ব্যাংক
ডার্ক ওয়েবে গ্রাহকের তথ্য বিক্রির অভিযোগ: সিটি ব্যাংকের ব্যাখ্যা

সিটি ব্যাংক পিএলসির গ্রাহকদের গোপন তথ্য ডার্ক ওয়েবে বিক্রি হচ্ছে বলে যে অভিযোগ উঠেছে, তাকে গুজব ও ষড়যন্ত্র বলে আখ্যা দিয়েছে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। এই গুজব বা ষড়যন্ত্র বন্ধ করতে ঘটনাটি ব্যাখ্যা করে শনিবার (১১ জানুয়ারি) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে ব্যাংকটি।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, স্টেটমেন্ট পোর্টালটি শুধুমাত্র গ্রাহকদের অ্যাকাউন্ট স্টেটমেন্ট দেখার জন্য ব্যবহৃত হয় এবং এতে অর্থ লেনদেন করার কোনো সুযোগ নেই। গত ২ জানুয়ারি সাইবার নিরাপত্তা পর্যবেক্ষণে নিয়োজিত একটি সংস্থা এ ত্রুটির বিষয়ে ব্যাংককে জানায়। এরপরই তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নিয়ে সমস্যার সমাধান করা হয়।
এ প্রসঙ্গে বলা হয়, হ্যাকাররা একটি-দুটি গ্রাহক অ্যাকাউন্টের স্টেটমেন্টে প্রবেশ করেছিল। তবে তারা কোনো আর্থিক লেনদেন করতে পারেনি। মূল ব্যাংকিং সিস্টেম সম্পূর্ণ নিরাপদ রয়েছে। ঘটনার পর ব্যাংক কর্তৃপক্ষ অননুমোদিত সব সেশন বাতিল করে এবং ত্রুটিটি ঠিক করে। সাইবার নিরাপত্তা পর্যবেক্ষণের জন্য কর্মরত রিয়েল-টাইম মনিটরিং টিমকে পুনর্বিন্যাস করা হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে সিটি ব্যাংক গ্রাহকদের আশ্বস্ত করে জানায়, তাদের আর্থিক তথ্য পুরোপুরি সুরক্ষিত রয়েছে এবং ডার্ক ওয়েবে কোনো তথ্য বিক্রি হয়নি। এ ছাড়া ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা এড়াতে ব্যাংক যথাযথ ব্যবস্থা নিয়েছে।
এসএম

অর্থনীতি
ডিজিটাল ব্যাংকের আবেদনপত্র চেয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক

বাংলাদেশ ব্যাংক দেশীয় প্রথম ডিজিটাল ব্যাংক প্রতিষ্ঠার জন্য আবেদনপত্র আহ্বান করেছে। চলতি বছরের ১–৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আবেদন করা যাবে। আবেদনকারীদের পাঁচ লাখ টাকা ফি জমা দিতে হবে, এবং সব সেবা হবে সম্পূর্ণ ডিজিটাল। মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) এক বিজ্ঞপ্তিতে এসব জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, প্রযুক্তিনির্ভর আর্থিক খাতে বৈশ্বিক পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ ব্যাংক ডিজিটাল ব্যাংকের অনুমোদন দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। এর লক্ষ্য হলো আর্থিক খাতের দক্ষতা বাড়ানো, সেবার পরিসর বিস্তৃত করা আর ক্ষুদ্র, কুটির ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের (সিএমএসই) অর্থায়নের সুযোগ সহজ করা।
বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের সুযোগ কাজে লাগিয়ে টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করা এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখাই এই উদ্যোগের মূল লক্ষ্য। বিশেষ করে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য ঋণপ্রবাহ সহজ করতে ডিজিটাল ব্যাংককে গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার মনে করছে তারা।
আবেদনকারীদের নির্ধারিত প্রস্তাবপত্রের সঙ্গে পাঁচ লাখ টাকা (অফেরতযোগ্য) ফি জমা দিতে হবে। এ টাকা যেকোনো তফসিলি ব্যাংক থেকে ব্যাংক ড্রাফট বা পে-অর্ডারের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুকূলে দিতে হবে। শর্ত পূরণ না করলে আবেদন বাতিল হবে।
