আন্তর্জাতিক
রেস্তোরাঁয় ওয়েটারের কাজ করা জেনসেন হুয়াং বিশ্বের ১৩তম ধনী

কদিন আগেই চিপ কোম্পানি এনভিডিয়া বিশ্বের সবচেয়ে মূল্যবান কোম্পানির তকমা পেয়েছে। এখন তারা দ্বিতীয় স্থানে নেমে গেছে। কোম্পানিটির এই উত্থানের সঙ্গে সঙ্গে এটির প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী জেনসেন হুয়াংয়েরও সম্পদমূল্য বেড়েছে। বদৌলতে তিনি বৈশ্বিক বিলিয়নিয়ার বা শতকোটিপতি তালিকায় ১৩তম স্থানে উঠে এসেছেন।
তবে জেনসেন হুয়াংয়ের জীবনের পথপরিক্রমা অতটা মসৃণ ছিল না। বিশ্বের এই অতি ধনী একসময় রেস্তোরাঁয় ওয়েটার বা পরিচারক হিসেবে কাজ করতেন। এখন তিনি তিন ট্রিলিয়ন বা তিন লাখ কোটি ডলারের কোম্পানির মালিক। ছোটবেলায় থাইল্যান্ড থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল তাঁকে।
গতকাল শনিবার অবশ্য জেনসেন হুয়াংয়ের সম্পদমূল্য কমেছে ৩ দশমিক ৬ বিলিয়ন বা ৩৬০ কোটি ডলার। সেদিন দুপুরে তাঁর সম্পদমূল্য দাঁড়ায় ১১০ দশমিক ৮ বিলিয়ন বা ১১ হাজার ৮০ কোটি মার্কিন ডলার। আগের দিন শুক্রবার তিনি ছিলেন বিশ্বের ১১তম শীর্ষ ধনী।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় (এআই) যে উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন প্রসেসর দরকার, বৈশ্বিক বাজারে সেটির মূল উৎস এখন এনভিডিয়া। ফলে চলতি বছর এনভিডিয়ার শেয়ারের দাম বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। গত বছর এই কোম্পানির শেয়ারের দাম তিন গুণ বেড়েছে। অথচ চলতি বছর মাইক্রোসফটের মতো কোম্পানির শেয়ারের দাম বেড়েছে মাত্র ১০ শতাংশ। শেয়ারের মূল্যবৃদ্ধির ফলে গত মঙ্গলবার বিশ্বের সবচেয়ে মূল্যবান কোম্পানির তকমা অর্জন করে এনভিডিয়া। সেই সঙ্গে কোম্পানিটির প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) জেনসেন হুয়াংয়ের সম্পদমূল্যও বেড়েছে।
এনভিডিয়ার প্রধান কার্যালয় যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার সান্তা ক্লারায়। এটি সফটওয়্যার ও হার্ডওয়্যার প্রস্তুতকারী কোম্পানি। গ্রাফিক প্রসেসিং ইউনিট (জিপিইউ), অ্যাপ্লিকেশন প্রোগ্রামিং ইন্টারফেস (এপিআই), মোবাইল কম্পিউটিং ও সিস্টেম অন চিপ ইউনিট (এসওসি) তৈরি করে তারা। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যারের একচেটিয়া ব্যবসা করছে তারা।
জেনসেন হুয়াং ১৯৬৩ সালে তাইওয়ানের তাইনানে জন্মগ্রহণ করেন। কিন্তু সেখানে রাজনৈতিক উত্তেজনার কারণে পাঁচ বছর বয়সে তাঁর পরিবার থাইল্যান্ডে চলে যায় এবং ৯ বছর বয়সে তাঁকে ও তাঁর ভাইকে ওয়াশিংটনের টাকোমায় এক চাচার কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার পরপর কেন্টাকির এক বোর্ডিং স্কুলে ভতির করা হয় জেনসেনকে। সেই স্কুলটি ছিল এক ধরনের সংশোধনমূলক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, যেখানে সমস্যাগ্রস্ত কিশোরদের পাঠানো হতো। কিন্তু জেনসেংয়ের চাচা-চাচি তা জানতেন না।
