জাতীয়
দেশের সব বিমানবন্দরে সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি
যুক্তরাজ্যের হিথ্রো, বেলজিয়ামের ব্রাসেলস ও জার্মানির বার্লিন বিমানবন্দরের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় সাম্প্রতিক সাইবার হামলার পর তৎপর হয়েছে বাংলাদেশের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। সাইবার হামলা প্রতিরোধে দেশের সব বিমানবন্দরে সতর্কতা জারি করেছে সংস্থাটি। এই পদক্ষেপের অংশ হিসেবে সংস্থাটি দেশের সব বিমানবন্দরে সর্বোচ্চ সতর্কতা জারিসহ ১০টি বিশেষ নির্দেশনা পাঠিয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) বেবিচকের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। বেবিচকের সদস্য (পরিকল্পনা ও পরিচালনা) এয়ার কমোডর আবু সাঈদ মেহবুব খানের সই করা নির্দেশনাপত্রটি দেশের সব বিমানবন্দরের প্রধান এবং বেবিচকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে পাঠানো হয়েছে।
নির্দেশনায় বলা হয়েছে, বিশ্বের বিভিন্ন বিমানবন্দরে সম্প্রতি সাইবার হামলা হয়েছে। তাই বাংলাদেশে বিমান পরিবহন কার্যক্রম নির্বিঘ্ন রাখতে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। এর জন্য ১০টি বিশেষ নির্দেশনা জারি করা হয়েছে।
নির্দেশনার মধ্যে রয়েছে শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার, সন্দেহজনক ই-মেইল ও লিংক থেকে বিরত থাকা, সফটওয়্যার ও অ্যান্টিভাইরাস নিয়মিত আপডেট রাখা, পাইরেটেড সফটওয়্যার ব্যবহার না করা, অফিসিয়াল ডিভাইসে ব্যক্তিগত অ্যাপ ইনস্টল না করা এবং মাল্টি-ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন (এমএফএ) ব্যবহার।
নির্দেশনায় আরও বলা হয়েছে, কোনো সাইবার নিরাপত্তা-সংক্রান্ত সমস্যা দেখা দিলে তাৎক্ষণিকভাবে বেবিচকের সিএএবি সার্ট টিম, আইটি বিভাগ এবং জাতীয় সাইবার ইন্সিডেন্ট রেসপন্স টিমকে অবহিত করতে হবে।
বেবিচক সূত্রে জানা যায়, গত ১৫ সেপ্টেম্বর সংস্থাটির প্রধান কার্যালয়ে সাইবার হামলার ঝুঁকি ও প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। বৈঠকে জানানো হয়, লন্ডনের কয়েকটি বিমানবন্দরে হামলার পর ফ্লাইট পরিচালনা বন্ধ করতে হয়েছে। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে বাংলাদেশও আগাম সতর্কতা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
এ ছাড়া বেবিচকের ওয়েবসাইট সম্প্রতি সাইবার হামলার শিকার হওয়ার বিষয়টিও বৈঠকে আলোচিত হয়েছে। জাতীয় সাইবার নিরাপত্তা এজেন্সি বেবিচকের সাইবার ঝুঁকি মূল্যায়ন করে দ্রুত একটি অভিজ্ঞ প্রতিষ্ঠান নিয়োগের পরামর্শ দিয়েছে।
জাতীয়
ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তথ্য চাইল সরকার
ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তথ্য চেয়েছে সরকার। দেশের বিভিন্ন জায়গায় হাইস্কুল, কলেজ, মাদরাসা, কারিগরি প্রতিষ্ঠান এবং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যাওয়ায় সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো জরুরি ভিত্তিতে মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের কাছে তথ্য চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছে।
