অর্থনীতি
বাণিজ্য মেলায় উপচেপড়া ভিড়, একদিনে ২৬ লাখ টাকার টিকিট বিক্রি
চিরচেনা রূপে ফিরছে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা। চোখে পড়ার মতো দর্শনার্থীদের ভিড়। দৈনিক টিকিট বিক্রি হচ্ছে ৫ থেকে ৬ লাখ টাকার। মেলার প্রথম শুক্রবার টিকিট বিক্রি ২৬ লাখ টাকা ছাড়িয়েছে।
শনিবার (২৭ জানুয়ারি) সকাল থেকে মেলায় দর্শনার্থী সমাগম ছিল চোখে পড়ার মতো। ক্রেতাদের সমাগম দেখে ব্যবসায়ীদের আশা বাড়বে বেচাকেনা।
এমন ছুটির দিনে কেউ আসেন পরিবার নিয়ে, কেউবা বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে। ঘুরে দেখার পাশাপাশি কেনেন পছন্দের জিনিস। যাতায়াত ব্যবস্থা ও মেলার আয়োজনে খুশি সব বয়সী দর্শনার্থী।
এদিকে মেলার শুরুর পর প্রথম সাপ্তাহিক ছুটি শুক্রবারেও (২৬ জানুয়ারি) উপচেপড়া ভিড়। গেট ইজারাদার থেকে জানা গেছে, সাধারণত প্রতিদিন যেখানে টিকিট বিক্রি হয় ৫ থেকে ৬ লাখ টাকার, সেখানে মেলা শুরুর পর প্রথম শুক্রবার বিক্রি হয়েছে প্রায় ২৬ লাখ টাকার টিকিট।
শুরু থেকেই শীতের পোশাকে বেশি আগ্রহ ক্রেতাদের। তালিকায় পিছিয়ে ছিল ইলেকট্রনিকস ও ফার্নিচার পণ্য। ছুটির দিনে ভালো সাড়া মিলেছে এসব দোকানেও।
গত ২১ জানুয়ারি ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা-২০২৪ এর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এবারের বাণিজ্য মেলার প্রবেশ টিকিট মূল্য গতবারের চেয়ে ১০ টাকা বাড়িয়ে ৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর শিশুদের টিকিটের মূল্য ২০ থেকে বাড়িয়ে করা হয়েছে ৩০ টাকা। এবারের আয়োজনে বিভিন্ন ক্যাটাগরির প্যাভিলিয়ন ও স্টলের সংখ্যা ৩৫১টি। এছাড়া দুই হলে ১৭৪টি স্টল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে থাকছে রেস্তোরাঁ, মসজিদ, ব্যাংক, এটিএম বুথ, শিশু পার্ক এবং মা ও শিশু কেন্দ্র।
কাফি
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
সাতক্ষীরায় হলুদের দাম কেজিতে কমেছে ২০ টাকা
সাতক্ষীরার বাজারে দুই সপ্তাহের ব্যবধানে হলুদের দাম কমেছে কেজিতে ২০-২৫ টাকা। বাজারে সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় হলুদের দাম নিম্নমুখী হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় ব্যবসায়ী ও আড়তদাররা।
গতকাল সাতক্ষীরা সদরের সুলতানপুর বড় বাজার এলাকার বিভিন্ন দোকান ঘুরে এ তথ্য জানা গেছে।
সুলতানপুর বড় বাজারের মসলা বিক্রয় প্রতিষ্ঠান মেসার্স ঠাকুর স্টোরে গতকাল কেজিপ্রতি গুঁড়া হলুদ খুচরা বিক্রি হচ্ছিল ২৭৫-২৮০ টাকায়। সপ্তাহ দুয়েক আগে যার দাম ছিল কেজিপ্রতি ৩০০ টাকা। এ বিষয়ে মেসার্স ঠাকুর স্টোরের স্বত্বাধিকারী দুলাল চন্দ্র জানান, বাজারে গুঁড়া হলুদের সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় হলুদের দাম কমেছে।
একই বাজারের মেসার্স আবির ভাণ্ডারে গতকাল গুঁড়া হলুদ পাইকারি বিক্রি হচ্ছিল ২৫০ টাকা কেজি দরে, যা দুই-তিন সপ্তাহ আগে ছিল ২৮০-২৯০ টাকা। প্রতিষ্ঠানটির স্বত্বাধিকারী আব্দুল আজিজ জানান, ভোমরা বন্দরে পণ্যটির আমদানি বেড়ে যাওয়ায় পাইকারি দর কমেছে।
এমআই
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
হিলিতে দাম বাড়ল কাঁচা মরিচ-ডিমের
দিনাজপুরের হিলিতে দাম বেড়েছে কাঁচামরিচ ও ডিমের। সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতিকেজি কাঁচা মরিচের দাম ৪০ টাকা বেড়েছে আর প্রতি পিচ ডিমের দাম বেড়েছে ২ টাকা। কোরবানি ঈদের আগে কাঁচা মরিচের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় বিপাকে সাধারণ ক্রেতারা।
তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন তীব্র তাপদাহের কারণে কাঁচা মরিচের গাছ মরে যাওয়ায় উৎপাদন কমেছে আর চাহিদা বাড়ায় দাম বেড়েছে। আর সিন্ডিকেট করে বাড়ানো হয়েছে ডিমের দাম বলে দাবি খুচরা ব্যবসায়ীদের।
মঙ্গলবার (১৪ মে) দুপুরে হিলি বাজার ঘুরে দেখা যায়, সপ্তাহখানেক আগেও প্রতিকেজি কাঁচা মরিচ ৩০ থেকে ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা কেজি দরে। আর প্রতি পিচ ডিম ৯ টাকায় বিক্রি হলেও বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ১২ টাকা। দাম বাড়ায় নিয়মিত বাজার মনিটরিং এর দাবি সাধারণ ক্রেতাদের।
হাকিমপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অমিত রায় জানান, অসাধু ব্যবসায়ীরা যদি সিন্ডিকেট করে দাম বাড়ানোর চেষ্টা করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিয়মিত বাজার মনিটরিং করা হচ্ছে।
কাফি
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
দেশের আর্থিক হিসাবে ঘাটতি ৯২৫ কোটি ডলার
দেশে ডলার সংকটের কারণে বছরের বেশি সময় ধরে আমদানি পণ্যে সীমারেখা টানা হয়েছে। ফলে আমদানি কমে আসায় ডলার সংকটে স্বস্তি ফেরার কথা। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক কোনভাবেই যেন সংকট থেকে উত্তরণ হতে পারছে না। উল্টো বৈদেশিক লেনদেনের আর্থিক হিসাবে ঘাটতি বেড়েই চলেছে। চলতি অর্থবছরের মার্চ পর্যন্ত ৯ মাসে ঘাটতি হয়েছে ৯ দশমিক ২৫ বিলিয়ন ডলার। গত অর্থবছরের একই সময়ে যা ছিল মাত্র ২ দশমিক ৯৩ বিলিয়ন ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংক গতকাল সোমবার চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই-মার্চ সময়ের ব্যালান্স অব পেমেন্ট বা বৈদেশিক লেনদেন ভারসাম্যের হিসাব প্রকাশ করেছে।
এতে দেখা যাচ্ছে, প্রথম ৯ মাসে আমদানি ১৫ দশমিক ৪২ শতাংশ কমে ৪৫ দশমিক ৬২ বিলিয়ন ডলারে নেমেছে। একই সময়ে রপ্তানি ৩ দশমিক ৯৯ শতাংশ বেড়ে ৪০ দশমিক ৮৭ বিলিয়ন ডলার হয়েছে। এতে বাণিজ্য ঘাটতি কমে এখন ৪ দশমিক ৭৪ বিলিয়নে নেমেছে। গত অর্থবছরের একই সময়ে ঘাটতি ছিল ১৪ দশমিক ৬৩ বিলিয়ন ডলার। এছাড়া চলতি অর্থবছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এ ঘাটতি ছিল ৮ দশমিক ৪৬ বিলিয়ন ডলার। বেসরকারি খাতে বিদেশি ঋণ দ্রুত কমা, বিনিয়োগ প্রত্যাহারসহ বিভিন্ন কারণে এমন হচ্ছে। অবশ্য বাণিজ্য ঘাটতি কমেছে এবং চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত রয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কাগজে-কলমে আমদানি কমলেও প্রকৃতপক্ষে কতটা কমেছে তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। ডলার সংকটের এ সময়ে আমদানি নিয়ন্ত্রণের ফলে অনেকে এলসি ছাড়াই কিংবা আন্ডার ইনভয়েসিং বা দর কম দেখিয়ে পণ্য আনছেন। এক পণ্যের এলসি খুলে আরেক পণ্য আনার ঘটনাও রয়েছে। এসব অর্থ পরিশোধ হচ্ছে ব্যাংকিং চ্যানেলের বাইরে। ফলে হুন্ডি চাহিদা বেড়েছে। যে কারণে প্রবাসে শ্রমিক যাওয়া অনেক বাড়লেও সেভাবে রেমিট্যান্স বাড়েনি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত মার্চ পর্যন্ত বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স এসেছে ১৭ দশমিক শূন্য ৭ বিলিয়ন