জাতীয়
অর্থ আত্মসাৎ: জয়-পুতুলসহ আটজনের বিরুদ্ধে মামলা করবে দুদক
সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন (সিআরআই) নামক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় ও মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলসহ ৮ জনের নামে একটি মামলার অনুমোদন দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
আসামিদের বিরুদ্ধে সিআরআইয়ের মাধ্যমে রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়নে সহযোগিতা করার আশ্বাসে রাষ্ট্রীয় অর্থের ক্ষতি সাধন, অর্থ আত্মসাৎ, কর ফাঁকি ও সন্দেহজনক লেনদেনের অভিযোগ আনা হয়েছে।
বুধবার (৫ নভেম্বর) দুদকের মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন বিষয়টি জানিয়েছেন। দুদকের সহকারী পরিচালক মুবাশ্বিরা আতিয়া তমা বাদী হয়ে সংস্থাটির সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকায় মামলাটি দায়ের করবেন।
মামলায় অন্যদের মধ্যে সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল, জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু, শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন ভূঁইয়া, এনবিআর সদস্য রওশন আরা আক্তার ও সিআরআইয়ের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর শাব্বির বিন শামসকে আসামি করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৪০৯/১০৯ ধারাসহ দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭ এর ৫(২) ধারা এবং মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১২ এর ৪(২) ও ৪(৩) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।
দুদকের অভিযোগে বলা হয়, আয়কর আইনের ক্ষমতার অপব্যবহার করে সিআরআইকে আয়কর মওকুফ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। প্রতিষ্ঠানটি সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে নিবন্ধিত না হয়েও এসআরও জারি করে কর-সুবিধা গ্রহণ ও প্রদান করেছে। এছাড়া অবৈধভাবে চাপ প্রয়োগ করে ২৩টি কোম্পানির কাছ থেকে ৪৫ কোটি ৩৫ লাখ ৯৫ হাজার টাকা অনুদান হিসেবে গ্রহণ করা হয়।
২০১৩-১৪ করবর্ষ থেকে ২০২৩-২৪ করবর্ষ পর্যন্ত সিআরআই মোট ১০০ কোটি ৩১ লাখ ৪০ হাজার ৪৮৬ টাকা অবৈধভাবে আয় করে। গ্রহণযোগ্য ব্যয় হিসেবে ২৯ কোটি ৫০ লাখ ৯৮ হাজার ৯৬ টাকা বাদ দিলে সিআরআইয়ের হিসাবে থাকার কথা ছিল ৭০ কোটি ৮০ লাখ ৪২ হাজার ৩৯০ টাকা। কিন্তু বাস্তবে হিসাব অনুযায়ী স্থিতি পাওয়া গেছে ৫৫ কোটি ১১ লাখ ৮২ হাজার ৮৯৬ টাকা। অর্থাৎ ১৫ কোটি ৬৮ লাখ ৫৯ হাজার ৫২১ টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে।
দুদক জানায়, সিআরআই এর ২৫টি ব্যাংক হিসাবে ২৪৭ কোটি ৮৫ লাখ ৩৬ হাজার ১৭০ টাকা জমা এবং ১৯১ কোটি ২১ লাখ ৪৩ হাজার ৩০৯ টাকা উত্তোলনসহ মোট ৪৩৯ কোটি ৬ লাখ ৭৯ হাজার ৪৮০ টাকার সন্দেহজনক লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে। এছাড়া আয়কর আইন লঙ্ঘন করে ৩৬ লাখ ৫২ হাজার ৭৪২ টাকা আয়কর প্রদান না করার মাধ্যমে সরকারকে আর্থিক ক্ষতির মুখে ফেলা হয়েছে।
জাতীয়
বজ্রপাতে ১৫ বছরে ২ হাজার মৃত্যু, নেই পর্যাপ্ত সতর্কতা ও প্রস্তুতি
