ধর্ম ও জীবন
পবিত্র জুমাতুল বিদা আজ

আজ মাহে রমজানের শেষ শুক্রবার। মুসলিম উম্মাহর কাছে দিনটি জুমাতুল বিদা নামেও পরিচিত। মূলত জুমাতুল বিদার মধ্য দিয়ে মাহে রমজানকে এক বছরের জন্য বিদায় সম্ভাষণ জানানো হয়।
আজ মাহে রমজানুল মোবারকের ২৫ তারিখ। পবিত্র মাসের শেষ প্রান্তে পৌঁছেছি আমরা। আজ জুমাবার। এটাই হবে রমজানের শেষ জুমা। তাই এ দিনটি জুমাতুল বিদা নামে আখ্যায়িত।
এমনিতেই মুসলমানদের কাছে সপ্তাহের অন্য দিনের চেয়ে শুক্রবারের মর্যাদা অধিক। রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের সওগাত নিয়ে আসা রমজান মাসের শুক্রবারগুলোর মর্যাদা আরও অধিকতর। রমজানকে বিদায় সম্ভাষণ জানানোর শেষ জুমাবারটি তাৎপর্যপূর্ণ একটি দিন। এই দিন মসজিদে মসজিদে জুমার খুতবায় রমজান মাসের ফজিলত ও ইবাদতের গুরুত্ব ব্যাখ্যাসহ বিশেষ দোয়া হবে।
মুসলমানদের প্রথম কিবলা বায়তুল মোকাদ্দাস মুক্তির লক্ষ্যে রমজান মাসের শেষ শুক্রবার সারা বিশ্বে আল কুদস দিবস হিসেবেও পালিত হয়।
প্রতিবছরের মতো এবারও দেশব্যাপী মসজিদে মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করবেন ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা। জুমার নামাজ শেষে মুসল্লিরা মহান আল্লাহর দরবারে ক্ষমা ও রহমত কামনা করবেন। ঢাকায় জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে অনেক মুসল্লি জুমাতুল বিদার নামাজ আদায় করবেন। সব মসজিদে জুমার নামাজ শেষে দেশ ও জাতির কল্যাণ এবং মুসলিম উম্মাহর ঐক্য ও শান্তি কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হবে।
এমআই

ধর্ম ও জীবন
আজ যে ৪ আমল করবেন হজ পালনকারীরা

আজ (৬ জুন) সৌদি আরবে ১০ জিলহজ ঈদুল আজহার দিন। এ দিন হজ পালনকারীরা হজের ৪টি আমল সম্পন্ন করবেন। সুবহে সাদিকের পর মুজদালিফায় অবস্থান করবেন, তারপর সূর্য ওঠার আগে মিনায় এসে বড় জামরায় ৭টি কংকর নিক্ষেপ করবেন। তারপর কোরবানি করবেন। কোরবানি সম্পন্ন হলে মাথা মুণ্ডন করবেন, চুল ছাটবেন বা কাটবেন।
চুল মুণ্ডন বা কাটার পর স্ত্রী সঙ্গম ছাড়া ইহরামের যাবতীয় নিষেধাজ্ঞা উঠে যাবে।
মুজদালিফায় অবস্থান
হিজরি ক্যালেন্ডারে সূর্যাস্তের পর নতুন দিন শুরু হয়। ৯ জিলহজ আরাফায় অবস্থান করে সূর্যাস্তের পর ১০ জিলহজ হজ পালনকারীদের যেতে হয় মুজদালিফায়। মুজদালিফায় মাগরিব ও ইশা আদায়ের পর সুবহে সাদিক পর্যন্ত অবস্থান করা সুন্নতে মুআক্কাদা। রাতের অর্ধেকের বেশি অবস্থান করলে সুন্নত আদায় হয়ে যাবে।
১০ জিলহজ সুবহে সাদিকের পর কিছু সময় মুজদালিফায় অবস্থান করা ওয়াজিব। তাই ফজরের আগে মুজদালিফা ত্যাগ করা যাবে না। ফজরের পর সুর্য ওঠার আগেই মুজদালিফা থেকে মিনার উদ্দেশে রওয়ানা হতে হবে।
