আন্তর্জাতিক
ফেব্রুয়ারিতে ভারতের ৪ হাজার ১৪০ কোটি ডলারের পণ্য রফতানি

বৈশ্বিক বাণিজ্যে বিভিন্ন অনিশ্চয়তা সত্ত্বেও ফেব্রুয়ারিতে ৪ হাজার ১৪০ কোটি ডলারের পণ্য রফতানি করেছে ভারত। এর পরিমাণ জানুয়ারির চেয়ে ১২ শতাংশ বেশি। এছাড়া ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে (এপ্রিল-ফেব্রুয়ারি) ৩ দশমিক ৬ শতাংশ কমে মোট রফতানির পরিমাণ ছিল ৩৯ হাজার ৫০০ কোটি ডলার। খবর হিন্দুস্তান টাইমস।
ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দেয়া তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে দেশটির পরিষেবা রফতানির পূর্বাভাস ছিল ৩ হাজার ২১৫ কোটি ডলার, যা ২০২৩ সালের একই মাসে ছিল ২ হাজার ৭৪০ কোটি ডলার।
তথ্যমতে, ২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ভারতের সামষ্টিক পরিষেবা রফতানি বেড়েছে ৭ শতাংশ। রফতানির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩১ হাজার ৪৮২ কোটি ডলার। আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ২৯ হাজার ৪৮৯ কোটি ডলার।
আমদানি-রফতানির মাসিক তথ্য প্রকাশ করে সম্প্রতি ভারতের বাণিজ্য সচিব সুনীল বার্থওয়াল বলেন, ‘ফেব্রুয়ারির পরিসংখ্যান নির্দেশ করে আমরা গত বছরের তুলনায় ভালো করছি। মার্চে চলতি অর্থবছরের শেষ নাগাদ সামগ্রিক রফতানি আগের বছরকে ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করছি।’
২০২২-২৩ অর্থবছরে ভারতের পণ্য রফতানি ৪৫ হাজার ১০০ কোটি ডলার অতিক্রম করেছিল। একই সময়ে সামগ্রিক রফতানির (পণ্য ও পরিষেবা একত্রে) পরিমাণ রেকর্ড ৭৭ হাজার কোটি ডলার স্পর্শ করেছে। আগের ২০২১-২২ অর্থবছরেও দেশটির পণ্য ও পরিষেবা রফতানি ছিল রেকর্ড পরিমাণ, ৬৭ হাজার ৬০০ কোটি ডলার।
বার্থওয়ালের মতে, সামগ্রিক রফতানি প্রবৃদ্ধিতে ভারতীয় রফতানিকারকদের কৃতিত্ব উল্লেখ করার মতো। কেননা তারা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, বিশ্ববাজারের চলমান মন্দা ও লোহিত সাগর সংকটের মতো বিষয়গুলো মোকাবেলা করে রফতানি অব্যাহত রেখেছে।
তিনি বলেন, আপনি যদি অর্থবছরের ১১ মাসের দিকে তাকান, দেখবেন আমরা সর্বোচ্চ রফতানি প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি। এটি পণ্য ও পরিষেষা উভয় ক্ষেত্রেই। এটা খুবই আনন্দের বিষয়। আশা করছি, ভারতের সামগ্রিক রফতানি গত বছরের রেকর্ডের তুলনায় বেশি হবে।
ফেব্রুয়ারিতে ভারতের রফতানি পণ্যের চালকের ভূমিকায় ছিল প্রকৌশল পণ্য, ইলেকট্রনিক পণ্য, ওষুধ, রাসায়নিক ও পেট্রোলিয়াম পণ্য।
গত মাসে ভারতের প্রকৌশল সামগ্রীর রফতানি বছরওয়ারি ১৫ দশমিক ৯ শতাংশ বেড়েছে। একই সময়ে ইলেকট্রনিক পণ্যের রফতানি বেড়েছে ৫৫ শতাংশ। তথ্য বলছে, ইলেকট্রনিক পণ্য রফতানি বিশেষ করে স্মার্টফোনের ক্ষেত্রে মার্কিন বাজারে আধিপত্য বিস্তার করেছে কোরিয়া ও ভারত। এক্ষেত্রে ভারতের হিস্যাই বড় অংশ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেছেন, ‘মার্কিন ইলেকট্রনিক বাজারে চীন, ভিয়েতনাম ও হংকংয়ের শেয়ার কমেছে।’
অবশ্য ফেব্রুয়ারিতে ভারতের বাণিজ্য ঘাটতি বেড়েছে। এর পরিমাণ ১ হাজার ৮৭১ কোটি ডলার, যা ২০২৩ সালের একই সময়ে ছিল ১ হাজার ৬৫৭ কোটি ডলার। মূলত স্বর্ণ আমদানি বাড়ানোর কারণে বাণিজ্য ঘাটতির সম্মুখীন হয়েছিল দেশটি।