দেশে ২০০৯ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে দেশে বজ্রপাতে প্রায় ২ হাজার মানুষের মৃত্যু এবং এক হাজার ৩০০ জনের বেশি মানুষ আহত হয়েছেন। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বজ্রপাতজনিত ঝুঁকি দ্রুত বাড়লেও আগাম সতর্কতা ও কমিউনিটি প্রস্তুতি এখনো অত্যন্ত সীমিত-এমন তথ্য উঠে এসেছে গবেষণায়। বজ্রপাতজনিত ঝুঁকি কমাতে আগাম সতর্কতা ব্যবস্থায় কমিউনিটির সম্পৃক্ততা বাড়ানোর ওপর জোর দিয়েছেন বিশেষজ্ঞ ও নীতিনির্ধারকেরা।
রোববার (২১ ডিসেম্বর) রাজধানীর একটি হোটেলে ‘ব্রিজিং সায়েন্স উইদ কমিউনিটিজ: ডেভেলপিং অ্যা কমিউনিটি-বেজড লাইটনিং আর্লি ওয়ার্নিং সিস্টেম ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক গবেষণার জাতীয় শেয়ারিং অনুষ্ঠানে এ তথ্য উঠে আসে। বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর (বিএমডি) ও প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ যৌথভাবে এ অনুষ্ঠান আয়োজন করে।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, ২০০৯ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে দেশে বজ্রপাতে প্রায় ২ হাজার মানুষের মৃত্যু এবং ১ হাজার ৩০০ জনের বেশি মানুষ আহত হয়েছেন। বজ্রপাতের প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়েছে গ্রামীণ কৃষক ও জেলে কমিউনিটির ওপর, বিশেষ করে সুনামগঞ্জসহ হাওর অঞ্চলে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আশরাফ উদ্দিন। তিনি বলেন, বাংলাদেশে প্রতিবছর বজ্রপাতে প্রায় ৩০০ মানুষের মৃত্যু হলেও দীর্ঘদিন ধরে এটি দুর্যোগ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনায় যথাযথ গুরুত্ব পায়নি। এই গবেষণা বৈজ্ঞানিক পূর্বাভাসকে কমিউনিটি-কেন্দ্রিক জীবনরক্ষাকারী পদক্ষেপে রূপান্তরের দিকনির্দেশনা দিয়েছে।
তিনি সতর্কবার্তা দ্রুত মাঠপর্যায়ে পৌঁছাতে আন্তঃসংস্থাগত সমন্বয়ের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক ও ওয়ার্ল্ড মেটিওরোলজিক্যাল অর্গানাইজেশনে (ডব্লিউএমও) বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি মো. মোমেনুল ইসলাম।
তিনি বলেন, বিএমডির বৈজ্ঞানিক তথ্য উচ্চঝুঁকিপূর্ণ এলাকা চিহ্নিত করতে সহায়তা করে, তবে শুধু বিজ্ঞানই যথেষ্ট নয়। কমিউনিটির আস্থা, সহজবোধ্য যোগাযোগ ও শক্তিশালী সমন্বয়ের মাধ্যমে সতর্কবার্তাকে কার্যকর করতে হবে।
গবেষণায় দেখা গেছে, বজ্রপাতকে ঝুঁকি হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হলেও কমিউনিটি পর্যায়ে প্রস্তুতি অত্যন্ত কম। জরিপকৃত পরিবারের অর্ধেকের বেশি বজ্রপাতজনিত মৃত্যু বা আঘাতের অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন। প্রায় ৭৭ শতাংশ উত্তরদাতা সতর্কবার্তার সময় (লিড টাইম) সম্পর্কে অবগত নন এবং ৯৬ শতাংশ কখনো বজ্রপাত বিষয়ক মহড়ায় অংশ নেননি। এর ফলে নারী, যুব, প্রতিবন্ধী ও স্বল্প-শিক্ষিত জনগোষ্ঠী বেশি ঝুঁকির মুখে পড়ছে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশে নরওয়ের রাষ্ট্রদূত এইচ. ই. হ্যাকন অ্যারাল্ড গুলব্র্যান্ডসেন জলবায়ু সহনশীলতা গড়ে তুলতে কমিউনিটি-নেতৃত্বাধীন ও প্রমাণভিত্তিক উদ্যোগের গুরুত্ব তুলে ধরেন। উন্নয়ন সহযোগীদের পক্ষে ইকো-এর প্রতিনিধি মোকিত বিল্লাহ অন্তর্ভুক্তিমূলক আগাম সতর্কতা ব্যবস্থায় টেকসই বিনিয়োগের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন।
