আন্তর্জাতিক
বাংলাদেশে এলপিজি নিয়ে আসা জাহাজের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা
ইরানের পেট্রোলিয়াম ও তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি) রপ্তানিতে সহায়তা করার অভিযোগে ৫০টিরও বেশি প্রতিষ্ঠান, ব্যক্তি এবং জাহাজের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। নতুন এই নিষেধাজ্ঞার তালিকায় আছে বাংলাদেশে এলপিজি নিয়ে আসা আরব আমিরাতভিত্তিক একটি নেটওয়ার্ক এবং জাহাজও।
মার্কিন কর্তৃপক্ষের দাবি, আন্তর্জাতিক বিধি লঙ্ঘন করে আরব আমিরাতভিত্তিক এই নেটওয়ার্কটি বাংলাদেশের পাশাপাশি শ্রীলঙ্কায়ও জ্বালানি পণ্য সরবরাহ করেছিল।
মার্কিন অর্থ বিভাগীয় সংস্থা অফিস অব ফরেন অ্যাসেটস কন্ট্রোল (ওএফএসি) বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) এই নতুন পদক্ষেপ ঘোষণা করে।
ওএফএসি’র দাবি, ইরানের ‘আর্থিক প্রবাহ কমানো’ এবং যুক্তরাষ্ট্রের কর্তৃক সন্ত্রাসী হিসেবে মনোনীত গোষ্ঠীগুলোর অর্থায়ন বন্ধ করার নীতির অংশ হিসেবে এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, নিষেধাজ্ঞার আওতায় আসা জাহাজ ও প্রতিষ্ঠানগুলো ইরানের এলপিজির দুটি চালান বাংলাদেশে সরবরাহ করেছে। এছাড়া, বর্তমানে চলমান অন্যান্য পরিবহন কার্যক্রমের বিষয়টিও জানানো হয়েছে। বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, এই চক্রের সহায়তায় বিলিয়ন ডলারের পেট্রোলিয়াম ও পেট্রোলিয়ামজাত পণ্য রপ্তানি করছে ইরান, যা দেশটির সরকারের জন্য একটি বড় রাজস্ব উৎস।
মার্কিন ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেসেন্ট জানান, এই নতুন নিষেধাজ্ঞাগুলো ইরানের ‘জ্বালানি রপ্তানি কার্যক্রমকে দুর্বল করার’ উদ্দেশ্যে নেওয়া হয়েছে। এটি ওয়াশিংটনের ‘সর্বোচ্চ অর্থনৈতিক চাপ প্রয়োগের নীতির একটি ধারাবাহিক সিদ্ধান্ত।
নতুনভাবে নিষেধাজ্ঞার তালিকায় যুক্ত হয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাতভিত্তিক দুটি প্রতিষ্ঠান—স্লোগাল এনার্জি ডিএমসিসি এবং মারকান হোয়াইট ট্রেডিং ক্রুড অয়েল অ্যাবরোড কোম্পানি এলএলসি। এই দুটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ২০২৪ সাল থেকে দক্ষিণ এশিয়ায় ইরানি এলপিজি চালান পাঠানোর অভিযোগ রয়েছে। ওএফএসি জানিয়েছে, এদের মাধ্যমে একাধিক চালান বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কায় পৌঁছেছে।
মার্কিন অর্থ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের প্রথম দিকে পানামার পতাকাবাহী জাহাজ ‘গ্যাস ডিওর’ ১৭ হাজার টনেরও বেশি ইরানি এলপিজি সরবরাহ করেছিল বাংলাদেশে।
এছাড়া, ২০২৪ সালের শেষ দিকে কোমোরোসের পতাকাবাহী জাহাজ ‘আদা’ (আগের নাম ক্যাপ্টেন নিকোলাস) বাংলাদেশের কিছু আমদানিকারকের কাছে ইরানি এলপিজি পৌঁছে দেয়। সংযুক্ত আরব আমিরাতভিত্তিক সি শিপ ম্যানেজমেন্ট এলএলসি-এর মালিকানাধীন এই জাহাজটিকে সর্বশেষ মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।
‘বিএলপিজি’ সোফিয়া নামের একটি ছোট জাহাজে এলপিজি খালাসের সময় গত বছরের ১৩ অক্টোবর চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে ‘ক্যাপ্টেন নিকোলাসে’ আগুন লাগে। প্রায় ৩৪ হাজার টন এলপিজি বহনকারী এই জাহাজটি আইনি জটিলতার কারণে কয়েক মাস আটকে থাকার পর চলতি বছরের ৫ সেপ্টেম্বর পুনরায় গ্যাস স্থানান্তরের অনুমতি পায়। ভেসেল-ট্র্যাকিং তথ্য বলছে, জাহাজটি এখনও চট্টগ্রাম বন্দরে নোঙর করা আছে।
যদিও নিষেধাজ্ঞার তালিকায় কোনো বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান বা সরকারি সংস্থার নাম নেই, তবে এই চালানের উল্লেখের কারণে বাংলাদেশকে এখন যুক্তরাষ্ট্রের নজরদারির আওতায় দেখা হচ্ছে। মার্কিন আইন অনুসারে, নিষিদ্ধ লেনদেনে জড়িত বিদেশি কোম্পানিগুলো ‘সেকেন্ডারি স্যাংশন’-এর ঝুঁকিতে থাকে, যার ফলে যুক্তরাষ্ট্রের আর্থিক ব্যবস্থায় প্রবেশাধিকার হারানোর মতো কঠিন পরিণতি হতে পারে।
আন্তর্জাতিক
বিশ্বসেরা তরুণ পরমাণু বিজ্ঞানীর তালিকায় বাংলাদেশের বাহাউদ্দিন
বিশ্বসেরা তরুণ পরমাণু বিজ্ঞানীর তালিকায় ঠাঁই পেয়েছেন বাংলাদেশের সৈয়দ বাহাউদ্দিন আলম। সম্প্রতি আমেরিকান নিউক্লিয়ার সোসাইটির (এএনএস) ‘নিউক্লিয়ার নিউজ ৪০ আন্ডার ৪০’ তালিকায় প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে জায়গা করে নিয়েছেন তিনি।
আমেরিকান নিউক্লিয়ার সোসাইটি ১৯৫৪ সাল থেকে পারমাণবিক বিজ্ঞানের শান্তিপূর্ণ ব্যবহারকে এগিয়ে নিয়ে যেতে কাজ করছে। ২০২৪ সাল থেকে বিশ্বজুড়ে ৪০ বছরের কম বয়সী শীর্ষ ৪০ জন পরমাণু বিজ্ঞানীদের স্বীকৃতি স্বরূপ ‘নিউক্লিয়ার নিউজ ৪০ আন্ডার ৪০’ তালিকা প্রকাশ করছে সংস্থাটি।
এ বছর বাংলাদেশের জন্য গৌরব বহন করে এনেছেন চট্টগ্রামের উদীয়মান বিজ্ঞানী সৈয়দ বাহাউদ্দিন আলম। ৩৮ বছর বয়সী এই তরুণ বিজ্ঞানীকে ‘ডিজিটাল টুইনস’ (ডিজিটাল যমজ প্রযুক্তি), সাইবার নিরাপত্তা এবং উন্নত এআই মডেলস-এর মাধ্যমে নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ক্ষেত্রে অগ্রগামী ভূমিকার জন্য এই সম্মান দেওয়া হয়েছে।
বর্তমানে ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবানা-চ্যাম্পেইন ক্যাম্পাসে নিউক্লিয়ার, প্লাজমা ও রেডিওলজিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত সৈয়দ বাহাউদ্দিন আলম। তিনি নিউক্লিয়ার রিঅ্যাক্টরের নিরাপত্তা ও দক্ষতা বাড়ানোর উপায় নিয়ে গবেষণা করে থাকেন।
তার কাজের মাধ্যমে নিউক্লিয়ার শিল্পে এআই-চালিত সিমুলেশন এবং সাইবার হুমকি প্রতিরোধের নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হচ্ছে, যা বিশ্বব্যাপী শক্তি খাতে বিপ্লব ঘটাতে পারে। এএনএস-এর অফিসিয়াল ঘোষণায় বলা হয়েছে, ‘বাহাউদ্দিন আলম পারমাণবিক ক্ষেত্রের এক উদীয়মান তারকা, যার গবেষণা ভবিষ্যতের নিরাপদ ও টেকসই শক্তি সমাধানের চাবিকাঠি।’
চট্টগ্রামের স্থানীয় একটি পরিবারে জন্ম নেওয়া বাহাউদ্দিন আলম তার শিক্ষাজীবন শুরু করেন বাংলাদেশেই। পরে যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি অর্জন করেন। বর্তমানে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়টির ‘সিলেক্টেড লিডারস’ প্রোগ্রামের অন্তর্ভুক্ত ~১০০ জনের একজন।
ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয়ের এনপিআরই বিভাগের এক পোস্টে বলা হয়েছে, আমরা গর্বিত যে সৈয়দ বাহাউদ্দিন আলমকে এ বছরের নিউক্লিয়ার নিউজ ‘৪০ আন্ডার ৪০’ তালিকায় নির্বাচিত করা হয়েছে।
একই তালিকায় ইয়াসির আরাফাত নামে আরেকজন বিজ্ঞানীও স্থান পেয়েছেন, যিনি মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থী হিসেবে বাংলাদেশে বসবাস করতেন। বর্তমানে তিনি আলো অ্যাটমিকসের সহ-প্রতিষ্ঠাতা এবং সিটিও হিসেবে কাজ করছেন।
এমকে
আন্তর্জাতিক
পাকিস্তানের ভয়াবহ বিমান হামলায় আফগানিস্তানে নিহত ১০
আফগানিস্তানের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে মধ্যরাতে ভয়াবহ বিমান হামলা চালিয়েছে পাকিস্তান এমন অভিযোগ করেছে দেশটির ক্ষমতাসীন তালেবান সরকার। হামলায় অন্তত ১০ জন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে ৯ জনই শিশু এবং অন্যজন নারী।
মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) তালেবান সরকারের বরাত দিয়ে এই তথ্য জানিয়েছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
তালেবান মুখপাত্র জবিউল্লাহ মুজাহিদ জানান, খোস্ত প্রদেশের গোরবুজ জেলার একটি বাড়িতে রাতের অন্ধকারে এই বোমা বর্ষণ করে পাকিস্তানি বাহিনী। সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্সে দেওয়া পোস্টে তিনি দাবি করেন, স্থানীয় বাসিন্দা ওয়ালিয়াত খান কাজি মিরের ছেলে তার বাড়িটি সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস হয়ে গেছে।
মুজাহিদ আরও বলেন, হামলায় পাঁচ ছেলে ও চার মেয়ে শিশুসহ মোট ৯ জন শিশু এবং এক নারী নিহত হয়েছেন।
তিনি অভিযোগ করেন, শুধু খোস্তেই নয় উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় কুনার এবং পূর্বাঞ্চলীয় পাকতিকা প্রদেশেও একাধিক বিমান হামলা হয়েছে। এসব হামলায় আরও অন্তত চারজন বেসামরিক নাগরিক আহত হয়েছেন।
পাকিস্তানের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। পরিস্থিতি নিয়ে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক
বাংলাদেশে পাঠানোর জন্য ১ লাখ টন চাল কিনতে চায় পাকিস্তান
বাংলাদেশে সরবরাহের জন্য দেশের অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে ১ লাখ টন চাল কেনার লক্ষ্যে একটি টেন্ডার আহ্বান করেছে পাকিস্তানের ট্রেডিং করপোরেশন (টিসিপি)। সোমবার এই দরপত্রের বিষয়টি প্রকাশ্যে এসেছে বলে দেশটির সংবাদমাধ্যম ডনের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, দশকের পর দশক ধরে উত্তেজনাপূর্ণ সম্পর্কের পর ২০২৪ সালের আগস্টে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পতনে পাকিস্তান ও বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উন্নতি এবং যোগাযোগ বৃদ্ধি পেয়েছে।
