অর্থনীতি
প্রতীক গ্রুপকে সুবিধা দিয়ে চাকরি হারালেন এনবিআরের দুই কর্মকর্তা

করমুক্ত ও নগদ প্রণোদনার সুযোগ নিয়ে রেমিট্যান্সের নামে ৭৩১ কোটি টাকা দেশে এনেছেন প্রতীক গ্রুপের চেয়ারম্যান। এই কর ছাড়ের সুবিধা দিতে রেমিটেন্স সার্টিফিকেট ইস্যু করেছিল কর অঞ্চল-৫, ঢাকার দুই কর্মকর্তা। আলোচিত এই করছাড়ে অনিয়ম ও দুর্নীতিতে সহযোগিতা করা সেই দুই কর কর্মকর্তাকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ।
বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) সহকারী সচিব মো. জাকির হোসেন সই করা পৃথক প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
দুই কর কর্মকর্তা হলেন-এনবিআর সদস্য (চলতি দায়িত্ব) আবু সাঈদ মো. মুস্তাক। করছাড় দেওয়ার সময় তিনি কর অঞ্চল-৫, ঢাকার কর কমিশনার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। চলতি দায়িত্বে থাকায় তিনি কর কমিশনার হিসেবে অবসরকালীন সুবিধা পাবেন। অপর কর্মকর্তা হলেন-ট্যাকসেস আপীলাত ট্রাইব্যুনাল, দ্বৈত বেঞ্চ খুলনার সদস্য ও কর কমিশনার মো. গোলাম কবীর। করছাড় দেওয়ার সময় তিনি কর অঞ্চল-৫, ঢাকার রেঞ্জ কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তবে প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, দুজনেরই চাকরির মেয়াদ ২৫ বছর পূর্ণ হয়েছে। জনস্বার্থে তাদেরকে অবসরে পাঠানো হলো। তারা বিধি অনুযায়ী অবসরজনিত সুবিধা পাবেন।
এই বিষয়ে এনবিআরের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বিভাগীয়ভাবে এনবিআরের হাতে যে ক্ষমতা আছে, তার সর্বোচ্চটা প্রয়োগ করা হয়েছে। এখন তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ রয়েছে।
এনবিআর সূত্রমতে, প্রতীক গ্রুপের চেয়ারম্যান সৈয়দ মোহাম্মদ ফারুকী হাসান। তিনি কানাডার অন্টারিও আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। কোনো ধরনের দালিলিক প্রমাণ ছাড়া তিনটি চীনা কোম্পানির নাম ব্যবহার করে তিনি ৭২১ কোটি টাকা প্রবাসী আয় হিসেবে আয়কর ফাইলে দেখিয়েছেন তিনি। ফারুকী হাসান বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলের ঘনিষ্ঠ হওয়ায় নানা প্রভাব খাটিয়ে অবৈধ কর সুবিধা নিয়েছেন। আর এই কাজে তাকে সহযোগিতা করেছেন কর অঞ্চল-৫, ঢাকার তৎকালীন কর কমিশনার, রেঞ্জ কর্মকর্তা ও উপকর কমিশনার। ঊর্ধ্বতন এই কর্মকর্তারা ফারুকী হাসানের চার করবর্ষের ২৩১ কোটি টাকার এসব অনিয়মের ফাইলটি পুনঃউন্মোচন করেও মাত্র সাড়ে ১৫ হাজার টাকার কর দাবি সৃষ্টি করে নিষ্পত্তি করেন। অভিযোগ উঠার পর এনবিআর বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করে এর সত্যতা পায়।
তবে চলতি বছরের ১৭ মার্চ এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান একটি অনুষ্ঠানে কথা প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমরা আইন করলাম- প্রবাসে যারা কঠোর পরিশ্রম করেন, বিদেশ থেকে টাকা উপার্জন করে ব্যাংকিং চ্যানেলে বাংলাদেশে নিয়ে আসেন; তাদের বললাম, এই টাকাটা আয়করমুক্ত। এটা প্রবাসীকর্মীদের উৎসাহিত করার জন্য ও তারা যেন রোজগারটা ফরমাল চ্যানেলে বাংলাদেশে পাঠান। আপনারা শুনে আশ্চার্য হবেন, এমন একজন করদাতা পাওয়া গেলো, যিনি ৭৩১ কোটি টাকা নিয়ে এলেন। উনি বলছেন, এটা ওয়েজ আর্নার ও করমুক্ত। আমরা এ ধরনের অন্যায় হয়তো দেখি নাই, বুঝি নাই কিংবা দেখেও না দেখার ভান করছি।’ চেয়ারম্যান বলার পরপরই বিষয়টি সামনে চলে আসে।