পরে অনুষ্ঠিত প্যানেল আলোচনায় বজ্রপাত পূর্বাভাসের স্বল্প সময়, সীমিত রাডার কাভারেজ, দুর্বল যোগাযোগ ব্যবস্থা ও আশ্রয়কেন্দ্রের অভাবকে প্রধান চ্যালেঞ্জ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। আলোচকরা কমিউনিটি-কেন্দ্রিক সতর্কতা ব্যবস্থা, বহুমুখী যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যবহার এবং নিয়মিত সচেতনতামূলক কার্যক্রম জোরদারের সুপারিশ করেন।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, ২০১৬ সালে বজ্রপাতকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হলেও পূর্বাভাস, সতর্কবার্তা প্রচার ও কমিউনিটি প্রস্তুতিতে এখনও ঘাটতি রয়েছে। এ প্রেক্ষাপটে গবেষণাটি কমিউনিটি-ভিত্তিক বজ্রপাত আগাম সতর্কতা ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানায়, যা বৈজ্ঞানিক পূর্বাভাসকে স্থানীয় জ্ঞান ও বিশ্বস্ত যোগাযোগ ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত করবে।
এমকে
জাতীয়
ফয়সালসহ সংশ্লিষ্টদের ব্যাংকে ১২৭ কোটি টাকার অস্বাভাবিক লেনদেন
জুলাই বিপ্লবী ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র এবং ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফ ওসমান বিন হাদী হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় শুটার হিসেবে মূল অভিযুক্ত ফয়সাল করিম মাসুদ ও তার স্বার্থ-সংশ্লিষ্টদের ব্যাংক হিসাব লেনদেন বিশ্লেষণে ১২৭ কোটি টাকার অধিক অস্বাভাবিক লেনদেনের তথ্য পেয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ-সিআইডি।
বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থা থেকে প্রাপ্ত তথ্য পর্যালোচনা ও বিশ্লেষণ করে প্রাথমিকভাবে সিআইডি এই অস্বাভাবিক লেনদেনের তথ্য পাওয়ায় ‘মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২’ অনুযায়ী অর্থপাচার সংক্রান্ত অনুসন্ধান কার্যক্রম শুরু করেছে।
রোববার (২১ ডিসেম্বর) রাতে সিআইডির অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার (মিডিয়া) আবু তালেব বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
সিআইডি জানায়, গত ১২ ডিসেম্বর দুপুরে ঢাকার পুরানা পল্টনের বক্স কালভার্ট রোডে ওসমান হাদি মাথায় গুলিবিদ্ধ হওয়ার পরেই সিআইডি এ ঘটনার নানাদিক নিয়ে ছায়া তদন্ত শুরু করে। ঘটনাস্থলে দ্রুততম সময়ে ক্রাইমসিন ইউনিটের উপস্থিতি, সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ এবং ঘটনাস্থল থেকে ঘাতকের ব্যবহৃত গুলির খোসা উদ্ধার ও পরবর্তীতে উদ্ধারকৃত বিভিন্ন আলামত ফরেনসিক পরীক্ষাসহ এই চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ডের নানাদিক নিয়ে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে সিআইডি। এরই ধারাবাহিকতায় বিভিন্ন সূত্রে প্রাপ্ত ব্যাংক হিসাবের তথ্য নিয়ে মানিলন্ডারিং অনুসন্ধান কার্যক্রম শুরু করেছে সিআইডি।
ওসমান হাদি হত্যাকাণ্ডের মূল অভিযুক্ত ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান ওরফে রাহুল এখনো গ্রেপ্তার না হলেও মামলার আলামত গোপন ও অভিযুক্তকে পালাতে সহায়তার অভিযোগে তার পরিবারের সদস্যসহ একাধিক সহযোগীকে গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
