অর্থনীতি
বিদ্যুৎ খাতে নসরুল হামিদের লুটপাটের মহোৎসব

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন নসরুল হামিদ বিপু। লম্বা সময় দায়িত্ব পালন করার মাঝে বিদ্যুৎ খাতে গড়ে তুলেছেন অনিয়ম ও দুর্নীতির বিশাল সিন্ডিকেট। গত এক যুগ ধরে এই সিন্ডিকেটের নেতৃত্ব দিয়েছেন খোদ সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী বিপু। এছাড়া সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, সাবেক মুখ্যসচিব আবুল কালাম আজাদ ও আহমেদ কায়কাউসসহ বিপুর পরিবারের সদস্যরা লুটপাটের এ মহোৎসবে জড়িত ছিলেন। দেশের একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
জানা যায়, কোন বিদ্যুৎ প্রকল্প হাতে নেওয়া থেকে শুরু করে অনুমোদন পর্যন্ত কমপক্ষে ২০টি ধাপে টাকা আদায় করতেন বিপু চক্র। এর মধ্যে ছিল প্ল্যানিং, সাইট ভিজিট, মেশিনপত্র অনুমোদন দেওয়া, নেগোসিয়েশন, প্রকল্পের সাইট সিলেকশন, মাটি ভরাট, জমি ক্রয়, বিদ্যুৎ ক্রয়ের দরদাম ঠিক করা, বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করা বা কমিশনিং, মন্ত্রণালয়ে রিপোর্ট পাঠানো, ক্রয় অনুমোদন, বিল অনুমোদন, বিল ছাড় করা-অর্থাৎ প্রতিটি খাতে এ সিন্ডকেটকে টাকা দিতে হতো।
এছাড়া পিডিবি চেয়ারম্যান কিংবা মন্ত্রী স্বাক্ষর করলে সেই স্বাক্ষরের পাশে সিল দেওয়ার জন্যও ঘুস দিতে হতো। পাশাপাশি বিদ্যুৎ খাতের বিভিন্ন কোম্পানির নানা কেনাকাটা এবং উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর অনুমোদন দেওয়া থেকে শুরু করে বিভিন্ন পারচেজসহ লোভনীয় কমিটিতে পছন্দের কর্মকর্তাদের রাখা, পদোন্নতি, পোস্টিং দিয়েও এ চক্র হাতিয়ে নিত কোটি কোটি টাকা। বিভিন্ন কোম্পানির পরিচালনা পর্যদে যাওয়ার জন্যও এ সিন্ডিকেট হাতিয়ে নিত মোটা অঙ্কের টাকা। এছাড়া প্রকল্পের বিরুদ্ধে নিজস্ব লোকদের দিয়ে বিভিন্ন মিডিয়ায় রিপোর্ট করিয়ে প্রকল্পের পিডি বা কোম্পানির শীর্ষ কর্মকর্তাদের ব্ল্যাকমেইল করে তাদের কাছ থেকে টাকা নিতেন সিন্ডিকেট সদস্যরা।
অর্থ আদায়ের পুরস্কার হিসেবে চক্রের এসব সদস্যরা পেতেন লোভনীয় সুবিধা ও অস্বাভাবিক পদোন্নতি।
অনুসন্ধানে উঠে আসে, ওই সিন্ডিকেটের সক্রিয় সদস্য ছিলেন পিডিবির বর্তমান চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমানসহ সাবেক দুই চেয়ারম্যান ও একাধিক প্রধান প্রকৌশলী, সাবেক অতিরিক্ত সচিব আনোয়ার হোসেন, প্রতিমন্ত্রীর ছোট ভাই ইন্তেখাবুল হামিদ অপু এবং সাবেক সেতুমন্ত্রীর এক ভাতিজা। আর সিন্ডিকেটের অবৈধ আয়ের হিসাবনিকাশের দায়িত্বে ছিলেন প্রতিমন্ত্রীর এপিএস মুজাহিদুল ইসলাম মামুন, কেরানীগঞ্জের প্রভাবশালী শাহীন চেয়ারম্যান এবং জনসংযোগ কর্মকর্তা মীর আসলাম।
তারা সবার ক্যাসিয়ার হিসাবে পরিচিত ছিলেন। পাশাপাশি নানা কাজের মূল কারিগর ছিলেন পিডিবির বঙ্গবন্ধু প্রকৌশল পরিষদের বিভিন্ন স্তরের নেতা। আলোচ্য সময়ে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ১০০টির বেশি কোম্পানির পকেটে ঢুকেছে কয়েক হাজার কোটি টাকা।
বিদ্যুৎ বিভাগ ও পিডিবির একাধিক কর্মকর্তা জানান, পিডিবির বর্তমান চেয়ারম্যানের কর্মকাণ্ডের তদন্ত করা হলে এ খাতের বড় বড় অনিয়ম ও দুর্নীতি বেরিয়ে আসবে। এছাড়া বিদ্যুৎ বিভাগের সাবেক সচিব আবুল কালাম আজাদ ও আহমদ কায়কাউসও বড় বড় অনিয়মের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। এ দুজনই পরে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিবের দায়িত্ব পালন করেন। আর তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে বসে সব কলকাঠি নাড়তেন।
