আন্তর্জাতিক
তিন মাসের সর্বোচ্চ তাপীয় কয়লা আমদানি চীন ও ভারতের

মার্চে সমুদ্রপথে চীন ও ভারতের তাপীয় কয়লা আমদানি বেড়ে তিন মাসের সর্বোচ্চে পৌঁছেছে। স্থানীয় বিদ্যুৎ খাতে ঊর্ধ্বমুখী চাহিদা মেটাতে বিশ্বের শীর্ষ ক্রেতা দেশ দুটি আন্তর্জাতিক বাজারে কম দামের সুবিধা নিয়েছে। কম দামের কারণেই আমদানিতে এমন উল্লম্ফন দেখা দিয়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
পণ্যবাজারবিশ্লেষক প্রতিষ্ঠান কেপলারের দেয়া তথ্য বলছে, চীন বিশ্বের শীর্ষ কয়লা উত্তোলক ও আমদানিকারক। মার্চে দেশটি সমুদ্রপথে ২ কোটি ৯৭ লাখ টন তাপীয় কয়লা আমদানি করে, যা ফেব্রুয়ারিতে আমদানীকৃত ২ কোটি ৩০ লাখ ৩০ হাজার টনের চেয়ে বেশি। পাশাপাশি গত বছরের মার্চের তুলনায়ও আমদানি বেড়েছে।
চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) চীন ৮ কোটি ৬ লাখ ৪০ হাজার টন তাপীয় কয়লা আমদানি করে। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় আমদানি ১৭ দশমিক ২ শতাংশ বেড়েছে। চীনের সরকারি তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, দেশটিতে জলবিদ্যুৎ উৎপাদন কমে যাওয়ায় বিদ্যুৎ খাতে কয়লার চাহিদা বাড়ছে।
চীনের স্থানীয় বাজারে বর্তমানে অনেক বেশি দামেই তাপীয় কয়লা বিক্রি হচ্ছে। সোমবার প্রতি টনের মূল্য দাঁড়ায় ৮২৫ ইউয়ান (১১৪ ডলার)। বিপরীতে বিশ্ববাজারে তাপীয় কয়লার দাম অব্যাহত কমছে। ফলে স্থানীয়ভাবে উত্তোলন হওয়ার কয়লার বদলে আমদানীকৃত কয়লার ওপর বেশি নির্ভর করছে বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো।
আন্তর্জাতিক জ্বালানি সংস্থা (আইইএ) জানায়, চলতি বছর চীনে জলবিদ্যুৎ উৎপাদন ঘুরে দাঁড়াতে পারে। পাশাপাশি সৌর ও বায়ুবিদ্যুৎ উৎপাদনও বাড়ছে। ফলে এ সময় দেশটিতে কয়লার ব্যবহার কমবে। ২০২৬ সাল পর্যন্ত এ ধারা অব্যাহত থাকতে পারে।
আরগাস মিডিয়ার দেয়া তথ্য বলছে, প্রতি কেজিতে ৫ হাজার ৫০০ কিলোক্যালোরিসমৃদ্ধ অস্ট্রেলিয়ান কয়লা ২৮ মার্চ শেষ হওয়া সপ্তাহে টনপ্রতি ৮৭ ডলার ৩৭ সেন্টে রফতানি হয়েছে। ওই মাসের শুরুর দিকে এ কয়লার দাম ছিল টনপ্রতি ৯৬ ডলার ৬৬ সেন্ট।
অন্যদিকে প্রতি কেজিতে ৪ হাজার ২০০ কিলোক্যালোরিসমৃদ্ধ ইন্দোনেশিয়ান কয়লার মূল্য ৮ মার্চ শেষ হওয়া সপ্তাহে ৫৫ ডলার ৭০ সেন্টে নেমে আসে, এর আগের সপ্তাহে যা ছিল টনপ্রতি ৫৮ ডলার ১৭ সেন্ট।
কেপলার জানায়, বিদ্যুৎ খাতে ব্যাপক চাহিদা থাকায় মার্চে ভারত ১ কোটি ৫২ লাখ ১০ হাজার টন তাপীয় কয়লা আমদানি করে। ফেব্রুয়ারিতে আমদানির পরিমাণ ছিল ১ কোটি ৪০ লাখ ৯০ হাজার টন। এছাড়া গত বছরের মার্চে আমদানি হয়েছিল ১ কোটি ৩৪ লাখ ১০ হাজার টন। প্রথম প্রান্তিকে আমদানি করা হয় ৪ কোটি ২৭ লাখ ৯০ হাজার টন, গত বছরের একই সময়ের তুলনায় আমদানি ২৩ দশমিক ৮ শতাংশ বেড়েছে।
আন্তর্জাতিক বাজারে বর্তমানে কয়লার সরবরাহ চাহিদার চেয়েও বেশি। তার ওপর এবার শীতের তীব্রতা কম থাকায় হিটিং জ্বালানি হিসেবে এটির ব্যবহার কমেছে। উত্তর গোলার্ধের দেশগুলোয় শীত শেষ হয়ে এলে যা আরো কমে যেতে পারে। বাড়তি সরবরাহের বিপরীতে ব্যবহার কমায় চলতি বছরে তাপীয় কয়লার বৈশ্বিক দাম নিম্নমুখী থাকবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