সামগ্রিকভাবে ফেব্রুয়ারিতে ৬ হাজার ১১ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি করেছে ভারত, যা ২০২৩ সালের একই সময়ের তুলনায় ১২ দশমিক ২ শতাংশ বেশি। ওই মাসে ভারত ৫ হাজার ৩৫৮ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি করেছিল।

আন্তর্জাতিক
ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী দেশ

ইসরায়েলি হামলায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত গাজা আর হাজারো নিরীহ ফিলিস্তিনির করুণ পরিণতি দেখে এবার মুখ খুলছে বিশ্বের শীর্ষ ধনী দেশ লুক্সেমবার্গ। দেশটি জানিয়েছে, চলতি মাসেই তারা ফিলিস্তিনকে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেবে।
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম দ্য জেরুসালেম পোস্ট জানিয়েছে, লুক্সেমবার্গের প্রধানমন্ত্রী লুক ফ্রিডেন ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেভিয়ার বেত্তেল তাদের দেশের সংসদীয় কমিশনকে এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দিয়েছেন।
জানা গেছে, চলতি মাসের শেষ দিকে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশন চলাকালে লুক্সেমবার্গ আনুষ্ঠানিকভাবে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেবে। একই সময়ে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, বেলজিয়াম সহ আরও কয়েকটি পশ্চিমা দেশও একই পদক্ষেপ নিতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এরইমধ্যে বিশ্বের প্রায় ৭৫% দেশের (প্রায় ১৪৭টি রাষ্ট্র) ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিয়েছে। এবার ধনী ও প্রভাবশালী পশ্চিমা দেশগুলোও সেই তালিকায় যুক্ত হচ্ছে। অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, যুক্তরাজ্য এবং বেলজিয়াম—এই দেশগুলোও শর্তসাপেক্ষে স্বীকৃতি দেওয়ার কথা ভাবছে।
আন্তর্জাতিক
ভারত-যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্য আলোচনা শুরু

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চড়া হারে শুল্ক বসানোর পর দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্য আলোচনা মঙ্গলবার আবার শুরু হলো।
ভারত সরকারিভাবে জানিয়েছে, দুই দেশের প্রধান আলোচকরা আবার কথা শুরু করেছেন। যুক্তরাষ্ট্র ভারতীয় পণ্যের উপর ৫০ শতাংশ শুল্ক বসানোর পর যে পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে, সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার চেষ্টা করা হবে। বর্তমান পরিস্থিতিতে আমদানি-রপ্তানিতে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
মার্কিন প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়ায় সহকারী বাণিজ্য প্রতিনিধি ব্রেন্ডান লিঞ্চ।
ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সচিব রাজেশ আগরওয়াল বলেছেন, আমরা ভবিষ্যৎ বাণিজ্যের স্পষ্ট ছবি পেতে চাই। তাই এই আলোচনা হচ্ছে। এই আলোচনা শুধু মঙ্গলবারই হওয়ার কথা। এই আলোচনার ফলাফলের উপর ভিত্তি করে ঠিক হবে দুই দেশের মধ্যে আনুষ্ঠানিক পর্যায়ের আলোচনা কবে শুরু হবে।
রাজেশ আগরওয়াল বলেছেন, মঙ্গলবার দুই দেশের মধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে বাণিজ্য আলোচনা হচ্ছে না। আমরা অবশ্যই বাণিজ্য নিয়ে আলোচনা করবো। তবে আমরা দেখবো, ভবিষ্যতে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য চুক্তি সম্ভব কিনা।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় যে তথ্য দিয়েছে, তাতে দেখা যাচ্ছে, জুলাই মাসে ভারতীয় পণ্যের রপ্তানি ৮১০ কোটি ডলার থেকে কমে ৬৮৬ কোটি ডলারে হয়েছে।
