অর্থনীতি
বিশ্ববাজারে অতীতের সব রেকর্ড ছাড়ালো সোনার দাম

বিশ্ববাজারে অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়েছে সোনার দাম। ইতিহাসে প্রথমবারের মতো সোনার দাম প্রতি আউন্সে ৪ হাজার ডলার অতিক্রম করেছে। বুধবার এশিয়ার বাজারে সোনার দর আউন্স প্রতি দাঁড়ায় ৪০০০.০১ ডলার, যা বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত ৫০ শতাংশেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। খবর এএফপি, রয়টার্স।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রে চলমান সরকারি অচলাবস্থা এবং ফেডারেল রিজার্ভের সুদের হার কমানোর সম্ভাবনা বাজারে অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে। এ কারণে বিনিয়োগকারীরা নিরাপদ সম্পদ হিসেবে সোনা কেনায় আগ্রহী হচ্ছেন। এর ফলেই দাম ঊর্ধ্বমুখী।
এছাড়া ফ্রান্সের রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তাও সোনার বাজারে বড় প্রভাব ফেলেছে। বিনিয়োগকারীরা ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদ থেকে সরে গিয়ে সোনা কেনার দিকে বেশি ঝুঁকে পড়ছেন।
যুক্তরাষ্ট্রে সরকারি শাটডাউন বুুধবার অষ্টম দিনে পৌঁছেছে। ফলে গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক সূচক প্রকাশ স্থগিত রয়েছে। এতে বিনিয়োগকারীরা এখন বিকল্প সূত্র থেকে তথ্য নিয়ে বাজার বিশ্লেষণ করতে বাধ্য হচ্ছেন।
চলতি বছর এখন পর্যন্ত সোনার দাম ৫০ শতাংশ বেড়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, সুদের হার কমানোর প্রত্যাশা, বৈশ্বিক রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা, কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর সোনা ক্রয় বৃদ্ধি, ইটিএফের চাহিদা এবং মার্কিন ডলারের দুর্বলতার কারণে এই মূল্যবৃদ্ধি ঘটছে।
ঐতিহ্যগতভাবে অস্থির সময়ে সোনাকে নিরাপদ সম্পদ হিসেবে দেখা হয়। ২০২৪ সালে স্পট গোল্ডের দাম ২৭ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। গত বছরের তুলনায় স্পট গোল্ডের দাম ৫২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
ইউবিএস বিশ্লেষক জিওভান্নি স্টাউনোভো বলেন, আমরা এখন যা দেখতে পাচ্ছি তা হলো দাম বেশি থাকা সত্ত্বেও বিনিয়োগকারীরা সোনা কিনছেন এবং এর ফলেই সোনার দাম উর্ধ্বমুখী।
স্পট সিলভার ০.৫ শতাংশ বেড়ে প্রতি আউন্স ৪৮.০৩ ডলার, প্ল্যাটিনাম ২.২ শতাংশ বেড়ে ১ হাজার ৬৫৩.২১ ডলার এবং প্যালাডিয়াম ১.৩ শতাংশ বেড়ে ১ হাজার ৩৫৫.৩২ ডলারে দাঁড়িয়েছে।
বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক অস্থিরতা ছাড়াও ফ্রান্সের রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা বিনিয়োগকারীদের সিদ্ধান্তে প্রভাব ফেলছে।

অর্থনীতি
২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে সোনার দামে নতুন রেকর্ড

দেশের বাজারে ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে আবারও সোনার দাম বেড়েছে, যা নতুন ইতিহাস সৃষ্টি হয়েছে। এখন সবচেয়ে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি (১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রাম) সোনার দাম এক হাজার ৪৬৯ টাকা বাড়ানো হয়েছে। এতে এক ভরি সোনার দাম দুই লাখ ২ হাজার ১৯৫ টাকা হয়েছে।
