অর্থনীতি
আওয়ামী সরকারের আমলে ডলারের দাম বেড়েছে ৭৯ শতাংশ

আওয়ামী সরকারের আমলে বিগত ১৫ বছরে মূল্যস্ফীতির ভয়াবহ চাপে টাকার মানে ধস নেমেছিল। মার্কিন ডলারের বাজার হয়েছিল লাগামহীন। মুদ্রাবাজার, পুঁজিবাজার ও ডলার বাজার (বৈদেশিক মুদ্রা)- অর্থনীতির এই তিন খাত প্রায় ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। ৬৭ টাকার ডলার ১২০ টাকা পর্যন্ত পৌঁছায়। সার্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য সর্বনাশ ডেকে আনে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, আওয়ামী লীগের ১৫ বছরের শাসনামলে দেশ থেকে কোটি কোটি ডলার পাচার ও ব্যাংক ব্যবস্থায় নৈরাজ্যকর পরিস্থিতিরি সৃষ্টি হয়। মুদ্রাবাজারে ভয়াবহ দুর্নীতির কারণে ডজনের বেশি ব্যাংক দেউলিয়া হওয়ার উপক্রম হয়। কয়েকটি ব্যাংক মার্জার করতে বাধ্য হয়। শেষ দিকে এ ব্যাংকগুলোতে নগদ টাকার কোনো সরবরাহ ছিল না। ফলে বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয় সব ধরনের লেনদেন। পুঁজিবাজার থেকেও হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট করেন হাসিনা সরকারের গুরুত্বপূর্ণ লোকেরা। যার পুরোটা বিদেশে পাচার হয়ে গেছে। ডলারসংকটের কারণে এলসি বন্ধ করতে হয়েছে। ফলে দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাদের ব্যবসা কার্যক্রম চালাতে হিমশিম খেতে হয়েছে।
জানা গেছে, ২০০৮ সালের অক্টোবরে দেশে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ১৮ হাজার কোটি টাকা। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন হওয়ার পর ওই বছরের অক্টোবরে খেলাপি ঋণের পরিমাণ প্রায় ২ হাজার টাকা বৃদ্ধি পায়। এই বৃদ্ধির সূচক আর থামেনি। প্রতিবছর খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়েছে। বেড়েছে ব্যাংক লুটপাট। ভুয়া কাগজপত্র দিয়ে ঋণ নিয়ে ব্যাংক দেউলিয়া করে দেওয়া হয়েছে। অনিয়ম-জালিয়াতি এমন পর্যায়ে পৌঁছায় যে, লুটপাটে অংশীদারদের হাতে ব্যাংকব্যবস্থা ছেড়ে দেওয়া হয়। তারা নতুন ব্যাংক অনুমোদন দিয়ে ব্যাংক থেকে টাকা লুট করেছে। এর চাপ পড়ে দেশের পুরো অর্থনীতিতে। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো লুটপাটের কেন্দ্রে পরিণত করা হয়। ব্যাংকের টাকা লুট করে ডলারে রূপান্তর করে কোটি কোটি ডলার পাচার করে দেওয়া হয়।
জানা গেছে, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার সময় প্রতি ডলারের দাম ছিল ৬৭ টাকা। এই দর বেড়ে ২০১১ সাল পর্যন্ত ডলারের বিনিময় হার ওঠানামা করে ৬৯ থেকে ৭০ টাকার মধ্যে। ২০১২ সাল থেকে ডলারের দাম এক লাফে ৭৬ টাকায় পৌঁছায়। ২০১৪ সালে হাসিনা সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদে ডলার বাজার অস্থিতিশীল হয়ে ওঠে। ব্যাংক থেকে নানা জালিয়াতি করে অবাধে ডলার পাচার শুরু হয়। সরকার বিদেশি ঋণ এনে এই ঘাটতি মেটানোর চেষ্টা করে।
টাকার অবমূল্যায়ন করা হয় কয়েক দফা। এতে পরিস্থিতির কোনো উন্নতি তো হয়নি, বরং তা অর্থ পাচারকারীদের আরও সহায়তা করে। বাড়তে থাকে ডলারের সংকট, সেই সঙ্গে ডলারের দর। ২০১৭ সালের অক্টোবরে ডলারের দর ছিল ৮০ টাকা, ২০২০ সালে ৮৩ টাকা। ২০২১ সালে ৮৫ টাকা। এর পর ২০২২ সালে হাইজাম্প দিয়ে ডলারের দর পৌঁছায় ১০০ টাকা। পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে ওঠে। ডলারের চরম সংকট দেখা যায়। ২০২৩ সালে খোলাবাজারে ডলার দর ১৩০ টাকা পর্যন্ত উঠে যায়। এর পরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংকোচন নীতির কারণে ডলারের দর কিছুটা কমে আসে। বাংলাদেশ ব্যাংক ক্রলিং পদ্ধতি চালু করলে ডলারের দর ১২০ টাকায় ওঠানামা করে।