সেই বোর্ডিং স্কুলে ক্লাসের পর প্রতিদিন জেনসেনকে ছেলেদের বাথরুম পরিষ্কার করার দায়িত্ব দেওয়া হয়। তার ভাই তখন কাজ করত এক তামাক কারখানায়। একপর্যায়ে তিনি রেস্তোরাঁয় পরিচারক হিসেবে কাজ নেন। তাঁর ভাষ্য, এ কাজ তাঁর লজ্জা ও জড়তা কাটাতে সহায়তা করেছে।
ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন জেনসেন হুয়াং। ওরেগন স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে ইলেকট্রিক প্রকৌশলে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন তিনি। এরপর স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেন জেনসেন। পড়াশোনা শেষ করে জেনসেন এলএসআই লজিকের কোরওয়্যারের ডিরেক্টর হিসেবে যোগ দেন। বছরখানেক চাকরি করার পর ১৯৯৩ সালে ক্রিস মালাচোস্কি ও কার্টিস প্রিমের সঙ্গে এনভিডিয়া প্রতিষ্ঠা করেন। এনভিডিয়ার সিইও ও প্রেসিডেন্ট নিযুক্ত হন তিনি। সে সময় তাঁর বয়স ছিল ৩০। ২০০৭ সালে তাঁর বার্ষিক বেতন ছিল ২৪ দশমিক ৬ মিলিয়ন বা ২ কোটি ৪৬ লাখ ডলার। ফলে ফোর্বস ম্যাগাজিনের তালিকায় তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ৬১তম সর্বোচ্চ বেতনভোগী সিইও হিসেবে তালিকাভুক্ত হন।
এনভিডিয়া বহুদিন গেমিং কনসোলের চিপ তৈরি করেছে। এই চিপ গেমের ভারী গ্রাফিকস নিয়ন্ত্রণে কাজ করত; কিন্তু কয়েক বছর আগে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে কাজ করা গবেষকেরা গেমের জন্য বিশেষায়িত চিপগুলো দিয়ে শক্তিশালী সব অ্যালগরিদম পরিচালনা করা শুরু করেন। এতেই খেলা ঘুরে যায়।
এসব চিপ একই সঙ্গে অনেক ডেটা বিশ্লেষণ ও প্রক্রিয়াজাত করতে পারে। যেমন মেশিন লার্নিং, ভিডিও এডিটিং ও গেমিং অ্যাপ্লিকেশনগুলোর জন্য ডেটাকে উপযোগী করে তোলা। প্রযুক্তিজগতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার নতুন সংস্করণ সৃষ্টির বদৌলতে ফুলেফেঁপে ওঠে এই কোম্পানি। গত বছরের মে মাসে এনভিডিয়া কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক (এআই) আরও উন্নত ও উচ্চক্ষমতার নতুন চিপ নির্মাণের ঘোষণা দেয়। ফলে স্টক মার্কেটে কোম্পানিটির বাজার মূলধন এক ট্রিলিয়ন বা এক লাখ কোটি ডলারে উঠে যায়। সেখান থেকে এক বছরের মধ্যে তাদের বাজার মূলধন তিন ট্রিলিয়ন বা তিন লাখ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যায়।
এনভিডিয়ার চলার পথ অত মসৃণ ছিল না। একাধিকবার ব্যবসা থেকে ছিটকে পড়তে হয়েছে হুয়াংকে। শুরুর দিকে চিপ বানাতে তাঁরা হিমশিম খান। সঠিক ও কার্যকর চিপ বানাতে গিয়ে বারবার ব্যর্থ হন। কয়েক বছর পর অবশেষে সফলতার মুখ দেখেন।
১৯৯৬ সালে যখন এনভিডিয়ার বয়স মাত্র তিন বছর, তখন তাদের প্রধান অংশীদার ভিডিও গেমিং কোম্পানি সেগার সঙ্গে চুক্তি ভেঙে যায়। গেমিং কনসোলগুলোতে থ্রিডি গ্রাফিকসযুক্ত করতে চিপ তৈরির চুক্তি ছিল সেগার সঙ্গে এনভিডিয়ার। অর্থের হিসাবে নতুন একটি কোম্পানির জন্য অনেক বড় চুক্তি ছিল এটি। কিন্তু ভুল নকশা ও উইন্ডোজের সঙ্গে কাজ না করায় এনভিডিয়া বেকায়দায় পড়ে যায়।