সূত্রমতে, প্রতীক গ্রুপের চেয়ারম্যান এস এম ফারুকী হাসান তিনটি চীনা প্রতিষ্ঠান নরিনকো ইন্টারন্যাশনাল করপোরেশন লিমিটেড, চায়না শিপবিল্ডিং ও অফসোর ইন্টারন্যাশনাল কোম্পানির থেকে ৯টি করবর্ষে ৭২১ কোটি টাকা নিয়ে আসেন। তিন চীনা কোম্পানি থেকে নিয়ে আসা টাকাকে প্রবাসী আয় হিসেবে দাবি করেন। তিনি ২০১৭-১৮ করবর্ষে প্রবাসী আয় হিসেবে আয়কর ফাইলে প্রদর্শন করেন ৬ কোটি ২৯ লাখ ৮১ হাজার ১০৪ টাকা; ২০১৮-১৯ করবর্ষে ৯ কোটি ৯২ লাখ ২৩ হাজার ৫৬২; ২০১৯-২০ করবর্ষে ৩৫ কোটি ১৪ লাখ ২৭ হাজার ৩২৩ এবং ২০২০-২১ করবর্ষে প্রদর্শন করেন ২৩১ কোটি ৯৯ লাখ ১৫ হাজার ৩১৪ টাকা। অর্থাৎ চার করবর্ষে প্রবাসী হিসেবে আয়কর ফাইলে প্রদর্শন করেন ২৭২ কোটি ৪৪ লাখ ৪৫ হাজার টাকা। অথচ চার করবর্ষের এই বিশাল অঙ্কের টাকার বিপরীতে কর আইনের ৯৩ ধারায় করদাতার ফাইল পুনঃউন্মোচন করে দুই করবর্ষের মধ্যে ২০১৭-১৮ করবর্ষে মাত্র ৪৪৮ টাকা এবং ২০১৮-১৯ করবর্ষের মাত্র ১৫ হাজার ৯৫ টাকা কর দাবি সৃষ্টি করেন। আর ২০১৯-২০ এবং ২০২০-২১ করবর্ষে কোনো দাবি না করেই নিষ্পত্তি করেন। আর এই কাজটি করেছেন কর অঞ্চল-৫-এর তৎকালীন কমিশনার, রেঞ্জ-১-এর দায়িত্বপ্রাপ্ত তৎকালীন অতিরিক্ত কমিশনার ও তৎকালীন এক উপকমিশনার। সূত্র আরও জানায়, প্রতীক গ্রুপের চেয়ারম্যান সবচেয়ে বেশি প্রবাসী আয়ে প্রদর্শন করেন ২০২০-২১ এবং ২০২১-২২ করবর্ষে। আলোচ্য সময়ে তিনি প্রবাসী আয় হিসেবে আয়কর রিটার্নে প্রদর্শন করেন ৫০০ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। এ ছাড়া ২০২২-২৩ করবর্ষে প্রবাসী আয় হিসেবে আয়কর ফাইলে প্রদর্শন করেন ৭৬ কোটি ৯৪ লাখ ৪৬ হাজার ৩৬১ টাকা আর ২০২৩-২৪ করবর্ষে প্রবাসী আয় দেখান ৮১ কোটি ১ লাখ ৩৭ হাজার ১৪৪ টাকা। এর আগে ২০১৭-১৮ করবর্ষে ৬ কোটি ২৯ লাখ ৮১ হাজার ১০৪ টাকা; ২০১৮-১৯ করবর্ষে ৯ কোটি ৯২ লাখ ২৩ হাজার ৫৬২; ২০১৯-২০ করবর্ষে ৩৫ কোটি ১৪ লাখ ২৭ হাজার ৩২৩ এবং ২০২০-২১ করবর্ষে ২৩১ কোটি ৯৯ লাখ ১৫ হাজার ৩১৪ টাকা প্রবাসী আয় দেখান। এরও আগে ২০১২-১৩ করবর্ষে প্রবাসী আয় দেখান ১ কোটি ২৪ লাখ ৫৯ হাজার ২৪৪ টাকা ও ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ১০ কোটি ৪৪ লাখ ১৮ হাজার ৯৬৩ টাকা। তথ্য বলছে, ২০১৪ সালের নির্বাচনী বছর এবং সরকারের কালো টাকা সাদা করার ঢালাও সুযোগের বছরে সবচেয়ে বেশি অর্থাৎ অস্বাভাবিক প্রবাসী আয়ের নামে টাকা নিয়ে এসেছেন কানাডা আওয়ামী লীগের প্রভাশালী নেতা এস এম ফারুকী হাসান। এনবিআরের আয়কর অধ্যাদেশ ১৯৯১-এর ষষ্ঠ তপশিলের পার্ট-এ অনুচ্ছেদ ৪৮ অনুযায়ী, দেশে অবস্থান করে প্রবাসী আয় হিসেবে করমুক্ত আয় দেখানোর কোনো সুযোগ নেই। একই আইনের ৯৩ ধারা অনুযায়ী, পরবর্তী করবর্ষে কর মামলা হিসেবে আয়কর ফাইল পুনঃউন্মোচন করার সুযোগ রয়েছে।
ফারুকী হাসান মূলত আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী ব্যবসায়ীদের মধ্যে একজন। তিনি কানাডার অন্টারিও আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। সাধারণ সম্পাদকেরও দায়িত্ব পালন করেছেন। তার মালিকানাধীন প্রতীকে গ্রুপের ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে রাজধানী গুলশান-২ অবস্থিত হোটেল লেক ক্যাসেল, প্রতীক সিরামিক লিমিটেড, প্রতীক ডেভেলপার্স লিমিটেড, প্রতীক ফুড অ্যান্ড এলাইড, প্রতীক লজিস্টিকসহ বেশকিছু কোম্পানি। ফারুক হাসান ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইরও সদস্য। বিগত সরকার তাকে সিআইপি মর্যাদায়ও ভূষিত করেছে।

