আন্তর্জাতিক
গাজা চুক্তি ‘বিশ্বের জন্য একটি দুর্দান্ত দিন’: ট্রাম্প
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গতকাল বুধবার বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, মিসরে সম্পন্ন হওয়া গাজার ‘জিম্মি মুক্তি বিনিময়ে যুদ্ধবিরতি’ চুক্তির দিনটি ‘বিশ্বের জন্য এক মহান দিন’।
রয়টার্সের সঙ্গে এক সংক্ষিপ্ত টেলিফোন সাক্ষাৎকারে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, এ বিষয়ে পুরো বিশ্ব এক হয়েছে। ইসরায়েলসহ সব দেশ একসঙ্গে এসেছে। আজকের দিনটি অসাধারণ।
ট্রাম্প আরও বলেন, এটা বিশ্বের জন্য এক মহান দিন। এটা সবার জন্য এক দারুণ ও আনন্দের দিন।
এদিকে আল–জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, গাজায় যুদ্ধ বন্ধ করা ও জিম্মি মুক্তি নিয়ে সম্প্রতি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যে ২০ দফা পরিকল্পনা ঘোষণা করেছেন, সেটির প্রথম পর্যায়ের বাস্তবায়নে একমত হয়েছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস ও ইসরায়েল।
এ বিষয়ে গতকাল নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে দেওয়া পোস্টে ট্রাম্প লেখেন, ‘আমি অত্যন্ত গর্বের সঙ্গে ঘোষণা করছি যে ইসরায়েল ও হামাস—উভয়ই আমাদের শান্তি পরিকল্পনার প্রথম পর্যায়ের বাস্তবায়নে রাজি হয়েছে।’
মার্কিন প্রেসিডেন্ট আরও লেখেন, খুব শিগগির সব জিম্মিকে মুক্তি দেওয়া হবে। সেই সঙ্গে ইসরায়েল নিজেদের সেনাদের নির্ধারণ করা একটি সীমানায় সরিয়ে আনবে।
এ ঘোষণার কয়েক ঘণ্টা আগে ট্রাম্প সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, মিসরে হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে চলা যুদ্ধবিরতি আলোচনায় আলোচকেরা একটি চূড়ান্ত চুক্তির ‘খুব কাছাকাছি’ পৌঁছেছেন। চুক্তি হলে সেটার ঘোষণা দেওয়ার জন্য মিসরে যাবেন তিনি।
এরপর হোয়াইট হাউস জানায়, ওয়াশিংটনের ওয়াল্টার রিড মেডিকেল সেন্টারে আগামীকাল শুক্রবার সকালে পূর্বনির্ধারিত স্বাস্থ্য পরীক্ষায় অংশ নেবেন ট্রাম্প। এরপর তিনি মিসরে যেতে পারেন। সেটা আগামী শনি কিংবা রোববার হতে পারে।
যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনা নিয়ে দুই পক্ষ সম্মত হওয়ার পর ট্রাম্পের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। তাঁর দপ্তর থেকে এক বিবৃতিতে জানানো হয়, এটা ‘ইসরায়েলের জন্য একটি দারুণ দিন।’
আজ বৃহস্পতিবার ইসরায়েলি মন্ত্রিসভা এ পরিকল্পনার অনুমোদন দিতে পারে। ইতিমধ্যে নেতানিয়াহু নেসেটে (ইসরায়েলের পার্লামেন্ট) ভাষণ দিতে ট্রাম্পকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।
গত মাসে ট্রাম্প গাজা নিয়ে ২০ দফা শান্তি পরিকল্পনা ঘোষণা করেন। ইসরায়েল ও হামাস দুই পক্ষই তাতে ইতিবাচক সাড়া দেয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত সোমবার মিসরের পর্যটন শহর শারম আল শেখে দুই পক্ষের মধ্যে আলোচনা শুরু হয়েছে।
