ব্যাংক
ইসলামী ব্যাংকে ব্যবসা পরিচালনা ও এলসি খোলায় বাধা নেই: গভর্নর
ইসলামী ব্যাংকে এখন থেকে ব্যবসা পরিচালনা ও লেটার অব ক্রেডিট (এলসি) খোলার ক্ষেত্রে আর কোনও বিধিনিষেধ থাকবে না বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর।
বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর) ইসলামী ব্যাংকের নবগঠিত পরিচালনা পর্ষদের সঙ্গে বৈঠকে গভর্নর ইসলামী ব্যাংকের চলতি হিসাবের দৈনিক ইতিবাচক ব্যালেন্স নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘শিগগিরই এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা জারি করা হবে।’
আমানতকারীদের উদ্দেশ্যে গভর্নর বলেন, ‘ইসলামী ব্যাংকে গ্রাহকদের আমানত নিরাপদ। ইসলামী ব্যাংকের নিজস্ব তহবিল গ্রাহকদের চাহিদা পূরণের জন্য যথেষ্ট। তবে প্রয়োজনে তারল্য সহায়তার বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংক সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করবে।’
সভা শেষে ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান মো. ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিদ্যমান সুযোগ-সুবিধা নিয়ে ইসলামী ব্যাংকের নিয়মিত ব্যবসায়িক কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘ইসলামী ব্যাংক গভর্নরের কাছে একটি সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ উপস্থাপন করা হয়েছ। ব্যাংকের পারফরম্যান্স ও ব্যবসায়িক সাফল্যের মাধ্যমে কোটি কোটি গ্রাহকের আস্থার কারণে ইসলামী ব্যাংক দ্রুততম সময়ের মধ্যে ঘুরে দাঁড়াবে।
এমআই
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
১০ ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি সাড়ে ৩১ হাজার কোটি টাকা
বিতরণ করা ঋণের গুণমান বিবেচনায় নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ নিরাপত্তা সঞ্চিতি (প্রভিশন) হিসেবে জমা রাখতে হয় ব্যাংকগুলোকে। তবে চলতি বছরের জুন প্রান্তিক শেষে ১০টি ব্যাংক প্রভিশন রাখতে ব্যর্থ হয়েছে। চার রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকসহ এসব ব্যাংকের ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩১ হাজার ৫৪৮ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। এর মাধ্যমে ব্যাংকগুলোর ভঙ্গুর আর্থিক অবস্থার প্রতিচ্ছবি উঠে এসেছে।
ব্যাংকগুলোর মধ্যে রয়েছে রাষ্ট্র মালিকানাধীন অগ্রণী ব্যাংক, বেসিক ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক। আর বেসরকারি খাতের মধ্যে রয়েছে ন্যাশনাল ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক, সাউথইস্ট ব্যাংক এবং আইএফআইসি ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, বেসরকারি খাতের নানা সমস্যায় জর্জরিত ন্যাশনাল ব্যাংক সবচেয়ে বেশি প্রভিশন ঘাটতির মুখে পড়েছে। ব্যাংকটির প্রভিশন বা নিরাপত্তা সঞ্চিতি ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৪ হাজার ৭০৩ কোটি ৯৬ লাখ টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম মতে, ব্যাংকগুলোকে পরিচালন মুনাফার ০.৫ থেকে ৫ শতাংশ সাধারণ ক্যাটাগরির ঋণের বিপরীতে নিরাপত্তা সঞ্চিতি হিসেবে রাখতে হয়। আর নিম্নমানের খেলাপি ঋণের বিপরীতে রাখতে হয় ২০ শতাংশ। কোনো সন্দেহজনক খেলাপি ঋণের বিপরীতে রাখতে হয় ৫০ শতাংশ। তবে মন্দ বা লোকসান ক্যাটাগরির খেলাপি ঋণের বিপরীতে ১০০ শতাংশ নিরাপত্তা সঞ্চিতি আলাদা রাখতে হবে।
নিরাপত্তা সঞ্চিতি বা প্রভিশন ঘাটতি ব্যাংকিং খাতের জন্য একটি অশনি সংকেত। এটি ব্যাংকগুলোর দুর্বল আর্থিক অবস্থার চিত্র তুলে ধরে। যা মূলত একটি ব্যাংকের উচ্চ খেলাপি ঋণের ফল। জুন পর্যন্ত ব্যাংকিং খাতের সার্বিক প্রভিশন ঘাটতি ছিল ২৪ হাজার ৮১০ কোটি ৪৯ লাখ টাকা, যা ১০টি ব্যাংকের চেয়ে কম।