অর্থনীতি
প্রবাসী আয়ের শীর্ষে ঢাকা, পিছিয়ে লালমনিরহাট

চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের ১১ মাসে (জুলাই-মে) দেশে দুই হাজার ৭৫০ কোটি ৬৩ লাখ ডলার প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স এসেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স এসেছে ঢাকা জেলায়, ৯২৬ কোটি ১৩ লাখ ডলার। আর সবচেয়ে কম রেমিট্যান্স এসেছে লালমনিরহাটে, মাত্র ২ কোটি ৪১ লাখ ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ জেলাভিত্তিক প্রবাসী আয়ের তথ্য থেকে এ চিত্র পাওয়া গেছে। এতে দেখা গেছে, দেশের আটটি বিভাগের মধ্যে বরাবরের মতো ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের জেলাগুলোয় প্রবাসী আয়ের প্রবাহ সবচেয়ে বেশি। আর রংপুর ও ময়মনসিংহ বিভাগে সবচেয়ে কম।
বিভাগভিত্তিক তথ্যে দেখা যায়, গত জুলাই-মে সময়ে সবচেয়ে বেশি প্রবাসী আয় এসেছে ঢাকা বিভাগে, যা মোট রেমিট্যান্সের ৪৯ শতাংশ। এরপর রয়েছে চট্টগ্রামে ২৭ শতাংশ, সিলেটে ৮ দশমিক ৮৬ শতাংশ, খুলনায় ৪ দশমিক ৪৭ শতাংশ, রাজশাহীতে ৩ দশমিক ৪১ শতাংশ ও বরিশালে প্রায় ৩ শতাংশ। আর মোট রেমিট্যান্সের মধ্যে সবচেয়ে কম প্রবাসী আয় এসেছে দুই বিভাগে– রংপুরে ১ দশমিক ৫৭ শতাংশ এবং ময়মনসিংহে ২ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের ১১ মাসে দেশে সবচেয়ে বেশি প্রবাসী আয় এসেছে ঢাকা জেলায়। এরপর রয়েছে যথাক্রমে চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, সিলেট ও নোয়াখালী জেলার অবস্থান। জুলাই-মে সময়ে ঢাকা জেলায় ২১৩ কোটি ৮৭ লাখ ডলার, চট্টগ্রাম জেলায় ২২৫ কোটি ডলার প্রবাসী আয় এসেছে। এ ছাড়া কুমিল্লায় ১৪৪ কোটি, সিলেটে ১২৫ কোটি ও নোয়াখালী জেলায় ৮৩ কোটি ডলার প্রবাসী আয় এসেছে।
কম রেমিট্যান্সের আসছে যেসব জেলায়
চলতি অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে প্রবাসী আয়ে সবচেয়ে পিছিয়ে রয়েছে লালমনিরহাট জেলা। এই জেলায় আলোচিত সময়ে প্রবাসী আয় এসেছে মাত্র দুই কোটি ৪১ লাখ ডলার। প্রবাসী আয় কম আসার তালিকায় অপর চারটি জেলা হলো– রাঙামাটি, বান্দরবান, পঞ্চগড় ও ঠাকুরগাঁও। রাঙামাটিতে দুই কোটি ৪৬ লাখ, বান্দরবানে দুই কোটি ৪৮ লাখ ডলার, পঞ্চগড়ে ৩ কোটি ও ঠাকুরগাঁওয়ে ৩ কোটি ৪৯ লাখ ডলারের প্রবাসী আয় এসেছে।
চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ১৯১ কোটি ৩৭ লাখ ৭০ হাজার ডলার রেমিট্যান্স এসেছে এবং আগস্টে এসেছে ২২২ কোটি ১৩ লাখ ২০ হাজার মার্কিন ডলার, সেপ্টেম্বরে ২৪০ কোটি ৪১ লাখ, অক্টোবরে ২৩৯ কোটি ৫০ লাখ মার্কিন ডলার, নভেম্বরে ২২০ কোটি ডলার, ডিসেম্বরে ২৬৪ কোটি ডলার, জানুয়ারিতে ২১৯ কোটি এবং ফেব্রুয়ারিতে ২৫২ কোটি ৮০ লাখ ডলার, মার্চে ৩২৯ কোটি ডলার, এপ্রিলে ২৭৫ কোটি ডলার এবং মে মাসে ২৯৭ কোটি রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। অর্থাৎ বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর টানা ৮ মাসে দুই বিলিয়ন এবং মার্চে তিন বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিট্যান্স এসেছে বাংলাদেশে।