হুয়াং সে সময় ভাবেন, এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো পদ্ধতি হলো সেগার সঙ্গে এ নিয়ে খোলামেলা কথা বলা।
হুয়াংয়ের ভাষ্যে, টাকার কথা বলতে লজ্জা পাচ্ছিলাম; কিন্তু সেগার সিইও আমাকে অবাক করে দিয়ে চুক্তি ভঙ্গের আগে যতটুকু কাজ হয়েছিল, ততটুকুর অর্থ পরিশোধ করেন। ফলে আরও ছয় মাস টিকে থাকার মতো অর্থের সংস্থান হয় আমাদের। সেই অর্থ চিপ আরআইভিএ ১২৮ তৈরিতে ব্যবহার করে এনভিডিয়া। এটি ডাইরেক্টএক্সের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল। নতুন চিপটি বাজারের অন্যান্য চিপের তুলনায় উচ্চতর গ্রাফিক রেজল্যুশনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল। ১৯৯৭ সালে চার মাসের মধ্যে এই চিপের ১০ লাখের বেশি ইউনিট বিক্রি হয়। এটিই তাদের ভাগ্য ঘুরিয়ে দেয়। পরের ঘটনাবলি এখন তো ইতিহাস।

আন্তর্জাতিক
গাজায় সেনা পাঠাচ্ছে মুসলিম ৩ দেশ

প্রায় দুই বছর ধরে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় চলা ইসরায়েলি আগ্রাসনে অবশেষে লাগাম টানতে সক্ষম হয়েছে বিশ্ব। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবিত যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে ইসরায়েল ও হামাস। ভূখণ্ডটিতে শান্তি আনার লক্ষ্যে জামিনদার (গ্যারান্টি) হিসেবে ইতোমধ্যে একটি ঘোষণাপত্রেও স্বাক্ষর করেছে যুক্তরাষ্ট্র, মিসর, কাতার ও তুরস্ক।
গাজা উপত্যকায় এখন স্থিতিশীলতা রক্ষায় গঠিতব্য আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বাহিনীতে কোন দেশগুলো অংশ নেবে, তা নিয়ে চলছে আলোচনা। এরই মধ্যে সামনে এসেছে তিনটি মুসলিম দেশের নাম। দেশগুলো হলো— পাকিস্তান, আজারবাইজান ও ইন্দোনেশিয়া।
বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোরব) দ্য পলিটিকোর এক প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে এ তথ্য।
প্রতিবেদনে এক সক্রিয় ও সাবেক মার্কিন প্রতিরক্ষা কর্মকর্তার বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, এই তিন দেশই এখন পর্যন্ত শীর্ষ প্রার্থী হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে, যদিও এখনও আনুষ্ঠানিক সম্মতি মিলেনি।
পলিটিকোর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইন্দোনেশিয়া এ পর্যন্ত একমাত্র দেশ হিসেবে প্রকাশ্যে নিজেদের সেনা প্রেরণের প্রস্তাব জানিয়েছে। তারা বলেছে, জাতিসংঘের অনুমোদনে শান্তিরক্ষী মিশনের আওতায় তারা প্রয়োজন হলে ২০ হাজার সেনা পাঠাতে প্রস্তুত। তবে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যে পরিকল্পনা উপস্থাপনা করেছেন, তাতে জাতিসংঘের কোনো সরাসরি ম্যান্ডেটের উল্লেখ নেই।
প্রতিবেদনে আরও জানানো হয়, কাতার, মিসর ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) সেনাও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সমন্বয়ে ইসরায়েলে একটি সামরিক ঘাঁটিতে অবস্থান করে যুদ্ধবিরতি পর্যবেক্ষণে ভূমিকা নিতে পারে।