স্থানীয় বাজারে তেজাবী সোনার (পাকা সোনা) দাম বাড়ার পরিপ্রেক্ষিতে এ দাম বাড়ানো হয়েছে। বুধবার (৮ অক্টোবর) থেকে নতুন দাম কার্যকর হবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস)।
মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) বাজুস স্ট্যান্ডিং কমিটি অন প্রাইসিং অ্যান্ড প্রাইস মনিটরিং কমিটি বৈঠকে করে এ দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পরে কমিটির চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমানের সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এর আগে সোমবার (৬ অক্টোবর) ঘোষণা দিয়ে আজ থেকে সোনার দাম বাড়ানো হয়। এতে দেশের বাজারে প্রথমবার এক ভরি সোনার দাম দুই লাখ টাকার ঘর স্পর্শ করে। অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে ভালো মানের এক ভরি সোনার দাম হয় ২ লাখ ৭২৬ টাকা। এখন আবার দাম বাড়ানোর ফলে সেই রেকর্ড ভেঙে গেলো।
এখন সবচেয়ে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি সোনায় ১ হাজার ৪৬৯ টাকা বাড়িয়ে দুই লাখ দুই হাজার ১৯৫ টাকা নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। ২১ ক্যারেটের এক ভরি সোনায় ১ হাজার ৩৯৯ টাকা বাড়িয়ে ১ লাখ ৯৩ হাজার ৪ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
এছাড়া ১৮ ক্যারেটের এক ভরি সোনায় ১ হাজার ২০২ টাকা বাড়িয়ে নতুন দাম ১ লাখ ৬৫ হাজার ৪৩১ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি সোনায় ১ হাজার ২৭ টাকা বাড়িয়ে দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ৩৭ হাজার ৪৭২ টাকা।
সোমবার ঘোষণা দিয়ে আজ থেকে সবচেয়ে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি সোনায় ৩ হাজার ১৫০ টাকা বাড়িয়ে নতুন দাম নির্ধারণ করা হয় ২ লাখ ৭২৬ টাকা। ২১ ক্যারেটের এক ভরি সোনায় ৩ হাজার ১০ টাকা বাড়িয়ে ১ লাখ ৯১ হাজার ৬০৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়।
এছাড়া ১৮ ক্যারেটের এক ভরি সোনায় ২ হাজার ৫৭৮ টাকা বাড়িয়ে নতুন দাম ১ লাখ ৬৪ হাজার ২২৯ টাকা নির্ধারণ করা হয়। আর সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি সোনায় ২ হাজার ১৯২ টাকা বাড়িয়ে দাম নির্ধারণ করা হয় ১ লাখ ৩৬ হাজার ৪৪৫ টাকা। আজ মঙ্গলবার এ দামে সোনা বিক্রি হয়েছে।
সোনার দাম বাড়ানোর পাশাপাশি রূপার দামও বাড়ানো রয়েছে। ২২ ক্যারেটের এক ভরি রূপার দাম ১ হাজার ২৬ টাকা বাড়িয়ে ৪ হাজার ৬৫৪ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া ২১ ক্যারেটের এক ভরি রূপার দাম ৯৯১ টাকা বাড়িয়ে ৩ হাজার ৪৫৩ টাকা, ১৮ ক্যারেটের এক ভরি রূপার দাম ৮৩৯ টাকা বাড়িয়ে ২ হাজার ৯৬৩ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির এক ভরি রূপার দাম ৬৩০ টাকা বাড়িয়ে ২ হাজার ২২৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
অর্থনীতি
দুই দেশ থেকে ১০৪৪ কোটি টাকার গম-চাল কিনবে সরকার

যুক্তরাষ্ট্র থেকে জিটুজি (সরকার থেকে সরকার) পদ্ধতিতে ২ লাখ ২০ হাজার টন গম আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। সেই সঙ্গে ভারত থেকে আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে ৫০ হাজার টন সেদ্ধ চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এই গম ও চাল আনতে ব্যয় হবে ১ হাজার ৪৪ কোটি ৪১ লাখ ৬৭ হাজার ৩০০ টাকা।
মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠকে এই গম ও চাল আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, খাদ্য মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে ২০২৫-২৬ অর্থবছরে আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে প্যাকেজ-১ এর আওতায় ৫০ হাজার মেট্রিক টন নন বাসমতি সেদ্ধ চাল ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি।
ভারতের এম/এস-বগাদিয়া ব্রাদার্স প্রাইভেট লিমিটেড থেকে এই চাল আমদানি করা হবে। প্রতিষ্ঠানটির কাছ থেকে এই চাল আনতে ব্যয় হবে ২১৯ কোটি ৯ লাখ ৯৯ হাজার ৩০০ টাকা। প্রতি মেট্রিক টনের দাম ধরা হয়েছে ৩৫৯.৭৭ ডলার।
বৈঠকে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের আর এক প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে জিটুজি পদ্ধতিতে ২ লাখ ২০ হাজার মেট্রিক টন গম আমদানির প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে সরকার।
ইউএস হুইট অ্যাসোসিয়েটস থেকে ক্ষমতাপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান এগ্রোক্রোপ ইন্টারন্যাশনাল প্রাইভেট লিমিটেড থেকে এই গম আমদানি করা হবে। প্রতিষ্ঠানটি থেকে এই গম আনতে ব্যয় হবে ৮২৫ কোটি ৩১ লাখ ৬৮ হাজার টাকা। প্রতি মেট্রিক টনের দাম ধরা হয়েছে ৩০৮ মার্কিন ডলার।
অর্থনীতি
আমরা এখন ট্রিলিয়ন ডলারের পথে অগ্রসর হচ্ছি: গভর্নর

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, আমরা এখন ট্রিলিয়ন ডলারের পথে অগ্রসর হচ্ছি। বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন অর্ধ ট্রিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে।
মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) রাজধানীর বনানীতে একটি হোটেলে সৌদি আরব-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এসএবিসিসিআই) আয়োজিত বিজনেস সামিটে এ কথা জানান তিনি।
আহসান এইচ মনসুর বলেন, ইসলামি দেশগুলোর মধ্যে আন্তদেশীয় বিনিয়োগ ও অর্থ লেনদেন এখন একটি বড় আলোচ্য বিষয়। বিশেষ করে সৌদি আরবের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ বাংলাদেশে প্রবাসী আয়ের সবচেয়ে বড় উৎস সৌদি আরব। বর্তমানে প্রবাসীরা রেমিট্যান্স পাঠাতে ৬ থেকে ১০ শতাংশ পর্যন্ত খরচ দেন, যা তাদের জন্য বড় চাপ। দুই দেশের আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক একত্রে কাজ করলে এই ব্যয় অনেকাংশে হ্রাস করা সম্ভব।
গভর্নর আহ্বান জানিয়ে বলেন, আমি সৌদি বিনিয়োগকারীদের আহ্বান জানাই, তারা যেন বাংলাদেশে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের সুযোগগুলো গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করেন।
বিজনেস সামিটে সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। প্রবাসী শ্রমবাজারে তার উদ্যোগেই আনুষ্ঠানিকভাবে শ্রমিক পাঠানো শুরু হয়। আজকের রেমিট্যান্স সাফল্যের মূলেও সেই ঐতিহাসিক উদ্যোগ রয়েছে। দক্ষতা উন্নয়নে জোর দিলে রেমিট্যান্স আয় বহুগুণ বাড়ানো সম্ভব।
বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে বড় তহবিল প্রয়োজন। সৌদি আরবের বিনিয়োগের মাধ্যমে পুঁজিবাজারকে ফ্রন্টিয়ার থেকে ইমার্জিং মার্কেটে উন্নীত করা সম্ভব।
স্বাগত বক্তব্যে এসএবিসিসিআই সভাপতি আশরাফুল হক চৌধুরী বলেন, সৌদি আরব আমাদের দীর্ঘদিনের বিশ্বস্ত বন্ধু। কিন্তু ৫৩ বছরে কোনো যৌথ ব্যবসায়ী চেম্বার ছিল না। অবশেষে আমরা সেটি গঠন করতে পেরেছি। বাংলাদেশ থেকে পোশাক, কৃষি, আইটি ও দক্ষ শ্রমিক রপ্তানি বৃদ্ধির পাশাপাশি আমরা সৌদি বিনিয়োগ বাড়াতে কাজ করব।
সামিটে বাংলাদেশ ও সৌদি আরবের অর্থনীতির বিশেষজ্ঞরা তিনটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। একটি প্রবন্ধে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান মাসরুর রিয়াজ বলেন, বাংলাদেশ ও সৌদি আরব এখনো একে অপরের শীর্ষ পাঁচ বাণিজ্য অংশীদারের মধ্যে নেই, অথচ সম্ভাবনা বিশাল। বাণিজ্য, বিনিয়োগ, মানবসম্পদ উন্নয়ন ও নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে উভয় দেশ পারস্পরিকভাবে লাভবান হতে পারে।
সামিটে অংশ নিতে ঢাকায় এসেছেন ২০ সদস্যের সৌদি প্রতিনিধি দল। যার নেতৃত্বে দিচ্ছেন মাজদ আল উমরান গ্রুপের কর্ণধার শেখ ওমর আব্দুল হাফিজ আমির বকশ্। হসপিটালিটি, আবাসনসহ বেশ কিছু খাতে ব্যাবসা আছে এ গ্রুপের। প্রতিনিধি দলে আছেন আল ইসায়ি গ্রুপের পরিচালক নাজি আব্দুল্লাহ। সেবা, উৎপাদনসহ নানা খাতে বিনিয়োগ আছে এ কোম্পানির। প্রতিনিধি দলে আছেন বাদশাহ আব্দুল আজীজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মোহাম্মদ আসিফ সালাম। যিনি একটি আইটি কোম্পানিরও কর্ণধার। সামিটে অংশ নিয়েছেন সৌদি আরবের আল তৈয়বা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও স্বাস্থ্য খাত বিশেষজ্ঞ ডক্টর খালিদ আল হারবি।
অর্থনীতি
দেশের অর্থনীতি স্বস্তিতে আছে: অর্থ উপদেষ্টা

দেশের অর্থনীতি স্বস্তিতে রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেছেন, অর্থনৈতিক দিক দিয়ে আমি স্বস্তিতে আছি। সে জন্য তো আমরা মোটামুটি একটু কনফিডেন্ট।
মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) সচিবালয়ে সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন।
বাংলাদেশের দারিদ্র্যের হার আবার বেড়ে গেছে— আজ সকালে বিশ্বব্যাংকের এমন মন্তব্যের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, আমি তাত্ত্বিক দিকে এখন যাবো না। দারিদ্র্য বেড়ে গেছে নাকি আছে প্রকৃত পক্ষে এগুলো বলতে হলে আমার অনেক বক্তব্য দিতে হবে। আমি তো জানি কীভাবে ওরা দারিদ্র্য মেজার করে। বেজ আছে, ক্লায়েন্ট আছে।
অর্থনীতি কি স্বস্তিতে আছে? এমন প্রশ্নের জবাবে সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, অর্থনৈতিক দিক দিয়ে আমি স্বস্তিতে আছি। সে জন্য তো আমরা মোটামুটি একটু কনফিডেন্ট। বাকিগুলোর ব্যাপারে আমি বলতে পারবো না।
আমেরিকার শুল্ক নিয়ে করা এক প্রশ্নের উত্তরে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, শুল্ক অলরেডি ইফেক্টিভ। যে সিলিং দিয়েছে ওটা এফেক্ট করে না। অলরেডি চার বিলিয়ন ডলার আমরা সার্বিকভাবে শো দিয়ে দিয়েছি।