অর্থনীতি
সরকার নির্ধারিত দামে বিক্রি হচ্ছে না চামড়া, হতাশ মৌসুমি ব্যবসায়ীরা

রাজধানীতে সরকার নির্ধারিত দামে বিক্রি হচ্ছে না কাঁচা চামড়া। প্রতিবারের মতো এবারও ঢাকায় কোরবানির গরুর কাঁচা চামড়া মানভেদে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অথচ ঢাকায় সর্বনিম্ন কাঁচা চামড়ার দাম ১ হাজার ৩৫০ টাকা নির্ধারণ করে দেয় সরকার। এ ছাড়া বরাবরের মতো ছাগলের চামড়ায় আগ্রহ নেই ব্যাপারিদের।
রাজধানীর মোহাম্মদপুর, সায়েন্সল্যাব ও পুরান ঢাকার পোস্তা এলাকায় ঘুরে ও ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
সরেজমিন দেখা গেছে, এ বছর বেশির ভাগ গরুর কাঁচা চামড়া ৭০০ থেকে সর্বোচ্চ ৯০০ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। ছোট চামড়ার দাম ৬০০ টাকা পর্যন্ত উঠছে। গত বছরও গরুর কাঁচা চামড়ার এ রকম দাম ছিল। এ ছাড়া এবার ছাগলের চামড়া প্রতিটি বিক্রি হচ্ছে ৫ থেকে ১০ টাকা, যা গতবারও একই রকম ছিল।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্যানুসারে, এ বছর কোরবানির পশুর চাহিদা প্রায় ১ কোটি ৩ লাখ ৮০ হাজার। সেখানে গরু-ছাগলসহ কোরবানির জন্য প্রস্তুত ছিল প্রায় ১ কোটি ২৪ লাখ ৪৭ হাজার পশু। চলতি বছর কোরবানির ঈদের মৌসুমে ৮০ থেকে ৮৫ লাখ চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছেন ট্যানারিমালিকেরা।
গত ২৬ মে কোরবানির পশুর চামড়ার দর নির্ধারণ করে দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এতে ঢাকায় গরুর প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয় ৬০-৬৫ টাকা, যা গত বছর ছিল ৫৫-৬০ টাকা। ঢাকার বাইরের গরুর প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৫৫-৬০ টাকা, যা গত বছর ছিল ৫০-৫৫ টাকা। এ ছাড়া ঢাকায় সর্বনিম্ন কাঁচা চামড়ার দাম ১ হাজার ৩৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। আর ঢাকার বাইরে সর্বনিম্ন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১ হাজার ১৫০ টাকা। এ ছাড়া খাসির লবণযুক্ত চামড়া ২২ থেকে ২৭ টাকা ও বকরির চামড়া ২০-২২ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
পুরান ঢাকার লালবাগের পোস্তার আড়তগুলো কাঁচা চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণের অন্যতম বড় জায়গা। আজ বিকেল চারটার দিকে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, রিকশা, ভ্যান ও ট্রাকে করে মৌসুমি ব্যবসায়ী ও মাদ্রাসার কর্মকর্তারা চামড়া নিয়ে আসছেন। আড়তদারেরা দরদাম করে চামড়া কিনছেন। এ ছাড়া পাইকারি ব্যবসায়ীরা সড়কের ওপর চেয়ার নিয়ে বসে চামড়া কিনছেন।
একাধিক আড়তদার ও পাইকারি ব্যবসায়ী জানান, একেকটি গরুর চামড়া ৭০০ থেকে ৯০০ টাকায় কিনছেন। মাঝারি আকারের গরু কোরবানি হয় বেশি। সেই চামড়া তাঁরা কিনছেন ৭০০ থেকে ৮০০ টাকার মধ্যে।
পোস্তায় শহীদুল ইসলাম নামের একজন ব্যবসায়ী প্লাস্টিকের চেয়ারে বসে চামড়া কিনছিলেন। বিকেল সাড়ে চারটা পর্যন্ত শতাধিক চামড়া কিনেছেন। জানতে চাইলে তিনি বলেন, মৌসুমি ব্যবসায়ীরা না বুঝে বেশি দামে চামড়া কিনে নিয়ে আসেন। তবে বাজার ভালো নয়। তিনি জানান, ৭০০ থেকে ৯০০ টাকায় চামড়া কিনছেন তাঁরা।
