অর্থনীতি
মুডিস রেটিংয়ে বাংলাদেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থা ‘নেতিবাচক’ থেকে ‘স্থিতিশীল’
আন্তর্জাতিক ক্রেডিট রেটিং সংস্থা বা ঋণমান নিরূপণকারী সংস্থা মুডিস ইনভেস্টরস সার্ভিস বাংলাদেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থার জন্য দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করেছে। বাংলাদেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থাকে ‘নেগেটিভ’ থেকে ‘স্থিতিশীল’ রেটিং দিয়েছে সংস্থাটি। মুডিস হলো বিশ্বের তিনটি বড় রেটিং এজেন্সির অন্যতম।
দেশের ব্যাংকিং খাত নিয়ে যখন দেশে-বিদেশে নেতিবাচক ধারণা রয়েছে তখনি এমন একটি সংবাদ আসে দেশের ব্যাংক খাতের জন্য। এ রেটিংয়ের ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে চাপ থেকে মুক্তি দেবে।
মুডিস একটি প্রতিবেদনে জানায়, চলমান সম্পদ-গুণমানের অসুবিধা সত্ত্বেও লাভজনক এবং তারল্যের চাপ হ্রাস পেয়েছে যা আমাদের প্রত্যাশাকেও ছাড়িয়েছে। স্থির নেট সুদের মার্জিন এবং ক্রেডিট খরচের কারণে লাভজনক স্থিতিশীল হবে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, মূলধনও স্থিতিশীল হবে কারণ অভ্যন্তরীণ মূলধন উৎপাদন মূলধন ব্যবহারের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ, এটি বলেছে যে ঋণদাতাদের তহবিল এবং তারল্য শক্ত স্থিতিশীল হবে।
‘যখন সিস্টেমিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার প্রয়োজন তখন ব্যাংকগুলোকে সরকার সমর্থন অব্যাহত রেখেছেন’ রিপোর্টে বলা হয়।
বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, মুডির সর্বশেষ রেটিং বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতের জন্য একটি ইতিবাচক লক্ষণ। বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাত সম্পর্কে বিশ্বব্যাপী আস্থার ক্ষয় হয়েছে। তবে সর্বশেষ দৃষ্টিভঙ্গি এটিকে প্রতিরোধ করবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ঋণ কর্মসূচির সাথে সামঞ্জস্য রেখে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ব্যাংকিং খাতে বেশ কয়েকটি সংস্কার পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করেছে। সংস্কারগুলি নেওয়ার পর এক বছর হয়ে গেছে এবং কিছু উন্নতি ইতিমধ্যে দৃশ্যমান হয়েছে। তিনি বলেন, তারা আরও অগ্রগতি আশা করছে। মুডির সর্বশেষ দৃষ্টিভঙ্গি সংস্কারের প্রতিফলন হতে পারে।
গত বছরের মার্চে যখন বাংলাদেশ আইএমএফ ঋণ কর্মসূচির জন্য গিয়েছিল তখন মুডিসের রেটিং স্থিতিশীল থেকে নেতিবাচক পর্যায়ে নামিয়ে এনেছিল।
মুডিস তার সাম্প্রতিক দৃষ্টিভঙ্গিতে উল্লেখ করেছে,অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি মন্থর হয়ে যাওয়া এবং মুদ্রাস্ফীতি বৃদ্ধির কারণে অর্থনীতির পরিচালন পরিবেশের অবনতি ঘটবে।
বাংলাদেশের প্রকৃত জিডিপি প্রবৃদ্ধি প্রায় ৬ দশমিক ৫ শতাংশ ছিল। ২০২৪ সালের জুনে সমাপ্ত অর্থবছরে ৬ শতাংশ এবং ২০২৫ অর্থবছরে ৬ দশমিক ৩ শতাংশে ধীর হবে বলে ধারণা করছে মুডিস।
মুডিস জানান, বাহ্যিক চাহিদার দুর্বলতা এবং ক্রমাগত উচ্চ আমদানি মূল্য এবং মুদ্রাস্ফীতির কারণে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে সংযম হবে। ফলে দেশের বাণিজ্য ঘাটতি মাঝারি আকারে প্রসারিত হবে।
ব্যাংকিং সেক্টরে নিয়ে মুডিস বলছে, সম্পদের ঝুঁকি বাড়তে থাকা সত্ত্বেও, ঋণ-ক্ষতির বিধানগুলো বিস্তৃতভাবে স্থির থাকবে কারণ নিয়ন্ত্রক সংস্থা ব্যাংকগুলোকে সক্রিয়ভাবে পুনর্গঠন বা সমস্যা এক্সপোজারগুলো পুনঃনির্ধারণ করতে এবং ঋণগুলোকে পারফরম্যান্স হিসাবে শ্রেণীবদ্ধ করে চালিয়ে যাচ্ছে৷ এটি ব্যাংকের মূলধন স্থিতিশীল হওয়ার পূর্বাভাস দেয়।
মুডিস ইনভেস্টরস সার্ভিসেসর আশা বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোর অভ্যন্তরীণ মূলধন উৎপাদন মূলধন খরচের সাথে তাল মিলিয়ে চলবে। তবে, ব্যাংকগুলোর বর্তমান মূলধনের মাত্রা পরিমিত থাকবে। তবে তুলনামূলকভাবে দুর্বল মূলধন বাংলাদেশী ব্যাংকগুলোকে বড় এবং অপ্রত্যাশিত ঋণ ক্ষতির বিরুদ্ধে সীমিত বাফার দেবে। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলো উচ্চ স্তরের অকার্যকর ঋণ এবং সরকারী মূলধনের অনুপস্থিতির কারণে তাদের দুর্বল উপার্জন ক্ষমতার কারণে পুঁজিবদ্ধ থাকবে।
মুডিস বলেছে, ব্যাংকগুলোর তহবিল এবং তারল্য স্থিতিশীল হবে কারণ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আমদানি সীমাবদ্ধ করার পদক্ষেপ এবং ঋণপত্র খোলার ফলে বৈদেশিক মুদ্রার বহিঃপ্রবাহ কমাতে সাহায্য করেছে৷ রেমিট্যান্সের জন্য সরকার এবং ব্যাংকগুলোর প্রদত্ত প্রণোদনা বৈদেশিক মুদ্রার প্রবাহ বৃদ্ধিতে সাহায্য করবে কিন্তু তাদের কার্যকারিতা সীমিত থাকবে।
বাংলাদেশী ব্যাংকগুলো বৈদেশিক মুদ্রার তারল্যের ক্ষেত্রে স্বয়ংসম্পূর্ণ হলেও দেশের ক্রমহ্রাসমান বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ তাদের জন্য ঝুঁকি তৈরি করবে। কারণ প্রয়োজনের সময় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মাধ্যমে ডলারে তাদের প্রবেশাধিকার সীমিত হবে বলেও জানানো হয় মুডিসের প্রতিবেদনে।
সরকার ব্যাংকগুলোকে সমর্থন করবে বলে মুডিস আশা ব্যক্ত করেছে। বিশেষ করে বৃহত্তরগুলো, যখন প্রয়োজন হয় তখন নিয়ন্ত্রক সহনশীলতা এবং তারল্য ব্যবস্থার মাধ্যমে।
কাঠামোগত দুর্বলতা, শিথিল প্রবিধান এবং দুর্বল কর্পোরেট গভর্নেন্স, সম্পদের ঝুঁকি তৈরি করবে। ফলস্বরূপ, স্ট্রেসড লোন, যার মধ্যে অপারফর্মিং লোনের পাশাপাশি পরিবর্তিত অর্থপ্রদানের শর্তাবলীসহ লোনগুলোও উচ্চতর থাকবে বলে জানানো হয়।
জাহিদ হোসেন বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক স্মার্ট সুদের হার ব্যবস্থা চালুসহ কিছু নীতিগত কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। এছাড়া ডলারের অবস্থারও কিছুটা উন্নতি হয়েছে। এটি মুডিসের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনে সহায়ক হতে পারে।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
অর্থনীতি সমিতির বার্ষিক সম্মেলন শুরু ১৭ মে
বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির ২২তম দ্বিবার্ষিক সম্মেলন আগামীকাল শুক্রবার শুরু হচ্ছে। দুই দিনব্যাপী এই সম্মেলনের মূল প্রতিপাদ্য হচ্ছে- ‘পরিবর্তিত বিশ্ব অর্থনীতি ও বাংলাদেশ’। সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রাজধানীর রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। উদ্বোধনী অধিবেশনে সভাপতিত্ব করবেন সমিতির সভাপতি আবুল বারকাত। এতে আরও উপস্থিত থাকবেন সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক জামালউদ্দিন আহমেদ ও অর্থনীতি সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. আইনুল ইসলাম।
অর্থনীতি সমিতি জানায়, দুই দিনের এ সম্মেলনে ৯টি কর্ম-অধিবেশনে ১৭০ গবেষকের ১০০টি প্রবন্ধ উপস্থাপিত হবে। এ ছাড়া সম্মেলনের শেষ দিনে শনিবার সমিতির সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হবে। একই দিনে সমিতির নতুন কার্যনির্বাহী কমিটির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
সম্মেলনের প্রথম দিনে ছয়টি কর্ম–অধিবেশন অনুষ্ঠিত হবে। অধিবেশনের বিষয়—বঙ্গবন্ধুর উন্নয়ন দর্শন, টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও স্মার্ট বাংলাদেশ; রাজনৈতিক অর্থনীতি, মানব উন্নয়ন ও বৈষম্য; বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, প্রাকৃতিক সম্পদ, অবকাঠামো উন্নয়ন ও মেগা প্রকল্প; ব্যাংকিং, ঋণ ব্যবস্থাপনা, মুদ্রানীতি, রিজার্ভ, মুদ্রা অবমূল্যায়ন, বৈদেশিক মুদ্রা, রেমিট্যান্স ও ফিনটেক-আর্থিক প্রযুক্তি; কৃষি ও খাদ্যনিরাপত্তা এবং পরিবেশ অর্থনীতি ও জলবায়ু পরিবর্তন। এসব অধিবেশনে ৬২টি প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হবে।
কর্ম–অধিবেশনগুলোয় সভাপতিত্ব করবেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন, পিকেএসএফের সাবেক চেয়ারম্যান কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ, অর্থনীতি সমিতির সভাপতি আবুল বারকাত, সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান, কৃষি অর্থনীতিবিদ এম এ সাত্তার মণ্ডল ও অর্থনীতিবিদ এম আসাদুজ্জামান।
এমআই
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
ব্যাংকঋণের সুদহার ১৪ শতাংশের বেশি হবে না: গভর্নর
চলতি অর্থবছরের প্রথম মুদ্রানীতিতে সুদহারের সীমা তুলে স্মার্ট পদ্ধতিতে নির্ণয়ের সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে নিয়মিতই বেড়ে চলেছে ব্যাংকঋণের সুদহার। টানা বেড়ে চলা ব্যাংকের সুদহারে এক প্রকার অস্বস্তিতে ফেলেছে দেশের ব্যবসায়ীদের। তবে ব্যবসায়ী নেতাদের আশ্বস্ত করে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার বলেছেন, ব্যাংক ঋণের সুদ ১৪ শতাংশের বেশি হবে না।
বৃহস্পতিবার (১৬ মে) ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (এফবিসিসিআই) নেতারা এক বৈঠকে সুদহার নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর এ আশ্বাস দেন।
এসময় এফবিসিসিআইর সাবেক সভাপতি জসিম উদ্দিন, বিজিএমইএ সভাপতি এস এম মান্নান কচি, বিটিএমএ সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন, বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম এবংপ্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আহসান খান চৌধুরীসহ শীর্ষ ব্যবসায়ীরা উপস্থিত ছিলেন।
এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, ডলারের দাম হঠাৎ করেই ৭ টাকা বেড়ে যাওয়ার ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ব্যবসায়ীরা। আমরা গভর্নরকে বলেছি এটি যেন ১১৭ টাকায় থাকে। তিনি আমাদের এক টাকা কম অথবা বেশির মধ্যে রাখার কথা বলেছেন। ডলার নিয়ে এখনো সমস্যা আছে। আমরা এলসি করার সময়ও একই রেট থাকার কথা বলেছি। গভর্নর আমাদের বলেছেন ডলার সংকট রয়েছে, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে সংকট পুরোপুরি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে।
সুদহার বিষয়ে মাহবুবুল আলম বলেন, ডলারের মতো সুদহার বাজারের ওপরে ছেড়ে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এখন যে সুদের হার আছে তাতে ১৪ শতাংশের ওপরে উঠবে না আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ এর মধ্যেই আটকে দেবে সুদহার। তবে ব্যাংকগুলোর ঋণ বিতরণে খরচ ৬ থেকে ৮ শতাংশ হলে সুদের হার ১২ শতাংশের ওপরে যাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না।
এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, একক গ্রাহক ঋণসীমা হঠাৎ বেড়েছে ডলার রেটের কারণে। ডলারের দাম একবারে বেশি হওয়ায় ঋণও বেড়েছে। ডলারের দাম একসঙ্গে ৭ টাকা বাড়ার কারণে যে পরিমাণ ঋণ বেড়েছে সে পরিমাণ টাকার দীর্ঘমেয়াদি ঋণের আবেদন করেছেন ব্যবসায়ীরা। এখানে বিশেষ বিবেচনায় ছাড় দেওয়ার কথা জানিয়েছেন গভর্নর।
এর আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংক স্মার্ট (ট্রেজারি বিলের ছয় মাসের চলমান গড় হার) রেফারেন্স রেট ব্যবস্থা থেকে বেরিয়ে বাজারভিত্তিক সুদহারে ফিরে আসার ইঙ্গিত দিয়েছিল। গত ৫ মে রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর বলেন, আমি মনে করি, আমরা বাজারভিত্তিক সুদহারের খুব কাছাকাছি। আশা করছি খুব শীঘ্রই আমরা একটি সম্পূর্ণ বাজারভিত্তিক সুদহার ব্যবস্থায় চলে যাব।
বাংলাদেশ ব্যাংক ৮ মে নীতি সুদহার ৫০ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়ে সাড়ে ৮ শতাংশ করেছে। মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল এ ধরনের হার নির্ধারণের পরামর্শ দিয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশকে আইএমএফ-এর ৪.৭ বিলিয়ন ডলার ঋণ দেওয়ার অন্যতম শর্ত এটি।
এমআই
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
চট্টগ্রামের বে টার্মিনালে ১০০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করলো আবুধাবি পোর্টস
চট্টগ্রাম বন্দরের বে টার্মিনাল প্রকল্পের অধীন মাল্টিপারপাস টার্মিনাল নির্মাণে ১০০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করছে আবুধাবি পোর্টস গ্রুপ (এডি পোর্টস)। বৃহস্পতিবার (১৬ মে) রাজধানীর হোটেল ওয়েস্টিনে এডি পোর্টস, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ (সিপিএ), নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় এবং এডি পোর্টসের বাংলাদেশ এজেন্ট সাইফ পাওয়ারটেকের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে এ বিষয়ে একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষর করা হয়েছে।
জানা যায়, টার্মিনালটি নির্মিত হলে চট্টগ্রাম বন্দর বছরে ১০ লাখ টিইইউ (টোয়েন্টি-ফুট ইকুইভ্যালেন্ট ইউনিট) কন্টেইনার এবং ৭০ লাখ মেট্রিক টন কার্গো হ্যান্ডলিং করতে পারবে। এতে দেশের আমদানি ও রপ্তানি দক্ষতা বৃদ্ধির পাশাপাশি পরিবহন খরচ এবং সময় কমে আসবে।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ সোহেল এর আগে বলেছিলেন, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ টার্মিনালের অর্থায়নের জন্য এডি পোর্টসের প্রাথমিক প্রস্তাব গ্রহণ করেছে। তবে নন-বাইন্ডিং সমঝোতার সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামীর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
বর্তমান চট্টগ্রাম বন্দর থেকে প্রায় ছয় কিলোমিটার দূরে পতেঙ্গা হালিশহর উপকূল বরাবর আড়াই হাজার একর জমিতে বে টার্মিনালটি নির্মাণ করা হবে। প্রকল্পের অধীনে মোট ৪টি টার্মিনাল নির্মিত হবে। এর মধ্যে আবুধাবি পোর্ট গ্রুপের বিনিয়োগ সহায়তায় মাল্টিপারপাস টার্মিনাল নির্মাণ করবে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ।
এছাড়া দেড় বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগে পিএসএ ইন্টারন্যাশনাল প্রাইভেট লিমিটেড (পূর্বের পোর্ট অব সিঙ্গাপুর অথোরিটি) এবং ডিপি ওয়ার্ল্ড (দুবাইভিত্তিক একটি আমিরাতি বহুজাতিক লজিস্টিক কোম্পানি) উভয়ে দেড় বিলিয়ন ডলার করে বিনিয়োগ করে দুটি কন্টেইনার টার্মিনাল করবে। লিকুইড কার্গো টার্মিনাল নির্মাণে সাড়ে তিন বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে ইস্ট কোস্ট গ্রুপ ও তাদের বিদেশি সহযোগী প্রতিষ্ঠান।
এছাড়া বে টার্মিনালের চ্যানেল তৈরিতে বিনিয়োগ করা হবে ৫০০ মিলিয়ন ডলার। ব্রেক ওয়াটার (ঢেউ নিরোধক বাধ), ট্রাক টার্মিনালসহ বিভিন্ন উন্নয়ন কাজে বিনিয়োগ হবে প্রায় ১০০০ কোটি ডলার।
চট্টগ্রাম বন্দরের তথ্য অনুযায়ী, বে টার্মিনাল প্রকল্পের মাল্টিপারপাস টার্মিনাল এবং দুটি কন্টেইনার টার্মিনালে বার্থের দৈর্ঘ্য তিন হাজার ৯৫০ মিটার। এর মধ্যে মাল্টিপারপাস টার্মিনালে বার্থের দৈর্ঘ্য দেড় হাজার মিটার। মাল্টি পারপাস টার্মিনালের মোট বার্থসংখ্যা ৫টি। টার্মিনালে প্যানামেক্স ক্লাসের কন্টেইনার জাহাজ, বাল্ক ক্যারিয়া, রো রো শিপ ইত্যাদি জাহাজ ভিড়তে পারবে। দুটি কন্টেইনার টার্মিনালের প্রতিটির বার্থ এরিয়া হবে এক হাজার ২২৫ মিটার করে। কন্টেইনার টার্মিনালে বার্থের সংখ্যা ৪টি করে মোট ৮টি।
এ বিষয়ে এডি পোর্টস গ্রুপের স্থানীয় এজেন্ট সাইফ পাওয়ারটেকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তরফদার রুহুল আমিন জানান, চট্টগ্রাম বন্দরের সঙ্গে চুক্তি করার ক্ষেত্রে সকল কমপ্লায়েন্স মেনেছে এডি পোর্টস গ্রুপ।
বাংলাদেশ ফ্রোইট ফরোয়ার্ডার অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট খায়রুল আলম সুজন বলেন, বে টার্মিনাল প্রকল্প আমাদের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা। সেটি বাস্তবায়ন হতে চলেছে; এটি নিঃসন্দেহে ইতিবাচক। টার্মিনালটির কার্যক্রম শুরু হলে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে গতি আসবে, বড় জাহাজ ভিড়তে পারবে। এতে সময় ও ব্যয় কমে আসবে।
তিনি আরও বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে জাহাজ ভেড়ানোর ক্ষেত্রে জোয়ার-ভাটার ওপর নির্ভর করতে হবেনা। টার্মিনালটিতে ছয় হাজার কন্টেইনার বহনক্ষমতাসম্পন্ন জাহাজ পরিচালনা করা সম্ভব হবে। বর্তমান বন্দরের জেটিতে প্রায় দুই হাজার কন্টেইনার ধারণক্ষমতার জাহাজ ঢুকতে পারে।
উল্লেখ্য, বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরে ১০ মিটার গভীরতা ও ২০০ মিটার দৈর্ঘ্যের বড় জাহাজ প্রবেশ করতে পারে না। বে টার্মিনালে ভিড়তে পারবে ১২ মিটার গভীরতা ও ২৮০ মিটার পর্যন্ত দৈর্ঘ্যের জাহাজ।
এমআই
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
২১ মে ব্যাংক বন্ধ থাকবে যেসব এলাকায়
আসন্ন ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপের দেশের ১৫৭টি উপজেলা পরিষদের সাধারণ নির্বাচন উপলক্ষে সংশ্লিষ্ট এলাকায় সব ব্যাংক মঙ্গলবার (২১ মে) বন্ধ থাকবে।
বৃহস্পতিবার (১৬ মে) বাংলাদেশ ব্যাংকের ডিপার্টমেন্ট অব অফসাইট সুপারভিশন (ডিওএস) এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে।
এতে বলা হয়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ১৫ মে তারিখের প্রজ্ঞাপন মোতাবেক আগামী ২১ মে রংপুর বিভাগের ২১টি, রাজশাহী বিভাগের ১৯টি, খুলনা বিভাগের ২৫টি, বরিশাল বিভাগের ১৪টি, ঢাকা বিভাগের ৩০টি, ময়মনসিংহ বিভাগের ১১টি, সিলেট বিভাগের ১১টি ও চট্টগ্রাম বিভাগের ২৬টি উপজেলায় পরিষদের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
নির্বাচন উপলক্ষে ভোটের দিন সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকাগুলোতে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।
এ পরিস্থিতিতে নির্বাচন উপলক্ষে ভোটের দিন সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকায় অবস্থিত তফসিলি ব্যাংকগুলোর আঞ্চলিক কার্যালয়সহ সব শাখা বা উপশাখা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
এ ছাড়া এ-সংক্রান্ত একটি নির্দেশনা জারি করে দেশে কার্যত সব তফসিলি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন বাজেট অনুমোদন
আগামী অর্থবছরের (২০২৪-২৫) জন্য দুই লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন বাজেট অনুমোদন করেছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ (এনইসি)। বৃহস্পতিবার (১৬ মে) রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে এনইসির সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন এনইসি চেয়ারপারসন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এর আগে, গত ৭ মে পরিকল্পনা কমিশনের বর্ধিত সভায় বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) খসড়া চূড়ান্ত করা হয়। সভা শেষে পরিকল্পনা বিভাগের সিনিয়র সচিব সত্যজিৎ কর্মকার বিস্তারিত জানান।
তিনি বলেন, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে জন্য দুই লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) অনুমোদন দিয়েছে এনইসি। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে এক লাখ ৬৫ হাজার কোটি এবং বৈদেশিক ঋণ থেকে এক লাখ কোটি টাকা ব্যয়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
সিনিয়র সচিব বলেন, আগামী অর্থবছরের জন্য এডিপিতে সরকারি ও বৈদেশিক সহায়তা মিলে বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে দুই লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা। এর বাইরেও স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোর নিজস্ব অর্থায়ন আছে ১৩ হাজার ২৮৬ কোটি ১৯ লাখ টাকা। সব মিলিয়ে ধরলে নতুন এডিপির আকার দাঁড়াবে দুই লাখ ৭৮ হাজার ২৮৬ কোটি ১৯ লাখ টাকা।
কাফি