নতুন পে-স্কেল কি দিতে যাচ্ছে সাম্প্রতিক সময়ে? এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, সেটা পরে এক সময় আমি দেখবো। যাওয়ার আগে এক সময় আমি বলবো।
বাংলাদেশ সরকার ২ দশমিক ২ বিলিয়ল ডলার খরচ করে ২০টি ফাইটার জাহাজ কিনছে চীন থেকে। সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের উত্তরে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, সেটা ব্যাপারে আমি কোনো মন্তব্য করবো না। আপনি তো জানবেন স্যার? সাংবাদিকরা পাল্টা এমন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, জানলেই কি সবকিছু বলে দিতে হবে।
আমাদের কেন ফাইটার জাহাজের দরকার হচ্ছে? এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ওটা ওদের ব্যাপার। ওরা অ্যাসেস করে কি করছে, আমরা ওর ভেতরে নেই। আমি অর্থের সংস্থানের….।
আপনারা কি অনুমতি দিচ্ছেন? এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, এখন আমি এটার ব্যাপারে কিছু বলতে পারব না।
আপনি ওয়াশিংটন যাচ্ছেন সেখানে আইএমএফ এবং ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের সাথে আপনার কি এজেন্ডা হতে পারে? এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, আইএমএফের পাইপলাইনে আরও টাকা আছে কিছু। আর বাকি এডিবি, এআইডিবি, ওয়ার্ল্ড ব্যাংক এগুলো আছে। মোটামুটি অনগোয়িং যেগুলোতে কমিটমেন্ট আছে, দুইটা অ্যাগ্রিমেন্ট সই হবে ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের সঙ্গে। আর বাকিগুলো আমরা এবার একটু এজ ইউজুয়াল আমাদের ফলোআপ। এবার নেগোসিয়েশনের ব্যাপার না।
তিনি বলেন, ভবিষ্যতে আমাদের কি প্ল্যান আছে এবার খুব ওপেনলি অনেক কিছু আলোচনা হবে না। নতুন সরকার আসার পর তারা মেজর ডিসিশন নেবে, সেটা হলো আমাদের স্ট্যান্ড। মানে বাকি মেজর ইস্যুগুলো ওরা করবে।
অর্থনীতি
চীন থেকে ২০টি যুদ্ধবিমান কিনছে বাংলাদেশ

বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর আধুনিকায়ন ও জাতীয় আকাশ প্রতিরক্ষাকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে, সরকার চীনের তৈরি ২০টি জে-১০ সিই মাল্টিরোল যুদ্ধবিমান কেনার উদ্যোগ নিয়েছে। এই ৪.৫ প্রজন্মের মাল্টিরোল কমব্যাট এয়ারক্রাফট কেনা, প্রশিক্ষণ ও অন্যান্য খরচসহ মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ২২০ কোটি ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ২৭,০৬০ কোটি টাকা।
চুক্তিটি সরাসরি ক্রয় বা জিটুজি পদ্ধতিতে চীন সরকারের সঙ্গে করা হতে পারে এবং চলতি ২০২৫-২৬ ও ২০২৬-২৭ অর্থবছরে এটি বাস্তবায়নের আশা করা হচ্ছে। গণমাধ্যমের হাতে আসা আনুষ্ঠানিক নথিপত্র অনুযায়ী, এই যুদ্ধবিমানের মূল্য ২০৩৫-২০৩৬ অর্থবছর পর্যন্ত ১০ বছরে পরিশোধ করতে হবে।
জে-১০ সিই জঙ্গিবিমান মূলত চীনের বিমানবাহিনীর ব্যবহৃত জে-১০সি-এর রপ্তানি সংস্করণ। প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে তৈরি করা সম্ভাব্য খরচের হিসাব অনুযায়ী, প্রতিটি ফাইটার জেটের মূল্য ৬ কোটি ডলার প্রাক্কলন করা হয়েছে, এতে ২০টি বিমানের মোট মূল্য দাঁড়ায় ১২০ কোটি ডলার বা প্রায় ১৪,৭৬০ কোটি টাকা।