আন্তর্জাতিক
বাংলাদেশিসহ সব বিদেশি কর্মীর বড় সুখবর দিলো সৌদি

বিদেশি কর্মীদের জন্য যুগান্তকারী এক পদক্ষেপ নিয়েছে সৌদি আরব। আনুষ্ঠানিকভাবে নিজেদের ৫০ বছরের পুরোনো কাফালা (পৃষ্ঠপোষকতা) ব্যবস্থা বাতিল করে দিয়েছে দেশটির সরকার। বহুদিন ধরেই এই প্রথার কারণে বিদেশি কর্মীদের ভাগ্য নির্ভর করত নির্দিষ্ট নিয়োগকর্তার ওপর। দাসপ্রথার মতো এ ব্যবস্থার কারণে জীবিকার তাগিদে সৌদি আরবে গিয়ে অমানবিক শোষণের শিকার হতে হয়েছে অগণিত শ্রমিককে।
২০২৫ সালের জুনে ঘোষিত এই বড় সংস্কারের ফলে প্রায় ১ কোটি ৩০ লাখ বিদেশি শ্রমিক সরাসরি উপকৃত হবেন, যাদের বেশিরভাগই দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া থেকে সৌদিতে কাজ করতে গেছেন। খবর টাইমস অফ ইন্ডিয়ার।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, নতুন এই সংস্কারের মাধ্যমে প্রবাসীরা এখন থেকে কাজ পরিবর্তন, দেশ ত্যাগ বা ভিসা নবায়নের ক্ষেত্রে আগের মতো কঠোর নিয়ন্ত্রণের মুখে পড়বেন না। কাফালা ব্যবস্থার পরিবর্তে নতুন এক চুক্তিভিত্তিক কর্মসংস্থান মডেল চালু করেছে সৌদি সরকার, যা প্রবাসী শ্রমিকদের জন্য এক নতুন অধ্যায় সূচনা করেছে।
সৌদি প্রেস এজেন্সি (এসপিএ)-এর তথ্যমতে, নতুন এই ব্যবস্থায় অভিবাসী কর্মীরা এখন থেকে তাদের বর্তমান নিয়োগকর্তার অনুমতি ছাড়াই চাকরি পরিবর্তন, এক্সিট ভিসা ছাড়াই দেশ ত্যাগ, এবং আগে কাফালা কাঠামোর অধীনে প্রাপ্য আইনি সুরক্ষা পাওয়ার সুযোগ পাবেন।
এই সংস্কার মূলত সৌদি আরবের ‘ভিশন ২০৩০’ উদ্যোগের অংশ, যার লক্ষ্য দেশের অর্থনীতিকে আধুনিক করা এবং বিদেশি শ্রমিকদের অধিকার ও কল্যাণ নিশ্চিত করা।
নতুন এই পদক্ষেপকে একটি ‘ঐতিহাসিক মাইলফলক’ হিসেবে দেখছে সৌদি সরকার। মানবাধিকার সংগঠনগুলোও একে সৌদির শ্রম ইতিহাসে ‘একটি নতুন অধ্যায়’ বলে অভিহিত করেছে। তবে সংস্থাগুলোর মতে, প্রকৃত পরিবর্তন আনতে হলে এই সংস্কারের বাস্তবায়ন ও তদারকি আরও শক্তিশালী করতে হবে।
আরবি ‘কাফালা’ শব্দটির অর্থ ‘স্পন্সরশিপ’। ১৯৫০-এর দশকে উপসাগরীয় অঞ্চলে গড়ে ওঠে এই আধুনিক আইনি কাঠামো। মূলত, সৌদি আরবসহ উপসাগরীয় সহযোগিতা পরিষদভুক্ত (জিসিসি) দেশগুলোতে এই কাফালা ব্যবস্থা চালু ছিল।
এই ব্যবস্থার অধীনে অভিবাসী শ্রমিকদের আইনি মর্যাদা সরাসরি তাদের নিয়োগকর্তা বা ‘কাফিল’-এর সঙ্গে যুক্ত থাকত। ফলে নিয়োগকর্তা শ্রমিকের কাজ পরিবর্তন, দেশ ত্যাগ, এমনকি আইনি সহায়তা নেওয়ার বিষয়েও পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ রাখতেন। এর ফলে দীর্ঘদিন ধরে বহু শ্রমিককে শোষণ, নির্যাতন ও অধিকারহীনতার মুখে পড়তে হয়েছে। নিয়োগকর্তার অনুমতি ছাড়া চাকরি পরিবর্তন বা আইনি সুরক্ষা পাওয়ার কোনও সুযোগই পেতেন না বিদেশি শ্রমিকরা।
আন্তর্জাতিক
পর্তুগালে বোরকা ও নিকাব নিষিদ্ধের বিল পাস

পর্তুগালে জনসমক্ষে বোরকা ও নিকাব পরা নিষিদ্ধের একটি আইন পাস করা হয়েছে। সংসদে এ বিলটি দিয়েছে ডানপন্থি চেগা দল। সমালোচকদের মতে, এটি মূলত মুসলিম নারীদের লক্ষ্য করে করা হয়েছে।