চলমান আলোচনায় কাতার, তুরস্ক, মিসর ও যুক্তরাষ্ট্রের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অংশ নিচ্ছেন। মধ্যস্থতাকারীরা ট্রাম্পের ২০ দফা যাতে দুই পক্ষ মেনে নেয়, সে জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছেন।
পরিকল্পনার প্রথম পর্যায়ে গাজায় যুদ্ধবিরতির আহ্বান এবং উপত্যকাটিতে হামাসের হাতে থাকা ৪৮ জন জিম্মিকে (জীবিত ও মৃত) মুক্তি দেওয়ার বিষয়টি রয়েছে। তাঁদের মধ্যে ২০ জন জীবিত আছেন বলে মনে করা হচ্ছে। বিপরীতে ইসরায়েলের কারাগারে থাকা ফিলিস্তিনি বন্দীদের অনেককেই মুক্তি দেওয়া হবে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালায় হামাস। এ ঘটনায় ১ হাজার ২১৯ জন নিহত হন বলে দাবি করে ইসরায়েল। জিম্মি করা হয় ২৫১ জনকে। ওই দিন থেকেই গাজায় টানা নৃশংসতা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য, গত দুই বছরে ইসরায়েলের হামলায় এ উপত্যকায় অন্তত ৬৭ হাজার ১৭৩ জন নিহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ২০ হাজার ১৭৯টি শিশু।
আন্তর্জাতিক
ভূমিকম্পে কাঁপল ইন্দোনেশিয়া
ইন্দোনেশিয়ার পূর্বাঞ্চলীয় উত্তর মালুকু প্রদেশের হালমাহেরা এলাকায় ৫ দশমিক ২ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। তবে এতে কোনো ক্ষয়ক্ষতি বা হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
দেশটির আবহাওয়া, জলবায়ু ও ভূতাত্ত্বিক সংস্থা (বিএমকেজি) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল ছিল ভূ-পৃষ্ঠ থেকে ১০ কিলোমিটার গভীরে।
সংস্থাটি জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত কোনো ধরনের ক্ষয়ক্ষতি বা হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। প্রশান্ত মহাসাগরের ‘রিং অব ফায়ার’ এলাকায় অবস্থানের কারণে ইন্দোনেশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে নিয়মিতই ভূমিকম্প ও আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত ঘটে থাকে।
এর আগে, গত শুক্রবার বাংলাদেশে ৫ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানে। এতে অন্তত ১০ জন প্রাণ হারান। এই ঘটনার পরদিন শনিবার আরও তিনবার মৃদু ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে বাংলাদেশে। এগুলো শনিবারের ভূমিকম্পের আফটারশক বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
আন্তর্জাতিক
এবার মিয়ানমার উপকূলে ৫.৩ মাত্রার ভূমিকম্প
বাংলাদেশে গত শুক্রবার(২১ নভেম্বর) শক্তিশালী ভূমিকম্পের আতঙ্ক কাটতে না কাটতেই এবার কেঁপে উঠল প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমার। রোববার (২৩ নভেম্বর) বাংলাদেশ সময় সকাল ১০টা ৩৯ মিনিটে ৫.৩ মাত্রার এই ভূকম্পন আঘাত হানে। আন্দামান সাগরে উৎপত্তি হওয়া এই ভূমিকম্পের প্রভাব অনুভূত হয়েছে থাইল্যান্ডেও। এক সপ্তাহের মধ্যে অঞ্চলে এটি দ্বিতীয় বড় ভূমিকম্পের ঘটনা, যা ভূতাত্ত্বিক সক্রিয়তা বৃদ্ধি নিয়ে জনমনে নতুন করে উদ্বেগ তৈরি করেছে।
মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (ইউএসজিএস) জানিয়েছে, ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল ছিল মিয়ানমারের দাওয়েই শহর থেকে ২৬৭ কিলোমিটার পশ্চিম-দক্ষিণপশ্চিমে আন্দামান সাগরে। ভূপৃষ্ঠ থেকে মাত্র ১০ কিলোমিটার গভীরে ছিল এর কেন্দ্র। তাৎক্ষণিকভাবে এই ভূমিকম্পে কোনো বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি।
গত কয়েকদিনে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারে কম্পনের ধারাবাহিকতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে, যা এই অঞ্চলের ভূতাত্ত্বিক সক্রিয়তা বৃদ্ধির ইঙ্গিত দিচ্ছে।
এর আগে গত শুক্রবার বাংলাদেশে ৫.৭ মাত্রার একটি শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানে, যেখানে অন্তত ১০ জন প্রাণ হারান। ওই ঘটনার পরদিন (শনিবার) বাংলাদেশে আরও তিনবার মৃদু ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে, যা বিশেষজ্ঞরা আগের ভূমিকম্পের আফটারশক বলে মনে করছেন।
ভারতের ভূকম্পনবিদ্যা সংস্থা (এনসিএস) জানিয়েছে, বাংলাদেশের মতো শনিবার মিয়ানমারেও অন্তত তিনটি মৃদু ভূকম্পন রেকর্ড করা হয়েছে। শনিবার সকাল ৬টা ৪১ ও ৭টা ১৯ মিনিটে রিখটার স্কেলে যথাক্রমে ৩.৫ ও ৩.৭ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানে। এরপর রাত ১১টা ১ মিনিটে (বাংলাদেশ সময়) মিয়ানমারে ৩.৪ মাত্রার আরও একটি ভূমিকম্প অনুভূত হয়।
তবে এই মৃদু কম্পনগুলোতে কোনো বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি। ঘন ঘন এই ভূকম্পনগুলো এই অঞ্চলকে সম্ভাব্য ঝুঁকির বিষয়ে ক্রমাগত সতর্ক করে যাচ্ছে।
এমকে
আন্তর্জাতিক
ক্রিপ্টো বাজারে অস্থিরতা, মূলধন হারিয়েছে সোয়া ট্রিলিয়ন ডলার
বিশ্বব্যাপী ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদে বিনিয়োগ কমায় ক্রিপ্টোকারেন্সি বাজারে আবারো অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে সুদহার কমানোর সম্ভাবনা কমে যাওয়া ও প্রযুক্তি খাতের অতিমূল্যায়ন নিয়ে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে উদ্বেগ বাড়ায় বিটকয়েনসহ প্রধান ডিজিটাল মুদ্রার দাম টানা ছয় সপ্তাহ ধরে কমছে। এ সময় ক্রিপ্টো বাজার প্রায় সোয়া ট্রিলিয়ন ডলার মূলধন হারিয়েছে। খবর রয়টার্স ও দ্য ন্যাশনাল।
এশিয়ার বাজারে লেনদেন চলাকালে বিটকয়েনের দাম গতকাল ২ দশমিক ১ শতাংশ কমে নেমে আসে প্রায় ৮৫ হাজার ৩৫০ ডলারে। এটি গত সাত মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। ইথারের দামও ২ শতাংশের বেশি কমে পৌঁছেছে চার মাসের সর্বনিম্ন ২ হাজার ৭৭৭ ডলারে। সপ্তাহজুড়ে বিটকয়েন ও ইথার উভয়েরই দাম কমেছে প্রায় ৮ শতাংশ।