ডলার। আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় যা মাত্র ৬ দশমিক ৪৮ শতাংশ বেশি। অথচ শুধু গত বছর রেকর্ড ১৩ লাখের বেশি বাংলাদেশি শ্রমিক বিদেশে গেছেন। আমদানি ব্যাপক নিয়ন্ত্রণ এবং রপ্তানি ও রেমিট্যান্স বৃদ্ধির ফলে চলতি হিসাবের ঘাটতি থেকে এখন উদ্বৃত্ত হয়েছে ৫ দশমিক ৮০ বিলিয়ন ডলার। গত অর্থবছর মার্চ শেষে যেখানে ঘাটতি ছিল ৩ দশমিক ৩০ বিলিয়ন ডলার। সব মিলিয়ে সামগ্রিক লেনদেন ভারসাম্যে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৪ দশমিক ৭৫ বিলিয়ন ডলার। আগের মাস শেষে ঘাটতি ছিল ৪ দশমিক ৪৩ বিলিয়ন ডলার। গত অর্থবছরের একই সময়ে ঘাটতি ছিল অবশ্য ৮ দশমিক ৪৮ বিলিয়ন ডলার।
এমআই
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
বাজেটে উপকারভোগীর সংখ্যা বাড়ছে: অর্থ প্রতিমন্ত্রী
আসন্ন বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় উপকারভোগীর সংখ্যা বাড়বে। একইসঙ্গে এবার বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ সর্বাধিক অগ্রাধিকার পাচ্ছে বলে জানিয়েছেন অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান।
সোমবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে বাজেট বিষয়ক প্রধানমন্ত্রীর দিক নির্দেশনা সংক্রান্ত বিশেষ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভা শেষে প্রতিমন্ত্রী সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে গণমাধ্যমকে এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, নিম্ন আয়ের মানুষকে স্বস্তি দিতে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় উপকারভোগীর সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে। পাশাপাশি মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছি আমরা।
আগামী ৬ জুন ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য প্রায় ৮ লাখ কোটি টাকার বাজেট পেশ করবেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী।
আসন্ন বাজেট প্রণয়ণের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলেছেন। পাশাপাশি আওয়ামী লীগের এবারের নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়ন যেন বাজেটে সর্বোচ্চ গুরুত্ব পায়, সেই নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি।
এবারের বাজেটে শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং গ্রামীণ অবকাঠামোখাতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ থাকবে বলে তিনি জানান।
বাজেটে কর অবকাশ সুবিধা উঠিয়ে দেওয়া প্রসঙ্গে অর্থ প্রতিমন্ত্রী বলেন, যেসব খাত দীর্ঘদিন কর অবকাশ সুবিধা পেয়ে আসছে, সেসব খাতে কর অব্যাহতির সুবিধা উঠিয়ে দেওয়ার ব্যাপারটি সুনির্দিষ্টভাবে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কয়েকটি খাত গত ২০ থেকে ২৫ বছর যাবৎ কর অবকাশ সুবিধা পেয়ে আসছে। এই সুবিধার কারণে এখন তারা যথেষ্ট সক্ষমতা অর্জন করেছে এবং দেশের বাজার দখলে নিয়েছে। এমন অস্থায় তাদের রপ্তানির দিকে মনোযোগী হওয়ার কথা থাকলেও তারা সেটি করছে না।
তিনি মনে করেন, কর অবকাশের বাড়তি সুবিধা উঠিয়ে নিলে এসব খাতের উদ্যোক্তারা রপ্তানির প্রতি মনোযোগী হবেন।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, কর অবকাশ সুবিধা উঠিয়ে দিলে, এসব খাত বাড়তি সুবিধা হারাবে ঠিকই, কিন্তু সেটি রপ্তানির মাধ্যমে পুষিয়ে নিতে পারবে। টেকসই অর্থনীতির স্বার্থে আমাদের সেদিকে যাওয়ার প্রয়োজন।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভ এখন ১৩ বিলিয়ন
