Connect with us
৬৫২৬৫২৬৫২

মত দ্বিমত

চরকায় তেল ঢালুন, ভণ্ডদের বাজার শূন্য করুন

Published

on

পুঁজিবাজার

সবাই আমরা সোনার বাংলাকে ভালোবাসি—এই কথা শুনলে গর্ব হয়। কিন্তু প্রশ্ন হলো—আমরা কি সত্যিই সেই ভালোবাসার মর্ম বুঝি? ভালোবাসা তো শুধু মুখের বুলি নয়; সেটি অনুভব করতে হয়, কাজে প্রকাশ করতে হয়। ভালোবাসার প্রকৃত অর্থ হলো দেশের উন্নতি, মানুষের কল্যাণ, ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা, আর সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা। কিন্তু আজকের বাস্তবতায় আমরা কি এসবের জন্য কিছু করছি? নাকি ভালোবাসার নাম করে দেশকে ভাগাভাগি করছি, বিদ্বেষ ছড়াচ্ছি, আর ব্যক্তিগত স্বার্থের পেছনে ছুটছি?

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

আমরা দেশকে ভালোবাসি বলি, কিন্তু নিজের জীবনযাপন, আচরণ, সিদ্ধান্ত—সবকিছু দিয়ে কি সেই ভালোবাসাকে সম্মান দিচ্ছি? নাকি দেশকে শুধু একটা ভৌগোলিক ঠিকানা ভাবছি, যেখানে টাকা রোজগার হয়, সুবিধা পাওয়া যায়, আর অন্যায়ের প্রতি চুপ থাকা যায়?

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

ভালোবাসা মানে শুধু আবেগ নয়—এটি দায়িত্ব। দায়িত্ব নিজের দেশকে ভালোবাসতে, তার উন্নয়নে কাজ করতে, অবিচার ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে দাঁড়াতে। আজ আমাদের অভাব নেই ভালোবাসার; আমাদের অভাব ভালোবাসার প্রমাণের।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

তাহলে দেখা যাক, কোন কোন কুকর্ম সোনার বাংলাকে ভালোবাসার সাথে কোনোভাবেই মিলতে পারে না—
দুর্নীতি: জনগণের ঘামঝরা টাকায় হাত চালানো, দায়িত্বের দরজা বন্ধ করে ব্যক্তিগত ভান্ডার ভরাট করা।
সন্ত্রাসবাদ: ভয় আর আতঙ্কের ছায়া ফেলে জনজীবনকে জিম্মি করা।
চাঁদাবাজি: শ্রমজীবী মানুষের রক্ত চুষে নেওয়া।
কাজে ফাঁকি: কর্তব্য ফেলে দায়িত্বের কফিনে শেষ পেরেক ঠুকে দেওয়া।
গুজব ছড়ানো: মিথ্যার আগুন জ্বালিয়ে ঘৃণার বাতাস বইয়ে দেওয়া।
মিথ্যাচার: সত্যকে হত্যা করে অবিশ্বাসের রাজত্ব কায়েম করা।
গরিবের হক চুরি: অভাবীর অন্ন কেড়ে নিয়ে তৃপ্তির হাসি হাসা।
স্বার্থপরতা: দেশের স্বার্থকে জলাঞ্জলি দিয়ে ব্যক্তিগত এজেন্ডার পূজা করা।
বিভাজন সৃষ্টিকারী রাজনীতি: মানুষকে মানুষ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ভ্রাতৃত্বকে বিষিয়ে দেওয়া।
অযোগ্য নেতৃত্ব: উন্নয়নকে অবরুদ্ধ করে দেশের স্বপ্নকে শ্বাসরুদ্ধ করা।

এখন প্রশ্ন—যে রাজনীতিবিদ বুকে হাত দিয়ে গর্জে বলে “আমি সোনার বাংলাদেশকে ভালোবাসি”, অথচ তার কর্মকাণ্ড এই কুকর্মের তালিকায় পাওয়া যায়—তার ভালোবাসা কি সত্যি? নাকি সুপরিকল্পিত প্রতারণা?

দেশপ্রেম কোনো অনুষ্ঠানমুখী প্রদর্শনী নয়—না জাতীয় সঙ্গীতের সুরে দাঁড়িয়ে থাকা, না শহীদ মিনারে খালি পায়ে যাওয়া, না স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে ছবি তোলা। আসল দেশপ্রেম শুরু হয় পরিবার থেকে, দায়িত্ব থেকে, বিবেক থেকে। আপনি যদি ঘরের মানুষকে মর্যাদা দেন, অন্যের অধিকারকে শ্রদ্ধা করেন, সততা দিয়ে জীবিকা অর্জন করেন—তাহলেই দেশের হৃদস্পন্দনে ভালোবাসা ঢেলে দিচ্ছেন। নিজের চর্কায় তেল দিলে গোটা দেশের চাকা সচল থাকে—আর তাতেই বেঁচে ওঠে সোনার বাংলার স্বপ্ন। কিন্তু সেই স্বপ্ন জাগাতে হলে প্রথমে আমাদের মুক্ত করতে হবে দেশকে সেই সুবর্ণ ডাকাতদের হাত থেকে—যারা ক্ষমতায় উঠে জনগণের কাঁধে পা দিয়েছে, কিন্তু সেই কাঁধের হাড় ভেঙে দিয়েছে। আজ যারা দেশকে “মা” বলে ডাকে, তারাই মায়ের গলার হার, কানের দুল, এমনকি খোঁপার ফুলও চুরি করে নেয়।

তাদের দেশপ্রেমের মাপ হয় বিদেশি ব্যাংকে ডলারের অঙ্ক দিয়ে, আর জনগণের ভালোবাসা মাপে আগেই ভরা ভোটের বাক্স দিয়ে। তারা ভাবে দলীয় পতাকা উঁচিয়ে রাখলেই দায়িত্ব শেষ—কিন্তু দেশপ্রেম মানে নীরব আত্মত্যাগ, সততা ও দায়বদ্ধতা।

যেদিন আমরা সবাই মিলে নিজেদের চর্কায় তেল ঢালতে শুরু করব, সেদিন “দেশপ্রেমের ব্যবসায়ীরা” বুঝতে পারবে—বাজারে তাদের কোনো ক্রেতাই নেই। আর সেদিন সোনার বাংলার স্বপ্ন শুধু বাঁচবেই না—সে স্বপ্ন দাঁড়াবে এই ভণ্ড দেশপ্রেমিকদের কবরের উপর, হেসে বলবে—এবার তোমাদের বিদায়।

রহমান মৃধা, সাবেক পরিচালক, ফাইজার সুইডেন। Rahman.Mridha@gmail.com

শেয়ার করুন:-

মত দ্বিমত

পরাজিত সশস্ত্র বাহিনীর হাতে কিভাবে বাংলাদেশ সুরক্ষিত থাকতে পারে?

Published

on

পুঁজিবাজার

৫ আগস্ট ২০২৪ বাংলাদেশের ইতিহাসে এক নাটকীয় ও অভূতপূর্ব দিন। সেদিন দীর্ঘদিনের স্বৈরশাসক শেখ হাসিনা হঠাৎ করে দেশ ত্যাগ করেন এবং নিরাপদে ভারতে পৌঁছান। আরও বিস্ময়কর হলো, এই সেফ এক্সিট নিশ্চিত করে সেনাবাহিনী-যা দেশের সংবিধান বা প্রচলিত আইন কোথাও অনুমোদিত নয়। একজন ক্ষমতাচ্যুত ও জনগণের রোষানলে পতিত শাসককে সামরিক বাহিনী পালাতে সাহায্য করেছে-এটি শুধু নৈতিক অবক্ষয়ের নজির নয়, বরং রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বের ওপর সরাসরি আঘাত।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