এ ছাড়া আবেদনপত্র সরাসরি জমা দেওয়ার পাশাপাশি ই-মেইলের মাধ্যমেও সব নথি জমা দিতে হবে। বিস্তারিত নির্দেশনা বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং রেগুলেশন ও নীতি বিভাগের (বিআরপিডি) মহাব্যবস্থাপক মো. বায়াজিদ সরকার স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়,বাংলাদেশ ব্যাংক মনে করে, ধারাবাহিক প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনের ফলে বৈশ্বিক আর্থিক খাতের চিত্র বদলে গেছে। এই পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ বিবেচনায় নিয়ে আর্থিক পণ্য ও সেবা প্রদানে অধিক কার্যকারিতা আনতে এবং আর্থিক ব্যবস্থার বিস্তৃত পরিসর তৈরি করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক অগ্রাধিকার দিচ্ছে।
এর আগে ২০২৩ সালের ১৪ জুন ডিজিটাল ব্যাংকের নীতিমালা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। সেই নীতিমালা অনুযায়ী, ডিজিটাল ব্যাংক প্রতিষ্ঠার জন্য ন্যূনতম পরিশোধিত মূলধন ছিল ১২৫ কোটি টাকা। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংক তা বৃদ্ধি করে ৩০০ কোটি টাকা করেছে। প্রচলিত ব্যাংকের লাইসেন্স পেতে প্রয়োজন ৫০০ কোটি টাকা। ১৯৯১ সালের ব্যাংক কোম্পানি আইনের আওতায় ডিজিটাল ব্যাংকের লাইসেন্স দেওয়া হবে। পেমেন্ট সার্ভিস পরিচালিত হবে ২০১৪ সালের বাংলাদেশ পেমেন্ট অ্যান্ড সেটেলমেন্ট সিস্টেম রেগুলেশনের অধীন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী, ডিজিটাল ব্যাংক পরিচালনার জন্য প্রধান কার্যালয় থাকবে। সেবা দেওয়ার বেলায় স্থাপনা লাগবে না। অর্থাৎ এই ব্যাংক ওভার দ্য কাউন্টার (ওটিসি) সেবা দেবে না। ডিজিটাল ব্যাংকের নিজস্ব শাখা বা উপশাখা, এটিএম, সিডিএম অথবা সিআরএমও থাকবে না। সব সেবাই হবে অ্যাপনির্ভর, মুঠোফোন বা ডিজিটাল যন্ত্রে।
পুঁজিবাজার
পুঁজিবাজারের তিন ব্যাংকের সম্পদের মান যাচাই শুরু

সমস্যাগ্রস্ত আরও তিনটি ব্যাংকের সম্পদের গুণগত মান যাচাই (অ্যাসেট কোয়ালিটি রিভিউ–একিউআর)-এর প্রক্রিয়া শুরু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। নতুন যুক্ত হওয়া তিন ব্যাংক হলো—আইএফআইসি ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক ও এবি ব্যাংক।
জানা গেছে, বৈশ্বিক নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান ডেলয়েটকে একিউআর কার্যক্রম পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। গতকাল (২০ আগস্ট) ডেলয়েটের একটি দল বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়ে আইএফআইসি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় পরিদর্শনের মাধ্যমে এ কার্যক্রম শুরু করে।
এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ব্যাংকগুলো একীভূত, অধিগ্রহণ, অবসায়ন বা মূলধন জোগান দিয়ে পুনর্গঠন করা হবে কি না—তা নির্ধারণ করা হবে। ফলে নিরীক্ষা শেষে এসব ব্যাংকের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
গত জুলাইয়ে দ্বিতীয় ধাপে আরও ১১টি ব্যাংকের একিউআর করার সিদ্ধান্ত হয়, যার অর্থায়ন করছে বিশ্বব্যাংক। এ তালিকায় রয়েছে—এবি ব্যাংক, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক, আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক, আইএফআইসি ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ, মেঘনা ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক, এনআরবি ব্যাংক, এনআরবিসি ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক ও ইউসিবি ব্যাংক।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, একিউআরের মাধ্যমে এসব ব্যাংকের প্রকৃত খেলাপি ঋণ, প্রভিশন ঘাটতি, মূলধন ঘাটতি, আমানত ও ঋণের অবস্থা স্পষ্ট হবে। একই সঙ্গে ব্যাংক একীভূত করতে কত মূলধন প্রয়োজন হবে, তাও নিরূপণ করা যাবে।
এর আগে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের অর্থায়নে আর্নেস্ট অ্যান্ড ইয়াং ও কেপিএমজি ছয়টি ব্যাংকের একিউআর সম্পন্ন করে। সেখানে দেখা যায়, এসব ব্যাংকের আর্থিক অবস্থা অত্যন্ত নাজুক; খেলাপি ঋণ আগের প্রতিবেদনগুলোর তুলনায় চারগুণ বেশি।
তবে বিদেশি মালিকানার কারণে আইসিবি ইসলামিক ব্যাংককে একীভূত প্রক্রিয়ার বাইরে রাখা হয়েছে। বাকি পাঁচটি শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংক একীভূত করে একটি নতুন ব্যাংক গঠনের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছে, এই পাঁচ ব্যাংক একীভূত করতে প্রাথমিকভাবে ৩৫ হাজার কোটি টাকার ব্যয় ধরা হয়েছে। এর মধ্যে ২০ হাজার কোটি টাকা মূলধন হিসেবে সরকারের কাছে চাওয়া হবে।
পাশাপাশি আমানত বীমা তহবিল থেকে ঋণ নেওয়া এবং আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের মতো আন্তর্জাতিক সংস্থার সহায়তা নেওয়ার পরিকল্পনাও রয়েছে। সরকারের সম্মতি পেতে বাংলাদেশ ব্যাংক শিগগিরই আনুষ্ঠানিকভাবে প্রস্তাব পাঠাবে।
অর্থনীতি
মূলধন সংকটে ২৩ ব্যাংক, ঘাটতি এক লাখ কোটি টাকা

চলতি বছরের মার্চ মাস শেষে দেশের ২৩টি ব্যাংক মূলধন ঘাটতিতে পড়েছে। এসব ব্যাংকের সম্মিলিত ঘাটতির অঙ্ক দাঁড়িয়েছে এক লাখ ১০ হাজার ২৬০ কোটি টাকা, যা দেশের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
গত ডিসেম্বর শেষে ১৯টি ব্যাংকের ঘাটতি ছিল এক লাখ ৭১ হাজার ৬৮৭ কোটি টাকা। মার্চ প্রান্তিকে ঘাটতির পরিমাণ কমলেও ঘাটতিতে থাকা ব্যাংকের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৩-এ। এর মূল কারণ, ডিসেম্বরভিত্তিক ২৮টি ব্যাংককে ডেফারেল (ঋণ পরিশোধে ছাড় বা বিলম্ব) সুবিধা দেওয়া হয়, ফলে হিসাবের কাগজে ঘাটতি কম দেখা গেলেও বাস্তবে ব্যাংকগুলোর অবস্থার খুব বেশি উন্নতি হয়নি।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, মার্চ শেষে ব্যাংকখাতের সিআরএআর (Capital to Risk Weighted Asset Ratio) দাঁড়িয়েছে ৬.৭৪ শতাংশ, যা আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে ন্যূনতম ১০ শতাংশ হওয়া দরকার। ডেফারেল সুবিধা না থাকলে এ হার হতো ঋণাত্মক ১০.৯৭ শতাংশ। গত বছরের শেষে এই হার ছিল মাত্র ৩.০৮ শতাংশ।
রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে বড় ঘাটতি
মার্চ শেষে ছয়টি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক মূলধন ঘাটতিতে পড়েছে। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ঘাটতি রয়েছে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে (বিকেবি) ১৮ হাজার ৯৪৫ কোটি টাকা। জনতা ব্যাংকের ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১২ হাজার ৭৬৮ কোটি টাকা, যা ডিসেম্বরে ছিল ৫২ হাজার ৮৯০ কোটি টাকা। অগ্রণী ব্যাংকের ঘাটতি বেড়ে হয়েছে পাঁচ হাজার ৮২২ কোটি টাকা, আর রূপালী ব্যাংকের ঘাটতি কমে দাঁড়িয়েছে চার হাজার ৪৭০ কোটি টাকা। এছাড়া বেসিক ব্যাংকের ঘাটতি বেড়ে হয়েছে তিন হাজার ৫০৬ কোটি টাকা এবং রাকাবের ঘাটতি দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ৫১১ কোটি টাকা।
ইসলামী ধারার ব্যাংকগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ ঘাটতি ইউনিয়ন ব্যাংকে, ১৭ হাজার ৪৯২ কোটি টাকা। ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের ঘাটতি ৭ হাজার ৭৯০ কোটি, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ ৬ হাজার ৪৫৪ কোটি, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক ৩ হাজার ৯৮১ কোটি, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক ১ হাজার ৯৮০ কোটি এবং আইসিবি ইসলামিক ব্যাংকের ঘাটতি ১ হাজার ৪৯৯ কোটি টাকা। এ ছাড়া এক্সিম ব্যাংকের ঘাটতি ৫২১ কোটি টাকা।
বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে আইএফআইসি ব্যাংকের ঘাটতি কমে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৬৯৮ কোটি টাকা (আগে ছিল ৯ হাজার ২৯ কোটি টাকা)। ন্যাশনাল ব্যাংকের ঘাটতি কমে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৯৩৯ কোটি টাকা। তবে বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক ও এবি ব্যাংকের ঘাটতি বেড়ে যথাক্রমে ১ হাজার ৭৮২ কোটি এবং ৩ হাজার ৬৯৩ কোটি টাকায় পৌঁছেছে। পদ্মা ব্যাংকের ঘাটতি বেড়ে হয়েছে ৫ হাজার ১৭১ কোটি টাকা।
ডেফারেল সুবিধা নেওয়ার পরও মার্চ প্রান্তিকে নতুন করে ঘাটতিতে পড়েছে প্রিমিয়ার ব্যাংক (১,১৭১ কোটি), সীমান্ত ব্যাংক (২৬ কোটি) এবং ইউসিবি ব্যাংক (৯৫৪ কোটি)।
এবারের প্রতিবেদনে বিদেশি খাতের হাবিব ব্যাংকও মূলধন ঘাটতিতে পড়েছে। মার্চ শেষে ব্যাংকটির ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৩৬ লাখ টাকা।
খেলাপি ঋণের প্রভাব
বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব বলছে, মার্চ শেষে ব্যাংকখাতে খেলাপি ঋণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ২০ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা। ডেফারেল সুবিধা নেওয়ার পরও খেলাপি ঋণের চাপেই ২৩টি ব্যাংক মূলধন ঘাটতিতে পড়েছে।
ব্যাংক
প্রিমিয়ার ব্যাংকের পর্ষদ ভেঙে পুনর্গঠন করল কেন্দ্রীয় ব্যাংক

আওয়ামী লীগ নেতা ডা. এইচ বি এম ইকবালের নিয়ন্ত্রণে থাকা প্রিমিয়ার ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দিয়ে পুনর্গঠন করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ব্যাংকটির বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্বলতা এবং সুশাসনের অভাবের অভিযোগে বাংলাদেশ ব্যাংক এই কঠোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।
নতুন গঠিত ছয় সদস্যের এই পর্ষদে আগের কোনো পরিচালককে রাখা হয়নি। বাংলাদেশ ব্যাংকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, গঠিত এই নতুন পর্ষদে রয়েছেন পাঁচজন স্বতন্ত্র পরিচালক এবং একজন উদ্যোক্তা পরিচালক।
মঙ্গলবার (১৯ আগস্ট) বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী মুখপাত্র শাহরিয়ার সিদ্দিকী এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, প্রিমিয়ার ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠনের ক্ষেত্রে তিনটি প্রধান কারণ উল্লেখ করা হয়েছে। প্রথমত, ব্যাংকটির পর্ষদে সুশাসনের ঘাটতি ছিল; দ্বিতীয়ত, নীতি ও পলিসি বাস্তবায়নে দুর্বলতা ছিল; এবং তৃতীয়ত, ঋণ ব্যবস্থাপনা দেখা গেছে মারাত্মক বিশৃঙ্খলা। এসব কারণে বাংলাদেশ ব্যাংক পর্ষদ পুনর্গঠনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।
নতুন পরিচালনা পর্ষদে উদ্যোক্তা পরিচালক হিসেবে স্থান পেয়েছেন ডা. আরিফুর রহমান। তিনি উদ্যোক্তা শেয়ারহোল্ডারদের প্রতিনিধি হিসেবে পর্ষদে যুক্ত হয়েছেন।
স্বতন্ত্র পরিচালক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক মো. ফোরকান হোসেন, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের সাবেক অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ ফরিদুল ইসলাম, ব্যাংক এশিয়ার সাবেক উপব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সাজ্জাদ হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউট (আইবিএ)-এর অধ্যাপক শেখ মোর্শেদ জাহান এবং প্রাইম ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির স্বতন্ত্র পরিচালক পদ থেকে পদত্যাগের শর্তে এফসিএস চার্টার্ড সেক্রেটারি এম নুরুল আলম।
তবে নতুন এই পর্ষদে এখনো কাউকে চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়নি। বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, পরবর্তী বোর্ড সভায় পর্ষদের সদস্যদের মধ্য থেকে একজনকে চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত করা হবে।
কাফি
ব্যাংক
পদত্যাগ করেছেন ঢাকা ব্যাংকের এমডি

এক বছরের কম সময় দায়িত্বে থেকে পদত্যাগ করেছেন ঢাকা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) শেখ মোহাম্মদ মারুফ। গত বৃহস্পতিবার তিনি পদত্যাগপত্র জমা দেন।
গত বছরের অক্টোবর মাসে ঢাকা ব্যাংকের এমডি হিসেবে যোগ দেন শেখ মোহাম্মদ মারুফ। এর আগে তিনি সিটি ব্যাংকের অতিরিক্ত এমডি ছিলেন।
ব্যাংকের একটি সূত্র জানায়, সরকার পরিবর্তনের পর ব্যাংকের কয়েকজন সাবেক ও বর্তমান পরিচালক হঠাৎ সক্রিয় হয়ে ওঠেন। কেউ কেউ নিয়মিত যাতায়াত শুরু করেন কার্যালয়ে। এ নিয়ে টানাপোড়েন শুরু হওয়ায় এমডিকে পদত্যাগ করতে হয়েছে।
তবে শেখ মোহাম্মদ মারুফের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন ধরেননি। এ কারণে তাঁর বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
ঢাকা ব্যাংকের চেয়ারম্যান আব্দুল হাই সরকার বলেন, আমাদের সঙ্গে কোনো সমস্যা হয়নি। বাংলাদেশ ব্যাংকের বেশ কিছু নিয়ম পরিপালন করতে তিনি ব্যর্থ হয়েছেন। তাঁর পদত্যাগপত্র আমরা পেয়েছি। সোমবার পর্ষদ সভায় তাঁর বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।
চলতি মাসের শুরুতে এক সপ্তাহের মধ্যে তিন ব্যাংকের এমডি পদত্যাগ করেছেন। এর মধ্যে সাউথইস্ট ব্যাংকের এমডিকে আগে থেকেই ছুটিতে পাঠানো হয়েছিল। এ ছাড়া মেঘনা ও কমার্স ব্যাংকের এমডি হঠাৎ সরে দাঁড়ান।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী, কোনো এমডি পদত্যাগ করলে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে তার কারণ অবহিত করতে হয়। এরপর বাংলাদেশ ব্যাংক সিদ্ধান্ত নেয়, পদত্যাগ কার্যকর হবে কি না। এর আগে পদত্যাগ করা কোনো এমডিকে আবার কাজে ফেরানো হয়েছে—এমন নজিরও আছে।