রাজনীতি
এবার এনসিপি থেকে পদত্যাগ করলেন তাজনূভা জাবীন
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) থেকে পদত্যাগ করেছেন এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক তাজনূভা জাবীন। রোববার (২৮ ডিসেম্বর) নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডি থেকে দেয়া পোস্টে তিনি এ কথা জানান।
পোস্টে তিনি লিখেন, আপনারা অনেকে ভাবছেন, হয়তো জামায়াতের সাথে জোটে ঐতিহাসিক কারণ বা নারী বিষয়ের কারণে আমার আপত্তি। এর চেয়েও ভয়ঙ্কর যে কারণ, সেটা হল যে প্রক্রিয়ায় এটা হয়েছে। এটাকে রাজনৈতিক কৌশল, নির্বাচনী জোট ইত্যাদি লেভেল দেয়া হচ্ছে। আমি বলব এটা পরিকল্পিত। এটাকে সাজিয়ে এ পর্যন্ত আনা হয়েছে।
এটা আদর্শের চেয়েও অনেক বড়, সেটা হল বিশ্বাস। মাত্র কিছুদিন আগে সমারোহে সারাদেশ থেকে মনোনয়ন সংগ্রহের ডাক দিয়ে ১২৫ জনকে মনোনয়ন দিয়ে ৩০ জনের জন্য সীট সমঝোতা করে বাকিদের নির্বাচন করতে দেয়া হবে না। এই সিদ্ধান্তে সীল মোহর বসানো হয়েছে। বিষয়টা ঠেলতে ঠেলতে একদম শেষ অবধি এনেছে যাতে কেউ স্বতন্ত্র নির্বাচনও করতে না পারে। আগামীকাল মনোনয়ন জমা দেয়ার শেষ তারিখ। আমার অবশ্য এই মুহূর্তে স্বতন্ত্র নির্বাচন করার ইচ্ছা নাই। পুরো আগোছালো করে চোখের পলকে ডিসওউন করে দিয়েছে।
বিভিন্ন পত্রিকায় নানান খবর প্রকাশিত হচ্ছে। আমি মনোনয়ন হারানোর ভয়ে জোটের বিরোধিতা করছি। আমি কিছুদিন আগে লিখেওছিলাম আমার আসনে নেগোনিয়েশন হলে আমি নির্বাচন করব না, যত কঠিন প্রতিপক্ষ হোক আমি ফাইট দেব। দিলো না। তাদের গোষ্টীর ভাইরা তাদের পক্ষে দিস্তায় দিস্তায় লিখে ভরায় ফেলছে কেন আর কিভাবে এই জোট। কিন্তু কোন জেনারেল, ইসি মিটিং এর সিদ্ধান্ত এরকম ছিল না জোট হলে বাকি আসনে প্রার্থীকে বসে যেতে হবে। আবার বাকি আসনগুলোতে জামায়াতের হয়ে নির্বাচনী প্রচার প্রচারণা করতে হবে। জামায়াতের সাথে চরমোনাই পীরের ৭০ টা আসনে সমঝোতা হচ্ছে। আর গণঅভ্যুত্থান থেকে জন্ম নেয়া দলের ৩০ টা আসনে।
তিনি বলেন, এনসিপি শুরু থেকে যে গণপরিষদ, সেকেন্ড রিপাবলিক মধ্যপন্থার, নারী, বিভিন্ন জাতিসত্তাকে নিয়ে রাজনীতি করার কথা বলছে সেটা ধারন করে যে কয়জন পার্টিতে ছিল তাদের মধ্যে আমি একজন। এই পার্টির একজন ফাউন্ডার মেম্বার আমি। স্বাভাবিকভাবেই ভীষণ মন খারাপ। কিন্তু এই দল ছেড়ে দেয়া ছাড়া আমার সামনে আর কোন সম্মানজনক অপশন নাই। দলের খারাপ সময়ে দল ছেড়ে দিয়ে অরাজনৈতিক, অপরিপক্কতার পরিচয় ইত্যাদি বয়ান দিবে অনেকে। জাস্ট বুলশিট। শুধু এটুকু বলি, আমি বহিরাগত ওখানে, আমাকে প্রতারিত করলে মেইক সেন্স। কিন্তু এক শীর্ষ নেতা আরেক শীর্ষ নেতার সাথে যে মাইনাসের রাজনীতি করে ওখানে সেটা ভয়ঙ্কর। এরা নিজেদের মধ্যে রাজনীতি করতে এতো ব্যস্ত এরা কখনো দেশের জন্য নতুন একটা মধ্যপন্থার বাংলাদেশপন্থী রাজনীতি করতে পারবে না।
সবাই খুব বলছেন কালকে থেকে, রাজনীতি লম্বা, অনেক দূর যেতে হয়। একদম ঠিক। কিন্তু সেই নীতি এনসিপির নিজেরই নাই। নেতারা বিতর্কের পর বিতর্ক জন্ম দিয়ে সেটাকে বিপ্লব নাম দিয়েছে আর আমাদের মত যারা আসলেই এনসিপির নীতি ধারণ করেছি তাদের আবেগী লেবেল দেয়া হয়েছে। ২৮ ফেব্রুয়ারি ঘোষণাপত্র থেকে শুরু করে সবশেষ ডেইলি স্টারের ডিবেটে বলা কথা শীর্ষ নেতারা কতটুকু ধারণ করে সময় মতো মিলিয়ে নিয়েন।
