জাতীয়
অসহযোগ আন্দোলন: সারাদেশে পুলিশসহ নিহত ৯৫
বৈষমবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অসহযোগ আন্দোলনের প্রথম দিন রোববার (৪ আগস্ট) দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত রাজধানীসহ সারাদেশে (১৯ জেলায়) ৯৫ জন নিহত হয়েছেন।
এর মধ্যে ঢাকায় সাতজন, মুন্সীগঞ্জে তিনজন, মাগুরায় চারজন, পাবনায় তিনজন, রংপুরে চারজন, সিরাজগঞ্জে ১৩ পুলিশ সদস্যসহ মোট তেইশজন, বরিশালে একজন, ভোলায় তিনজন নিহত, বগুড়ায় পাঁচজন, জয়পুরহাটে একজন, ফেনীতে আটজন, কিশোরগঞ্জে পাঁচজন, কুমিল্লার দেবিদ্বারে একজন নরসিংদীতে ছয় জন, সিলেটে পাঁচজন ও লক্ষ্মীপুরে আটজন, শেরপুরে তিনজন, হবিগঞ্জে একজন, ঢাকার সাভারের আশুলিয়ায় একজন ও বরিশালে ১ জনসহ ৯৫জন নিহত হয়েছেন।
রাজধানী ঢাকা: রাজধানী জুড়ে শিক্ষার্থীদের অসহযোগ আন্দোলনের প্রথম দিনেই ব্যাপক সংঘর্ষ ও সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় এখন পর্যন্ত এক শিক্ষার্থীসহ ৭ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।
এ ছাড়াও ঢামেক হাসপাতাল ও শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অন্তত দুই শতাধিক ব্যক্তি গুলিবিদ্ধ হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। তাদের মধ্যে প্রায় অর্ধশতজনকে ভর্তি রাখা হয়েছে। এদের কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক, তাদের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। বাকিদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছাড়া হয়েছে।
মুন্সীগঞ্জ: মুন্সীগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচিতে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ, আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে ত্রিমুখী সংঘর্ষের ঘটনায় তিনজন নিহত হয়েছেন। এ সময় ৭ জন গুলিবিদ্ধসহ ৩০ জন আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
রোববার (০৪ আগস্ট) মুন্সিগঞ্জ শহরের সুপার মার্কেট ও কৃষি ব্যাংক মোড় এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ সময় মুহুর্মুহু ককটেল বিস্ফোরণ, গুলিবর্ষণ ও ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ায় ওই এলাকা রণক্ষেত্র পরিণত হয়।
নিহতরা হলেন- রিয়াজুল ফরহাজী (৩৮)। তিনি শহরের উত্তর ইসলামপুর এলাকার প্রয়াত কাজী মতিন ফরহাজী। একই এলাকার মো. সজল (৩০) ও ডিপজল সর্দার (১৯)। এদের মধ্যে রিয়াজুল এবং ডিপজল ঘটনাস্থলে এবং সজলকে হাসপাতাল নেওয়ার সময় মারা যায় বলে জানান তার স্বজনরা।
গুলিবিদ্ধ হয়ে তিনজন নিহতের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক আবু হেনা মোহাম্মদ জামাল।
মাগুরা: মাগুরায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাব্বী গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন। এছাড়া মাগুরার মোহাম্মদপুর উপজেলায় ৪ জন নিহত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে।
রোববার (০৪ আগস্ট) বেলা ১১টার দিকে শহরের পারনানন্দুয়ালী এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। রাব্বী নিহতের বিষয়ে জেলা বিএনপির নেতা অ্যাডভোকেট মিজানুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