সংস্থাটি জানায়, গ্রেপ্তার অভিযানের সময় প্রাপ্ত বিভিন্ন ব্যাংকের চেকবইয়ের তথ্য সিআইডি গুরুত্ব নিয়ে পর্যালোচনা ও বিশ্লেষণ শুরু করে। এতে দেখা যায়, অভিযুক্ত ও তার স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বেশ কিছু চেক বইয়ে বিভিন্ন পরিমাণ অর্থের কথা উল্লেখ রয়েছে। চূড়ান্ত লেনদেন সম্পন্ন না হওয়া এসমস্ত রেকর্ডের সমষ্টিগত মূল্য প্রায় ২১৮ কোটি টাকা।
তবে সিআইডির প্রাথমিক বিশ্লেষণে দেখা যায়, অভিযুক্ত ও তার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে ১২৭ কোটি টাকার বেশি অস্বাভাবিক লেনদেন সংঘটিত হয়েছে, যা মানিলন্ডারিং, সংঘবদ্ধ অপরাধ এবং সন্ত্রাসী কার্যক্রম সংক্রান্ত অর্থায়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে পারে। বিষয়টি আমলে নিয়ে সিআইডি মানিলন্ডারিং বিষয়ে পৃথক অনুসন্ধান কার্যক্রম শুরু করেছে।
মূল অভিযুক্ত ও তার স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন ব্যাংক অ্যাকাউন্টে থাকা প্রায় ৬৫ লক্ষ টাকা রাষ্ট্রের অনুকূলে দ্রুততম সময়ে যেন বাজেয়াপ্ত করা যায় সেজন্যও সিআইডি যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নিয়েছে উল্লেখ করে সংস্থাটি জানায়, পাশাপাশি এই সকল অর্থের মূল সরবরাহকারী ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠান চিহ্নিত করার জন্য সিআইডির অনুসন্ধান অব্যাহত রয়েছে। হত্যাকাণ্ডের পেছনে পরিকল্পনা, অর্থায়ন ও অস্ত্র সরবরাহে কোনো সংঘবদ্ধ ও শক্তিশালী নেটওয়ার্ক সক্রিয় ছিল কি না সে বিষয়েও সিআইডির একাধিক টিম কাজ করছে।
অন্যান্য সংস্থার পাশাপাশি মূলহোতাকে গ্রেপ্তার এবং পুরো অপরাধচক্র উন্মোচনে সিআইডির তদন্ত ও অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে সংস্থাটি জানিয়েছে।
চব্বিশের জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সম্মুখসারির যোদ্ধা ওসমান হাদি পরে ‘ইনকিলাব মঞ্চ’ গড়ে তুলে ভারতীয় আধিপত্যবাদ ও ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে আলোচনায় আসেন। বিভিন্ন টেলিভিশনের টক শোতেও নিয়মিত আমন্ত্রণ পেতে থাকেন তিনি।
তার যুক্তিতর্কের অনেক ক্লিপ সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়। তিনি আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা–৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী ছিলেন।
গুলিবিদ্ধ হওয়ার মাসখানেক আগে হত্যার হুমকি পাওয়ার কথা জানিয়েছিলেন ওসমান হাদি। তিনি গত নভেম্বরে নিজের ফেসবুক পেজে বলেছিলেন, দেশি-বিদেশি অন্তত ৩০টি নম্বর থেকে তাকে ফোনকল করে এবং মেসেজ পাঠিয়ে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছে। ওই পোস্টে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের ‘খুনি’ ক্যাডাররা তাকে সার্বক্ষণিক নজরদারিতে রাখছে। তবে প্রাণনাশের আশঙ্কা সত্ত্বেও ইনসাফের লড়াই থেকে পিছিয়ে যাবেন না তিনি।
১২ ডিসেম্বর জুমার নামাজের পর রাজধানীর বিজয়নগরের বক্স কালভার্ট রোড এলাকায় প্রচারে যাওয়া ওসমান হাদিকে গুলি করে মোটরসাইকেলে আসা দুই সন্ত্রাসী। রিকশায় থাকা হাদি মাথায় গুলিবিদ্ধ হন। তাকে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। এরপর তাকে নেওয়া হয় এভারকেয়ার হাসপাতালে। অবস্থা গুরুতর দেখে সেখান থেকে হাদিকে সিঙ্গাপুরে নিয়ে যায় সরকার। চিকিৎসকদের সর্বাত্মক চেষ্টার পরও মৃত্যুর সঙ্গে লড়াইয়ে হেরে যান হাদি। ১৮ ডিসেম্বর রাতে তার মৃত্যুর খবর জানান চিকিৎসকরা।