দুই বছর ধরে দেশে ডলার সংকট চলছে। বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হলেও কাটেনি সংকট। ডলার সংকটের সঙ্গে রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্স প্রবাহ কম থাকায় দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ধারাবাহিকভাবে কমছে। এর মধ্যে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) আমদানি বিল বাবদ ১৬৩ কোটি ডলার পরিশোধ করেছে বাংলাদেশ। ফলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে এক দশকের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমেছে। একই সঙ্গে ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভের পরিমাণ এখন ১৩ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে।
২০২১ সালের আগস্টে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ সর্বোচ্চ উঠেছিল ৪ হাজার ৮০০ কোটি ডলার (৪৮ বিলিয়ন)। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, সবশেষ এটি কমে দুই হাজার ৩৭২ কোটি মার্কিন ডলারে (২৩ দশমিক ৭২ বিলিয়ন) নেমেছে। আর আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাবপদ্ধতি বিপিএম-৬ অনুযায়ী রিজার্ভ এখন এক হাজার ৮৩০ কোটি ডলারে (১৮ দশমিক ৩০ বিলিয়ন)।
এর আগে ২০১৪ সালের শুরুর দিকে রিজার্ভ ১৮ বিলিয়ন ডলারের ঘর ছাড়ানোর পর এর নিচে কখনো নামেনি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নিট বা প্রকৃত রিজার্ভের আরেকটি হিসাব রয়েছে, যা শুধু আইএমএফকে দেয়। প্রকাশ করে না। সেখানে আইএমএফের এসডিআর খাতে থাকা ডলার, ব্যাংকগুলোর বৈদেশিক মুদ্রা ক্লিয়ারিং হিসাবে থাকা বৈদেশিক মুদ্রা এবং আকুর বিল বাদ দিয়ে ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভের হিসাব করা হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সেই হিসাবে দেশের ব্যয়যোগ্য প্রকৃত রিজার্ভ এখন ১৩ দশমিক ২২ বিলিয়ন ডলার। প্রতি মাসে ৫ বিলিয়ন ডলার হিসেবে এ রিজার্ভ দিয়ে তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো যাবে না। সাধারণত একটি দেশের ন্যূনতম ৩ মাসের আমদানি খরচের সমান রিজার্ভ থাকতে হয়। সেই মানদণ্ডে বাংলাদেশ এখন শেষ প্রান্তে রয়েছে। একটি দেশের অর্থনীতির অন্যতম সূচক হলো বৈদেশিক মুদ্রার মজুত বা রিজার্ভ।
কীভাবে তৈরি হয় রিজার্ভ
রেমিট্যান্স, রপ্তানি আয়, বিদেশি বিনিয়োগ, বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থার ঋণ থেকে যে ডলার পাওয়া যায় তা দিয়ে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ তৈরি হয়। আবার আমদানি ব্যয়, ঋণের সুদ বা কিস্তি পরিশোধ, বিদেশি কর্মীদের বেতন-ভাতা, পর্যটক বা শিক্ষার্থীদের পড়াশোনাসহ বিভিন্ন খাতে যে ব্যয় হয়, তার মাধ্যমে বিদেশি মুদ্রা চলে যায়। এভাবে আয় ও ব্যয়ের পর যে ডলার থেকে যায় সেটাই রিজার্ভে যোগ হয়। আর বেশি খরচ হলে রিজার্ভ কমে যায়।
আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি ও বিভিন্ন পণ্যের দাম বেশি থাকায় আমদানি ব্যয় কমেনি। এছাড়া করোনার পর বৈশ্বিক বাণিজ্য আগের অবস্থায় ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। এ অবস্থায় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর গত বছরের মার্চ থেকে দেশে ডলার-সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে; যা এখনো অব্যাহত আছে। এ সংকট দিন দিন বাড়ছে।