রংপুর: রংপুরে দুপক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় চারজন নিহত হয়েছেন। রোববার (০৪ আগস্ট) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে রংপুর পায়রা চত্বরে এ ঘটনা ঘটে। নিহতদের একজন হলেন রংপুর সিটি করপোরেশেনের ৪নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও পরশুরাম থানা আ.লীগের সভাপতি হারাধন রায়। অন্যরা হলেন- তার গাড়ি চালক কমল, গুড়াতি পাড়ার খায়রুল ইসলাম খসরু, মাসুম। নিহতরা সবাই আ.লীগের নেতাকর্মী। এর আগে বেলা ১১টার দিকে শহরজুড়ে বিক্ষোভ শুরু হয়। নগরীর বিভিন্ন এলাকায় দুপক্ষই অবস্থান নেয়।
পাবনা: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনের প্রথম দিনে পাবনায় গুলিতে তিনজন শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন। রোববার (০৪ আগস্ট) দুপুরে শহরের এ হামিদ রোডের ট্রাফিক মোড়ে বিক্ষোভ চলাকালে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
পাবনা সদর হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. রফিকুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেন। নিহতরা হলো, মহিবুল (১৬), জাহিদ (১৯) ও ফাহিম।
হাসপাতালের সহকারী পরিচালক সহকারী পরিচালক ডা. রফিকুল ইসলাম জানান, গুলিবিদ্ধ তিনজনকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়। তাদের মধ্যে দুজনের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে।
সিরাজগঞ্জ: সিরাজগঞ্জে এনায়েতপুর থানায় হামলা চালিয়ে ১৩ পুলিশসহ মোট তেইশজন নিহত হয়েছেন। রোববার (৪ আগস্ট) বিকেলে পুলিশ সদর থেকে পাঠানো এক বার্তায় সন্ত্রাসী হামলায় এই পুলিশ সদস্যদের নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
বরিশাল: বরিশালে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুকের বাড়িতে হামলার সময় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আ.লীগ নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় আন্দোলনকারীদের হামলায় মহানগর ১২নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি টুটুল চৌধুরী নিহত হয়েছেন। পরে আন্দোলকারী প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুকের বাড়ির সামনে ১১টি মোটরসাইকেলে আগুন দিয়েছে।
ভোলা: ভোলার নতুন বাজারে আইনশৃঙ্খলনা রক্ষাকারী বাহিনী গুলিতে তিনজন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে জসিম উদ্দিন (৭০) নামে একজন ছাতা শ্রমিকের পরিচয় জানা গেলেও দুইজনের পরিচয় পাওয়া যায়নি। তাদের বয়স ২০ থেকে ২২ বছর বলে জানা গেছে। রোববার দুপুর ১টার দিকে এ ঘটনা ঘটেছে।
বগুড়া: বগুড়ায় অসহযোগ আন্দোলনের সমর্থকদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ ও পুলিশের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনায় পাঁচজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন।
রোববার (০৪ আগস্ট) বগুড়ার সাতমাথায় এ হতাহতের ঘটনা ঘটে।
জয়পুরহাট: জয়পুরহাটে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অসহযাগ আন্দোলনের প্রথম দিনে দফায় দফায় সংঘর্ষে মেহেদী হাসান নামে একজন নিহত হয়েছেন। এ সময় অজ্ঞাত আরও একজন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় কমপক্ষে ৭০ জন আহতের খবর পাওয়া গেছে। আহতদের জয়পুরহাট ২৫০ জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
রোববার (৪ আগস্ট) দুপুরে এ হতাহতের ঘটনা ঘটে।
জানা যায়, আন্দোলনকারীরা বিক্ষোভ মিছিল থেকে গিয়ে জেলা আওয়ামী লীগ দলীয় কার্যালয় ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। এ সময় দলীয় কার্যালয়ে থাকা সংসদ সদস্য সামছুল আলম দুদু, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি রাজা চৌধুরী, মীর মোয়াজ্জেম, মাহমুদ হোসেন হিমু, অন্তত ১০-১২ জন আহত হয়। তাদেরকে উদ্ধার জয়পুরহাট ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
ফেনী: ফেনীতে অসহযোগ আন্দোলনের সমর্থকদের সঙ্গে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের সংঘর্ষে আট আন্দোলনকারী নিহত হয়েছেন। রোববার (৪ আগস্ট) দুপুর ২টার দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফেনী মহিপাল এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। তাৎক্ষণিকভাবে নিহতদের নাম ও পরিচয় জানা যায়নি।
ফেনী ২৫০ শয্যা জেলারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. আসিফ ইকবাল বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
কিশোরগঞ্জ: কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় পাঁচজন নিহত হয়েছেন। এরমধ্যে জেলা আ.লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম টিটুর বাসার আগুন নেভানোর সময় দুইজন কেয়ারটেকার ও স্ট্রোক করে একজন ব্যবসায়ীর মৃত্যু হয়েছে। রোববার দুপুর ১টার দিকে এ ঘটনা ঘটেছে। বাকি দুইজনের পরিচয় এখনো পাওয়া যায় নি।
দেবিদ্বার (কুমিল্লা) : কুমিল্লার দেবিদ্বারে দুপক্ষের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার মধ্যে গুলিতে এক যুবক নিহত হয়েছেন। রোববার (৪ আগস্ট) দুপুর দেড়টায় দেবিদ্বার আজগর আলী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় কমপক্ষে ২৪ জন আহত হয়েছেন।
নিহত যুবকের নাম আব্দুর রাজ্জাক রুবেল (৩৩)। তিনি দেবিদ্বার পৌর এলাকার বারেরা গ্রামের মৃত রফিকুল ইসলামের ছেলে।
রুবেলের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দেবিদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আলী এহসান। তিনি বলেন, রুবেলের মরদেহ শনিবার দেড়টার দিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনা হয়। আমরা পরীক্ষা করে দেখেছি তার মৃত্যু হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, দেবিদ্বার নিউ মার্কেট স্বাধীনতা চত্বরে অবস্থা নেন আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মী। স্বাধীনতা চত্বর থেকে কিছুটা দূরে অবস্থান নেন বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীরা। এ সময় দুপক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়। এর মধ্যে গুলিবিদ্ধ হন রুবেল।
নরসিংদী: অসহযাগ আন্দোলনের প্রথম দিনে নরসিংদী সদর উপজেলার মাধবদী বাসস্ট্যান্ড এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সংঘর্ষে ছয়জন নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া গুলিবিদ্ধ হয়েছেন আন্দোলনকারীদের চারজন। মাধবদী থানার ওসি কামরুজ্জামান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
নিহতরা হলেন- চরদিগলদী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা দেলোয়ার হোসেন (৪০), নরসিংদী সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেনের ছোট ভাই যুবলীগ নেতা দেলোয়ার হোসেন (৩৮), জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য শ্রমিক লীগ নেতা মনিরুজ্জামান ভূইয়া ওরফে নাতি মনির (৪২), শ্রমিক লীগ নেতা আনিছুর রহমান সোহেল (৪০), মাধবদী পৌরসভার ১১ নম্বর ওয়ার্ড কমিশনার নওশের (৪০) ও অজ্ঞাত (৩৮)।
জানা গেছে, আন্দোলনকারীরা মিছিল নিয়ে বের হলে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা তাদের প্রতিহত করার জন্য মিছিলে এলোপাতারি গুলি চালালে কমপক্ষে ৬ জন গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়। আহতদের মধ্যে সুমন মিয়া (৩৫), সোহেব (৪১), আল আমিনকে (২৫) নরসিংদী সদর হাসপাতালে এবং মীর জাহাঙ্গীরকে (৩০) ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপতালে পাঠানো হয়।
এ সময় উত্তেজিত আন্দোলনকারী ৪/৫ হাজার লোক আওয়ামী সমর্থকদের গুলি উপেক্ষা করে তাদের ওপর চড়াও হলে আওয়ামী সমর্থকরা দৌড়ে পালাতে থাকে। এ সময় আওয়ামী লীগের ছয়জন নেতাকর্মী দৌড়ে মাধবদী বাসস্ট্যান্ডের পশ্চিম দিকের বড় মসজিদে আশ্রয় নেয়। আন্দোলনকারীরা মসজিদ থেকে ধরে বের করে এনে মসজিদের সামনেই এলোপতারি পিটিয়ে ঘটনাস্থলেই ছয়জনের মৃত্যু নিশ্চিত করে চলে যায়।
সিলেট: সিলেটের গোলাপগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচি পালনকালে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল বের করলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে ধারাবহর হাসপাতালের সামনের ৫ জন নিহত হয়েছেন। এ সংঘর্ষে পুলিশ বিজিবি ও বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীসহ ৫০ জন আহত হন। এ ছাড়া কয়েকজন শিক্ষার্থী গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালেও চিকিৎসাধীন রয়েছে।
রোববার (৪ আগস্ট) দুপুর ২টার দিকে গোলাপগঞ্জের ধারাবহরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে এ ঘটনা ঘটে। নিহত ৫ জনের মধ্যে ২ জন হলেন ব্যবসায়ী বারকোট গ্রামের মরহুম মকবুল আলীর ছেলে ব্যবসায়ী তাজ উদ্দিন (৪৩) ও উপজেলার শিলঘাটের বাসিন্দা সানি আহমদ (১৮)। অন্য তিনজনের নাম-পরিচয় জানা যায়নি
লক্ষীপুর: লক্ষ্মীপুরে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীদের সঙ্গে গোলাগুলি ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় আওয়ামী লীগ ও আন্দোলনকারীরা কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ভাঙচুর করে। এতে আটজন নিহত হয়েছেন।
এ ছাড়া শতাধিক আহতের খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে অনেকেই মুমূর্ষ অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।
রোববার (৪ আগস্ট) বেলা সাড়ে ১১ টা থেকে শহরের ঝুমুর ও মাদাম ব্রিজ এলাকায় দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন- কাউসার, আদনান, সাব্বীর, মিরাজ, আহমেদ শরীফ, রাসেল ও ইউপি সদস্য হারুন। বাকি একজনের নাম-পরিচয় জানা জায়নি।
লক্সীপুর সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) অরুপ পাল নিহতের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
হবিগঞ্জ: হবিগঞ্জ জেলায় দুই পক্ষের সংঘর্ষে রিপন শীল নামের এক যুবক নিহত হয়েছেন। সে বিএনপির কর্মী বলে জানা যায়। রোববার (৪ আগস্ট) সদর উপজেলার টাউন হল এলাকায় এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সেখান থেকে গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
শেরপুর: শেরপুরে শহরের কলেজ মোড় এলাকায় গাড়ির চাপায় তিন আন্দোলনকারী নিহত হয়েছেন। নিহতদের এক জনের নাম মাহবুবুল ইসলাম (২২), তিনি আইটি উদ্যোক্তা ছিলেন। অপর দুজনের নাম জানা যায়নি।
রোববার (৪ আগস্ট) বিকেল সাড়ে ৪টায় এ ঘটনা ঘটে। পরে তাদেরকে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত আরএমও ডা. হুমায়ূন আহমেদ নূর মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
সাভার: ঢাকার অদূরে আশুলিয়ায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে এক তরুণের মৃত্যু হয়েছে । এ ছাড়া গুলিবিদ্ধ আরও দুইজনকে হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
রোববার (৪ আগস্ট) দুপুর আনুমানিক দুইটার পর মরদেহটি ধামরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। নিহতের নাম-পরিচয় জানা যায়নি। তার বয়স আনুমানিক ৩০ বছর। গুলিবিদ্ধ অপরজ হলেন বাইপাইল এলাকার পানি বিক্রেতা বিপ্লব (৪০)।
ধামরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্র জানায়, দুপুরের পর ৪-৫ জন তরুণ আনুমানিক ৩০ বছর বয়সী এক তরুণের মরদেহ হাসপাতালে নিয়ে আসে। মরদেহটি হাসপাতালে রেখে তারা চলে যায়।
আহত বিপ্লব বলেন, আমি রাস্তার পাশে পানি বিক্রি করছিলাম। তখনই আমার বুকে গুলি লাগে।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
আইন-আদালত
জ্বালানি খাতে ৩ মাসে সাশ্রয় ৩৭০ কোটি টাকা: জ্বালানি উপদেষ্টা
জ্বালানি খাতের সরকারি ক্রয়ে গত তিন মাসে ৩৭০ কোটি টাকা সাশ্রয় হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান।
শনিবার (২৩ নভেম্বর) রাজধানীর হোটেল ওয়েস্টিনে শিল্প খাতে জ্বালানি সংকট নিয়ে বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রির আলোচনা সভায় এ কথা জানান তিনি।
মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, নবায়নযোগ্য জ্বালানির দিকে এগিয়ে যেতে হবে। চলতি সপ্তাহে ৪০টি নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রকল্পের দরপত্র দেওয়া হবে।
পাবলিক সেক্টরে প্রতিযোগিতার অভাব রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, টিকে থাকতে হলে ঘুষ বাণিজ্য থেকে বের হতে হবে। সরকারি ক্রয়কে প্রতিযোগিতার মধ্যে আনার প্রয়োজন রয়েছে। সরকারের সঙ্গে সখ্য করে আর ব্যবসা হবে না। ভালো ব্যবসায়ীদের জন্যই উপযোগিতা তৈরি করা হবে।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
আইন-আদালত
অক্টোবরে সড়ক-রেল-নৌপথে ঝরলো ৫৭৫ প্রাণ
বিদায়ী অক্টোবর মাসে বাংলাদেশে ৪৫২টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৪৭৫ জন নিহত এবং ৮১৫ জন আহত হয়েছেন। ওই মাসে রেলপথে ৬৩টি দুর্ঘটনায় ৭৬ জন নিহত এবং ২৪ জন আহত হয়েছেন। নৌপথে ১৯টি দুর্ঘটনায় ২৪ জন নিহত, ৩৬ জন আহত এবং ৯ জন নিখোঁজ হয়েছেন। সড়ক, রেল ও নৌপথে সর্বমোট ৫৩৪টি দুর্ঘটনায় ৫৭৫ জন নিহত এবং ৮৭৫ জন আহত হয়েছেন।
শনিবার (২৩ অক্টোবর) বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরীর পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
অক্টোবরে ১৩৮টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ১৬৩ জন নিহত এবং ২৩৯ জন আহত হয়েছেন, যা মোট দুর্ঘটনার ৩০ দশমিক ৫৩ শতাংশ, নিহতের ৩৪ দশমিক ৩১ শতাংশ ও আহতের ২৯ দশমিক ৩২ শতাংশ।
সংগঠনটি জানিয়েছে, সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে ১৭ জন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ১৪৯ জন চালক, ১৩৭ জন পথচারী, ৫১ জন পরিবহন শ্রমিক, ৭৩ জন শিক্ষার্থী, ১৮ জন শিক্ষক, ৭৬ জন নারী, ৬২ জন শিশু, ৫ জন চিকিৎসক, ৯ জন সাংবাদিক এবং ১৩ জন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী।
দুর্ঘটনার শিকার হওয়া যানবাহনের মধ্যে ২৪ দশমিক ৪১ শতাংশ মোটরসাইকেল, ২২ দশমিক ৫০ শতাংশ ট্রাক-পিকাপ-কাভার্ডভ্যান ও লরি, ১৮ দশমিক ৫৪ শতাংশ বাস, ১৭ দশমিক ৯১ শতাংশ ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইক, ৩ দশমিক ৯৬ শতাংশ সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ৬ দশমিক ৬৫ শতাংশ নছিমন-করিমন-মাহিন্দ্রা-ট্রাক্টর ও লেগুনা এবং ৬ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ কার-জিপ-মাইক্রোবাস।
দুর্ঘটনার কারণগুলো হলো- ৪৯ দশমিক ৪৮ শতাংশ গাড়িচাপা দেওয়া, ২৫ দশমিক ২৫ শতাংশ মুখোমুখি সংঘর্ষ, ১৪ দশমিক ৭৭ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়া, দশমিক ২৫ শতাংশ ট্রেনের সঙ্গে অন্য যানবাহনের সংঘর্ষ, দশমিক ৭৫ শতাংশ চাকায় ওড়না পেঁচানো এবং ৯ দশমিক ৫১ শতাংশ অন্যান্য কারণ।
অক্টোবরে সংঘটিত মোট দুর্ঘটনার ৩৮ দশমিক ২৯ শতাংশ জাতীয় মহাসড়কে, ৩০ দশমিক ৩৯ শতাংশ আঞ্চলিক মহাসড়কে, ২৪ দশমিক ৬২ শতাংশ ফিডার রোডে হয়েছে।
সারা দেশে সংঘটিত মোট দুর্ঘটনার ৪ দশমিক ৫৬ শতাংশ ঢাকা মহানগরীতে ও ১ দশমিক ৮৬ শতাংশ চট্টগ্রাম মহানগরীতে এবং দশমিক ২৫ শতাংশ রেলক্রসিংয়ে হয়েছে।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
আইন-আদালত
জুলাই বিপ্লবে আহত বাবুকে নেওয়া হচ্ছে থাইল্যান্ড
জুলাই বিপ্লবে আহত মুক্তিযোদ্ধা মুজিবুর রহমানের ছেলে মো. বাবুকে চিকিৎসার জন্য নেওয়া হচ্ছে থাইল্যান্ড। আজ শনিবার (২৩ নভেম্বর) বেলা ১১টার দিকে বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে তাকে থাইল্যান্ডে পাঠানো হবে।
বাবুর বয়স ৩৬ বছর। কাজ করতেন নয়াপল্টনের ছাপাখানায়। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় বন্ধ হয়ে যায় ছাপাখানা। কিন্তু বাসায় বসে থাকেননি তিনি। জড়িয়ে পড়েন স্বৈরাচার পতনের আন্দোলনে। শনির আখড়ায় বাসা হওয়ায় সেখানে প্রতিদিন আন্দোলনে যেতেন।
জানা যায়, ২০ জুলাই সকালের দিকে আন্দোলনে যোগদান করেন বাবু। গলি থেকে মিছিল নিয়ে প্রধান সড়কে যান। এ সময় হেলিকপ্টার দিয়ে টহল দিচ্ছিল বিজিবি। হঠাৎ হেলিকপ্টার থেকে গুলি শুরু হয়। কিছু বুঝে ওঠার আগেই বাবু ৫-৬ হাত দূরে ছিটকে পড়ে। পুলিশ তাকে ঘিরে ধরে রাখে। রক্তে ভিজে যায় রাস্তা। পরিচিত একজন তার বোনকে ফোন দিয়ে ঘটনাস্থলে আসতে বলে। বোন বাবুর চার বন্ধুসহ ভাইকে উদ্ধার করতে আসে। কিন্তু পুলিশ তাদের আটক করে থানায় নিয়ে যায়। রাস্তায় পড়ে থাকে বাবু।
৫-৬ ঘণ্টা পর বোনের জামাই এসে বাবুকে স্থানীয় একটি মেডিকেল কলেজে নিয়ে যায়। সেখানেও শুরু হয় বিড়ম্বনা। কেন হাসিনার বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছে? এ অভিযোগে চিকিৎসা শুরু করতেও দেরি হয়। এদিকে রক্তশূন্য হয়ে বাবু মৃতপ্রায়।
মুক্তিযোদ্ধা বাবা এদিন চিকিৎসকদের পায়ে পর্যন্ত ধরেন।
এদিকে মেয়ে হাজতে বন্দি। তাকে ছাড়াতে যান মুক্তিযোদ্ধা মুজিবুর রহমান। পুলিশ তাকে অপমান করে তাড়িয়ে দেয়। পরে রাতে পুলিশ ফোন করে স্বামীকে চার হাজার টাকা নিয়ে যেতে বলে। ধারদেনা করে টাকা দিলে মুক্তি মেলে বাবুর বোনের। আর বাবুর বন্ধুদের পাঠানো হয় কারাগারে।
আহত বাবুর পেটের নিচের অংশ দিয়ে ঢুকে কোমরের পেছন দিয়ে বের হয়ে যায় বুলেট। গুলি ছিন্নভিন্ন করে বাবুর খাদ্যনালি, মূত্রথলি, কোমরের হাড়।
চিকিৎসকরা তার পেটে দুইবার অপারেশন করেছেন। তার খাদ্যনালির অনেকাংশ কেটে ফেলতে হয়। বাকি অংশ পেটে ফুটো করে আলাদা করে মলত্যাগের রাস্তা বানানো হয়। কিন্তু অবস্থার কোনো উন্নতি হয় না। পরে সেপ্টেম্বর মাসে তাকে বিএমএমইউতে স্থানান্তরিত করা হয়। কিছুদিন পর অবস্থা আরও খারাপ হয় বাবুর। মেডিকেল বোর্ড সিদ্ধান্ত নেয় দেশের বাইরে পাঠানোর। ১৫ দিন আগে থাইল্যান্ডের চিকিৎসক এসে বাবুর অবস্থা পর্যবেক্ষণ করেন। পরে তারা তাকে থাইল্যান্ডে নেওয়ার সিদ্ধান্ত দেন।
মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্ত স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগমকে জানানো হলে তিনি দ্রুত বাবুকে থাইল্যান্ডে নেওয়ার ব্যবস্থা করেন।
এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য উপদেষ্টার ব্যক্তিগত কর্মকর্তা ডা. মাহমুদ বলেন, স্বাস্থ্য উপদেষ্টার নির্দেশে আমরা বাবুকে দ্রুত বিদেশে নেওয়ার ব্যবস্থা করি। শুক্রবার তার টিকিট পাওয়া যায়। আজ বেলা ১১টার বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইটে তাকে থাইল্যান্ডে পাঠানো হবে। দেশটির বেজথানি হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে বাবুকে। এরই মধ্যে গণবিপ্লবে আহত আরও চারজন ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
আইন-আদালত
এলডিসি দেশগুলোতে ডলার বরাদ্দের প্রস্তাবে সমর্থন চাইলো বাংলাদেশ
জলবায়ু সংকটের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) এবং সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর জন্য ২০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বরাদ্দের প্রস্তাবে সমর্থন জানাতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ।
শুক্রবার (২২ নভেম্বর) আজারবাইজানের বাকুতে কপ-২৯-এর চূড়ান্ত ফলাফলের বিষয়ে এলডিসি মন্ত্রী এবং ইইউ মন্ত্রীদের মধ্যে অনুষ্ঠিত দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে এই আহ্বান জানানো হয়। বৈঠকে অবশিষ্ট সমস্যার সমাধানে উভয় পক্ষের সহযোগিতার মাধ্যমে একটি ভারসাম্যপূর্ণ ও সমতাভিত্তিক চুক্তি অর্জনের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়।
বৈঠকে বাংলাদেশ প্রতিনিধি বলেন, অনেক সমস্যা এখনও অমীমাংসিত রয়ে গেছে। তিনি উভয় পক্ষকে একযোগে কাজ করার মাধ্যমে কপ২৯-এ একটি অর্থবহ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক চুক্তি নিশ্চিত করার আহ্বান জানান।
বৈঠকে এলডিসি মন্ত্রীরা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় আর্থিক ও কারিগরি সহায়তার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করে তাদের মূল অবস্থান তুলে ধরেন।
ইইউ মন্ত্রীরা এলডিসি দেশগুলোর উদ্বেগের বিষয়গুলো স্বীকার করেন এবং জলবায়ুর ঝুঁকি মোকাবেলা ও টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে তাদের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন।
বৈঠকে জলবায়ু অর্থায়ন, অভিযোজন, নির্গমন হ্রাস এবং গ্লোবাল স্টকটেক প্রক্রিয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অন্যান্য
অরবিসের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী বাংলাদেশ: ড. ইউনূস
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস দেশে চোখের যত্ন ও পরিষেবা সম্প্রসারণের জন্য অলাভজনক প্রতিষ্ঠান অরবিস ইন্টারন্যাশনালের সঙ্গে কাজ ও সহযোগিতা করার জন্য বাংলাদেশের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
অরবিস ইন্টারন্যাশনালের প্রেসিডেন্ট ও সিইও ডেরেক হডকির সাথে এক বৈঠকে তিনি বলেন, বাংলাদেশে চোখের যত্নের সেবা সম্প্রসারণ করতে হবে এবং এ লক্ষ্যে আরা অরবিস ইন্টারন্যাশনালের সাথে কাজ করতে প্রস্তুত।
এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা বলা হড, অরবিস ফ্লাইং আই হাসপাতালের প্রশিক্ষণ কর্মসূচির অংশ হিসেবে ডেরেক বাংলাদেশ সফর করছেন। এখন চট্টগ্রামে প্রশিক্ষণ চলছে। ডেরেকে গত বুধবার (২০ নভেম্বর) রাজধানীতে অধ্যাপক ইউনূসের সাথে তার কার্যালয়ে দেখা করেন।
অরবিস বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ড. মুনির আহমেদ প্রধান উপদেষ্টার সাথে সাক্ষাতের সময় ডেরেকের সাথে ছিলেন। অরবিস প্রেসিডেন্ট প্রধান উপদেষ্টাকে ফ্লাইং আই হাসপাতালের একটি মডেল সংস্করণ উপস্থাপন করেন। অধ্যাপক ইউনূস এটির ভূয়সী প্রশংসা করেন।
ডেরেক অরবিস ইন্টারন্যাশনালের কাজ সম্পর্কে প্রধান উপদেষ্টাকে অবিহিত করেন। অরবিস ১৯৮২ সালে বিশ্বব্যাপী দৃষ্টি-সংরক্ষণ কর্মসূচি শুরু করেছিল। অরবিস গত ৩৯ বছর ধরে বাংলাদেশে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সাথে কাজ করছে।
ডেরেক বলেন, এই সময়ের মধ্যে, অরবিস এ পর্যন্ত কমিউনিটি আউটরিচ ইভেন্টে ৭.৮ মিলিয়নেরও বেশি চোখের স্ক্রিনিং পরিচালনা করেছে, প্রাপ্তবয়স্ক ও শিশুদের মধ্যে ৪.৫ মিলিয়নেরও বেশি ব্যক্তিকে ওষুধ ও অপটিক্যাল চিকিৎসা প্রদান করেছে, ২৫৮,০০০টিরও বেশি চোখের সার্জারি করেছে এবং বাংলাদেশের ৪০ হাজারের বেশি লোককে চোখের যত্ন নেওয়ার বিষয়ে প্রশিক্ষিত করেছে।
অধ্যাপক ইউনূস বাংলাদেশে চক্ষু স্বাস্থ্য খাতে অরবিসের অবদানের কথা স্বীকার করেন এবং ফ্লাইং আই হাসপাতালের প্রতি তার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। অরবিস এখন বাংলাদেশে ১১তম প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
ড. ইউনূস বলেন, আমি অরবিসকে ভালোবাসি। আমি ফ্লাইং আই হসপিটালকে ভালোবাসি। তিনি উল্লেখ করেন যে, অরবিস বাংলাদেশে চোখের স্বাস্থ্য খাতে ভূমিকা পালনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর অন্যতম।
ডেরেক বলেন, অরবিস ব্যক্তি, পরিবার ও জনগোষ্ঠীকে সাহায্য করার জন্য বিশ্বব্যাপী ২ শতাধিক দেশ ও ভূখণ্ডে দৃষ্টি সংরক্ষণের কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে।
বিশ্বজুড়ে প্রায় এক বিলিয়ন মানুষ সম্পূর্ণভাবে পরিহারযোগ্য অন্ধত্ব ও দৃষ্টিশক্তি হ্রাসের সমস্যা নিয়ে বসবাস করছে উল্লেখ করে ডেরেক বলেন, চার দশকেরও বেশি সময় ধরে অরবিস জোরদার ও টেকসই চোখের যত্ন ব্যবস্থা নিয়ে এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে।
অরবিস প্রেসিডেন্ট বলেন, অলাভজনক এ প্রতিষ্ঠানটি আফ্রিকা, এশিয়া ও ল্যাটিন আমেরিকায় বিশেষ কর্মসূচি পরিচালনা করছে এবং প্রশিক্ষণ প্রদান ও প্রযুক্তির প্রয়োগ করছে।
তিনি বলেন, গত চার দশক ধরে অরবিস শিশুদের চোখের যত্ন, মাইক্রোসার্জারি, রেটিনাল সার্জারি, কর্নিয়ার রোগ, প্রিম্যাচুরিটি রেটিনোপ্যাথি এবং ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথির ওপর গুরুত্ব দিয়ে বাংলাদেশের স্থানীয় অংশীদারদের দক্ষতা ও জ্ঞানের উন্নতিতে সাহায্য করেছে।
ডেরেক এ সময় প্রধান উপদেষ্টাকে আরও অবিহিত করেন, অরবিস সারা দেশে বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকায় ৪২টি দৃষ্টি সেবা কেন্দ্র স্থাপন করে চোখের যত্নের সাথে জনগোষ্ঠীকে সম্পৃক্ত করেছে; ১৭টি সেকেন্ডারি হাসপাতাল, চারটি তৃতীয় হাসপাতাল, দুটি ওয়েট ল্যাব, একটি মানসম্পন্ন রিসোর্স সেন্টার ও একটি ডিজিটাল ট্রেনিং হাব প্রতিষ্ঠা বা উন্নতিতে সহায়তা করেছে।
এছাড়া, অরবিস ৪০০টি কমিউনিটি ক্লিনিককে ভিশন স্ক্রিনিং টুলস দিয়ে সজ্জিত করেছে এবং শৈশব অন্ধত্বের একটি প্রধান কারণ, প্রিম্যাচুরিটি রেটিনোপ্যাথির স্ক্রিনিং ও ব্যবস্থাপনার জন্য বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় নির্দেশিকা তৈরি করেছে।