রোববার (২৩ নভেম্বর) শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ এবং কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের অধীনে থাকা প্রতিষ্ঠানের তথ্য জানতে জেলা পর্যায়ের অফিসগুলোকে নির্দেশ পাঠায়।
প্রধান প্রকৌশলী (রুটিন দায়িত্ব) মো. তারেক আনোয়ার জাহেদীর স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানের তথ্য ও একাধিক ছবি সংযুক্ত করে আজকের মধ্যে প্রতিবেদন পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে জেলা অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলীদের।
এদিকে ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তথ্য সংগ্রহে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরও মাঠপর্যায়ে চিঠি দিয়েছে। অধিদপ্তরের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন শাখার পরিচালক মিরাজুল ইসলাম উকিল স্বাক্ষরিত চিঠিতে বিভাগীয় উপপরিচালকদের ২৭ নভেম্বরের মধ্যে প্রয়োজনীয় তথ্য পাঠাতে বলা হয়েছে।
অধিদপ্তর জানিয়েছে, ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী দেশের বিভিন্ন জেলায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে ধারণা পাওয়া যাচ্ছে।
মূলত, গত শুক্রবার ও শনিবার পরপর চার দফা ভূমিকম্প অনুভূত হয় দেশে। এরপর নিরাপত্তার বিবেচনায় গত রোববার কয়েকটি স্কুল-কলেজ ক্লাস বন্ধ রাখলেও সোমবার থেকে শিক্ষাক্রম স্বাভাবিক হয়েছে। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ করে শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছে।
এমকে
জাতীয়
পাচার হওয়া টাকা ফেরত আনার অগ্রগতি সন্তোষজনক নয়: দুদক চেয়ারম্যান
বিদেশে পাচার হওয়া টাকা ফেরত আনা কঠিন ও জটিল কাজ উল্লেখ করে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেন বলেছেন, এ প্রক্রিয়ার অগ্রগতি এখনো সন্তোষজনক পর্যায়ে পৌঁছায়নি।
সোমবার (২৪ নভেম্বর) দুপুরে হবিগঞ্জ শিল্পকলা একাডেমিতে দুদকের জেলা সমন্বিত কার্যালয় আয়োজিত গণশুনানি শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে একথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, বিদেশে পাচার হওয়া টাকা ফেরত আনা অত্যন্ত কঠিন কাজ। এ বিষয়ে দুদক, বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান একসঙ্গে কাজ করছে। তবু পাচার হওয়া টাকা উদ্ধারের অগ্রগতি এখনো সন্তোষজনক নয়। চেষ্টা অব্যাহত আছে, তবে দেশের টাকা বাইরে নিতে যাদের সহযোগিতা লাগে, আগে তাদের চিহ্নিত করতে হবে।
চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টদের দেওয়া কিছু বিবরণের ভিত্তিতে কোম্পানি গড়ে তুলে ভুয়া বিল-ভাউচারের মাধ্যমে টাকা বিদেশে পাচার করা হয় বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
হবিগঞ্জ মেডিকেল কলেজে দুর্নীতির তদন্ত পাঁচ বছরেও শেষ না হওয়ার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, দুদক কোনো বিচারকারী প্রতিষ্ঠান নয়। তবে বিষয়টি খতিয়ে দেখে দ্রুতই আদালতে প্রতিবেদন দাখিলের উদ্যোগ নেওয়া হবে।
তিনি আরও জানান, ১৭৭২ সাল থেকে হবিগঞ্জ জেলার সিলিকা বালু লুট হয়ে আসছে। এ বিষয়ে সবার সোচ্চার থাকা জরুরি।
দুদক চেয়ারম্যান বলেন, দুর্নীতির কারণে সুশাসন সংকটে পড়ে, আর এ ধরনের অনিয়মের মদদদাতা হিসেবে অনেক সময় রাজনীতিবিদদের ভূমিকা থাকে। দুর্নীতিবাজ ও ঘুষখোরদের নির্বাচিত করলে এমন সংকট আসবে। কাজেই দুর্নীতিবাজকে ভোট দেওয়া যাবে না।
এর আগে গণশুনানিতে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন দুদক চেয়ারম্যান। বিশেষ অতিথি ছিলেন দুদকের কমিশনার (তদন্ত) মিঞা মুহাম্মদ আলি আকবার আজিজী ও সচিব মোহাম্মদ খালেদ রহীম। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক (ডিসি) আবু হাসনাত মোহাম্মদ আরেফীন। পুলিশ সুপার (এসপি) এএনএম সাজেদুর রহমানসহ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে গত দুই সপ্তাহে জেলায় দুদকের ১০টি বুথ স্থাপন করা হলে প্রায় দুইশ’ অভিযোগ জমা পড়ে। এসবের বেশির ভাগই রেলওয়ে হাসপাতাল, নির্বাচন, রেজিস্ট্রি, বিআরটিএ, পাসপোর্ট অফিসসহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তরকে ঘিরে। এর মধ্যে একই তফসিলভুক্ত অভিযোগ বাতিল করে ৮০টি অভিযোগের প্রকাশ্য শুনানি অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এমকে
জাতীয়
বিশ্বের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চল হবে বাংলাদেশসহ কয়েক দেশ: বিশ্বব্যাংক
জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলে পরিণত হবে বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার ঘনবসতিপূর্ণ দেশগুলো। বিশেষ করে বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানকে এর ভয়াবহ প্রভাব মোকাবিলা করতে হবে বলে জানিয়েছে বিশ্বব্যাংক।
সোমবার (২৩ নভেম্বর) রাজধানীর একটি হোটেলে ‘ঝুঁকি থেকে স্থিতিস্থাপকতা: দক্ষিণ এশিয়ায় মানুষ ও প্রতিষ্ঠানের অভিযোজনে সহায়তা’ শীর্ষক এক প্রতিবেদন প্রকাশ করে সংস্থাটি। সেখানেই উঠে এসেছে এ তথ্য।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগামী পাঁচ বছরের মধ্যেই বাংলাদেশের ৯০ শতাংশ মানুষ চরম জলবায়ু ঝুঁকির মুখে পড়বে। উচ্চ তাপমাত্রা, ভয়াবহ বন্যা, উপকূলীয় এলাকায় লবণাক্ততা বৃদ্ধি-সব মিলিয়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে গ্রামীণ অর্থনীতি, কৃষি উৎপাদন ও কর্মসংস্থান। পারিবারিক পর্যায়েও ঝুঁকি বাড়বে বহুগুণ।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিবেশ সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ বলেন, জলবায়ু ঝুঁকি মোকাবিলায় শক্তি, অবকাঠামো উন্নয়ন ও তথ্য সংগ্রহ সবই ব্যয়বহুল। জলবায়ু অভিযোজন মোকাবিলায় বাংলাদেশের অনেক পলিসি রয়েছে, তা বাস্তবায়ন চ্যালেঞ্জিং।
তিনি আরও জানান, এ বিষয়ে পাইলট প্রকল্প চলমান রয়েছে। তবে, সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিভাগের সমন্বয়ে বাংলাদেশ বিশেষ পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করার চেষ্টা করছে।
জাতীয়
তাজরীন ট্র্যাজেডির ১৩ বছর আজ
ঢাকার আশুলিয়ার তাজরীন ফ্যাশনসে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় আজ ১৩ বছর পূর্ণ হলো। কিন্তু এত দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও সেই ভয়াবহ রাতের শারীরিক ও মানসিক ক্ষত এখনো বয়ে বেড়াচ্ছেন হাজারো শ্রমিক। উন্নত চিকিৎসা ও পর্যাপ্ত সহায়তা না পাওয়ায় তাদের অনেকেই স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেননি- বরং অনেকে মানবেতর জীবন কাটাতে বাধ্য হচ্ছেন।