খাত সংশ্লিষ্টরা এবিষয়ে বলেন, ব্যাংকের বর্তমান যে অবস্থা তাতে প্রভিশন ঘাটতি হবে। দিন দিন খেলাপি ঋণ বাড়ছে। সম্প্রতি খেলাপি ঋণ ২ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। বিশেষ করে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে বেশি, তাই প্রভিশন ঘাটতি বাড়বে। শতভাগ প্রভিশন রাখা দরকার এখানে। প্রভিশন বাড়তে থাকলে ব্যাংক দুর্বল হয়ে পড়বে। প্রভিশন কমাতে হলে আগে খেলাপি ঋণ কমাতে হবে। পাশাপাশি ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে যাছাই-বাছাই করে দিতে হবে, যাতে টাকাগুলো আবার ফেরত আসে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সবশেষ প্রতিবেদন বলছে, জুন শেষে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ২ লাখ ১১ হাজার ৩৯১ কোটি টাকা, যা ব্যাংকিং খাতের মোট ঋণের ১২ দশমিক ৫৬ শতাংশ। মার্চ পর্যন্ত ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৮২ হাজার কোটি টাকা। সে হিসাবে তিন মাসে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়েছে ২৯ হাজার কোটি টাকার বেশি। একই এ সময়ে ঋণ বিতরণ বেড়েছে ৪২ হাজার ৫৪১ কোটি টাকা।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
পুঁজিবাজার
প্রতিষ্ঠিত দুর্নীতিবাজরা আবারও এনআরবিসি ব্যাংক দখল করতে মরিয়া
দেশের ব্যাংকিং খাতের চরম অনিয়ম, দুর্নীতি, অরাজকতা, আর অব্যবস্থাপনা ও দুঃশাসনের চরম নজির স্থাপন করেছে এনআরবিসি ব্যাংক পিএলসি। যার জন্য ব্যাংকের একক কর্তৃত্ববাদী চেয়ারম্যান পারভেজ তমাল ও তার সকল অপকর্মের দোসর এক্সিকিউটিভ কমিটির চেয়ারম্যান আদনান ইমামকে দায়ী করছে ব্যাংকটির উদ্যোক্তা পরিচালকরা। সেই সঙ্গে অর্থ উপদেষ্টার ভাগ্নি জামাই পরিচয়ে আওয়ামী লীগের খোলসে আবার কিছু প্রতিষ্ঠিত দুর্নীতিবাজ এনআরবিসি ব্যাংক দখলের পায়তারায় লিপ্ত। এটি হলে অব্যাহত থাকবে তমাল-আদনানের ব্যাংক লুটের ধারা। এমতাবস্থায় ব্যাংক রক্ষা ও বর্তমান পর্ষদ ভেঙে পুনর্গঠনের দাবি জানিয়েছে ব্যাংকটির উদ্যোক্তা পরিচালকরা।
এদিকে সম্প্রতি বোর্ডের বয়োজেষ্ঠ পরিচালক আবু বকর চৌধুরী চেয়ারম্যান তমাল পারভেজের বিরুদ্ধে তার অনিয়ম-দূর্নীতি, একচ্ছত্র আধিপত্য ও পূর্ণাঙ্গ বোর্ড গঠনে একক সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করায় চেয়ারম্যান তমাল তাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে নানাভাবে অপমান করে। এসব কারনে ও চেয়ারম্যানের একক আধিপত্যের বিরুদ্ধে কথা বলে সৃষ্ট বাগবিতান্ডার কারণে পরিচালক আবু বকর চৌধুরী আর ব্যাংকের বোর্ড সভায় উপস্থিত হচ্ছেন না বলে ব্যাংকের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র নিশ্চিত করেছে।
গত মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) এনআরবিসি ব্যাংকের চলমান অনিয়ম, দুর্নীতি আর অব্যবস্থাপনা তুলে ধরে তাঁরা এ সংক্রান্ত চিঠি বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর বরাবর পাঠিয়েছে। চিঠিতে উদ্যোক্তা পরিচালকদের পক্ষে স্বাক্ষর করেন উদ্যোক্তা পরিচালক সেলিনা ইসলাম এবং ইজহারুল ইসলাম হালদার।
চিঠিতে বলা হয়েছে, বর্তমানে তমাল-আদনান চক্র ব্যাংকের দখল টিকিয়ে রাখতে সর্বপ্রথম স্বতন্ত্র পরিচালক সাবেক এয়ার চিফ ও হাসিনার আস্থাভাজন আবু এশরারকে অথবা অপ্রকৃতিস্থ লোকিয়াত উল্লাহ অথবা তার অপর লুটের ভাগিদার আওয়ামী ব্যাবসায়ী ওলিউর রহমানকে অথবা তার বন্ধু শফিকুল আলম মিথুনকে (যে ব্যাংকের লুটপাটের অন্যতম সহযোগী হয়ে আছে) ব্যাংকের ডামি চেয়ারম্যান হিসেবে রেখে ব্যাংকে তার কর্তৃত্ব ১০০ শতাংশ ধরে রাখতে চায়। অপরদিকে তৌফিক চৌধুরী ফারাসাত আলী সারোয়ার জামান চৌধুরী তোহেল আহমেদ (যার শেয়ার মাত্র ০.২৪%) এরা তৌফিক চৌধুরীকে চেয়ারম্যান হিসেবে রেখে পেছন থেকে শহিদুল আহসান চক্রের ব্যাংক লুটপাটের ধারা অব্যাহত রাখতে চায়।