চামড়া কেনায় তদারকি করছিলেন সুমন অ্যান্ড সন্সের স্বত্বাধিকারী মো. শরীফ। তিনি জানান, প্রতিটি গরুর চামড়া ৭০০ থেকে ৯০০ টাকায় কিনছেন। তাঁর ভাষ্য, একেকটি চামড়া প্রক্রিয়াজাত করতে লবণ ও শ্রমিকের মজুরি বাবদ খরচ পড়ে যাবে ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা। বাজার মন্দা, সে জন্য গতবারের চেয়ে কিছুটা কমে কিনছেন।
বিকেলে রাজধানীর কলাবাগান এলাকা থেকে গরুর ১৩টি কাঁচা চামড়া বিক্রির জন্য সায়েন্স ল্যাবরেটরি এলাকায় নিয়ে আসেন মৌসুমি ব্যবসায়ী কাউছার আহমেদ। কোরবানিদাতাদের কাছ থেকে এসব চামড়া তিনি ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা দরে কিনে আনেন এবং বিক্রির জন্য দাম হাঁকেন ১ হাজার ২০০ টাকা করে। কিন্তু কোনো আড়তদার বা ট্যানারি প্রতিষ্ঠান ৭৫০ টাকার ওপরে দাম দিতে চায়নি। শেষ পর্যন্ত ৭৫০ টাকা দরেই সবগুলো চামড়া বিক্রি করেন তিনি।
কাউছার আহমেদ বলেন, যে আকারের চামড়া বিক্রির জন্য তিনি নিয়ে এসেছিলেন, সেগুলোর দাম হওয়া উচিত অন্তত ৮৫০ থেকে ৯০০ টাকা। কিন্তু একপ্রকার লোকসান করেই চামড়া বিক্রি করতে হলো। সারা দিনের ভ্যান ভাড়া ও একজন সহকারীর মজুরি দিয়ে তাঁর কাছে আর কিছু থাকবে না।
সায়েন্স ল্যাব এলাকাতেই মৌসুমি বিক্রেতাদের কাছ থেকে চামড়া কিনে রাখছিলেন কালাম ব্রাদার্স ট্যানারির পরিচালক সাজেদুল খায়ের। চলতি বছর এই ট্যানারিটির এক দেড় লাখ লবণযুক্ত চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্য আছে। পাশাপাশি কোরবানি ঈদের দুই দিনে তারা অন্তত ১০ হাজারের মতো কাঁচা চামড়া সংগ্রহ করবে।
সাজেদুল খায়ের বলেন, আজকে মৌসুমি বিক্রেতাদের কাছ থেকে ৭৫০ থেকে ৮৫০ টাকার মধ্যে বেশির ভাগ গরুর চামড়া কিনেছেন। তাঁদের হিসাবে, গত বছরের তুলনায় প্রতিটি গরুর চামড়ায় ৩০ থেকে ৫০ টাকা বাড়তি দাম পাওয়া যাচ্ছে।
খুব বড় আকারের চামড়া দেড় হাজার টাকায়ও বিক্রি হতে দেখা গেছে। যেমন রাজধানীর মোহাম্মদপুর টাউন হল এলাকায় আজ দুপুরে চামড়া কিনছিলেন মৌসুমি ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, সকাল থেকে তিনি ৬০টির বেশি চামড়া কিনেছেন। ৩২ লাখ টাকায় কেনা দুটি গরুর চামড়া তিনি মোট তিন হাজার টাকা দিয়ে কিনেছেন। অর্থাৎ প্রতিটির দাম পড়েছে দেড় হাজার টাকা।
বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএ) সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান সাখাওয়াত উল্লাহ বলেন, এ বছর ছোট গরুর চামড়া বেশি। তবে সার্বিকভাবে চামড়ার সরবরাহ ভালো। তাঁদের হিসাবে, গত বছরের তুলনায় প্রতিটি চামড়ায় ১০০ থেকে ১৫০ টাকা বেশি দাম রয়েছে। তিনি জানান, চলতি বছর ট্যানারি প্রতিষ্ঠানগুলো পাঁচ থেকে ছয় লাখ কাঁচা চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্য নিয়েছে। মূলত কাঁচা চামড়ার দাম তথা বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্যানারি প্রতিষ্ঠানগুলো সরাসরি কাঁচা চামড়া কিনে থাকে।
অর্থনীতি
ঈদযাত্রার ৬ দিনে যমুনা সেতুতে ১৯ কোটির বেশি টাকা টোল আদায়

ঈদযাত্রাকে কেন্দ্র করে ১ থেকে ৬ জুন রাত ১২টা পর্যন্ত ছয় দিনে যমুনা সেতু দিয়ে ২ লাখ ৫৫ হাজার ২২০টি যানবাহন পারাপার হয়েছে। এতে টোল আদায় হয়েছে ১৯ কোটি ২৫ লাখ ৭৩ হাজার ৮৫০ টাকা।
যমুনা সেতু কর্তৃপক্ষ জানায়, গত রবিবার (১ জুন) যমুনা সেতুর ওপর দিয়ে ২৭ হাজার ১৭৩টি যানবাহন পারাপার হয়েছে। এতে টোল আদায় হয়েছে ২ কোটি ৫৯ লাখ ২৭ হাজার ৮৫০ টাকা।