২০১২ সালের ২৪ নভেম্বর সাভারের আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুরে তাজরীন ফ্যাশনস কারখানার নিচতলার গুদাম থেকে সৃষ্ট ভয়াবহ আগুন মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ে পুরো ভবনে। আগুন লাগার সময় নিচতলার ফটকটি তালাবদ্ধ থাকায় বহু শ্রমিক বের হতে না পেরে আগুনে পুড়ে মারা যান। সরকারি হিসাবে ওই ঘটনায় ১১৪ জন প্রাণ হারান।
এ ঘটনায় আহত হন এক হাজারের বেশি শ্রমিক, যাদের মধ্যে ১৭২ জন স্থায়ী পঙ্গুত্ববরণ করেন। যারা উপরের তলা থেকে লাফিয়ে বাঁচতে পেরেছিলেন—তাদের বহুজনের হাত-পা, বক্ষপাঁজর, কোমরসহ শরীরের গুরুত্বপূর্ণ হাড় ভেঙে যায়। আগুন থেকে রক্ষা পেলেও সেই দিনের ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা আজও তাড়া করে ফেরে তাদের।
১৩ বছর পরও অধিকাংশ আহত শ্রমিক পাননি উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ বা পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসার সুযোগ। শারীরিক জটিলতা ও কাজ করতে অক্ষমতার কারণে অনেকেই এখন দারিদ্র্য ও মানসিক চাপে দিন কাটাচ্ছেন। এ পরিস্থিতিতে ক্ষুব্ধ শ্রমিকরা নিজের অধিকার থেকে বঞ্চিত হওয়ার অভিযোগ তুলছেন।
হতাহতদের দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়ে শ্রমিক নেতারা নতুন করে ক্ষতিপূরণ, পুনর্বাসন ও দায়ীদের শাস্তির দাবি তুলেছেন।
বাংলাদেশ গার্মেন্টস ও সোয়েটার্স শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়নের আইন বিষয়ক সম্পাদক খাইরুল মামুন মিন্টু বলেন, শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ, সুচিকিৎসা ও পুনর্বাসনের জন্য সরকারের কাছে দাবি জানাই। এ ছাড়া এ ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করা জরুরি।
১৩ বছর পরও তাজরীন ট্র্যাজেডি রয়ে গেছে বাংলাদেশের পোশাকশিল্পে শ্রমিক নিরাপত্তাহীনতার এক বেদনাদায়ক প্রতীক হয়ে।
জাতীয়
হাসিনার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর চায় বাংলাদেশ, বড় বাধা ভারত
বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের পরিকল্পনা করছে ঢাকা। মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে সম্প্রতি আদালত তার বিরুদ্ধে এই রায় দিয়েছে।
কিন্তু এই রায় কার্যকরের পথে সবচেয়ে বড় বাধা এখন ভারত। গত শনিবার (২২ নভেম্বর) এক প্রতিবেদনে এমন তথ্যই জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, একসময় শেখ হাসিনা ধর্মনিরপেক্ষতার প্রতীক হিসেবে পরিচিত ছিলেন। একইসঙ্গে তিনি একজন বিপ্লবী নেতার কন্যা। ১৯৭০-এর দশকে বাবার নৃশংস হত্যাকাণ্ডই তার রাজনৈতিক উত্থানের পথ খুলে দিয়েছিল।
কিন্তু বাংলাদেশের রাজনীতিতে শীর্ষে ওঠা শেখ হাসিনার সেই উত্থানের পর এসেছে নাটকীয় পতন। আর তা ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনের মুখে ক্ষমতাচ্যুতি এবং শেষ পর্যন্ত পালিয়ে ভারতে আত্মগোপন। এখন তার অনুপস্থিতিতে দেওয়া মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হতে পারে— যদি ভারত তাকে ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়।
২০২৪ সালে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে দোষী সাব্যস্ত হন তিনি। আন্দোলনটি শেষ পর্যন্ত তার সরকারের পতন ঘটায়। এরপর ১৫ বছরের ক্রমবর্ধমান স্বৈরশাসনের পর গত বছরের আগস্টে তিনি ভারতে পালিয়ে যান এবং একসময়ের ঘনিষ্ঠ মিত্র দেশের রাজধানীতে আশ্রয় নেন।