ওই পুরোনো ফাঁকা বুলির রাজনীতি করতে হলে পুরোনো দলই করতাম, নতুন কেন? এবার আবারও আসি, জামায়াতের সাথে জোট প্রসঙ্গে, এনসিপি স্বতন্ত্র স্বকীয়তা নিয়ে দাঁড়িয়ে গেলে যে কারো সাথে রাজনৈতিক জোটে অসুবিধা ছিল না। সেটা ৫ বছর পরে হতো, ঠিক প্রথম নির্বাচনেই কেন? কিন্তু আর সব অপশনকে ধীরে ধীরে রাজনীতি করে বাদ দেয়া হয়েছে যাতে জামায়াতের সাথে জোট ছাড়া কোন উপায় না থাকে। সুনিপুণভাবে এখানে এনে অনেককে জিম্মি করা হয়েছে। যাই হোক। এটা কোন রাজনৈতিক কৌশল না। এটাই পরিকল্পনা।
এই লেখার পরে আমার উপর অনেক আক্রমণ আসবে। আমার অনেক ব্যথতার ঢালি সাজানো হবে। চরিত্রহননের চেষ্টা হবে। কিন্তু নিজের কাছে নিশ্চিত। আমি এদের সাথে রাজনীতি করতে এসেছিলাম, এদের বিরুদ্ধে না। আমার আজকে মনোনয়ন জমা দেয়ার জন্য দৌড়ঝাঁপ করার কথা, আর আমি এখানে বসে এসব লিখছি। জোট নাকি হবে দেড় মাসের, তারপর তারা মধ্যপন্থায় ব্যাক বাউন্স করবে। ট্রু। ব্যাক করে আবার দ্বিচারিতা, ভন্ডামি শুরু করবে। যে জবাবদিহিতার কথা বলে এরা মুখে ফেনা তুলে, সেটা নিজেদের কেউ করলে তাকেই মাইনাস করে।
আমি আগে রাজনীতি করি নাই, ঠিক। কিন্তু এরা কে আগে জাতীয় রাজনীতি করেছে? আমি নিজে বের হয়ে দলের বদনাম করছি, বলতে পারেন। বিষয়টা আমারও ভালো লাগছে না। কিন্তু সেটার থেকে আমার কাছে বেশি জরুরি মানুষ যে এনসিপির দিকে তাকিয়ে আছে, এনসিপিকে এটা সেটা ভেবে, এনসিপি ওটা না। এনসিপিকে আমরা যারা ওটা করতে চেয়েছি তাদেরকে ট্যাগিং করা হয়েছে নানাভাবে। আমরা যারা আপ্রাণ চেষ্টা করেছি, তারা একে একে ছাড়ছি। যাতে এই এনার্জিটা গঠনে ব্যয় হয়, এই চেষ্টাটা প্রোডাকটিভ ভাবে করতে পারি। এখন কলুর বলদ খাটছি।
নিজেরও ভাল লাগছে না, এভাবে ছেড়ে যেতে। কিন্ত যারা এই দেশ, এই সংসদই চায় নাই তাদের সমঝোতায় একদম শুরুতেই এমপি হতে চাওয়া, বা যারা এদের কল্যাণে এমপি হওয়ার জন্য হাভাইত্তার মতো করছে তাদের নেতৃত্ব মানা আমার পক্ষে ঠিক গণঅভ্যুত্থানের পরের বছর অসম্ভব। এই জিনিস হজম করে মরতেও পারব না আমি। আমার নেতা হবে মাজাওয়ালা, জুলাই রাজনীতির ধারক। কিন্তু পুরো জুলাইকে নিয়ে রাজনৈতিক কৌশলের নাম করে তুলে দিচ্ছে জামায়াতের হাতে। আবার নাকি বাউন্স ব্যাক করবে। হাস্যকর। বিএনপি, এই জামাতের সাথে জোট করে ১৭ বছর ক্ষমতা থেকে দূরে ছিল। আর বিএনপির অধীনে জামায়াতের সাথে জোট হয়েছিল। জামায়াতের অধীনে না। যেখানে এনসিপিকে বলাই হয় জামায়াতের আরেকটা দোকান, তাহলে কেন এনসিপি আগে নিজের স্বকীয়তা, নিজের রাজনীতি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা না করে ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য জামায়াতকে বেছে নিতে মরিয়া হয়ে যাচ্ছে? তিনজন মন্ত্রী ছিল না ক্ষমতায় ? পারে নাই তো।