পিডিবির তথ্যানুযায়ী, ১৪ বছরে বেসরকারি খাতে প্রায় ১০০টি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। সব কেন্দ্রই কোনো ধরনের দরপত্র ছাড়া বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত সংক্রান্ত বিশেষ আইনে অনুমোদন দেওয়া হয়। ২০১০ সাল থেকে অনুমোদন দেওয়া ছোট-বড় এসব কেন্দ্রের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম, দুর্নীতি ও লুটপাটের অভিযোগ থাকলেও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। উলটো দায়মুক্তি আইন পাশ করে বিচারের পথ রুদ্ধ করেছে সরকার।
অনুসন্ধানে জানা যায়, নসরুল হামিদের ছোট ভাই ইন্তেখাবুল হামিদ অপু এবং সেতুমন্ত্রীর এক ভাতিজা মিলে অন্তত ৪টি কোম্পানির মাধ্যমে ৫ বছরে বাগিয়ে নিয়েছেন ৮ হাজার কোটি টাকার কাজ। ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর সব খাতে ব্যাপক ওলটপালট হলেও বিদ্যুৎ সেক্টর থেকে এই ভূত এখনো দূর হয়নি।
অভিযোগ আছে, শুধু আইটি সেক্টরে তারা বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে হাতিয়ে নিয়েছেন ১২টি বড় মেগা প্রকল্প। জানা গেছে, ২০২০-২০২১ অর্থবছরে ঢাকা পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি (ডিপিডিসি) ও নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি (নেসকো) থেকে অ্যাডভান্সড মিটারিং ইনফ্রাস্ট্রাকচার (এএমআই) নামের ২টি প্রকল্প হাতিয়ে নেয়। এ দুটি প্রকল্পের অর্থমূল্য ছিল ২০০০ কোটি টাকা।
এছাড়া ২০২১-২০২২ অর্থবছরে একই কোম্পানি মোবাইল অ্যাপস অ্যান্ড কাস্টমার পোর্টাল প্রতিষ্ঠার নামে ডিপিডিসির কাছ থেকে হাতিয়ে নেয় আরও একটি বড় মেগা প্রকল্প। এ প্রকল্পটির ব্যয় মূল্য ছিল ৫০০ কোটি টাকা। এছাড়া গত ৫ অর্থবছরে নসরুল হামিদ বিপুর ভাই একটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বিলিং প্রকল্পের নামে ডিপিডিসি, নেসকো, বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ড (পিডিবি), ঢাকা ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি (ডেসকো), পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) থেকে প্রায় ৭টি মেগা প্রকল্প হাতিয়ে নেয়। প্রকল্পগুলোর মোট মূল্য ছিল ৫ হাজার কোটি টাকার বেশি।
অপরদিকে ডেটা সেন্টার স্থাপনের নামে বিদ্যুৎ খাতের এ ৬ কোম্পানি থেকে তারা দুটি বড় টেক কোম্পানির মাধ্যমে হাতিয়ে নেন ৮টি মেগা প্রকল্প। শুধু তাই নয়, নসরুল হামিদ বিপুর ক্ষমতার অপব্যবহার করে তার ছোট ভাই একটি কোম্পানির মাধ্যমে নেটওয়ার্ক অ্যান্ড সিকিউরিটি নামে ৮টি মেগা প্রকল্প হাতিয়ে নেন। এর মধ্যে ২০২৩ সালের ১ জুন পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড আরইবির কাছ থেকে হাতিয়ে নেন ৫০ লাখ মিটার স্থাপনের কাজ। এই প্রকল্পটির মোট ব্যয় ছিল ২ হাজার ৩০০ কোটি টাকা।
সূত্র জানায়, পাওয়ারকো ইন্টারন্যাশনাল কোম্পানির মাধ্যমে সবেচেয়ে বেশি লুটপাটের কাজ করা হতো। যার বেশির ভাগ মালিকানায় ছিল নসরুল হামিদ বিপুর পরিবারের লোকজন ও আত্মীয়স্বজন। কোম্পানিটি সিঙ্গাপুর ও বাংলাদেশে নিবন্ধিত। একসময় নসরুল হামিদ নিজেই হামিদ গ্রুপের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। পারিবারিক এ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন সাবসিডিয়ারি কোম্পানির মাধ্যমে একাধিক ব্যবসা পরিচালনা করে। এর কয়েকটিতে ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসাবেও ছিলেন বিপু। পাশাপাশি কোম্পানিগুলোর বিপুল পরিমাণ শেয়ারের মালিক তিনি এবং তার পরিবারের সদস্যরা।