বিল অনুযায়ী, কেউ ‘ধর্মীয় বা লিঙ্গজনিত কারণে’ মুখ ঢেকে রাখতে পারবে না। তবে বিমান, উপাসনালয় ও কূটনৈতিক স্থাপনায় মুখ ঢেকে রাখা যাবে।
আইন ভাঙলে ২০০ থেকে ৪,০০০ ইউরো (বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ২৩ হাজার থেকে ৪ লাখ ৬০ হাজার) পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে।
এখনও আইনটি কার্যকর হয়নি। প্রেসিডেন্ট মার্সেলো রেবেলো দে সোসা এটি সই করবেন কি না, তা ঠিক হয়নি। তিনি এটি অনুমোদন বা বাতিলও করতে পারেন।
যদি তিনি অনুমোদন দেন, তবে পর্তুগাল ইউরোপের অন্যান্য দেশ—ফ্রান্স, বেলজিয়াম, অস্ট্রিয়া ও নেদারল্যান্ডসের মতো—বোরকা নিষিদ্ধ দেশগুলোর তালিকায় যুক্ত হবে।
যদিও পর্তুগালে খুব কমসংখ্যক নারী বোরকা বা নিকাব পরেন, তবু বিষয়টি নিয়ে দেশে বিতর্ক শুরু হয়েছে।
চেগা দলের দাবি, মুখ ঢেকে রাখা নারীদের স্বাধীনতা ও মর্যাদাকে ক্ষুণ্ন করে।
কিন্তু বামপন্থি এমপি পেদ্রো দেলগাদো আলভেস বলেছেন, এই বিল আসলে বিদেশি ও মুসলিম নারীদের লক্ষ্য করে আনা হয়েছে। তথ্যসূত্র : দ্য গার্ডিয়ান
আন্তর্জাতিক
চীনের ওপর ১০০ শতাংশ শুল্ক টেকসই নয়: ট্রাম্প

চীনের ওপর আরোপিত ১০০ শতাংশ শুল্ককে দীর্ঘমেয়াদে অটেকসই বলে মন্তব্য করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে তিনি দাবি করেন, বেইজিংয়ের আচরণের কারণেই এমন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছেন। ট্রাম্প আরও জানান, সবকিছু সত্ত্বেও আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে দক্ষিণ কোরিয়ায় চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন তিনি।
শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) ফক্স বিজনেস নেটওয়ার্ককে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেন, “এটা টেকসই নয়, কিন্তু সংখ্যাটি এটাই। তারা আমাকে এটা করতে বাধ্য করেছে।”
এর আগে, গত সপ্তাহে ট্রাম্প প্রশাসন চীনা পণ্যের ওপর ১০০ শতাংশ আমদানি শুল্ক ঘোষণা করে এবং ১ নভেম্বর থেকে ‘সব ধরনের গুরুত্বপূর্ণ সফটওয়্যার’ রপ্তানিতে নতুন নিয়ন্ত্রণ আরোপের সিদ্ধান্ত নেয়। চীনের পক্ষ থেকে বিরল ধাতুর (রেয়ার আর্থ এলিমেন্টস) রপ্তানি সীমিত করার প্রতিক্রিয়াতেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়। প্রযুক্তি নির্মাণে অপরিহার্য এসব ধাতুর বাজারে চীনের প্রভাব প্রায় একচেটিয়া।
যদিও বাণিজ্য ইস্যুতে কঠোর অবস্থান নিয়েছেন, তবুও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের প্রতি ব্যক্তিগতভাবে প্রশংসা জানিয়েছেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, “চীনের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক ঠিক হয়ে যাবে, তবে চুক্তি হতে হবে ন্যায্য।” হোয়াইট হাউসে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠকে যাওয়ার সময়ও ট্রাম্প জানান, “চীন কথা বলতে চায়, আমরাও কথা বলতে চাই।”
দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য উত্তেজনা ও আকস্মিক শুল্ক আরোপের কারণে টালমাটাল হয়ে ওঠে ওয়াল স্ট্রিট। তবে শি জিনপিংয়ের সঙ্গে সম্ভাব্য বৈঠকের ইঙ্গিতের পর কিছুটা ঘুরে দাঁড়ায় শেয়ারবাজার। সূত্র: রয়টার্স।