মৃত্যুর পর ১৯ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় ওসমান হাদির লাশ বাংলাদেশে আনা হয়। সেখান থেকে লাশ জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের হিমঘরে নেওয়া হয়। এরপর গতকাল শনিবার (২০ ডিসেম্বর) জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় লাখো জনতার অংশগ্রহণে তার জানাজার নামাজ সম্পন্ন হয়। জানাজার পর তাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ সংলগ্ন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের সমাধির পাশে চিরসমাহিত করা হয়।
ওসমান হাদি হত্যাকাণ্ডে জড়িত মূল সন্দেহভাজন নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের সাবেক নেতা ফয়সল করিম মাসুদ ও তার সহযোগী আলমগীর শেখ। তারা ভারতে পালিয়ে গেছেন বলে সেদিনেই খবর ছড়ানো হয়। যদিও গোয়েন্দা পুলিশ শুরু থেকেই এ বিষয়ে সন্দেহের কথা জানিয়ে আসছে। তারা বলছে, অভিযুক্তদের দেশের বাইরে চলে যাওয়ার নির্ভরযোগ্য তথ্য এখনো হাতে নেই।
এমকে
জাতীয়
ইসির নিবন্ধন সনদ পেল আমজনতার দল
আমজনতার দলের নিবন্ধন সংক্রান্ত দাবি আপত্তি নিষ্পত্তি করে চূড়ান্তভাবে নিবন্ধন সনদ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
রোববার (২১ ডিসেম্বর) নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ এর স্বাক্ষরিত নিবন্ধন সনদটি আমজনতার দলের সাধারণ সম্পাদক তারেক রহমানকে হস্তান্তর করে ইসি।
এর আগে দুটি দাবি আপত্তির বিষয়ে গত ১৫ ডিসেম্বর শুনানি করে নির্বাচন কমিশন। ইসি জানায়, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২ এর চ্যাপ্টার ৬এ এর বিধান অনুযায়ী নিবন্ধনের শর্তাদি পূরণ করায়, বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন সন্তুষ্ট হয়ে আমজনতার দলকে রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন করেছে।
উল্লেখ্য, গত ৪ ডিসেম্বর নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ জানিয়েছিলেন, নিবন্ধন পাওয়ার শর্তপূরণ করায় তারেকের আমজনতার দলকে নিবন্ধন দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে কারও আপত্তি রয়েছে কি না, তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য আগামী ৯ ডিসেম্বর সময় দিয়ে গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছিল। নির্ধারিত সময়ে আপত্তি আসায় দলটির শুনানি করে সন্তুষ্ট হয়ে নিবন্ধন দিল নির্বাচন কমিশন।
এমকে
জাতীয়
হাদির হত্যাকারী সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই: অতিরিক্ত আইজিপি
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির হত্যাকারী ফয়সাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই বলে জানিয়েছেন অতিরিক্ত আইজিপি খন্দকার রফিকুল ইসলাম। রবিবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান তিনি।