সিঙ্গাপুর ও বাংলাদেশের ব্যবসা নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠানে দাখিলকৃত নথিপত্র অনুযায়ী, পাওয়ারকোর প্রধান শেয়ারধারী হলেন কামরুজ্জামান চৌধুরী নামের এক ব্যক্তি। তিনি হলেন নসরুল হামিদ বিপুর আপন মামা। কামরুজ্জামান চৌধুরী নিজেও দীর্ঘদিন হামিদ গ্রুপের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তার ছেলে, ভাই ও ভাইয়ের ছেলেরা হামিদ গ্রুপের শীর্ষ নির্বাহী হিসাবে কাজ করেছেন ও করছেন। সিঙ্গাপুরে দাখিলকৃত নথিপত্র অনুযায়ী পাওয়ারকো ইন্টারন্যাশনালের একজন বিকল্প পরিচালক হলেন মুরাদ হাসান। পাশাপাশি তিনি কোম্পানিটির প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা বা সিওও হিসাবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
সরকারি নথিপত্র অনুযায়ী, পাওয়ারকোর সিওও হিসাবে তিনি বিপিসির সঙ্গে সরাসরি মাতারবাড়ী এলপিজি টার্মিনাল প্রকল্পের দরকষাকষিতে অংশ নিয়েছিলেন। এই মুরাদ হাসানই আবার ‘ডেলকো বিজনেস অ্যাসোসিয়েট’ নামে হামিদ গ্রুপের একটি সাবসিডিয়ারি কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বা সিইও ছিলেন।
২০১৪ সালের সংসদ নির্বাচনের সময় নসরুল হামিদ নির্বাচনি হলফনামায় জানান, তিনি নিজেই ডেলকোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক। সেসময় তিনি কোম্পানিটির উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শেয়ারেরও মালিক ছিলেন। বর্তমানে ডেলকোর মালিকানা তার ছেলে জারিফ হামিদ ও ছোট ভাই ইন্তেখাবুল হামিদের হাতে।
বিপুর ছোট ভাই ইন্তেখাবুল হামিদ নিজেও হামিদ গ্রুপের একাধিক অঙ্গপ্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। এই ইন্তেখাবুল হামিদের সঙ্গে পাওয়ারকো ইন্টারন্যাশনালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাবিল খানের সংযোগ রয়েছে। এই ভারতীয় নাগরিক দুবাইভিত্তিক একটি বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ও সিঙ্গাপুরভিত্তিক একটি শিপিং লাইনের মধ্যপ্রাচ্য শাখা পরিচালনা করেন।
পাওয়ারকোর সঙ্গে জড়িত আরেক ব্যক্তি হলেন কোম্পানিটির সহকারী মহাব্যবস্থাপক তারেক খলিল উল্লাহ, যিনি দীর্ঘদিন হামিদ গ্রুপে কর্মরত ছিলেন। তিনি ইন্তেখাবুল হামিদের ঘনিষ্ঠ সহযোগী। কাগজপত্র ঘেঁটে দেখা গেছে হামিদ গ্রুপের আরও দুইজন কর্মকর্তা পাওয়ারকো গঠনের সময় আরজেএসসি অফিসে উপস্থিত ছিলেন। কোম্পানি হিসাবে পাওয়ারকোর নিবন্ধনের সময় এ দুইজনকে সাক্ষী হিসাবে রাখা হয়। জাহাঙ্গীর আলম নামের একজন সাক্ষীর পরিচয়পত্র ও লিংকডইন প্রোফাইল অনুযায়ী তিনি হামিদ গ্রুপের একজন সহকারী ব্যবস্থাপক।
সরকারি নথিপত্র থেকে দেখা যাচ্ছে, মাতারবাড়ীতে এলপিজি টার্মিনাল নির্মাণের জন্য তিনটি পূর্ণাঙ্গ প্রস্তাব পেয়েছিল বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন। মারুবেনি-ভিটল-পাওয়ারকো কনসোর্টিয়ামের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসাবে এ প্রক্রিয়ায় অংশ নেয় জাপানের মিতসুই করপোরেশন ও দক্ষিণ কোরিয়ার এসকে গ্যাসের সমন্বয়ে গঠিত একটি কনসোর্টিয়াম এবং জাপানের সুমিতোমো করপোরেশনের সঙ্গে সম্পৃক্ত একটি কনসোর্টিয়াম।
অনুসন্ধানে জানা যায়, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পর শেখ হাসিনা প্রথমবার ক্ষমতায় থাকাকালীন বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ে দুর্নীতির গডফাদার হিসাবে আবির্ভূত হন আহমেদ কায়কাউস। বাংলাদেশ ইনডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসার অ্যাসোসিয়েশনের (বিপ্পা) সাবেক একজন সভাপতি ছিলেন তখন কায়কাউসের ডান হাত। ২০১৪ সালে ক্ষমতায় আসেন নসরুল হামিদ বিপু। ২০১৬ সালের আগস্টে পিডিবির চেয়ারম্যান হন খালিদ মাহমুদ।
কায়কাউসের নেতৃত্বে তখন বিদ্যুৎ খাতের সব উন্নয়ন প্রকল্পের অনুমোদন মন্ত্রণালয়ে নিয়ে আসতে বাধ্য করা হয়। এরপর তার রুমে বসে একের পর এক কমিশন বাণিজ্য চলত। এই সিন্ডিকেট এভাবে হাজার হাজার কোটি টাকা আয় করে। অভিযোগ আছে, সচিব থাকাকালীনও কায়কাউস ইউনাইটেড গ্রুপের কাছ থেকে প্রতিমাসে মোটা অঙ্কের টাকা মাসোয়ারা পেতেন। জানা যায়, আবুল কালাম আজাদের সিন্ডিকেট সদস্য হওয়ায় সুপারিনটেনডেন্ট ইঞ্জিনিয়ার থেকে তরতর করে খালেদ মাহমুদ চেয়ারম্যান হয়ে যান।