জামারায় কংকর নিক্ষেপ
১০ জিলহজ সুবহে সাদিক বা ফজরের সময় শুরু হওয়ার পর থেকে আগত রাতের সুবহবে সাদিক পর্যন্ত মোট ২৪ ঘণ্টা প্রথম দিনের কংকর নিক্ষেপ করা যায়। এর মধ্যে সুবহে সাদিক থেকে সুবহে সাদিক পর্যন্ত মাকরূহ সময়, তবে নারী, অসুস্থ ও দুর্বলদের জন্য মাকরুহ নয়। সুর্যোদয়ের পর থেকে মধ্যাহ্ন পর্যন্ত মুস্তাহাব সময়; এ সময়ই কংকর করার চেষ্টা করা উচিত। মধ্যাহ্ন থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত জায়েজ সময়। সূর্যাস্তের পর থেকে সুবহে সাদিক পর্যন্ত মাকরুহ সময়। তবে কারো ওজর থাকলে, প্রচণ্ড ভড়ি থাকলে বৃদ্ধ, নারী ও দুর্বল ব্যক্তিরা এ সময় কংকর নিক্ষেপ করতে পারে।
১০ জিলহজ শুধু বড় জামারায় কংকর নিক্ষেপ করতে হয়। অন্য দুটি জামারায় এ দিন কংকর নিক্ষেপ করা নিষেধ।কংকর নিক্ষেপের সময় পড়তে হয় ‘বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার’ অথবা শুধু ‘আল্লাহু আকবার’। পরপর ৭ বার তাকবির দিয়ে কংকর নিক্ষেপ করতে হয়।
কংকর নিক্ষেপের জন্য পবিত্রতা অর্জনের শর্ত নেই, তবে অজু অবস্থায় কংকর নিক্ষেপ করা ভালো।
হজের কোরবানি
কেরান ও তামাত্তু হজ পালনকারীরা যেহেতু ওমরাহ ও হজ পালনের মাধ্যমে দুটি ইবাদত করেছে, এ জন্য তাদের ওপর শুকরিয়াস্বরূপ একটি কোরবানি করা ওয়াজিভ। একে দমে শোকরও বলা হয়। এই কোরবানি হারামের সীমানার ভেতরে করতে হয়।
ঈদের কোরবানি আর হজের কোরবানি এক নয়। কেউ যদি ঈদের কোরবানি মনে করে কোরবানি করে, তাহলে তার হজের কোরবানি বা দমে শোকর আদায় হবে না। দমে শোকরের নিয়তে পুনরায় কোরবানি করতে হবে।
বড় জামারায় কংকর নিক্ষেপের পর এই কোরবানি করতে হবে। এরপর চুল-নখ কাটা যাবে। কোরবানির আগে চুল-নখ কাটা যাবে না।
ইফরাদ হজ পালনকারীদের জন্য কোরবানি এই কোরবানি ওয়াজিব নয়, মুস্তাহাব। তারা কংকর নিক্ষেপের পরই চুল নখ কাটতে পারবে।
চুল কাটা
হজের কোরবানি হয়ে গেলে পুরুষরা মাথার চুল মুণ্ডন করবেন বা ছোট করবেন। পুরুষের জন্য হলক অর্থাৎ পুরো মাথা মুণ্ডন করাই উত্তম। তবে কসর অর্থাৎ পুরো মাথার চুল আঙুলের এক গিরা পরিমাণ কেটে খাটো করা করার মাধ্যমেও হালাল হওয়া যায়। কারো মাথার চুল যদি ছোট হওয়ার কারণে এক গিরা পরিমাণ কাটা সম্ভব না হয় তাহলে তার মাতা মুণ্ডানো জরুরি।
নারীরা হলক করবে না বরং কসর বা পুরো মাথার চুল এক ইঞ্চি পরিমাণ কাটবে। মাথার এক চতুর্থাংশ চুলের অগ্রভাগ এক ইঞ্চি পরিমাণ কাটলে নারীদের ওয়াজিব আদায় হয়ে যায় তবে এটা মাকরুহ, পুরো মাথার চুল কাটা উত্তম।