ভারতে যিনি এবার মার্কিন রাষ্ট্রদূত হতে চলেছেন, সেই সার্জিও গোর সেনেটে বলেছেন, ভারতীয় বাণিজ্যমন্ত্রীকে যুক্তরাষ্ট্রে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
রাজেশ আগরওয়াল বলেছেন, এই বিষয়েও কথা হতে পারে। তবে বাণিজ্য ছাড়া অন্য কোনো বিষয় নিয়ে কোনো কথা হবে না।
ভারতে বণিকসভা ফিকি-র সাবেক পরামর্শদাতা অঞ্জন রায় বলেছেন, এখন যা অবস্থা তাতে শুল্ক বসানোর ফলে দুই দেশের কিছুটা অসুবিধা হবে ঠিকই, তবে অর্থনীতিতে খুব বড় ধাক্কা লাগবে না। কারণ, এখন যে শুল্ক বসানো হয়েছে তা পণ্যের উপর। সার্ভিস সেক্টর বা পরিষেবা ক্ষেত্রে কিছু হয়নি। আর এই ক্ষেত্রের উপর যদি আঘাত আসে, তাহলে ভারতের অর্থনীতিতে তার বড় ধরনের প্রভাব পড়বে। আমেরিকাও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
অঞ্জন রায় মনে করেন, এখন শুল্কের জন্য বস্ত্র থেকে শুরু করে ভারতের কয়েকটি ক্ষেত্রে ধাক্কা লাগবে। তবে তা সামলে নেওয়ার ক্ষমতা ভারতের আছে।
তার মতে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হলেন এমন এক ব্যক্তি, যিনি পরমুহূর্তে কী করবেন তা কেউ জানেন না। তিনি আজ এককথা বলছেন, একরকম সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, কাল অন্য সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। তিনি আনপ্রেডিকটেবল। সেজন্যই এই আলোচনায় কতটা ফল হবে তা আগে থেকে বলা যাচ্ছে না।
অঞ্জন রায় কিছুদিন আগে আমেরিকা থেকে ফিরেছেন। তিনি মনে করেন, সেখানকার সাধারণ মানুষের মধ্যে এই শুল্ক নিয়ে মাথাব্যথা খুব কম। যদি জিনিসের দাম বাড়ে বা পরিষেবা দামী হয়, বেকার মানুষের সংখ্যা বেড়ে যায়, তখন তারা ক্ষুব্ধ হতে পারে। না হলে বাণিজ্য চুক্তি, শুল্ক নিয়ে তারা মাথায় ঘামায় না।
প্রবীণ সাংবাদিক শরদ গুপ্তা বলেছেন, যে পরিস্থিতিতে আলোচনা হচ্ছে, তা অনুকূল পরিবেশ নয়। দুই দেশের মধ্যেই একটা সন্দেহের পরিবেশ আছে। ভারত একটা রেডলাইন টেনে দিয়েছে। তারা রাশিয়ার তেল কেনা বন্ধ করবে না। তারা কৃষি ও ডেয়ারি ক্ষেত্রকে খুলে দেবে না। তারপরেও আলোচনা সফল হতে পারে, যদি ট্রাম্প চান এবং মোদী কিছু ক্ষেত্রে শুল্কে ছাড় দেন। সেটা পরের কথা। তবে আলোচনা শুরু হয়েছে, এটাই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
আন্তর্জাতিক
ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কড়া বার্তা কাতারের আমিরের

কাতারের রাজধানী দোহায় শুরু হয়েছে আরব-ইসলামিক সম্মেলন। দখলদার ইসরায়েল দোহায় সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের নেতাদের লক্ষ্য করে হামলা চালানোর পর মুসলিম নেতারা এক জোট হয়েছেন।
কাতারের আমির তামিম বিন হামাদ আল থানি রোববার (১৪ সেপ্টেম্বর) সম্মেলনে কথা বলেন। এতে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কড়া বার্তা দেন তিনি।
কাতারি আমির বলেন, কাতারে ইসরায়েলি ‘বর্বর’ হামলার নিন্দা জানিয়েছে আরব বিশ্ব। এ হামলার বিরুদ্ধে এবং নিজেদের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় কাতার যে আইনি ব্যবস্থা নেবে সেটিকে সমর্থন জানাবে তারা।