তথ্যসূত্র না জানিয়েই পলিটিকো উল্লেখ করেছে, এসব বাহিনীর মূল কাজ হবে গাজায় সংঘাত রোধ, ত্রাণবাহনের নিরাপদ চলাচল নিশ্চিতকরণ এবং পর্যবেক্ষণ—যদিও চূড়ান্ত ম্যান্ডেট নির্ধারণ বাকি।
যুক্তরাষ্ট্র তৎকালীন পরিকল্পনায় হামাসকে নিরস্ত্রীকরণ ভবিষ্যৎ ধাপ হিসাবে দেখানো হয়েছে। এ প্রসঙ্গে ট্রাম্প বলেছিলেন, হামাসকে নিরস্ত্র করা হবে—ইচ্ছাকৃত বা বাধ্যতামূলকভাবে। পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তা বিষয়ক বিশ্লেষকরা বলছেন, এখন সুচারুভাবে ম্যান্ডেট নির্ধারণ, অংশগ্রহণকারী দেশ নির্বাচন ও দ্রুত প্রস্তুতি দেখানোই নীতি বাস্তবায়নের জন্য জরুরি।
সাবেক বাইডেন প্রশাসনের কর্মকর্তা ড্যানিয়েল শাপিরো পলিটিকোকে বলেছেন, ‘গতি দেখানো এবং অংশগ্রহণকারী দেশ ও ম্যান্ডেট চূড়ান্ত করা রাস্তাকে বিশ্বাসযোগ্য করে তুলবে।’
উল্লেখ্য, গাজার দুই বছরের সংঘাতের পর সম্প্রতি যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে। যুদ্ধবিরতি স্থিতিশীল রাখার জন্য বহুপাক্ষিক নিরাপত্তা ব্যবস্থার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করছেন বিশ্বনেতারা। আন্তর্জাতিক কূটনীতি ও বাস্তবতায় কোন দেশ কী ভূমিকা নেবে, তাদের ম্যান্ডেট কেমন হবে—এই প্রশ্নগুলো নিয়ে এখন চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের অপেক্ষা চলছে।
আন্তর্জাতিক
বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দামে নতুন রেকর্ড

বিশ্ববাজারে সোনার দাম নতুন রেকর্ড ছুঁয়েছে। বুধবার (১৫ অক্টোবর) আউন্সপ্রতি সোনার দাম ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ৪ হাজার ২০০ ডলার ছাড়িয়েছে। বাংলাদেশি মুদ্রায় এই দাম দাঁড়ায় প্রায় ৫ লাখ ৯ হাজার ৮১ টাকা। (১ আউন্স= প্রায় ২ দশমিক ৪৩ ভরি)।
যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের (ফেড) সুদের হার আরও কমতে পারে- এমন প্রত্যাশা ও বিশ্ব অর্থনীতির অনিশ্চয়তার মধ্যে নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় সোনার দামে এমন উত্থান হয়েছে বলে জানিয়েছে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
রয়টার্সের প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, বুধবার (১৫ অক্টোবর) বাংলাদেশ সময় বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে স্পট গোল্ডের দাম ছিল আউন্সপ্রতি ৪ হাজার ২০৩ দশমিক ৭৯ ডলার, যা আগের তুলনায় ১ দশমিক ৫ শতাংশ বেশি। এর আগে সেশনে রেকর্ড সর্বোচ্চ ৪ হাজার ২১৭ দশমিক ৯৫ ডলারে পৌঁছায় দামটি। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ডিসেম্বর ডেলিভারির জন্য সোনার দাম বেড়ে ৪ হাজার ২২০ দশমিক ২০ ডলারে পৌঁছেছে, যা ১ দশমিক ৪ শতাংশ বৃদ্ধি নির্দেশ করে।
স্পট গোল্ড হলো সোনার বর্তমান বাজার মূল্য, যা তাৎক্ষণিক কেনা-বেচার জন্য নির্ধারিত হয়।
এ বছর এখন পর্যন্ত সোনার দাম বেড়েছে প্রায় ৫৮ শতাংশ। বিশ্লেষকদের মতে, ভূরাজনৈতিক অস্থিরতা, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা, যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য সুদের হার কমানোর প্রক্রিয়া, কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর ধারাবাহিক সোনা ক্রয়, ডি-ডলারাইজেশনের ধারা এবং এক্সচেঞ্জ-ট্রেডেড ফান্ডে (ইটিএফ) শক্তিশালী প্রবাহ- সব মিলিয়ে এই উত্থানকে ত্বরান্বিত করেছে।
রূপা, প্লাটিনাম ও প্যালাডিয়ামের দামেও উত্থান
সোনার দাম বৃদ্ধির প্রভাবে রূপার দামও বেড়ে আউন্সপ্রতি ৫২ দশমিক ৬৪ ডলারে পৌঁছেছে, যা ২ দশমিক ৩ শতাংশ বৃদ্ধি। মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) এটি রেকর্ড ৫৩ দশমিক ৬০ ডলারে পৌঁছেছিল। স্পট বাজারে সরবরাহ কমে যাওয়ায় এই বৃদ্ধি আরও ত্বরান্বিত হয়েছে।
পাশাপাশি, প্লাটিনামের দাম বেড়ে আউন্সপ্রতি ১ হাজার ৬৫৭ দশমিক ০৫ ডলার ও প্যালাডিয়ামের দাম বেড়ে ১ হাজার ৫৫১ দশমিক ১৮ ডলারে পৌঁছেছে, যা যথাক্রমে ১ দশমিক ২ ও ১ দশমিক ৭ শতাংশ বৃদ্ধি নির্দেশ করে।
সোনার দাম ৫,০০০ ডলার ছোঁয়া অসম্ভব নয়
অ্যাকটিভট্রেডসের বিশ্লেষক রিকার্ডো ইভানজেলিস্তা বলেন, মার্কিন সরকারের চলমান শাটডাউন দীর্ঘায়িত হওয়া, যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের (ফেড) কর্মকর্তাদের আরও নরম মনোভাবের বক্তব্য ও যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্যে উত্তেজনা অব্যাহত থাকলে সোনার দামে আরও ঊর্ধ্বগতি দেখা দিতে পারে। মধ্য বা দীর্ঘমেয়াদে আউন্সপ্রতি সোনার দাম ৫ হাজার ডলার স্পর্শ করা মোটেই অসম্ভব নয়।
ডলার দুর্বল ও যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের (ফেড) সুদের হার কমানোর জল্পনা বাড়ছে
ফেডারেল রিজার্ভের চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েলের সাম্প্রতিক মন্তব্যের পর বুধবার (১৫ অক্টোবর) ডলার সূচক অন্যান্য প্রধান মুদ্রার বিপরীতে দুর্বল হয়। বাজার এখন প্রায় নিশ্চিত যে, অক্টোবর মাসে ২৫ বেসিস পয়েন্ট ও ডিসেম্বরেও আরও এক দফা সুদ কমানো হতে পারে, যার সম্ভাবনা যথাক্রমে ৯৬ ও ৯৩ শতাংশ হিসেবে ধরা হচ্ছে।
এদিকে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, ওয়াশিংটন চীনের সঙ্গে কিছু বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিন্ন করার বিষয়টি বিবেচনা করছে। এর আগে মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) দুই দেশ পরস্পরের ওপর পাল্টা বন্দর শুল্ক আরোপ করে।
শাটডাউনের প্রভাব পড়ছে বৈশ্বিক বাজারেও
যুক্তরাষ্ট্রে কেন্দ্রীয় সরকারের শাটডাউন অব্যাহত থাকায় সরকারি অর্থনৈতিক তথ্য প্রকাশ বন্ধ রয়েছে, যা শুধু দেশটির নয়, জাপানসহ অন্যান্য দেশের নীতিনির্ধারকদের জন্যও পরিস্থিতি জটিল করে তুলছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অস্থিরতা কিংবা মুদ্রাস্ফীতির ঝুঁকির সময়ে সোনা সবসময়ই নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে বিবেচিত হয়। আবার, কম সুদের হার পরিবেশেও এই ধাতুর দাম সাধারণত বাড়ে।
এএনজেড ব্যাংকের পণ্য বিশ্লেষক সোনি কুমারি বলেন, আমরা সোনার এই ঊর্ধ্বমুখী ধারা আরও কিছুদিন অব্যাহত থাকবে বলে আশা করছি।
প্রযুক্তিগত দিক থেকে অতিরিক্ত ক্রয়ের ইঙ্গিত
প্রযুক্তিগত বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, সোনার রিলেটিভ স্ট্রেংথ ইনডেক্স (আরএসআই) বর্তমানে ৮৫, যা বাজারে ‘অতিরিক্ত ক্রয়’-এর ইঙ্গিত দেয়।
আন্তর্জাতিক
যুদ্ধবিরতি উপেক্ষা করে গাজায় ইসরায়েলি হামলা, নিহত ৯

যুদ্ধবিরতি চুক্তিকে উপেক্ষা করে দখলদার ইসরায়েলি বাহিনী গাজা সিটির দুটি পৃথক স্থানে গুলি চালিয়ে আরও নয়জন ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে। মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) গাজা সিটি হয়ে নিজ নিজ বাড়িতে ফেরার পথে নিহতরা এই হামলার শিকার হন। খবর আলজাজিরার।
ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ এই মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে। নিহতদের গাজার আল আহলি ও আল নাসের হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাদের মৃত ঘোষণা করেন।
অন্যদিকে, ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) তাদের বিবৃতিতে দাবি করেছে, নিহতরা সেনা সদস্যদের খুব কাছাকাছি এসে পড়েছিলেন এবং সন্দেহভাজন হিসেবে তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়া হয়।
এর আগে, যুদ্ধবিরতি চুক্তির অংশ হিসেবে গত ১৩ অক্টোবর হামাস ২০ জন ইসরায়েলি জিম্মিকে জীবিত অবস্থায় মুক্তি দেয়। বিনিময়ে ইসরায়েল গুরুতর সাজাপ্রাপ্ত বন্দিসহ ১ হাজার ৭০০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দেয়। বন্দিদের স্বাগত জানাতে খান ইউনিসের নাসের হাসপাতালে বহু মানুষ জড়ো হয়েছিল।
সোমবার হামাস জিম্মিদের মুক্তি দেওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দুই বছর ধরে চলা গাজা যুদ্ধের সমাপ্তি ঘোষণা করেন।
উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের নেতৃত্বে হামলায় প্রায় ১ হাজার ২০০ ইসরায়েলি নিহত এবং ২৫১ জন জিম্মি হয়েছিলেন। এর জবাবে দুই বছরের ইসরায়েলি সামরিক অভিযানে গাজার প্রায় ৬৮ হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন এবং হাজারো মানুষ এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছেন বলে স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
আন্তর্জাতিক
মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশিসহ আরও ৩২ অভিবাসী আটক

মালয়েশিয়ার বাটু পাহাত জেলায় বিশেষ অভিযানে বাংলাদেশিসহ ৩২ অবৈধ অভিবাসীকে আটক করেছে ইমিগ্রেশন বিভাগ। অভিযানে স্থানীয় খাবারের দোকান, গাড়ি ধোয়ার কেন্দ্র এবং বিদেশি শ্রমিকদের বসবাসের এলাকাগুলোতে একাধিক স্থানে অভিযান চালানো হয়।
মঙ্গলবার (১৪ অক্টেবর) জোহর রাজ্যের ইমিগ্রেশন পরিচালক দাতুক মোহদ রুসদি মোহদ দারুস জানান, এ অভিযানটি ‘অপস সেলেরা’, ‘অপস মিনিয়াক’ ও ‘অপস সাপু’ নামের সমন্বিত অভিযানের অংশ হিসেবে পরিচালিত হয়।
গত এক সপ্তাহের ধারাবাহিক গোয়েন্দা নজরদারি এবং জনগণের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে অভিযানটি পরিচালিত হয়।
তিনি বলেন, অভিযানের সময় মোট ৯৬ জন বিদেশি নাগরিকের কাগজপত্র যাচাই করা হয়। এর মধ্যে ৩২ জনকে বিভিন্ন অভিবাসন আইন লঙ্ঘনের কারণে আটক করা হয়েছে।
অভিযানে আটক ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ইমিগ্রেশন আইন ১৯৫৯/৬৩ এবং ইমিগ্রেশন বিধিমালা ১৯৬৩ এর বিভিন্ন ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে। তাদের অপরাধের মধ্যে রয়েছে— বৈধ ভ্রমণ নথি বা অনুমতিপত্র না থাকা, অস্থায়ী কাজের অনুমতি অপব্যবহার, বৈধ অনুমতি ছাড়া কাজ করা এবং মেয়াদোত্তীর্ণ অবস্থায় মালয়েশিয়ায় অবস্থান করা।
আটকদের মধ্যে রয়েছেন- বাংলাদেশি নাগরিক ৫, ভারতীয় ৫, পাকিস্তানি ১, মিয়ানমারের ৪ জন পুরুষ ও ১ জন নারী, ইন্দোনেশিয়ার ৮ জন পুরুষ ও ৮ জন নারী। তাদের বয়স ১৯ থেকে ৫২ বছরের মধ্যে। তদন্ত ও পরবর্তী আইনি প্রক্রিয়ার জন্য সেতিয়া ট্রোপিকা ইমিগ্রেশন ডিপোতে রাখা হয়েছে।
অভিযানের সময় আরও চারজন স্থানীয় ব্যক্তিকে তদন্তে সহযোগিতার জন্য বোরাং ২৯ (সাক্ষী সমন) প্রদান করা হয়েছে।
দাতুক রুসদি জানিয়েছেন, অবৈধভাবে অবস্থানকারী ও অনুমতি ছাড়া কাজ করা বিদেশিদের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযান ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে।
আন্তর্জাতিক
তিন হাজার ৭০০ ফিলিস্তিনি কারাবন্দিকে মুক্তি দিলো ইসরায়েল

ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতি চুক্তির আওতায় ৩ হাজার ৭০০ ফিলিস্তিনি কারাবন্দিকে মুক্তি দিয়েছে ইসরায়েল। সোমবার এই কারাবন্দিদের মুক্তি দেওয়া হয়েছে বলে এক বিবৃতিতে জানিয়েছে ইসরায়েলের কেন্দ্রীয় কারাগার দপ্তরের জনসংযোগ বিভাগ।
দু’টি ব্যাচে মুক্তি দেওয়া হয়েছে এই কারাবন্দিদের। প্রথম ব্যাচটি ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীর অঞ্চলের রাজধানী রামাল্লার পশ্চিমাংশে ইসরায়েলের মালিকানাধীন ‘ওফের’ কারাগারের। এই ব্যাচে কারবন্দিদের সংখ্যা ছিল প্রায় ২ হাজার।
গাজা উপত্যকা নিয়ন্ত্রণকারী গোষ্ঠী হামাসের জনসংযোগ দপ্তর জানিয়েছে সোমবার স্থানীয় সময় দুপরের দিকে বেশ কয়েকটি বাসে চেপে ওফের কারাগার থেকে পশ্চিম তীরের বেইতুনিয়া শহরে এসে পৌঁছেছেন এই কারাবন্দিরা। কারাবন্দিদের জন্য বাস সরবরাহ করেছে আন্তর্জাতিক মানবিক সহায়তা সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল কমিটি অব রেডক্রস অ্যান্ড রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি (আইসিআরসি)।
এদিকে প্রথম ব্যাচটি পশ্চিম তীরে যাওয়ার কাছকাছি সময়ে যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজার খান ইউনিস শহরে এসে পৌঁছান দ্বিতীয় ব্যাচের ১ হাজার ৭ ১৮ ফিলিস্তিনি কারাবন্দি। দক্ষিণ ইসরায়েলের নাগেভ কারাগারে ছিলেন তারা।