পিডিবিকে তিনি মহা দুর্নীতির এক স্বর্গরাজ্য বানিয়ে ফেলেন। তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয় রেন্টাল, কুইক রেন্টাল থেকে প্রতিমাসে কোটি কোটি টাকা মাসোয়ারা আদায় করার কাজ। তার মূল কাজ ছিল নসরুল হামিদের সঙ্গে থেকে বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্র অনুমোদন দেওয়া, অনুমোদনের জন্য কমিটি করা, কেন্দ্র যাচাই-বাছাই করা, কেন্দ্রগুলোর অনিয়ম-দুর্নীতির তদন্ত করাসহ নানা কাজ। এভাবে ব্ল্যাকমেইল করে তিনি নসরুল হামিদের জন্য প্রতিমাসে শত শত কোটি টাকা আয় করে দিতেন।
বিদ্যুৎ ব্যবসায়ীরা বলেছেন, নসরুল হামিদ দেশে কোনো লেনদেন করতেন না। তার অধিকাংশ টাকা বিদেশে লেনদেন হতো।
অভিযোগ আছে, ভাড়াভিত্তিক অনেক বিদ্যুৎকেন্দ্র অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল, যেগুলোর ভেতরে কোনো ইঞ্জিনই ছিল না। মূলত বিদ্যুৎ না কিনে বসিয়ে বসিয়ে এসব কেন্দ্রকে ক্যাপাসিটি চার্জ দেওয়া হয়েছে।
পরবর্তী সময়ে এ ক্যাপাসিটি চার্জ ভাগবাঁটোয়ারা করে নিয়ে গেছে সিন্ডিকেট। পুরস্কার হিসাবে আহমেদ কায়কাউস তাকে প্রধান প্রকৌশলী হিসাবে নিয়োগ দেন। ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসাবে নিয়োগ পান পিজিসিবিতে। সেখানে বসেও তিনি ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতি করেছেন বলে অভিযোগ আছে। পিডিবিতে বঙ্গবন্ধু প্রকৌশল পরিষদ নামে একটি সংগঠন বানিয়ে সেখানে দুর্নীতির আসর বসানো হয়েছিল।
কাজল কান্তি রায় ছিলেন এ পরিষদের সদস্য। ক্রয় বিভাগের পরিচালক ছিলেন মোহাম্মদ ইউসুফ। দুজনের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে একাধিক অভিযোগ থাকলেও এখন পর্যন্ত কোনো অভিযোগের তদন্ত করেনি কমিশন। জানা যায়, নসরুল হামিদ ও মাহবুবুর রহমানের কল্যাণে তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি দুদক। নসরুল হামিদের শেষ সময়ে পিডিবি চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান ২৭টি সোলারভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ফাইল চূড়ান্ত করেন।
এগুলোর মোট উৎপাদন ক্ষমতা ১৩৬০ মেগাওয়াট। অভিযোগ আছে, এই ২৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালিকদের মধ্যে অধিকাংশই সাবেক আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী-এমপি। তাদের মধ্যে নসরুল হামিদ বিপুর ছোট ভাই ইন্তেখাবুল হামিদ অপুর ২টি বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে। এছাড়া আছে নাঈম রাজ্জাকের ১টি, বিসিবির (বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড) সাবেক পরিচালক জালাল ইউনুসের ১টি, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদের ১টি, সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাভেদের ছোট ভাইয়ের ১টি, আবদুস সালামের ১টি, সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের ১টি, টাঙ্গাইলের ছোট মনিরের ১টি, সাবেক ধর্মমন্ত্রী ফরিদুর রহমানের ১টি, সিলেটের হাবিবুর রহমান এমপির ১টি এবং রাজশাহী অঞ্চলের এক এমপির ১টি বিদ্যুৎকেন্দ্র। অভিযোগ আছে, এসব বিদ্যুৎকেন্দ্রের ফাইল চূড়ান্ত করার জন্য মাহবুবুর রহমান সিন্ডিকেট কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।

অর্থনীতি
ব্যাংক আমানত ৩ মাসে বেড়েছে ৭৩ হাজার কোটি টাকা

