সারাদেশ
বনশ্রীতে হিজড়াদের সঙ্গে চাঁদার অঙ্ক নিয়ে চুক্তি

সংবাদ মাধ্যমগুলোতে প্রায়ই খবর আসে- বিয়ে বাড়িতে চাঁদা দাবি করে না পেয়ে ভাঙচুর করেছে হিজড়ারা, অবরুদ্ধ হয়েছে পরিবার। নবজাতক হওয়ার খবরে বাসায় গিয়ে চাঁদা না পেয়ে ভাঙচুর করেছে; হিজড়াদের ছিনতাই ও অবৈধ কার্যকলাপ ঠেকাতে গিয়ে আহত হয়েছেন পুলিশ সদস্য।
এমন ঘটনা সামাজিকভাবে যেমন বিব্রত কর, তেমনি অস্বস্তিরও বটে। তাই এসব ঘটনা থেকে পরিত্রাণ পেতে বাড়িওয়ালা, ফ্ল্যাট মালিক, ভাড়াটিয়া, দোকান মালিক, ব্যবসায়ী, হোটেল মালিক ও ভ্যান দোকানদারদের যেন কোনো ধরনের বিরক্ত না করে- এমন শর্তে রাজধানীর বনশ্রী আবাসিক এলাকা কর্তৃপক্ষ ওই এলাকার হিজড়া গ্রুপগুলোর জন্য ‘বকশিস’ নির্ধারণ করেছে বলে জানা গেছে।
যদিও এ বিষয়টি বনশ্রী আবাসিক এলাকা কর্তৃপক্ষ ও ওই হিজড়া গ্রুপগুলোর কোনো সদস্যই স্বীকার করেননি। তবে বনশ্রী আবাসিক এলাকা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, হিজড়াদের অত্যাচারে তারা অতিষ্ট।
বনশ্রী আবাসিক এলাকা কর্তৃপক্ষ সভা করে ৫টি ক্যাটাগরিতে বকশিস নির্ধারণ করেছে এমন একটি পত্র গণমাধ্যমের হাতে রয়েছে। ওই পত্রে বলা হয়েছে, গত ৮ জুন সোসাইটির কার্যালয়ে ওই এলাকার হিজড়াদের ৪টি গ্রুপ এবং তাদের গ্রুপ প্রধান ময়নার সঙ্গে সোসাইটির কার্যনির্বাহী পরিষদের নেতাদের বিভিন্ন কার্যক্রম ও বকশিস উঠানো বিষয়ে আলোচনা হয়। উভয় পক্ষের মধ্য আলোচনা শেষে শর্ত সাপেক্ষে ও নির্ধারিত হারে এলাকার বাড়ি/ফ্ল্যাট মালিক, ভাড়াটিয়া এবং দোকাদারদের পক্ষ থেকে হিজড়াদের বকশিস দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
শর্তে যা যা রয়েছে
১. কোনো হিজড়া বনশ্রী আবাসিক এলাকায় বসবাসকারী বাড়িওয়ালা, ফ্ল্যাট মালিক, ভাড়াটিয়া, দোকান মালিক, ব্যবসায়ী, হোটেল মালিক ও ভ্যান দোকানদারের কাছ থেকে সোসাইটি নির্ধারিত বকশিসের বাইরে কারো কাছ থেকে জোর করে নিজেদের ইচ্ছামতো কোনো বকশিস বা চাঁদা তুলতে পারবে না।
২. পত্রে উল্লিখিত ৪ জন হিজড়া ছাড়া অন্য কেউ বনশ্রী আবাসিক এলাকায় (এ থেকে এন-ব্লক পর্যন্ত) বকশিস তুলতে পারবে না।
৩. কাউকে কোনো প্রকার চাপ সৃষ্টি করা, অকথ্য গালিগালাজ করা, অশালিন অঙ্গভঙ্গী প্রকাশ করা, বাজে পরিবেশ সৃষ্টি করা, হাতে তালি দেওয়া অথবা ভয়ভীতি প্রদর্শনসহ কোনো প্রকার ঝগড়া-ঝাটি করতে পারবে না। এছাড়া সোসাইটির নিরাপত্তাকর্মীদের সঙ্গে কোনো ধরনের খারাপ ব্যবহার করতে পারবে না। এমন ধরনের কর্মকাণ্ড পরিলক্ষিত হলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
যেসব খাতে যত টাকা নিতে পারবে হিজড়ারা
ওই পত্রে বলা হয়েছে, মানবিক দিক বিবেচনা করে খাতওয়ারি বকশিসের হার নির্ধারণ করা হলো। যদি কোন বাড়িওয়ালা, ভাড়াটিয়া, দোকানদারের কাছে নির্ধারিত টাকার চেয়ে বেশি দাবি করেছে- এমন কোনো তথ্য প্রমাণ পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি মামলাসহ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। উল্লেখ্য যে, এই সিদ্ধান্ত সোসাইটি যেকোন সময় পরিবর্তন বা বাতিল করার ক্ষমতা রাখে।