বাংলাদেশে রপ্তানির জন্য অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে চাল কেনার এই দরপত্র জমা দেওয়ার শেষ সময় আগামী ২৮ নভেম্বর সকাল সাড়ে ১১টা নির্ধারণ করেছে টিসিপি। ২০ নভেম্বর প্রকাশিত টিসিপির ওই দরপত্রের নথি ডন দেখেছে বলে জানিয়েছে।
দরপত্রের প্রস্তাবকারী কোম্পানি, পার্টনারশিপ ও একক মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ‘‘আলাদা সিল করা দরপত্র’’ আহ্বান করেছে টিসিপি। ১ লাখ টন লম্বা দানার সাদা চাল (আইআরআরআই-৬) কিনবে প্রতিষ্ঠানটি। পরে তা প্যাকেটজাত করে করাচি বন্দর দিয়ে বাংলাদেশে রপ্তানি করা হবে।
দরপত্র জমা দেওয়ার পর ২১ কার্যদিবস পর্যন্ত মূল্যপ্রস্তাব বৈধ থাকতে হবে। চুক্তি হওয়ার ৪৫ দিনের মধ্যে চাল জাহাজীকরণের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।
দরপত্রে সর্বনিম্ন ২৫ হাজার টন কিংবা তার সমপরিমাণ চালের প্রস্তাব জমা দিতে হবে। সর্বোচ্চ পরিমাণ ১ লাখ টনও প্রস্তাব করা যাবে।
দরপত্র অনুযায়ী, চাল অবশ্যই পাকিস্তানে উৎপাদিত সর্বশেষ মৌসুমের ফসল এবং মানুষের ভক্ষণ উপযোগী হতে হবে। এতে কোনো দুর্গন্ধ, ছত্রাক, বিষাক্ত আগাছার বীজ, পোকামাকড় কিংবা সংক্রমণের চিহ্ন থাকা চলবে না।
ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্যবসায়ীরা পাকিস্তানি চালকে বাংলাদেশের আমদানি সরবরাহ ব্যবস্থায় অন্তর্ভুক্ত করার প্রচেষ্টা হিসেবে দেখছেন এই দরপত্রকে। বাজার বিশ্লেষকদের মতে, বাংলাদেশ সম্প্রতি যে চাল কিনেছে, তার কিছু অংশে ভারতের উৎপাদিত চাল ব্যবহৃত হতে পারে।
সোমবার আরও একটি চাল আমদানির দরপত্র ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে স্থানীয় বাজারের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে ধারাবাহিকভাবে চাল আমদানির দরপত্র আহ্বান করছে ঢাকা।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে পাকিস্তান ও বাংলাদেশ সরকারি পর্যায়ে সরাসরি বাণিজ্য শুরু করে। ওই সময় ৫০ হাজার টন চাল আমদানির মাধ্যমে এই বাণিজ্যের শুরু হয়।
গত মাসে অনুষ্ঠিত নবম যৌথ অর্থনৈতিক কমিশন (জেইসি) সভায় বাংলাদেশকে চীন ও মধ্য-এশীয় দেশসহ আঞ্চলিক বাণিজ্যের প্রবেশদ্বার হিসেবে করাচি পোর্ট ট্রাস্টকে ব্যবহার করার প্রস্তাব দেয় পাকিস্তান।
• চাল রপ্তানি
২০২৬ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে পাকিস্তানের চাল রপ্তানি ২৮ শতাংশ কমে গেছে; যা নীতিগত ও আইনি বাধা নিয়ে খাতটির মধ্যে উদ্বেগ তৈরি করেছে।
পাকিস্তান রাইস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের এক কর্মকর্তা এই কমতির কারণ হিসেবে ভারতের ২০২৪ সালে চাল রপ্তানি পুনরায় চালু, বাসমতিতে ন্যূনতম রপ্তানি মূল্য (এমইপি) প্রত্যাহার এবং চাল রপ্তানিতে শূন্য হারের নীতি চালুর কথা জানিয়েছেন।
তবে সরাসরি মূল্যযুদ্ধে না গিয়ে পাকিস্তানি রপ্তানিকারকরা বাজার ধরে রাখায়, বিশ্ববাজারে ভারতের পুনরায় প্রবেশ গত বছরের অক্টোবর থেকে ২০২৫ সালের মার্চ পর্যন্ত পাকিস্তানের চাল বাণিজ্যে তেমন কোনো বড় প্রভাব ফেলতে পারেনি।
এছাড়া ২০২৪ সালের আগস্টে যুক্তরাষ্ট্র ভারতীয় বিভিন্ন পণ্যসহ বাসমতি চালের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করায় পাকিস্তানের জন্য মার্কিন বাজারে রপ্তানি বৃদ্ধির সুযোগ তৈরি হয়েছে। ভলজা গ্লোবাল ট্রেড প্ল্যাটফর্মের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে ২০২৪ সালের অক্টোবর পর্যন্ত পাকিস্তানের মোট বাসমতি রপ্তানির ২৪ শতাংশই গেছে যুক্তরাষ্ট্রে। সূত্র: ডন।
এমকে
আন্তর্জাতিক
নাগরিকত্ব পাওয়া সহজ করছে কানাডা
কানাডা সরকার দেশের নাগরিকত্ব আইনের ইতিহাসে এক যুগান্তকারী পরিবর্তনের পথে হাঁটছে। নতুন আইনটি বিল সি-৩ নামে পরিচিত। এটি কার্যকর হলে বিদেশে জন্ম নেওয়া হাজার হাজার কানাডীয় বংশোদ্ভূত পরিবার ব্যাপকভাবে উপকৃত হবে। এর মাধ্যমে দীর্ঘদিনের নাগরিকত্ব সংক্রান্ত জটিলতার সমাধান হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
কানাডার অভিবাসন মন্ত্রী লেনা মেটলেজ ডিয়াব এই আইন সংস্কারের গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, ‘বিল সি-৩ আমাদের নাগরিকত্ব আইনের দীর্ঘদিনের সমস্যাগুলো সমাধান করবে এবং বিদেশে জন্ম নেওয়া বা দত্তক নেওয়া শিশুদের পরিবারের জন্য ন্যায্যতা আনবে। এই সংস্কার পুরোনো আইনের কারণে বাদ পড়া মানুষকে নাগরিকত্ব দেবে। সেই সঙ্গে ভবিষ্যতের জন্য সুস্পষ্ট নিয়ম তৈরি করবে, যা আধুনিক পরিবারগুলোর জীবনযাত্রাকে বিবেচনা করে। এই পরিবর্তন কানাডার নাগরিকত্বকে শক্তিশালী ও সুরক্ষিত করবে।’
অভিবাসন, শরণার্থী ও নাগরিকত্ব কানাডা (আইআরসিসি) ব্যাখ্যা করেছে, ২০০৯ সালে চালু হওয়া ‘ফার্স্ট-জেনারেশন লিমিট’ একটি বড় সমস্যা তৈরি করেছিল। এই বিধিনিষেধ অনুযায়ী, বিদেশে জন্ম নেওয়া বা দত্তক নেওয়া কোনো শিশু স্বয়ংক্রিয়ভাবে কানাডার নাগরিকত্ব পাবে না, যদি তার মা-বাবা কানাডার বাইরে জন্ম নেন বা তাদের দত্তক নেওয়া হয়ে থাকে। তবে বাবা-মায়ের মধ্যে অন্তত একজন যদি কানাডায় জন্মগ্রহণ করে থাকেন বা স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় নাগরিকত্ব পেয়ে থাকেন, তখন ওই সন্তান সাধারণ নিয়ম অনুযায়ী নাগরিকত্ব পেতে পারে।
২০২৩ সালের ডিসেম্বরে অন্টারিও সুপিরিয়র কোর্ট এই বিধানকে অসাংবিধানিক ঘোষণা করে। ফেডারেল সরকার আদালতের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানায় এবং কোনো আপিল না করার সিদ্ধান্ত নেয়। এই বিধিনিষেধের কারণে নাগরিকত্ব থেকে বঞ্চিত হওয়া মানুষ, যারা ভুল করে নিজেদের নাগরিক ভাবতেন, তাদের প্রায়শই ‘হারানো কানাডিয়ান’ নামে উল্লেখ করা হতো।
