অর্থনীতি
পোশাক রপ্তানির নতুন সম্ভাবনার খাত নন কটন: বিজিএমইএ
দেশের রপ্তানি আয়কে ভালো অবস্থানে নিতে পোশাক পণ্যের উপর নজর দিচ্ছেন রপ্তানিকারকরা। গত ৩ বছরে তৈরি পোশাক উৎপাদনে কৃত্রিম তন্তুর ব্যবহার ২৯ শতাংশ বাড়িয়েছেন তারা।
আন্তর্জাতিক বাজারে পোশাক রপ্তানির প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশকে টিকে থাকতে আরও বেশি পদক্ষেপ নিতে হবে। গত বছরের মধ্যে নন-কটন ফাইবারে ১৮ ডলারের বিনিয়োগ প্রয়োজন। এতে ৮ বছরে ৪২ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি আয় আসবে দেশে।
রবিবার বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) প্রকাশিত ‘বিয়ন্ড কটন: এ স্ট্র্যাটেজিক ব্লুপ্রিন্ট ফর ফাইবার ডাইভারসিফিকেশন ইন বাংলাদেশ অ্যাপারেল ইন্ডাস্ট্রি শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
এ গবেষণাটি করেছে আন্তর্জাতিক পরামর্শক সংস্থা, ওয়াজির অ্যাডভাইজার। সংস্থাটি টেক্সটাইল, পোশাক এবং রিটেইল প্রভৃতি খাতগুলোকে নিয়ে পরামর্শক সংস্থা হিসেবে কাজ করে থাকে।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বব্যাপী পোশাক তৈরিতে নন-কটন ফাইবার ব্যবহৃত হয় প্রায় ৭৫ শতাংশ। বিপরীতে, বাংলাদেশের রপ্তানিমুখী পণ্যের ৭১ শতাংশ তৈরি করতে সুতির তন্তুর ওপর নির্ভরশীল। নন-কটনে যদি ১৮ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করে, তাহলে বাংলাদেশ ২০৩২ সালের মধ্যে ৪২ বিলিয়ন ডলারের নন-কটন গার্মেন্টস আইটেম রপ্তানি করতে সক্ষম হবে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, পরিবর্তনশীল বৈশ্বিক ফ্যাশন শিল্প তাদের বিনিয়োগ কটন থেকে অন্যান্য ফাইবারগুলোর দিকে সরিয়ে নিচ্ছে। ফাইবারগুলো শুধু সিন্থেটিকস (যেমন পলিয়েস্টার এবং নাইলন) নয়; বরং এগুলোর মধ্যে পুন:উৎপাদিত ফাইবার (যেমন ভিসকোস রেয়ন), পশুর তন্তু (উল এবং সিল্ক) এবং এমনকি অন্যান্য উদ্ভিজ্জ তন্তুও (যেমন লিনেন) রয়েছে। যদিও কটন ভিত্তিক পণ্যের চাহিদাও ব্যাপক। তবুও বৈচিত্র্যের দৃষ্টিকোণ থেকে, নন-কটন ফাইবারভিত্তিক পণ্যগুলো শিল্পের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ এনে দিয়েছে। এ সুযোগগুলো কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশ শুধু যে ফ্যাশন বিশ্বের পরিবর্তনশীল প্রবণতার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ভোক্তাদের পরিবর্তিত চাহিদাগুলো মেটাতে সক্ষম হবে, তা নয় এর সঙ্গে সমসাময়িক ফ্যাশন শিল্পে মুখ্য খেলোয়ার হিসেবে ভূমিকা পালন করতে পারে।
ওয়াজির অ্যাডভাইজারের প্রকল্প প্রধান বরুণ বৈদ বলেন, বাংলাদেশের রপ্তানি ঝুড়িতে নন-কটনভিত্তিক পণ্যের অন্তর্ভুক্তি, রপ্তানি বাজার আরও সম্প্রসারিত করতে পারে। এরই মধ্যে দ্বিতীয় বৃহত্তম রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে বৈশ্বিক পোশাক বাণিজ্যে তার যোগ্যতা প্রমাণ করেছে বাংলাদেশ। দেশটি নন-কটন পণ্যের সমগ্র সাপ্লাই চেইন বিকাশের মাধ্যমে উচ্চ প্রবৃদ্ধির গতিপথ বজায় রাখার লক্ষ্য ধরে রাখতে পারে।