বাজার বিশ্লেষকদের মতে, ক্রিপ্টোকারেন্সিকে এখন বিনিয়োগকারীদের ঝুঁকি পরিমাপক সূচক হিসেবে দেখা হচ্ছে। গত কয়েক দিনে ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদে বিনিয়োগ কমে যাওয়ায় ডিজিটাল মুদ্রার দাম দ্রুত নিচে নামছে। এ পরিস্থিতিতে ‘খুবই নাজুক বাজার মনোভাবের প্রতিফলন’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন আইজির বাজার বিশ্লেষক টনি সাইকামোর। তিনি বলেন, ‘যদি বিটকয়েন সামগ্রিক ঝুঁকি মনোভাবের ইঙ্গিত দেয়, তাহলে পরিস্থিতি আরো খারাপ হতে পারে। এটাই এখন বড় উদ্বেগের বিষয়।’
বিটকয়েনের দাম কমার প্রভাব পড়েছে ক্রিপ্টোভিত্তিক ইটিএফগুলোয়ও। চায়না এএমসি, হারভেস্ট ও বোসেরা পরিচালিত হংকংয়ে তালিকাভুক্ত স্পট বিটকয়েন ইটিএফের দাম গতকাল কমেছে প্রায় ৭ শতাংশ। বাজার পর্যবেক্ষক কয়েনগেকোর তথ্য অনুযায়ী গত ছয় সপ্তাহে পুরো ক্রিপ্টো বাজার প্রায় ১ দশমিক ২ ট্রিলিয়ন বা ১ লাখ ২০ হাজার কোটি ডলার মূলধন হারিয়েছে।
অক্টোবরের শুরুর দিকে বিটকয়েন ১ লাখ ২০ হাজার ডলার অতিক্রম করে রেকর্ড গড়ে। এর পর থেকেই এর দাম দ্রুত কমতে শুরু করে। গত মাসে হঠাৎ বড় ধরনের বিক্রি শুরু হলে বাজারে ব্যাপক অস্থিরতা দেখা দেয়। এ সময় ধারের অর্থ (লিভারেজ) বিনিয়োগ করা অনেক ট্রেডারের লেনদেন স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হয়ে যায়। ফলে ১ হাজার ৯০০ কোটি ডলারের বেশি বিনিয়োগ একবারেই বাজার থেকে হারিয়ে যায়।
ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর নতুনভাবে উল্লম্ফন দেখে ক্রিপ্টোকারেন্সির দাম। কারণ নির্বাচনী প্রচারের শুরু থেকে ক্রিপ্টোবান্ধব নীতির প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসছিলেন তিনি। ট্রাম্প প্রশাসনের ক্রিপ্টোবান্ধব নীতি ঘোষণা পরে ডিজিটাল মুদ্রার বাজারে নতুন গতি সঞ্চার করে।
কিন্তু বিটকয়েন এখন চলতি বছরের শুরু থেকে অর্জিত সব লাভ হারিয়ে ফেলেছে। বার্ষিক ভিত্তিতে এর দাম ৮ শতাংশ কমেছে। একই সময় ইথারের দাম কমেছে প্রায় ১৬ শতাংশ।
টানা পতনে বিটকয়েন আবার ৯০ হাজার ডলারের নিচে নেমে এসেছে। যুক্তরাষ্ট্রে অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা, সুদহার কমানো নিয়ে ফেডের অনিশ্চিত অবস্থান ও প্রযুক্তি খাতের অতিমূল্যায়ন নিয়ে উদ্বেগ, সব মিলেই ক্রিপ্টো বাজারে চাপ তৈরি হয়েছে।
ওয়ান্ডার বাজার বিশ্লেষক ক্রিজস্টফ কামিনস্কি বলেন, ‘বিটকয়েন-ভিত্তিক ইটিএফ থেকে বড় অংকের মূলধন বের হয়ে যাওয়া সাম্প্রতিক পতনের অন্যতম কারণ। এতে ইটিএফ ও অন্যান্য ক্রিপ্টো-সংশ্লিষ্ট সিকিউরিটিতে থাকা বিনিয়োগকারীরা তাদের অবস্থান পুনর্বিবেচনা করতে বাধ্য হচ্ছেন।’
সুইসকোট ব্যাংকের জ্যেষ্ঠ বিশ্লেষক ইপেক ওজকারদেস্কায়া বলেন, ‘চলমান অনিশ্চয়তার মধ্যে এখনো স্পষ্ট নয়, বিটকয়েনের পতন স্বল্পমেয়াদি সংশোধন নাকি দীর্ঘমেয়াদি নিম্নমুখী প্রবণতার শুরু।’
তবে বিশ্লেষকদের ধারণা, আগামী কয়েক সপ্তাহেই ক্রিপ্টো বাজারের পরবর্তী গতিপ্রকৃতি নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ সময় হতে যাচ্ছে।
এমকে
আন্তর্জাতিক
গাজায় যুদ্ধবিরতির পর ৬৭ ফিলিস্তিনি শিশু নিহত: জাতিসংঘ