২০১৬ সালে এসে ব্যাংক খাতে বড় কয়েকটি জালিয়াতির ঘটনা প্রকাশিত হয়। সোনালী ব্যাংকের হলমার্ক কেলেঙ্কারি, বেসিক ব্যাংকের কেলেঙ্কারি। দুই ঘটনায় প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা লোপাটের ঘটনা সামনে আসে। এতে ব্যাংক খাতে চরম নৈরাজ্য সৃষ্টি হয়। এই জালিয়াতির পুরো টাকা ডলারে রূপান্তর করে দুবাই, সিঙ্গাপুর পাচার করার বিষয়টি প্রকাশ পায়। দেশের মূল্যস্ফীতির ভয়াবহ সংকটে পড়ে দেশের অর্থনীতি। সরকার এই নৈরাজ্য ঠেকানোর পরিবর্তে আরও উৎসাহিত করার পদক্ষেপ নেয়। ব্যাংকের নেতৃত্বে এনে বসানো হয় হাজার কোটি টাকা লুটপাটের সঙ্গে জড়িতদের। যাদের বিরুদ্ধে বড় বড় দুর্নীতির অভিযোগ ছিল তাদের হাতে ব্যাংকের ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব তুলে দেওয়া হয়। রাষ্ট্রীয় মালিকাধীন ব্যাংকগুলোর হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট করা হয়। মিথ্যা ঘোষণায় এলসি করে রপ্তানি দেখানো হলেও সেই মূল্য দেশে না এনে বিদেশে পাচার করা হয়। এতে টাকার মান কমতে কমতে গিয়ে একেবারে তলানিতে ঠেকে।
টাকার মান কমতে থাকে ধারাবাহিকভাবে। ২০১০ সালে জানুয়ারি মাসে দেশে সোনার (২২ ক্যারট) ভরি ছিল ৩২ হাজার ৮৯২ টাকা। ২০২৪ সালে জানুয়ারিতে এসে ভরি দাঁড়ায় ১ লাখ ১২ হাজার ৪৪০ টাকা। অর্থাৎ ১৫ বছরে টাকার অবমূল্যায়ন সাধারণ মানুষের কষ্ট বাড়িয়েছে ভয়াবহভাবে। ২০১০ সালে যে মোটা চালের কেজি ছিল ২৪ থেকে ২৬ টাকা। এখন সেটা ৬০ টাকার ওপর। ২০১০ সালে গরুর মাংসের কেজি ছিল ৩০০ থেকে ৩২০ টাকা। ২০২৩ সালে গরুর মাংসের কেজি হয় ৮০০ টাকার ওপর। বিগত সরকার নতুন টাকা ছাপিয়ে ঋণ নিয়ে উন্নয়ন বাজেটে ব্যবহার করে দেশের অর্থনীতিকে ভয়াবহ ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দেয়।
ক্রমবর্ধমান ব্যয় ও দুর্বল চাহিদার কারণে দেশের প্রায় ৭০ শতাংশ ব্যবসা প্রভাবিত হয়েছে। দেশের ব্যবসা পরিস্থিতি নিয়ে ২৫টিরও বেশি খাতের বহুজাতিক, স্থানীয় বড় কোম্পানি, স্টার্টআপ ও এসএমই খাতের ১৬৭টি কোম্পানি নিয়ে একটি জরিপে বলা হয়েছে, টাকার বড় ধরনের অবমূল্যায়ন ছাড়াও আর্থিক অনিয়ম, উচ্চখেলাপি, নগদ ঘাটতি ও সঞ্চয় হ্রাসের ফলে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে বিভিন্ন ধরনের আর্থিক চ্যালেঞ্জ দেখা দিয়েছে। ক্রমবর্ধমান ব্যয় এবং কর্মক্ষম নগদ প্রবাহের ঘাটতি কোম্পানিগুলো বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েছে। বিদেশি মুদ্রার বাজারে অস্থিরতা বিরাজ করায় অনেক বেসরকারি কোম্পানিও বর্তমানে ক্ষতির সম্মুখীন। ডলারের বিপরীতে টাকার তীব্র অবমূল্যায়নের পাশাপাশি বিলম্বিত এলসি পেমেন্ট সেটেলমেন্টের কারণে এ ধরনের ক্ষতি বাড়ছে বলে খাত-সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে পড়েছে যেসব কোম্পানির বিদেশি ঋণ রয়েছে এবং উৎপাদিত পণ্যের কাঁচামাল বেশির ভাগই আমদানিনির্ভর।
জানতে চাইলে, বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, ডলারের এই উচ্চ দরের কারণে দেশের মূল্যস্ফীতিতে বড় ধরনের প্রভাব পড়েছে। এতে সাধারণ মানুষের জীবনযাপন কঠিন করে তুলেছে। ভোক্তাদের এই দুর্গতির এখনো পরিবর্তন হয়নি। যারা বড় খেলাপি তাদের সুবিধা হয়েছে। তাদের মূল্যস্ফীতে কোনো সমস্যা হয়নি। হয়েছে দেশের অর্থনীতির, দেশের সাধারণ মানুষের।
এমআই

অর্থনীতি
এলপিজির দাম ১ হাজার টাকার মধ্যে হওয়া উচিত: জ্বালানি উপদেষ্টা

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা মোহাম্মদ ফওজুল কাবির খান বলেছেন, দেশের স্বল্পমেয়াদি জ্বালানি সংকট মোকাবিলায় এলপিজির দাম নিয়ন্ত্রণ করা অত্যন্ত জরুরি। বর্তমানে সিলিন্ডারের বাজার মূল্য ১২০০ টাকার বেশি হওয়ায় শিল্প ও গৃহস্থালি ব্যবহারকারীরা যথাযথ সুবিধা পাচ্ছেন না। অথচ এর দাম ১ হাজার টাকা মধ্যে হওয়া উচিত।
শনিবার (১১ অক্টোবর) রাজধানীর প্যানপ্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলের গ্র্যান্ড বলরুমে দৈনিক বণিক বার্তা আয়োজিত ‘বাংলাদেশে এলপিজি : অর্থনীতি, পরিবেশ ও নিরাপত্তা’ শীর্ষক পলিসি কনক্লেভে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
উপদেষ্টা বলেন, এলপিজির প্রধান চ্যালেঞ্জ হলো দাম। বর্তমানে ১২০০ টাকা দামের সিলিন্ডার কিছু ক্ষেত্রে বাজারে ১৪০০–১৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তাই দামের নিয়ন্ত্রণ, লজিস্টিক উন্নয়ন এবং প্রাইভেট সেক্টরের কার্যকারিতা বাড়ানো অত্যন্ত জরুরি। দায়িত্বশীল ব্যবসায়িক মনোভাব ছাড়া দেশের জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়।
তিনি আরও বলেন, দেশের প্রাথমিক জ্বালানির ঘাটতি কোনো স্বাভাবিক সংকট নয়। এটি একটি পরিকল্পিত অবস্থার ফল, যা ক্ষমতাসীন কিছু রাজনীতিবিদ ও তাদের সহযোগী ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর কারণে তৈরি হয়েছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন ও গ্যাস লাইনের পরিকল্পনায় গ্যাস সরবরাহের চাহিদা উপেক্ষা করা হয়েছে, ফলে শিল্প ও গৃহস্থালিতে বিপুলসংখ্যক অবৈধ সংযোগও হয়েছে।
ফওজুল কাবির খান বলেন, স্থানীয় গ্যাস উৎপাদন প্রতিবছর কমছে। প্রতিবছর প্রায় ২০০ মিলিয়ন কিউবিক ফুট উৎপাদন কমছে, কিন্তু আমরা মাত্র ৭০ মিলিয়ন কিউবিক ফুট নতুন গ্যাস সংগ্রহ করতে পেরেছি। এজন্য এলএনজি আমদানি করা হচ্ছে, যদিও এর উচ্চমূল্যের কারণে সমালোচনা হচ্ছে।
তিনি বলেন, এলএনজি আমদানিতে দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া প্রয়োজন, তাই স্বল্পমেয়াদে ঘাটতি মোকাবিলায় এলপিজি কার্যকর বিকল্প হতে পারে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান এবং সম্মানিত অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) চেয়ারম্যান জালাল আহমেদ।
অর্থনীতি
কাঁচা মরিচের দাম কমেছে, নাগালের বাইরে সবজির দাম

টানা বৃষ্টির কারণে রাজধানী ঢাকায় কাঁচা মরিচের দাম হু হু করে বাড়ছিল। স্বস্তির খবর বৃষ্টির পানি নেমে যাওয়ায় কাঁচা মরিচের দাম কমেছে। বাজারে প্রতিকেজি মরিচ পাওয়া যাচ্ছে ১৮০-২০০ টাকায়। তবে সব ধরনের সবজির দাম সাধারণ ক্রেতাদের নাগালের বাইরে। মুলা, কচুর লতি, চিচিঙা, গোল বেগুন, করলা, লম্বা বেগুন, পটল, ধনে পাতা, ঢ্যাঁড়স, বরবটিসহ সব ধরনের সবজির বিক্রি হচ্ছে ৬০-৮০ টাকায়।
শুক্রবার (১০ অক্টোবর) রাজধানীর কারওয়ান বাজার, সেগুনবাগিচা ও শান্তিনগর বাজার ঘুরে দেখা গেছে এমন চিত্র।
কারওয়ান বাজারের খুচরা ব্যবসায়ী বিকাশ সাহা বলেন, প্রতিকেজি কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা। গত সপ্তাহে তা ৩৫০ টাকার ওপরে ছিল। টানা বৃষ্টিতে দেশের বিভিন্ন জেলার মরিচের ক্ষেত নষ্ট হয়েছে, ফলে সরবরাহ কম ছিল। এখন আবার সরবরাহ বেড়েছে। অন্যদিকে, বেড়েছে ডালের দাম।
এদিকে, শীতের আগাম সবজি বাজারে এলেও দাম রীতিমতো আকাশছোঁয়া। এর মধ্যে শিম ২০০ টাকার ওপরে বিক্রি হচ্ছে।
অন্যদিকে, খুচরা বাজারে এক কেজি মসুর ডালের দাম এখন ১৫৫ থেকে ১৬০ টাকা। এই দাম ছোট দানার; অর্থাৎ সরু মসুর ডালের। গত দেড় মাস আগে বাজার থেকে এই ডাল কেনা যেত ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকায়; অর্থাৎ দেড় মাসের ব্যবধানে ছোট দানার মসুর ডালের দাম কেজিতে বেড়েছে ২০ টাকা। মসুর ডালের মূল্যবৃদ্ধির প্রভাবে খুচরা বাজারে ছোলা ও অ্যাংকর ডালের দামও কিছুটা বেড়ে গেছে।
রামপুরা বাজারের ক্রেতা জাহাঙ্গীর আলম অভিযোগ করে বলেন, সবজির তেমন ঘাটতি না থাকলেও ব্যবসায়ীরা নানা অজুহাতে অন্যান্য পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন। দুই সপ্তাহ আগে তেলের দাম বেড়েছিল। এখন ডালের দাম বাড়ছে। এ কারণে সাধারণ মানুষের সংসার খরচে হিমশিম খাচ্ছে।
এদিকে, বাজারে মাছ-মাংসের দাম আগের মতো চড়া দামে আটকে আছে। প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৮০-১৯০ টাকা, সোনালি ৩০০-৩২০ টাকা, কক মুরগি ২৬০ থেকে ২৯০ টাকা, লেয়ার মুরগি ২৮০ থেকে ৩০০ টাকা ও দেশি মুরগি ৫৩০ থেকে ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
অর্থনীতি
রিজার্ভ বেড়ে প্রায় ৩২ বিলিয়ন ডলার

দেশে রেমিট্যান্স প্রবাহে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভেও দেখা দিয়েছে আশাব্যঞ্জক উত্থান। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) পর্যন্ত দেশের গ্রস রিজার্ভ বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩২ বিলিয়ন ডলার (৩১.৯৪ বিলিয়ন)। আর আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাবপদ্ধতি বিপিএম-৬ অনুযায়ী রিজার্ভের পরিমাণ ২৭ দশমিক ১২ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে রোববার (৫ অক্টোবর) পর্যন্ত গ্রস রিজার্ভ ছিল ৩১ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার। আর আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাবপদ্ধতি বিপিএম-৬ অনুযায়ী রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ২৬ দশমিক ৬২ বিলিয়ন ডলার। সেখানে বর্তমানে আরও বাড়লো রিজার্ভ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র জানান, রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধি ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিলামের মাধ্যমে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে ডলার কেনায় রিজার্ভ বাড়ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ বেড়ে ৩২ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি আর গ্রস রিজার্ভের পরিমাণ ২৭ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে।