১৯৭১ সালে পাকিস্তান পরাজিত হওয়ার পর তাদের সৈন্যরা পাকিস্তানের সেনাবাহিনীতে আর ফেরেনি। বিশ্বজুড়ে এটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া—যারা দেশের স্বাধীনতা ও জনগণের আস্থা হারায়, তারা সামরিক বাহিনীর অংশ থাকতে পারে না। কিন্তু বাংলাদেশে উল্টো চিত্র: ৫ আগস্ট ২০২৪-এর পরও সেই একই সেনা কর্মকর্তা ও সদস্যরা দিব্যি পদে বহাল, বেতন তুলছে এবং দেশের অবনতির নীরব দর্শক হয়ে আছে।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পালিয়ে যান, সেনাবাহিনীর সহায়তায় সেফ এক্সিট পান। রাজধানী ও প্রধান শহরে জনতার স্বস্তি ও ক্ষোভ মিশ্র প্রতিক্রিয়া—স্বস্তি কারণ স্বৈরশাসকের পতন, ক্ষোভ কারণ তিনি বিচার বা জবাবদিহি ছাড়াই পালিয়ে গেলেন। ৬ আগস্ট দেশের বিভিন্ন স্থানে জনগণ উচ্ছ্বাস প্রকাশের পাশাপাশি স্বচ্ছ তদন্ত ও বিচার দাবি জানায়। কিন্তু সামরিক বাহিনী নীরব থাকে, প্রশাসন ভেঙে পড়ে, ক্ষমতার শূন্যতা তৈরি হয়। ৭ থেকে ১০ আগস্ট আইন-শৃঙ্খলার অবনতি শুরু হয়। বিভিন্ন জায়গায় লুটপাট, সহিংসতা ও প্রতিশোধমূলক হামলার ঘটনা ঘটে। সেনাবাহিনী তৎপর না হয়ে বরং দূর থেকে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে—যা জনগণের মধ্যে সন্দেহ আরও বাড়িয়ে তোলে। ১১ আগস্ট অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আলোচনা শুরু হয়, কিন্তু প্রশাসন ও নিরাপত্তা কাঠামো এখনও মূলত পুরোনো শাসকের অনুগতদের হাতে। জনগণ উপলব্ধি করে—এ পরিবর্তন কেবল মুখোশ; রাষ্ট্রযন্ত্র এখনো শিকড়ে পরিবর্তিত হয়নি। ১২ আগস্ট এবং পরবর্তী সময়ে আন্দোলনের নতুন ঢেউ ওঠে, দাবি ওঠে—পরাজিত সেনা ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হোক। কিন্তু ক্ষমতাধর মহল নানা অজুহাতে তা বিলম্বিত করে।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

যে সেনাবাহিনী জনগণের অধিকার রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছে, স্বৈরশাসককে পালাতে সহায়তা করেছে, এবং পরাজয়ের পরও পদে বহাল আছে—তাদের হাতে দেশের নিরাপত্তা রাখা কতটা যৌক্তিক? যদি রাষ্ট্র তার পরাজিত ও অবিশ্বস্ত রক্ষকদের সরাতে না পারে, তবে সার্বভৌমত্ব, ন্যায়বিচার ও গণতন্ত্র কি সত্যিই প্রতিষ্ঠা পাবে? এটাই এখন বাংলাদেশের সামনে সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক ও নৈতিক সংকট।

বাংলাদেশ ৫ আগস্ট ২০২৪-এ গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে স্বৈরশাসককে সরালেও, রাষ্ট্রপ্রধানের পদে রয়ে গেলেন সেই স্বৈরাচারেরই পছন্দের ও নিয়োগপ্রাপ্ত ব্যক্তি। একজন রাষ্ট্রপতি, যিনি জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত নন, বরং ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর স্বার্থে বসানো—তিনি এখনও দেশের সর্বোচ্চ সাংবিধানিক পদে বহাল। এটি শুধু রাজনৈতিক ব্যর্থতা নয়, বরং গণতান্ত্রিক নীতির প্রতি চরম অবমাননা।

প্রশ্ন উঠছে—অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গত এক বছরে আসলে কী করেছে? সংস্কারের নামে নানা ঘোষণা এসেছে, কিন্তু বাস্তবে প্রশাসনিক কাঠামোতে বড় কোনো পরিবর্তন হয়নি; দুর্নীতি ও পক্ষপাতিত্ব আগের মতোই বিদ্যমান। সেনা ও নিরাপত্তা বাহিনী এখনও পুরোনো শাসকের অনুগত কর্মকর্তাদের দখলে। বিচার ব্যবস্থা জনআস্থা পুনরুদ্ধার করতে ব্যর্থ হয়েছে; রাজনৈতিক অপরাধের বিচার প্রায় স্থবির। ফলে সংস্কারের বদলে জনগণ দেখেছে—প্রতারণা, সময়ক্ষেপণ এবং ক্ষমতা আঁকড়ে ধরা।

বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক পুনর্গঠনের সবচেয়ে বড় পদক্ষেপ হওয়া উচিত একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন। কিন্তু আজও প্রশ্ন রয়ে গেছে—নির্বাচন কবে হবে, তা কোনও সুনির্দিষ্ট তারিখে ঘোষণা করা হয়নি। নির্বাচন পরিচালনার নিয়ম-কানুন কে ঠিক করবে, তা নিয়ে স্বচ্ছ প্রক্রিয়া নেই। বিরোধী দল ও নাগরিক সমাজকে আলোচনার টেবিলে আনার প্রকৃত উদ্যোগ দেখা যায়নি। ফলে জনগণ আশঙ্কা করছে—নির্বাচন আবারও ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর হাতে সাজানো নাটকে পরিণত হবে।

৫ আগস্ট ২০২৪-এর পর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কিছুদিনের জন্য ভেঙে পড়ে। পরে সামরিক বাহিনী ও পুলিশ আংশিক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করলেও রাজনৈতিক সহিংসতা এখনও চলছে; প্রতিশোধমূলক হামলা থামেনি। গ্রামীণ এলাকায় অপরাধ ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বেড়েছে। সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মীরা হয়রানি, হুমকি ও হামলার মুখে কাজ করছেন। বাংলাদেশ কার্যত একটি অসুরক্ষিত অস্থিরতার জোনে পরিণত হয়েছে।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে ড. মুহাম্মদ ইউনূস শুরুতে জনগণের মধ্যে আশা জাগালেও, বাস্তবে তাঁর ভূমিকা এখন প্রশ্নবিদ্ধ। ৩-জিরো ধারণা (দারিদ্র্য শূন্য, বেকারত্ব শূন্য, কার্বন নিঃসরণ শূন্য) নিয়ে তিনি ব্যস্ত থেকেছেন, অথচ দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তা সংকটে কার্যকর সমাধান আনতে পারেননি। ক্ষমতার কেন্দ্রে থাকা সত্ত্বেও তিনি রাষ্ট্রপতি, সেনাবাহিনী ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার কাঠামোগত সংস্কার এড়িয়ে গেছেন। ফলে অনেকেই বলছেন- ড. ইউনূস ৩-জিরো নিয়ে ভাবতে গিয়ে নিজেকে রাজনৈতিক শূন্যে পরিণত করেছেন।

বাংলাদেশ আজ একটি অস্থির সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে। আমরা দেখেছি ক্ষমতার অপব্যবহার, সংস্কারের নামে প্রতারণা, এবং নেতৃত্বের ব্যর্থতা। কিন্তু ইতিহাস বারবার প্রমাণ করেছে-যে জাতি স্বাধীনতার জন্য রক্ত দিতে পারে, সে জাতি নিজেদের ভাগ্যেরও নির্মাতা হতে পারে। ৫ আগস্ট ২০২৪ কেবল একটি তারিখ নয়; এটি ছিল জনগণের শক্তির এক বিস্ফোরণ। সেই শক্তি আজও মরে যায়নি—শুধু সংগঠিত হওয়া এবং সঠিক দিক নির্দেশনার অপেক্ষায় আছে। আজ প্রয়োজন গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য অটল জনচাপ, সত্যিকারের যোগ্য নেতৃত্ব বেছে নেওয়ার সাহস, এবং রাষ্ট্রের প্রতিটি স্তরে জবাবদিহি প্রতিষ্ঠা। অতীতের ভুল আমাদের শিক্ষা দিয়েছে; এখন সেটিকে পরিবর্তনের পাথেয় করতে হবে। যদি আমরা প্রত্যেকে নিজের অবস্থান থেকে ন্যায়, স্বচ্ছতা ও সততার পক্ষে দাঁড়াই—তাহলেই বাংলাদেশ আবার নতুন ভোরের মুখ দেখবে। কারণ, অন্ধকার যতই গভীর হোক, ভোর ঠিক আসবেই।

রহমান মৃধা
গবেষক ও লেখক
(সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন)
Rahman.Mridha@gmail.com 

শেয়ার করুন:-
পুরো সংবাদটি পড়ুন

মত দ্বিমত

৩৩ বছর বয়সে রাষ্ট্রদূত নিয়োগ নিয়ে বিতর্ক, হাসিনার পালিয়ে যাওয়াও নজিরবিহীন

Published

on

পুঁজিবাজার

হাসিনার পালিয়ে যাওয়াও নজিরবিহীন! যেমন নজিরবিহীন ছাত্রদের ২৭ বছর বয়সে উপদেষ্টা হওয়া। অথচ পৃথিবীর বহু দেশে ৩৫ বছরের আগেই মানুষ রাষ্ট্রপ্রধান হয়েছে। আলেকজান্ডার তো অর্ধেক পৃথিবী জয় করে ৩৩ বছর বয়সেই পৃথিবী ছেড়ে গেছে।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

বাংলাদেশে ২৫ বছর বয়সে শীর্ষ জাতীয় দৈনিকের পেশাদার সম্পাদক নিয়োগ হয়েছিল—যার অধীনে মতিউর রহমানের মতো লোকও কাজ করেছেন। আর এখানে নাকি ৩৩ বছর বয়সে রাষ্ট্রদূত হওয়া যাবে না! কারণ যদুর বাপ কদু ৫৮ বছর বয়সে রাষ্ট্রদূত হয়েছিল—তাই নাকি সবারও বুড়ো বয়সেই দায়িত্ব নিতে হবে! যোগ্যতা নয়, বয়সই হবে মাপকাঠি!

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

যার কথা বলছেন, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ফরেন সার্ভিস ইনস্টিটিউটে (এফএসআই) দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে নিয়োগপ্রাপ্ত নবনিযুক্ত মার্কিন কূটনীতিকদের জন্য লেকচারার হিসেবে বক্তৃতা প্রদান করেন। পৃথিবীর টপ সব পাবলিকেশন এবং জার্নালে তার বই ও আর্টিকেল প্রকাশিত হয়েছে। জটিল বিশ্ব রাজনীতির অন্যতম পাক্কা খেলোয়াড় একটি দেশের পার্লামেন্টের অ্যাডভাইজার এবং পার্লামেন্টারি ডিপ্লোম্যাট হিসেবে কাজ করেছেন | তাকে কিন্তু পৃথিবীর শীর্ষ সব মিডিয়া ইন্দো-প্যাসিফিক আর সাউথ এশিয়ান পলিটিক্স নিয়ে ইন্টারভিউ করে। তিনি ইউরো-এশিয়ার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইন্দো-প্যাসিফিক স্টাডিজের চেয়ারম্যান, সহযোগী অধ্যাপকও হয়ে গেছেন। অথচ আপনি ৬০ পেরিয়েছেন, তবু আপনাকে কেউ ডাকে না।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

তো জ্বালাটা আসলে এই—‘আমি পারিনি, তাই শালার পুত তোকে-ও হতে দেব না!’ এই তো আসল কথা!

লেখক: কামরান সিদ্দিকী, গণমাধ্যমকর্মী।

শেয়ার করুন:-
পুরো সংবাদটি পড়ুন

মত দ্বিমত

যখন শিক্ষিতরা আত্মা বিক্রি করলো- একটি জাতির পতনের বিবরণ

Published

on

পুঁজিবাজার

একটি দেশ ধ্বংস হতে পারে বহু উপায়ে—বিদেশি আগ্রাসনে, দুর্ভিক্ষে, প্রাকৃতিক দুর্যোগে। কিন্তু বাংলাদেশ ধ্বংস হয়েছে আরও ভয়াবহ এক পদ্ধতিতে—নিজের শিক্ষিত শ্রেণির বিশ্বাসঘাতকতায়। তারা এসেছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে, কেউ এসেছিল অক্সফোর্ড, হার্ভার্ড, লিংকনস ইন থেকে। কাঁধে ছিল ডিগ্রির ভার, মুখে ছিল চমৎকার উচ্চারণ, পরনে বিলেতি স্যুট। তারা ছিল বিচারপতি, মন্ত্রী, সাংবাদিক, শিল্পপতি, অধ্যাপক—এই জাতির ভবিষ্যতের দিশারী। অথচ তারাই হয়ে উঠল জাতির অন্ধকার অতীত ও বর্তমান।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

ব্যারিস্টার অ্যানিসুল হক—যুক্তরাজ্যে প্রশিক্ষিত একজন উজ্জ্বল আইনজীবী। আইনমন্ত্রী হিসেবে তিনি এমন আইন প্রণয়ন করলেন, যা স্বাধীন বিচারব্যবস্থাকে গলাটিপে ধরল এবং স্বৈরাচারকে আইনি বৈধতা দিল। আজ তিনিই সেই আইনের শিকার—জেলের অন্ধকার কুঠুরিতে নিঃসঙ্গ ও বিচ্ছিন্ন।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

সালমান এফ. রহমান—একসময় দেশের ‘শিল্পগুরু’ হিসেবে পরিচিত ছিলেন, বেক্সিমকোর প্রতিষ্ঠাতা। তিনি ব্যাংক থেকে শত শত কোটি টাকা ঋণ নিয়ে খেলাপি হয়েও প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টার নিরাপদ চাদরে ঢেকে ফেললেন নিজের কৃতকর্ম। কিন্তু অবশেষে তাকেও আটকে পড়তে হয়েছে একই ব্যবস্থার ফাঁদে।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

ডা. দীপু মনি—ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে পাশ করে যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষা গ্রহণকারী একজন শিক্ষিত নারী। পররাষ্ট্র ও শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে তিনবার দায়িত্ব পালন করেন। তার অধীনে গড়ে উঠেছিল দুর্নীতির রাজত্ব—শিক্ষাখাতে নিয়োগ বাণিজ্য, প্রবাসে পদবণ্টনে স্বজনপ্রীতি, এবং মন্ত্রণালয়ের প্রকল্পে হাজার হাজার কোটি টাকার অস্বচ্ছতা। একজন সম্ভাবনাময় নেত্রী হয়ে উঠলেন বিশ্বাসভঙ্গের প্রতীক।

রাশেদ খান মেনন—যিনি একদিন বলতেন “শোষণহীন সমাজ চাই”, তিনিই পরে জড়িয়ে পড়লেন ক্যাসিনো কেলেঙ্কারি ও ভূমিদস্যু সিন্ডিকেটে। বামপন্থী রাজনীতি থেকে ক্ষমতার অলিন্দে পৌঁছে তিনি ভুলে গেলেন আদর্শ, নীতিশূন্যতাই হয়ে উঠল তার রাজনৈতিক ধর্ম।

এই ব্যক্তিরা কেউই অজ্ঞ ছিলেন না। তারা ছিলেন সমাজের অগ্রভাগে, শিক্ষিত শ্রেণির প্রতিনিধিত্বকারী। তারা এসেছিল শিক্ষার আলো নিয়ে, কিন্তু হারিয়ে ফেলেছিল ন্যায়বোধ, মানবতা ও বিবেক।

তাদের অনেকেই শুধু বাংলাদেশের শিক্ষায় শিক্ষিত নয়—তারা বিশ্বের সেরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রি অর্জন করেছে। কেউ এসেছে অক্সফোর্ড, কেউ হার্ভার্ড, কেউ এমআইটি কিংবা কেমব্রিজ থেকে। এই ডিগ্রির ঝলকানো কাগজগুলো তাদের ঘরের দেয়াল সাজিয়েছে, কিন্তু তাদের মনুষ্যত্ব কিংবা নৈতিক বোধকে স্পর্শ করেনি একটুও। প্রশ্ন জাগে—শুধু কি এই সমাজ-ব্যবস্থাই তাদের বিকৃত করেছে? নাকি এই বিকৃতি তাদের রক্তে, বংশে, মানসিক শিরায় শিরায় বহন করে আনা এক অদ্ভুত রোগ? তারা হয়তো জন্মসূত্রেই পেয়েছে সেই আত্মকেন্দ্রিকতা, যেটা জ্ঞান অর্জনের পর আরও কুৎসিতভাবে প্রস্ফুটিত হয়েছে। তাদের শিক্ষা ছিল বাহ্যিক, কিন্তু বিবেক ছিল নিঃশেষ। ফলে তারা পরিণত হয়েছে এমন এক শ্রেণিতে, যারা জ্ঞান অর্জন করে শুধুই ক্ষমতা ও সুবিধা অর্জনের জন্য, কিন্তু মানবতার সেবা কিংবা জাতির কল্যাণ তাদের অভিধানে ছিল না, নেই—আর হবে বলেও মনে হয় না।

তারা বন্দনা করেছিল শেখ হাসিনাকে—গান, কবিতা, প্রবন্ধে। তারা লিখেছিল “মানবতার মা”, যখন চারপাশে নিখোঁজ মানুষদের আত্মীয়স্বজনের হাহাকার। তারা গেয়েছিল “উন্নয়ন”-এর গান, যখন চারপাশে ছিল লুটপাট, নির্যাতন, অসমতা।

শুধু রাজনীতিবিদরাই নয়—পুলিশ, প্রশাসন, আমলাতন্ত্র—সবাই শিক্ষিত, কিন্তু আত্মাহীন। তারা নির্বাচনের আগের রাতে ব্যালট বাক্স ভরেছিল। বিচারকেরা জানতেন রায় অন্য কেউ লেখে, তবু কলম চালাতেন নির্লজ্জভাবে। সাংবাদিকরা ঘুমিয়ে ছিল; তাদের কলম ছিল বিজ্ঞাপনের দাস, সম্পাদকরা প্রাসাদের অতিথি।