এবিষয়ে জানতে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হককে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। ফলে কোনো মন্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
এবিষয়ে বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞ আবু আহমেদ অর্থসংবাদকে বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংককে যেহেতু চিঠি দেওয়া হয়েছে অবশ্য এটা যাচাই করে দেখবে। প্রয়োজন হলে পর্ষদ ভেঙে পুনর্গঠন করে দেবে। আর ব্যাংকের পর্ষদ সংশ্লিষ্টরা শেয়ার জালিয়াতি-কারসাজির সঙ্গে জড়িত থাকলে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।
এতে বলা হয়, এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের যাত্রা শুরু ২০১৩ সালে সাবেক চেয়ারম্যান যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের নেতা ইঞ্জিনিয়ার ফারাসাত আলীর হাত ধরে হলেও এর পেছনের মূল কুশীলব ছিলেন তৎকালীন মার্কেন্টাইল ব্যাংকের ভাইস চেয়ারম্যান ও সিলেট জেলা আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি তৌফিক চৌধুরীর দুর্ভিসন্ধি ও ব্যাংক লুটের নিখুঁত ছক। আওয়ামী লীগের ব্যানারে সে প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি নামক একটি ইউনিভার্সিটিও অনুমোদন নিয়ে নেয়, আবার ব্যাংক থেকে ২০ কোটি টাকাও বের করে নেয় সেই ইউনিভার্সিটির নামে! সেসময় ফারাসাত আলীর ঘাড়ে বন্দুক রেখে শহিদুল আহসান ও তৌফিক চৌধুরী (যেহেতু তারা দুজনেই ছিল মার্কেন্টাইল ব্যাংকের পরিচালক) ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতি শুরু করে ব্যাংকটিকে শুরুতেই ব্যাপক বিতর্কিত করে ফেলে।এই শহিদুল আহসান ও তৌফিক চৌধুরী গং এজি এগ্রো, বেগমগঞ্জ ফিড মিল, ফাস্ট কর্পোরেশন, সালসাবিল অতোর ও বোরকা হাউজসহ বিভিন্ন নামে ব্যাংক থেকে প্রায় ৯০০ কোটি টাকা লুটে নেয় যার সবই মন্দ ঋণ। ব্যাংকটির অনুমোদনে কাজ করেছিল প্রয়াত সৈয়দ আশরাফের বন্ধু সানোয়ার আলী, তৌফিক চৌধুরী, ফারাসাত আলী, শহিদুল আহসানসহ অনেকেই। পরবর্তীতে সৈয়দ আশরাফের বন্ধু সানোয়ার আলীকে ২৫০০০ শেয়ার গিফট হিসেবে দিয়ে তাকে ভাগিয়ে দেয় এই চক্র। আর নিজেরা মেতে উঠে ব্যাংক লুটের এক উদ্দম খেলায়। এতে আরো যুক্ত ছিলেন ফারাসাত আলী গ্রুপের ভাইগ্না-ভাতিজা মিলে প্রায় ১২ জন আর তৌফিক চৌধুরীর ছেলে তানভীর চৌধুরী, আত্মীয় তোহেল আহমেদসহ অনেকেই। তারা অন্য স্পনসরদের কাছ থেকে অতি উচ্চ মূল্যে প্রিমিয়ামের টাকা নিয়ে নিজেদের পকেটে ঢুকিয়ে ফারাসাত আলী-শহিদুল আহসান-তৌফিক চৌধুরী গং তাদের বলয়ের প্রায় ২৫ জনকে ব্যাংকের স্পনসর পরিচালক বানান। আর এই চক্রের মাধ্যমে মার্কেন্টাইল ব্যাংকের তৎকালীন সমস্ত ছাত্রলীগ পন্থী কর্মকর্তাদেরকে এই ব্যাংকে ২-৩ টা পোস্ট ও ব্যাপক আর্থিক সুবিধা দিয়ে এই ব্যাংকে বসিয়ে ব্যাপক লুটপাটে ব্যস্ত হয়। যার কারণে ব্যাংকটিতে শুরুতে অন্য কোনো ব্যাংকের যোগ্য কর্মকর্তাদেরকে নিয়োগ দেওয়া হয়নি। এভাবেই ব্যাংকটি শুরুতেই ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি মাধ্যমে হোঁচট খায়। আর শহিদুল আহসান সরাসরি ব্যাংকের পরিচালক না হলেও ছদ্দাবরণে ব্যাংকটির ৪/৫ টি বড় শেয়ারের কর্তৃত্ব তার হাতেই থেকে যায়, যেমন এবিএম আব্দুল মান্নান, কামুরুন নাহার সাকি ইত্যাদি।
