্য ও বিশ্লেষণের মাধ্যমে সরকারকে সংস্কার প্রক্রিয়ায় সহায়তা করবে বলেও জানান তিনি।
অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেট্রোর কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ কাজুআকি কাটাওকা, বিসিআই সভাপতি আনোয়ার-উল-আলম চৌধুরী পারভেজ, বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশ লিমিটেডের এমডি রূপালি চৌধুরী প্রমুখ।
এমসিসিআই সভাপতি কামরান টি. রহমান বলেন, বিবিএক্স বাংলাদেশের অর্থনৈতিক বাস্তবতা প্রতিফলিত করে। নীতিনির্ধারক ও বিনিয়োগকারীদের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ রেফারেন্স। তিনি আর্থিক অন্তর্ভুক্তি, ডিজিটালাইজেশন, অবকাঠামো উন্নয়ন, দক্ষতা বৃদ্ধি ও প্রশাসনিক সক্ষমতা বাড়ানোর ওপর জোর দেন।
বিসিআই সভাপতি আনোয়ার-উল-আলম চৌধুরী পারভেজ বলেন, আমলাতান্ত্রিক সহযোগিতার ঘাটতি এখন বড় সমস্যা। অনেক কর্মকর্তা দায়িত্বহীনভাবে কাজ করছেন, যা ব্যবসার পরিবেশকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ছাড়া বিনিয়োগ ও প্রতিযোগিতা বাড়ানো সম্ভব নয়।
বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশ লিমিটেডের এমডি রূপালি চৌধুরী বলেন, ব্যবসায়ীদেরও আইন ও বিধি মেনে চলতে হবে। অনেক প্রতিষ্ঠান বছর বছর লোকসান দেখানোর কারণে ন্যূনতম কর আরোপ করতে হয়েছে। স্বচ্ছতা ও অটোমেশনই টেকসই উন্নয়নের পথ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, ব্যাংক সুদের উচ্চ হার ব্যবসা পরিচালনায় বড় বাধা। আগামী বছরের শুরুতেই ঋণের সুদহার কিছুটা কমবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, অনেক ব্যবসায়ী রাজস্ব বোর্ডের অডিট নিয়ে অভিযোগ তুলছেন, কিন্তু অডিট পদ্ধতি সংস্কার করলেই সমস্যার সমাধান সম্ভব।
তিনি বলেন, দুর্নীতি ব্যবসার পরিবেশের জন্য বড় বাধা। তবে দৃঢ় নজরদারি ও স্বাধীন প্রতিষ্ঠান গড়ে তুললে এটি অনেকাংশে কমানো সম্ভব।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন যেকোনো দুর্নীতির অভিযোগ সরাসরি জানাতে তিনি ব্যবসায়ীদের আহ্বান জানান এবং আশ্বাস দেন যে সরকার সেগুলো গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করবে।

অর্থনীতি
স্বর্ণের দাম বেড়ে ভরি ২ লাখ ১৭ হাজার ৩৮২ টাকা

দেশের বাজারে সোনার দাম আবার বাড়ানো হয়েছে। এতে সোনার সর্বোচ্চ দামের নতুন ইতিহাস সৃষ্টি হয়েছে। সবচেয়ে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি (১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রাম) সোনার দাম বাড়ানো হয়েছে এক হাজার ৫০ টাকা। এতে এক ভরি সোনার দাম ২ লাখ ১৭ হাজার ৩৮২ টাকা হয়েছে।
স্থানীয় বাজারে তেজাবী সোনার (পাকা সোনা) দাম বাড়ার পরিপ্রেক্ষিতে এই দাম বাড়ানো হয়েছে। সোমবার (২০ অক্টোবর) থেকে নতুন দাম কার্যকর হবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস)।