চুল কাটার মাধ্যমে ইহরাম শেষ হয়ে যায়। তাই ইহরাম অবস্থায় যে কাজগুলো নিষিদ্ধ ছিল, চুল কাটার পর স্ত্রী সঙ্গম ছাড়া বাকি সব কাজ বৈধ হয়ে যায়। যেমন সেলাইকৃত পোশাক রা, সুগন্ধি ব্যবহার করা ইত্যাদি। স্ত্রী-সঙ্গম তাওয়াফে জিয়ারত আদায় করা পর্যন্ত নিষিদ্ধ থাকে।
কাফি
ধর্ম ও জীবন
আজ জামারায় পাথর মারবেন হজযাত্রীরা

১০ জিলহজে শুধু বড় জামরায় (শয়তান) সাতটি কঙ্কর (পাথর) নিক্ষেপ এবং ১১ ও ১২ জিলহজে ছোট, মধ্যম ও বড় এ তিন জামরাতেই (শয়তানকে) পাথর মারা ওয়াজিব। শয়তানকে লক্ষ্য করে পাথর নিক্ষেপ করা পবিত্র হজের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
হজের মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয় ৮ জিলহজ (চলতি বছর ৪ জুন)। এদিন হাজিরা মিকাত থেকে ইহরাম (পুরুষদের জন্য হজের নির্ধারিত পোশাক-দুই টুকরা সেলাইবিহীন সাদা কাপড়) বেঁধে মক্কার উদ্দেশে রওয়ানা দেন। তারপর তাওয়াফে কুদুমের মাধ্যমে শুরু হয় হজের আনুষ্ঠানিকতা। তওয়াফে কুদুম করার পর হাজিরা মিনায় অবস্থান করেন।
দোয়া কবুলের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান ও সময় হচ্ছে, জামারায় কঙ্কর নিক্ষেপ করে দোয়া করা। কঙ্কর নিক্ষেপের পর জামারার স্থান থেকে সামান্য সরে গিয়ে প্রাণ খুলে দোয়া করা।
মিনাতেই তিনটি ‘জুমরা’ (স্তম্ভ) অবস্থিত, এগুলোকে একত্রে ‘জামারাত’ বলে। এগুলো ছোট শয়তান (জুমরায়ে উলা), মেজ শয়তান (জুমরায়ে উস্তা), বড় শয়তান (জুমরায়ে আকাবা) নামে পরিচিত। হজরত ইব্রাহিম (আ.) যখন হজরত ইসমাইলকে (আ.) কোরবানি দিতে যাচ্ছিলেন, তখন পথে এ স্থানে শয়তান বাধা সৃষ্টি করে। তখন হজরত ইব্রাহিম (আ.) পাথর ছুড়ে শয়তানকে বিতাড়িত করেন।
৮ জিলহজ মিনায় আগমনের মাধ্যমেই শুরু হয়েছে হজের আনুষ্ঠানিকতা। সৌদি সরকারের নির্দেশনায় মঙ্গলবার রাত থেকেই হজযাত্রীরা মিনায় আসতে শুরু করেন।
মিনার বিস্তীর্ণ প্রান্তরে বিত্ত-বৈভব, কামনা-বাসনাকে পরিত্যাগ করে হজযাত্রীরা আল্লাহর সান্নিধ্য ও ক্ষমাপ্রত্যাশা করেন। মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনায় তাদের মন ব্যাকুল। তারা পাপতাপের জন্য অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চান।
রাত থেকেই মিনা থেকে আরাফাতের ময়দানে যেতে থাকেন হজযাত্রীরা। কারণ আরাফাতের ময়দানে ৯ জিলহজ সূর্য পশ্চিম আকাশে হেলে পড়ার পর থেকে সূর্যাস্ত যাওয়ার আগে কিছু সময় অবস্থান করা ফরজ। এরপর মাগরিবের নামাজ না পড়েই মুজদালিফার উদ্দেশে রওনা হন তারা।
মুজদালিফায় খোলা আকাশের নিচে সারারাত অবস্থানের পর ১০ জিলহজ ফজরের নামাজের পর শয়তানের স্তম্ভে পাথর নিক্ষেপের জন্য যাত্রা শুরু করেছেন হজযাত্রীরা। তারা মুজদালিফা থেকেই শয়তানকে মারার জন্য পাথর সংগ্রহ করেছেন।
আজ তারা শুধু বড় জামারায় (প্রতীকী বড় শয়তান) পাথর নিক্ষেপ করতে মিনায় যাচ্ছেন।
কাফি
ধর্ম ও জীবন
হজের খুতবায় মুসলমানদের ঐক্য ও সংহতি বজায় রাখার আহ্বান

হজের খুতবায় মসজিদুল হারামের ইমাম শায়খ ড. সালেহ বিন হুমাইদ বলেছেন, মুসলমানদের পরস্পরের মধ্যে ঐক্য ও সংহতি বজায় রাখা উচিত। মসজিদে নামিরায় হজের খুতবা প্রদানকালে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, ঈমানদারদের উচিত আল্লাহকে ভয় করা এবং তাকওয়া অবলম্বন করা। তাকওয়া ঈমানদারের বৈশিষ্ট্য। তিনি বলেন, শয়তান মুসলমানদের প্রকাশ্য শত্রু। মুসলমানদের উচিত পরস্পরের মধ্যে ঐক্য ও সংহতি বজায় রাখা।
শায়খ সালেহ বিন হুমাইদ বলেন, আল্লাহ তায়ালা ইসলামকে মানবজাতির জন্য দ্বীন হিসেবে পছন্দ করেছেন। যদি তুমি তোমার শত্রুকে ক্ষমা করো, তাহলে আল্লাহ তোমাকে তাঁর বন্ধু বানিয়ে নেবেন।
তিনি আরও বলেন, সৎকর্ম পাপসমূহকে মুছে দেয়। তাই আমাদের উচিত যতটা সম্ভব নেক কাজের চেষ্টা করা। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আল্লাহর এবাদত এমনভাবে করো যেন তুমি তাঁকে দেখছ।
মসজিদুল হারামের সাবেক ইমাম বলেন, ইসলাম ধর্মের তিনটি স্তর রয়েছে, যার মধ্যে সর্বোচ্চ স্তর হলো ‘ইহসান’। পিতা-মাতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার, নম্রতা প্রদর্শন এবং প্রতিশ্রুতি পূরণ করাও ইসলামেরই অংশ। আর লজ্জাশীলতা বা হায়া হলো ঈমানের একটি শাখা।
শায়খ সালেহ বিন আবদুল্লাহ আরও বলেন, হজের সময় বেশি বেশি আল্লাহর জিকির (স্মরণ) করা উচিত, বেশি বেশি দোয়া করা উচিত এবং দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ প্রার্থনা করা উচিত। আল্লাহ বলেছেন, নেক কাজে একে অপরকে সাহায্য করো এবং মন্দ কাজে বাধা দাও।
হজের প্রধান ও গুরুত্বপূর্ণ ফরজ আরাফায় অবস্থান পালনের জন্য আজ বৃহস্পতিবার (৮ জিলহজ, ৫ জুন) ভোর থেকে আরাফায় পৌঁছাতে শুরু করেন হাজিরা। এখানে পৌঁছে আল্লাহর কাছে দোয়া ও ইবাদতে সময় অতিবাহিত করছেন তারা।
সৌদি কর্তৃপক্ষ হাজিদেরকে দিনের সবচেয়ে উত্তপ্ত সময়ে (সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা) বাইরে না থাকার অনুরোধ জানিয়েছে।
হাজার হাজার হাজি ফজরের আগেই আরাফার ময়দান, জাবালে রহমত পাহাড় ও তার আশপাশের সমতল ভূমিতে একত্রিত হতে শুরু করেন। এটি সেই ঐতিহাসিক স্থান যেখানে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) তার বিদায় হজের ভাষণ প্রদান করেছিলেন। সূর্যাস্তের পর তারা আরাফাত থেকে মুজদালিফার উদ্দেশে রওনা হবেন।
মিনা ও আরাফার ময়দানের মাঝামাঝি স্থানে অবস্থিত একটি এলাকা মুজদালিফা। শয়তানকে প্রতীকি পাথর নিক্ষেপের রীতি অনুসরণের জন্য এখান থেকে তারা পাথর সংগ্রহ করবেন।
১০ জিলহজ তারিখে ওকুফে মুজদালিফা শেষে তারা রমি (শয়তানকে পাথর নিক্ষেপ) করার উদ্দেশ্যে রওনা হবেন।
এরপর তারা বড় শয়তানকে সাতটি কঙ্কর নিক্ষেপ করবেন এবং কোরবানি করবেন। এরপর মাথা মুণ্ডিয়ে বা চুল ছেঁটে ইহরাম খোলার মাধ্যমে ইহরামমুক্ত হবেন।
১১ জিলহজ হজযাত্রীরা ছোট, মাঝারি ও বড় তিনটি শয়তানকে সাতটি করে কঙ্কর নিক্ষেপ করবেন। রমি শেষে তারা কাবা শরিফে ‘তাওয়াফে জিয়ারত’ করবেন এবং এরপর সাফা-মারওয়া সাঈ সম্পন্ন করবেন।
১২ জিলহজ তারিখে সূর্য ঢলার পর তিনটি শয়তানকে কঙ্কর নিক্ষেপ করা হবে। ১৩ জিলহজ রমি জামেরাত শেষে হজযাত্রীরা মিনা থেকে তাদের বাসস্থানে ফিরে যাবেন।
কাফি
ধর্ম ও জীবন
পবিত্র হজ আজ, লাব্বাইক ধ্বনিতে মুখরিত আরাফা

সৌদি আরবের আরাফায় পবিত্র হজ পালিত হবে আজ। এ বছর হিজরি ১৪৪৬ সনের হজ পালিত হচ্ছে। হাজিরা আজ সূর্যাস্ত পর্যন্ত আরাফায় অবস্থান করবেন। সন্ধ্যায় রওয়ানা হবেন মুজদালিফার উদ্দেশ্যে। সেখানে রাত যাপন করবেন এবং সেখান থেকে শয়তানকে পাথর মারার জন্য পাথর সংগ্রহ করবেন।
আজ বৃহস্পতিবার (৯ জিলহজ) ভোরের সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে হজযাত্রীরা হজের প্রধান রোকন—আরাফায় অবস্থানের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এর আগে তারা মিনায় রাত কাটিয়েছেন, মিনায় অবস্থানের মাধ্যমেই শুরু হয়েছিল হজের আনুষ্ঠানিকতা।
আরাফার ময়দান মিনা থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার পূর্ব দিকে অবস্থিত। হজযাত্রীরা এখানে সূর্যাস্ত পর্যন্ত অবস্থান করবেন, এরপর তারা প্রায় ৯ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত মুজদালিফার উদ্দেশে রওনা হবেন।
হজযাত্রীরা আরাফার ময়দানে মসজিদে নামিরা থেকে প্রদত্ত হজের খুতবা শুনবেন। সেখানে তারা জোহর ও আসর একসঙ্গে পড়বেন।
সৌদি কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, এ পর্যন্ত প্রায় ১৫ লাখ হজযাত্রী বিদেশ থেকে হজ পালনের উদ্দেশ্যে সৌদি আরবে পৌঁছেছেন।
সৌদি কর্তৃপক্ষ সম্ভাব্য তাপপ্রবাহ মোকাবিলায় ২ লাখ ৫০ হাজারের বেশি কর্মী নিয়োজিত করেছে এবং ৪০টিরও বেশি সরকারি সংস্থার মধ্যে সমন্বয় করেছে বলে জানিয়েছেন দেশটির হজমন্ত্রী তৌফিক রাবিয়া।
এই ব্যবস্থাগুলোর মধ্যে রয়েছে—৫০ হাজার বর্গমিটার অতিরিক্ত ছায়াযুক্ত জায়গা তৈরি, হাজার হাজার চিকিৎসা কর্মীর মোতায়েন এবং ৪০০টির বেশি শীতলীকরণ ইউনিটের ব্যবস্থা।
আনাদোলু বার্তার সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, গত হিজরি বছর (১৪৪৫ হিজরি / ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দে) হজযাত্রীর সংখ্যা ছিল ১৮ লাখ ৩৩ হাজার ১৬৪ জন। এর মধ্যে ২ লাখ ২১ হাজার ৮৫৪ জন ছিলেন সৌদি আরবের অভ্যন্তরীণ হজযাত্রী। হজমন্ত্রী জানান, ওই বছর হজে অংশ নিয়েছিলেন বিশ্বের ২০০টিরও বেশি দেশের মানুষ।
এ বছর ১২ বছরের নিচের শিশুদের হজে অংশ নিতে নিষেধ করা হয়েছে এবং যেসব হজযাত্রী অনুমতিপত্র ছাড়া হজ পালনের চেষ্টা করবেন, তাদেরকে ৫ হাজার ডলার (৩,৬৮৫ পাউন্ড) জরিমানা ও ১০ বছরের জন্য সৌদি আরবে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়তে হতে পারে বলে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।
তারা আরও জানান, গত বছর যারা মারা গিয়েছিলেন, তাদের মধ্যে ৮০ শতাংশই ছিলেন অবৈধ বা নিবন্ধনবিহীন। ফলে তারা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত আবাসন, পরিবহন এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত ছিলেন, যখন তাপমাত্রা ৫১ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছায়। মৃতদের মধ্যে শত শত মিশরীয় ও ইন্দোনেশীয়ও ছিলেন।
হজ ইসলাম ধর্মের পাঁচটি স্তম্ভের একটি এবং এটি হিজরি চন্দ্রপঞ্জিকার ১২তম মাসে অনুষ্ঠিত হয়।
প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক মুসলিমের জন্য শারীরিক ও আর্থিক সামর্থ্য থাকলে জীবনে অন্তত একবার হজ পালন করা ফরজ।
হজের প্রথম দিনে পুরুষ হজযাত্রীরা নিজেদের পোশাক বদলে সাদা রঙের দুই টুকরা কাপড় (ইহরাম) পরে ইহরামের অবস্থায় প্রবেশ করেন। নারীরা শালীন পোশাক পরিধান করে মাথা ঢেকে নেন।
এরপর হজযাত্রীরা ইসলাম ধর্মের সবচেয়ে পবিত্র স্থান কাবা শরিফ ঘিরে তাওয়াফ (তিনবার চক্কর) দেন। পাশাপাশি তারা সাফা ও মারওয়া পাহাড়ের মাঝে সাতবার হাঁটেন, যাকে সাঈ বলা হয়।
পরে তারা মক্কা থেকে ৫ কিলোমিটার দূরের মিনায় গমন করেন, যেখানে তাঁবুর শহরে তারা রাত কাটান। বৃহস্পতিবার তারা আরাফাত ময়দানে যাবেন, যেখানে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর বিদায় হজের খুতবা দিয়েছিলেন।
ধর্ম ও জীবন
জিলহজ মাসের প্রথম ১০ দিনের বিশেষ আমল ও ফজিলত

ইসলামের ইতিহাসে জিলহজ মাসের প্রথম ১০ দিন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আল্লাহ তাআলা কোরআনে এই দিনগুলোর নামে শপথ করেছেন, যা এদের বিশেষ মর্যাদা নির্দেশ করে। ইরশাদ হয়েছে, “শপথ ফজর কালের। এবং ১০ রাতের।” (সুরা: ফজর, আয়াত: ১-২)। মুফাসসিরদের মতে, এখানে ‘ফজর’ বলতে জিলহজের ১০ তারিখের ফজর এবং ‘১০ রাত’ বলতে জিলহজের প্রথম ১০ রাত বোঝানো হয়েছে।
১০ দিনের শ্রেষ্ঠত্বের কারণ
এই দিনগুলোতে হজ ও কোরবানি, আরাফাহ দিবসের মতো গুরুত্বপূর্ণ ইবাদতগুলো একত্রিত হয়, যা এদের বিশেষ ফজিলত দান করে। ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, এই ১০ দিনের সৎকাজ আল্লাহ তাআলার নিকট অন্য যেকোনো দিনের সৎকাজ অপেক্ষা বেশি প্রিয়। এমনকি আল্লাহ তাআলার পথে জিহাদ করাও এর চেয়ে বেশি প্রিয় নয়, তবে যদি কেউ জানমাল নিয়ে জিহাদে বের হয়ে আর ফিরে না আসে (শহীদ হয়), তার মর্যাদা ভিন্ন। (তিরমিজি, হাদিস: ৭৫৭)।
আল্লামা হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানি (রহ.) বলেন, জিলহজের এই ১০ দিনের বৈশিষ্ট্যের কারণ হলো, এ সময় ইসলামের মৌলিক কিছু ইবাদতের (নামাজ, রোজা, সদকা ও হজ) সম্মিলন ঘটে, যা বছরের অন্য কোনো সময়ে দেখা যায় না। (ফাতহুল বারি, আসকালানি: ২/৪৬০)।
১০ দিনের বিশেষ কিছু আমল
সামর্থ্যবানদের জন্য হজ ও কোরবানি ছাড়াও এই মাসে আরও কিছু বিশেষ আমল রয়েছে, যার মাধ্যমে মুমিনরা নিজেদের জীবনকে আরও সমৃদ্ধ করতে পারেন:
-
বেশি পরিমাণে তাকবির বলা: এই ১০ দিনে বেশি পরিমাণে আল্লাহর জিকিরে নিজেকে ব্যস্ত রাখা উচিত, বিশেষ করে তাকবির (আল্লাহু আকবার) বলা। ইবনে ওমর ও আবু হুরায়রা (রা.)-এর আমল ছিল, এই ১০ দিন তারা তাকবির বলতে বলতে বাজারের দিকে যেতেন এবং তাদের তাকবিরের সঙ্গে অন্যরাও তাকবির বলত। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৯৬৯)। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, এই সময়ে অধিক পরিমাণে তাকবির, তাহলিল (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ) এবং তাহমিদ (আলহামদু লিল্লাহ) পাঠ করতে। (শুআবুল ঈমান, হাদিস: ৩৭৫৮)।
-
রোজা রাখা: জিলহজের প্রথম ৯ দিন রোজা রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ আমল। নবী (সা.)-এর স্ত্রী থেকে বর্ণিত যে, রাসুল (সা.) জিলহজ মাসের ৯ দিন, আশুরার দিন এবং প্রতি মাসের তিন দিন রোজা পালন করতেন। (সুনানে নাসায়ি, হাদিস: ২৪১৭)। বিশেষ করে আরাফাহর দিনের রোজার (৯ই জিলহজ) বিশেষ ফজিলত রয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আরাফাতের দিনের রোজা পূর্ববর্তী এক বছর এবং পরবর্তী এক বছরের গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেয়। (জামে তিরমিজি, হাদিস: ৭৪৯)।
-
নখ ও চুল না কাটা: এই ১০ দিনের আরেকটি আমল হচ্ছে জিলহজের চাঁদ দেখার পর থেকে কোরবানি করার আগ পর্যন্ত নখ, চুল এবং শরীরের অবাঞ্ছিত লোম ইত্যাদি কর্তন না করা। কোরবানি দেওয়ার পর এগুলো পরিষ্কার করবে। এই আমল সবার জন্য প্রযোজ্য, চাই সে কোরবানি করুক বা না করুক। (তাহাবি শরিফ, হাদিস: ৬১৭২)।
এই বিশেষ দিনগুলোতে বেশি বেশি ইবাদত ও নেক আমল করে আমরা আল্লাহর রহমত ও ক্ষমা লাভ করতে পারি।