হিজড়ারা বিয়ের অনুষ্ঠান ও কোনো পরিবারে নতুন বাচ্চা জন্মগ্রহণ করলে সেখান থেকে ১০০০ টাকা বকশিস নিতে পারবে; শুধু রমজানে ঈদে বাড়ির মালিক থেকে ২০০ টাকা নিতে পারবে; বনশ্রী আবাসিক এলাকার দোকানদারদের থেকে শুধু রমজান ঈদে ১০০ টাকা এবং দোকান থেকে মাসে একবার (১ থেকে ১০ তারিখের মধ্যে) ৪০ টাকা নিতে পারবে।
বনশ্রী আবাসিক এলাকায় হিজড়াদের ৪টি গ্রুপ রয়েছে। তাদের গ্রুপ প্রধান হচ্ছে ‘ময়না’। ওই এলাকায় বকশিস তুলবেন হিরা, ফুলি, বিজলী ও রিতা হিজড়া। এছাড়া বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন সুরসুরি হিজড়াও। সবার ঠিকানা হিসেবে ‘গোড়ান হাঁড়াভাঙ্গা মোড়’ এলাকার কথা উল্লেখ আছে।
বিষয়টি জানতে গ্রুপ প্রধান ময়না হিজড়ার মোবাইল নম্বরে যোগাযোগ করা হলে তার নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়। তবে সংযোগ পাওয়া যায় তালিকায় দুই নম্বরে হিরা হিজড়ার মোবাইল নম্বরে। সবকিছু শোনার পর তিনি ‘আমি জানি না’ বলে কলটি কেটে দেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে দক্ষিণ বনশ্রী প্লট মালিক সমিতির সভাপতি ফরিদ উদ্দিন খন্দকার বলেন, হিজড়াদের অত্যাচারে না থাকার মত অবস্থা আমাদের। আমরা কোনো ফি নির্ধারণ করিনি। আমরা কেন টাকা দেবো তাদের? তারা কি আমাদের কোনো ওয়েল উইশার, যে তাদের আমরা টাকা দেবো।
তিনি বলেন, পুলিশ কনভেনশন হলে দুই তিন থানা মিলে একটি মিটিং হয়েছিল। ওই মিটিংয়ে আমরা বলেছি, আমাদের অসুবিধার কথাগুলো। ডিসি-ওসি বলছেন, তাদের ধরে সরাসরি থানায় জানাতে এবং তারা কোর্টে চালান করে দেবে।
চিঠিতে ফি নির্ধারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা আগের কাগজ। আজকে কালকের কোনো কাগজ পেয়েছেন কি না? এই কাগজের এখন আর কোনো ভিত্তি নাই। হিজড়াদের যেখানে পাওয়া সেখানে ধরে থানায় দিয়ে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।

সারাদেশ
ট্রেন লাইনচ্যুত, সিলেটের সঙ্গে সারাদেশের রেল যোগাযোগ বন্ধ

সিলেটের মোগলাবাজারে ‘উদয়ন এক্সপ্রেস’ ট্রেন লাইনচ্যুত হয়েছে। এতে সিলেটের সঙ্গে সারাদেশের রেল যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।
মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ৭টার দিকে চট্টগ্রাম থেকে সিলেট আসার পথে মোগলাবাজারে ট্রেনের লাইন থেকে উল্টে গিয়ে এ ঘটনা ঘটে। তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন সিলেট রেলওয়ে থানার ওসি আবুল কুদ্দুস।
তিনি বলেন, চট্টগ্রাম থেকে সিলেট আসার পথে পাহাড়িকা এক্সপ্রেস মোগলাবাজারে লাইনচ্যুত হয়েছে। ট্রেন উদ্ধারে কাজ চলমান রয়েছে। দ্রুত সারাদেশের সাথে রেল যোগাযোগ স্বাভাবিক হবে।
সারাদেশ
চট্টগ্রামে ভারত সীমান্ত বসছে বিজিবির ৩০ বর্ডার পোস্ট

পার্বত্য চট্টগ্রামের দুর্গম অরক্ষিত সীমান্ত এলাকা সুরক্ষার জন্য বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ’র (বিজিবি) দুইটি নতুন ব্যাটালিয়ন স্থাপনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এ দুটি ব্যাটালিয়নের আওতায় নতুন করে ৩০টি বর্ডার পোস্ট (বিওপি) স্থাপিত হবে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।
রবিবার (৫ অক্টোবর) খাগড়াছড়ির রামগড়ের ৪৩ বিজিবি ব্যাটালিয়নের আওতায় চট্টগ্রামের মীরসরাই উপজেলার করেরহাটের পাহাড় ও বনাঞ্চল বেষ্টিত দুর্গম সীমান্ত এলাকায় স্থাপিত ‘ছোট ফরিংগা বিওপির’ আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনকালে বিজিবি চট্টগ্রাম দক্ষিণ পূর্ব রিজিয়নের রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সোহেল আহমেদ সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান।
তিনি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের সীমান্ত বাংলাদেশের সমতল জেলার সীমান্ত এলাকার মতো গতানুগতিক নয়। সেখানকার সীমান্ত এলাকা অত্যন্ত দুর্গম। যেমন রাঙ্গামাটির বাঘাইহাট ও মারিশ্যার ব্যাটালিয়নের আওতাধীন এমন দুর্গম এলাকায় বিওপি আছে, যেখানে পায়ে হেটে ৪ দিন লাগে যেতে। ফলে ওই সব এলাকা কভার করা দুরূহ হয়ে পড়ে। দক্ষিণ-পূর্ব রিজিয়নের আওতায় পার্বত্য জেলার দুর্গম ও অরক্ষিত সীমান্ত এলাকায় নতুন দুটি ব্যাটালিয়ন স্থাপিত হলে বিশাল দুর্গম সীমান্ত এলাকা সুরক্ষা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
তিনি আরও বলেন, সীমান্ত সুরক্ষায় সরকারের নেওয়া সিদ্ধান্তের নতুন ৭৩টি বিওপির মধ্যে দেশের বিভিন্ন সীমান্তে ইতোমধ্যে ৬৯টি বিওপি স্থাপিত হয়েছে। খুব সহসা আরও চারটি বিওপি স্থাপনের কাজ সম্পন্ন হবে। তার মধ্যে গত এক বছরে স্থাপিত নতুন ১০টি বিওপির মধ্যে দক্ষিণ-পূর্ব রিজিয়িনের আওতাধীন সীমান্তে স্থাপন করা হয় পাঁচটি। নতুন বিওপি স্থাপনের ফলে সীমান্ত সুরক্ষা, চোরাচালানরোধসহ সব সীমান্ত অপরাধ দমনে বিজিবির সক্ষমতা ও দক্ষতা বেড়েছে। রামগড় ৪৩ ব্যাটালিয়নের আওতাধীন ফটিকছড়ির দাঁতমারা ইউনিয়ন ও মীরসরাইয়ের করেরহাট ইউনিয়নের মধ্যবর্তী প্রায় পাঁচ কিলোমিটার সীমান্ত এলাকা পাহাড় ও বনভূমি বেষ্টিত দুর্গম হওয়ায় বিজিবি আভিযানিক তৎপরতা পরিচালনা কষ্টকর ছিল। ছোট ফরিংগা বিওপি স্থাপনের ফলে দীর্ঘদিন অনেকটা অরক্ষিত থাকা বিশাল এ সীমান্ত এলাকা এখন সুরক্ষিত হলো। সীমান্ত এলাকার বাসিন্দাদের নিরাপত্তাসহ বিজিবির আভিযানিক কার্যক্রম আরও গতিশীল হবে।
পার্বত্য চট্টগ্রামে সীমান্ত সুরক্ষার পাশাপাশি শান্তি শৃঙ্খলারক্ষার বিজিবি দায়িত্বওপালন করে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, সীমান্ত সুরক্ষা, চোরাচালানরোধ, সীমান্তবর্তী অধিবাসীদের নিরাপত্তায় বিজিবি এখন আস্থার প্রতীক।
৪৩ বিজিবি ব্যাটালিয়নের ১২তম বিওপি ছোট ফরিংগা উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বিজিবির গুইমারা সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার কর্নেল মো. মিজানুর রহমান ও ৪৩ বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. আহসান উল ইসলাম ছিলেন।
সারাদেশ
বিপৎসীমার ওপরে তিস্তার পানি, নিম্নাঞ্চল প্লাবিত

কয়েকদিনের টানা ভারী বৃষ্টি আর উজানের পাহাড়ি ঢলে দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারেজ এলাকার ডালিয়া পয়েন্টে পানি প্রবাহ বিপৎসীমার (স্বাভাবিক ৫২.১৫ মিটার) ১০ সেন্টিমিটার ওপরে। তিস্তার পানি বিপৎসীমায় তাই রেড অ্যালার্ট জারি করে লোকজনকে নিরাপদ স্থানে যেতে মাইকিং করেছে পাউবো। এর ফলে জেলার বিভিন্ন নিম্নাঞ্চল ও সড়কসহ বহু এলাকার ঘরবাড়ি প্লাবিত হয়েছে।