রবিবার (১৯ অক্টোবর) বাজুস স্ট্যান্ডিং কমিটি অন প্রাইসিং অ্যান্ড প্রাইস মনিটরিং কমিটি বৈঠকে করে এই দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পরে কমিটির চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমানের সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এর আগে গত ১৫ অক্টোবর সোনার দাম বাড়ানো হয়। এতে অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে ভালো মানের এক ভরি সোনার দাম হয় ২ লাখ ১৬ হাজার ৩৩২ টাকা। এখন আবার দাম বাড়ানোর ফলে সেই রেকর্ড ভেঙে গেলো।
এখন সবচেয়ে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি সোনার দাম এক হাজার ৫০ টাকা বাড়িয়ে নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ২ লাখ ১৭ হাজার ৩৮২ টাকা। ২১ ক্যারেটের এক ভরি সোনার দাম এক হাজার ৪ টাকা বাড়িয়ে ২ লাখ ৭ হাজার ৫০৩ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
এছাড়া ১৮ ক্যারেটের এক ভরি সোনার দাম ৮৫২ টাকা বাড়িয়ে নতুন দাম এক লাখ ৭৭ হাজার ৮৫৩ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি সোনার দাম ৭২৩ টাকা বাড়িয়ে নির্ধারণ করা হয়েছে এক লাখ ৪৮ হাজার ৭৪ টাকা।
এর আগে গত ১৫ অক্টোবর সবচেয়ে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি সোনার দাম ২ হাজার ৬১৩ টাকা বাড়িয়ে নতুন দাম নির্ধারণ করা হয় ২ লাখ ১৬ হাজার ৩৩২ টাকা। ২১ ক্যারেটের এক ভরি সোনার দাম ২ হাজার ৪৯৬ টাকা বাড়িয়ে ২ লাখ ৬ হাজার ৪৯৯ টাকা নির্ধারণ করা হয়।
এছাড়া ১৮ ক্যারেটের এক ভরি সোনার দাম ২ হাজার ১৪৬ টাকা বাড়িয়ে নতুন দাম এক লাখ ৭৭ হাজার এক টাকা নির্ধারণ করা হয়। সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি সোনার দাম এক হাজার ৮৩১ টাকা বাড়িয়ে নির্ধারণ করা হয় এক লাখ ৪৭ হাজার ৩৫১ টাকা। আজ রোববার এই দামে সোনা বিক্রি হয়েছে।
সোনার দাম বাড়ানো হলেও রুপার দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। ২২ ক্যারেটের এক ভরি রুপার দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৬ হাজার ২০৫ টাকা। এছাড়া ২১ ক্যারেটের এক ভরি রুপার দাম ৫ হাজার ৯১৪ টাকা, ১৮ ক্যারেটের এক ভরি রুপার দাম ৫ হাজার ৭৪ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির এক ভরি রুপার দাম ৩ হাজার ৮০২ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
অর্থনীতি
১৮ দিনে রেমিট্যান্স এলো ১৯ হাজার ২০৩ কোটি টাকা

চলতি (অক্টোবর) মাসের প্রথম ১৮ দিনে দেশে এসেছে প্রায় ১৫৭ কোটি ৪০ লাখ মার্কিন ডলারের রেমিট্যান্স। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ১৯ হাজার ২০৩ কোটি টাকা। প্রতিদিন গড়ে যোগ হয়েছে আট কোটি ২৮ লাখ ডলার বা প্রায় এক হাজার ১১ কোটি টাকার প্রবাসী আয়।
রবিবার (১৯ অক্টোবর) বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান জানান, এ রেমিট্যান্স গত বছরের একই সময়ের তুলনায় পাঁচ কোটি ১০ লাখ ডলার বেশি। গত বছরের ওই সময়ে প্রবাসী আয় এসেছিল ১৫২ কোটি ৩০ লাখ ডলার।