বিরোধী দলও রেহাই পায়নি। তাদের কিনে ফেলা হয়েছিল বাড়ি, ব্যবসা, বিদেশি নাগরিকত্ব, সন্তানদের নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতি দিয়ে। চিকিৎসকরা সরকারি ওষুধ পাচারে, প্রকৌশলীরা দুর্নীতিতে, শিক্ষকেরা নিয়োগে টাকার বাণিজ্যে লিপ্ত—এই ছিল দেশের শিক্ষিত শ্রেণির সম্মিলিত ভূমিকা।

এই আত্মার বিক্রয়েই শেখ হাসিনা হয়ে উঠলেন এক সর্বেসর্বা। দেশটা পরিণত হলো তার পারিবারিক সম্পত্তিতে, যেখানে জনগণ শুধু দর্শক। এবং একদিন—তিনি চলে গেলেন।

রাতারাতি প্রাসাদ খালি। কেউ পালালেন দুবাই, কেউ লন্ডন, কেউ জেলের অন্ধকারে। কিন্তু দেশ তখন শেষ। ব্যাংক খালি, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ফাঁকা, মানুষের বিশ্বাস ছিন্নভিন্ন। জাতি আর স্বপ্ন দেখে না, কারণ তাদের শেখানো হয়েছে—স্বপ্নের মূল্য শুধুই ক্ষমতা।

এটা এক ব্যক্তির ব্যর্থতা নয়। এটি ছিল একটি শ্রেণির পরাজয়। তারা পড়াশোনা করেছিল, কিন্তু শেখেনি বিবেক। তারা উচ্চশিক্ষিত ছিল, কিন্তু হৃদয়হীন। জাতি যখন তাদের কাছ থেকে চেয়েছিল আলোর দিশা, তারা ফিরিয়ে দিয়েছিল অন্ধকার।

আজ জাতি জেগে উঠছে ধ্বংসস্তূপের মাঝে দাঁড়িয়ে। তারা প্রশ্ন করছে— “কোথায় ছিল কবিরা?” “কোথায় ছিল শিক্ষকরা?” “কোথায় ছিল বিবেকবান মানুষ?” উত্তর নেই। আছে শুধু নীরবতা। শিক্ষিতদের সেই ভয়ঙ্কর, অপরাধী নীরবতা— যে নীরবতায় হারিয়ে গেছে একটি জাতি।

রহমান মৃধা, প্রবাসী বাংলাদেশি, গবেষক ও লেখক (সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন)। Rahman.Mridha@gmail.com

শেয়ার করুন:-
পুরো সংবাদটি পড়ুন

মত দ্বিমত

“১৭ বছর খাইনি, এখন খাবো” এই স্লোগানের পেছনের রক্তাক্ত সত্য

Published

on

পুঁজিবাজার

গত ৫ আগস্টের পর দেশের রাজনীতির আকাশে যেন আগুন লেগেছে। “১৭ বছর খাইনি, এখন খাবো”—এই উক্তিটি শুধু একটি দলীয় ঘোষণা নয়, বরং রাষ্ট্রশাসনের এক নির্মম দৃষ্টান্ত, যেখানে লুটপাটকে বৈধতা দেওয়া হয়, আর দুর্নীতিকে উন্নয়নের বিকল্প বলা হয়।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

কিন্তু প্রশ্ন হলো—কার সম্পদ খাবো? কতদিন খাবো? আর সেই খাবারটা আসবেই বা কোত্থেকে? একটা রাষ্ট্র যখন খাওয়ার রাজনীতিতে চলে যায়, তখন সেটি আর গণতন্ত্র থাকে না, হয়ে ওঠে শোষকের যন্ত্র। অর্থনীতিতে যখন প্রবৃদ্ধির গল্প বলে মানুষকে ঘুম পাড়ানো হয়, তখন কেউ কি জিজ্ঞেস করে—এই প্রবৃদ্ধির উপকারভোগী কারা? রিজার্ভ নেই, খনিজসম্পদ নেই, শিল্পবিপ্লবও নেই—তবু সবাই খাবে?

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

দেশের বৈদেশিক রিজার্ভ ক্রমেই হ্রাস পাচ্ছে। রপ্তানি হ্রাস পাচ্ছে, বৈধ পথে রেমিটেন্স আসা কমে গেছে, কর্মসংস্থান সংকুচিত হচ্ছে। দেশে এমন কোনো টেকসই শিল্প নেই, যার মাধ্যমে সমগ্র রাষ্ট্র পরিচালিত হতে পারে।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

তাহলে এই লুটপাট চালাতে অর্থ আসবে কোথা থেকে? কে দেবে এই ‘খাওয়ার’ খরচ? সোজা উত্তর—জনগণ। অর্থাৎ, চাকরিজীবী মধ্যবিত্ত থেকে শুরু করে রিকশাওয়ালা, কৃষক, গার্মেন্টস শ্রমিক—সবাইকে ট্যাক্স, মূসক, দাম বৃদ্ধি আর দুর্নীতির মাধ্যমে চুষে খাওয়াই হবে এখন রাষ্ট্রের মূলনীতি।

যখন রাষ্ট্র হয়ে ওঠে মাফিয়া। যদি রাষ্ট্রের মূল উদ্দেশ্যই হয় একটি গোষ্ঠীকে খাওয়ানো, তবে তা আর রাষ্ট্র নয়—তা একটি মাফিয়া সিন্ডিকেট। যেখানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে তরুণদের মেরুদণ্ড ভেঙে দেওয়া হয়, যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা দলীয় লাইন না মানলে নিগৃহীত হন, আর মেধা নয়, পদ-পদবি নির্ধারণ করে চাটুকারিতা। একাত্তরে বহিঃশত্রু এসে আমাদের মেধাবী সন্তানদের হত্যা করেছিল। কিন্তু এবার? এবার তো শত্রু বাইরের কেউ না—এই রাষ্ট্রযন্ত্রই নিজ হাতে ধ্বংস করছে নিজের ভবিষ্যৎ।

ড. ইউনূসের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কি নীরব ধ্বংসযজ্ঞের কুশীলব?

প্রথমেই প্রশ্ন ওঠে—ড. ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার কেন এমন ভয়াবহ নীতির সূচনা করলো?
গণতন্ত্রের লেবেল লাগিয়ে তারা এমন এক বাজার তৈরি করলো, যেখানে ভোটের অধিকারকে পণ্য বানিয়ে বিক্রি করা যায়, প্রশাসনকে পেশিশক্তির বাহিনীতে রূপান্তর করা যায়, আর রাষ্ট্রের নামে দখলবাজি ও লুণ্ঠনকে ন্যায্যতা দেওয়া যায়।

সেনাবাহিনী ও প্রশাসন চুপ কেন?

আরও গভীর প্রশ্ন—বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী, পুলিশ প্রশাসন বা গোয়েন্দা সংস্থাগুলো কেন একবাক্যে কিছু বললো না?
তারা কি এ ন্যায়ের বিপরীতে দাঁড়াতে ভয় পায়? নাকি তারাও এই লুটপাটের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ অংশীদার হয়ে গেছে? যখন রাষ্ট্রের প্রতিটি স্তম্ভ নীরব থাকে, তখন বুঝতে হবে—নির্মম দুর্বৃত্তায়নের চক্র সম্পূর্ণ হয়েছে।

শিক্ষা ধ্বংস মানে ভবিষ্যৎ ধ্বংস। বিশ্ববিদ্যালয়ে দলীয় দখলদারি, মেধাবীদের ঠেলে বাইরে পাঠিয়ে দেওয়া, গরিব শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষা ব্যবস্থা অনুপযুক্ত করে তোলা—সবই একটি সুপরিকল্পিত ধ্বংসের অংশ। বাহ্যিক শক্তির তো দরকারই নেই। দেশের ভিতরেই একটি শ্রেণি তৈরি হয়েছে, যারা ধ্বংসকে উন্নয়ন বলে চালিয়ে দিতে চায়।

এখানে প্রশ্ন শুধু অর্থনীতির না—মানবিকতার। কটি প্রশ্নের উত্তর কেউ দিতে পারবে না—এই অবস্থার পরিবর্তন কীভাবে হবে? কে করবে এই বিপরীত যাত্রা শুরু?