ক্ষমতার কেন্দ্রে থাকা যায় কৌশল করে, কিন্তু সংগঠন দাঁড় করাতে যোগ্যতা লাগে। আপনারা মিলায় নেবেন, যারা এনসিপি ছাড়ছি তারাই এনসিপির বলা নয়া বন্দোবস্তের রাজনীতি করেছি। কিন্তু ছাড়তে হচ্ছে আমাদের। পার্টিতে থাকা অবস্থায় কোন শোকজ না পেয়ে, সম্পূর্ণ পার্টির ইন্টিগ্রিটি মেনে যখন ছেড়ে আসতে চাই, তখন “অরাজনৈতিক” তকমা পরে। আপনারা এটাও মিলায় দেখেন কত কয়েকমাসে কোন কোন নেতা কত অসংখ্যবার পাটির ইন্টিগ্রিটি ভেঙ্গে বক্তব্য দিয়েছে, বিভিন্ন কাজ করেছে কিন্তু তারা মিলিয়ন ফলোয়ার ওয়ালা গণঅভ্যুত্থানের নেতা তাই তারা নির্বাচনী জোটের নামে বাকিদের নির্বাচন করার অধিকার কেড়ে নিয়ে এমপি হতে পারেন আর আমরা পদত্যাগও করতে পারব না। সেটাকে অপরাধ হিসেবে দেখা হবে।
নির্বাচন কেন্দ্র করে প্রচুর পজিটিভ পিআর হবে এসকল নেতাদের ঘিরে। কিন্তু আমি নিশ্চিত এরা নয়া বন্দোবস্ত না, এরা মধ্যপন্থার রাজনীতি না। আপনারা বলতে পারেন, এসব আগে থেকেই জানতেন। কিন্তু এই দলে অনেকে আছে/ছিল যারা আদৌতেই এনসিপির রাজনীতি করেছে। তাদেরকে এম্পাওআরড করা হয় নাই ইচ্ছাকৃতভাবে। আপনারা তাদেরই চেনেন যাদের এনসিপি চেনাতে চেয়েছে। জুলাই এর যে স্পিরিট সেটা এনসিপিতে চর্চা করা হয় না, ব্যবহার করা হয়।
যারা চর্চা করত, তাদের “নীতি কথা বলা যায় অনেক, বিপ্লব দিয়ে রাজনীতি হয় না, আবেগ দিয়ে রাজনীতি হয় না” ইত্যাদি বলে থামানো হয়, যাতে তারা নিজেদের ভন্ডামি চালিয়ে যেতে পারে।
আরেকটা বিষয় দেখলাম, বিএনপি গণভোটে না ভোটকে জেতায় আনবে তাই সেটা ঠেকানোর জন্য এই কৌশল। আমার প্রশ্ন, হ্যাঁ ভোট জেতানোর জন্য এনসিপিকে ৩০ টা আসনে সীমিত হতে হল???? যে লিস্ট ঘুরছে তাদের ৬০-৭০% এর রাজনৈতিক ব্যাকগ্রাউন্ড দেখেন। আমার চেয়ে ভাল জানবেন। এরপরও এনসিপির জোর করে চেপে বসে থাকা নেতাদের মধ্যে যদি এনসিপির রাজনীতি নিয়ে পরিকল্পনা, রাজনৈতিক দূরদর্শিতা দেখতাম, জবাবদিহিতা পেতাম, তাহলে আমি আরো চেষ্টা করতাম টিকে থাকার। এখন সময় নষ্ট না করি আর।
তিনি আরও লিখেন, ভেবেছিলাম, জোটের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসার পর আমি পদত্যাগ দেবো। শেষ আশাই ছিলাম। কিন্তু গতকাল সবাই নিশ্চিত করেছে এই জোটে সীল পরেছে। আর আবারও বলি, আমার পদত্যাগের কারণ যতটা না জোট তার চেয়ে বেশি যে প্রক্রিয়ায় জোট হয়েছে। অবিশ্বাস, অনাস্থা মূল কারণ। দল অনেক বড় হয়ে স্টাবলিশ করতে পারলে অনেক কিছু বিবেচনা করে ছাড় দেয়া যেত কিন্তু গঠনের শুরুটাই নাকি আগে সংসদে যেতে হবে, তারপর ওই যে কজন এমপি বের হবে তাদেরকে কেন্দ্র করে নাকি সংগঠন বড় হবে। কিয়েক্টাবস্থা।
যাই হোক, আমি আজকে পদত্যাগ করেছি এনসিপি থেকে। অত্যন্ত ভাঙ্গা মন নিয়ে জানাচ্ছি আমি আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারছি না। সবচেয়ে কষ্ট লাগছে আজকেই আম্মু চট্টগ্রাম থেকে আসছে আমার নির্বাচন করা উপলক্ষ্যে, আর আজকেই আমি এই সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হলাম। আমি জানি অনেকে ভীষণ কষ্ট পেয়েছেন আমার এই সিদ্ধান্তে। কিন্তু এটাই আমার জন্য সঠিক। এখানে ন্যুনতম আশা থাকলে, আমি আমার আত্মসম্মানবোধকেও বোধ হয় ডাউট অফ বেনিফিট দিতাম।
আমি আপনাদের পাঠানো ডোনেশন ফেরত দেব এক এক করে। আমাকে একটু সময় দেবেন। সেটার জন্য বিস্তারিত লিখে আপডেট দেব কিভাবে ধীরে ধীরে ফেরত দেব। প্রত্যেকটা পয়সা ফেরত দেব। আপনাদের সমর্থন, আপনাদের ভালোবাসার জন্য আমি কৃতজ্ঞ।
শেষ কথা বলি, আমি আগে কখনো রাজনীতি করি নাই। জুলাই এ আমার রাজপথে নামা, পরিবর্তনের লক্ষ্যে নতুন কিছুর জন্য।
আমি মারা যাওয়ার আগ পর্যন্ত সেই চেষ্টা করতে থাকব। আমার আওয়াজ, দেশের গণতান্ত্রিক পরিবর্তনের জন্য কাজ আরো জোরালোভাবে জারি থাকবে। মধ্যপন্থার বাংলাদেশ পন্থী নয়া বন্দোবস্তের রাজনীতির জায়গাটা খালিই পরে থাকল। আমি ওই জায়গা পূরণ করার চেষ্টায় থাকব। সময় বলে দিবে বাকিটা।
এমকে
রাজনীতি
খালেদা জিয়ার ইন্তেকালে জামায়াত আমিরের শোক
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ইন্তেকালে শোক প্রকাশ করেছেন জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। নিজের ভেরিফাইড ফেসবুক পেইজে দেওয়া স্টাটাসে তিনি এই শোক প্রকাশ করেন।
তিনি লিখেছেন-‘ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার ওপরে রহম করুন, ক্ষমা করুন এবং তাঁর প্রিয় জান্নাতের মেহমান হিসেবে কবুল করুন।
তাঁর আপনজন, প্রিয়জন ও সহকর্মীদেরকে মহান আল্লাহ সবরে জামিল দান করুন। আমিন।
এমকে
রাজনীতি
শহীদ জিয়ার কবরের পাশে খালেদা জিয়ার দাফনের প্রস্তুতি
বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুর পর তার দাফনের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে।
বিএনপি সূত্র জানিয়েছে, খালেদা জিয়ার জানাজা আগামীকাল বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে অনুষ্ঠিত হবে। জানাজার পর তার মরদেহ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সমাধিস্থলের পাশে দাফন করা হবে।
খালেদা জিয়া মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) ভোর ৬টায় রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮০ বছর।
এমকে
রাজনীতি
ফার্স্ট লেডি থেকে প্রধানমন্ত্রী: খালেদা জিয়ার ১০টি অনন্য অর্জন
বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া আর নেই। (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) সকাল ৬টায় রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
চার দশকের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশের রাজনীতিতে তিনি ছিলেন এক ব্যতিক্রমী ও প্রভাবশালী চরিত্র। ক্ষমতার পালাবদল, রাজনৈতিক সংকট, কারাবাস—সবকিছু পেরিয়েও নির্বাচনী রাজনীতিতে তিনি ছিলেন প্রায় অপ্রতিরোধ্য। তার রাজনৈতিক জীবনে এমন কিছু রেকর্ড ও রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত রয়েছে, যা তাকে সমসাময়িক অন্য সব নেতার থেকে স্বতন্ত্র উচ্চতায় নিয়ে গেছে।
নিচে তুলে ধরা হলো বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও বিরল ১০টি রেকর্ড—
নির্বাচনে কখনো পরাজিত না হওয়া
বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক জীবনের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য রেকর্ড হলো-তিনি জীবনে অংশগ্রহণ করা কোনো নির্বাচনে পরাজিত হননি। ১৯৯১ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত পাঁচটি জাতীয় নির্বাচনে (১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনসহ) তিনি মোট ২৩টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন এবং প্রতিটিতেই বিজয়ী হন। এতগুলো ভিন্ন আসনে দাঁড়িয়ে শতভাগ সাফল্যের নজির বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিরল।
পাঁচ আসনে জয়ের ‘হ্যাটট্রিক’
তৎকালীন নির্বাচনী আইন অনুযায়ী একজন প্রার্থী সর্বোচ্চ পাঁচটি আসনে নির্বাচন করতে পারতেন। ১৯৯১, ১৯৯৬ (জুন) ও ২০০১ সালের নির্বাচনে বেগম খালেদা জিয়া পাঁচটি করে আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে সবগুলোতেই জয় পান। পরবর্তীতে আইন পরিবর্তনের পর ২০০৮ সালে তিনটি আসনে দাঁড়িয়ে তিনটিতেই বিজয়ী হন।
ছয়টি ভিন্ন জেলা থেকে সংসদ সদস্য
খালেদা জিয়া দেশের ছয়টি ভিন্ন জেলা—বগুড়া, ফেনী, ঢাকা, চট্টগ্রাম, লক্ষ্মীপুর ও খুলনা থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হওয়ার এমন রেকর্ড অন্য কোনো শীর্ষ রাজনীতিবিদের নেই।
ফার্স্ট লেডি থেকে প্রধানমন্ত্রী
তিনি বাংলাদেশের ইতিহাসে একমাত্র নারী যিনি ফার্স্ট লেডি এবং পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রী—দু’টি পরিচয়েই রাষ্ট্র পরিচালনার অংশ ছিলেন। রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সহধর্মিণী হিসেবে ফার্স্ট লেডির দায়িত্ব পালনের পর তিনি নিজেই সরকারপ্রধান হন।
সংসদীয় গণতন্ত্রে প্রত্যাবর্তনের নায়ক
১৯৯১ সালে ক্ষমতায় এসে বেগম খালেদা জিয়া দ্বাদশ সংশোধনী পাসের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি শাসন ব্যবস্থা বাতিল করে সংসদীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেন। ক্ষমতা সংসদের হাতে ফিরিয়ে দেওয়ার এই সিদ্ধান্তকে তার অন্যতম বড় রাজনৈতিক অবদান হিসেবে দেখা হয়।
নারী শিক্ষায় যুগান্তকারী উদ্যোগ
তার সরকারের অন্যতম উল্লেখযোগ্য অর্জন ছিল মেয়েদের দশম শ্রেণি পর্যন্ত অবৈতনিক শিক্ষা ও উপবৃত্তি চালু করা। এই সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের নারী শিক্ষায় বিপ্লব ঘটায় এবং আন্তর্জাতিক মহলেও প্রশংসিত হয়।
মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা
২০০১ সালে তার সরকার প্রথমবারের মতো ‘মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয়’ গঠন করে। এর মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধাদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি ও সুযোগ-সুবিধা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পায়।
পরিবেশ রক্ষায় পলিথিন নিষিদ্ধ
২০০২ সালে তার সরকার পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর পলিথিন ব্যাগ উৎপাদন ও ব্যবহার নিষিদ্ধ করে। সে সময় এটি ছিল আন্তর্জাতিকভাবে আলোচিত ও প্রশংসিত একটি সিদ্ধান্ত।
সার্কের প্রথম নারী চেয়ারপারসন
১৯৯২ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত সার্ক শীর্ষ সম্মেলনে তিনি দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থার প্রথম নারী চেয়ারপারসন নির্বাচিত হন—যা দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতিতে নারী নেতৃত্বের এক ঐতিহাসিক দৃষ্টান্ত।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার সাংবিধানিক স্বীকৃতি
১৯৯৬ সালে ত্রয়োদশ সংশোধনী পাসের মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে সংবিধানের অংশ করেন বেগম খালেদা জিয়া। রাজনৈতিক সংকট নিরসনে ক্ষমতা ছাড়ার এই নজিরও তাকে অনন্য করে তোলে।
বর্ণাঢ্য এই রাজনৈতিক জীবন ও রাষ্ট্রীয় সংস্কারমূলক সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে বেগম খালেদা জিয়া বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক স্থায়ী অধ্যায় হয়ে থাকবেন।
এমকে
রাজনীতি
সংবাদ সম্মেলনে অঝোরে কাঁদলেন ফখরুল ও রিজভী
বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে সংবাদ সম্মেলনে এসে কেঁদেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
মঙ্গলবার সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে দলটির এই দুই নেতাকে কাঁদতে দেখা যায়।
সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এই সংবাদটি নিয়ে আপনাদের সামনে দাঁড়াতে হবে, আমরা সেটা কখনো ভাবিনি। আশা করছিলাম, তিনি আগের মতোই আবার সুস্থ হয়ে উঠবেন। আপনারা এরই মধ্যে শুনেছেন ড. শাহাবুদ্দিনের ঘোষণায়—আজ ভোর ৬টায় গণতন্ত্রের মা, আমাদের অভিভাবক, আমাদের জাতীয় অভিভাবক আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিউন)। এই শোক, এই ক্ষতি অপূরণীয়। এই ক্ষতি জাতি কোনোদিন পূরণ করতে পারবে না।
তিনি আরো বলেন, যে নেত্রী সারাটি জীবন জনগণের অধিকারের জন্য, কল্যাণের জন্য একটি তার সমগ্র জীবনকে উৎসর্গ করেছিলেন সে নেত্রী আমাদের মাঝে আর নেই। বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি বিশাল শূন্যতা তৈরি হলো। শুধু তাই নয়, গণতান্ত্রিক আন্দোলনেরও বিশাল একটি শূন্যতা তৈরি হলো।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, সংকটে শোকে মাথার ওপর যেমন মায়ের একটি ছায়া থাকে, আজকে জাতি যেন সে ছায়া থেকে বঞ্চিত হলো। তিনি অসুস্থ ছিলেন, হাসপাতালে ছিলেন, কখনো বাসায়, এতে করেও আমাদের মনে হতো, একজন মা তো আছেন। সে কারণে আমরা এতটা শক্তি পেতাম। এটা বোঝানোর এবং বলার ভাষা আমি পাচ্ছি না। সেই ছাত্র রাজনীতি থেকে একটা দীর্ঘ সময় যার নেতৃত্বে ছায়ায় বেড়ে ওঠা, তিনি এত তাড়াতাড়ি চলে যাবেন, এটা বড়ই বেদনার।
তিনি আরো বলেন, এই শোক এবং সংকট কাটিয়ে ওঠা জাতির জন্য খুব মুশকিল। এত নিপীড়ন সহ্য করে চোখের সামনে সন্তানের লাশ দেখে, শুধু দেশ এবং গণতন্ত্রের জন্য অটুট মনোবল দিয়ে তিনি টিকে থেকেছেন। সারা দেশ এবং সারা বিশ্ব নিপীড়িত মজলুম নেত্রীর জন্য গভীর শোক জানাচ্ছে।
এমকে
রাজনীতি
রাজনৈতিক চর্চায় উজ্জ্বল চরিত্র ছিলেন খালেদা জিয়া: চরমোনাই পীরের শোক
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির ও চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম ৩০ ডিসেম্বর সকালে বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যু সংবাদে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।
চরমোনাই পীর বলেন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক চর্চায় ও ইতিহাসে বেগম খালেদা জিয়া একজন উজ্জল ও গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র ছিলেন। পীর সাহেব চরমোনাই তাঁর রুহের মাগফিরাত কামনা করেন। শোকাহত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করেন।
এমকে