চলতি (২০২৫-২৬) অর্থবছর ১৮ অক্টোবর পর্যন্ত মোট রেমিট্যান্স এসেছে ৯১৫ কোটি ৯০ লাখ ডলার। আগের অর্থবছরের একই সময়ে যা ছিল ৮০৬ কোটি ৬০ লাখ ডলার। অর্থবছর অনুযায়ী রেমিট্যান্স প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ১৩ দশমিক ৬ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের জুলাইয়ে ২৪৭ কোটি ৭৮ লাখ, আগস্টে ২৪২ কোটি ১৯ লাখ ও সেপ্টেম্বরে ২৬৮ কোটি ৫৮ লাখ ডলার প্রবাসী আয় এসেছে।
গত অর্থবছরের মার্চ মাসে রেমিট্যান্সপ্রবাহ সর্বোচ্চ ৩২৯ কোটি ডলারে পৌঁছেছিল, যা ছিল ওই অর্থবছরের এক মাসের হিসাবে রেকর্ড। পুরো অর্থবছরে প্রবাসী আয় দাঁড়ায় ৩০ দশমিক ৩৩ বিলিয়ন ডলার। এটি আগের বছরের তুলনায় ২৬ দশমিক ৮ শতাংশ বেশি।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে মোট রেমিট্যান্স এসেছিল ২৩ দশমিক ৯১ বিলিয়ন ডলার। তখন জুলাইয়ে ১৯১ দশমিক ৩৭ কোটি, আগস্টে ২২২ দশমিক ১৩ কোটি, সেপ্টেম্বরে ২৪০ দশমিক ৪১ কোটি, অক্টোবরে ২৩৯ দশমিক ৫০ কোটি, নভেম্বরে ২২০ কোটি, ডিসেম্বরে ২৬৪ কোটি, জানুয়ারিতে ২১৯ কোটি, ফেব্রুয়ারিতে ২৫৩ কোটি, মার্চে ৩২৯ কোটি, এপ্রিলে ২৭৫ কোটি, মে মাসে ২৯৭ কোটি ও জুনে ২৮২ কোটি ডলার প্রবাসী আয় পাওয়া গিয়েছিল।
অর্থনীতি
বিমানবন্দরে আগুনে ক্ষতির পরিমাণ ১০০ কোটি টাকার বেশি: বিজিএমইএ

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে অগ্নিকাণ্ডে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ১০০ কোটি টাকার বেশি হতে পারে বলে অনুমান করছেন তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র নেতারা।
তারা বলেছেন, এ দুর্ঘটনায় দেশের রপ্তানি বাণিজ্য, বিশেষ করে তৈরি পোশাকশিল্প মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
রবিবার (১৯ অক্টোবর) বিজিএমইএ’র ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ইনামুল হক খানের নেতৃত্বাধীন একটি প্রতিনিধিদল শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। পরিদর্শন শেষে বিজিএমইএ নেতারা এসব কথা বলেন।
পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সামনে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ইনামুল হক।
তিনি বলেন, ওই অগ্নিকাণ্ডের ফলে তৈরি পোশাক, মূল্যবান কাঁচামাল এবং নতুন ব্যবসার জন্য গুরুত্বপূর্ণ স্যাম্পল পুড়ে গেছে। এই দুর্ভাগ্যজনক ঘটনায় আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। আগুনে যে পরিমাণ পণ্য নষ্ট হয়েছে, তা শুধু বর্তমান রপ্তানির ক্ষতি নয়, ভবিষ্যতের ব্যবসায়িক সুযোগও ব্যাহত করবে। বিজিএমইএ এরই মধ্যে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণে কাজ শুরু করেছে। সদস্যদের কাছ থেকে নির্ধারিত ফরমে ক্ষতিগ্রস্ত পণ্যের তালিকা চাওয়া হয়েছে। দ্রুত তথ্য সংগ্রহের জন্য একটি অনলাইন পোর্টাল খোলা হয়েছে।
