আন্তর্জাতিক
বাংলাদেশে এলপিজি নিয়ে আসা জাহাজের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা

ইরানের পেট্রোলিয়াম ও তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি) রপ্তানিতে সহায়তা করার অভিযোগে ৫০টিরও বেশি প্রতিষ্ঠান, ব্যক্তি এবং জাহাজের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। নতুন এই নিষেধাজ্ঞার তালিকায় আছে বাংলাদেশে এলপিজি নিয়ে আসা আরব আমিরাতভিত্তিক একটি নেটওয়ার্ক এবং জাহাজও।
মার্কিন কর্তৃপক্ষের দাবি, আন্তর্জাতিক বিধি লঙ্ঘন করে আরব আমিরাতভিত্তিক এই নেটওয়ার্কটি বাংলাদেশের পাশাপাশি শ্রীলঙ্কায়ও জ্বালানি পণ্য সরবরাহ করেছিল।
মার্কিন অর্থ বিভাগীয় সংস্থা অফিস অব ফরেন অ্যাসেটস কন্ট্রোল (ওএফএসি) বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) এই নতুন পদক্ষেপ ঘোষণা করে।
ওএফএসি’র দাবি, ইরানের ‘আর্থিক প্রবাহ কমানো’ এবং যুক্তরাষ্ট্রের কর্তৃক সন্ত্রাসী হিসেবে মনোনীত গোষ্ঠীগুলোর অর্থায়ন বন্ধ করার নীতির অংশ হিসেবে এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, নিষেধাজ্ঞার আওতায় আসা জাহাজ ও প্রতিষ্ঠানগুলো ইরানের এলপিজির দুটি চালান বাংলাদেশে সরবরাহ করেছে। এছাড়া, বর্তমানে চলমান অন্যান্য পরিবহন কার্যক্রমের বিষয়টিও জানানো হয়েছে। বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, এই চক্রের সহায়তায় বিলিয়ন ডলারের পেট্রোলিয়াম ও পেট্রোলিয়ামজাত পণ্য রপ্তানি করছে ইরান, যা দেশটির সরকারের জন্য একটি বড় রাজস্ব উৎস।
মার্কিন ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেসেন্ট জানান, এই নতুন নিষেধাজ্ঞাগুলো ইরানের ‘জ্বালানি রপ্তানি কার্যক্রমকে দুর্বল করার’ উদ্দেশ্যে নেওয়া হয়েছে। এটি ওয়াশিংটনের ‘সর্বোচ্চ অর্থনৈতিক চাপ প্রয়োগের নীতির একটি ধারাবাহিক সিদ্ধান্ত।
নতুনভাবে নিষেধাজ্ঞার তালিকায় যুক্ত হয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাতভিত্তিক দুটি প্রতিষ্ঠান—স্লোগাল এনার্জি ডিএমসিসি এবং মারকান হোয়াইট ট্রেডিং ক্রুড অয়েল অ্যাবরোড কোম্পানি এলএলসি। এই দুটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ২০২৪ সাল থেকে দক্ষিণ এশিয়ায় ইরানি এলপিজি চালান পাঠানোর অভিযোগ রয়েছে। ওএফএসি জানিয়েছে, এদের মাধ্যমে একাধিক চালান বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কায় পৌঁছেছে।
মার্কিন অর্থ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের প্রথম দিকে পানামার পতাকাবাহী জাহাজ ‘গ্যাস ডিওর’ ১৭ হাজার টনেরও বেশি ইরানি এলপিজি সরবরাহ করেছিল বাংলাদেশে।
এছাড়া, ২০২৪ সালের শেষ দিকে কোমোরোসের পতাকাবাহী জাহাজ ‘আদা’ (আগের নাম ক্যাপ্টেন নিকোলাস) বাংলাদেশের কিছু আমদানিকারকের কাছে ইরানি এলপিজি পৌঁছে দেয়। সংযুক্ত আরব আমিরাতভিত্তিক সি শিপ ম্যানেজমেন্ট এলএলসি-এর মালিকানাধীন এই জাহাজটিকে সর্বশেষ মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।