স্থানীয় ও বৈদেশিক প্রশিক্ষণ, যন্ত্রপাতি কেনা এবং পরিবহন খরচ বাবদ আরও ৮২ কোটি ডলার বা ১০ হাজার ৮৬ কোটি টাকা যোগ হবে। এর সঙ্গে বীমা, ভ্যাট, এজেন্সি কমিশন, পূর্ত কাজসহ অন্যান্য খরচ যোগ করলে মোট ব্যয় হবে ২২০ কোটি ডলার।
উল্লেখ্য, গত মে মাসে ভারত-পাকিস্তান সংঘাতে পাকিস্তান এই যুদ্ধবিমান ব্যবহার করে ফ্রান্সের তৈরি ভারতের একাধিক রাফায়েল যুদ্ধবিমান ধ্বংসের দাবি করেছিল (যদিও তা স্বাধীনভাবে যাচাই করা সম্ভব হয়নি), যার ফলে জে-১০ সিই বিশ্বজুড়ে আলোচনার কেন্দ্রে উঠে আসে।
চলতি বছরের মার্চে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের চীন সফরের সময় চীনের কাছ থেকে এই বহুমাত্রিক জঙ্গিবিমান কেনার বিষয়ে আলোচনা হয়েছিল এবং চীন প্রস্তাবটিতে ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছিল বলে জানা যায়। এই যুদ্ধবিমান কেনার জন্য চুক্তি চূড়ান্ত করতে গত এপ্রিলে বিমানবাহিনীর প্রধানকে সভাপতি করে ১১ সদস্যের একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এই কমিটি খসড়া চুক্তিপত্র নিরীক্ষণ করবে, জিটুজি পদ্ধতিতে কেনা সমীচীন হবে কি-না তা যাচাই-বাছাই করবে এবং চীনা প্রতিনিধিদের সঙ্গে দরকষাকষির মাধ্যমে চূড়ান্ত মূল্য, পরিশোধের শর্তাবলী (টার্মস অব পেমেন্ট) ও চুক্তিপত্র চূড়ান্ত করবে। চুক্তিপত্রে যুদ্ধবিমানের সংরক্ষণ সহায়তা, প্রশিক্ষণ, খুচরা যন্ত্রাংশ ব্যবস্থাপনা ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক বিষয়গুলো উল্লেখ থাকবে।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজ-এর প্রেসিডেন্ট মেজর জেনারেল এ এন এম মনিরুজ্জামান (অব.) গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমাদের বিমানবাহিনীর অনেকদিন ধরেই জঙ্গিবিমানের প্রয়োজন রয়েছে এবং তারা কেনার জন্য পরিকল্পনাও করছিল।’ তবে তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘বর্তমানে বিশ্বে এক ধরনের ভূ-রাজনৈতিক বলয় সৃষ্টি হয়েছে। তাই কোনো দেশ থেকে কেনার আগে তার ভূ-রাজনৈতিক প্রভাব বিশ্লেষণ করার প্রয়োজন আছে। বিশেষ করে, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে এখন টানাপোড়েন চলছে। এটি যেমন বিবেচনায় নিতে হবে, তেমনি আমাদের যুদ্ধবিমানের প্রয়োজন আছে, তাও বিবেচনা করতে হবে।’
চীনের বাইই অ্যারোবেটিক টিম তাদের প্রদর্শনী বহরে সর্বাধুনিক জে-১০সি মডেল অন্তর্ভুক্ত করেছে, যা বর্তমানে চীনের অন্যতম উন্নত মাল্টিরোল যুদ্ধবিমান হিসেবে বিবেচিত। এই ফাইটার জেটের উন্নত পারফরম্যান্স, পাইলটদের দক্ষতা এবং ওয়াইইউ–২০ এরিয়াল ট্যাংকারের সহায়তায় আন্তর্জাতিক এয়ারশোতে দীর্ঘ দূরত্বের ফ্লাইট পরিচালনা সম্ভব হয়েছে।
বর্তমানে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর (বিএএফ) মোট ২১২টি এয়ারক্রাফট রয়েছে, যার মধ্যে ৪৪টি ফাইটার জেট। এর মধ্যে ৩৬টি চীনা নির্মিত এফ–৭ যুদ্ধবিমান। বিএএফের বহরে পুরানো মডেলের পাশাপাশি ৮টি মিগ-২৯বি এবং রাশিয়ান ইয়াক–১৩০ লাইট অ্যাটাক বিমান রয়েছে। জে-১০ সিরিজ যুক্ত হলে তা বিমান বাহিনীর আধুনিকায়নে এক গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন হবে।