চিঠিতে আরও বলা হয়, ব্যাংক লুটের খবর পেয়ে বাইরে থেকে ছুটে আসে ভুয়া রাশিয়ান অলিগার্ক পারভেজ তমাল। যদিও সে রাশিয়াতে অবৈধ জুয়ার ব্যাবসায় জড়িত থাকার কারণে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা পেয়ে রাশিয়া থেকে বিতাড়িত হয়। দেশে ফিরে পারভেজ তমাল ওয়েস্টিন হোটেলে অবস্থান করে আলোচিত পাপিয়া কান্ডের অপারেটর হিসেবে হানি ট্র্যাপিং এর কাজ করতো যার মাধ্যমে সে কোটি কোটি টাকা অর্জন করে। কিন্তু পুলিশ আর সেনা বাহিনীর কানেকশন থাকার কারণে সে ১ কোটি টাকা দিয়ে নিজের নাম কাটাতে সক্ষম হয়। পরে এই পারভেজ তমালের সাথে যুক্ত হয় আরেক ব্যাংক লুটেরা মাস্টারমাইন্ড আদনান ইমাম। দুজনের এই লুটের মহাপরিকল্পনা তখন কেউ বুঝে উঠতে পারেনি। তারা তখন র্যাবের তৎকালীন ডিজি কর্নেল জিয়াউল আহসানের সাথে লিংক করে ভারী মেশিনগান নিয়ে ব্যাংকের বোর্ডে ঢুকে বোর্ড মেম্বারদেরকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ব্যাংক দখল করার চেষ্টা করে, এটা ছিল ২০১৬ সালের কথা। এর বিপরীতে তাদের বিরুদ্ধে মামলাও চলমান ছিল যে মামলাটি তারা ব্যারিস্টার তাপসকে ১০ কোটি টাকা দিয়ে ঝুলিয়ে রাখে। তাদের এসব ষড়যন্ত্রের সাথে যুক্ত হয় আরেক আওয়ামী পন্থী ব্যাংক লুটেরা সিলেটের ওলিউর রহমান ও জাকারিয়া খান নামক আরেক আওয়ামী ব্যাবসায়ী। তারা তখন ব্যাংক দখলের জন্য শেখ সেলিমের শরণাপন্ন হয় এবং বছরে ১০০ কোটি টাকা ঘুষের বিনিময়ে আমাদের ব্যাংকটি তমাল-আদনান লুটেরা চক্রকে সেলিম বুঝিয়ে দিতে সম্মত হয়।
পরবর্তীতে এসব আওয়ামী আশীর্বাদে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ফজলে কবিরকে দুই বিফকেস দুবাই গোল্ডের মাধ্যমে বশীকরণ করে ও রাশিয়াতে নিয়ে বিশেষ সেবা দেয়। যার ফলশ্রুতিতে ফজলে কবির সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল মুহিতকে দিয়ে ব্যাংকের কতৃত্ব তমাল আদনান লুটেরা চক্রের হাতে তুলে দেয়। আর মিডিয়া কভারেজ দেওয়ার জন্য দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকার এক সাংবাদিককে ২ কোটি টাকা দেয়। এভাবেই হয়ে যায় তমাল-আদনানের এনআরবিসি ব্যাংক রাজত্ব ও বলাৎকার। অবস্থাদৃষ্টি মনে হয় ব্যাংকটি যেন চোরের কবল থেকে বেঁচে ডাকাতের হাতে পড়েছে। আর এভাবেই শুরু হয় তমালের দানবীয় উত্থান! আর সে সবচেয়ে বেপরোয়া হয়ে উঠে সাবেক গভর্নর রউফ তালুকদারের ছত্রছায়ায়। রউফ তালুকদার তার একমাত্র ভগ্নিপতিকে ব্যাংকে নিযুক্ত করে তার ক্যাশিয়ার হিসেবে যাতে করে সে প্রতিদিনই ব্যাংক থেকে নগদে ১০ লক্ষ টাকা করে ব্যাংক থেকে নিয়ে যেত গভর্নরের জন্য। তার ভগ্নিপতি এখনো ব্যাংকের কোম্পনী সেক্রেটারি থাকাতে ও তমালের হাতে এখনো ব্যাংকের কর্তৃত্ব থাকাতে এই দুর্নীতির ধারাবাহিকতা অব্যাহত আছে বলে সহজেই অনুমেয়।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, ব্যাংকের সাবেক পরিচালক এ এম সাইদুর রহমান বলিষ্ট ভাবে এসব দুর্নীতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে সেসময় ব্যাংকটিকে ফারাসাত-তৌফিক-শহিদুল আহসান-পাপুল চক্রের বিরুদ্ধে কাজ করে ব্যাংকটিকে লুটেরা মুক্ত করেন। তার সাথে ছিলেন বর্তমানের আরেক পরিচালক লোকিয়াত উল্লাহ ও আরজু, তারা বরাবরই অন্যায়-দুর্নীতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ করেছেন কিন্তু মুখোশ ধারী এই লুটেরা তমাল-আদনান গংয়ের কীর্তিকলাপ সেইসময় তারা বুঝে উঠতে না পারলেও পরবর্তীতে যখনি তারা বুঝতে পারেন তখন এর প্রতিবাদ করতে গেলেই তাদেরকে বোর্ডে কোনঠাসা করে ফেলা হয় ও নানাভাবে হয়রানি করা হয় এবং হচ্ছে। তমাল-আদনান এই লুটেরা চক্রের সাথে আরো আছে আওয়ামী পন্থী ব্যাবসায়ী শফিকুল মিথুন, রাসেল আহমেদ লিটনসহ অনেকেই।