সোমবার (৬ অক্টোবর) সকাল ৬টায় তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়া পয়েন্টে পানির প্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫২ দশমিক ২৫ মিটার, যা বিপৎসীমার ১০ সেন্টিমিটার ওপরে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, গত দুই দিনের ভারী বৃষ্টি আর উজানের পাহাড়ি ঢলে তিস্তা নদীর পানি বাড়ছে। আজ সকাল থেকে ৯ ঘণ্টার ব্যবধানে ৭০ সেন্টিমিটার পানি বেড়েছে। বেলা ৩টায় ডালিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ১ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে; যা ক্রমেই বাড়ছে। ফলে নদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলের বেশ কিছু পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। ডুবে গেছে মৎস্য খামার, আমন ধানসহ নানান জাতের সবজির খেত। ডুবে গেছে চরাঞ্চলের রাস্তাঘাট। নৌকায় যোগাযোগ করছে চরাঞ্চলের মানুষ। এখন নৌকা ও কলার ভেলায় চলাচল করছে পানিবন্দি মানুষ।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, সোমবার সকাল ৯টা পর্যন্ত অন্তত ১২ ঘণ্টা তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমার ওপরে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর ও কুড়িগ্রাম জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
অন্যদিকে তিস্তা নদীর কাউনিয়া পয়েন্টে রোববার (৬ অক্টোবর) সন্ধ্যায় পানির প্রবাহ রেকর্ড করা হয় বিপৎসীমার ৮০ সেন্টিমিটার নিচে, যা সোমবার সকালে বেড়ে দাঁড়ায় ২৫ সেন্টিমিটার নিচে। ধরলা নদীর শিমুলবাড়ি পয়েন্টে রোববার সন্ধ্যায় পানি ছিল বিপৎসীমার ১৮০ সেন্টিমিটার নিচে, সোমবার সকালে তা বেড়ে বিপৎসীমার মাত্র ৩ সেন্টিমিটার নিচে পৌঁছেছে।
লালমনিরহাট আদিতমারী উপজেলার গোবর্দ্ধন গ্রামের শিউলী বেগম বলেন, রাস্তাঘাট ডুবে গেছে, আমাদের পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। দিন যত যাচ্ছে, পানি ততই বাড়ছে। গতরাতে পানি বাড়িতে ঢুকে গেছে, সারারাত গরু-ছাগল নিয়ে কষ্টে রয়েছি। এখন বাড়িতে কোমরসমান পানি। তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন না হলে এই কষ্ট থেকে মুক্তি পাব না।
সিন্দুর্না এলাকার বাসিন্দা শামসুল ইসলাম জানান, রোববার (৬ অক্টোবর) দুপুরের পর থেকে নদীতে পানি বাড়ছে। নিম্নাঞ্চলের ঘরবাড়ি পানিতে তলিয়ে গেছে। আমরা এখন পানিবন্দি। গত দুই মাস ধরে বারবার পানি ঢুকে আবার নেমে যাচ্ছে, এতে আমরা ভীষণ কষ্টে আছি।
লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. শায়খুল আরিফিন বলেন, তিস্তা তীরবর্তী এলাকায় এখন রোপা আমন, চিনাবাদাম ও সবজির চাষ চলছে। পানি যদি তিন থেকে চার দিন স্থায়ী হয়, তাহলে কৃষকদের ব্যাপক ক্ষতি হবে। তবে এক থেকে দুই দিনের মধ্যে পানি নেমে গেলে ক্ষতি তুলনামূলক কম হবে।
লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সুনিল কুমার জানান, ভারী বৃষ্টি ও উজানের ঢলের কারণে তিস্তার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এই প্রবণতা থাকতে পারে। আমরা পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি এবং নদীপাড়ের বাসিন্দাদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে মাইকিং করা হয়েছে।