আমি কি স্বপ্ন দেখছি? নাকি দুস্বপ্ন? আমি তো দূর পরবাসে বসে কেবল পর্যবেক্ষণ করি—দেশের অবস্থা দেখে আতঙ্কিত হই। কিন্তু যারা দেশের মাটি ছুঁয়ে প্রতিদিন বেঁচে থাকে, তাদের চিৎকার কোথায়? তাদের ঘাম, রক্ত, স্বপ্ন—সবকিছু কি এভাবে ধ্বংস হয়ে যাবে?

শেষ কথা

এই রাষ্ট্রে এখন আর গণতন্ত্র নেই, আছে গণলুণ্ঠন। এই রাষ্ট্রে এখন আর প্রশাসন নেই, আছে দালালতন্ত্র। এই রাষ্ট্রে এখন আর শিক্ষা নেই, আছে পণ্যায়িত মেরুদণ্ডহীনতা।

সুতরাং “১৭ বছর খাইনি, এখন খাবো” বলার আগে মনে রাখা উচিত—যারা খাচ্ছে, তারা একদিন শেষ হবে। কিন্তু যারা খাওয়াতে বাধ্য হচ্ছে, তারা একদিন প্রতিবাদ করবে। আর তখন আর কিছু খাওয়ার মতো থাকবে না।

শেষ সুযোগ: যখন আর কিছু খাওয়ার মতো থাকবে না… যেদিন জনগণের রক্ত চুষে খাওয়া যাবে না, যেদিন দুর্নীতির খুঁটি নড়ে উঠবে, যেদিন বিদেশে টাকা পাচার বন্ধ হয়ে যাবে—সেদিন এ রাষ্ট্রযন্ত্র থমকে যাবে। কারণ, লুটেরা শ্রেণির জন্য এ দেশে টিকে থাকার আর কোনো উপায় থাকবে না।

তখন কী হবে?

তখন শুরু হবে চূড়ান্ত পতন। সংস্থা, প্রতিষ্ঠান, প্রশাসন—সব হারাবে কার্যকারিতা। রাজপথে ছিন্নমূল মানুষের মতো রাষ্ট্র নিজেই খুঁজবে দিশা। তবু এখনও দেরি হয়নি। দেশটা মরেনি, কেবল গভীর ঘুমে। আর একটিবার যদি জাগ্রত হওয়া যায়—নতুন করে রাষ্ট্রকে গড়ার সুযোগ এখনও আছে।

কী করতে হবে?

১. অন্তর্বর্তীকালীন জাতীয় সরকার, যা দল-মত নির্বিশেষে প্রজাতন্ত্রের হয়ে কাজ করবে।
২. নতুন সামাজিক চুক্তি, যেখানে রাষ্ট্র মানে শুধু সরকারি দল নয়—পুরো জনগণ।
৩. দুর্নীতি প্রতিরোধে সত্যিকারের কমিশন, যার নিয়ন্ত্রণে কোনো রাজনৈতিক হাত থাকবে না।
৪. শিক্ষা, বিচার ও প্রশাসনে দলীয় প্রভাবমুক্ত সংস্কার, যা দেশের দীর্ঘমেয়াদি সক্ষমতা গড়ে তুলবে।
৫. টেকসই অর্থনীতি গঠনে জাতীয় ঐক্য, যেখানে সবাই মিলে দেশের ভবিষ্যৎ নির্মাণে অংশ নেবে।

এটাই হতে পারে শেষ সুযোগ—নইলে আমরা হারিয়ে যাব ইতিহাসের গহ্বরে।

রহমান মৃধা
গবেষক ও লেখক
(সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন)
Rahman.Mridha@gmail.com

শেয়ার করুন:-
পুরো সংবাদটি পড়ুন

মত দ্বিমত

এক নতুন রাষ্ট্রচিন্তার ডাক: জনগণের হাতে রাষ্ট্রের মালিকানা ফেরানোর অনিবার্যতা

Published

on

পুঁজিবাজার

বাংলাদেশ-একটি রাষ্ট্র, যার জন্ম হয়েছিল মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে। কিন্তু জন্মের পাঁচ দশক পর আমরা দাঁড়িয়েছি এমন এক সন্ধিক্ষণে, যেখানে রাষ্ট্র আর জনগণের সম্পর্ক যেন ছিন্ন। সংবিধান বলে, “রাষ্ট্রের মালিক জনগণ।” অথচ বাস্তবতা বলে—রাষ্ট্র এখন কেবল গুটিকয় ক্ষমতাবান, ধনিক শ্রেণি ও সুবিধাবাদীদের হাতে বন্দী।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

নাগরিকদের অধিকারের জায়গা দখল করে নিয়েছে লুটপাট, প্রতারণা, নীরব রাষ্ট্রদ্রোহ। সেনাবাহিনী, আমলাতন্ত্র, বিশ্ববিদ্যালয়—যে সব প্রতিষ্ঠান মানুষের ভরসার জায়গা হবার কথা ছিল, তারাই আজ জনগণের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ। অথচ এই বিরূপ বাস্তবতার মধ্যে দাঁড়িয়েই এক শ্রেণির মানুষ, যাদের আমরা “টোকাই” বলে অবজ্ঞা করি, তারাই বারবার রাজপথে দাঁড়িয়ে সত্যিকারের রাষ্ট্রগঠনের দায়িত্ব নিয়েছে।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

তবে রাষ্ট্র শুধু শহীদের রক্তে গড়ে ওঠে না—তাকে টিকিয়ে রাখতে হলে চাই চিন্তার গভীরতা, নীতির দৃঢ়তা। আর সেইখানেই বাংলাদেশের সবচেয়ে গভীর সংকট—এই রাষ্ট্রে শিক্ষিত শ্রেণি হয়ে উঠেছে নির্বোধ, বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে উঠেছে প্রাসাদসুলভ কোচিং সেন্টার।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

১. রাষ্ট্র ও জনগণের সম্পর্কের ছিন্নতা: সংবিধানের আশ্বাস বনাম বাস্তবতা

বাংলাদেশের সংবিধান বলেছে—“প্রজাতন্ত্রের সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ।” কিন্তু বাস্তবে এই মালিকানা এখন নিছক আনুষ্ঠানিকতা। রাষ্ট্রের প্রতিটি স্তরে এক শ্রেণির মানুষ কর্তৃত্ব করছে, যাদের সঙ্গে জনগণের জীবনের সংযোগ নেই। আইনের ভাষা, নীতিনির্ধারণের পদ্ধতি, এমনকি রাষ্ট্রচালনার চিন্তাও সাধারণ নাগরিকের জীবনবোধ থেকে আলাদা। জনগণের কণ্ঠ নেই, শুধু নিঃশ্বাস আছে। আর এই নিঃশ্বাসের ভিতরেই জমে আছে বঞ্চনা, ক্ষোভ আর ক্রমাগত ভাঙনের ইতিহাস।

২. গণতন্ত্রের নামে ক্ষমতা একচেটিয়া করার ট্র্যাজেডি

একদা যে গণতন্ত্র আমাদের মুক্তির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, তা আজ পরিণত হয়েছে নির্বাচনের নামে ক্ষমতা বৈধতার এক উপকরণে। জনগণ ভোট দেয়, কিন্তু নীতি ঠিক করে অলিখিত ক্ষমতাকেন্দ্র। সংসদ চলে, কিন্তু তাতে নেই জনগণের কথা। বিরোধী কণ্ঠকে বলা হয় রাষ্ট্রদ্রোহী, আর প্রতিবাদ মানে হয় ‘উসকানি’। ফলে জনগণ হয়ে পড়ে কেবল ভোটদাতা, রাষ্ট্রের মালিক নয়। গণতন্ত্র এখন একপাক্ষিক সম্প্রচারে পরিণত—যেখানে কথা বলে শুধু ক্ষমতা, আর মানুষ চুপচাপ শুনে।

৩. রাজনৈতিক দলগুলোর পণ্যায়িত রূপ এবং চিন্তার দেউলিয়াত্ব

বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো আজ আর আদর্শে বিশ্বাসী কোনো আন্দোলনের প্রতিনিধি নয়। বরং তারা হয়ে উঠেছে পণ্য—নির্বাচনের বাজারে বিক্রি হয় প্রতিশ্রুতির মোড়কে। দলীয় রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দু এখন ‘ক্ষমতা’—নীতি নয়, নৈতিকতা নয়, এমনকি জনগণের দুঃখ-বেদনা নয়। ছাত্রসংগঠনগুলো এখন ক্যারিয়ারের সিঁড়ি, আর কেন্দ্রীয় দলগুলোর মাথায় বসে থাকে অলিখিত সিন্ডিকেট। ফলে রাষ্ট্রচিন্তা আজ আর কোনো দল করে না, বরং দলগুলোই রাষ্ট্রকে ব্যবহার করে তাদের নিজের এজেন্ডা বাস্তবায়নে।