চলতি অর্থবছরের তিন মাসে বাংলাদেশ ব্যাংক ১৪টি নিলামের মাধ্যমে বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ২ বিলিয়নের ওপর ডলার কিনেছে। সবশেষ বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) ১০টি ব্যাংক থেকে মোট ১০ কোটি ৭০ লাখ মার্কিন ডলার (১০৪ মিলিয়ন ডলার) কেনা হয়েছে। এসময় প্রতি ডলারের বিনিময় হার ছিল ১২১.৮০ টাকার মধ্যে, যা মাল্টিপল প্রাইস নিলাম (Multiple Price Auction) পদ্ধতির মাধ্যমে সম্পন্ন হয়েছে।
বাড়ছে রেমিট্যান্স আসার পরিমাণও। চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাই থেকে ৮ অক্টোবর পর্যন্ত দেশে ৮৩৯ কোটি বা ৮.৩৯ বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে। য গত বছরের একই সময়ে ছিল ৭৩৩ কোটি বা ৭.৩৩ বিলিয়ন ডলার। সে হিসাবে রেমিট্যান্স আসার প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ১৪.৪ শতাংশ। আর চলতি মাস অক্টোবরের প্রথম ৮ দিনে ৮০ কোটি ৫০ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে দেশে।
অর্থনীতি
বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহী তুরস্কের শীর্ষ শিল্পগোষ্ঠী

বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করেছে তুরস্কের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠীগুলো। বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) তুরস্কের ইস্তাম্বুলে বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (বিডা) আয়োজিত উচ্চপর্যায়ের বিনিয়োগ সেমিনার ‘গেটওয়ে টু গ্রোথ: ইনভেস্ট ইন বাংলাদেশ’-এ তারা এই আগ্রহের কথা জানান। বিডার জনসংযোগ দপ্তর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ইস্তাম্বুলের ডেল্টা হোটেলস বাই ম্যারিয়ট, লেভেন্ট-এ অনুষ্ঠিত সেমিনারে ৩০টিরও বেশি তুর্কি কোম্পানি অংশ নেয়—যারা ইতোমধ্যে বাংলাদেশে বিনিয়োগ করছে বা নতুন করে বিনিয়োগের সুযোগ খুঁজছে। অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বিডা, ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশন (আইএফসি) ও ওয়ার্ল্ড ব্যাংক গ্রুপের কারিগরি সহায়তায়, তুরস্কে বাংলাদেশের দূতাবাস এবং ইন্ডিপেনডেন্ট ইন্ডাস্ট্রিয়ালিস্টস অ্যান্ড বিজনেসম্যানস অ্যাসোসিয়েশনের সহযোগিতায়।
এতে বিডার ব্যবসা উন্নয়ন বিভাগের প্রধান নাহিয়ান রহমান রোচি মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য এখনই সবচেয়ে উপযুক্ত সময়। রপ্তানি, মুদ্রার স্থিতিশীলতা ও মূল্যস্ফীতির মতো সামষ্টিক অর্থনৈতিক সূচকগুলো বর্তমানে অত্যন্ত অনুকূল। ব্যবসা সহজীকরণের জন্য সরকার ইতোমধ্যে ৩২টি সংস্কার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
তিনি আরও জানান, নতুন বিনিয়োগকারীদের জন্য বিডা তার ‘ওয়ান স্টপ সার্ভিস’ প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে বিনিয়োগ পরামর্শ থেকে শুরু করে কারখানা স্থাপন পর্যন্ত পূর্ণ সহায়তা দেবে।
সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন। তিনি তুর্কি শিল্পনেতাদের সঙ্গে সরাসরি মতবিনিময় করেন এবং আগ্রহী বিনিয়োগকারীদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন।