‘বিএলপিজি’ সোফিয়া নামের একটি ছোট জাহাজে এলপিজি খালাসের সময় গত বছরের ১৩ অক্টোবর চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে ‘ক্যাপ্টেন নিকোলাসে’ আগুন লাগে। প্রায় ৩৪ হাজার টন এলপিজি বহনকারী এই জাহাজটি আইনি জটিলতার কারণে কয়েক মাস আটকে থাকার পর চলতি বছরের ৫ সেপ্টেম্বর পুনরায় গ্যাস স্থানান্তরের অনুমতি পায়। ভেসেল-ট্র্যাকিং তথ্য বলছে, জাহাজটি এখনও চট্টগ্রাম বন্দরে নোঙর করা আছে।
যদিও নিষেধাজ্ঞার তালিকায় কোনো বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান বা সরকারি সংস্থার নাম নেই, তবে এই চালানের উল্লেখের কারণে বাংলাদেশকে এখন যুক্তরাষ্ট্রের নজরদারির আওতায় দেখা হচ্ছে। মার্কিন আইন অনুসারে, নিষিদ্ধ লেনদেনে জড়িত বিদেশি কোম্পানিগুলো ‘সেকেন্ডারি স্যাংশন’-এর ঝুঁকিতে থাকে, যার ফলে যুক্তরাষ্ট্রের আর্থিক ব্যবস্থায় প্রবেশাধিকার হারানোর মতো কঠিন পরিণতি হতে পারে।

আন্তর্জাতিক
যুক্তরাষ্ট্র ছেড়ে সুইজারল্যান্ডে পাড়ি জমাচ্ছেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ দুফলো ও অভিজিৎ

নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ এস্থার দুফলো ও অভিজিৎ ব্যানার্জি শিগগিরই যুক্তরাষ্ট্র ছেড়ে সুইজারল্যান্ডে পাড়ি জমাতে চলেছেন। তারা জুরিখ বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করবেন। সেখানে ডেভেলপমেন্ট ইকোনমিক্স বিষয়ক নতুন একটি সেন্টার প্রতিষ্ঠা করবেন তারা।
শুক্রবার (১০ অক্টোবর) জুরিখ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এ তথ্য জানিয়েছে।
নোবেলজয়ী এই দম্পতি বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজিতে (এমআইটি) কর্মরত রয়েছেন। বৈশ্বিক দারিদ্র্য বিমোচনে প্রায়োগিক গবেষণার জন্য ২০১৯ সালে এই দম্পতি ও হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির ডেভেলপমেন্ট সোসাইটির অধ্যাপক মাইকেল ক্রেমার যৌথভাবে অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার পান।
জুরিখ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা আগামী বছরের জুলাই মাসে বিশ্ববিদ্যালয়টির অর্থনীতি বিভাগে যোগদান করবেন। তবে কেন তারা যুক্তরাষ্ট্র ছেড়ে যাচ্ছেন, সে বিষয়ে বিবৃতিতে কিছু উল্লেখ করা হয়নি।
এ দম্পতি এমন সময়ে সুইজারল্যান্ডে যাচ্ছেন, যখন বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করছেন যে গবেষণায় অর্থায়ন কমানো এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অ্যাকাডেমিক স্বাধীনতার ওপর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের হস্তক্ষেপের কারণে যুক্তরাষ্ট্রে ‘ব্রেইন ড্রেইন’-এর আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে কিছু দেশ মার্কিন বিজ্ঞানীদের আকৃষ্ট করার চেষ্টা করছে।
এস্থার দুফলো একজন মার্কিন-ফরাসি নাগরিক। তার স্বামী অভিজিৎ ভারতীয় বংশোদ্ভূত। তারা জুরিখ বিশ্ববিদ্যালয়ে লেমান ফাউন্ডেশনের অর্থায়নে প্রতিষ্ঠিত বিশেষ অধ্যাপক পদে নিযুক্ত হবেন। তারা যৌথভাবে নতুন লেমান সেন্টার ফর ডেভেলপমেন্ট, এডুকেশন অ্যান্ড পাবলিক পলিসি প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনা করবেন। এই কেন্দ্রের লক্ষ্য হবে নীতিনির্ধারণে কার্যকর গবেষণাকে উৎসাহিত করা এবং বিশ্বজুড়ে গবেষক ও শিক্ষা নীতিনির্ধারকদের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট মাইকেল শেপম্যান বলেন, ‘বিশ্বের দুইজন সবচেয়ে প্রভাবশালী অর্থনীতিবিদ আমাদের সঙ্গে যোগ দিচ্ছেন, এটা আমাদের জন্য অত্যন্ত আনন্দের।’