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর থাকার পরেও ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ৬৭ জন ফিলিস্তিনি শিশু নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ শিশু তহবিল (ইউনিসেফ)। প্রতিষ্ঠানটি এই ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে জানিয়েছে, পরিস্থিতি অত্যন্ত উদ্বেগজনক এবং গাজার শিশুদের জন্য কোনো নিরাপদ স্থান নেই। শনিবার (২২ নভেম্বর) আল-জাজিরার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
শুক্রবার জেনেভায় এক সংবাদ সম্মেলনে ইউনিসেফের মুখপাত্র রিকার্ডো পিরেস জানান, নিহতদের মধ্যে রয়েছে বৃহস্পতিবার দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসে ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত এক নবজাতক শিশু। এর আগের দিনও ইসরায়েলি হামলায় আরও সাত শিশু নিহত হয়।
পিরেস বলেন, এটি যুদ্ধবিরতির সময় ঘটছে। পরিস্থিতি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এরা কেবল সংখ্যাতাত্ত্বিক তথ্য নয়— প্রতিটি শিশু একটি পরিবার, একটি স্বপ্ন, একটি জীবন নিয়ে ছিল। হঠাৎ করে অব্যাহত সহিংসতার কারণে সব শেষ হয়ে গেছে।
ইউনিসেফের আগের হিসাবে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া যুদ্ধে এখন পর্যন্ত প্রায় ৬৪ হাজার ফিলিস্তিনি শিশু হতাহত হয়েছে।
মানবাধিকার সংস্থা সেভ দ্য চিলড্রেন জানিয়েছে, ২০২৪ সালে প্রতি মাসে গড়ে ৪৭৫ জন ফিলিস্তিনি শিশু আজীবন পঙ্গুত্ব বয়ে আনবে এমন আঘাত পেয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ট্রমাটিক ব্রেন ইনজুরি, পোড়া ক্ষতসহ অন্যান্য গুরুতর শারীরিক ক্ষতি।
সংস্থাটি আরও বলেছে, গাজা এখন ‘আধুনিক ইতিহাসের সবচেয়ে বড় শিশু অঙ্গহানি-বহুল অঞ্চলে’ পরিণত হয়েছে।
খাদ্য সংকটও শিশুদের জীবনকে ঝুঁকির মুখে ঠেলে দিয়েছে। মানবিক সহায়তা বাধাগ্রস্ত হওয়ায় বহু শিশু অপুষ্টি ও ক্ষুধাজনিত জটিলতায় মারা গেছে বলে বিভিন্ন সংস্থা অভিযোগ করছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি সপ্তাহে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী গাজাজুড়ে নতুন করে বিমান হামলা চালিয়েছে। ইসরায়েলের দাবি, সেনাদের ওপর হামলার জবাবে এই অভিযান চালানো হয়েছে। তবে হামাস এই দাবি অস্বীকার করে এটিকে ‘গণহত্যা পুনরায় শুরু করার স্পষ্ট ইঙ্গিত’ বলে অভিহিত করেছে।
ডক্টরস উইদাউট বর্ডার্স (এমএসএফ) জানিয়েছে, তাদের চিকিৎসকরা সাম্প্রতিক হামলায় গুলিবিদ্ধ ও খোলা হাড় ভাঙাসহ গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত বহু নারী ও শিশুকে চিকিৎসা দিয়েছেন। গাজা সিটির একটি মোবাইল ক্লিনিকে কর্মরত নার্স জাহের জানান, তারা এক নারীকে পায়ের গুরুতর আঘাত এবং একজন নয় বছরের মেয়েকে মুখের গুলিবিদ্ধ ক্ষত নিয়ে চিকিৎসা দিয়েছেন।
এদিকে ইসরায়েলের অব্যাহত অবরোধে গাজায় শীতের মৌসুমে প্রয়োজনীয় ত্রাণসামগ্রী—বিশেষ করে তাঁবু, কম্বল, ওষুধ—গুরুতরভাবে সংকট সৃষ্টি করেছে। ইউনিসেফ বলছে, বহু শিশু খোলা আকাশের নিচে, বৃষ্টিভেজা অস্থায়ী আশ্রয়ে শীতের তীব্র ঠান্ডা সহ্য করছে।