এছাড়াও, সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হচ্ছে বিশ্বজিৎ হত্যা মামলাসহ ২৭টি খুনের মামলার আসামি জুয়েল হোসেন শ্রাবন নামে এক দাগি সন্ত্রাসীর সাথে তমালের বন্ধুত্ব গড়ে উঠে এবং তার মাধ্যমে ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়সহ প্রায় ২৫ জন চিহ্নিত সন্ত্রাসীকে দিয়ে তমালের ব্যাংক পরিচালনা ও লুটের রাজত্ব গড়ে তোলার অভিযোগ উঠেছে। এবিষয়ে চিঠিতেবলা হয়, এই চক্রকে ব্যাংক থেকে প্রতিমাসে ২ কোটি টাকা করে দেওয়া হতো যা ব্যাংকের সিএসআরের টাকা থেকে খরচ দেখানো হতো। তার এসব চক্রের সাথে আরো জড়িত ছিল শিবলী রুবায়েত, নজরুল ইসলাম মজুমদার, সাংবাদিক সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা, সাংবাদিক ইলিয়াস খান, সাংবাদিক মইনুল হাসান সোহেল, ইত্যাদি যারা তমালের সমস্ত কুকীর্তি ঢেকে রাখতো। এবং এখনো ব্যাংকে ৪/৫ জন সাংবাদিককে নিয়োগ দেওয়া আছে যাদের মাধ্যমে সে মিডিয়া ও বাংলাদেশ ব্যাংক কন্ট্রোল করছে আর টাকা যাচ্ছে ব্যাংকের তথা আমাদের সাধারণ আমানতকারী ও বিনিয়োগকারীদের টাকা। আর এসব কাজে সহায়তা করছে ব্যাংকের ডিএমডি হারুনুর রাশিদ, ডিএমডি কবির আহমেদ, ডিএমডি হুমায়ুন কবির, ডিএমডি রবিউল ইসলাম, এসইভিপি সাফায়েত কবির কানন ও রবিউল ইসলাম, এসভিপি পারভেজ হাসান ও দিদারুল হক মিয়া, ভিপি জাফর হাওলাদার ও জামির উদ্দিন সহ ব্যাংকের মানাজেমেন্টের অধিকাংশ সিন্ডিকেটেড লুটের টাকা ভাগাভাগির মাফিয়া চক্র। এছাড়াও তমাল-আদনান লুটেরা চক্রে আরো যুক্ত আছে শিবলী রুবায়েত মনোনীত আওয়ামী দালাল রাদ মুজিব লালন, আবু এশরার, আব্দুল মান্নান নামক কিছু চাটুকার স্বতন্ত্র পরিচালক যারা তমালের কাছ নিয়মিত ৫ লাখ টাকা করে মাসোহারা সহ ব্যাংক লুটের ভাগ। এই কুখ্যাত চেয়ারম্যান আওয়ামী দালাল, তথাকথিত বঙ্গবন্ধু পরিষদ-রাশিয়ার সাধারণ সম্পাদক আওয়ামী ডোনার, ছাত্রলীগ সন্ত্রাসী বাহিনীর অর্থায়নকারী, ব্যাংক লুটেরা, সংগবন্ধ ব্যাংক লুটেরা চক্রের মাধ্যমে ব্যাংকের ৭,৭০০ কোটি টাকারও বেশি লুটপাট ও পাচারকারী পারভেজ তমাল ও তার লুটেরা সিন্ডিকেটের অন্যতম সহযোগী এক্সিকিউটিভ কমিটির লুটেরা চেয়ারম্যান আদনান ইমাম। সদ্য সাবেক আওয়ামীলীগ সরকারের উচ্চমহলের আনুকল্য গ্রহণের মাধ্যমে ব্যাংকের অভ্যন্তরে ২০১৮ থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত ঋণ জালিয়াতি, কমিশন বাণিজ্য, নিয়োগ বাণিজ্য, শেয়ার কারসাজি, মানিলন্ডারিং, নামে-বেনামে ভুয়া কোম্পানি সৃষ্টি করে ব্যাংকের টাকা তছরুপ ও বিদেশে পাঁচারকারী, ব্যাংকে টর্চার সেল খুলে নিরীহ কর্মকর্তাদের নির্যাতন, গ্রাহকের কোম্পানী দখলসহ বিবিধ আর্থিক দুর্নীতির অভয়ারন্য তৈরি করেছেন। তাদের এই লুটতন্ত্র টিকিয়ে রাখতে ব্যাংকের সিনিয়র ম্যাজেনমেন্ট ও কতিপয় শাখা ব্যবস্থাপকের যোগসাজশে সংঘবদ্ধ আর্থিক দুর্নীতি চক্র বা অর্গানাইজড ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছে।
এতে বলা হয়, ব্যাংকের প্রকৃত শ্রেণীকরণের পরিমান প্রায় ৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা যার ৭০ শতাংশই তমাল-আদনান ও শেখ সেলিম চক্রের অধীনে আছে বলে জানা যাচ্ছে। কিন্তু প্রকৃত শ্রেণীকরণ ও লুটপাটের প্রকৃত অবস্থা জানতে হলে তমাল-আদনান ও তার অধীনস্ত পাচাটা, লুটের ভাগিদার ম্যানেজমেন্টকে অবিলম্বে অপসারণ করে নিরপেক্ষ একটি নিরীক্ষা ছাড়া জানা সম্ভব নয়। তমালের নিজস্ব অধীনস্ত কোম্পনি এনআরবিসি ম্যানেজমেন্টের মাধ্যমে ব্যাংকে প্রায় ৫০০০ কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়েছে যার মধ্যে প্রায় ২০০০ ছাত্রলীগ কর্মী আছে। এসব নিয়োগের বিপরীতে ৩ লক্ষ টাকা থেকে ১০ লক্ষ্য টাকা ঘুষ নেওয়ার প্রমাণ বাংলাদেশ ব্যাংক পেয়েছে এবং এসব কর্মকর্তাদের বেতনের একটি অংশ (যেটি প্রায় মাসে ৫ কোটি টাকা) তমাল সার্ভিস চার্জ হিসেবে নিয়ে যাচ্ছে।
আলোচিত শিবলী রুবায়েত-সাকিব আল হাসান-আবুল খায়ের হিরু-আদনান ইমাম-তমালের ভাই ব্রিগেডিয়ার সৈয়দ সাব্বির আহমেদ এই চক্রের মাধ্যমে এনআরবিসি ব্যাংকের শেয়ার কারসাজি করে নিজেরা প্রায় ৩০০০ কোটি টাকা লুটপাট করে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের পথে বসিয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছে ব্যাংকের পরিচালকদের একাংশ। তাদের দাবি, ব্যাংকটিতে তৌফিক চৌধুরীর নেতৃত্বেও একটি শেয়ার কারসাজির চক্র আছে যেটি পরিচালনা করে আসছে ব্যাংকের শেয়ার ডিভিশনের প্রধান ভিপি রহুল আমিন ও ব্যাংকের বর্তমান-সাবেক কোম্পানি সেক্টরেটরিরা। এই চক্রের কাছে আছে ওবায়দুল কাদের, বাহাউদ্দিন নাসিম, জাহাঙ্গীর কবির নানক, মাসুদ বিশ্বাসের মতো লোকেদের ঘুষের অর্থের পোর্টফোলিও। সেই টাকায় তৌফিক চৌধুরী চেয়ারম্যান বনে যেতে মরিয়া। এসব কিছুর প্রতিবাদ করে ব্যাংকের সাবেক পরিচালক এ এম সাইদুর রহমান ও বর্তমান পরিচালক লোকিয়াত উল্লাহ ও আরজুসহ অনেকেই তমাল-আদনান লুটেরা চক্রের রোষানলে পড়েছেন।
আরো কয়েকটি শেয়ারের ব্যাপারে অনেক সমস্যা ও ফান্ডের উৎস সম্পর্কিত প্রশ্ন থেকেই যায়, যেগুলো বাংলাদেশ ব্যাংকেরও প্রশ্ন আছে আমির হোসেন, এনায়েত হোসেন ইত্যাদি প্রমুখ। এনায়েত হোসেনের শেয়ারটির মূল মালিক খান সন্স গ্রুপ এর কর্ণধার মজিবুর রহমান খান কিন্তু উনি মারা যাওয়াতে তার শেয়ারটি মূলত: দখল করে আছে এই এনায়েত হোসেন যা নিয়ে এখনো আদালতে মামলা অনিষ্পন্ন অবস্থায় আছে। এছাড়াও মামুন মুছে নামের এক ব্যক্তির শেয়ার সেই ব্যক্তি মারা যাওয়ার পরে সারওয়ার জামান চৌধুরী নামে একজন দখল করে আছে যা সম্পূর্ণ অনৈতিক। এই এনায়েত হোসেন ও সারওয়ার জামান চৌধুরী যারা পূর্বের বোর্ডের ফারাসাত-তৌফিক গংয়ের দুর্নীতির সুবিধাভোগী ছিল তারাই এখন আবার তৌফিক চৌধুরীর আত্মীয় তোহেল আহমেদ (যে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের একজন কৃতি সন্ত্বন, আওয়ামী ডোনার আজম জে চৌধুরীর ভাতিজা এখন আবার ভোলপাল্টি দিয়ে বর্তমান অর্থ উপদেষ্টার ভাগ্নি জামাই পরিচয়ে ব্যাংক দখলের খেলায় লিপ্ত।) এর মাধ্যমে ব্যাংকের দখল ও লুটপাটের ধারা অব্যাহত রাখতে মরিয়া হয়ে পড়েছে। এছাড়াও আরেক কুশীলব সারওয়ার জামান চৌধুরী কোনো একজন সেনা কর্মকর্তাকে সামনে রেখে তাকে দিয়ে ব্যাংকের দখল নিতে মরিয়া অথচ এই সারওয়ার জামান চৌধুরীর শেয়ারটিও তার নিজের না আবার তার ২% + শেয়ারের ও ধারক না। এভাবেই সবাই লুটপাটের মহড়ায় লিপ্ত। আরেক আওয়ামী পন্থী লুটেরা পরিচালক ওলিউর রহমান তমাল আদনান লুটেরা চক্রের অন্যতম সহযোগী। তারাও সব কিছুর ভাগ প্রতিনিয়ত পেয়েই যেত এবং যাচ্ছে আবার পুনর্গঠিতব্যঃ বোর্ডে জায়গা করে নিতে উদগ্রীব।
বর্তমান পর্ষদ ভেঙে ব্যাংকটি পুনর্গঠনের দাবি করে চিঠিতে বলা হয়, অবিলম্বে এসব লুটেরা, আওয়ামী দালাল ও ব্যাংক থেকো দুর্বৃত্তদের হাত থেকে রক্ষার জন্য তমাল আদনান-তৌফিক-ফারাসাত-সারোয়ার-তোহেল (কথিত ভাগ্নি জামাইবেশী মাস্টারমাইন্ড)-সানোয়ার-এনায়েত-আওয়ামী এজেন্ডা বাস্তবায়নকারী জাকারিয়া খান-শহিদুল আহসান- মামুন চৌধুরী আবু এশরার শফিকুল মিথুন প্রমুখ লেবাসধারীদের হাত থেকে আমাদের ব্যাংকটি বাঁচান এবং এদেরকে আর কোনোভাবেই ব্যাংক পরিচালনায় অন্তর্ভুক্ত না করার অনুরোধ করছি। তাই ব্যাংকটির দুর্নীতির ধারা বন্ধ করতে ও সুশাসন নিশ্চিত করতে অবিলম্বে ব্যাংকটির বর্তমান দুর্নীতিগ্রস্থ ও চরম নৈরাজ্যে পরিপূর্ণ বোর্ডটি অবিলম্বে ভেঙে দিয়ে একজন যোগ্য ও অভিজ্ঞ পরিচালকের নেতৃত্বে ব্যাংকটি পুনর্গঠন এখন ব্যাংকটির সর্বস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী, সাধারণ বিনিয়োগকারী, উদ্যোক্তা বিনিয়োগকারী ও পরিচালকদের জোরালো দাবি বেগবান রয়েছে।
এসএম
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
ইসলামী ব্যাংকের অর্ধেকের বেশি টাকা নিছে এস আলম গোষ্ঠী: চেয়ারম্যান
ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি থেকে নামে-বেনামে মোট ঋণের অর্ধেকের বেশি নিয়ে গেছে এস আলম গোষ্ঠী। আজ বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গে নতুন বোর্ডের সভা শেষে ব্যাংকটির নতুন চেয়ারম্যান ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, ব্যাংকটি ঋণ হিসেবে যত অর্থ বিতরণ করেছে, তার অর্ধেকের বেশি টাকা একাই নিয়েছে সাত বছর ধরে ইসলামী ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণকারী ব্যবসায়ী গোষ্ঠী এস আলম গোষ্ঠী। এসব ঋণের পূর্ণাঙ্গ হিসাব এখন বের করা হচ্ছে। এস আলমের ঋণের বিপরীতে যেসব সম্পদ বন্ধক দেওয়া আছে, তারও পুনর্মূল্যায়ন করা হচ্ছে। কারণ, এসব সম্পদের দাম বেশি দেখিয়ে ঋণ বের করা হয়েছে।
এ ছাড়া ইসলামী ব্যাংকের ঋণের বিপরীতে বন্ধক দেওয়া হয়নি, এস আলম গোষ্ঠীর এমন সম্পদের খোঁজ নিতে আইন মন্ত্রণালয়ের সহায়তা নেওয়া হচ্ছে বলে জানান ব্যাংকের চেয়ারম্যান।
তিনি বলেন, এসব সম্পদ খুঁজে পাওয়ার পর তা ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার চেষ্টা করা হবে। আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হওয়ায় এখন ‘প্রাণ খুলে’ কথা বলতে পারছেন বলে মন্তব্য করেন ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ।
ইসলামী ব্যাংক এস আলমের নিয়ন্ত্রণমুক্ত করার পর আজ বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে ব্যাংকটির নতুন পরিচালনা পর্ষদের প্রথম সভা হয়। ওই সভা শেষে চেয়ারম্যান ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ ব্যাংকের পরিস্থিতি নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।
গত ২২ আগস্ট ইসলামী ব্যাংকের স্বতন্ত্র পরিচালক ও চেয়ারম্যান হিসেবে তাঁকে নিয়োগ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। তিনি সোনালী ও রূপালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি)। ২০১৬ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত সোনালী ব্যাংকে এবং ২০১৯ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত রূপালী ব্যাংকের এমডি ছিলেন তিনি।
ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ বলেন, হলমার্ক কেলেঙ্কারিরর পর সোনালী ব্যাংকের দায়িত্ব পেয়েছিলাম। হলমার্কের ঘটনা আলোচনায় আসার পরও সোনালী ব্যাংকে আমানত বেড়েছিল। ইসলামী ব্যাংকের সমস্যাটি অনেক বড়। এ জন্য আমরা দায়িত্ব নিয়েই পথনকশা প্রণয়ন করেছি। প্রতিদিন ব্যাংকে উপস্থিত থেকে তদারকির চেষ্টা করে যাচ্ছি। চলতি বছর পুরোটাই হবে গ্রাহকের আস্থা ফেরানোর বছর। সামনের বছরেও এ কাজ চলবে। ২০২৬-২৭ সাল হবে ঘুরে দাঁড়ানোর বছর। ২০২৮-৩০ সাল এগিয়ে যাওয়ার বছর।
ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান বলেন, ২০২২ সাল থেকে ব্যাংকে তারল্যসংকট শুরু হয়। এখন ব্যাংকের গ্রাহক, প্রবাসী আয় পাঠানো গ্রাহক, শেয়ারধারী ও বিদেশি উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান-কেউই ব্যাংকের ওপর আস্থা পাচ্ছেন না। এ জন্য ব্যাংকের প্রকৃত অবস্থা যাচাইয়ে তিনটি নিরীক্ষাপ্রতিষ্ঠান নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তারা ব্যাংকের ঋণ, বিনিয়োগ ও মানবসম্পদের ওপর নিরীক্ষা করবে। আগে ভালো নিরীক্ষা হয়নি, তাই আজ ব্যাংকের এই পরিণতি।
এমআই
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
দুর্বল ব্যাংক বাঁচাতে আন্তঃব্যাংক বাজার থেকে নগদ সহায়তা: গভর্নর
নতুন করে টাকা ছাপিয়ে আর কোনো দুর্বল ও সমস্যাযুক্ত ব্যাংককে তারল্য সহায়তা দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। তবে আন্তঃব্যাংকের মাধ্যমে সমস্যায় থাকা ব্যাংকগুলোকে তারল্য সহায়তা দেওয়া হবে এবং সেখানে গ্যারান্টার হিসেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কাজ করবে বলে জানান তিনি।
গভর্নর বলেন, দেশের সাত-আটটি ব্যাংকের কারণে সব ব্যাংক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে না। আমানতকারীদের কথা ভেবে আমরা সীমিত পরিসরে তারল্য সাপোর্ট দিতে চাই।