ইসরায়েলি হামলার বিরুদ্ধে কঠোর এবং দৃঢ় পদক্ষেপ নিতে হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। এছাড়া আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে দ্বিচারিতা পরিহার করে ইসরায়েল যেসব অপরাধ করেছে সেগুলোর বিচার করার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। কাতারের আমির বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের এখনই দ্বিচারিতা পরিহার করার সময়। এছাড়া ইসরায়েল যেসব অপরাধ করেছে তাদের সেগুলোর জন্য বিচারের মুখোমুখি করতে হবে।
গাজা যুদ্ধ প্রসঙ্গে কাতারের আমির বলেন, ইসরায়েলের জানা উচিত ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে তারা যে গণহত্যামূলক যুদ্ধ শুরু করেছে, মাতৃভূমি থেকে জোরপূর্বক তাদের উচ্ছেদের যে চেষ্টা ইসরায়েল চালাচ্ছে সেটি সফল হবে না, তারা যতই মিথ্যা যুক্তি দিক।
এছাড়া দখলদার ইসরায়েল বারবার গাজা যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করছে বলেও জানান তামিম বিন হামাদ আল থানি। তিনি বলেন, ইসরায়েলি সরকার প্রস্তাবের পর প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে এবং ইচ্ছাকৃতভাবে যুদ্ধের পরিধি বাড়াচ্ছে। এই অঞ্চলের মানুষ এবং ইসরায়েলিদের ঝুঁকিতে ফেলে করা হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক
নেপালে আন্দোলনে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৭২

নেপালে চলতি সপ্তাহের দুর্নীতিবিরোধী সহিংস বিক্ষোভে কমপক্ষে ৭২ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে রবিবার জানিয়েছে দেশটির সরকার। একই সময়ে সাবেক প্রধান বিচারপতি সুশীলা কার্কির নেতৃত্বে নতুন অন্তর্বর্তী সরকারও তাদের কার্যক্রম শুরু করেছে।
সরকারের প্রধান সচিব একনারায়ণ আরিয়াল এক বিবৃতিতে জানান, নিহত হয়েছে ৭২ জন এবং ১৯১ জন চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
দেশটিতে সরকারের পতনের পর তৈরি হওয়া পরিস্থিতির পূর্ণ চিত্র ক্রমেই স্পষ্ট হয়ে উঠছে।
নিহতরা মূলত সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিষেধাজ্ঞা, দুর্নীতি ও দুর্বল শাসনব্যবস্থার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ চলাকালে পুলিশের দমন ও পীড়নে প্রাণ হারায়।
পরিস্থিতি মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) আরো ভয়াবহ রূপ নেয়। ক্ষুব্ধ জনতা সংসদ ভবনে আগুন ধরিয়ে দেয়। এরপরই প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা অলি পদত্যাগ করেন। তখনই সেনাবাহিনী রাস্তায় নামে ও নিয়ন্ত্রণ নেয়।
নেপালের সেনাবাহিনী শুক্রবার জানিয়েছে, বিক্ষোভ চলাকালে লুট হওয়া ১০০টির বেশি বন্দুক তারা উদ্ধার করেছে। এর আগে বিক্ষোভকারীদের স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র হাতে ঘুরতে দেখা যায়।
পুলিশের মুখপাত্র বিনোদ ঘিমিরে এএফপিকে বলেন, সহিংসতার সময় দেশজুড়ে একাধিক কারাগার থেকে পালানো প্রায় ১৩ হাজার ৫০০ কয়েদির মধ্যে শুক্রবার পর্যন্ত ১২ হাজার ৫৩৩ জন এখনও পলাতক।
নিহতদের মধ্যে জেল পালানো কয়েকজন কয়েদিও ছিলেন। পালানোর সময় বা পরবর্তীতে তারা নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে প্রাণ হারিয়েছেন।