আন্তর্জাতিক
আফগানিস্তানে পাকিস্তানের ভয়ঙ্কর হামলা, নিহত ৪০

অস্থায়ী যুদ্ধবিরতির মেয়াদ শেষ হতে না হতেই আবারও আফগানিস্তানে বড় ধরনের হামলা চালিয়েছে পাকিস্তানের বিমান বাহিনী। দেশটির কান্দাহার প্রদেশের স্পিন বোলদাক শহরে চালানো এ হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন ৪০ জন। সেইসঙ্গে আহত হয়েছেন আরও অন্তত ১৭০ জন।
শনিবার (১৮ অক্টোবর) আফগান সংবাদমাধ্যম তোলো নিউজের এক প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে এ তথ্য।
স্পিন বোলদাক শহরটির অবস্থান আফগানিস্তান-পাকিস্তান সীমান্তের কাছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, হতাহতদের সবাই বেসমারিক এবং একটি বড় অংশই নারী ও শিশু।
গত ৯ অক্টোবর আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে হামলা চালিয়ে তেহরিক-ই তালেবানের (টিটিপি) শীর্ষ নেতা নূর ওয়ালি মেহসুদকে হত্যা করে পাকিস্তানের বিমান বাহিনী। হামলার দু’দিন পর ১১ অক্টোবর আফগানিস্তানের সঙ্গে লাগোয়া খাইবার পাখতুনখোয়ার সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে তীব্র সংঘাত শুরু হয় পাক-আফগান সেনাবাহিনীর মধ্যে।
চার দিন সংঘাত চলার পর ১৫ অক্টোবর ৪৮ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতি হয় পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যে। সেই যুদ্ধবিরতির মেয়াদ শেষ হয়েছে আজ শুক্রবার স্থানীয় সময় দুপুর ১ টায়। কিন্তু, যুদ্ধবিরতি শেষ হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই হামলা চালায় পাকিস্তান।
হামলার শিকার এবং আহত হাজি বাহরাম নামের এক ব্যক্তি তোলো নিউজকে বলেন, আমি ইতিহাসে এমন অবিচার দেখিনি। একটি দেশ, যারা নিজেদের মুসলিম বলে দাবি করে- তারা এখানে নারী, শিশু ও বেসামরিক লোকজনের ওপরে হামলা করল।
বিমান বাহিনীর অভিযানের পাশপাশি স্পিন বোলদাক শহরের নোকলি, হাজি হাসান কেলাই, ওয়ার্দাক, কুচিয়ান, শহীদ ও শোরবাকে একের পর এক আর্টিলারি গোলা নিক্ষেপ করেছে পাকিস্তানি স্থলবাহিনী। এতে বেশ কিছু বাড়িঘর, দোকান ধ্বংস হয়ে গেছে। হতাহতও হয়েছেন অনেকে।
প্রসঙ্গত, আফগানিস্তানের সঙ্গে পাকিস্তানের সাম্প্রতিক সংঘাতের মূলে রয়েছে পাকিস্তানের তালেবানপন্থি সশস্ত্র রাজনৈতিক গোষ্ঠী তেহরিক-ই তালেবান (টিটিপি)। বেশ কয়েক বছর আগে পাকিস্তানের সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ হওয়া এই গোষ্ঠীটি বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠছে দেশটির জন্য। আফগাস্তানের সীমান্তবর্তী পাকিস্তানি প্রদেশ খাইবার পাখতুনখোয়া টিটিপির প্রধান ঘাঁটি। ২০২১ সালে আফগানিস্তানে তালেবান সরকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর গোষ্ঠীটি আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।
পাকিস্তানের অভিযোগ, টিটিপির পেছনে প্রকাশ্য মদদ আছে আফগানিস্তানের তালেবান সরকারের। তবে, কাবুল বরাবরই এ অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।
আন্তর্জাতিক
জলবায়ু পরিবর্তনে দারিদ্র্যে ভুগছে ১১০ কোটি মানুষ: জাতিসংঘের প্রতিবেদন

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে বিশ্বের ১০৯টি দেশের ৬৩০ কোটি মানুষের মধ্যে ১১০ কোটি মানুষ (প্রায় ১৮ শতাংশ) চরম বহুমাত্রিক দারিদ্র্যে ভুগছে। সরাসরি জলবায়ু ঝুঁকিতে রয়েছে বিশ্বের প্রায় ৯০ কোটি মানুষ যা মোট দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ৮০ শতাংশ। শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যৌথভাবে জাতিসংঘের উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) প্রকাশিত প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে।
পোভার্টি হিউম্যান ডেভলপমেন্ট ইনিশিয়েটি (ওপিএইচআই)-এর যৌথ বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৮৮ কোটি ৭ লাখ মানুষ অন্তত একটি জলবায়ু সমস্যা সরাসরি সম্মুখীন । এর মধ্যে ৬০ কোটি ৮ লাখ চরম তাপে, ৫৭ কোটি ৭ লাখ দূষণে, ৪৬ কোটি ৫ লাখ বন্যায়, এবং ২০ কোটি ৭ লাখ খরায় ভুগছে। প্রায় ৬৫ কোটির বেশি মানুষ অন্তত দুই ধরনের ঝুঁকিতে, ৩০ কোটির বেশি মানুষ তিন বা চার ধরনের বিপদের সম্মুখীন এবং ১ কোটি ১ লাখ মানুষ এক বছরে সব চারটি বিপদই অনুভব করেছে।
এছাড়াও প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দারিদ্র্য ও জলবায়ু বিপদের যুগপৎ উপস্থিতি এখন বৈশ্বিক সংকটে পরিণত হয়েছে। এই পরিমাপের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে শিশু মৃত্যুহার, বাসস্থান, স্যানিটেশন, বিদ্যুৎ, এবং শিক্ষার মতো মৌলিক সূচক। এদের অর্ধেকেরও বেশি অপ্রাপ্তবয়স্ক শিশু।
জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) ভারপ্রাপ্ত প্রশাসক হাওলিয়াং শু বলেন, খরা, বন্যা, তাপপ্রবাহ বা বায়ুদূষণের মতো জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব থেকে কেউই পুরোপুরি নিরাপদ নয়। কিন্তু সবচেয়ে দরিদ্র জনগোষ্ঠীই এর সবচেয়ে কঠিন প্রভাবের শিকার। নভেম্বর মাসে ব্রাজিলে অনুষ্ঠিতব্য আসন্ন COP30 জলবায়ু সম্মেলন বিশ্বনেতাদের জন্য একটি সুযোগ, যেখানে জলবায়ু পদক্ষেপকে দারিদ্র্য মোকাবিলার পদক্ষেপ হিসেবেও বিবেচনা করতে হবে।
প্রতিবেদনে উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে বলিভিয়ার সান্তা ক্রুজ দে লা সিয়েরা শহরের বাইরে বসবাসরত গুয়ারানি আদিবাসী সম্প্রদায়ের সদস্য রিকার্ডোকে।
রিকার্ডো দিনমজুর হিসেবে অল্প আয়ে ১৮ জনের সঙ্গে একটি ছোট ঘরে বসবাস করেন। স্ত্রী, তিন সন্তান, বাবা-মা এবং আরও কয়েকজন আত্মীয় নিয়ে একটি ঘরে তাদের বসবাস। বাড়িতে মাত্র একটি বাথরুম, কাঠ ও কয়লায় চালিত রান্নাঘর, এবং কোনো শিশুই স্কুলে যায় না।
প্রতিবেদনে বলা হয়, সাহারার দক্ষিণাঞ্চলীয় আফ্রিকা ও দক্ষিণ এশিয়ায় মানুষ দারিদ্র্যের পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। চরম তাপমাত্রা, খরা, বন্যা ও বায়ুদূষণ—এই চারটি জলবায়ু ঝুঁকির কারণে এই অঞ্চলের দরিদ্র জনগোষ্ঠী বিশেষভাবে ঝুঁকিতে রয়েছে।
ইউএনডিপি প্রতিবেদনটি উপসংহারে বলেছে, একাধিক ঝুঁকির মোকাবিলা করতে হলে মানুষ ও পৃথিবী উভয়কেই অগ্রাধিকার দিতে হবে এবং স্বীকৃতি থেকে সবচেয়ে জরুরি হচ্ছে পদক্ষেপে রূপান্তর।