আন্তর্জাতিক
ভারতে আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রীর নারী সাংবাদিকবর্জিত সংবাদ সম্মেলন

ভারত সফররত আফগানিস্তানের তালেবান সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকির নারী সাংবাদিকবর্জিত সংবাদ সম্মেলনকে ঘিরে দেশজুড়ে শুরু হয়েছে তীব্র সমালোচনা।
কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়াঙ্কা গান্ধী থেকে শুরু করে তৃণমূল কংগ্রেসের মহুয়া মৈত্রসহ বিরোধী রাজনীতিক ও নারী সাংবাদিকরা এ ঘটনায় সরকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
শুক্রবার নয়াদিল্লিতে আফগান দূতাবাসে অনুষ্ঠিত ওই সংবাদ সম্মেলনে কেবল পুরুষ সাংবাদিকদের আমন্ত্রণ জানানো হয়। নারী সাংবাদিকরা উপস্থিত হলেও তাঁদের প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। বৈষম্যের প্রতিবাদ জানালেও কোনো সাড়া মেলেনি।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে কোনো নিন্দা জানায়নি। শনিবার কেবল জানানো হয়, ওই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন বা ব্যবস্থাপনায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কোনো ভূমিকা ছিল না।
তবে সাংবাদিকরা পাল্টা জানতে চান, ভূমিকা না থাকলেও বৈষম্যমূলক আচরণের বিরুদ্ধে ভারত কি আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ জানিয়েছে? আফগান সরকারের এই নীতির বিরোধিতা করেছে কি না—এ প্রশ্নের কোনো উত্তর মেলেনি।
দ্য হিন্দুর কূটনৈতিক সংবাদদাতা সুহাসিনী হায়দার এক্সে (টুইটার) লেখেন, ‘তারা ভারত সরকারের অতিথি, অথচ এ দেশে এসে আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে তাঁর নারীবিদ্বেষী নীতি প্রয়োগের অনুমতি দেওয়া হলো। তালেবান তাদের নারীবিদ্বেষ ভারতেও টেনে আনল—এটা বাস্তববাদিতা নয়, আত্মসমর্পণ।’
সাংবাদিক স্মিতা শর্মা বিস্ময় প্রকাশ করে লেখেন, ‘মুত্তাকির সংবাদ সম্মেলনে কোনো নারী সাংবাদিককে ডাকাই হয়নি। আফগান নারীদের দুর্দশা নিয়ে জয়শঙ্করের ভাষণ বা যৌথ বিবৃতিতে একটি শব্দও নেই। অথচ তাকে লালগালিচা দিয়ে স্বাগত জানানো হলো—যে দেশে নারীর সাফল্যে গর্ব করা হয়!’
সাংবাদিক বিজেতা সিংয়ের মন্তব্য, ‘পুরুষ সাংবাদিকদের উচিত ছিল এই বৈষম্যের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন বর্জন করা।’ আর গীতা মোহন লিখেছেন, ‘এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।’
বিরোধী দলগুলোও সরকারের কঠোর সমালোচনা করেছে। কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়াঙ্কা গান্ধী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে উদ্দেশ করে এক্সে লেখেন, ‘আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রীর নারী সাংবাদিকবর্জিত সংবাদ সম্মেলন নিয়ে আপনার অবস্থান স্পষ্ট করুন। আপনার নারীনীতি কি শুধু নির্বাচনের সময় পর্যন্ত সীমিত? দেশের সবচেয়ে যোগ্য নারীদের এই অপমান কীভাবে ঘটতে দেওয়া হলো?’