এদিকে জেল থেকে পালানো অনেকে প্রতিবেশী দেশ ভারতের সীমান্ত পাড়ি দেওয়ার চেষ্টা করলেও ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বেশিরভাগ কয়েদিকে আটক করেছে।
আন্তর্জাতিক
নেপালে নতুন নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা

নেপালের অন্তর্বর্তীকালীন নতুন প্রধানমন্ত্রী সুশীলা কার্কির সুপারিশের ভিত্তিতে সংসদ ভেঙে দিয়েছেন নেপালের প্রেসিডেন্ট। এছাড়া আগামী বছরের মার্চে নতুন নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে।
বার্তা সংস্থা এএফপিকে এ তথ্য জানিয়েছেন নেপালের প্রেসিডেন্টের প্রেস উপদেষ্টা কিরণ পোখরেল। শুক্রবার (১২ সেপ্টেম্বর) রাতে প্রধানমন্ত্রীর সুপারিশক্রমে সংসদ ভেঙে দেওয়া হয়েছে। নতুন নির্বাচনের তারিখ হলো ২০২৬ সালের ৫ মার্চ।
এর আগে, শুক্রবার (১২ সেপ্টেম্বর) নেপালের রাষ্ট্রপতি ভবনে স্থানীয় সময় রাত সেয়া ৯টায় তিনি শপথ নেন। তাকে শপথ বাক্য পাঠ করান রাষ্ট্রপতি রামচন্দ্র পৌডেল।
দুর্নীতি-বিরোধী সহিংস আন্দোলনের মুখে প্রধানমন্ত্রী কে.পি. শর্মা ওলির পদত্যাগের পর অস্থির দেশটির দায়িত্ব নিলেন তিনি। রাষ্ট্রপতি রামচন্দ্র পাওডেলের দপ্তর থেকে জানানো হয়, সেনাপ্রধান অশোক রাজ সিগদেল ও আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনার পর কার্কির নিয়োগ চূড়ান্ত করা হয়েছে। আন্দোলনকারীরাই তাকে নেতৃত্বের জন্য প্রস্তাব করেন।
এর আগে, সপ্তাহজুড়ে চলা বিক্ষোভে অন্তত ৫১ জন নিহত এবং ১ হাজার ৩০০ জনের বেশি আহত হয়েছেন। তরুণ প্রজন্মের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা এই দুর্নীতি বিরোধী আন্দোলনকে ‘জেন জি আন্দোলন’ বলা হচ্ছে। তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত থেকে বিক্ষোভের সূত্রপাত হয়। এক পর্যায়ে সামাজিকমাধ্যমের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হলেও সহিংসতা থামে গত মঙ্গলবার ওলির পদত্যাগের পর।
তবে প্রকৌশলী কুলমান ঘিসিংকে প্রধানমন্ত্রী পদে চান আন্দোলনকারীদের অনেকে, যিনি নেপালের বিদ্যুৎ সংকট সমাধান করে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন। এক বিবৃতিতে তার নামও প্রস্তাব করেছিলেন আন্দোলনকারীরা। কুলমানের নাম উঠে আসায় কিছুটা অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছিল। আর এরও আগে ওলি সরকারের পতনের পরই প্রাথমিকভাবে নাম শোনা গিয়েছিল রাজধানী কাঠমাণ্ডুর নির্দল মেয়র ও জনপ্রিয় র্যাপার বলেন্দ্র শাহের। কিন্তু ৩৫ বছর বয়সী শাহ প্রধানমন্ত্রী হতে আগ্রহী ছিলেন না। বরং তিনি প্রকাশ্যে কার্কির পক্ষেই সমর্থন জানান।
প্রসঙ্গত, সুশিলা কার্কি এর আগে ২০১৬ থেকে ২০১৭ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত নেপালের প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব পালন করেন। সততা, দুর্নীতিবিরোধী অবস্থান ও দৃঢ়তার কারণে তিনি ব্যাপকভাবে পরিচিত। বিচারপতি থাকাকালে ক্ষমতাসীন মন্ত্রীকে জেলে পাঠানো থেকে শুরু করে সরাসরি সরকারের সঙ্গে সংঘাতে জড়াতেও পিছপা হননি কার্কি। তবে তার বিচারপতি জীবন ঝঞ্ঝাটমুক্ত ছিল না। দায়িত্ব নেওয়ার এক বছরের মধ্যেই তার বিরুদ্ধে অভিশংসন প্রক্রিয়া শুরু হয়, যা ব্যাপকভাবে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হিসেবে দেখা হয়। জনমতের চাপে শেষ পর্যন্ত তা ভেস্তে যায়। যদিও ঘটনাটি কার্কিকে হতাশ করেছিল এবং তিনি পরে পদ থেকে সরে দাঁড়ান।