আয়োজিত অনুষ্ঠানে বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, কৃত্রিম ফাইবার ব্যবহার করে বিজিএমইএ স্থানীয়ভাবে তৈরি পোশাকের বৈশ্বিক বাজারের শেয়ার ৭ দশমিক ৮৭ শতাংশ থেকে ১২ শতাংশে উন্নীত করতে চায়। কারণ কৃত্রিম তন্তু থেকে তৈরি পোশাক পণ্যের দাম বেশি। সাম্প্রতিক বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর ফলে পোশাকখাতের ওপর কি ধরনের প্রভাব পড়তে পারে এমন প্রশ্নের জবাবে ফারুক হাসান বলেন, আমরা ৭০ শতাংশ পর্যন্ত মূল্য সংযোজন করি। স্থানীয় বাজার থেকেও কাঁচামাল সংগ্রহ করি। ফলে বিদ্যুতের দাম বেড়ে যাওয়ায় সব কিছুরই দাম বেড়ে যাবে। মূল্যস্ফীতি খুবই বেশি, এসময়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোয় আমাদের ব্যয় আরও বাড়িয়ে দেবে। সুদহার বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতি কমানোর উদ্যোগটিও বাধাগ্রস্থ হবে।
কাফি
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
মধ্যম আয়ের ফাঁদ থেকে বেরোতে সংকটকে কাজে লাগাতে হবে
মধ্যম আয়ের ফাঁদ থেকে বেরিয়ে আসার জন্য বাংলাদেশের অর্থনীতি আরও উন্মুক্ত হওয়া উচিত। মধ্যম আয়ের স্তর দ্রুত অতিক্রম করতে হলে বিদ্যমান কাঠামোতে শৃঙ্খলা আনতে হবে, যোগ্যতাকে পুরস্কৃত করতে হবে এবং সংকটকে কাজে লাগাতে হবে বলে জানিয়েছেন বিশ্বব্যাংক-এর মুখ্য অর্থনীতিবিদ ইন্দরমিত এস গিল।
শনিবার (৭ ডিসেম্বর) ঢাকায় বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস) আয়োজিত বার্ষিক উন্নয়ন সম্মেলনে (এবিসিডি) বক্তব্য দেওয়ার সময় তিনি এ কথা বলেন।
ইন্দরমিত বলেন, বর্তমানে মধ্যম আয়ের দেশগুলোর ছয় বিলিয়ন মানুষ সময়ের সঙ্গে লড়াই করছে। তিনি বলেন, “বাইরের পরিবেশ এই চ্যালেঞ্জগুলো আরও কঠিন করে তুলছে। মধ্যম আয়ের ফাঁদ থেকে মুক্তি পেতে দেশগুলোকে দুটি রূপান্তরের মধ্য দিয়ে যেতে হবে, একটি নয়।”
তিনি আরও বলেন, “বিনিয়োগ, উৎপাদন এবং উদ্ভাবনের মধ্যে পরিবর্তন আনতে হবে। মধ্যম আয়ের স্তর দ্রুত অতিক্রম করতে হলে বিদ্যমান কাঠামোতে শৃঙ্খলা আনতে হবে, যোগ্যতাকে পুরস্কৃত করতে হবে এবং সংকটকে কাজে লাগাতে হবে।”
গিল বলেন, “আপনাকে অর্থনীতিকে উন্মুক্ত করতে হবে, বিশেষ করে যখন বিনিয়োগ-নির্ভর পর্যায় থেকে উৎপাদন-নির্ভর পর্যায়ে স্থানান্তরিত হয়েছেন। অন্যরা যা-ই করুক না কেন, এখানে বাংলাদেশকে আরও বেশি উন্মুক্ত হতে হবে।”
“এটি যেন যুক্তরাষ্ট্র ও চীন, উৎপাদন ও সেবা, অথবা আন্তর্জাতিক ও দেশীয় নীতি সংস্কারের মধ্যে কোনও একটি বেছে নেওয়ার বিষয় না হয়,” তিনি জোর দিয়ে বলেন।
গিল বলেন, “মধ্যম আয়ের আরও অনেক দেশ রয়েছে। কিন্তু তারা তাদের প্রাকৃতিক সম্পদ এবং বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সম্পর্কের দিক থেকে আলাদা। আমরা দেখেছি, বৈষম্য সামান্য বেড়েছে। তবে এটি খুব বেশি গুরুতর নয়, যদি আর্থ-সামাজিক গতিশীলতা বাড়তে থাকে।”
তিনি বলেন, “আবার যদি আর্থ-সামাজিক গতিশীলতা কমে যায়, তবে বৈষম্য বাড়ুক বা কমুক, তা কোনো গুরুত্ব বহন করে না,”