দিনে ২০০-২৫০টি কারখানার পণ্য আকাশপথে রপ্তানি হয় জানিয়ে ইনামুল হক খান বলেন, ক্ষতির পরিমাণ বিপুল হতে পারে। সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে শিগগির বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়, কাস্টমসসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সঙ্গে একটি সমন্বয় সভা করবে বিজিএমইএ।
তিনি বলেন, আমরা ভেতরে গিয়ে ভয়াবহ চিত্র দেখেছি। পুরো ইমপোর্ট সেকশন পুড়ে গেছে। আমাদের অনুমান, ক্ষতির পরিমাণ ১ বিলিয়ন (১০০ কোটি) টাকার বেশি হতে পারে।
অর্থনীতি
চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্যবাহী গাড়ির বাড়তি মাশুল স্থগিত

চট্টগ্রাম বন্দরে প্রবেশের যানবাহনের বর্ধিত গেট পাস ফি (বাড়তি মাশুল) স্থগিত করেছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। এতে বন্দরে নতুন ট্যারিফ শিডিউলে পণ্যবাহী গাড়ির গেট পাস ফি বৃদ্ধির ঘটনায় সৃষ্ট অচলাবস্থা সাময়িকভাবে নিরসন হলো।
চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যান আশ্বাস দিয়েছেন, পণ্যবাহী গাড়ির ক্ষেত্রে বর্ধিত ফি স্থগিত থাকবে।
রবিবার (১৯ অক্টোবর) বিকেলে পরিবহন শ্রমিক ও মালিক প্রতিনিধিদের সঙ্গে বন্দর কর্তৃপক্ষের আলোচনা শেষে এ সিদ্ধান্তের কথা জানান বন্দর সচিব মো. ওমর ফারুক।
তিনি বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরে ট্রাক, কাভার্ডভ্যান, লরি, ট্রেইলার শনিবার থেকে বন্ধ। ফলে আমদানি পণ্য ডেলিভারি বন্ধ ছিল। বিষয়টির সঙ্গে দেশের আমদানি-রপ্তানি জড়িত। তাই বন্দর চেয়ারম্যানের সভাপতিত্বে শ্রমিক ও মালিকদের সঙ্গে অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে আলোচনা হয়েছে। সরকারি অনুমোদনক্রমে জারি করা এ গেজেট বন্দর প্রশাসন তাৎক্ষণিক কোনোরকম কারেকশন কিংবা বন্ধ করতে পারে না। তারপরও পরিবহন শ্রমিকদের বিষয়টা বিবেচনা করে যানবাহনের ক্ষেত্রে বর্ধিত গেট পাস ফি পরবর্তী সিদ্ধান্ত না হওয়া পর্যন্ত স্থগিত করা হয়েছে।
ওমর ফারুক বলেন, আমরা বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুসারে সুপারিশসহ প্রস্তাব পাঠাবো। বোর্ডের সিদ্ধান্ত নিয়ে মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠাবো। প্রস্তাব অনুমোদন হয়ে এলে আপনারা জানতে পারবেন কী সিদ্ধান্ত হয়েছে। আপাতত তা স্থগিত থাকবে। উপস্থিত শ্রমিক ও মালিক প্রতিনিধিরা আশ্বস্ত করেন তারা কাজে ফিরে যাবেন। বাইরে প্রায় ৬ হাজার ট্রাক-কাভার্ডভ্যান অপেক্ষা করছে। সব বন্দরে ডেলিভারি বা রপ্তানি কাজে নিয়োজিত হবে।