নানা অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা, দুর্নীতি ও লুটপাটের খবর বেরিয়ে আসতে থাকায় অস্থিরতায় ভুগছে দেশের ব্যাংক খাত। তবে এর মধ্যেও বেড়েছে আমানতের পরিমাণ। চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন) ব্যাংক খাতে আমানত বৃদ্ধি পেয়েছে ৭৩ হাজার ৭৯ কোটি টাকা বা ৩ দশমিক ৮ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হালনাগাদ পরিসংখ্যান থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি বছরের মার্চ শেষে ব্যাংক খাতে আমানতের পরিমাণ ছিল ১৯ লাখ ২৩ হাজার ৫০৪ কোটি টাকা। আর জুন শেষে তা দাঁড়িয়েছে ১৯ লাখ ৯৬ হাজার ৫৮৩ কোটি টাকা। অর্থাৎ মাত্র তিন মাসের ব্যবধানে ব্যাংক খাতে আমানত বেড়েছে উল্লেখযোগ্য হারে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে শহরের তুলনায় গ্রামীণ এলাকায় আমানতের প্রবৃদ্ধি বেশি হয়েছে। গ্রামীণ এলাকায় আমানতের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪ দশমিক ৮৭ শতাংশ, যেখানে একই সময়ে শহরাঞ্চলে প্রবৃদ্ধি ছিল ৩ দশমিক ৬ শতাংশ।
চলতি বছরের জুন শেষে ব্যাংক খাতের মোট ১৯ লাখ ৯৬ হাজার ৫৮৩ কোটি টাকার আমানতের মধ্যে শহরাঞ্চলের আমানত ছিল ১৬ লাখ ৮০ হাজার ৫৫৮ কোটি টাকা। আর গ্রামীণ এলাকার আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ১৬ হাজার ২৪ কোটি টাকা। মার্চ শেষে ব্যাংক খাতে যত আমানত ছিল, তার ৮৪ দশমিক ১৭ শতাংশ ছিল শহরাঞ্চলের এবং ১৫ দশমিক ৮৪ শতাংশ গ্রামীণ এলাকার।
বিশ্লেষকদের মতে, গ্রামীণ এলাকায় ব্যাংকিং সেবা ও ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের ব্যবহার বৃদ্ধি পাওয়ায় সেখানে আমানতের প্রবৃদ্ধি কিছুটা বেশি হয়েছে। পাশাপাশি বিভিন্ন সঞ্চয়পত্র ও প্রণোদনা প্রকল্পও গ্রামীণ আমানত বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখছে।
অমানত বৃদ্ধির পেছনে সুদের হারও বড় ভূমিকা রেখেছে বলে মনে করছেন খাত-সংশ্লিষ্টরা। চলতি বছরের মার্চ শেষে ব্যাংক খাতে আমানতের গড় সুদহার ছিল ৬ দশমিক ২৪ শতাংশ। জুন শেষে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ দশমিক ৩১ শতাংশে। সুদের এই সামান্য বৃদ্ধি আমানতকারীদের ব্যাংকের প্রতি আগ্রহ বাড়িয়েছে।
ব্যাংকাররা বলছেন, ব্যাংক খাতে আস্থা কিছুটা ফিরতে শুরু করলেও মূলত সুদের হারের ঊর্ধ্বগতি মানুষকে আমানত বাড়াতে উৎসাহিত করেছে। বিশেষ করে নগদ অর্থ ধরে রাখার বদলে ব্যাংকে জমা করলে অতিরিক্ত মুনাফা পাওয়ার সম্ভাবনা থাকায় অনেকে ব্যাংকে অর্থ জমাতে আগ্রহী হচ্ছেন।
তিন মাসের ব্যবধানে আমানতের পাশাপাশি ঋণ প্রবাহও বেড়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিক শেষে ব্যাংক খাতে মোট ঋণের পরিমাণ ছিল ১৭ লাখ ১২ হাজার ৬১৮ কোটি টাকা। জুন শেষে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৭ লাখ ৩৪ হাজার ১৭২ কোটি টাকা। এই সময়ে ঋণ বেড়েছে ২১ হাজার ৫৫৪ কোটি টাকা বা ১ দশমিক ২৬ শতাংশ।
তথ্য অনুযায়ী, জুন শেষে বিতরণ করা ঋণের মধ্যে ১৬ লাখ ৩ হাজার ৩৯২ কোটি টাকা বা ৯২ দশমিক ৪৬ শতাংশই গেছে শহরাঞ্চলে। অপরদিকে, গ্রামীণ অঞ্চলে বিতরণ হয়েছে মাত্র ১ লাখ ৩০ হাজার ৭৮০ কোটি টাকা বা ৭ দশমিক ৫৪ শতাংশ।
বিশ্লেষকদের মতে, শহরাঞ্চলে ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিল্প কার্যক্রম বেশি হওয়ায় ঋণ প্রবাহও মূলত সেখানেই কেন্দ্রীভূত। গ্রামীণ এলাকায় কিছু কৃষি ও ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচি থাকলেও তা মোট ঋণের তুলনায় খুবই সীমিত।
ব্যাংকাররা বলছেন, ব্যাংক খাতে সামগ্রিক সংকট, খেলাপি ঋণ বৃদ্ধি এবং অনিয়মের মধ্যেও অল্প কিছু ভালো ব্যাংকের কারণেই আমানত প্রবৃদ্ধি বজায় আছে। তারা বলছেন, সাধারণ আমানতকারীরা তুলনামূলক সুনামধন্য ও আর্থিকভাবে স্থিতিশীল ব্যাংকের দিকেই বেশি ঝুঁকছেন। ফলে দুর্বল ব্যাংকগুলো এখনো আমানত বৃদ্ধিতে তেমন সাফল্য পাচ্ছে না।
একই সঙ্গে তারা সতর্ক করছেন, শুধু আমানত বৃদ্ধি দিয়ে ব্যাংক খাতের সংকট কাটবে না। সুদের হার সামান্য বাড়লেও যদি ঋণ পুনঃপ্রাপ্তি নিশ্চিত করা না যায় এবং খেলাপি ঋণ কমানো না যায়, তবে আমানত প্রবৃদ্ধি টেকসই হবে না।