এখন তিনি দুই দেশের রাজনৈতিক টানাপোড়নের কেন্দ্রে রয়েছেন। কারণ তাকে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি বারবার করে চলেছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশি রাজনৈতিক বিশ্লেষক মুবাশ্বর হাসান বলেন, “তিনি জনরোষ এড়াতে দেশ ছাড়তে বাধ্য হন। ভারতে লুকিয়ে আছেন, আর মৃত্যুদণ্ড পেলেন। ঘটনাটা সত্যিই ব্যতিক্রমী।”
রক্তাক্ত অতীত
হাসিনার রাজনৈতিক যাত্রা শেক্সপিয়রের ট্র্যাজেডির মতোই— মর্মান্তিক ঘটনা, নির্বাসন ও ক্ষমতার লড়াই। আর এর সবই বাংলাদেশের ইতিহাসের সঙ্গেই জড়িত। শেখ মুজিবুর রহমানের বড় মেয়ে হিসেবে স্বাধীনতার সংগ্রাম তিনি কাছ থেকে দেখেছেন।
কিন্তু তার জীবনের পথ বদলে দেয় ১৯৭৫ সালের আগস্টের এক রক্তাক্ত রাত।
সেসময় সামরিক অভ্যুত্থানে সেনা কর্মকর্তারা ঢাকায় তার বাবা, মা ও তিন ভাইকে হত্যা করেন। হাসিনা ও তার বোন তখন পশ্চিম জার্মানিতে থাকায় বেঁচে যান। সেসময় বিশৃঙ্খল নানা ঘটনাবলীর পর জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় আসেন, যিনি ছিলেন পরবর্তীতে হাসিনার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হওয়া খালেদা জিয়ার স্বামী।
পরিবারের সদস্যদের হত্যাকাণ্ডের পর রাতারাতি নির্বাসিত হন হাসিনা। ছয় বছর ভারতেই কাটান এবং এটিই ভবিষ্যৎ জীবনে ভারতের প্রতি তার আস্থাকে দৃঢ় করে। ১৯৮১ সালে দেশে ফেরার পর তিনি দেখেন ‘জনগণ নতুন আশা নিয়ে তার দিকে’ তাকিয়ে আছে। অন্যদিকে রাজনীতিতে প্রবেশ করেন আরেক ট্র্যাজিক চরিত্র— খালেদা জিয়া।
দেশে ফিরেই হাসিনা বলেন, “বিমানবন্দরে নেমে আপনজন কাউকে পাইনি, কিন্তু পেয়েছি লাখো মানুষের ভালোবাসা— এটা ছিল আমার শক্তি”। এরপর শুরু হয় “দুই বেগমের লড়াই”।
ক্ষমতার লড়াই
আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব নিয়ে হাসিনা বহু বছর সংগ্রামের পথ পাড়ি দেন। গৃহবন্দী, দমন-পীড়ন আর রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার মধ্যে দিয়েই এই পদ পাড়ি দিয়েছিলেন তিনি। ১৯৯৬ সালে তার দল নির্বাচন জিতলে তিনি প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী হন। দায়িত্ব পেয়েই তিনি ১৯৭৫ সালের হত্যাকাণ্ডের বিচার শুরু করেন।
তবে ধর্মনিরপেক্ষ মুসলিম হাসিনা এক মেয়াদ শেষেই ক্ষমতা হারান। ২০০৮ সালে আবার ক্ষমতায় ফিরে তাকে ভিন্ন রূপে অর্থাৎ আরও দৃঢ়, কম আস্থাশীল, স্থায়ীভাবে ক্ষমতা ধরে রাখার সংকল্পে দেখা যায় তাকে।
পরবর্তী ১৫ বছর তিনি কঠোর হাতে দেশ শাসন করেন। একদিকে ‘দ্রুত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি’, অন্যদিকে মানবাধিকার লঙ্ঘন, মিডিয়া ও বিরোধী দলের ওপর দমন-পীড়ন বাড়তে থাকে। ভারতের নিকট প্রতিবেশ হিসেবে তিনি দিল্লিকে গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তা সহযোগিতা দেন, যা পাকিস্তান ও চীনের মতো প্রতিদ্বন্দ্বী থাকা অঞ্চলে ভারতের জন্য বড় সুবিধা ছিল।
কিন্তু দেশের অভ্যন্তরে বাড়তে থাকে দমননীতি। সমালোচকরা সেসময় প্রায়ই অভিযোগ করেন, বাংলাদেশ একদলীয় শাসনের দিকে এগোচ্ছে। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস লিখেছে, বাড়তে থাকা চাপের মধ্যে হাসিনা কেবল “ভারতের নিঃশর্ত সমর্থনের ওপরই ভরসা রাখতে পারতেন।”