বিভাগীয় পণ্য পরিবহন ফেডারেশনের বন্দর বিষয়ক সম্পাদক মো. শামসুজ্জামান সুমন বলেন, বন্দর চেয়ারম্যান আমাদের সঙ্গে বৈঠকে পণ্যবাহী গাড়ির ক্ষেত্রে নতুন ট্যারিফ শিডিউলের বর্ধিত ফি স্থগিত করেন। চেয়ারম্যান জানিয়েছেন, আপাতত ট্রাক, কাভার্ডভ্যান বন্দরে প্রবেশের ক্ষেত্রে আমাদের ২৩০ টাকা দিতে হবে না। আগের মতো ৫৭ টাকা ৫০ পয়সা ফিতে পাস নিতে পারবো আমরা। যদি আমরা ৫৭ টাকা ৫০ পয়সায় পণ্যবাহী গাড়ির পাস পাই তাহলে আমাদের গাড়ি বন্দরের পণ্য পরিবহন করবে। প্রতিদিন আমাদের ৮-৯ হাজার গাড়ি বন্দরে পণ্যবাহী ট্রাক-কাভার্ডভ্যান চলাচল করে।
চট্টগ্রাম জেলা ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আলাউদ্দিন ফারুক বলেন, দীর্ঘ সময় আলোচনার পর বন্দর চেয়ারম্যান পণ্যবাহী গাড়ির গেট পাসের বর্ধিত ফি স্থগিতের কথা জানিয়েছেন। স্থগিত করার লিখিত কাগজ পেলে আমরা কর্মবিরতি প্রত্যাহার করবো। যেহেতু এটা কার্যকরের বিষয়টি লিখিতভাবে জানিয়েছিলেন, তাই স্থগিতের বিষয়টিও লিখিতভাবে জানালে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবো।
দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দরে নতুন ট্যারিফ শিডিউলে পণ্যবাহী গাড়ির গেট পাসের ফি বৃদ্ধির ঘটনায় অচলাবস্থা তৈরি হয়। নতুন ট্যারিফ শিডিউলে পণ্যবাহী গাড়ি সিঅ্যান্ডএফ কর্মচারীদের গেটপাসের ফি বৃদ্ধির ঘটনায় প্রাইমমুভার, ট্রেইলার মালিক সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন কর্মবিরতি পালন করে। একই দাবিতে কর্মসূচি ঘোষণা করেছে আন্তঃজেলা ট্রাক মালিক সমিতি। বন্দর চেয়ারম্যানের সঙ্গে বৈঠকে আপাতত অচলাবস্থা কাটলেও আশংকা এখনো কাটেনি।
অর্থনীতি
২৫০ কারখানার পণ্য পুড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছি: বিজিএমইএ সভাপতি

বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বলেছেন, কী পরিমাণ পণ্যের ক্ষতি হয়েছে, এই মুহূর্তে আমাদের কাছে কোনো তথ্য নেই। তবে সাধারণত আমাদের সদস্য কারখানাগুলো প্রায় সবাই এয়ারে পণ্য পাঠান। প্রতিদিন গড়ে ২০০-২৫০টি কারখানার পণ্য রপ্তানি হয়। সে হিসেবে এই পরিমাণ কারখানা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা করছি।
শুক্রবার (১৮ অক্টোবর) হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ক্ষতির পরিমাণ নিয়ে এসব কথা বলেন তিনি।
মাহমুদ হাসান খান বলেন, তবে বিমানবন্দর বন্ধ থাকলেও ক্ষতির মুখে পড়বেন রপ্তানিকারকরা। যদি তা দ্রুতই খুলে দেওয়া হয় তবে কম ক্ষতি হবে, যদি বেশি দিন বন্ধ থাকে তবে বেশি ক্ষতি হবে।
সবজি ও এ জাতীয় পণ্য রপ্তানিকারক সমিতির (বিএফভিএপিইএ) সভাপতি এস এম জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, আমাদের প্রতিদিনই অনেক পণ্য থাকে, এমনটা নয়। বিমানের স্থান ফাঁকা থাকার ওপর নির্ভর করে আমাদের বিভিন্ন ডেস্টিনেশনে পণ্য পাঠানো। তাই যেদিন স্থান বেশি পাই সেদিন পণ্যও বেশি দিতে পারি। আমরা খোঁজখবর নিচ্ছি আজকে আমাদের সদস্যদের কী পরিমাণ পণ্য ছিল।
জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, পচনশীল পণ্য হওয়ায় আমরা চাই দ্রুত বিমান চলাচল শুরু হোক। এতে আমাদের রপ্তানির জন্য পাইপলাইনে থাকা পণ্যগুলো নষ্ট হবে না।