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মনোনীত দাস বলেন, উজান আর বাংলাদেশের কয়েকদিনের ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। বন্যা মোকাবিলায় উপজেলা প্রশাসনের সকল প্রস্তুতি রয়েছে।
সারাদেশ
রংপুরে অ্যানথ্রাক্সে শতাধিক গরুর মৃত্যু, আক্রান্ত অর্ধশতাধিক মানুষ

রংপুরে গত দুই মাসে অ্যানথ্রাক্স রোগে মারা গেছে শতাধিক গরু। শুধু তাই নয়, এই রোগে আক্রান্ত হয়েছেন অর্ধশতাধিক মানুষ। পশুবাহিত এই রোগ অনেকটা অসচেতনতার কারণেই ছড়িয়ে পড়ছে মানুষের শরীরে। রংপুর ছাড়াও এই রোগ ছড়িয়ে পড়েছে মেহেরপুরসহ কয়েক জেলায়।
জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে যায় যায়, জেলায় অ্যানথ্রাক্সে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা এখন পর্যন্ত দাঁড়িয়েছে ১১ জন। চলতি বছরের জুলাই ও সেপ্টেম্বরে রংপুরের পীরগাছায় অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ নিয়ে দুজন মারা যান। একই সময়ে উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নে অর্ধশত ব্যক্তির শরীরে অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ দেখা যায়। ওই সময় ঘটনাস্থল থেকে অসুস্থ গরুর মাংসের নমুনা পরীক্ষা করে অ্যানথ্রাক্স শনাক্ত করেছিল প্রাণিসম্পদ বিভাগ। পরে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) একটি প্রতিনিধিদল ১৩ ও ১৪ সেপ্টেম্বর পীরগাছা সদর এবং পারুল ইউনিয়নের অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ থাকা ১২ জন নারী-পুরুষের নমুনা সংগ্রহ করেছিল। এর মধ্যে আটজনের অ্যানথ্রাক্স শনাক্ত হয়।
স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা যায়, পীরগাছা, মিঠাপুকুর ও কাউনিয়া উপজেলায় অ্যানথ্রাক্সে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা অর্ধশতাধিক ছাড়িয়ে গেছে। তবে আইইডিসিআরের তথ্যে যে ১১ জন বলা হচ্ছে, বাস্তবে সে চিত্র ভিন্ন। পশুর টিকার সংকট দেখা দিয়েছে। আক্রান্তদের জন্য অ্যান্টিবায়োটিকেরও সংকট আছে।
মিঠাপুকুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, ২০ দিন আগে ইমাদপুর ইউনিয়নের আমাইপুর গ্রামে একটি গরু অসুস্থ হলে জবাই করা হয়। পরে ওই মাংস কাটাকাটি করার পর গ্রামের পাঁচ-ছয় জনের শরীরে ঘা হয় ও অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ দেখা দেয়। এরপর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে তারা চিকিৎসা নিতে আসলে সেখানে থেকে নমুনা সংগ্রহ করে আইইডিসিআরে পাঠানো হয়। এর মধ্যে একজনের অ্যানথ্রাক্স শনাক্ত হয়।
মিঠাপুকুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসা কর্মকর্তা (রোগনিয়ন্ত্রণ) এম এ হালিম লাবলু বলেন, এই উপজেলায় ১১ জনের শরীরে উপসর্গ পাওয়া গেছে। এ রোগ গবাদিপশু থেকে মানুষে ছড়ায়, তবে মানুষ থেকে মানুষে ছড়ায় না। তাই মানুষকে সচেতন হতে হবে। অসুস্থ গরু জবাই করা বা মাংস খাওয়া যাবে না।
পীরগাছা উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. একরামুল হক বলেন, ‘শুধু পীরগাছাতেই অন্তত দেড় লাখ পশু অ্যানথ্রাক্সে আক্রান্ত হয়েছে। এ পর্যন্ত ৫৩ হাজার ৪০০টি টিকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে। আরও ৫০ হাজার টিকার চাহিদাপত্র দেওয়া হয়েছে। সেগুলো এখনও পাওয়া যায়নি।’
মিঠাপুকুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. আলতাফ হোসেন বলেন, ‘এই রোগ প্রতিরোধে জনসচেতনতা বাড়ানোর বিকল্প নেই। আক্রান্ত পশুদের টিকা দেওয়া হচ্ছে। তবে সংকট আছে।’
পীরগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ মো. রাসেল বলেন, আমরা আরও ৫০ হাজার টিকার চাহিদাপত্র পাঠিয়েছি। আপাতত অ্যানথ্রাক্স নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। আক্রান্তদেরও চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে রংপুরের সিভিল সার্জন শাহিন সুলতানা বলেন, ‘আক্রান্ত তিন উপজেলায় তিনটি মেডিক্যাল টিম গঠন করে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি ওসব উপজেলার মানুষকে আক্রান্ত গরু জবাই না করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আবু ছাইদ বলেন, ‘অ্যানথ্রাক্স শনাক্ত হওয়ার পরই গত আগস্ট থেকে টিকা কার্যক্রম শুরু করেছি আমরা।
সারাদেশ
খাগড়াছড়ির অবরোধ কর্মসূচি পুরোপুরি প্রত্যাহার

খাগড়াছড়িতে জুম্ম ছাত্র-জনতার ডাকা অবরোধ কর্মসূচি স্থায়ীভাবে প্রত্যাহার করা হয়েছে। শনিবার (৪ অক্টোবর) সংগঠনটির অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে এই সিদ্ধান্ত জানানো হয়। এর আগে, ৫ অক্টোবর পর্যন্ত অবরোধ কর্মসূচি স্থগিত করা হয়েছিল।
বিবৃতিতে জানানো হয়, শহীদদের ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী পুন্যকর্ম সম্পাদন, আহত ও ক্ষতিগ্রস্তদের মানবিক সহায়তা এবং প্রশাসনের পক্ষ থেকে দেওয়া আংশিক আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে এই অবরোধ প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এর আগে, গত ১ অক্টোবর জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, সেনা ও গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে দ্বিতীয় দফা আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে জুম্ম ছাত্র-জনতার প্রতিনিধি দল প্রশাসনের সঙ্গে ৮ দফা দাবি, ১৪৪ ধারা প্রত্যাহার এবং হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচার দাবিতে আলোচনা করে।
আলোচনায় প্রশাসন আশ্বাস দেয় যে, উত্থাপিত দাবিগুলো বিবেচনায় নেওয়া হবে এবং ইতোমধ্যে নিহতদের পরিবারকে নগদ ৫০ হাজার টাকা করে সহায়তা প্রদান করা হয়েছে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, প্রশাসনের আংশিক আশ্বাসের ভিত্তিতে ৫ অক্টোবর পর্যন্ত ঘোষিত স্থগিত অবরোধ কর্মসূচি স্থায়ীভাবে প্রত্যাহার করা হলো। তবে ৮ দফা দাবি দ্রুত বাস্তবায়ন না হলে আরও কঠোর এবং অনির্দিষ্টকালের আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
অপরদিকে, ধর্ষণের অভিযোগে আটক শয়ন শীলের বাবার দোকান ভাঙচুরের ঘটনায় খাগড়াছড়ি সদর থানায় অজ্ঞাতনামা ৭০-৮০ জনকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন খাগড়াছড়ি সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল বাতেন মৃধা। তিনি আরও জানান, ১৪৪ ধারা এখনো জারি রয়েছে, তবে দিনের বেলায় তা শিথিল থাকবে।