এর মধ্যে উত্তরবঙ্গগামী ১৩ হাজার ৮৬৮টি যানবাহন পারাপার হয়। টোল আদায় হয়েছে ১ কোটি ২৪ লাখ ৪৮ হাজার ২০০ টাকা। অপর দিকে ঢাকাগামী ১৩ হাজার ৫টি যানবাহন পারাপার হয়। এর বিপরীত টোল আদায় ১ কোটি ২৪ লাখ ৪৮ হাজার ২০০ টাকা।
গত সোমবার (২ জুন) যমুনা সেতুর ওপর দিয়ে ৩০ হাজার ১৬৭টি যানবাহন পারাপার হয়েছে। এতে টোল আদায় হয়েছে ২ কোটি ৭৫ লাখ ৪৫ হাজার ৮৫০ টাকা। এর মধ্যে উত্তরবঙ্গগামী ১৫ হাজার ৩৯৮টি যানবাহন পারাপার হয়। টোল আদায় হয়েছে ১ কোটি ৩৭ লাখ ১৩ হাজার টাকা।
অপরদিকে ঢাকাগামী ১৪ হাজার ৭৬৯টি যানবাহন পারাপার হয়। বিপরীত টোল আদায় এক কোটি ৩৮ লাখ ৩২ হাজার ৪০০ টাকা।
গত মঙ্গলবার (৩ জুন) সেতুর ওপর দিয়ে ৩৩ হাজার ৫৬৪টি যানবাহন পারাপার হয়েছে। এর মধ্যে উত্তরবঙ্গগামী ১৭ হাজার ৬৫৭টি যানবাহন পারাপার হয়। টোল আদায় হয় ১ কোটি ৪৪ লাখ ৮২ হাজার ৮৫০ টাকা।
অপর দিকে ঢাকাগামী ১৫ হাজার ৯০৭টি যানবাহন পারাপার হয়। এর বিপরীত টোল আদায় ১ কোটি ৪১ লাখ ৮১ হাজার ৫০ টাকা।
গত বুধবার (৪ জুন) সেতু দিয়ে ৫১ হাজার ৮৪৯টি যানবাহন পারাপার হয়। এর মধ্যে উত্তরবঙ্গগামী ৩০ হাজার ৮৪৫টি যানবাহন পারাপার হয়। টোল আদায় হয় ১ কোটি ৮৪ লাখ ৯৭ হাজার ৩৫০ টাকা। অপর দিকে ঢাকাগামী ২১ হাজার ৪টি যানবাহন পারাপার হয়। বিপরীত টোল আদায় ১ কোটি ৭৪ লাখ ৮৫ হাজার ৬৫০ টাকা। গত বৃহস্পতিবার (৫ জুন) যমুনা সেতু দিয়ে যানবাহন ও টোল আদায়ে নতুন রেকর্ড করে যমুনা সেতু কর্তৃপক্ষ। এদিন সেতু দিয়ে ঈদযাত্রায় ছোট বড় বিভিন্ন ধরনের ৬৪ হাজার ২৮৩টি যানবাহন পারাপার হওয়ায় এ রেকর্ডের সৃষ্টি হয়। যা যমুনা সেতু চালু হওয়ার সর্বোচ্চ সংখ্যক যানবাহন পারাপার করে নতুন রেকর্ড গড়ল। ছোট-বড় বিপুলসংখ্যক গাড়ি পারাপার হওয়ায় এদিন ৪ কোটি ১০ লাখ ৮০ হাজার ৯৫০ টাকার টোল আদায় করেছে করেছে কর্তৃপক্ষ। এর ফলে সেতু চালু হওয়ার পরে একদিনে সর্বোচ্চ টোল আদায় হয়।
গতকাল শুক্রবার (৬ জুন) সেতু দিয়ে ৪৮ হাজার ১৮৪টি যানবাহন পারাপার হয়। এর মধ্যে উত্তরবঙ্গগামী ৩৩ হাজার ৮৫৪টি যানবাহন পারাপার হয়। টোল আদায় হয় ২ কোটি ৩৩ লাখ ৮০ হাজার ১৫০ টাকা। অপর দিকে ঢাকাগামী ১৪ হাজার ৩৩০টি যানবাহন পারাপার হয়। বিপরীত টোল আদায় হয় ১ কোটি ৯ লাখ ৯২ হাজার ৬০০ টাকা।
প্রকৌশলী আহসানুল কবীর পাভেল বলেন, অতিরিক্ত গাড়ির চাপ ও সেতুর ওপর গাড়ি বিকল হওয়ায় টোল আদায়ে বিঘ্ন ঘটে। যার ফলে যানজটের সৃষ্টি হয়। এইজন্য বেশ কয়েক দফায় টোল আদায় বন্ধ ছিল। ঈদযাত্রায় উভয় পাশেই ৯টি করে বুথ দিয়ে যানবাহন পারাপার হয়। এর মধ্যে মোটরসাইকেলের জন্য আলাদা দুটি করে বুথ করা হয়। মহাসড়ক এখন স্বাভাবিক আছে। স্বাভাবিক গতিতে যানবাহন গন্তব্য যাচ্ছে।
অর্থনীতি
এবার ৮৫ লাখ চামড়া সংগ্রহ করতে চান ট্যানারিমালিকেরা

চলতি বছর কোরবানির ঈদের মৌসুমে ৮০ থেকে ৮৫ লাখ চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছেন ট্যানারিমালিকেরা। তাঁরা আশা করছেন, ঠিকভাবে চামড়া ছাড়ানো ও লবণজাত করা হলে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী চামড়া সংগ্রহ করা সম্ভব হবে।
সাধারণত কোরবানির মৌসুমেই সবচেয়ে বেশি পরিমাণে পশু জবাই করা হয়। ফলে চামড়ার পরিমাণও অনেক বেশি হয়। সারা বছর যে পরিমাণ চামড়া সংগ্রহ করা হয়, তার ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ আসে এ মৌসুমে।