বিশ্বব্যাংক-এর এই মুখ্য অর্থনীতিবিদ বলেন, “জ্বালানি খাতে বাংলাদেশ শুধু এটাই দেখছে, জ্বালানি কোথা থেকে আসছে– পুনর্নবীকরণযোগ্য খাত থেকে নাকি জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে। এটি সম্পূর্ণ ভুল দৃষ্টিভঙ্গি।”
ইন্দরমিত বলেন, “আমাদের দেখতে হবে, বাংলাদেশ জ্বালানি থেকে উৎপাদন করতে কতটা দক্ষ। যদি দক্ষ না হয়, তাহলে এটি বোঝায়, মাথাপিছু উৎপাদনের তুলনায় কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ অনেক বেশি।”
অনুষ্ঠানে পরিকল্পনা ও শিক্ষা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদও উপস্থিত ছিলেন। উদ্বোধনী বক্তব্যে বিআইডিএসের মহাপরিচালক বিনায়ক সেন উপস্থিত সকলের উদ্দেশ্যে এবিসিডি ২০২৪-এর মূল বিষয় “আন্তঃসংযোগ: সমতা, সুযোগ, স্বাধীনতা এবং মর্যাদা” তুলে ধরেন।
কাফি
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
সবজিতে স্বস্তি ফিরলেও বোতলজাত সয়াবিনের সরবরাহ নেই
এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতিকেজি আলুর দাম ৫ টাকা কমেছে। প্রতি ডজন ডিমের দাম ৫ টাকা কমে ১৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পেঁয়াজ, চিনি, ছোলা ও শীতকালীন সবজির দাম কমতে শুরু করেছে। এদিকে, বাজার থেকে অনেকটা উধাও হয়ে গেছে সয়াবিন তেল।
শুক্রবার (৬ ডিসেম্বর) রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
মিরপুর মুসলিম বাজারের বিক্রেতারা জানিয়েছেন, গত শুক্রবারও বিভিন্ন বাজারে প্রতি কেজি আলু ৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। যা মঙ্গলবারে এসে ৫ টাকা কমেছে। সরবরাহ বাড়ায় শীতকালীন সবজির দামও কমেছে। ফুলকপি, বাঁধাকপি ও লাউ পিস হিসেবে ৫ টাকা থেকে ১০ টাকা কমেছে। প্রতি কেজি টমেটো ১৩০ টাকা থেকে ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে যা গত সপ্তাহে ছিল ১৬০ টাকা। একইভাবে প্রতিকেজি গাজর বিক্রি হচ্ছে ৮০-১১০ টাকায়। গত সপ্তাহে যা ছিল ১৪০-১৫০ টাকা।
সপ্তাহের ব্যবধানে ডিমের দাম ৫ টাকা কমে ১৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বিক্রমপুর ডিম ভাণ্ডারের স্বত্বাধিকারী শামসুল আলামিন বলেন, বাজারে শীতকালীন সবজির জোগান বেড়েছে। ডিমের ওপর চাপ কিছুটা কম। গত সপ্তাহে প্রতি হালি ডিম বিক্রি হয়েছে ১৫০ টাকায়, গত বুধবার থেকে ১৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, এক সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে ১০ টাকা কমেছে পেঁয়াজের দাম। প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকায়, আর আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১১০ টাকা। একইভাবে ৫ থেকে ১০ টাকা দাম কমে প্রতি কেজি ছোলা ১২৫ টাকা থেকে ১৪০ টাকায় ও প্রতিকেজি চিনি ১২৫ টাকা ১৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
মিরপুর ১২ নম্বরের মুসলিম বাজারের ৫-৬টি মুদি দোকাম ঘুরে মেলেনি কোনো সয়াবিন তেল। আলিমুদ্দিন নামের একজন বিক্রেতা বলেন, কোম্পানি রেট বাড়াবে, এখন সাপ্লাই বন্ধ। ২-৩ দিন ধরে কোনো সয়াবিন তেল দিচ্ছে না।
আরেক বিক্রেতা বলেন, অনেক দোকানে সয়াবিন তেল নাই। অনেকেই আবার মজুত করে রাখছেন দাম বাড়লে বেশি দামে বিক্রি করবে।