অতিরিক্ত আইজিপি বলেন, ফয়সালের শেষ অবস্থান নিয়ে আমাদের কাছে সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই। এটা পেতে আমাদের বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থা কাজ করছে। তবে সে যে দেশের বাইরে চলে গেছে, এমন নির্ভরযোগ্য তথ্য পাইনি। অনেক সময় অপরাধীদের অবস্থান নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানো হয়।
এ হত্যাকাণ্ডকে রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড বলা হচ্ছে। কোনো রাজনৈতিক দলের সম্পৃক্ততা পেয়েছেন কি না– এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমরা এখনো স্পেসিফিক কোনো রাজনৈতিক দলের সম্পৃক্ততা পাইনি। তবে আমরা সঠিক তথ্য পেতে চেষ্টা করছি।
এ সময় ডিবি প্রধান শফিকুল ইসলাম বলেন, প্রাথমিক ধারণা হচ্ছে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এ হত্যাকাণ্ড হতে পারে। এখানে ব্যক্তিগত কোনো উদ্দেশ্য থাকতে পারে বলে মনে হয়নি। ঘটনার শুরু থেকে আমরা মাঠে ছিলাম। সব এজেন্সি সমন্বিতভাবে কাজ করেছি। এটাকে আমরা সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে সম্ভাব্য সবগুলো দিক দেখছি।
এমকে
জাতীয়
ওসমান হাদি দেশের জন্য নির্ভীক পথপ্রদর্শক: আইন উপদেষ্টা
আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলছেন, ওসমান হাদি দেশের জন্য নির্ভীক পথপ্রদর্শক ছিল। সে দেখিয়ে দিয়ে গেছে কীভাবে ফ্যাসিস্টদের বিরুদ্ধে কথা বলতে হয়। কথা বলতে গিয়ে সে নিজেকে জাতির জন্য উৎসর্গ করেছে। এ জাতি তাকে মনে রাখবে আজীবন। হাদির জানাজায় এত মানুষের সমাগম বাংলাদেশের ইতিহাসে বিরল।
রোববার (২১ ডিসেম্বর) দুপুরে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের কাঞ্চনে স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের ৭ম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
এ সময় তিনি বলেন, শহীদ হাদির জন্য দোয়া চাই আল্লাহ তায়ালা যেন হাদিকে জান্নাতের সর্বোচ্চ জায়গায় স্থান দেন। হাদি এই নস্যাৎ পৃথিবীর চেয়ে ভালো জায়গায় অবস্থান করছে বলে বিশ্বাস করি ৷ হামলাকারীর চেয়ে দেশে সৃষ্টিশীল মানুষের সংখ্যা বেশি। দেশে আত্মত্যাগকারী তরুণের সংখ্যা অনেক বেশি।
তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগ বিগত ১৭ বছর দেশের আইনব্যবস্থা, শিক্ষাব্যবস্থাসহ অর্থনীতিকে নানাভাবে ভঙ্গুর করে দিয়েছিল বিগত সরকার। ফলে ২৪-এর ছাত্রজনতার গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে এ দেশের মানুষ একটি শোষক গোষ্ঠী থেকে মুক্তি পেয়েছে।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এস এম এ ফয়েজ, মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন, স্টেট ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ডের প্রেসিডেন্ট ডা. এ এম শামীম, স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. মো. আক্তার হোসেন খাঁন প্রমুখ।
সমাবর্তন অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০টি বিভাগের ৬৭২ জনকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি প্রদান করা হয়। একই সঙ্গে তিনজন শিক্ষার্থীকে চ্যান্সেলর’স গোল্ড মেডেল, চারজন শিক্ষার্থীকে ভাইস-চ্যান্সেলর সিলভার মেডেল এবং ২০ জন শিক্ষার্থীকে ডিনস অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়।
এমকে