বাজারে ‘স্থিতিশীলতা’ আনতে রিজার্ভ থেকে নিয়মিত ডলার বিক্রি করে যাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ফলে ধারাবাহিকভাবে কমছে অর্থনীতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর এ সূচকটি।
২০২৩ সালের ৩০ জানুয়ারি আইএমএফ বাংলাদেশের জন্য ৪৭০ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণ কর্মসূচি অনুমোদন করে। এ সময় কিছু নীতি সংস্কারসহ বেশ কিছু শর্ত দেওয়া হয়। ঋণ কর্মসূচি শুরুর পর দুই কিস্তিতে ১০০ কোটি ডলারের বেশি পেয়েছে বাংলাদেশ। তৃতীয় কিস্তিতে ৭০ কোটি ডলার পাওয়ার কথা আগামী মাসে। তার আগে পর্যালোচনা বৈঠক করতে ঢাকায় এসেছিল আইএমএফের ১০ সদস্যের প্রতিনিধি দল।
আইএমএফ বাংলাদেশকে যে ঋণ দিয়েছে, তার অন্যতম শর্ত তাদের লক্ষ্য অনুযায়ী প্রকৃত রিজার্ভ সংরক্ষণ করা। সেই অনুযায়ী গত মার্চ মাস শেষে বাংলাদেশ ব্যাংকে প্রকৃত রিজার্ভ থাকার কথা এক হাজার ৯২৬ কোটি মার্কিন ডলার। কিন্তু ওই সময় প্রকৃত রিজার্ভ ছিল এক হাজার ৫০০ কোটি ডলারের কম। এছাড়া আগামী জুন নাগাদ লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া ছিল দুই হাজার ১০ কোটি ডলার। তবে লক্ষ্য পূরণে বার বার ব্যর্থ হওয়ায় বাংলাদেশের আবেদনের প্রেক্ষিতে রিজার্ভ সংরক্ষণের ক্ষেত্রে শর্ত কিছুটা শিথিল করেছে আইএমএফ।
এ বিষয় আইএমএফ বুধবার সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে জানায়, জুনভিত্তিক রিজার্ভের লক্ষ্যমাত্রা ২০ দশমিক ১০ বিলিয়ন ডলার থেকে কমিয়ে ১৪ দশমিক ৭৬ বিলিয়ন ডলারে নামিয়ে আনা হয়েছে। অর্থাৎ আগামী জুনের মধ্যে প্রকৃত রিজার্ভ ১৪ দশমিক ৭৬ বিলিয়ন রাখতে হবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, গত ২০১৩-১৪ অর্থবছরে রিজার্ভ ছিল ২১ দশমিক ৫০ বিলিয়ন ডলার। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ছিল ২৫ দশমিক ০২ বিলিয়ন ডলার। ২০১৫-১৬ তে ৩০ দশমিক ৩৫ বিলিয়ন ডলার। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৩৩ দশমিক ৬৭ বিলিয়ন ডলার। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে রিজার্ভ ছিল ৩২ দশমিক ৯৪ বিলিয়ন ডলার। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ছিল ৩২ দশমিক ৭১ বিলিয়ন ডলার। ২০১৯-২০ অর্থবছরে ছিল ৩৬ দশমিক ৩ বিলিয়ন। ২০২০-২১ অর্থবছরে রিজার্ভ ছিল ৪৬ দশমিক ৩৯ বিলিয়ন ডলার। ২০২১-২২ অর্থবছরে ৪১ দশমিক ৮২ বিলিয়ন ডলার এবং সব শেষ ২০২২-২৩ অর্থবছরে রিজার্ভ কমে দাঁড়ায় ৩১ বিলিয়ন ডলার।
রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি
বাজারে ডলার সংকট কাটাতে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চয় বা রিজার্ভ থেকে ধারাবাহিক ডলার বিক্রি করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। চলতি অর্থবছরে ১০ মাসে আমদানি দায় মেটাতে বিভিন্ন ব্যাংকের কাছে প্রায় ১২ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর আগে ২০২২-২৩ অর্থবছরে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিভিন্ন ব্যাংকের কাছে ১৩ দশমিক ৫৮ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছিল। আর আগের অর্থবছরে (২০২১-২২) ৭ দশমিক ৬২ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছিল।