আন্তর্জাতিক
বিশ্ববাজারে চিনির দাম কমলো

আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত চিনির দাম নিম্নমুখী হয়েছে। বুধবার (২২ মে) ইন্টারন্যাশনাল কন্টিনেন্টাল এক্সচেঞ্জে (আইসিই) খাদ্যপণ্যটির দর কমেছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের বরাত দিয়ে বিজনেস রেকর্ডারের এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানা গেছে।
এতে বলা হয়, আলোচ্য কার্যদিবসে আইসিইতে অপরিশোধিত চিনির আগামী জুলাইয়ের সরবরাহ মূল্য হ্রাস পেয়েছে শূন্য দশমিক ১ শতাংশ। প্রতি পাউন্ডের দর স্থির হয়েছে ১৮ দশমিক ৫৪ সেন্টে।
একই কর্মদিবসে সাদা চিনির আগামী আগস্টের চুক্তি মূল্য হ্রাস পেয়েছে শূন্য দশমিক ০৫ শতাংশ। প্রতি মেট্রিক টনের দাম নিষ্পত্তি হয়েছে ৫৪৪ ডলার ২০ সেন্টে।
বিক্রেতারা বলেন, বিশ্বের শীর্ষ চিনি উৎপাদক ব্রাজিল। দেশটির মধ্য-দক্ষিণ অঞ্চলে জোরকদমে আখ কাটা শুরু হয়েছে। বিশ্ববাজারকে যা ক্ষণাত্মক অবস্থায় ফেলেছে। যদিও ব্রাজিলে শুষ্ক আবহাওয়া নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে।
ডিলাররা বলেন, গত সপ্তাহে বিগত ১৮ মাসের মধ্যে সর্বনিম্নে নেমে গিয়েছিল চিনির বৈশ্বিক মূল্য। পাউন্ডপ্রতি দাম দাঁড়িয়েছিল ১৭ দশমিক ৯৫ সেন্টে। সেখান থেকে অবশ্য চলতি সপ্তাহে বিশ্ববাজার ঘুরে দাঁড়িয়েছে। ইতোমধ্যে কয়েক কর্মদিবসে ভোগ্যপণ্যটির দাম বেড়েছে।

আন্তর্জাতিক
চীনের ওপর ১০০ শতাংশ শুল্ক টেকসই নয়: ট্রাম্প

চীনের ওপর আরোপিত ১০০ শতাংশ শুল্ককে দীর্ঘমেয়াদে অটেকসই বলে মন্তব্য করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে তিনি দাবি করেন, বেইজিংয়ের আচরণের কারণেই এমন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছেন। ট্রাম্প আরও জানান, সবকিছু সত্ত্বেও আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে দক্ষিণ কোরিয়ায় চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন তিনি।
শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) ফক্স বিজনেস নেটওয়ার্ককে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেন, “এটা টেকসই নয়, কিন্তু সংখ্যাটি এটাই। তারা আমাকে এটা করতে বাধ্য করেছে।”
এর আগে, গত সপ্তাহে ট্রাম্প প্রশাসন চীনা পণ্যের ওপর ১০০ শতাংশ আমদানি শুল্ক ঘোষণা করে এবং ১ নভেম্বর থেকে ‘সব ধরনের গুরুত্বপূর্ণ সফটওয়্যার’ রপ্তানিতে নতুন নিয়ন্ত্রণ আরোপের সিদ্ধান্ত নেয়। চীনের পক্ষ থেকে বিরল ধাতুর (রেয়ার আর্থ এলিমেন্টস) রপ্তানি সীমিত করার প্রতিক্রিয়াতেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়। প্রযুক্তি নির্মাণে অপরিহার্য এসব ধাতুর বাজারে চীনের প্রভাব প্রায় একচেটিয়া।
যদিও বাণিজ্য ইস্যুতে কঠোর অবস্থান নিয়েছেন, তবুও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের প্রতি ব্যক্তিগতভাবে প্রশংসা জানিয়েছেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, “চীনের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক ঠিক হয়ে যাবে, তবে চুক্তি হতে হবে ন্যায্য।” হোয়াইট হাউসে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠকে যাওয়ার সময়ও ট্রাম্প জানান, “চীন কথা বলতে চায়, আমরাও কথা বলতে চাই।”
দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য উত্তেজনা ও আকস্মিক শুল্ক আরোপের কারণে টালমাটাল হয়ে ওঠে ওয়াল স্ট্রিট। তবে শি জিনপিংয়ের সঙ্গে সম্ভাব্য বৈঠকের ইঙ্গিতের পর কিছুটা ঘুরে দাঁড়ায় শেয়ারবাজার। সূত্র: রয়টার্স।
আন্তর্জাতিক
আফগানিস্তানে পাকিস্তানের ভয়ঙ্কর হামলা, নিহত ৪০

অস্থায়ী যুদ্ধবিরতির মেয়াদ শেষ হতে না হতেই আবারও আফগানিস্তানে বড় ধরনের হামলা চালিয়েছে পাকিস্তানের বিমান বাহিনী। দেশটির কান্দাহার প্রদেশের স্পিন বোলদাক শহরে চালানো এ হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন ৪০ জন। সেইসঙ্গে আহত হয়েছেন আরও অন্তত ১৭০ জন।
শনিবার (১৮ অক্টোবর) আফগান সংবাদমাধ্যম তোলো নিউজের এক প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে এ তথ্য।
স্পিন বোলদাক শহরটির অবস্থান আফগানিস্তান-পাকিস্তান সীমান্তের কাছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, হতাহতদের সবাই বেসমারিক এবং একটি বড় অংশই নারী ও শিশু।
গত ৯ অক্টোবর আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে হামলা চালিয়ে তেহরিক-ই তালেবানের (টিটিপি) শীর্ষ নেতা নূর ওয়ালি মেহসুদকে হত্যা করে পাকিস্তানের বিমান বাহিনী। হামলার দু’দিন পর ১১ অক্টোবর আফগানিস্তানের সঙ্গে লাগোয়া খাইবার পাখতুনখোয়ার সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে তীব্র সংঘাত শুরু হয় পাক-আফগান সেনাবাহিনীর মধ্যে।
চার দিন সংঘাত চলার পর ১৫ অক্টোবর ৪৮ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতি হয় পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যে। সেই যুদ্ধবিরতির মেয়াদ শেষ হয়েছে আজ শুক্রবার স্থানীয় সময় দুপুর ১ টায়। কিন্তু, যুদ্ধবিরতি শেষ হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই হামলা চালায় পাকিস্তান।
হামলার শিকার এবং আহত হাজি বাহরাম নামের এক ব্যক্তি তোলো নিউজকে বলেন, আমি ইতিহাসে এমন অবিচার দেখিনি। একটি দেশ, যারা নিজেদের মুসলিম বলে দাবি করে- তারা এখানে নারী, শিশু ও বেসামরিক লোকজনের ওপরে হামলা করল।
বিমান বাহিনীর অভিযানের পাশপাশি স্পিন বোলদাক শহরের নোকলি, হাজি হাসান কেলাই, ওয়ার্দাক, কুচিয়ান, শহীদ ও শোরবাকে একের পর এক আর্টিলারি গোলা নিক্ষেপ করেছে পাকিস্তানি স্থলবাহিনী। এতে বেশ কিছু বাড়িঘর, দোকান ধ্বংস হয়ে গেছে। হতাহতও হয়েছেন অনেকে।
প্রসঙ্গত, আফগানিস্তানের সঙ্গে পাকিস্তানের সাম্প্রতিক সংঘাতের মূলে রয়েছে পাকিস্তানের তালেবানপন্থি সশস্ত্র রাজনৈতিক গোষ্ঠী তেহরিক-ই তালেবান (টিটিপি)। বেশ কয়েক বছর আগে পাকিস্তানের সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ হওয়া এই গোষ্ঠীটি বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠছে দেশটির জন্য। আফগাস্তানের সীমান্তবর্তী পাকিস্তানি প্রদেশ খাইবার পাখতুনখোয়া টিটিপির প্রধান ঘাঁটি। ২০২১ সালে আফগানিস্তানে তালেবান সরকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর গোষ্ঠীটি আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।
পাকিস্তানের অভিযোগ, টিটিপির পেছনে প্রকাশ্য মদদ আছে আফগানিস্তানের তালেবান সরকারের। তবে, কাবুল বরাবরই এ অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।
আন্তর্জাতিক
জলবায়ু পরিবর্তনে দারিদ্র্যে ভুগছে ১১০ কোটি মানুষ: জাতিসংঘের প্রতিবেদন

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে বিশ্বের ১০৯টি দেশের ৬৩০ কোটি মানুষের মধ্যে ১১০ কোটি মানুষ (প্রায় ১৮ শতাংশ) চরম বহুমাত্রিক দারিদ্র্যে ভুগছে। সরাসরি জলবায়ু ঝুঁকিতে রয়েছে বিশ্বের প্রায় ৯০ কোটি মানুষ যা মোট দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ৮০ শতাংশ। শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যৌথভাবে জাতিসংঘের উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) প্রকাশিত প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে।
পোভার্টি হিউম্যান ডেভলপমেন্ট ইনিশিয়েটি (ওপিএইচআই)-এর যৌথ বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৮৮ কোটি ৭ লাখ মানুষ অন্তত একটি জলবায়ু সমস্যা সরাসরি সম্মুখীন । এর মধ্যে ৬০ কোটি ৮ লাখ চরম তাপে, ৫৭ কোটি ৭ লাখ দূষণে, ৪৬ কোটি ৫ লাখ বন্যায়, এবং ২০ কোটি ৭ লাখ খরায় ভুগছে। প্রায় ৬৫ কোটির বেশি মানুষ অন্তত দুই ধরনের ঝুঁকিতে, ৩০ কোটির বেশি মানুষ তিন বা চার ধরনের বিপদের সম্মুখীন এবং ১ কোটি ১ লাখ মানুষ এক বছরে সব চারটি বিপদই অনুভব করেছে।
এছাড়াও প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দারিদ্র্য ও জলবায়ু বিপদের যুগপৎ উপস্থিতি এখন বৈশ্বিক সংকটে পরিণত হয়েছে। এই পরিমাপের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে শিশু মৃত্যুহার, বাসস্থান, স্যানিটেশন, বিদ্যুৎ, এবং শিক্ষার মতো মৌলিক সূচক। এদের অর্ধেকেরও বেশি অপ্রাপ্তবয়স্ক শিশু।
জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) ভারপ্রাপ্ত প্রশাসক হাওলিয়াং শু বলেন, খরা, বন্যা, তাপপ্রবাহ বা বায়ুদূষণের মতো জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব থেকে কেউই পুরোপুরি নিরাপদ নয়। কিন্তু সবচেয়ে দরিদ্র জনগোষ্ঠীই এর সবচেয়ে কঠিন প্রভাবের শিকার। নভেম্বর মাসে ব্রাজিলে অনুষ্ঠিতব্য আসন্ন COP30 জলবায়ু সম্মেলন বিশ্বনেতাদের জন্য একটি সুযোগ, যেখানে জলবায়ু পদক্ষেপকে দারিদ্র্য মোকাবিলার পদক্ষেপ হিসেবেও বিবেচনা করতে হবে।
প্রতিবেদনে উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে বলিভিয়ার সান্তা ক্রুজ দে লা সিয়েরা শহরের বাইরে বসবাসরত গুয়ারানি আদিবাসী সম্প্রদায়ের সদস্য রিকার্ডোকে।
রিকার্ডো দিনমজুর হিসেবে অল্প আয়ে ১৮ জনের সঙ্গে একটি ছোট ঘরে বসবাস করেন। স্ত্রী, তিন সন্তান, বাবা-মা এবং আরও কয়েকজন আত্মীয় নিয়ে একটি ঘরে তাদের বসবাস। বাড়িতে মাত্র একটি বাথরুম, কাঠ ও কয়লায় চালিত রান্নাঘর, এবং কোনো শিশুই স্কুলে যায় না।
প্রতিবেদনে বলা হয়, সাহারার দক্ষিণাঞ্চলীয় আফ্রিকা ও দক্ষিণ এশিয়ায় মানুষ দারিদ্র্যের পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। চরম তাপমাত্রা, খরা, বন্যা ও বায়ুদূষণ—এই চারটি জলবায়ু ঝুঁকির কারণে এই অঞ্চলের দরিদ্র জনগোষ্ঠী বিশেষভাবে ঝুঁকিতে রয়েছে।
ইউএনডিপি প্রতিবেদনটি উপসংহারে বলেছে, একাধিক ঝুঁকির মোকাবিলা করতে হলে মানুষ ও পৃথিবী উভয়কেই অগ্রাধিকার দিতে হবে এবং স্বীকৃতি থেকে সবচেয়ে জরুরি হচ্ছে পদক্ষেপে রূপান্তর।
আন্তর্জাতিক
গাজায় সেনা পাঠাচ্ছে মুসলিম ৩ দেশ

প্রায় দুই বছর ধরে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় চলা ইসরায়েলি আগ্রাসনে অবশেষে লাগাম টানতে সক্ষম হয়েছে বিশ্ব। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবিত যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে ইসরায়েল ও হামাস। ভূখণ্ডটিতে শান্তি আনার লক্ষ্যে জামিনদার (গ্যারান্টি) হিসেবে ইতোমধ্যে একটি ঘোষণাপত্রেও স্বাক্ষর করেছে যুক্তরাষ্ট্র, মিসর, কাতার ও তুরস্ক।
গাজা উপত্যকায় এখন স্থিতিশীলতা রক্ষায় গঠিতব্য আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বাহিনীতে কোন দেশগুলো অংশ নেবে, তা নিয়ে চলছে আলোচনা। এরই মধ্যে সামনে এসেছে তিনটি মুসলিম দেশের নাম। দেশগুলো হলো— পাকিস্তান, আজারবাইজান ও ইন্দোনেশিয়া।
বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোরব) দ্য পলিটিকোর এক প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে এ তথ্য।
প্রতিবেদনে এক সক্রিয় ও সাবেক মার্কিন প্রতিরক্ষা কর্মকর্তার বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, এই তিন দেশই এখন পর্যন্ত শীর্ষ প্রার্থী হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে, যদিও এখনও আনুষ্ঠানিক সম্মতি মিলেনি।
পলিটিকোর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইন্দোনেশিয়া এ পর্যন্ত একমাত্র দেশ হিসেবে প্রকাশ্যে নিজেদের সেনা প্রেরণের প্রস্তাব জানিয়েছে। তারা বলেছে, জাতিসংঘের অনুমোদনে শান্তিরক্ষী মিশনের আওতায় তারা প্রয়োজন হলে ২০ হাজার সেনা পাঠাতে প্রস্তুত। তবে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যে পরিকল্পনা উপস্থাপনা করেছেন, তাতে জাতিসংঘের কোনো সরাসরি ম্যান্ডেটের উল্লেখ নেই।
প্রতিবেদনে আরও জানানো হয়, কাতার, মিসর ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) সেনাও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সমন্বয়ে ইসরায়েলে একটি সামরিক ঘাঁটিতে অবস্থান করে যুদ্ধবিরতি পর্যবেক্ষণে ভূমিকা নিতে পারে।
তথ্যসূত্র না জানিয়েই পলিটিকো উল্লেখ করেছে, এসব বাহিনীর মূল কাজ হবে গাজায় সংঘাত রোধ, ত্রাণবাহনের নিরাপদ চলাচল নিশ্চিতকরণ এবং পর্যবেক্ষণ—যদিও চূড়ান্ত ম্যান্ডেট নির্ধারণ বাকি।
যুক্তরাষ্ট্র তৎকালীন পরিকল্পনায় হামাসকে নিরস্ত্রীকরণ ভবিষ্যৎ ধাপ হিসাবে দেখানো হয়েছে। এ প্রসঙ্গে ট্রাম্প বলেছিলেন, হামাসকে নিরস্ত্র করা হবে—ইচ্ছাকৃত বা বাধ্যতামূলকভাবে। পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তা বিষয়ক বিশ্লেষকরা বলছেন, এখন সুচারুভাবে ম্যান্ডেট নির্ধারণ, অংশগ্রহণকারী দেশ নির্বাচন ও দ্রুত প্রস্তুতি দেখানোই নীতি বাস্তবায়নের জন্য জরুরি।
সাবেক বাইডেন প্রশাসনের কর্মকর্তা ড্যানিয়েল শাপিরো পলিটিকোকে বলেছেন, ‘গতি দেখানো এবং অংশগ্রহণকারী দেশ ও ম্যান্ডেট চূড়ান্ত করা রাস্তাকে বিশ্বাসযোগ্য করে তুলবে।’
উল্লেখ্য, গাজার দুই বছরের সংঘাতের পর সম্প্রতি যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে। যুদ্ধবিরতি স্থিতিশীল রাখার জন্য বহুপাক্ষিক নিরাপত্তা ব্যবস্থার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করছেন বিশ্বনেতারা। আন্তর্জাতিক কূটনীতি ও বাস্তবতায় কোন দেশ কী ভূমিকা নেবে, তাদের ম্যান্ডেট কেমন হবে—এই প্রশ্নগুলো নিয়ে এখন চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের অপেক্ষা চলছে।
আন্তর্জাতিক
বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দামে নতুন রেকর্ড

বিশ্ববাজারে সোনার দাম নতুন রেকর্ড ছুঁয়েছে। বুধবার (১৫ অক্টোবর) আউন্সপ্রতি সোনার দাম ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ৪ হাজার ২০০ ডলার ছাড়িয়েছে। বাংলাদেশি মুদ্রায় এই দাম দাঁড়ায় প্রায় ৫ লাখ ৯ হাজার ৮১ টাকা। (১ আউন্স= প্রায় ২ দশমিক ৪৩ ভরি)।
যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের (ফেড) সুদের হার আরও কমতে পারে- এমন প্রত্যাশা ও বিশ্ব অর্থনীতির অনিশ্চয়তার মধ্যে নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় সোনার দামে এমন উত্থান হয়েছে বলে জানিয়েছে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
রয়টার্সের প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, বুধবার (১৫ অক্টোবর) বাংলাদেশ সময় বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে স্পট গোল্ডের দাম ছিল আউন্সপ্রতি ৪ হাজার ২০৩ দশমিক ৭৯ ডলার, যা আগের তুলনায় ১ দশমিক ৫ শতাংশ বেশি। এর আগে সেশনে রেকর্ড সর্বোচ্চ ৪ হাজার ২১৭ দশমিক ৯৫ ডলারে পৌঁছায় দামটি। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ডিসেম্বর ডেলিভারির জন্য সোনার দাম বেড়ে ৪ হাজার ২২০ দশমিক ২০ ডলারে পৌঁছেছে, যা ১ দশমিক ৪ শতাংশ বৃদ্ধি নির্দেশ করে।
স্পট গোল্ড হলো সোনার বর্তমান বাজার মূল্য, যা তাৎক্ষণিক কেনা-বেচার জন্য নির্ধারিত হয়।
এ বছর এখন পর্যন্ত সোনার দাম বেড়েছে প্রায় ৫৮ শতাংশ। বিশ্লেষকদের মতে, ভূরাজনৈতিক অস্থিরতা, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা, যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য সুদের হার কমানোর প্রক্রিয়া, কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর ধারাবাহিক সোনা ক্রয়, ডি-ডলারাইজেশনের ধারা এবং এক্সচেঞ্জ-ট্রেডেড ফান্ডে (ইটিএফ) শক্তিশালী প্রবাহ- সব মিলিয়ে এই উত্থানকে ত্বরান্বিত করেছে।