গবেষণা সংস্থা চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভের রিসার্চ ফেলো ও অর্থনৈতিক বিশ্লেষক এম হেলাল আহমেদ জনি কালবেলাকে বলেন, ‘ব্যাংক খাতে আমানত বৃদ্ধিকে অবশ্যই ইতিবাচক সংকেত বলা যায়। বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকায় আমানতের প্রবৃদ্ধি বেড়ে যাওয়া অর্থনীতির জন্য শুভ লক্ষণ। তবে শুধু সুদের হার বৃদ্ধির কারণে আমানত বেড়েছে—এটাকে দীর্ঘমেয়াদি সমাধান বলা যাবে না। আসল চ্যালেঞ্জ হচ্ছে ব্যাংক খাতে আস্থা ফিরিয়ে আনা, ঋণ পুনঃপ্রাপ্তি নিশ্চিত করা এবং খেলাপি ঋণ নিয়ন্ত্রণে আনা। আমানত বৃদ্ধি টেকসই করতে হলে সুশাসন, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে।’
বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে ব্যাংক খাতে আমানত বৃদ্ধি এক ইতিবাচক দিক হলেও এর পেছনে মূল কারণ ছিল সুদের হার বৃদ্ধি এবং কিছু ব্যাংকের কার্যকর পদক্ষেপ। তবে শহরাঞ্চলেই মূলত আমানত ও ঋণ প্রবাহ বেশি কেন্দ্রীভূত হওয়ায় গ্রামীণ এলাকার অংশগ্রহণ সীমিত রয়ে গেছে। ব্যাংক খাতের প্রতি আস্থা ফিরিয়ে আনতে হলে শুধু আমানত বৃদ্ধি নয়, বরং ঋণ পুনরুদ্ধার, দুর্নীতি ও অনিয়ম নিয়ন্ত্রণ এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। তবেই ব্যাংক খাত প্রকৃত অর্থে স্থিতিশীল হবে এবং দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারবে।
অর্থনীতি
৭ দিনে রেমিট্যান্স এলো ৯ হাজার ৩৭৮ কোটি টাকা

চলতি মাসের প্রথম ৭ দিনে দেশে এসেছে ৭৭ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স। যা টাকার অঙ্কে ৯ হাজার ৩৭৮ কোটি ৩৫ লাখ ৯৪ হাজার ৯৮৪ টাকা। এই হিসাবে প্রতিদিন গড়ে দেশে এসেছে ১১ কোটি ০১ লাখ ডলার রেমিট্যান্স।
সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান এ তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, সেপ্টেম্বরের প্রথম ৭ দিনে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ৭৭ কোটি ১০ লাখ ডলার। আর গত বছরের একই সময়ে এসেছিল ৫৮ কোটি ৫০ লাখ ডলার। বছর ব্যবধানে রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে ৩১ দশমিক ৯০ শতাংশ।
এ ছাড়া গত ৭ সেপ্টেম্বর একদিনে প্রবাসীরা দেশে ২৫ কোটি ৫০ লাখ ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে ৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশে এসেছে ৫৬৭ কোটি ১০ লাখ ডলার রেমিট্যান্স। বছর ব্যবধানে যা বেড়েছে ২০ দশমিক ১০ শতাংশ।
এর আগে, গত আগস্টে দেশে এসেছে ২৪২ কোটি ১৮ লাখ ৯০ হাজার মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স। আর গত জুলাইয়ে দেশে এসেছিল ২৪৭ কোটি ৮০ লাখ ডলার রেমিট্যান্স।
এদিকে গত ২০২৪-২৫ অর্থবছর জুড়ে দেশে প্রবাসীরা পাঠিয়েছেন ৩০ দশমিক ৩২ বিলিয়ন বা ৩ হাজার ৩২ কোটি ৮০ লাখ মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স, যা দেশের ইতিহাসে কোনো নির্দিষ্ট অর্থবছরে সর্বোচ্চ প্রবাসী আয়ের রেকর্ড।
অর্থনীতি
২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে স্বর্ণের দামে নতুন রেকর্ড

দেশের বাজারে ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে স্বর্ণের দাম আরও বাড়ানো হয়েছে। সবচেয়ে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি (১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রাম) স্বর্ণের দাম এক হাজার ২৬০ টাকা বাড়িয়ে নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে এক লাখ ৮২ হাজার ৮১০ টাকা। এর মাধ্যমে অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে নতুন উচ্চতায় উঠেছে স্বর্ণের দাম।