কোরবানি ঈদের দিন সকাল থেকেই চামড়া সংগ্রহের প্রক্রিয়া শুরু হয়। পশু কোরবানির পর বিভিন্ন বাসাবাড়ি থেকে চামড়া সংগ্রহ করেন স্থানীয় মৌসুমি ব্যবসায়ী ও মাদ্রাসা–এতিমখানার শিক্ষার্থীরা। তাঁরা এসব চামড়া নিয়ে ট্যানারিমালিক বা চামড়া লবণজাতকারী ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করেন। এভাবে লবণ দেওয়া চামড়া শেষ পর্যন্ত ট্যানারিতে পৌঁছায়।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্যানুসারে, এ বছর কোরবানির পশুর চাহিদা প্রায় ১ কোটি ৩ লাখ ৮০ হাজার। সেখানে গরু-ছাগলসহ কোরবানির জন্য প্রস্তুত আছে প্রায় ১ কোটি ২৪ লাখ ৪৭ হাজার পশু।
রাজধানীর পুরান ঢাকার লালবাগের পোস্তা এলাকার চামড়ার আড়তগুলো কাঁচা চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণের অন্যতম বড় জায়গা। কোরবানির ঈদের দিন সকাল থেকেই চামড়া সংগ্রহের প্রক্রিয়া শুরু করেন পোস্তার আড়তদারেরা। মৌসুমি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চামড়া কেনেন তাঁরা। এরপর তা আড়তে এনে লবণ দেন। ঈদের তৃতীয় দিন পর্যন্ত চলে চামড়া সংগ্রহ ও সংরক্ষণের এ কার্যক্রম।
পোস্তা এলাকায় বর্তমানে ৩৫টির মতো কাঁচা চামড়ার আড়ত রয়েছে। পোস্তার পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানান, কোরবানির আগে শেষ মুহূর্তের ব্যস্ত সময় পার করছেন তাঁরা। আড়তগুলো ধুয়েমুছে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করছেন কর্মীরা; আবার আড়তে থাকা পুরোনো চামড়া পাঠিয়ে দিচ্ছেন ট্যানারি ও গোডাউনে। এ ছাড়া নতুন চামড়ায় লবণ দিতে আগেভাগেই অনেকে লবণ কিনে রেখেছেন।
এর বাইরে সাভারের হেমায়েতপুরে চামড়াশিল্প নগর–সংলগ্ন এলাকায় চামড়া সংগ্রহের প্রায় ১০০টি আড়ত রয়েছে। গত কয়েক বছরে এসব আড়ত গড়ে উঠেছে। পোস্তা এলাকা থেকেও অনেকে সেখানে গেছেন। ব্যবসায়ীরা জানান, দেশে এটিই এখন চামড়া সংগ্রহের বড় জায়গা। পোস্তার মতো সেখানেও চামড়া সংগ্রহ করা হয়।
ব্যবসায়ীরা জানান, ঠিকভাবে সংরক্ষণ না করায় প্রতিবছর ১৫ থেকে ২০ শতাংশ কোরবানির চামড়া নষ্ট হয়। ট্যানারিমালিকদের প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএ) জানিয়েছে, গত বছর কোরবানির ঈদের প্রথম দুই দিনে সংরক্ষণের অভাবে সারা দেশে প্রায় পাঁচ লাখ কাঁচা চামড়া নষ্ট হয়েছিল।
মূলত ঢাকার বাইরের জেলাগুলোয় চামড়ার দাম একটু কম থাকে। তাই অনেকে বেশি দামের আশায় রাজধানীতে কাঁচা চামড়া নিয়ে আসেন। এতে অনেক সময় চামড়ার গুণগত মান কমে যায় বা নষ্ট হয়। এ জন্য নিকটস্থ এলাকাতেই চামড়া বিক্রি ও লবণজাতের পরামর্শ দেন ব্যবসায়ীরা।
অর্থনীতি
চাঁদপুরে ইউসিবির এটিএম বুথ বন্ধ, গ্রাহকদের চরম দুর্ভোগ

ঈদুল আযহার ছুটি শুরুর প্রথম দিন থেকেই ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের (ইউসিবি) গ্রাহকরা চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন। নেটওয়ার্ক সমস্যার অজুহাতে রাজধানী সহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় ব্যাংকের এটিএম বুথ হঠাৎ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, ফলে নগদ টাকা উত্তোলন করতে না পেরে বিপাকে পড়েছে ব্যাংকটির অসংখ্য গ্রাহক। তেমনি চাঁদপুর শহর ও বাবুরহাট এলাকা ঘুরে অন্য ব্যাংকের এটিএম বুথ খোলা থাকলেও ইউসিবির বুথ বন্ধ পাওয়া গেছে।