বিল সি-৩ পরিবর্তনের মাধ্যমে পুরোনো বিধিনিষেধের শিকার হওয়া ‘হারানো কানাডীয়দের’ নাগরিকত্ব পুনরুদ্ধার করা হচ্ছে। পাশাপাশি, বিদেশে জন্ম নেওয়া শিশুদের নাগরিকত্ব দেওয়ার জন্য একটি নতুন ও গুরুত্বপূর্ণ বিধান যুক্ত করা হয়েছে, যার নাম ‘সাবস্ট্যানশিয়াল কানেকশন টেস্ট’।
এই নতুন নিয়ম অনুযায়ী, কোনো কানাডীয় বংশোদ্ভূত অভিভাবক যাঁরা বিদেশে জন্মেছেন বা যাদের দত্তক নেওয়া হয়েছিল, তাঁদের বিদেশে জন্ম নেওয়া বা দত্তক নেওয়া সন্তান নাগরিকত্ব পাবেন। তবে, শর্ত হলো ওই কানাডীয় অভিভাবককে সন্তানের জন্ম বা দত্তক নেওয়ার আগে কানাডায় কমপক্ষে ১ হাজার ৯৫ দিন (মোট তিন বছর) অবস্থান করার প্রমাণ দেখাতে হবে।
এই কঠোরতা বা মানদণ্ডটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশের নাগরিকত্ব নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে তৈরি করা হয়েছে।
আইনটি কার্যকর করার জন্য আদালত ২০২৬ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত সময়সীমা বাড়িয়েছে, যাতে আইআরসিসি প্রস্তুত হতে পারে। কানাডিয়ান ইমিগ্রেশন লইয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন এই সংস্কারকে স্বাগত জানিয়েছে। তাদের মতে, প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নাগরিকত্বের আবেদনের সংখ্যা দ্রুত বাড়বে।
প্রসঙ্গত, ১৯৪৬ সালের কানাডিয়ান নাগরিকত্ব আইনের আওতায় অসংখ্য মানুষ নাগরিকত্ব হারিয়েছে বা নাগরিকত্বের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছে। ২০০৯ এবং ২০১৫ সালের সংশোধনীতে বেশির ভাগের নাগরিকত্ব পুনরুদ্ধার করা হলেও, ২০০৯ সালের ‘ফার্স্ট-জেনারেশন লিমিট’ বিদেশে জন্ম নেওয়া কানাডীয় বংশোদ্ভূত পিতামাতার ক্ষেত্রে সমস্যার সৃষ্টি করে রেখেছিল। নতুন বিল সি-৩ সেই পুরোনো জটিলতার অবসান ঘটাবে বলে মনে করা হচ্ছে।
অর্থনীতি
বিশ্ববাজারে কমলো স্বর্ণের দাম
বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম আরও কিছুটা কমেছে। গোল্ড প্রাইস ডট অর্গের তথ্যানুসারে, যুক্তরাষ্ট্রের সময় আজ সোমবার আউন্সপ্রতি স্বর্ণের দাম ৩৩ ডলার কমেছে। বিভিন্ন বৈশ্বিক সংস্থা বলছে, আগামী কিছুদিন স্বর্ণের দাম নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে ওঠানামা করবে। দাম একেবারে কমে যাবে না, আবার অনেকটা বেড়েও যাবে না।
চলতি বছর স্বর্ণের দাম একটানা অনেক দিন বাড়ার পর সম্প্রতি কিছুটা কমেছে। তা সত্ত্বেও সোনার দাম এখন পর্যন্ত আউন্সপ্রতি ৪ হাজার ডলারের ওপরে। নিউইয়র্কের সময় অনুযায়ী, রোববার রাত ১১টার সময় স্বর্ণের দাম ছিল আউন্সপ্রতি ৪ হাজার ৫০ ডলার ৪৩ সেন্ট।
তবে বেশ কিছু কারণে সোনার দাম সীমিত পরিসরের মধ্যে ওঠানামা করবে বলে মনে করছেন বাজার–বিশ্লেষকেরা। তাঁরা বেশ কিছু অর্থনৈতিক সূচকের দিকে তাকিয়ে আছেন। প্রথমত, যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন শাটডাউন থাকার কারণে কী পরিস্থিতি হয়, সেদিকে নজর রাখছেন তাঁরা। দেশটির মূল্যস্ফীতি ও জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার কী দাঁড়ায়, সেদিকে বিনিয়োগকারীদের তীক্ষ্ণ নজর। সেই সঙ্গে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়, অর্থাৎ ফেডারেল রিজার্ভ নীতি সুদহার হ্রাস-বৃদ্ধি করে কি না, সেদিকেও বিনিয়োগকারীদের দৃষ্টি আছে। ডিসেম্বর মাসে ফেডের মুদ্রানীতি কমিটির বৈঠক। ফলে এই সময়ে মধ্যে, অর্থাৎ আগামী এক মাস সোনার দাম খুব বেশি ওঠানামা করবে না।