স্থানীয় বাজারে তেজাবী সোনার (পাকা সোনা) দাম বাড়ার পরিপ্রেক্ষিতে এই দাম বাড়ানো হয়েছে। মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) থেকে নতুন দাম কার্যকর হবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস)।
সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) বাজুস স্ট্যান্ডিং কমিটি অন প্রাইসিং অ্যান্ড প্রাইস মনিটরিং কমিটি বৈঠকে করে এই দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পরে কমিটির চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমানের সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এর আগে গতকাল রোববার ঘোষণা দিয়ে আজ থেকে সোনার নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়। তার আগে গত ৪ ও ২ সেপ্টেম্বর এবং ৩১ ও ২৭ আগস্ট সোনার দাম আরও ৪ দফা বাড়ানো হয়। ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে এখন দাম বাড়ানোর কারণ হিসেবে বাজুস বলছে, স্থানীয় বাজারে তেজাবী সোনার দাম বেড়েছে। তাই সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এনে সোনার দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এখন সবচেয়ে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি সোনার দাম এক হাজার ২৬০ টাকা বাড়িয়ে নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে এক লাখ ৮২ হাজার ৮১০ টাকা। ২১ ক্যারেটের এক ভরি সোনার দাম এক হাজার ২০১ টাকা বাড়িয়ে এক লাখ ৭৪ হাজার ৫০৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
এছাড়া ১৮ ক্যারেটের এক ভরি সোনার দাম এক হাজার ২৬ টাকা বাড়িয়ে নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে এক লাখ ৪৯ হাজার ৫৬৭ টাকা। সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি সোনার দাম ৮৭৯ টাকা বাড়িয়ে নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে এক লাখ ২৩ হাজার ৯৪২ টাকা।
গতকাল ঘোষণা দিয়ে আজ সবচেয়ে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি সোনার দাম ২ হাজার ৭১৮ টাকা বাড়িয়ে নতুন দাম নির্ধারণ করা হয় এক লাখ ৮১ হাজার ৫৫০ টাকা। ২১ ক্যারেটের এক ভরি সোনার দাম ২ হাজার ৬০১ টাকা বাড়িয়ে এক লাখ ৭৩ হাজার ৩০৪ টাকা নির্ধারণ করা হয়।
এছাড়া ১৮ ক্যারেটের এক ভরি সোনার দাম ২ হাজার ২২৮ টাকা বাড়িয়ে নতুন দাম এক লাখ ৪৮ হাজার ৫৪১ টাকা নির্ধারণ করা হয়। সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি সোনার দাম এক হাজার ৯০১ টাকা বাড়িয়ে দাম নির্ধারণ করা হয় এক লাখ ২৩ হাজার ৬৩ টাকা। আজ সোমবার এই দামে সোনা বিক্রি হয়েছে। আগামীকাল থেকে নতুন রেকর্ড দামে বিক্রি হবে সোনা।
সোনার দাম বাড়লেও অপরিবর্তিত রয়েছে রুপার দাম। ২২ ক্যারেটের এক ভরি রুপার দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ২ হাজার ৮১১ টাকা। এছাড়া ২১ ক্যারেটের এক ভরি রুপার দাম ২ হাজার ৬৮৩ টাকা, ১৮ ক্যারেটের এক ভরি রুপার দাম ২ হাজার ২৯৮ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির এক ভরি রুপার দাম এক হাজার ৭২৬ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
অর্থনীতি
বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চলে ওয়েসিস অ্যাক্সেসরিজের ৪৮ লাখ ডলার বিনিয়োগ

বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান ওয়েসিস অ্যাক্সেসরিজ (প্রা.) লিমিটেড চট্টগ্রামের মীরসরাইয়ে অবস্থিত বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চলে গার্মেন্টস অ্যাক্সেসরিজ উৎপাদনকারী একটি শিল্পকারখানা স্থাপনে ৪৮ লাখ মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করতে যাচ্ছে।