ইউনিসেফের মুখপাত্র পিরেসের মতে, গাজার শিশুদের জন্য বাস্তবতা নির্মম ও স্পষ্টত তাদের জন্য কোনো নিরাপদ স্থান নেই। তিনি বলেন, শীতের আগমন তাদের জন্য নতুন হুমকি। হিটার নেই, পর্যাপ্ত কম্বল নেই—শিশুরা রাতভর কাঁপছে ঠান্ডায়।
এমকে
আন্তর্জাতিক
মিস ইউনিভার্সের মুকুট জিতলেন কটাক্ষের শিকার সেই ফাতিমা
২১ নভেম্বর বাংলাদেশ সময় সকাল ৭টায় থাইল্যান্ডের ব্যাংকক শহরে শুরু হয় মিস ইউনিভার্স ২০২৫–এর ফাইনাল পর্ব, যেখানে কয়েকটি পর্ব পেরিয়ে মিস ইউনিভার্সের ফাইনালে উঠে আসেন পাঁচটি দেশের প্রতিনিধি—মিস ইউনিভার্স থাইল্যান্ড, মিস ইউনিভার্স ফিলিপাইন, মিস ইউনিভার্স ভেনেজুয়েলা, মিস ইউনিভার্স মেক্সিকো ও মিস ইউনিভার্স আইভরিকোস্ট। এরপর বিচারকেরা সব প্রতিযোগীকে দুটি করে প্রশ্ন করেন। সে দুই প্রশ্নের উত্তরের ভিত্তিতেই চূড়ান্ত করা হয় মিস ইউনিভার্স ২০২৫।
আর সেই চূড়ান্ত পর্বে সেরার খেতাব জেতেন ফাতিমা। থাইল্যান্ডে মূল পর্ব শুরুর আগে সবাইকে নিয়ে প্রিপ্যাজেন্ট অনুষ্ঠানের আয়োজন করে মিস ইউনিভার্স কর্তৃপক্ষ। নিয়ম অনুযায়ী যে দেশে মিস ইউনিভার্স অনুষ্ঠিত হয়, সে দেশের একটি প্রমোশনাল ভিডিও করতে হয় প্রতিযোগীদের।
আনুষ্ঠানিক ফটোশুটের বাইরেও কিছু ছবি তোলা হয়। কিন্তু মিস ইউনিভার্স মেক্সিকো তা সময়মতো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দিতে পারেননি। যে কারণে মিস ইউনিভার্স থাইল্যান্ডের পরিচালক নাওয়াত ইতসারাগ্রিসিল তাঁকে সবার সামনে ‘ডাম্বহেড’ বলে কটাক্ষ করেন।
সঙ্গে সঙ্গে এর জবাব দেন মিস মেক্সিকো ফাতিম বশ। সরাসরি বলেন, ‘আপনি আমাকে একজন নারী হিসেবে যথাযথ সম্মান দিচ্ছেন না।’
এরপরও নিরাপত্তা বাহিনীকে ডেকে তাঁকে শাসানোর চেষ্টা করেন সঞ্চালক। কিন্তু ততক্ষণে মিস ইউনিভার্স মেক্সিকোর পক্ষ নিয়ে নেন বাকি প্রতিযোগীরা। একযোগে আসন থেকে উঠে হল ত্যাগ করেন সবাই। মিস ইউনিভার্সের সেই ইভেন্ট সরাসরি সম্প্রচার করা হচ্ছিল ফেসবুকে।
ঘটনার পর মিস ইউনিভার্স মেক্সিকো এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘একুশ শতকে এসে একজন নারী কখনোই হাতের পুতুল হয়ে থাকতে পারে না। যা ইচ্ছা তা–ই বলতে পারেন না কিংবা সাজাতে পারেন না। আমি এখানে এসেছি সব নারীর প্রতিনিধিত্ব করতে। আমাকে অসম্মান করা মানে পুরো নারী জাতিকে অসম্মান করা।’
ঘটনার পর তিনটি ভিন্ন ভিন্ন জায়গা থেকে ক্ষমা চেয়েছেন সঞ্চালক। কিন্তু তাতে মন গলেনি মিস ইউনিভার্স কর্তৃপক্ষের। এ বছরই পরিচালকের দায়িত্ব পাওয়া নাওয়াতকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেয় মিস ইউনিভার্স কর্তৃপক্ষ।
এ ঘটনার পর হু হু করে জনপ্রিয়তা বেড়েছে মিস ইউনিভার্স মেক্সিকো ফাতিমা বশের। এমনকি তাঁর সঙ্গে অনুষ্ঠান বর্জন করায় প্রশংসা কুড়ান বাকি প্রতিযোগীরাও। ফাইনালে তো চমক দেখিয়েই নিজেকে প্রমাণ করলেন তিনি ‘ইন্টেলিজেন্ট’।