বুধবার (৪ সেপ্টেম্বর) বিকেলে বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘ব্যাংকার্স মিটিং’ শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। এসময় ডেপুটি গভর্নর নুরুন নাহারসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের কনফারেন্স রুমে এ সম্মেলনে অনুষ্ঠিত হয়।
গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, দেশ থেকে আটটি ব্যাংকের মাধ্যমে প্রচুর টাকা পাচার হয়েছে। এতে এসব ব্যাংকের তারল্য সংকট দেখা দিয়েছে। আমরা সীমিত পরিসরে তারল্য সাপোর্ট দিতে চাই। সরকার আমানতকারীদের কথা ভেবে তাদের পাশে দাঁড়াবে। তবে তারল্য সংকট কাটাতে পুরো সাপোর্ট দিতে হলে দুই লাখ কোটি টাকার প্রয়োজন হবে। এতে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাবে বহুগুণ।
তিনি বলেন, আমরা কিছু সীমিত তারল্য সাপোর্ট দিতে চাই ব্যাংকগুলোকে। এটা আন্তঃব্যাংকের মাধ্যমে দেওয়া হবে, যেখানে বাংলাদেশ ব্যাংক গ্যারান্টার হিসেবে কাজ করবে। এসব ব্যাংকে সমস্যা বহুদিন ধরে ছিল, আমানতকারীরাও জানতো। আমরা আমানতকারীদের স্বার্থটা দেখবো, যেন তারা অর্থ ফিরে পান।
গভর্নর আরও বলেন, আমরা আমানতকারীদের অনুরোধ করবো আপনারা একসঙ্গে টাকা উত্তোলন করবেন না। আপনাদের প্রয়োজন মতো টাকা উত্তোলন করুন। আমাদের কিছুটা সময় দেন। আমরা আশা করি ব্যাংকগুলো ঘুরে দাঁড়াবে। একটা বিষয় পরিষ্কার করতে চাই যে, এই ৭ থেকে ৮টা ব্যাংকের কারণে পুরো ব্যাংকখাত ক্ষতিগ্রস্ত হবে না।
গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর গত ২০ আগস্ট মতিঝিলে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে ড. আহসান এইচ মনসুর জানিয়েছিলেন, দুর্বল ও সমস্যাযুক্ত ব্যাংকগুলোকে টাকা ছাপিয়ে আর সহায়তা দেওয়া হবে না। তিনি বলেছিলেন, হঠাৎ করে ব্যাংক বন্ধ করে কিংবা ব্যাংকের জন্য টাকা ছাপিয়ে কোনো সমাধানের পথে যাওয়া যাবে না।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
ব্যাংক
সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের এমডি ও দুই ডিএমডির পদত্যাগ
দেশের পুঁজিবাজারে ব্যাংক খাতে তালিকাভুক্ত সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক পিএলসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) জাফর আলম পদত্যাগ করেছেন। সেই সঙ্গে ব্যাংকটির দুই উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) হাবিবুর রহমান ও খোরশেদ আলমও পদত্যাগ করেছেন।
বুধবার (৪ সেপ্টেম্বর) এসআইবিএল এমডি ও ডিএমডিরা পদত্যাগ করেন বলে ব্যাংক সূত্র জানায়। এমডি জাফর আলমের নিয়োগের মেয়াদ আগামী ডিসেম্বর মাসে শেষ হওয়ার কথা ছিল। শারীরিকভাবে অসুস্থতার কথা বলে পদত্যাগ করেন তিনি। দুই ডিএমডি পদত্যাগের বিষয়ে কিছু জানাননি।
এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণমুক্ত হওয়ার পরই পদত্যাগ করলেন তারা। তিনজনই এস আলম গ্রুপের কর্মকর্তা হিসেবে পরিচিত ছিলেন ব্যাংকটিতে। এস আলম গ্রুপ ২০১৭ সালে মালিকানায় আসার পরই তারা ব্যাংকটির দায়িত্বে আসেন।
শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগের পর বিতর্কিত ব্যবসায়ী গোষ্ঠী এস আলমের নিয়ন্ত্রণমুক্ত করার লক্ষ্যে এসআইবিএলের পর্ষদ পুনর্গঠন করা হয়। আগের পরিচালনা পর্ষদ বাতিল করে একজন উদ্যোক্তা শেয়ারধারীকে পরিচালক ও চারজন স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।
এছাড়াও, এস আলম গ্রুপের মালিকানাধীন ফার্স্ট সিকিউরিটি ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন, গ্লোবাল ইসলামী, ইসলামী ব্যাংক, আল-আরাফাহ, ন্যাশনাল ব্যাংক ও বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের পর্ষদ ভেঙে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এস আলমের মালিকানাধীন আর্থিক প্রতিষ্ঠান আভিভা ফাইন্যান্সের পর্ষদও ভেঙে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
এসএম