বাংলাদেশে কার্যক্রম পরিচালনাকারী তুর্কি কোম্পানিগুলোর প্রতিনিধিরাও তাঁদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন। আরসেলিক কোম্পানির সিইও বারিশ আলপার্সলান বলেন, আমরা বাংলাদেশের স্থানীয় সরবরাহ চেইন শক্তিশালী করতে, দক্ষ জনবল গড়ে তুলতে এবং দীর্ঘমেয়াদি প্রবৃদ্ধিতে বিনিয়োগ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
এছাড়া আয়গেজ কোম্পানির এজিএম এরজুমেন্ট পোলাত জানান, বিডার ওয়ান স্টপ সার্ভিসের সহায়তায় আমরা দ্রুত সম্প্রসারণ করতে পেরেছি। বর্তমানে বাংলাদেশে আমাদের দুই শতাধিক কর্মী কাজ করছেন এবং আমাদের বিতরণ নেটওয়ার্ক এখন প্রায় ৩০ লাখ মানুষের কাছে পৌঁছে গেছে।
সেমিনারে আরও বক্তব্য রাখেন মুসাইএদ-এর বোর্ড সদস্য মুহাম্মেত হুজেইফে গুল্লুওগ্লু এবং ইস্তাম্বুলে বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল মোহাম্মদ মিজানুর রহমান। তাঁরা দুই দেশের ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও বিনিয়োগ সম্পর্ক জোরদারের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরীর নেতৃত্বে সেমিনারে বিডা, বেজা, এনবিআর ও ব্যাংক খাতের শীর্ষ কর্মকর্তারা অংশ নেন।
উল্লেখ্য, ৭–৮ অক্টোবর অনুষ্ঠিত গভর্নমেন্ট-টু-বিজনেস (জিটুজি) বৈঠকে বাংলাদেশের প্রতিনিধিদল তুরস্কের শীর্ষ শিল্পগোষ্ঠীর সঙ্গে অগ্রাধিকার খাতে সম্ভাব্য বিনিয়োগ ও অংশীদারত্ব নিয়ে আলোচনা করেছে। পাশাপাশি বিডা তুরস্কের শীর্ষ শিল্প সংগঠন তুর্ক অন ফিড-এর সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি সহযোগিতা গড়ে তুলছে, যা দুই দেশের সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বকে আরও শক্তিশালী করবে।
অর্থনীতি
একীভূত হবে পাঁচ ব্যাংক, সরকার দেবে ২০ হাজার কোটি টাকা

সমস্যাগ্রস্ত পাঁচটি ব্যাংক একীভূত করে নতুন একটি শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংক গঠনের প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ। নতুন এ ব্যাংকের মূলধন হিসেবে সরকার ২০ হাজার কোটি টাকার অর্থ সহায়তা দেবে।
ব্যাংক পাঁচটি হলো ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক (পিএলসি), গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক (পিএলসি), ইউনিয়ন ব্যাংক (পিএলসি), এক্সিম ব্যাংক (পিএলসি) ও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক (পিএলসি)।
নতুন এ ব্যাংকের দুটি নাম প্রস্তাব করা হয়েছে। এর একটি ইউনাইটেড ইসলামী ব্যাংক ও অপরটি সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক।
বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এ অনুমোদন দেওয়া হয়।
বিকেলে রাজধানীর বেইলি রোডের ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে প্রেস সচিব শফিকুল আলম এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে প্রস্তাবিত নতুন ব্যাংকের জন্য ৪০ হাজার কোটি টাকার অনুমোদিত মূলধনের বিপরীতে পরিশোধিত মূলধন ৩৫ হাজার কোটি টাকার প্রয়োজন হবে। প্রস্তাবিত নতুন ব্যাংকের মূলধন বিষয়ে প্রাথমিক পরিকল্পনা অনুযায়ী বেইল-ইন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিদ্যমান প্রাতিষ্ঠানিক আমানতকারীদের ১৫ হাজার কোটি টাকার আমানত মূলধনের রূপান্তর ও অবশিষ্ট ২০ হাজার কোটি টাকা সরকার মূলধন হিসেবে দেবে।