জানা গেছে, চাঁদপুর শহর ও বাবুরহাটে ইউসিবির দুটি শাখা রয়েছে। এতে বৃহস্পতিবার সকালে কিছু গ্রহক টাকা উঠাতে পারলেও দুপুর ১টার পর থেকে বন্ধ হয়ে যায় বুথের কার্যক্রম। এতে স্থানীয় গ্রাহক সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নাড়িরটানে গ্রামে ঈদ করতে আসা ঘরমুখো মানুষ গুলো টাকা না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়েছেন। ইউসিবির এটিএম বুথে টাকা না পেয়ে গ্রাহকদের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।
চাঁদপুরের বিভিন্ন এলাকায় ইউসিবির এটিএম বুথে গিয়ে দেখা গেছে, বুথের দরজায় সাঁটানো রয়েছে “ছুটির কয়েকটা দিন এই এটিএম বন্ধ থাকবে” লেখা নোটিশ। এতে যাদের জরুরি নগদ টাকা প্রয়োজন ছিল, তারা চরম বিপাকে পড়েছেন।
ব্যাংকটির অন্য একটি বুথের সামনে সাঁটানো এক নোটিশে লেখা রয়েছে, “পবিত্র ঈদ-উল-আযহা উপলক্ষ্যে আগামী ৫ জুন, বৃহস্পতিবার থেকে ১২ জুন, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ব্যাংক বন্ধ থাকবে। কোর ব্যাংকিং সফটওয়্যার আপগ্রেডেশনের জন্য আগামী ৯ জুন সোমবার থেকে ১৪ জুন শনিবার পর্যন্ত ইউসিবির সকল ব্যাংকিং সেবা সাময়িকভাবে বন্ধ থাকবে”। তবে আগামী ৯ জুন থেকে এটিএম বন্ধ রাখার কথা থাকলেও আজ ৫ জুন থেকেই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে এসব বুথ।
অন্যদিকে ঈদের বন্ধে এটিএম বুথের নিরাপত্তা ও টাকা রাখার বিষয়ে আগাম সতর্কতা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে ঈদের ছুটি শুরুর প্রথম দিন থেকেই টাকা পাওয়া যাচ্ছে না ইউসিবির এটিএম বুথে। বেশির ভাগ ব্যাংক অন্য ব্যাংকের কার্ড দিয়ে টাকা উত্তোলন বন্ধ বা সীমিত করেছে। বিভিন্ন বুথ ঘুরে টাকা তুলতে না পেরে বিড়ম্বনায় পড়ছেন অনেকে।
বাংলাদেশ ব্যাংক গত সোমবার এটিএম বুথ, এমএফএস, ইন্টারনেট ব্যাংকিং, পয়েন্ট অব সেলস, কিউআর কোড ও অনলাইন ই-পেমেন্ট গেটওয়েতে নিরবচ্ছিন্ন সেবা দেওয়ার নির্দেশ দেয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এমন নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও ইউসিবির বুথ বন্ধ করে দেওয়াকে প্রতারণা বলছেন গ্রাহকরা।
ঢাকা থেকে ঈদ উদযাপন করতে আসা মনির হোসেন জানান, টাকা না পেলে সমস্যায় পড়তে হবে। মো. সোহেল আকন টাকা না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। একাধিক গ্রাহক জানান, কোনো আগাম নোটিশ ছাড়াই এভাবে বুথ বন্ধ করে দেওয়ার কারণে বাজার করা, পরিবহন খরচসহ নানা কাজে বিপর্যয় ঘটেছে।
এ ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকেই। গ্রাহকরা দ্রুত সমস্যার সমাধান এবং ভবিষ্যতে এমন পরিস্থিতি এড়াতে আগাম প্রস্তুতির দাবি জানিয়েছেন ইউসিবি কর্তৃপক্ষের প্রতি।
ইউসিবির বুথ বন্ধ করে দেওয়ার বিষয়ে জানতে ইউসিবির ম্যানেজিং ডিরেক্টর (এমডি) মোহাম্মদ মামদুদুর রশিদের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিরি রিসিভ করেননি। এ কারণে তার মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
এবিষয়ে জানতে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খানের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করে তার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তা সম্ভব হয়নি।
অর্থসংবাদ/কাফি