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে পতন
যদিও বহু আন্দোলন ও হত্যাচেষ্টার মধ্যেও হাসিনার ক্ষমতা টলেনি, কিন্তু গত বছরের শিক্ষার্থী আন্দোলন ছিল অন্যরকম। সরকারি চাকরির কোটা নিয়ে আন্দোলন দ্রুত দেশজুড়ে বিক্ষোভে রূপ নেয়। সরকারের কঠোর দমন-পীড়নে জাতিসংঘের হিসাব মতে ১৪০০ মানুষ নিহত হয়।
কিন্তু এ সহিংসতা আন্দোলন থামায়নি। বরং আন্দোলনকে আরও উসকে দেয় এবং শেষ পর্যন্ত হাসিনার সরকারের পতন ঘটে। মুবাশ্বর হাসান বলেন, “তিনি দেশ ছাড়লেন— এটিই তার অপরাধের স্বীকারোক্তি। তিনি অনেক বেশি সীমা লঙ্ঘন করেছিলেন।”
মৃত্যুদণ্ডের রায়
ভারতে রাজনৈতিক আশ্রয় তার জীবনের আরেকটি চক্র সম্পূর্ণ করে। অর্থাৎ প্রায় অর্ধশতাব্দী পর আবারও দেশটিতে নির্বাসনে যান তিনি। বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল তার অনুপস্থিতিতেই বিচার করে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়।
হাসিনার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল: বিক্ষোভকারীদের হত্যা করতে উসকানি দেওয়া, বিক্ষোভকারীদের ফাঁসির আদেশ দেওয়া এবং ড্রোন, অস্ত্র, হেলিকপ্টার দিয়ে আন্দোলনে দমন-পীড়নের নির্দেশ। আদালত বলেছে, শিক্ষার্থীদের হত্যার আদেশ তিনি দিয়েছেন এবং এটি একেবারে স্পষ্ট।
রায় ঘোষণা হলে আদালতে কান্না ও করতালিতে ভরে ওঠে। নিহত এক আন্দোলনকারীর বাবা আবদুর রব বলেন, এতে একটু শান্তি পেলাম। পুরো শান্তি পাব যখন তাকে ফাঁসির দড়িতে দেখব।
ভারত এই রায়কে স্বীকৃতি দিয়ে নিরপেক্ষ অবস্থান নিয়েছে। হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ বলেন, ভারত সবসময় ভালো বন্ধু। তারা আমার মায়ের জীবন বাঁচিয়েছে।
ভারতের সাবেক কূটনীতিক অনিল ত্রিগুনায়েত বলেন, “ভারত তাকে ফেরত পাঠাবে কিনা তাতে আমি খুবই সন্দিহান”। ভারতের আইন ও বাংলাদেশ-ভারত প্রত্যর্পণ চুক্তি অনুযায়ী ‘রাজনৈতিক অপরাধে’ কাউকে ফেরত না পাঠানো যায়। আর ভারত সম্ভবত সেই যুক্তিই ধরতে পারে।
তিনি বলেন, ভারত হাসিনার বিরুদ্ধে অভিযোগকে রাজনৈতিক অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করবে। ত্রিগুনায়েত আরও বলেন, হাসিনা এখনো সব আইনি পথ শেষ করেননি, তিনি সুপ্রিম কোর্টে আপিল করতে পারেন, এমনকি হেগেও যেতে পারেন। তাই ভারত তাড়াহুড়ো করবে না।
এদিকে রায়ের পরদিন বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হাসিনাকে দ্রুত ফিরিয়ে দিতে ভারতের কাছে আবারও চিঠি দিয়েছে। চিঠিতে বলা হয়, ‘হাসিনাকে ফিরিয়ে দেওয়া ভারতের দায়িত্ব।’
পরবর্তী রাজনীতির গতিপথ কী
আগামী ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের আগে হাসিনার এই মৃত্যুদণ্ড দেশের রাজনীতিতে বেশ গুরুত্বপূর্ণ। আওয়ামী লীগ এখন নিষিদ্ধ, নেতৃত্বেরও ঠিক-ঠিকানা নেই। নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার গভীর রাজনৈতিক বিভাজন দূর করার কঠিন কাজে নেমেছে।
এর সুযোগ নিতে পারে বিএনপি ও আরও বহু রাজনৈতিক দল। আওয়ামী লীগ হয়তো আবার ফিরে আসতে চাইবে— তবে তা হাসিনার নেতৃত্বে নয়। এখন প্রশ্ন— হাসিনার পতন কি বিষাক্ত যুগের সমাপ্তি, নাকি নতুন অনিশ্চয়তার শুরু?