ইসরায়েলের কেন্দ্রীয় কারা দপ্তরের বিবৃতিতে নাগেভ-এর কারাবন্দিদের সম্পর্কে বলা হয়েছে, “২০২৩ সালের অক্টোবরে গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযান শুরুর পর সেখান থেকে যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিল, তাদের মধ্যে থেকে ১ হাজার ৭১৮ জনকে মুক্তি দেওয়া হলো। এই কয়েদিদের মধ্যে ২৫০ জন যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি ছিলেন।
গাজায় যেসব কারাবন্দি এসে পৌঁছেছেন, তাদের সবাইকে প্রাথমিক মেডিকেল পরীক্ষা করেছে গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর খান ইউনিসের নাসার মেডিকেল কমপ্লেক্স।
কারাবন্দিদের স্বাগত জানাতে পশ্চিম তীরের বেইতুনিয়া ও গাজার খান ইউনিসে জড়ো হয়েছিলেন শত শত ফিলিস্তিনি।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের ভূখণ্ডে ঢুকে অতর্কিত হামলা চালায় প্রায় ১ হাজার হামাস যোদ্ধা। এলোপাতাড়ি গুলি চালিয়ে ১ হাজার ২০০ জনকে হত্যা এবং ২৫১ জনকে জিম্মি হিসেবে ধরে নিয়ে যায় যোদ্ধারা। ১৯৪৮ সালে প্রতিষ্ঠার পর ইসরায়েলের ইতিহাসে ৭ অক্টোবরের হামলা ছিল সবচেয়ে প্রাণঘাতী হামলা।
হামাসের হামলার জবাব দিতে এবং জিম্মিদের উদ্ধারে পরদিন ৮ অক্টোবর থেকেই গাজায় সামরিক অভিযান শুরু করে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)। ভয়াবহ সেই সামরিক অভিযানে ২ বছরে গাজায় নিহত হয়েছেন ৬৭ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি এবং আহত হয়েছেন প্রায় ১ লাখ ৭০ হাজার।
গত দুই বছরে বেশ কয়েকবার এই যুদ্ধ থামানোর চেষ্টা চলেছে। সেসব চেষ্টার অংশ হিসেবে কয়েক দফা অস্থায়ী যুদ্ধবিরতিও ঘোষণা করে ইসরায়েল। সেসব যুদ্ধবিরতির সময় বেশ কিছু জিম্মিকে মুক্তি দিয়েছিল হামাস। বিনিময়ে ইসরায়েলও কারাগার থেকে কয়েক শ ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দিয়েছে।
শেষ পর্যন্ত প্রায় ৪০ জন জিম্মি আটক ছিল হামাসের হাতে। তবে গোষ্ঠীটি আগেই জানিয়েছিল, কাগজে-কলমে ৪০ জন থাকলেও এই জিম্মিদের মধ্যে বর্তমানে জীবিত আছেন ২০ জন।
গত ২৯ সেপ্টেম্বর গাজায় যুদ্ধবিরতির জন্য নতুন একটি পরিকল্পনা প্রস্তাব আকারে পেশ করেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ইসরায়েল ও হামাস উভয়ে সেই পরিকল্পনায় সম্মতি জানানোর পর গত শুক্রবার থেকে যুদ্ধবিরতি শুরু হয় গাজায়।
যুদ্ধবিরতির তৃতীয় দিন সোমাবার অবশিষ্ট ২০ ইসরায়েলি জিম্মির সবাইকে মুক্তি দেয় হামাস। এই জিম্মিদের মুক্তির বিনিময়েই ৩ হাজার ৭ শতাধিক ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দিলো ইসরায়েল।
মুক্তি পাওয়া এসব কয়েদিদের মধ্যে মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত কোনো আসামি নেই। ইসরায়েল আগেই জানিয়েছিল, মৃত্যুদণ্ডের সাজাপ্রাপ্ত কোনো ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দেওয়া হবে না। সূত্র : আনাদোলু এজেন্সি।