ফেডারেল রিজার্ভ নীতি সুদহারের বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত নেয়, তার জন্য আরও কিছু সূচক গুরুত্বপূর্ণ। সেগুলোর মধ্যে আছে সাপ্তাহিক কর্মসংস্থানের হার, ভোক্তাদের আত্মবিশ্বাস, উৎপাদনবহির্ভূত খাতের পিএমআই। বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, ডিসেম্বর মাসে ফেডের নীতি সুদহার ঘোষণার আগে সোনার দাম স্থিতিশীল থাকবে।
সোনার দাম হ্রাস-বৃদ্ধির ক্ষেত্রে আরেকটি যে বিষয় গুরুত্বপূর্ণ তা হলো, ডলারের বিনিময় হার। সোনার দাম আপাতত স্থিতিশীল থাকার সম্ভাবনা বেশি হলেও একটি কারণে দাম হঠাৎ কমে যেতে পারে। সেটা হলো, ডলারের বিনিময় হার বেড়ে যাওয়া। দ্য অ্যালয় মার্কেটের প্রধান নির্বাহী ব্র্যান্ডন অ্যাভেরসানো বলেন, সবচেয়ে বড় ঝুঁকি হলো মার্কিন ডলারের আবার শক্তিশালী হয়ে ওঠা। এতে সোনার চাহিদা কমে যেতে পারে। বিনিয়োগকারীরা তখন মার্কিন ডলারভিত্তিক বন্ডের দিকে ঝুঁকে পড়তে পারেন। সেটা হলে সোনার দাম আবার কমে যেতে পারে। খবর ইনভেস্টোপিডিয়ার
এ বছর সোনার দাম ৪০ শতাংশের বেশি বেড়েছে। ইতিহাসে এই প্রথম আউন্সপ্রতি দাম ৪ হাজার ডলার ছাড়িয়ে গেছে। অ্যাভেরসানোর মতে, অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণেই মূলত সোনার দামের এই উল্লম্ফন। পাশাপাশি মার্কিন ডলারের বিনিময় হার নিয়ে উদ্বেগ এবং অন্যান্য মুদ্রার দুর্বলতার কারণেও সোনার এই দাম বৃদ্ধি বলে তিনি মনে করেন। বিনিয়োগকারী থেকে শুরু করে বিভিন্ন দেশের সরকার—সবাই মনে করে, অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা বাড়লে অন্তত সোনার দাম অক্ষুণ্ন থাকবে। উদাহরণ হিসেবে ২০০৮ সালের আর্থিক সংকটের কথা বলা যায়, যখন প্রায় সব সম্পদের দাম কমলেও (সরকারি বন্ড ছাড়া) সোনার দাম বরং ৪ দশমিক ৩ শতাংশ বেড়েছিল।
সোনার বাড়তি চাহিদাও দাম বাড়ার আরেকটি বড় কারণ। অ্যাভেরসানো বলেন, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অস্থিরতার সময়ে শুধু সাধারণ মানুষই নিশ্চিত সম্পদ হিসেবে সোনা কেনে না, কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোও একই কাজ করে। তিনি উল্লেখ করেন, বিশ্বের বিভিন্ন কেন্দ্রীয় ব্যাংক এখন রেকর্ড পরিমাণ সোনা কিনছে। উদাহরণ হিসেবে চীন ও যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি কয়েক বছরে নজিরবিহীন পরিমাণে সোনা কিনেছে। ফলে বাজারে সোনার সরবরাহ কমে যাচ্ছে। সে কারণে দাম বেড়ে যাচ্ছে।
বিশ্ববাজারে সোনার দাম বাড়লে দেশের বাজারে বাড়ানো হয়। আবার বিশ্ববাজারে দাম কমলে দেশের বাজারে কমানো হয়।