এ লক্ষ্যে বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষ (বেপজা) এবং ওয়েসিস অ্যাক্সেসরিজ (প্রা.) লিমিটেডের মধ্যে সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) বেপজা কমপ্লেক্স, ঢাকায় একটি চুক্তি সই হয়। বেপজার নির্বাহী চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল আবুল কালাম মোহাম্মদ জিয়াউর রহমান, বিএসপি, এনডিসি, পিএসসি এর উপস্থিতিতে বেপজার সদস্য (বিনিয়োগ উন্নয়ন) মো. আশরাফুল কবীর এবং ওয়েসিস অ্যাক্সেসরিজ (প্রা.) লিমিটেড -এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সেলিম রেজা নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের পক্ষে চুক্তিতে সই করেন।
এই প্রতিষ্ঠানটি বার্ষিক ১০ লাখ পিস কার্টন বক্স, ৪ কোটি ২০ লাখ পিস পলি ব্যাগ ও ১০ লাখ মিটার ফোম তৈরি করবে। প্রতিষ্ঠানটিতে ৩১১ জন বাংলাদেশি নাগরিকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।
এখন পর্যন্ত ওয়েসিস অ্যাক্সেসরিজসহ ৪৮টি প্রতিষ্ঠান বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চলে মোট ১০২৮ দশমিক ৩৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বিনিয়োগ চুক্তি করেছে।
চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে বেপজার সদস্য (প্রকৌশল) মো. ইমতিয়াজ হোসেন, সদস্য (অর্থ) আ ন ম ফয়জুল হক, নির্বাহী পরিচালক (বিনিয়োগ উন্নয়ন) মো. তানভীর হোসেন, বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চলের প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ এনামুল হক, নির্বাহী পরিচালক (জনসংযোগ) এ এস এম আনোয়ার পারভেজ এবং ওয়েসিস এক্সেসরিজ (প্রা.) লিমিটেড এর প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
অর্থনীতি
দুর্গাপূজা উপলক্ষে ভারতে যাচ্ছে ১২০০ টন ইলিশ

আসন্ন দুর্গাপূজা উপলক্ষে এ বছর ভারতে ১ হাজার ২০০ টন ইলিশ মাছ রপ্তানি করবে বাংলাদেশ। আজ সোমবার (০৮ সেপ্টেম্বর) বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এ–সংক্রান্ত আদেশ জারি করেছে। ভারতে শর্তসাপেক্ষে ইলিশ রপ্তানির নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
দুর্গাপূজা উপলক্ষে প্রতিবছরই ইলিশ রপ্তানি করে বাংলাদেশ। বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গে বাংলাদেশের ইলিশের চাহিদা বেশি।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আদেশে বলা হয়, ১১ সেপ্টেম্বর অফিস চলাকালে হার্ড কপিতে আবেদন করতে পারবেন আগ্রহী রপ্তানিকারকেরা। আবেদনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের হালনাগাদ ট্রেড লাইসেন্স, ইআরসি, আয়কর সার্টিফিকেট, ভ্যাট সার্টিফিকেট, বিক্রয় চুক্তিপত্র, মৎস্য অধিদপ্তরের লাইসেন্সসহ সংশ্লিষ্ট দলিলাদি দাখিল করতে হবে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আদেশে আরও বলা হয়, প্রতি কেজি ইলিশের ন্যূনতম রপ্তানি মূল্য সাড়ে ১২ মার্কিন ডলার নির্ধারণ করেছে সরকার। ইতিমধ্যে যাঁরা আহ্বান ব্যতিরেকেই আবেদন করেছেন, তাঁদেরও নতুনভাবে আবেদন দাখিল করতে হবে।
গত বছর দুর্গাপূজা উপলক্ষে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় প্রথমে ভারতে তিন হাজার টন ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে শেষ পর্যন্ত ২ হাজার ৪২০ টন ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দিয়েছিল। এবার এর অর্ধেক ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দেওয়া হলো। গতবার সব মিলিয়ে অনুমতি দেওয়া হয়েছিল ৪৯টি প্রতিষ্ঠানকে।
অনুমোদিত পরিমাণের চেয়ে বেশি ইলিশ রপ্তানি না করা, অনুমতি কোনোভাবেই হস্তান্তর না করা এবং অনুমোদিত রপ্তানিকারক ছাড়া ঠিকায় (সাব-কন্ট্রাক্ট) রপ্তানি না করার শর্তও থাকছে। বলা হয়েছে, সরকার যেকোনো সময় রপ্তানি বন্ধ করতে পারবে। সব সময়ই এসব শর্ত থাকে।