৪. রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর অধঃপতন ও জনগণ থেকে বিচ্ছিন্নতা

আমরা দেখেছি, সেনাবাহিনী, আমলাতন্ত্র, পুলিশ, বিচারব্যবস্থা, এমনকি শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাত—সবই ক্রমশ দলীয় নিয়ন্ত্রণ ও কর্পোরেট স্বার্থের হাতের ক্রীড়ানকে পরিণত হয়েছে। যারা রাষ্ট্র পরিচালনা করেন, তারা আজ সাধারণ মানুষের সমস্যা বোঝেন না—তারা বোঝেন টেন্ডার, কমিশন, আর মিডিয়ার নাটকীয়তা। প্রতিষ্ঠানগুলো শাসকের ‘টুলবক্স’ হয়ে উঠেছে—নাগরিকের সুরক্ষা বা মর্যাদা রক্ষার বাহন নয়। রাষ্ট্রের কাঠামো দাঁড়িয়ে আছে এক অবিচারমূলক ভারসাম্যের ওপর—যেখানে আইনের ভাষা শুধুই দুর্বলকে দমন করতে ব্যবহৃত হয়।

৫. টোকাই জনগণের উত্থান: রাষ্ট্রসংস্কারের নতুন চেতনা

এই ভাঙনের ভিতরেই জন্ম নিচ্ছে এক নতুন চেতনা—যা শহরের বস্তিতে, গ্রামবাংলার চায়ের দোকানে, কিংবা রিকশাচালকের ক্লান্ত মুখে জমে উঠছে। তারা হয়তো রাষ্ট্রবিজ্ঞান জানে না, কিন্তু বোঝে অবিচার কাকে বলে। তারা সংবিধান মুখস্থ করেনি, কিন্তু জানে কীভাবে বঞ্চিত হতে হয়। এই ‘টোকাই জনগণ’, যাদের রাষ্ট্র কখনো গোনায় ধরেনি, তারাই আজ প্রশ্ন তুলছে—এই রাষ্ট্র কে চালায়? কেন চালায়? কাদের স্বার্থে চালায়? আর এই প্রশ্নই নতুন রাষ্ট্রচিন্তার ভিত্তি—নীরবতার ভিতর জন্ম নেওয়া এক সাহসী ডাক।

৬. শিক্ষিত শ্রেণির নির্লিপ্ততা ও জ্ঞানচর্চার পতন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো একসময় ছিল মুক্তচিন্তা, ত্যাগ ও আন্দোলনের প্রাণকেন্দ্র। কিন্তু আজ এসব প্রতিষ্ঠানের একটি বড় অংশ রূপ নিয়েছে সুবিধাবাদী ও পদলেহী শ্রেণির চারণভূমিতে।

এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অনেক শিক্ষক এখন গবেষণার নামে থিসিস কপি করেন, শিক্ষা কার্যক্রমকে নামিয়ে এনেছেন বিসিএস কোচিংয়ে। বিসিএস একটি চাকরির পরীক্ষা—কিন্তু এখন সেটাকেই চূড়ান্ত ‘জ্ঞান’ মনে করা হয়। ফলে প্রশাসনে যেমন ঢুকছে মেধাহীন, নীতিহীন একদল মানুষ, তেমনি রাষ্ট্রচিন্তাও হয়ে পড়েছে শুষ্ক, ঠান্ডা, কাগুজে।

একসময় যাঁদের মতো জ্ঞানী শিক্ষক দেশকে পথ দেখিয়েছেন—যেমন আব্দুর রাজ্জাক বা সরদার ফজলুল করিম—আজ তাঁদের জায়গা নিয়েছে এমন কিছু মানুষ, যারা নিজেদের বানান ভুল ধরালে ক্ষেপে যান, ক্ষমতার দম্ভে বলেন, “বাংলা একাডেমির বানানই ভুল।” এই ঔদ্ধত্য আর বুদ্ধিহীন আত্মবিশ্বাসই জ্ঞানের মৃত্যু ঘটিয়েছে।

এদের বড় অংশ মাঠে নামে না, বরং ঘরে বসে হিসাব কষে—“সরকার গেলে কী পাব, না গেলে কী হবে?” যারা যখন ক্ষমতায় থাকে, তারা তখন সেই সরকারের গুণকীর্তনে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। সরকার পরিবর্তন হলে আবার অন্যদিকে ঘেঁষেন। ফলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হয়ে পড়ে ক্ষমতাবানদের হাতের পুতুল।

এমনকি শেয়ারবাজার ধ্বংসের পেছনেও এই শিক্ষিত শ্রেণির ভূমিকা অনস্বীকার্য। খাইরুল হোসেন থেকে শুরু করে শিবলি রুবাইয়াত—বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আসা এই শিক্ষকরা যখন চেয়ারে বসেন, তখন তাঁরাও পরিণত হন লুটপাটের সহযোদ্ধায়। তাঁদের মাধ্যমে গড়ে ওঠে এক “জ্ঞানহীন লুটপাটের অর্থনীতি।”

সব শিক্ষকই অবশ্য একরকম নন। এখনও অনেকেই আছেন, যাঁরা সংগ্রাম করেন, সত্য বলেন, সাহস দেখান। কিন্তু তাঁদের সংখ্যা কম, আর তারা মূলধারার বাইরে।

সুতরাং, আজকের সবচেয়ে বড় বিপর্যয় হলো—জ্ঞান নেই, কিন্তু জ্ঞানীর দম্ভ আছে। বিবেক নেই, কিন্তু পদ-পদবি আছে। শিক্ষা নেই, কিন্তু সার্টিফিকেটের পাহাড় আছে। আর এদের হাতে যখন জাতির ভবিষ্যৎ, তখন রাষ্ট্রের দিক হারানো অবশ্যম্ভাবী।

৭. এখন দরকার নতুন নেতৃত্ব ও রাষ্ট্রচিন্তা

যাঁরা যুগের পর যুগ এই রাষ্ট্রকে লুটে খেয়েছেন, তারাই এখন আবার রাষ্ট্র সংস্কারের বুলি দিচ্ছেন। কিন্তু বাস্তবতা হলো, তারা কেউই রাষ্ট্র পরিবর্তনের অনুরাগী নন—বরং তারাই শোষণযন্ত্রের মেরামতকারী। সুতরাং, নতুন বাংলাদেশ গড়তে হলে চাই নতুন নেতৃত্ব। এই নেতৃত্ব হবে—দলগত নয়, শ্রেণিগত; ধানমণ্ডি থেকে নয়, উঠবে পথঘাট, শ্রমিকবস্তি, গ্রাম আর গার্মেন্ট ফ্লোর থেকে।

নতুন রাষ্ট্রচিন্তার ভিত্তি গড়তে হলে চাই—
• লজ্জাহীন সত্য বলার সাহসী সাংবাদিকতা
• গা বাঁচিয়ে না চলা বাস্তবভিত্তিক বুদ্ধিজীবী
• এক্সেলশিট নয়, মানবিক দৃষ্টিভঙ্গিসম্পন্ন অর্থনীতিবিদ
• স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি—যা ‘শত্রু নয়, প্রতিবেশী’কে সঙ্গী ভাববে
• এবং সর্বোপরি, জনতার নেতৃত্বে একটি গণমুখী, ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্রব্যবস্থা
পুরনো মুখ আর দলীয় চক্রের হাতে রাষ্ট্র গড়ে উঠতে পারে না। তাদের ক্ষমতার সূত্র ভেঙে নতুন মালিকানার ভিত্তিতে গড়া রাষ্ট্রই হতে পারে ‘গণপ্রজাতন্ত্রী’ বাংলাদেশ।

৮. চার স্তরবিশিষ্ট রাষ্ট্রগঠনের রূপরেখা

(১) সরাসরি জনগণের মালিকানা ও পর্যবেক্ষণাধিকার: ভোট দেওয়ার পর ৫ বছর চুপচাপ বসে থাকা গণতন্ত্র নয়। জনগণকে দিতে হবে প্রতিনিধি প্রত্যাহারের অধিকার, স্থানীয় থেকে কেন্দ্রীয় পর্যায়ে জবাবদিহির কাঠামো।
(২) প্রেসিডেন্সিয়াল পদ্ধতি চালু করা: প্রধানমন্ত্রীর অনির্দিষ্ট ক্ষমতার বদলে জনগণের সরাসরি নির্বাচিত প্রেসিডেন্টের দুই মেয়াদের সীমিত ম্যান্ডেট চালু করতে হবে। শেখ হাসিনা বা অন্য কোনো নেতার অনির্দিষ্ট শাসন দেশের জন্য আত্মঘাতী।
(৩) বিচার বিভাগ ও সেনাবাহিনীর সাংবিধানিক জবাবদিহি: প্রতিরক্ষা বাহিনীকে জনগণের অর্থে চলে—তাদের জনগণের সুরক্ষায় নিয়োজিত থাকতে হবে। বিচারপতি ও জেনারেলরা যেন ফ্যাসিবাদের হাতিয়ার না হয়ে ওঠেন, তা নিশ্চিত করতে সাংবিধানিক সংস্কার দরকার।
(৪) টোকাই জনগণের পূর্ণ নাগরিক স্বীকৃতি: বস্তির মা, পথের শিশু, গার্মেন্ট শ্রমিক, ময়লা কুড়ানো কিশোরী—তাঁদের জন্য চাই স্বতন্ত্র নাগরিক সুরক্ষা কমিশন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য নিশ্চয়তা, এবং সংরক্ষিত রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্ব। তাদের আর ‘দয়া’র নয়, ‘অধিকারের’ ভিত্তিতে রাষ্ট্রে স্থান দিতে হবে।

৯. রাষ্ট্র যখন ‘লুটপ্রজাতন্ত্রী কোম্পানি’, তখন টোকাই জনগণই ভবিষ্যতের চাবিকাঠি

আজ রাষ্ট্রের নাম ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ’, কিন্তু বাস্তবে এটি হয়ে গেছে ‘লুটপ্রজাতন্ত্রী কোম্পানি’। এবং এই কোম্পানিতে সবচেয়ে ‘অপ্রয়োজনীয়’ হয়ে পড়েছে সেই মানুষগুলো, যাদের ঘাম-রক্তে এই রাষ্ট্রের ভিত্তি গড়া।
তারা এখন প্রশ্ন করছে—
• যাঁরা দেশের প্রতিরক্ষার নামে বেতন নেন, তাঁরা সেই বিপদের দিনে কোথায় ছিলেন?
• যারা ‘জাতীয় নিরাপত্তা’র বুলি কপচায়, তারা আসলে কাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করছে?
• যারা বারবার নির্বাচন ছিনিয়ে নিয়েছে, তারা কি সত্যিই রাষ্ট্রকে ভালোবাসে, নাকি এটা তাদের লুটপাটের লাইসেন্স?
এই প্রশ্নগুলোর উত্তর না পেলে রাষ্ট্রের ভবিষ্যতও অন্ধকারময়। আর এই অন্ধকার ভেদ করে এগিয়ে আসছে সেই ‘টোকাই’ জনগণ—যারা অস্ত্রহীন, কিন্তু সাহসে ভরপুর; যারা পদ-পদবীহীন, কিন্তু নৈতিকতায় পূর্ণ।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ব্যর্থতা নিয়ে সারাদেশে চলছে বিক্ষোভ ও সমালোচনা। কিন্তু আজ পর্যন্ত কেউ স্পষ্ট করে বলেনি—ড. ইউনূস একজন অনির্বাচিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান, যার প্রথম ও প্রধান দায়িত্ব হলো একটি সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করা। তার বদলে, সবাই বরং এই সরকারকে দুর্বল করার চেষ্টা করেছে। ফলে না হয়েছে কাঙ্ক্ষিত সংস্কার, না সম্ভব হয়েছে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন। এই শূন্যতার সুযোগে বাড়ছে সন্ত্রাস ও নিপীড়ন, আর দেশ পিছিয়ে পড়ছে আরও পঞ্চাশ বছর।

এখন সময় এসেছে অজুহাত ত্যাগ করে সমাধানের দিকে এগোনোর। আসল প্রশ্ন হলো—এখন কী করা উচিত?

শেষ কথা: ইতিহাস এখন অপেক্ষায়, টোকাই জনগণের দিকে তাকিয়ে

আমরা, যারা নেই রাষ্ট্রীয় ভাষণে, নেই রাজপথের মিছিলে কিংবা টেলিভিশনের বিতর্কে—আমরাই এখন কথা বলছি। এবং আমাদের কথাগুলো আজ আর ফিসফিস নয়, সরাসরি দাবি:
• আমরা উন্নয়ন চাই, তবে মানুষের মর্যাদা নিয়ে বাঁচার শর্তে।
• আমরা এমন রাষ্ট্র চাই, যেখানে ভোট মানে পেটভরার খাদ্য নয়, নাগরিকের অধিকার।
• আমরা চাই নেতৃত্ব, যেখানে ক্ষমতার নয়, জবাবদিহির ছায়া থাকবে।
• আমরা এমন ভবিষ্যৎ চাই, যেখানে বিশ্ববিদ্যালয় হবে সত্য ও মুক্ত চিন্তার আশ্রয়স্থল—ভয়ের কারাগার নয়।
আমরা আর কেবল ‘ভোটার’ নই, আমরাই রাষ্ট্রের প্রকৃত মালিক।
আর এই মালিকানা কেউ স্বেচ্ছায় দেয় না—তা আদায় করে নিতে হয়, সংঘর্ষ নয়, বরং চিন্তার মাধ্যমে।

নতুন নেতৃত্ব কোথায়?

পুরনো নেতৃত্ব মুখোশ বদলে বারবার ফিরে আসে। তারা জানে কীভাবে স্লোগান দিতে হয়, জানে কীভাবে ত্রাণ বিলিয়ে ছবি তুলতে হয়— কিন্তু তারা জানে না, কীভাবে রাষ্ট্রের প্রকৃত মালিকানাটা জনগণের হাতে ফিরিয়ে দিতে হয়। এই নেতৃত্বে আর চলবে না। আমরা চাই নতুন নেতৃত্ব— যারা ক্ষুধার্ত থেকেও অন্যের খাবারের চিন্তা করে, যারা রাস্তায় দাঁড়িয়ে রাষ্ট্র গড়ার স্বপ্ন দেখে, যারা শ্রেণিকক্ষে নয়, টোকাই জনগণের কাতারে দাঁড়িয়ে দায়িত্ব নিতে প্রস্তুত। এই নেতৃত্ব তৈরি হবে:
• রিকশাচালকের হাড়ভাঙা ঘাম থেকে,
• কৃষকের জমির কাদা থেকে,
• অভাবী মায়ের নিঃশব্দ কান্না থেকে,
• কিংবা সেই ছেলেটির বুকের ভেতর থেকে,
যে একদিন বলেছিল:
“ভাই, আমাকেও একটা রাষ্ট্র দ্যান না?”

রাষ্ট্র মানে কী?

রাষ্ট্র কেবল সংবিধানের পাতায় বন্দি নয়, রাষ্ট্র থাকে মানুষের অন্তরে ও চিন্তায়। রাষ্ট্র কেবল শহীদের রক্তে নির্মিত হয় না, রাষ্ট্র বেঁচে থাকে জ্ঞানের দীপ্তিতে, নীতির দৃঢ়তায়। আর যখন সেই জ্ঞান ও নীতি হারিয়ে যায়, তখন রাষ্ট্র হয়ে পড়ে শূন্য, লজ্জাহীন, এবং জনগণের ঘাড়ে বসা এক নির্মম বোঝা।

এখনই সময়… এখন সময় এসেছে রাষ্ট্রকে নতুন করে কল্পনা করার— টোকাই জনগণের নামে এক বিকল্প রাষ্ট্রচিন্তা প্রতিষ্ঠার। শুধু ভাষণে নয়, চেতনায়, কাঠামোয়, এবং নীতিতে— একটি জনগণের রাষ্ট্র গড়ার। যারা একসময় ছিল ‘রাষ্ট্রহীন’, আজ তারাই হয়ে উঠেছে রাষ্ট্রের ভাবনা ও প্রশ্নের কেন্দ্রবিন্দু। তারা যদি সত্যিই জেগে ওঠে, তবে শুধু সরকার নয়—পুরো ব্যবস্থাই বদলে যাবে। তাদের হাতে এখন ইতিহাসের পাসওয়ার্ড। যদি তারা রাষ্ট্রের ভেতরে প্রবেশ করে, সিস্টেম বদলায়, নেতৃত্ব নেয়— তবে গড়ে উঠবে এক নতুন বাংলাদেশ।

যেখানে—
• সেনাবাহিনী হবে জনগণের রক্ষক,
• আমলা হবে সেবক,
• আর রাজনীতি হবে নীতিনির্ভর নেতৃত্বের অনুশীলন।

প্রশ্ন এখন রাষ্ট্রের দিকে:
রাষ্ট্র কি এই টোকাইদের ফিরিয়ে দেবে? না কি, তাদের ঘাম-রক্ত ব্যবহার করে আবার এক নতুন লুটেরা শাসন কায়েম করবে? এই প্রশ্নের জবাব দেবে ইতিহাস। আর ইতিহাস এখন রচিত হচ্ছে রাস্তায়, জনতার মিছিলে, সাহসে ও সংকল্পে।

রহমান মৃধা
গবেষক ও লেখক
সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন
Rahman.Mridha@gmail.com

শেয়ার করুন:-
পুরো সংবাদটি পড়ুন

পুঁজিবাজারের সর্বশেষ

পুঁজিবাজার পুঁজিবাজার
পুঁজিবাজার6 hours ago

পুঁজিবাজারকে উচ্চ পর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে: আমীর খসরু

দেশি বিদেশি সকল বিনিয়োগকারীরা প্রস্তুত। পুঁজিবাজারকে উচ্চ পর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে। কারণ এর বাহিরে দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের বিকল্প কোনো পথ নেই...

পুঁজিবাজার পুঁজিবাজার
পুঁজিবাজার7 hours ago

ব্লকে ৯ কোটি টাকার লেনদেন

সপ্তাহের চতুর্থ কার্যদিবসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ব্লকে মোট ৩১টি কোম্পানির শেয়ার লেনদেন হয়েছে। কোম্পানিগুলোর মোট ২৫ লাখ ৮১ হাজার...

পুঁজিবাজার পুঁজিবাজার
পুঁজিবাজার8 hours ago

শেয়ার কিনবেন এনসিসি ব্যাংকের উদ্যোক্তা

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংক খাতের প্রতিষ্ঠান এনসিসি ব্যাংক পিএলসির এক উদ্যোক্তা শেয়ার ক্রয়ের ঘোষণা দিয়েছেন। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে এ...

পুঁজিবাজার পুঁজিবাজার
পুঁজিবাজার8 hours ago

এনসিসি ব্যাংকের পরিচালকের শেয়ার গ্রহণ

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত এনসিসি ব্যাংক পিএলিসির একজন পরিচালক পূর্বঘোষণা অনুযায়ী শেয়ার গ্রহণ সম্পন্ন করেছেন। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে এ তথ্য...

পুঁজিবাজার পুঁজিবাজার
পুঁজিবাজার8 hours ago

ঋণখেলাপিরা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না: অর্থ উপদেষ্টা

ঋণখেলাপিরা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। বুধবার (১৩ আগস্ট) সচিবালয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে জাতীয়...

পুঁজিবাজার পুঁজিবাজার
পুঁজিবাজার9 hours ago

এসইএমএল লেকচার ইক্যুইটি ম্যানেজমেন্ট ফান্ডের সর্বোচ্চ দরপতন

সপ্তাহের চতুর্থ কার্যদিবসে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) শেয়ার দর পতনের শীর্ষে উঠে এসেছে এসইএমএল লেকচার ইক্যুইটি ম্যানেজমেন্ট...

পুঁজিবাজার পুঁজিবাজার
পুঁজিবাজার9 hours ago

দরবৃদ্ধির শীর্ষে জেমিনি সি ফুড

সপ্তাহের চতুর্থ কার্যদিবসে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেনে অংশ নেওয়া ৩৯৮টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১২১টির দর বেড়েছে। দর বৃদ্ধির...

Advertisement
AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

সোশ্যাল মিডিয়া

তারিখ অনুযায়ী সংবাদ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
 
১০১১১৩১৫১৬
১৯২০২১২২২৩
২৪২৫২৬২৭৩০
৩১  
পুঁজিবাজার
স্বাস্থ্য49 minutes ago

৩৩টি অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের দাম কমালো সরকার

পুঁজিবাজার
জাতীয়58 minutes ago

ফিরিয়ে আনা হবে লুট হওয়া সাদা পাথর, চলবে যৌথবাহিনীর অভিযান

পুঁজিবাজার
জাতীয়2 hours ago

সেনাপ্রধানের নামে ফেসবুকে ভুয়া আইডি নিয়ে সতর্কবার্তা

পুঁজিবাজার
জাতীয়2 hours ago

দেশে ফিরেছেন প্রধান উপদেষ্টা

পুঁজিবাজার
জাতীয়3 hours ago

চিত্রকর্ম সংরক্ষণে প্রশিক্ষণ নিতে চীন যাচ্ছেন ১৫ সদস্যের দল

পুঁজিবাজার
কর্পোরেট সংবাদ3 hours ago

সুপারস্টার গ্রুপের এসএমই’র জন্য অর্থায়ন সুবিধা বৃদ্ধি করবে আইপিডিসি

পুঁজিবাজার
অর্থনীতি4 hours ago

সাবেক তিন গভর্নর ও ৬ ডেপুটি গভর্নরের ব্যাংক হিসাব তলব

পুঁজিবাজার
কর্পোরেট সংবাদ4 hours ago

প্রাইম ব্যাংকের সঙ্গে সিক্রেট রেসিপি ও ফেয়ার ইলেকট্রনিক্সের চুক্তি

পুঁজিবাজার
মত দ্বিমত5 hours ago

চরকায় তেল ঢালুন, ভণ্ডদের বাজার শূন্য করুন

পুঁজিবাজার
ক্যাম্পাস টু ক্যারিয়ার5 hours ago

৪৬তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার কেন্দ্র পরিবর্তন

পুঁজিবাজার
স্বাস্থ্য49 minutes ago

৩৩টি অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের দাম কমালো সরকার

পুঁজিবাজার
জাতীয়58 minutes ago

ফিরিয়ে আনা হবে লুট হওয়া সাদা পাথর, চলবে যৌথবাহিনীর অভিযান

পুঁজিবাজার
জাতীয়2 hours ago

সেনাপ্রধানের নামে ফেসবুকে ভুয়া আইডি নিয়ে সতর্কবার্তা

পুঁজিবাজার
জাতীয়2 hours ago

দেশে ফিরেছেন প্রধান উপদেষ্টা

পুঁজিবাজার
জাতীয়3 hours ago

চিত্রকর্ম সংরক্ষণে প্রশিক্ষণ নিতে চীন যাচ্ছেন ১৫ সদস্যের দল

পুঁজিবাজার
কর্পোরেট সংবাদ3 hours ago

সুপারস্টার গ্রুপের এসএমই’র জন্য অর্থায়ন সুবিধা বৃদ্ধি করবে আইপিডিসি

পুঁজিবাজার
অর্থনীতি4 hours ago

সাবেক তিন গভর্নর ও ৬ ডেপুটি গভর্নরের ব্যাংক হিসাব তলব

পুঁজিবাজার
কর্পোরেট সংবাদ4 hours ago

প্রাইম ব্যাংকের সঙ্গে সিক্রেট রেসিপি ও ফেয়ার ইলেকট্রনিক্সের চুক্তি

পুঁজিবাজার
মত দ্বিমত5 hours ago

চরকায় তেল ঢালুন, ভণ্ডদের বাজার শূন্য করুন

পুঁজিবাজার
ক্যাম্পাস টু ক্যারিয়ার5 hours ago

৪৬তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার কেন্দ্র পরিবর্তন

পুঁজিবাজার
স্বাস্থ্য49 minutes ago

৩৩টি অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের দাম কমালো সরকার

পুঁজিবাজার
জাতীয়58 minutes ago

ফিরিয়ে আনা হবে লুট হওয়া সাদা পাথর, চলবে যৌথবাহিনীর অভিযান

পুঁজিবাজার
জাতীয়2 hours ago

সেনাপ্রধানের নামে ফেসবুকে ভুয়া আইডি নিয়ে সতর্কবার্তা

পুঁজিবাজার
জাতীয়2 hours ago

দেশে ফিরেছেন প্রধান উপদেষ্টা

পুঁজিবাজার
জাতীয়3 hours ago

চিত্রকর্ম সংরক্ষণে প্রশিক্ষণ নিতে চীন যাচ্ছেন ১৫ সদস্যের দল

পুঁজিবাজার
কর্পোরেট সংবাদ3 hours ago

সুপারস্টার গ্রুপের এসএমই’র জন্য অর্থায়ন সুবিধা বৃদ্ধি করবে আইপিডিসি

পুঁজিবাজার
অর্থনীতি4 hours ago

সাবেক তিন গভর্নর ও ৬ ডেপুটি গভর্নরের ব্যাংক হিসাব তলব

পুঁজিবাজার
কর্পোরেট সংবাদ4 hours ago

প্রাইম ব্যাংকের সঙ্গে সিক্রেট রেসিপি ও ফেয়ার ইলেকট্রনিক্সের চুক্তি

পুঁজিবাজার
মত দ্বিমত5 hours ago

চরকায় তেল ঢালুন, ভণ্ডদের বাজার শূন্য করুন

পুঁজিবাজার
ক্যাম্পাস টু ক্যারিয়ার5 hours ago

৪৬তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার কেন্দ্র পরিবর্তন