তৃণমূলের মহুয়া মৈত্র লেখেন, ‘নারীবর্জিত সংবাদ সম্মেলনের অনুমতি দিয়ে সরকার দেশের নারীদের সম্মানহানি ঘটিয়েছে। এটা মেরুদণ্ডহীনতার প্রকাশ।’
প্রবীণ কংগ্রেস নেতা পি চিদাম্বরম লেখেন, ‘ভূরাজনৈতিক বাধ্যবাধকতা আমি বুঝি, কিন্তু তাদের আদিম নারীবিদ্বেষী রীতি মেনে নেওয়া লজ্জাজনক। পুরুষ সাংবাদিকদেরও উচিত ছিল এই সংবাদ সম্মেলন বর্জন করা।’
কংগ্রেস মুখপাত্র শামা রহমান বলেন, ‘আমাদের আমন্ত্রণে এসে যদি তারা তাদের বৈষম্যমূলক নীতি প্রয়োগ করে, তবে মোদি–জয়শঙ্করের লজ্জিত হওয়া উচিত।’
নয়াদিল্লির হায়দরাবাদ হাউসে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে বৈঠকের পর আফগান দূতাবাসে ওই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সেখানে কোনো দেশের জাতীয় পতাকা ব্যবহার করা হয়নি। তবে সংবাদ সম্মেলনের টেবিলে তালেবান সরকারের স্বীকৃত ছোট পতাকা রাখা হয়।
তালেবান সরকারকে ভারত এখনো আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয়নি। তবু মুত্তাকি জানিয়েছেন, কাবুলে ভারতীয় দূতাবাস পুরোপুরি চালু করার পাশাপাশি নয়াদিল্লির আফগান দূতাবাসেও নতুন কূটনীতিক নিযুক্ত করা হবে।
আন্তর্জাতিক
সোমবার গাজা থেকে মুক্তি পাবে ইসরায়েলের বন্দিরা

ইসরায়েলের বন্দিদের আগামী সোমবার (১৩ অক্টোবর) গাজা থেকে মুক্তি দেওয়া হবে বলে ঘোষণা করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
গত বৃহস্পতিবার রাতে হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি জানান, হামাস ও অন্যান্য সশস্ত্র গোষ্ঠীর হাতে বন্দি থাকা ২০ জন জীবিত এবং ২৮ জন নিহত বন্দির দেহ সোমবার হস্তান্তর করা হবে। এটি মার্কিন মধ্যস্থতায় হওয়া শান্তিচুক্তির অংশ।
ট্রাম্প বলেন, সোমবার বড়দিন হবে। তিনি আরও যোগ করেন, বন্দি বিনিময় প্রক্রিয়ায় ৪৮ জন ইসরায়েলি (জীবিত ও মৃত) মুক্তি পাবে এবং এর বিপরীতে অন্তত ২,০০০ ফিলিস্তিনি বন্দি ইসরায়েলের জেল থেকে মুক্তি পাবে। তিনি উল্লেখ করেন, কিছু মৃতদেহ এখনও উদ্ধারাধীন এবং এটা এক বিশাল ট্র্যাজেডি।
জীবিত বন্দিদের পরিস্থিতি নিয়ে ট্রাম্প বলেন, তারা এমন কিছু কঠিন জায়গায় আছে, যেখানে কেবল কিছু মানুষই তাদের অবস্থান জানে। তবে তিনি আশা প্রকাশ করেন, তার শান্তিচুক্তির প্রথম এবং পরবর্তী পর্যায় সফল হবে।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, হামাস ও ইসরায়েল উভয়ই যুদ্ধ নিয়ে ক্লান্ত এবং বেশিরভাগ বিষয়ে একমত। তিনি যোগ করেন, সুন্দর একটি কক্ষে বসে সমস্যার সমাধান সহজ, বাস্তবে কিছুটা কঠিন।
ট্রাম্প ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ইরান এবং রাশিয়ার সমর্থন পাওয়ায় খুশি এবং উল্লেখ করেন, শান্তি পরিকল্পনা কেবল গাজার জন্য নয়, পুরো মধ্যপ্রাচ্যের জন্য বিস্তৃত হবে। তিনি বলেন, এটি মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি এবং একটি সুন্দর বিষয়।
আগামী সপ্তাহের শেষে ট্রাম্প মিশরের কায়রো সফরে যাবেন। পরবর্তীতে তিনি ইসরায়েলে সফর করবেন এবং দেশটির পার্লামেন্ট নেসেটে ভাষণ দেবেন। এরপর তিনি যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে আসবেন।
গাজার জন্য মার্কিন মধ্যস্থতায় হওয়া শান্তিচুক্তির শর্ত অনুযায়ী, হামাস ৭২ ঘণ্টার মধ্যে সমস্ত বন্দি মুক্তি দেওয়ার জন্য সম্মত হয়েছে। ইসরায়েলও শুক্রবার ভোরে চুক্তি অনুমোদন করে এবং সেনারা গাজার বিভিন্ন এলাকা থেকে নির্ধারিত অবস্থানে ফিরে যায়।
আন্তর্জাতিক
চীনা পণ্যে বাড়তি ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপ ট্রাম্পের

আগামী মাস থেকে চীন থেকে আসা পণ্যের ওপর বাড়তি ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। শুক্রবার (১০ অক্টোবর) সামাজিকমাধ্যম ট্রুথে এ ঘোষণা দেন তিনি।
এছাড়া গুরুত্বপূর্ণ সফটওয়ার রপ্তানির ওপর যুক্তরাষ্ট্র নিয়ন্ত্রণ আরোপ করবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
এরআগে ট্রুথে আরেক পোস্টে ট্রাম্প চীনের সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, চীন তাদের বিরল জ্বালানি রপ্তানিতে কড়াকড়ি আরোপ করে খুবই ‘শত্রুতাপূর্ণ’ হয়ে উঠছে। এরমাধ্যমে চীন বিশ্বকে ‘জিম্মি’ করার চেষ্টা করছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এছাড়া চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠক বাতিলের হুমকিও দেন ট্রাম্প। তবে পরবর্তীতে জানান বৈঠকটি এখনো বাতিল হয়নি। কিন্তু তিনি জানান, তাদের দুজনের মধ্যে ‘আলোচনা হবে কি না’ সেটি তিনি নিশ্চিত নয়।
চীনের ওপর বাড়তি ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকি দেওয়ার পর মার্কিন পুঁজিবাজারে উল্লেখজনক দরপতন দেখা গেছে।
গাড়ি, স্মার্টফোন এবং অন্য আরও কিছু পণ্য তৈরিতে বিরল খনিজ অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এই উপাদান উৎপাদনে চীনের আধিপত্য রয়েছে।
চলতি বছরের শুরুতে ট্রাম্প যখন চীনের ওপর শুল্ক আরোপের হুমকি দেন। তখন বেইজিং তাদের বিরল খনিজ রপ্তানিতে কঠোরতা আরোপ করে। যেসব মার্কিন সংস্থা এ পণ্যের ওপর নির্ভরশীল তারা এতে শঙ্কা প্রকাশ করে। এমনকি গাড়ি নির্মাতা ফোর্ডকে তাদের উৎপাদনই কয়েকদিন বন্ধ রাখতে হয়।
বিরল খনিজ রপ্তানিতে কঠোরতার পাশাপাশি চীন মার্কিন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান কোয়ালকমের বিরুদ্ধে একচেটিয়ার ব্যবসার তদন্ত শুরু করেছে। এতে করে আরেকটি চিপ তৈরিকারী প্রতিষ্ঠান কেনার যে প্রক্রিয়া কোয়ালকম চালাচ্ছিল সেটি থমকে যেতে পারে।
যদিও কোয়ালকম যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান। কিন্তু তাদের ব্যবসার বড় একটি অংশ চীনে রয়েছে।
এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র সংশ্লিষ্ট জাহাজ থেকে নতুন বন্দর ফি নেওয়ার ঘোষণাও চীন দিয়েছে। যারমধ্যে মার্কিন কোম্পানির পরিচালিত জাহাজও আছে।
গত মে মাস থেকেই চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সম্পর্কে টানপোড়েন চলছে। যা দিন দিন আরও খারাপ হচ্ছে। সূত্র: বিবিসি।
আন্তর্জাতিক
সমুদ্রপথে ইতালিতে আসা অভিবাসীদের মধ্যে শীর্ষে বাংলাদেশিরা

চলতি ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত সমুদ্রপথে ইতালিতে পাড়ি জমানো অভিবাসনপ্রত্যাশীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি এসেছেন বাংলাদেশ থেকে। দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ প্রকাশিত পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে এই তথ্য জানা গেছে।
শুক্রবার প্রকাশিত সেই পরিসংখ্যানের তথ্য বলছে, ২০২৫ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৩ অক্টোবর পর্যন্ত সময়ে মোট ১৫ হাজার ৪৭৬ জন বাংলাদেশি সমুদ্রপথে ইতালির উপকূলে পৌঁছেছেন। দেশ অনুযায়ী হিসেব করে দেখা গেছে, চলতি বছর ইতালিতে সমুদ্র পাড়ি দিয়ে আসা অভিবাসীদের মধ্যে বাংলাদেশিদের এই সংখ্যা অন্য যে কোনো দেশ থেকে আসা অভিবাসীদের মধ্যে সর্বোচ্চ। দেশভিত্তিক হিসাবে আগতদের ৩০ শতাংশই ছিলেন বাংলাদেশি।
এদিকে পরিসংখ্যান অনুসারে, চলতি বছর ইতালির উপকূলে আসা মোট অভিবাসীর সংখ্যা ২০২৪ সালের তুলনায় কিছুটা বাড়লেও ২০২৩ সালের তুলনায় অনেক কমেছে।
তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ২০২৫ সালের উল্লিখিত সময়ে মোট ৫১ হাজার ৮৫৫ জন সমুদ্র পাড়ি দিয়ে ইতালিতে এসেছেন। ২০২৪ সালের একই সময়ে সংখ্যাটি ছিল ৫১ হাজার ৩৪১ জন৷ আর ২০২৩ সালে এই সময়ে এসেছিলেন এক লাখ ৩৫ হাজার ৩১৯ জন।
সরকারের তথ্য বলছে, ২০২৪ সালের প্রথম নয় মাসের তুলনায় ২০২৫ সালে বাংলাদেশিদের আগমন প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে৷ ২০২৪ সালে এই সময়ে আট হাজার ৫২৬ জন বাংলাদেশি ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালিতে এসেছিলেন৷ এ বছর তা বেড়ে ১৫ হাজার ৪৭৬ জনে দাঁড়িয়েছে।
পরিসংখ্যানে ভূমধ্যসাগর হয়ে ইতালিতে অভিবাসী আগমনে একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আফ্রিকা মহাদেশের দেশগুলোর তুলনায় দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো বিশেষ করে বাংলাদেশ থেকে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের আগমন ক্রমেই বাড়ছে।
বাংলাদেশিদের পর সর্বাধিক সংখ্যক অভিবাসী এসেছে ইরিত্রিয়া ও মিশর থেকে। এই সংখ্যা যথাক্রমে ৭ হাজার ৯০ জন ও ৬ হাজার ৫৫৮ জন৷
পাকিস্তান, সুদান, সোমালিয়া, ইথিওপিয়া ও তিউনিশিয়া থেকেও কয়েক হাজার মানুষ এ সময় ইতালিতে পাড়ি জমিয়েছেন। অন্যান্য দেশের মধ্যে রয়েছে ইরান, সিরিয়া, গিনি, আলজেরিয়া, নাইজেরিয়া, মালি ও আফগানিস্তান। আরও কিছু অভিবাসীর পরিচয় যাচাইয়ের কাজ এখনো চলমান।
প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০২৫ সালের মে থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়টিই ছিল অভিবাসনের প্রধান মৌসুম। মে মাসে ৭ হাজার ১৭৮ জন, জুনে ৭ হাজার ৮৯ জন, জুলাইয়ে ৬ হাজার ৪৮৭ জন, আগস্টে ৬ হাজার ১৪৬ জন এবং সেপ্টেম্বর মাসে সর্বোচ্চ ৮ হাজার ৩১৫ জন অভিবাসী ইতালিতে পৌঁছান৷ অক্টোবরের প্রথম দিক পর্যন্ত আগমন প্রায় স্থবির হয়ে পড়েছে।
অন্যদিকে, অভিভাবকহীন অপ্রাপ্তবয়স্ক একক অভিবাসীর সংখ্যাও কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। এ বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মোট নয় হাজার ১৫৬ জন শিশু ইতালিতে পৌঁছেছে, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় সামান্য বেশি হলেও ২০২৩ সালের উল্লিখিত সময়ের তুলনায় অনেক কম। ২০২৪ সালের এই সময়ে আট হাজার ৭৫২ শিশু এবং ২০২৩ সালে ১৮ হাজার ৮২০ শিশু ইতালিতে পৌঁছেছিল।