রূপা, প্লাটিনাম ও প্যালাডিয়ামের দামেও উত্থান
সোনার দাম বৃদ্ধির প্রভাবে রূপার দামও বেড়ে আউন্সপ্রতি ৫২ দশমিক ৬৪ ডলারে পৌঁছেছে, যা ২ দশমিক ৩ শতাংশ বৃদ্ধি। মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) এটি রেকর্ড ৫৩ দশমিক ৬০ ডলারে পৌঁছেছিল। স্পট বাজারে সরবরাহ কমে যাওয়ায় এই বৃদ্ধি আরও ত্বরান্বিত হয়েছে।
পাশাপাশি, প্লাটিনামের দাম বেড়ে আউন্সপ্রতি ১ হাজার ৬৫৭ দশমিক ০৫ ডলার ও প্যালাডিয়ামের দাম বেড়ে ১ হাজার ৫৫১ দশমিক ১৮ ডলারে পৌঁছেছে, যা যথাক্রমে ১ দশমিক ২ ও ১ দশমিক ৭ শতাংশ বৃদ্ধি নির্দেশ করে।
সোনার দাম ৫,০০০ ডলার ছোঁয়া অসম্ভব নয়
অ্যাকটিভট্রেডসের বিশ্লেষক রিকার্ডো ইভানজেলিস্তা বলেন, মার্কিন সরকারের চলমান শাটডাউন দীর্ঘায়িত হওয়া, যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের (ফেড) কর্মকর্তাদের আরও নরম মনোভাবের বক্তব্য ও যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্যে উত্তেজনা অব্যাহত থাকলে সোনার দামে আরও ঊর্ধ্বগতি দেখা দিতে পারে। মধ্য বা দীর্ঘমেয়াদে আউন্সপ্রতি সোনার দাম ৫ হাজার ডলার স্পর্শ করা মোটেই অসম্ভব নয়।
ডলার দুর্বল ও যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের (ফেড) সুদের হার কমানোর জল্পনা বাড়ছে
ফেডারেল রিজার্ভের চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েলের সাম্প্রতিক মন্তব্যের পর বুধবার (১৫ অক্টোবর) ডলার সূচক অন্যান্য প্রধান মুদ্রার বিপরীতে দুর্বল হয়। বাজার এখন প্রায় নিশ্চিত যে, অক্টোবর মাসে ২৫ বেসিস পয়েন্ট ও ডিসেম্বরেও আরও এক দফা সুদ কমানো হতে পারে, যার সম্ভাবনা যথাক্রমে ৯৬ ও ৯৩ শতাংশ হিসেবে ধরা হচ্ছে।
এদিকে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, ওয়াশিংটন চীনের সঙ্গে কিছু বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিন্ন করার বিষয়টি বিবেচনা করছে। এর আগে মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) দুই দেশ পরস্পরের ওপর পাল্টা বন্দর শুল্ক আরোপ করে।
শাটডাউনের প্রভাব পড়ছে বৈশ্বিক বাজারেও
যুক্তরাষ্ট্রে কেন্দ্রীয় সরকারের শাটডাউন অব্যাহত থাকায় সরকারি অর্থনৈতিক তথ্য প্রকাশ বন্ধ রয়েছে, যা শুধু দেশটির নয়, জাপানসহ অন্যান্য দেশের নীতিনির্ধারকদের জন্যও পরিস্থিতি জটিল করে তুলছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অস্থিরতা কিংবা মুদ্রাস্ফীতির ঝুঁকির সময়ে সোনা সবসময়ই নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে বিবেচিত হয়। আবার, কম সুদের হার পরিবেশেও এই ধাতুর দাম সাধারণত বাড়ে।
এএনজেড ব্যাংকের পণ্য বিশ্লেষক সোনি কুমারি বলেন, আমরা সোনার এই ঊর্ধ্বমুখী ধারা আরও কিছুদিন অব্যাহত থাকবে বলে আশা করছি।
প্রযুক্তিগত দিক থেকে অতিরিক্ত ক্রয়ের ইঙ্গিত
প্রযুক্তিগত বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, সোনার রিলেটিভ স্ট্রেংথ ইনডেক্স (আরএসআই) বর্তমানে ৮৫, যা বাজারে ‘অতিরিক্ত ক্রয়’-এর ইঙ্গিত দেয়।