কয়েকটি দোকানে প্যাকেটজাত সয়াবিন পাওয়া গেছে। তারা তেল বিক্রি করছে গায়ের রেটেই। রূপচাদা ১ লিটার সয়াবিন তেল ১৬৭, ৩ লিটার ৩৩৪ টাকা ও ৫ লিটার ৮১৮ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।
সম্প্রতি শুল্ক, কর কমিয়ে সয়াবিন তেলের দাম কমানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। কিন্তু সয়াবিনের দাম কমেনি। বিক্রেতারা বলছেন, তারা চাহিদার ১০ শতাংশ তেলও পাচ্ছেন না।
অপরিবর্তিত রয়েছে মাছ ও মাংসের দাম
বাজারে প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০-৭৮০ টাকায়। খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ১১০০ টাকা কেজিতে। ব্রয়লার মুরগির কেজি ১৭৫-১৯৫ টাকা, কক মুরগি ২৯০ টাকা, দেশি মুরগি ৫৫০-৫৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আকার ও ওজন অনুযায়ী, প্রতি কেজি ইলিশ মাছ ৮০০-২২০০ টাকা, পাবদা ৪০০-৮০০ টাকা, শিং ৪০০-১২০০ টাকা, টেংরা ৫০০-৮০০ টাকা, বোয়াল ৫০০-৯০০ টাকা, কাজলী মাছ ৮০০-১২০০ টাকা, রুই ৩৫০-৪৫০ টাকা, কাতল ৪০০-৬০০ টাকা, কালিবাউশ ৫০০-৮০০ টাকা, চিংড়ি ৮০০-১২০০ টাকা, কাচকি ৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
শত বিলিয়ন ডলার ঋণ সহায়তার ঘোষণা বিশ্বব্যাংকের
বিশ্বব্যাংক দরিদ্র দেশগুলোর জন্য শত বিলিয়ন ডলার ঋণ সহায়তা ঘোষণা করেছে। বৃহস্পতিবার (০৫ ডিসেম্বর) বিশ্বব্যাংকের এক মুখপাত্র এএফপি’কে একথা জানান।
বিশ্বব্যাংকের মুখপাত্র এএফপিকে জানায়, দরিদ্র ও বিপদাপন্ন দেশগুলোকে ১০০ বিলিয়ন ডলার অনুদান ও ঋণ সহায়তা দেওয়া হবে। ঋণ এবং অনুদানের জন্য প্রতিষ্ঠানটি ইতোমধ্যে প্রায় ২৪ বিলিয়ন ডলার সংগ্রহ করেছে।
তিনি বলেন, গত তিন বছরে তহবিল সংগ্রহের প্রতিশ্রুতিকৃত প্রায় ২৩ দশমিক ৫ বিলিয়ন থেকে সামান্য বৃদ্ধি করে দাতা দেশগুলো ব্যাংকের রেয়াতি ঋণ পরিশোধের জন্য ২৩ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এটি আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা (আইডিএ) নামে পরিচিত।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ ঋণ ২০২১ সালে ছিল ৯৩ বিলিয়ন ডলার। এবার তা সামান্য বাড়িয়ে ১০০ বিলিয়ন ডলার করা হয়েছে।
আইডিএ প্রধানত বিশ্বের ৭৮টি দরিদ্রতম দেশকে অনুদান সহায়তা দিয়ে থাকে। এ খাতে কোভিড-১৯ এর প্রভাবে অর্থনৈতিক ক্ষতি থেকে শুরু করে জলাবায়ু পরিবর্তন অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
বিশ্বব্যাংকের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম আইডিএ। এ প্রকল্পে যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, যুক্তরাজ্য, জার্মানিসহ ইউরোপীয় বেশ কয়েকটি দেশ প্রচুর অর্থায়ন করে। চলতি বছরে যুক্তরাষ্ট্র এ খাতে চার বিলিয়ন অর্থায়নের ঘোষণা দিয়েছে। এছাড়া নরওয়ে এবং স্পেনসহ বিভিন্ন দেশও অর্থায়ন উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়িয়েছে।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
বেক্সিমকোর ১৬ কোম্পানি বিক্রির পরিকল্পনা সরকারের
বকেয়া বেতন, ভাতার দাবিতে শ্রমিক অসন্তোষের প্রেক্ষিতে, দীর্ঘমেয়াদি সমাধান হিসেবে বেক্সিমকো গ্রুপের পোশাক খাতের ৩২ কোম্পানির মধ্যে ১৬টির স্বত্ব বিক্রির পরিকল্পনা করছে অন্তর্বর্তী সরকার। এর বাইরে এই গ্রুপ সংশ্লিষ্ট বেশ কিছু কোম্পানি বন্ধ করে দেওয়া হবে। চালু থাকবে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসসহ শুধু লাভজনক কোম্পানিগুলো।
বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্যোগে গঠিত ১১ সদস্যবিশিষ্ট উপদেষ্টা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়েছে।
সরকারি সূত্র মতে , ছোট-বড়, জানা-অজানা মিলিয়ে বেক্সিমকো গ্রুপের কোম্পানির সংখ্যা ১৬৯। এর মধ্যে পোশাক খাতের কোম্পানির সংখ্যা ৩২, যেগুলো উৎপাদনে রয়েছে। এই ৩২টি কোম্পানির মধ্যে ১৬ টির মালিকানা বিক্রির সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর বাইরে বেক্সিমকো গ্রুপের যেসব প্রতিষ্ঠান লোকসানে চলছে, সেগুলোর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তিন মাসের বেতন-ভাতা পরিশোধের পর বন্ধ করে দেওয়া হবে।
গত ২৮ নভেম্বর ১১ সদস্যবিশিষ্ট উপদেষ্টা কমিটির সভায় বেক্সিমকো গ্রুপের বিভিন্ন কোম্পানির বিষয়ে এসব সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর আগে গত ২৪ নভেম্বর ‘বেক্সিমকো শিল্প পার্কের শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর শ্রম ও ব্যবসায় পরিস্থিতি পর্যালোচনা বিষয়ক উপদেষ্টা কমিটি’ গঠন করে। শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেনকে আহ্বায়ক করে ১১ সদস্যবিশিষ্ট এই উপদেষ্টা কমিটি গঠিত হয়। গত ২৮ নভেম্বর ছিল এই কমিটির প্রথম বৈঠক। সেখানেই এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র ও নথিপত্র থেকে জানা যায়।
কমিটির সভার কার্যবিবরণী অনুযায়ী, সভায় বেক্সিমকো গ্রুপের ১৬৯টি প্রতিষ্ঠানকে এ, বি ও সি—এই তিন শ্রেণিতে ভাগ করার বিষয়ে আলোচনা হয়। এর মধ্যে ‘এ’ অর্থাৎ ভালো কোম্পানির শ্রেণিতে থাকবে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস। ‘বি’ শ্রেণিতে থাকবে ৩২টি কোম্পানি। আর বাকি সব কোম্পানি থাকবে সি শ্রেণিতে। বেক্সিমকোর কোম্পানিগুলোর এই শ্রেণিবিভাজনের প্রস্তাব দেন বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী। তাঁর ওই প্রস্তাবের ভিত্তিতে বেক্সিমকো গ্রুপের বিষয়ে উপদেষ্টা কমিটির প্রথম সভায় চারটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
আশিক চৌধুরীর কাছে গত বৃহস্পতিবার ১৬৯ কোম্পানির তালিকা, কেউ না কিনলে এগুলোর পরিণতি, বন্ধ করে না দেওয়ার বিকল্প খোঁজা, শ্রমিকদের তিন মাস বেতন দেওয়ার পরের পরিস্থিতি ইত্যাদি বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়। তিনি এসব বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
বেক্সিমকোর কোম্পানিগুলোর বিষয়ে নেওয়া সিদ্ধান্তগুলোর মধ্যে রয়েছে প্রথমত বেক্সিমকো শিল্প পার্কের প্রতিষ্ঠানগুলোর শ্রমিকদের আগামী তিন মাসের বেতন-ভাতার প্রয়োজনীয় অর্থ জোগান দেবে জনতা ব্যাংক। দ্বিতীয়ত, ‘বি’ শ্রেণির কোম্পানিগুলোর স্বত্ব বিক্রির জন্য এক্সপ্রেশন অব ইন্টারেস্ট (ইওআই) চূড়ান্ত করে ঋণদাতা জনতা ব্যাংক আগামী ৯ ডিসেম্বরের মধ্যে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়কে জানাবে। তৃতীয়ত, হাইকোর্টে চলমান রিটের জবাব তৈরির জন্য একজন অভিজ্ঞ আইনজীবী নিয়োগ করে প্রশাসকের কার্যপরিধি চূড়ান্ত করা। আইনজীবী নিয়োগের প্রয়োজনীয় খরচ দেবে অর্থ বিভাগ। চতুর্থত, এক সপ্তাহের মধ্যে বেক্সিমকোর কোম্পানিগুলোর শেয়ার হস্তান্তরের নিয়ন্ত্রণ নেবে কর্তৃপক্ষ, যা বাস্তবায়নের দায়িত্ব থাকবে বিএসইসি ও বেক্সিমকোর প্রশাসকের হাতে।
উপদেষ্টা কমিটির এসব সিদ্ধান্তের বিষয়ে জানতে চাইলে বেক্সিমকো গ্রুপের পরিচালক (অর্থ ও করপোরেট অ্যাফেয়ার্স) ওসমান কায়সার চৌধুরী বলেন, ২৮ নভেম্বর অনুষ্ঠিত বৈঠক উপলক্ষে মন্ত্রণালয় আমাদের ডাকলেও বৈঠকে রাখেনি। সিদ্ধান্তের কোনো চিঠিও পাইনি। ফলে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে পারছি না।
সিদ্ধান্তের কথা জানানো হলে ওসমান কায়সার চৌধুরী বলেন, কীভাবে তালিকা করা হয়েছে, জানি না। সরকার কী করতে যাচ্ছে, তা-ও স্পষ্ট নয়। তবে বেক্সিমকো গ্রুপের অধীন ১৬৯টি প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানি নেই। এ ছাড়া বি শ্রেণির কিছু কোম্পানির স্বত্ব বিক্রির সিদ্ধান্তের বিষয়টিও বাস্তবসম্মত বলে মনে হচ্ছে না। কোম্পানিগুলো ভালোভাবে পরিচালনার জন্য বরং ঋণপত্র (এলসি) খোলার ব্যবস্থা করলে আমরা ভালো করব।
এদিকে গত ২৮ নভেম্বর উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান অংশ নেন। এ ছাড়া উপস্থিত ছিলেন শ্রমসচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামান, অর্থসচিব মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদার, বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী, অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ, বেক্সিমকো লিমিটেডের রিসিভার মো. রুহুল আমিন এবং বেক্সিমকো গ্রুপকে ঋণ দেওয়া জনতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মজিবুর রহমান প্রমুখ।
সভার কার্যবিবরণীতে বলা হয়, বৈঠকে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, শিল্পের শ্রমিকদের মজুরিসহ সার্বিক কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। কিন্তু সম্প্রতি শ্রমিকেরা তাঁদের বকেয়া ও ন্যায্য মজুরি না পেয়ে প্রায়ই রাস্তাঘাট বন্ধসহ বিরূপ পরিস্থিতির সৃষ্টি করছে। ফলে পোশাকসহ অন্য খাতেও এর বিরূপ প্রভাব পড়ছে।
বেক্সিমকো গ্রুপ নিয়ে উপদেষ্টা কমিটির সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের বিষয়ে শ্রমসচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, বৈঠকের সিদ্ধান্তের বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করবেন না। বি শ্রেণির কোম্পানিগুলোর স্বত্ব বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছেন, কেউ কিনতে না চাইলে কী হবে—এমন প্রশ্নের জবাবে শ্রমসচিব বলেন, একটা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আগে চেষ্টা করি। দেখিই না কী করা যায়। পোশাক খাতের কারখানাগুলো চালানোর জন্য আগে বিদেশি ক্রেতাদের আহ্বান জানানো হবে। আর কিছু কোম্পানিতে স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দিয়ে পরিচালনার ব্যবস্থা করবে বিএসইসি।
বেক্সিমকো গ্রুপকে সবচেয়ে বেশি অর্থায়ন করেছে রাষ্ট্রমালিকানাধীন জনতা ব্যাংক। ফলে গ্রুপটি থেকে ঋণ আদায় না হওয়ায় বিপাকে পড়েছে ব্যাংকটি। এ অবস্থায় উপদেষ্টা কমিটির বৈঠকের সিদ্ধান্তের বিষয়ে জনতা ব্যাংকের এমডি মজিবুর রহমান বলেন, বেক্সিমকোর শ্রমিক-কর্মচারীদের তিন মাসের বেতন-ভাতা ও মজুরি বাবদ পরিশোধ করতে হবে ১৮০ কোটি টাকা। ব্যাংকের পর্ষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ৯ ডিসেম্বরের মধ্যে সরকারকে জানাব। আর বি শ্রেণির কোম্পানিগুলোর জন্যও প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত সরবরাহ করব বিডাকে।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
কর অব্যাহতি উল্লেখযোগ্য হারে কমবে: এনবিআর চেয়ারম্যান
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলসহ (আইএমএফ) অন্যান্য উন্নয়ন সহযোগীদের চাপে কর অব্যাহতি উল্লেখযোগ্য হারে কমানোর পরিকল্পনা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান।
বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) রাজধানীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় ওয়ালটন আয়োজিত শিল্পমেলা ‘এটিএস এক্সপো-২০২৪’ এর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা জানান।
স্থানীয় ব্যবসায়ীদের জন্য কর ছাড় দেওয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এগুলো দিয়েছি, নয়তো আপনারা এখানে আসতে পারতেন না। এগুলো দিয়েছি এফডিআই (বিদেশি বিনিয়োগ) টানতে, দেশের বিনিয়োগ বাড়াতে। এখন ট্যাক্স এক্সপেন্ডিচার (কর অব্যাহতি) কমাতে হবে ড্রাস্টিক্যালি।
সম্প্রতি আইএমএফ প্রতিনিধিদের বৈঠক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ওনারা (আইএমএফ) বলেছেন আপনারা (এনবিআর) যে প্রতি বছর ৩ লাখ থেকে সাড়ে ৩ লাখ কর ছাড় দেন, এগুলো কমাতে হবে।
সামনে রাজস্ব বাড়ানোর বড় চ্যালেঞ্জ থাকার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, অনেক ঘাটতি বাজেট করা হয়েছে, অনেক ঋণ করতে হয়েছে। এগুলো এখন বোঝা হয়ে গেছে। এসময় সব করদাতাকে কর দেওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকার অনুরোধ জানান এনবিআর চেয়্যারম্যান।
ন্যাশনাল সিঙ্গেল উইন্ডো করা হচ্ছে জানিয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ২০২৫ এর মার্চ থেকে একই জায়গায় ব্যবসার সব নিবন্ধন সনদ পাওয়া যাবে। আগামী বছর থেকে করপোরেট ট্যাক্স রিটার্নও অনলাইনে নিয়ে আসবো। আপনাদের ট্যাক্স দিতে যে তিক্ততা লাগে, সেটা যেন আর না লাগে।
অনুষ্ঠানে ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ পিএলসি’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস এম মাহবুবুল আলম বলেন, বাংলাদেশে এখনো উৎপাদনকারী ও সংযোজনকারীর মধ্যে আইনিভাবে ভিন্নতা নেই। কর অব্যাহতির সুযোগ-সুবিধায়ও ভিন্নতা নেই।