ব্যাংক
বিশেষ যোগ্যতা মূল্যায়ন পরীক্ষা নিয়ে ইসলামী ব্যাংকের বক্তব্য

বিভিন্ন গণমাধ্যমে কর্মকর্তাদের বিশেষ যোগ্যতা মূল্যায়ন পরীক্ষা সংক্রান্ত সংবাদের বিষয়ে ব্যাখ্যা দিয়েছে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি।
এবিষয়ে ইসলামী ব্যাংক বলছে, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি কর্মকর্তাদের যোগ্যতা যাচাইয়ের জন্য বিশেষ মূল্যায়ন পরীক্ষা গ্রহণের উদ্যোগ নেওয়ার পর কয়েকজন কর্মকর্তা এ পরীক্ষার বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট করেন। সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ বাংলাদেশ ব্যাংককে বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য নির্দেশ দেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ (ডিভিশন-২) থেকে বিষয়টি নিষ্পত্তি করে রিটকারী ও ইসলামী ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে অবহিত করে।
এতে বলা হয়, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি, একটি বেসরকারি মালিকানাধীন লাভজনক প্রতিষ্ঠান বিধায় এর কর্মকর্তা/কর্মচারীদের চাকরি দেশের প্রচলিত আইন, বিধি-বিধান ও নিয়োগের শর্ত দ্বারা নিয়ন্ত্রিত এবং যেহেতু চাকরি এবং কর্মকর্তা/কর্মচারীদের কর্মদক্ষতার সঙ্গে ব্যাংকের লাভ-লোকসান বহুলাংশে জড়িত, সেহেতু ব্যাংক স্বাধীনভাবে দেশের আইন ও বিধি-বিধান মেনে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে। এতদপ্রেক্ষিতে, বিশেষ যোগ্যতা মূল্যায়ন পরীক্ষা গ্রহণ এবং চাকরিতে কাউকে রাখা বা না রাখার বিষয় ব্যাংকের নিজস্ব এখতিয়ারভুক্ত।
ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (আইবিএ) মাধ্যমে গত ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখে বিশেষ যোগ্যতা মূল্যায়ন পরীক্ষার আয়োজন করে। এক্ষেত্রে আদালত অবমাননা বা আইনের কোনো ব্যত্যয় ঘটেনি।
ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি একটি শরিয়াহ কমপ্লায়েন্ট ব্যাংক। রাষ্ট্র ও নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থার সব নিয়মাচার পরিপালনের মাধ্যমে এ ব্যাংক পরিচালিত হচ্ছে। তাই উল্লিখিত পরীক্ষা কেন্দ্র করে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ব্যাংকে বিধিবহির্ভূত নিয়োগপ্রাপ্তরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন মিডিয়ায় যে অপপ্রচার চালাচ্ছে তাতে বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য আমাদের সম্মানিত গ্রাহক ও শুভানুধ্যায়ীসহ সবার প্রতি বিনীত অনুরোধ করছি।

পুঁজিবাজার
চারদিনের ছুটিতে ব্যাংক ও পুঁজিবাজার

বাঙালি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষ্যে বুধবার (১ অক্টোবর) থেকে টানা চার দিন ব্যাংক ও পুঁজিবাজারে কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) ব্যাংক ও পুঁজিবাজার সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
জানা গেছে, দুর্গাপূজা উপলক্ষে ১ অক্টোবর নির্বাহী আদেশে ছুটি থাকবে। বৃহস্পতিবার (২ অক্টোবর) বিজয়া দশমী উপলক্ষে একদিন ছুটি থাকবে। এরপর শুক্রবার (৩ অক্টোবর) ও শনিবার (৪ অক্টোবর) সাপ্তাহিক বন্ধ। সবমিলিয়ে চারদিন দেশের আর্থিক খাতের কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। ছুটি শেষে ৫ অক্টোবর থেকে ব্যাংক ও পুঁজিবাজারের লেনদেন শুরু হবে।
এদিকে, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ জানিয়েছে, ছুটি শেষে রবিবার থেকে সাধারণ সময়ের মত অর্থাৎ সকাল ১০টায় শুরু থেকে পুঁজিবাজারে লেনদেন চলবে। অন্যদিকে ছুটি শেষে রোববার থেকে সাধারণ সময়ের মতোই ব্যাংকগুলোতে লেনদেন চলবে।
ব্যাংক
ইসলামী ব্যাংকে এস আলমপন্থি ২০০ কর্মকর্তা বরখাস্ত, ওএসডি ৫ হাজার

বেসরকারি খাতের ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশে শুরু হয়েছে নজিরবিহীন এক শুদ্ধি অভিযান। চাকরিবিধি ভঙ্গ ও শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে এস আলমপন্থি ২০০ কর্মীকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। একই সঙ্গে ৪ হাজার ৯৭১ জন কর্মীকে ওএসডি (অন সার্ভিস ডিউটি) করা হয়েছে। ওএসডি হওয়া কর্মীরা বেতন-ভাতা ঠিকই পাবেন, কিন্তু কোনো দায়িত্ব বা কর্মস্থলে থাকবে না। এ কারণে ব্যাংকটির ভেতরে নতুন করে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে।
ব্যাংক সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, চট্টগ্রামের প্রভাবশালী ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান এস আলম গ্রুপ ২০১৭ সালে ইসলামী ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ নেয়। তখন থেকেই হাজারো কর্মীকে কোনো পরীক্ষা ছাড়াই সরাসরি সিভি নিয়ে নিয়োগ দেওয়া হয়। এসব নিয়োগের বেশিরভাগ হয়েছিল চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার বাসিন্দাদের মধ্যে থেকে। ফলে বর্তমানে ব্যাংকের প্রায় অর্ধেক কর্মীই ওই অঞ্চলের মানুষ।
ব্যাংকের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা অভিযোগ করে বলেন, এস আলমের আমলে অযোগ্য লোক নিয়োগ দিয়ে ব্যাংকটিকে ধ্বংস করা হয়েছে। আমরা ব্যাংকের স্বার্থেই সবাইকে যোগ্যতা যাচাই পরীক্ষার আওতায় এনেছি।
বাংলাদেশ ব্যাংক ও আদালতের নির্দেশনায় গত শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) এই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। মোট ৫ হাজার ৩৮৫ জন কর্মকর্তাকে পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য বলা হলেও মাত্র ৪১৪ জন উপস্থিত হন। তারা নিয়মিত কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু যারা পরীক্ষায় অংশ নেননি, সেই ৪ হাজার ৯৭১ জনকে পরদিন থেকেই ওএসডি করা হয়েছে। আর যারা পরীক্ষার আয়োজন নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়িয়েছেন বা প্রকাশ্যে বিরোধিতা করেছেন, তাদের মধ্যে ২০০ জনকে সরাসরি চাকরিচ্যুত করা হয়েছে।
তবে, ওএসডি হওয়া কর্মকর্তাদের দাবি, এক মাস আগে তাদের রিট আবেদনের ভিত্তিতে হাইকোর্ট নিয়মিত প্রমোশনাল পরীক্ষা চালানোর নির্দেশ দিয়েছিল। ব্যাংক সেই আদেশ অমান্য করে নতুন পরীক্ষা নিয়েছে, যা বেআইনি। এ কারণে তারা আবার আদালতের শরণাপন্ন হবেন বলেও জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, ছাঁটাইয়ের উদ্দেশ্যে পরীক্ষা নেওয়ার ঘটনা দেশে এই প্রথম। সাধারণত পদোন্নতির জন্য ভাইভা নেওয়া হয়, কিন্তু কর্মীদের মান যাচাই পরীক্ষার বিষয়টি নতুন অভিজ্ঞতা।
তিনি আরও বলেন, ইসলামী ব্যাংক একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। তাই কর্মী নিয়োগ বা যোগ্যতা যাচাই সম্পূর্ণ তাদের এখতিয়ারভুক্ত, তবে আইন ও নীতিমালার মধ্যে থেকেই তা করতে হবে।
জানা যায়, এস আলম গ্রুপ ইসলামী ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর নানা কৌশলে প্রায় ১ লাখ ৩১ হাজার কোটি টাকা তুলে নেয়। এতে ব্যাংকটি গভীর আর্থিক সংকটে পড়ে। গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বাংলাদেশ ব্যাংক ইসলামী ব্যাংককে এস আলমের নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্ত করে নতুন পর্ষদ নিয়োগ দেয়। এরপর থেকেই অযোগ্য নিয়োগ পাওয়া কর্মীদের বাছাই করতে এবং ব্যাংককে ঘুরে দাঁড়াতে বিশেষ যোগ্যতা যাচাই পরীক্ষার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, ইসলামী ব্যাংকের বর্তমান পরিস্থিতি পুরোপুরি নির্ভর করছে আদালত, বাংলাদেশ ব্যাংক ও ব্যাংক কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের ওপর। যদি বিশেষ পরীক্ষা ও ছাঁটাই প্রক্রিয়া চলমান থাকে, তবে হাজার হাজার কর্মীর ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তায় পড়ে যাবে। আর আদালত যদি কর্মীদের দাবিকে গুরুত্ব দেয়, তবে ব্যাংককে নতুন করে সমাধান খুঁজতে হবে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এ প্রক্রিয়া ইসলামী ব্যাংকের ভেতরে বড় ধরনের পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। একই সঙ্গে এটি দেশের ব্যাংকিং খাতে নতুন এক নজির, যেখানে কর্মীদের দক্ষতা যাচাইয়ের জন্য সরাসরি পরীক্ষা নিয়ে চাকরি বহাল রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে।
ব্যাংক
স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের ৫৪ গ্রাহকের টাকা উধাও

বিদেশি খাতের স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক (এসসিবি) বাংলাদেশের গ্রাহকদের ক্রেডিট কার্ড থেকে অভিনব কৌশলে টাকা তুলে নিয়েছে একটি প্রতারক চক্র। ভুক্তভোগী গ্রাহকরা কোনো লেনদেন না করলেও হঠাৎ করেই তাদের কার্ড থেকে প্রতিবারে ৫০ হাজার টাকা করে বিকাশ ও নগদের অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর হয়ে যায়। পরে সেখান থেকে দ্রুতই টাকা তুলে নেয় চক্রটি।
ব্যাংক খাত সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, আগস্টের শেষ সপ্তাহে এসসিবির ৫৪ জন গ্রাহকের অ্যাকাউন্ট থেকে প্রায় ২৭ লাখ টাকা সরিয়ে নেয় প্রতারকরা। ঘটনার পর ব্যাংকটি কার্ড থেকে বিকাশ ও নগদের মাধ্যমে অর্থ স্থানান্তর বন্ধ করে দিয়েছে।
গ্রাহকদের পাঠানো বার্তায় জানানো হয়েছে, নিরাপত্তার স্বার্থে এমএফএস অ্যাপে ‘অ্যাড মানি’ অপশন সাময়িকভাবে স্থগিত রাখা হয়েছে। এছাড়া বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংক ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানানো হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক এরই মধ্যে তদন্ত শুরু করেছে।
এ ঘটনার পর কয়েকজন ভুক্তভোগী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাদের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। হাসিন হায়দার নামের এক গ্রাহক লিখেছেন, তার কার্ড থেকে কোনো কারণ ছাড়াই ৫০ হাজার টাকা কেটে নেওয়া হয় বিকাশে। ফোনে ওটিপি পেলেও সেটি কারও সঙ্গে শেয়ার করেননি। মাত্র কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই টাকা স্থানান্তর হয়ে যায়। তার দাবি, এটি ব্যাংকের নিরাপত্তা সংক্রান্ত ত্রুটি।
আরেক গ্রাহক সাদিয়া শারমিন বৃষ্টি জানান, সাত বছর ধরে কার্ড ব্যবহার করলেও এবারই প্রথম তিনি প্রতারণার শিকার হয়েছেন। তার অ্যাকাউন্ট থেকেও একইভাবে ৫০ হাজার টাকা কেটে নেওয়া হয়েছে।
এসসিবির কর্মকর্তারা বলেন, একাধিক অভিযোগ পাওয়ার পর স্থানীয় ও বৈশ্বিক প্রযুক্তি দল নিরাপত্তা যাচাই করেছে। তবে ব্যাংকের সিস্টেমে কোনো ত্রুটি পাওয়া যায়নি। যেহেতু টাকা স্থানান্তর হয়েছে এমএফএস প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে, তাই দায়ভার পরিষ্কার করতে হবে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকেই।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রতারণার মাধ্যমে যেসব বিকাশ ও নগদ অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠানো হয়েছিল, কয়েক মিনিটের মধ্যেই সেখান থেকে নগদে তোলা হয় এবং পরে অ্যাকাউন্টগুলো বন্ধ হয়ে যায়। এতে প্রমাণিত হয়, ঘটনার সঙ্গে অভিজ্ঞ প্রতারক চক্র জড়িত।
ব্যাংক
পাঁচ ব্যাংক চূড়ান্তভাবে একীভূত করতে বসছে প্রশাসক

সমস্যাগ্রস্ত পাঁচটি শরিয়াভিত্তিক বেসরকারি ব্যাংক একীভূত করে নতুন একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক গঠনের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে বিশেষ সভায় বসেছে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ।
মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বিকেল ৩টায় বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে শুরু হয় এ বিশেষ বোর্ড সভা। গভর্নর আহসান এইচ মনসুরের সভাপতিত্বে সভায় উপস্থিত রয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বোর্ড সদস্যরা।
জানা গেছে, সভায় ব্যাংক রেজল্যুশন অধ্যাদেশ অনুযায়ী, একীভূত হওয়া পাঁচ ব্যাংকে একজন করে প্রশাসক বসানো হবে। প্রতিটি প্রশাসকের সহায়তায় থাকবেন আরও চারজন করে কর্মকর্তা। লক্ষ্য— আমানতকারীদের অর্থ নিরাপদে ফেরত দিয়ে ব্যাংক খাতের প্রতি গ্রাহকদের আস্থা ফিরিয়ে আনা।
সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক ও এক্সিম ব্যাংককে একীভূত করে গঠন করা হবে একটি নতুন রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংক, যার সম্ভাব্য নাম হবে ‘ইউনাইটেড ইসলামী ব্যাংক’। নতুন এ ব্যাংকটির জন্য শিগগিরই লাইসেন্স ইস্যু করবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, একীভূতকরণের পর বিদ্যমান পরিচালনা পর্ষদ ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) পদ শূন্য হয়ে যাবে। ব্যাংকগুলোর শেয়ারও শূন্য ঘোষণা করা হবে। তবে কর্মকর্তা-কর্মচারী ও আমানতকারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। একীভূত ব্যাংকের সব সম্পদ ও দায়ভার স্থানান্তরিত হবে নতুন গঠিত ব্যাংকের অধীনে। এরপর আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করবে ইউনাইটেড ইসলামী ব্যাংক। একটি নির্দিষ্ট পর্যায়ে পৌঁছানোর পর এই ব্যাংকের শেয়ার বেসরকারি খাতে ছেড়ে দিয়ে সরকারের বিনিয়োগ ফেরত নেওয়া হবে। পাশাপাশি বড় অঙ্কের আমানতকারীদের শেয়ার নেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হবে। তবে ছোট আমানতকারীরা চাইলে তাদের টাকা তুলতে পারবেন— এতে কোনো বাধা দেওয়া হবে না।
জানা গেছে, এই পাঁচ ব্যাংকের ৪৮ থেকে ৯৮ শতাংশ পর্যন্ত ঋণ এখন খেলাপি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, একীভূতকরণ প্রক্রিয়ার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের পরিমাণ ৩৫ হাজার ২০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারই দিচ্ছে ২০ হাজার ২০০ কোটি টাকা।
এসব ব্যাংকের মধ্যে চারটি (ফার্স্ট সিকিউরিটি, ইউনিয়ন, গ্লোবাল ও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক) দীর্ঘদিন ধরে এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে ছিল। একমাত্র এক্সিম ব্যাংক ছিল নাসা গ্রুপের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদারের অধীনে।
চলতি মাসের শুরুতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক একীভূত হতে যাওয়া ব্যাংকগুলোর চেয়ারম্যান ও পরিচালকদের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক করে। তখন শেষবারের মতো তাদের কাছে জানতে চাওয়া হয়— কেন তাদের একীভূতের আওতায় আনা উচিত হবে না।
ফার্স্ট সিকিউরিটি, ইউনিয়ন ও গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক সরাসরি একীভূত হতে রাজি হয়। তবে, এক্সিম ব্যাংক ও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক সময় চাইলেও তা দেওয়া হয়নি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, এই একীভূতকরণের মাধ্যমে ইসলামী ব্যাংক খাতে দীর্ঘদিনের অনিয়ম ও দুর্নীতির অবসান ঘটবে এবং পুনর্গঠনের মাধ্যমে গ্রাহকদের আস্থা ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে।
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সহযোগিতায় কয়েকটি শিল্পগোষ্ঠীর অযাচিত হস্তক্ষেপ, নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে এই পাঁচটি শরিয়াভিত্তিক ব্যাংক চরম বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। এই ব্যাংকগুলোর ঋণের বড় একটি অংশ এখন খেলাপি হয়ে গেছে। ফলে লোকসানে থাকা ব্যাংকগুলো অনেক ক্ষেত্রে গ্রাহকের আমানত ফেরত দিতে পারছে না। এমন পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক দুর্বল এই ব্যাংকগুলোকে একীভূত করে নতুনভাবে গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
ব্যাংক
ডিজিটাল ব্যাংক খোলার আবেদনের সময় বাড়ল

ডিজিটাল ব্যাংক প্রতিষ্ঠার জন্য আবেদনপত্র জমা দেওয়ার সময় ২ নভেম্বর পর্যন্ত বাড়িয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর আগে আবেদনের সময় ছিল চলতি বছরের ১ থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। সোমবার এক বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ২৬ আগস্ট ডিজিটাল ব্যাংক স্থাপনের আবেদন আহ্বান করা হয়। তখন আবেদন গ্রহণের শেষ তারিখ ৩০ সেপ্টেম্বর নির্ধারিত ছিল। ডিজিটাল ব্যাংক স্থাপনের লক্ষ্যে আবেদনকারীদের পূর্ণাঙ্গ ও মানসম্মত প্রস্তাবনা তৈরি এবং বিভিন্ন দলিলাদি সংগ্রহের বিষয়টি বিবেচনায় ডিজিটাল ব্যাংক স্থাপনের আবেদন গ্রহণের তারিখ আগামী ২ নভেম্বর সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত বর্ধিত করা হলো। এর আগে প্রযুক্তিনির্ভর আর্থিক খাতে বৈশ্বিক পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ ব্যাংক ডিজিটাল ব্যাংকের অনুমোদন দেওয়ার উদ্যোগ নেয়। এর লক্ষ্য হলো আর্থিক খাতের দক্ষতা বাড়ানো, সেবার পরিসর বিস্তৃত করা এবং ক্ষুদ্র, কুটির ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের (সিএমএসই) অর্থায়নের সুযোগ সহজ করা।
তখন বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের সুযোগ কাজে লাগিয়ে টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করা এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখাই এই উদ্যোগের মূল লক্ষ্য। বিশেষ করে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য ঋণপ্রবাহ সহজ করতে ডিজিটাল ব্যাংককে গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার মনে করছে তারা।
বাংলাদেশ ব্যাংক মনে করে, ধারাবাহিক প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনের ফলে বৈশ্বিক আর্থিক খাতের চিত্র বদলে গেছে। এই পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ বিবেচনায় নিয়ে আর্থিক পণ্য ও সেবা প্রদানে অধিক কার্যকারিতা আনতে এবং আর্থিক ব্যবস্থার বিস্তৃত পরিসর তৈরি করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক অগ্রাধিকার দিচ্ছে।
আবেদনের নিয়ম: আবেদনকারীদের নির্ধারিত প্রস্তাবপত্রের সঙ্গে ৫ লাখ টাকা (অফেরতযোগ্য) ফি জমা দিতে হবে। এ টাকা যে কোনো তপশিলি ব্যাংক থেকে ব্যাংক ড্রাফট বা পে-অর্ডারের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুকূলে দিতে হবে। শর্ত পূরণ না করলে আবেদন বাতিল হবে। এছাড়া আবেদনপত্র সরাসরি জমা দেওয়ার পাশাপাশি ইমেইলের মাধ্যমেও সব নথি জমা দিতে হবে। বিস্তারিত নির্দেশনা বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে।