বীমা
স্বদেশ লাইফ ইন্স্যুরেন্সের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ, হস্তক্ষেপে আইডিআরএ চিঠি
বেসরকারি জীবন বীমা প্রতিষ্ঠান স্বদেশ লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানী লিমিটেডের বিরুদ্ধে দুর্নীতি-অব্যস্থাপনা ও বিমা আইন লঙ্ঘনের গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। প্রতিষ্ঠানটির গ্রাহকের অর্থ আত্মসাৎ ও বিভিন্ন অনিয়মের জন্য সাবেক মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইখতিয়ার উদ্দিন শাহীন পদ হারানোর পরেও বিভিন্ন কৌশলে তিনি এখনো ভিন্ন ভিন্ন পদ-পদবী ব্যবহার করে কোম্পানীর সাথে সম্পৃক্ত রয়েছেন। প্রতিষ্ঠানটিতে ২০২১ সাল পরবর্তী ২০২৫ সাল পর্যন্ত কোম্পানিতে কোন প্রকার অভ্যন্তরীন অডিট হয়নি। এমনকি এজিএম, ইজিএম হয়নি। ২০১৯ সাল হতে এখন পর্যন্ত কোন প্রকার সরকারী ভ্যাট, ট্যাক্স পরিশোধ করা হয়নি। এছাড়াও, ২০২৩ সালের ১৭ আগষ্ট হতে মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তার পদটি শূণ্য হওয়ার পর থেকে কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা থাকা স্বত্ত্বেও অদ্যবধি কোন স্থায়ী মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়োগ করা হচ্ছে না। বর্তমানে মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে কোম্পানীর দায়েরকৃত চুরির চলমান মামলার আসামী আব্দুল জব্বার কাউসারকে। এমতাবস্থায় হাজার হাজার গ্রাহকের স্বার্থ সুরক্ষা ও সঞ্চিত আমানত ফেরতের বিষয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
সোমবার (০৮ ডিসেম্বর) প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ তুলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) চেয়ারম্যান বারবর চিঠি দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান কার্যালয়ের অবলিখন ও দাবী বিভাগের ইনচার্জ ও এসভিপি মো. আলমগীর শেখ। চিঠির অনুলিপি আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, দুর্নীতি দমন কমিশন, কর অঞ্চল-৫ এর কমিশনার, আইডিআরএ প্রশাসন আইন ও জীবন বিমা পরিচালক, ইন্স্যুরেন্স এসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান এবং স্বদেশ লাইফের সকল পরিচালক ও ভারপ্রাপ্ত মূখ্য নির্বাহীকে পাঠানো হয়েছে।
প্রতিষ্ঠানের ইনচার্জের অভিযোগ, সাবেক মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইখতিয়ার উদ্দিন শাহীন কোম্পানির গ্রাহকের প্রিমিয়ামের ৬০ লাখ ৭০ হাজার ৭১৭ টাকা ও নিয়ম বর্হির্ভূত ভাবে গ্রহণকৃত ইনসেনটিভ বোনাস বাবদ ৪১ লাখ ৫৬ হাজার ৫০৫ টাকা সহ সর্বমোট ১ কোটি ০২ লাখ ২৭ হাজার ২২২ টাকা আত্মসাৎ করেন। এই টাকা পরিশোধের জন্য বা কোম্পানী হিসাবে জমা করার জন্য বিগত ২০২৩ সালের ১৯ নভেম্বর পত্র জারী করা হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত এই টাকা কোম্পানিতে জমা করা হয়নি। যদিও গ্রাহকের প্রিমিয়ামের টাকা তার ব্যক্তিগত ব্যাংক হিসাবে জমা করার বিষয়টি তিনি নন জুডিসিয়াল স্ট্যাম্পে লিখিত ভাবে স্বীকার করেছেন।
অভিযোগ সূত্রে, সাবেক মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইখতিয়ার উদ্দিন শাহীন বীমা আইন লঙ্ঘন ও বিভিন্ন অনিয়মের জন্য গত ২০২৩ সালের ১৭ আগষ্ট তার পদ থেকে অব্যাহতি দিয়ে আইন উপসচিব ও পরিচালক মোহা. আব্দুল মজিদ স্বাক্ষরিক পত্র জারি করা হয়। এতে বলা হয়, তিনি স্বদেশ লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানীর মূখ্য নির্বাহী হিসেবে কাজ করতে পারবেন না। প্রত্যক্ষ্য বা পরোক্ষ্য ভাবে তিনি স্বদেশ লাইফ ইন্স্যুরেন্সের ব্যবস্থাপনার সাথে সম্পৃক্ত থাকবেন না বা এতে অংশ গ্রহণ করবেন না। তাছাড়া ও গত ২০২৪ সালের ১৩ জুন তার বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়। যার প্রেক্ষিত দুর্নীতি দমন কমিশনে একটি মামলা দায়ের করা হইয়াছে, যা তদন্তাধীন রয়েছে। এ নির্দেশনা থাকার পরও তিনি বিভিন্ন সময় ভিন্ন ভিন্ন পদ-পদবী ব্যবহার করে কোম্পানীর সাথে সম্পৃক্ত রয়েছেন। সর্বশেষ কোম্পানীর ৪৯তম বোর্ড সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক তিনি বর্তমানে আর.এস.আর.এম কোম্পানি নির্বাহী পরিচালক হিসেবে স্বর্দেশ লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির প্রতিনিধিত্ব করছেন। যা সম্পূর্ণ অন্যায়। তার ছত্রছায়াই কোম্পানিতে বিভিন্ন প্রকার আর্থিক অনিয়ম হচ্ছে।
চিঠিতে এই কর্মকর্তা জানান, কোম্পানি পরিশোধিত মূলধন ও মূলধন হতে অর্জিত সুদও খরচ করা হয়েছে। কোম্পানির স্থায়ী আমানতের বিপরীতে ১৪ কোটি ৩০ লাখ টাকা ঋন গ্রহণ করেছে যা এখন পর্যন্ত পরিশোধ করা হয়নি। এবিষয়ে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রন কর্তৃপক্ষ কোম্পানির চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানসহ ১২ জন পরিচালককে অপসারণ করে। কর্তৃপক্ষের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কোম্পানি হাইকোর্টে রীট পিটিশন ২৩৭৪/২০২৪ দায়ের করেন। হাইকোর্ট ০৬ মাসের জন্য কর্তৃপক্ষের আদেশ স্থগিত করেন। কিন্তু বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রন কর্তৃপক্ষের অবহেলা কিংবা তদবীরের অভাবে এখনও পর্যন্ত মামলাটি নিষ্পত্তি হয়নি।
বিভিন্ন তথ্য ও উপাত্ত থেকে জানা গেছে, কোম্পানিটি ২০১৪ সাল হতে ব্যবসা শুরু করেন। ২০১৪ সাল হতে ২০২১ সাল পর্যন্ত সময় কালে যথাক্রমে ২১৯ শতাংশ, ১৪৯ শতাংশ, ১২৬ শতাংশ, ৯৪ শতাংশ, ১১৫ শতাংশ, ৪১ শতাংশ, ৪৫ শতাংশ অনুমোদিত সীমার অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা ব্যয় করেছেন। তাছাড়া, ২০২১ সাল পরবর্তী ২০২৫ সাল পর্যন্ত কোম্পানিতে কোন প্রকার অভ্যন্তরীন অডিট হয়নি। এমনকি এজিএম, ইজিএম হয়নি। তাছাড়া দীর্ঘদিন যাবৎ কোম্পানীতে একজন সি.এফ.ও এবং কোম্পানির একজন সচিব নেই। বিভিন্ন সময় ভিন্ন ভিন্ন কর্মকর্তাকে এই দায়িত্ব সাময়িক ভাবে প্রদান করা হয়। এতে করে কোম্পানির কোন প্রকার তথ্য ভান্ডার সঠিক নেই।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, কোম্পানীতে গত ২০২৩ সালের ১৭ আগষ্ট হতে মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তার পদটি শূণ্য হওয়ার পরও থেকে কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা থাকা স্বত্ত্বেও কোন স্থায়ী মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়োগ করছে না। একেক সময় একেক কর্মকর্তাকে চলতি দায়িত্ব দেওয়া হয়। এই পর্যন্ত ০৩ জন মূখ্য নির্বাহী (চলতি ও একজন প্রশাসক সহ মোট ০৪ জন) কর্মকর্তাকে দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে। বর্তমানে আব্দুল জব্বার কাউসার মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) হিসেবে দায়িত্বে আছেন। তার বিরুদ্ধে কোম্পানির দায়েরকৃত চুরির মামলা সি.এম.এম আদালত, ঢাকাতে চলমান। এছাড়াও, কর্মকর্তাদের নামে ব্যাংক একাউন্ট না থাকায় এবং কোম্পানীটি অনলাইন ভিত্তিক না হওয়ায় মাঠ পর্যায় থেকে হেড অফিসের কর্মকর্তাদের বেতন, ভাতা, কমিশন বিল সহ ভাড়া ভাড়া সমস্ত লেনদেন ম্যানুয়াল সিস্টেম হওয়ার কারণে নামে, বে-নামে বিভিন্ন প্রকার বিল ভাউচার সমন্বয় করা হয়। বিভিন্ন প্রকার ইনসেনটিভ সঠিক বণ্টন না করে কিছু কর্মকর্তা নিজেদের স্বার্থে যাকে যতটুকু দিয়ে ম্যানেজ করতে পারে তাকে এই দেওয়া হয়। আবার অনেককে কিছুই দেওয়া হয় না। প্রতিবাদ করিলে চাকুরী থাকবে না বলে ভয় দেখানো হয় এবং সংগঠন বিচ্যুতি ঘটানোর ফলে অনেকে কোন প্রতিবাদ করেন না।
কোম্পানী ২০১৯ সাল হতে অদ্য পর্যন্ত কোন প্রকার সরকারী ভ্যাট, ট্যাক্স পরিশোধ করেন নাই। কোম্পানীতে কর্মরত কর্মকর্তাকে তাদের বেতন হতে কর্তনকৃত ভ্যাট, ট্যাক্স এর বৈতনিক সনদ প্রদান করেননি বলে চিঠিতে জানান এই কর্মকর্তা।
প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ গুলোর বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা চেয়েছে এই কর্মকর্তা। তিনি জানান, কোম্পানি সাবেক এই মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা তার অন্যায় হস্তক্ষেপ ও আর্থিক দুর্নীতি দীর্ঘস্থায়ী করার জন্য কোম্পানির সকল অন্যায় ও দুর্নীতির মূল সহযোগী উন্নয়ন প্রশাসন এইচ আর এডমিন মো. সাজিদ হোসেন ও কোম্পানির সচিব তাকে নিয়ম বহির্ভূত ভাবে পদোন্নতি দিয়ে বর্তমানে তাকে এডিশনাল এমডি হিসেবে পদায়ন করা হয়েছে। আগামী দিনে তাকে মূখ্য নির্বাহী হিসেবে দায়িত্ব প্রদান করে সাবেক মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইফতিয়ার উদ্দিন শাহীন তার অন্যায় কার্যক্রম দীর্ঘায়ু করার লক্ষ্যে পরিকল্পনা করছেন। এমতাবস্থায় কোম্পানীর সুশান প্রতিষ্ঠা ও গ্রহাকের স্বার্থ সুরক্ষায় সাবেক এই কর্মকর্তার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ হস্তক্ষেপ কোম্পানির জন্য এবং কোম্পানির গ্রাহকের জন্য অত্যন্ত ঝুকিপূর্ণ।
এসএম
বীমা
একাধিক গ্রাহকের অভিযোগ, বীমা দাবি আটকে রেখেছে পদ্মা লাইফ
পদ্মা ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেডের বিরুদ্ধে বীমা দাবির টাকা পরিশোধ না করার অভিযোগ করেছেন ১৪ জন গ্রাহক। এদের মধ্যে কেউ একজন, আবার কেউ একাধিক পলিসির আওতায় বীমার টাকা দাবি করেছেন। অভিযোগগুলো পর্যালোচনা করে তালিকা আকারে প্রকাশ করেছে বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)। একই সাথে এসব দাবিগুলো অতিসত্তর নিস্পত্তি করার জন্য নির্দেশ দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি।
সম্প্রতি প্রকাশিত ওই তালিকা অনুযায়ী, মো. মঈন উদ্দিন নামে একজন গ্রাহক ৯০টি পলিসির আওতায় বীমা দাবির অভিযোগ করেছেন। এছাড়া জহুরা খাতুন নামের আরেকজন ২টি পলিসির আওতায় অভিযোগ করেছেন। বাকি ১২ জন গ্রাহক প্রত্যেকে একটি করে পলিসির আওতায় অভিযোগ দায়ের করেছেন।
গ্রাহকরা অভিযোগ করেছেন যে, তাদের মেয়াদ উত্তীর্ণ বীমা দাবির অর্থ দীর্ঘদিন ধরে পরিশোধ করছে না কোম্পানিটি। আইডিআরএর দপ্তরে জমা দেওয়া এসব অভিযোগের ভিত্তিতে বিষয়গুলো তদন্তাধীন রয়েছে বলে জানা গেছে।
উল্লেখ্য, বীমা আইন অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ের মধ্যে মেয়াদ উত্তীর্ণ পলিসির দাবি পরিশোধ না করা গুরুতর অনিয়মের শামিল।
এমকে
বীমা
নন-লাইফ বীমার এজেন্ট কমিশন বাতিল, শিগগিরই প্রজ্ঞাপন
দেশের নন-লাইফ বীমা খাতে এজেন্ট কমিশন বাতিলের বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)। ২০২৫ সালের ১ জানুয়ারি থেকে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হবে।
মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) সংস্থাটির সদর দপ্তরে বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশন (বিআইএ) এবং সকল নন-লাইফ বীমা কোম্পানীর মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তাগনের সমন্বয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। নন-লাইফ বীমা কোম্পানির উপ-পরিচালক মো. সোলায়মান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এ তথ্য জানানো হয়।
সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের নির্দেশনা ও প্রক্রিয়া নির্ধারণ করে শিগগিরই প্রজ্ঞাপন জারি করবে নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ।
সভায় সিদ্ধান্ত হয়, সকল নন-লাইফ বীমা প্রতিষ্ঠানের ব্যক্তি এজেন্ট লাইসেন্স স্থগিত করার জন্য আগামী ৫ ডিসেম্বরের মধ্যে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ বরাবর প্রস্তাবনা প্রেরণ করতে হবে। উক্ত প্রস্তাবনার প্রেক্ষিতে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ হতে নন-লাইফ বীমা খাতে ব্যক্তি এজেন্ট কমিশন শূন্য শতাংশের বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারী করা হবে।
এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারির পরবর্তীতে কোন নন-লাইফ বীমা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক এজেন্ট কমিশনের ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা লংঘন করা হচ্ছে কি না, তা মনিটরিং করা হবে।
এছাড়া সভায় আরও সিদ্ধান্ত হয়, বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের লোকবলের সংকট থাকায় উল্লিখিত মনিটরিংয়ের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স এসোসিয়েশন কর্তৃক কর্তৃপক্ষকে সহযোগিতা করতে হবে। এর প্রেক্ষিতে কর্তৃপক্ষের পাশাপাশি বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স এসোসিয়েশন একটি ভিজিলেন্স টিম গঠন করতে হবে। কোন নন-লাইফ বীমা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক ব্যক্তি এজেন্ট কমিশন ০% শতাংশ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা লংঘন করলে বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স এসোসিয়েশনের ভিজিলেন্স টিম কর্তৃপক্ষকে অবহিত করবে এবং কর্তৃপক্ষ কর্তৃক পরবর্তীতে বিষয়টি যাচাইয়ান্তে বীমা আইন ২০১০ অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এসএম
বীমা
আইডিআরএ’র নীতিগত সিদ্ধান্ত: বন্ধ হচ্ছে এজেন্ট কমিশন
নন-লাইফ বীমা ব্যবসায় এজেন্ট কমিশন বাতিলের বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)। আগামী বছরের ১ জানুয়ারি থেকে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে। একইসঙ্গে ওই তারিখ থেকে নন লাইফ বীমা কোম্পানিসমূহের এজেন্ট লাইসেন্স স্থগিত করা হবে বলে সূত্র জানিয়েছে।
নন-লাইফ বীমা খাতে এজেন্ট কমিশন বন্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিআইএ) আবেদনের প্রেক্ষিতে মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) আইডিআরএর সভাকক্ষে অংশীজনদের নিয়ে অনুষ্ঠিত সভায় এসব সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের নির্দেশনা ও প্রক্রিয়া নির্ধারণ করে আইডিআরএ শিগগিরই একটি প্রজ্ঞাপন জারি করবে। একইসঙ্গে দেশের গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কমিশন বাতিলের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে বিজ্ঞপ্তি দেয়া হবে। এমনকি দেশের বাণিজ্যিক সংগঠনগুলোর নেতাদের সঙ্গেও কমিশন বাতিলের বিষয়টি অবহিত করতে বৈঠকে বসবে আইডিআরএ।
আইডিআরএ জানায়, নন-লাইফ বীমা বাজারে স্বচ্ছতা বৃদ্ধি, ব্যবসায়িক অনিয়ম হ্রাস এবং ক্ষেত্রটিতে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
আলোচনায় অংশ নেয়া ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানায়, এজেন্ট লাইসেন্স স্থগিত হলেও প্রয়োজনে নন লাইফ বীমা কোম্পানিগুলো উন্নয়ন কর্মকর্তা নিয়োগ দিতে পারবে বলে সভায় নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
তবে কেউ কমিশন দিচ্ছে কি না বা অনিয়ম করছে কি না তা পর্যবেক্ষণে আইডিআরএ ও বিআইএ যৌথভাবে দুটি ভিজিল্যান্স টিম গঠন করবে।
এ ছাড়া ব্যাংক কর্মকর্তাদের কমিশন পাওয়া বা কমিশন বাণিজ্যের অভিযোগ বন্ধে বিআইএ সভাপতি ও আইডিআরএ চেয়ারম্যান শিগগিরই বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন।
সভায় বিআইএ’র সভাপতি সাঈদ আহমেদ, সকল নন-লাইফ বীমা কোম্পানির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা অথবা তাদের দায়িত্বশীল প্রতিনিধি, আইডিআরএর সদস্যবৃন্দ এবং ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সভায় উপস্থিত সকল মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা এজেন্ট কমিশন ছাড়া ব্যবসা পরিচালনার প্রতিশ্রুতি প্রদান করেন।
সভা শেষে আইডিআরএ’র অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে দেয়া বার্তায় বলা হয়, “বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিআইএ) আবেদনের প্রেক্ষিতে নন-লাইফ বীমা খাতে এজেন্ট কমিশন বন্ধের বিষয়ে ২৫ নভেম্বর বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) সদর দপ্তরে একটি আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন আইডিআরএ চেয়ারম্যান ড. এম আসলাম আলম।
সভায় বিআইএর সভাপতি সাঈদ আহমেদ, নন-লাইফ বীমা কোম্পানিগুলোর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, আইডিআরএ’র সদস্যবৃন্দ এবং ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বিস্তৃত আলোচনার পর নন-লাইফ বীমা খাতে এজেন্ট কমিশন বাতিলের বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বাস্তবায়নের নির্দেশনা ও প্রক্রিয়া নির্ধারণ করে আইডিআরএ শিগগিরই একটি প্রজ্ঞাপন জারি করবে। সিদ্ধান্তটি আগামী জানুয়ারি থেকে কার্যকর হবে। সভায় উপস্থিত সকল প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এজেন্ট কমিশন ছাড়া ব্যবসা পরিচালনার প্রতিশ্রুতি প্রদান করেন। ”
সম্প্রতি নন-লাইফ বীমা ব্যবসায় এজেন্ট কমিশন ১৫ শতাংশের পরিবর্তে শূন্য শতাংশ নির্ধারণে পদক্ষেপ নিতে আইডিআরএকে চিঠি দেয় বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশন (বিআইএ)। এই প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর ) বিকেল ৪টায় কর্তৃপক্ষের সভাকক্ষে অংশীজনের বৈঠক ডাকে আইডিআরএ।
সোমবার আইডিআরএর উপপরিচালক (নন-লাইফ) মো. সোলায়মান স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত নোটিশে বিআইএ’র নির্বাহী কমিটির নন লাইফ থেকে নির্বাচিত সকল সদস্য ও দেশের সব নন লাইফ বীমা কোম্পানির মুখ্য নির্বাহীদের উপস্থিত থাকার অনুরোধ জানানো হয়।
আইন ও নীতিমালার সংশোধন অপরিহার্য
বিশ্লেষকরা মনে করছেন কমিশন শূন্য করতে হলে বীমা আইন ২০১০ এবং বীমা এজেন্ট (নিয়োগ, নিবন্ধন ও লাইসেন্স) প্রবিধানমালা ২০২১ উভয়ই সংশোধন করতে হবে। কারণ, বিদ্যমান আইনের ৫৮(১) ধারা অনুসারে এজেন্ট, এজেন্ট নিয়োগকারী বা ব্রোকার ছাড়া অন্য কাউকে প্রিমিয়াম সংগ্রহে পারিশ্রমিক দেয়ার সুযোগ নেই। ফলে নন-লাইফ কোম্পানিগুলোয় উন্নয়ন কর্মকর্তাদের প্রিমিয়ামের বিপরীতে আর্থিক সুবিধা দেয়ার বৈধতা নিয়েও প্রশ্ন দেখা দেবে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন আইন ও প্রবিধানমালা হালনাগাদ না করে হঠাৎ কমিশন শূন্য করে দিলে বাজারে বিভ্রান্তি তৈরি হতে পারে এবং ২০২১ সালের সিদ্ধান্তের মতো ব্যবসায়িক বৈষম্যও দেখা দিতে পারে। সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, কমিশন শূন্য শতাংশ করা হলে বাজারে প্রতিযোগিতা, ব্যবসা সংগ্রহ পদ্ধতি এবং বীমা এজেন্টদের ভূমিকা নিয়ে নতুন নীতিমালা তৈরির প্রয়োজন হতে পারে।
এমকে
বীমা
ফারইস্ট ইসলামী লাইফের সিইও পদে কামরুল হাসানের নিয়োগ বাতিল
ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) পদে কামরুল হাসানের নিয়োগ প্রস্তাব বাতিল করেছে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)। আইন অনুযায়ী বীমা কোম্পানির সিইও পদে নিয়োগ পেতে প্রয়োজনীয় অভিজ্ঞতা ও শিক্ষাগত যোগ্যতার প্রমাণ দাখিল করতে ব্যর্থ হওয়ায় তার নিয়োগ নামঞ্জুর করা হয়।
মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) আইডিআরএ’র পরিচালক (লাইফ) ও উপসচিব রকিবুল রহমান খান স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত এক চিঠি ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির চেয়ারম্যানের কাছে প্রেরণ করা হয়।
চিঠিতে বলা হয়, ‘বীমা কোম্পানি (মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়োগ ও অপসারণ) প্রবিধানমালা ২০১২’ (সংশোধিত ২০২৩) এর প্রবিধি ৩(ক) অনুসারে বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রীধারীদের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন হতে সমতাকরণ সার্টিফিকেট দাখিল করার বিধান থাকা সত্ত্বেও প্রস্তাবিত মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তার বিদেশ থেকে অর্জিত স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন হতে সমতাকরণ সার্টিফিকেট এবং স্নাতকোত্তর ডিগ্রির মূল সনদের সত্যায়িত ছায়ালিপি দাখিল করা হয়নি।
এছাড়া তিনি তার জীবন বৃত্তান্তে বিভিন্ন লাইফ বীমা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ছিলেন হিসেবে উল্লেখ করেছেন। কিন্তু তিনি কোনো প্রমাণক দাখিল করেননি এবং তিনি তিনটি লাইফ বীমা প্রতিষ্ঠানে (প্রোটেক্টিভ লাইফ ইনস্যুরেন্স, চার্টার্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স এবং গ্লোবাল লাইফ ইন্স্যুরেন্স) মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত ছিলেন উল্লেখ করলেও কর্ম অভিজ্ঞতার কোনো প্রমাণক দাখিল করা হয়নি।
এছাড়াও, ‘বীমা কোম্পানি (মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়োগ ও অপসারণ) প্রবিধানমালা-২০১২’ (সংশোধিত ২০২৩) এর প্রবিধি ৩(খ) অনুসারে লাইফ বীমা কোম্পানিতে মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তার অব্যবহিত নিম্নপদে ২ (দুই) বছরের কর্ম অভিজ্ঞতা থাকা বাধ্যতামূলক হলেও প্রস্তাবিত মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা ২ (দুই) বছরের কর্ম অভিজ্ঞতার প্রমাণক সংযুক্ত করা হয়নি। প্রস্তাবিত মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা ঋণখেলাপী নন মর্মে বীমা কোম্পানির পর্ষদ চেয়ারম্যান কর্তৃক প্রত্যয়ন পত্র সংযুক্ত করা হয়নি। কর্তৃপক্ষের জারিকৃত চেকলিস্ট মোতাবেক মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়োগের সুপারিশ সম্বলিত এনআরসি কমিটির সভার কার্যবিবরণীর অনুলিপি প্রদান করা হয়নি।
ফলে ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানী লিমিটেডের প্রস্তাবিত মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) কামরুল হাসানের নিয়োগ প্রস্তাব কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নামঞ্জুর করা হলো বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।
এসএম
বীমা
ন্যাশনাল লাইফের চেয়ারম্যান তোফাদল, ভাইস চেয়ারম্যান কাজী মাহমুদা জামান
বিশিষ্ট শিল্পপতি তোফাজ্জল হোসেন ন্যাশনাল লাইফ ইনস্যুরেন্সের চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হয়েছেন। কোম্পানীর অন্যতম পরিচালক কাজী মাহমুদা জামান ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) অনুষ্ঠিত কোম্পানীর পরিচালনা পর্ষদের ২৮৪তম বোর্ড সভায় তাদের নির্বাচিত করা হয়।
চেয়ারম্যান তোফাজ্জল হোসেন ব্যাংকিং ও বীমা সেক্টরের অন্যতম পথিকৃত ব্যক্তিত্ব এবং স্বনামধন্য শিল্প উদ্যোক্তা। ইতোপূর্বে তিনি এনসিসি ব্যাংক লিমিটেড ও ইসলামী ইন্স্যুরেন্স বাংলাদেশ লিমিটেডের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি শতভাগ রপ্তানিমুখী প্রতিষ্ঠান প্রতীক সিরামিকের চেয়ারম্যান এবং গার্মেন্টসসহ বিভিন্ন ব্যবসায় জড়িত। তোফাজ্জল হোসেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ব্যবসা ও সামাজিক সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ত। তিনি বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স এসোসিয়েশনের সাবেক সদস্য এবং বিজিএমইএ-এর ব্যাংকিং এন্ড ফিন্যান্স কমিটির সাবেক চেয়ারম্যান। তিনি ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ এর দাতা সদস্য, আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রামের ট্রাষ্টি বোর্ডের সদস্য। লেখক, গবেষক ও আলোচক হিসেবে সমধিক পরিচিত জনাব তোফাজ্জল হোসেন গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘সেন্টার ফর ষ্ট্রাটেজিক এন্ড পীস স্টাডিজ’ এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। তিনি ফেনী জেলায় জন্মগ্রহণ করেন।
ভাইস চেয়ারম্যান কাজী মাহমুদা জামান কোম্পানীর অন্যতম উদ্যোক্তা পরিচালক ও গার্মেন্টস এবং অটোমোবাইলসহ বিভিন্ন ব্যবসায় জড়িত। তিনি তরঙ্গ কমপ্লেক্স, তাজ চিশতী প্রোপাটিজ এবং কানাডিয়ান সুয়েটারের পরিচালক। তিনি ব্যাংক-বীমা সেক্টরের অন্যতম উদ্যোক্তা ও ন্যাশনাল লাইফের অন্যতম উদ্যোক্তা পরিচালক বিশিষ্ট শিল্পপতি মরহুম কে এম হাবীব জামানের সহধর্মীনী। কাজী মাহমুদা জামান ১৯৮২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাস বিভাগে এম. এ পাশ করেন। পরবর্তীতে তিনি টি এন্ড টি কলেজ ও সিটি কলেজে অধ্যাপনা করেন। তিনি গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জ থানার চৌড়া গ্রামের বিশিষ্ট কাজী পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন।
কাজী মাহমুদা জামান নানাবিধ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সামাজিক ও মানবিক কর্মকান্ডে সক্রিয়ভাবে জড়িত। তিনি দেশের বিভিন্নএলাকার পাশাপাশি নিজ এলাকা গাজীপুরের কালিগঞ্জের মানুষের আর্ত-সামাজিক উন্নয়নে নিবিঢ়ভাবে কাজ করছেন।




