অন্যান্য
‘৩০ ফেব্রুয়ারি’ দিনটি ইতিহাসে একবারই এসেছিল

লিপ ইয়ার বা অধিবর্ষে প্রতি চার বছর অন্তর ক্যালেন্ডারের পাতায় ফেব্রুয়ারি মাসে বাড়তি একটি দিন যোগ করা হয়। ফলে ওই বছরটি গণনা করা হয় ৩৬৬ দিনে। এভাবে বছর গণনার সমন্বয়ে আমরা অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি। এবারও চলছে লিপ ইয়ার। ২০২৪ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি অবশ্যই বিশেষ একটি দিন।
তবে অবাক করা বিষয় হলো, ইতিহাসে একবার ‘৩০ ফেব্রুয়ারি’ এসেছিল।
বিবিসি বাংলার খবরে বলা হয়, সুইডেন একটি ডাবল লিপ ইয়ারের অংশ হিসেবে ১৭১২ সালের ক্যালেন্ডারে ‘৩০ ফেব্রুয়ারি’ দিনটি যুক্ত করা হয়েছিল।
তবে ভেবে দেখুন, সেই তারিখ যাদের জন্ম হয়েছিল তাদের ভাগ্যে কী হয়েছে? তারা কখনো জন্মদিন উদযাপন করতে পারেননি।
লিপ ইয়ার কেন আসে?
প্রতি চার বছর অন্তর ক্যালেন্ডারে যে অসঙ্গতি থাকে তা সমন্বয় করতেই লিপ ইয়ার পদ্ধতি প্রবর্তন করা হয়েছে। এই ক্যালেন্ডার পদ্ধতির প্রাথমিক ধারণা এসেছিল রোমান সম্রাট জুলিয়াস সিজারের কাছ থেকে।
তিনি তখন আলেকজান্দ্রিয়ান জ্যোতির্বিজ্ঞানী সোসিজেনেসকে রোমান ক্যালেন্ডারের একটি বিকল্প তৈরি করতে বলেন। যে ক্যালেন্ডার হবে সূর্যের চারিদিকে পৃথিবীর পরিভ্রমণের সঙ্গে আরও সামঞ্জস্যপূর্ণ।
অনেকের মতে, পৃথিবী সূর্যকে একবার প্রদক্ষিণ করতে ৩৬৫ দিনের সঙ্গে পাঁচ ঘণ্টা, ৪৮ মিনিট, ৫৬ সেকেন্ড বেশি সময় লাগে। এই বাড়তি সময়কে সমন্বয় করতে সোসিজেনেস একটি ক্যালেন্ডার তৈরি করার প্রস্তাব করেন, যা মিশরীয়দের ক্যালেন্ডারের সঙ্গে প্রায় হুবহু মিলে যায়।
সৌর বছরের সঙ্গে সন্নিবেশ করতে প্রতি চার বছরে ৩৬৫ দিনের সঙ্গে একটি অতিরিক্ত দিন যোগ করা হয়। এভাবে জুলিয়ান ক্যালেন্ডারের জন্ম হয়, এর প্রবর্তক জুলিয়াস সিজারের সম্মানে এই নামকরণ করা হয়েছিল।
বাড়তি দিন যেভাবে এলো
জুলিয়ান ক্যালেন্ডারও বেশিদিন টেকেনি। ওই ক্যালেন্ডারে কিছু দুর্বলতা থাকায় ১৫৮২ সাল থেকে ক্রমান্বয়ে জুলিয়ান ক্যালেন্ডারের জায়গা প্রতিস্থাপন করে নেয় আজকের গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার। জুলিয়ান ক্যালেন্ডারে বছর শুরু হতো মার্চ থেকে। যেহেতু প্রতি চার বছরে একটি অতিরিক্ত দিনের প্রয়োজন ছিল, তাই রোমানরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিল যে এটি ফেব্রুয়ারিতে হবে, যা তখন বছরের শেষ মাস ছিল।
লিপ নামটি ল্যাটিন বাক্য থেকে এসেছে। যার অর্থ মার্চ মাস শুরুর ছয় দিন আগে, যা ২৪ ফেব্রুয়ারি। সেসময় ওই দিনটি লিপ ইয়ার হিসেবে পালন করা হত।
বাক্যটি কিছুটা দীর্ঘ হওয়ায় একে সংক্ষেপে ‘বিস সেক্সটাস’ বলা হয়ে থাকে যার অর্থ লিপ ইয়ার বা বাংলায় অধিবর্ষ। কয়েক বছর পরে, ত্রয়োদশ পোপ গ্রেগরি এক ডিক্রি জারির মাধ্যমে ক্যালেন্ডারটিকে ‘নিখুঁত’ করার সিদ্ধান্ত নেন।
তার আনা পরিবর্তনগুলোর মধ্যে একটি ছিল যে লিপ ইয়ারের অতিরিক্ত দিনটি হবে ২৯ ফেব্রুয়ারি।
সময়ের গণনা ও হেরফের
সময়কে মূলত গণনা করা হয়, দিন, মাস ও বছরের হিসেবে। এই গণনা প্রক্রিয়া মানুষের তৈরি। চন্দ্র আবর্তন অনুসরণ করে দেখা গেছে, দুটি পূর্ণিমার মধ্যে কমবেশি সাড়ে ২৯ দিনের পার্থক্য থাকে।
এছাড়া সৌর পরিভ্রমণ অনুযায়ী, পৃথিবী সূর্যের চারপাশে ঘুরতে সময় নেয় কমবেশি ৩৬৫ দিন ছয় ঘণ্টার মতো। তবে এটি এমন এক গণনা পদ্ধতি যা হেরফের হতে পারে।
ইতিহাস জুড়ে বিভিন্ন শাসক এক বছরকে কয়েক মাসে ভাগ করেছেন। সব সময়ে ১২ মাসে এক বছর ছিল না, মাসের সংখ্যায় হেরফের ছিল। ওই শাসকদের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক চাহিদা-প্রয়োজন, বা তাদের ব্যক্তিগত ইচ্ছা অনুসারে সেই মাসগুলোয় বাড়তি দিন যোগ করা হতো নাহলে সরিয়ে নেওয়া হতো।
ফলে সৌর বছরের সঙ্গে এই ক্যালেন্ডারগুলোকে সমন্বয় করা প্রয়োজনীয় হয়ে ওঠে, যা উপেক্ষা করার উপায় ছিল না।
সম্রাট জুলিয়াস সিজার, প্রায় দুই হাজার বছর আগে, আমরা বর্তমানে যে ক্যালেন্ডার ব্যবহার করি তার অনুরূপ একটি ক্যালেন্ডার প্রবর্তন করেছিলেন। সেই তথাকথিত জুলিয়ান ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ১২ মাসে এক বছর ছিল। এবং মাসগুলোর কিছু ৩০ দিন এবং কিছু ৩১ দিনে গণনা করা হতো।
শুধুমাত্র ফেব্রুয়ারি মাস গণনা হতো ২৮ বা ২৯ দিনে। বছর শুরু হতো মার্চ মাস থেকে। কারণ এটি বসন্তের শুরু। এজন্য বছরের শেষ মাস ফেব্রুয়ারিকে লিপ ইয়ারের জন্য বেছে নেওয়া হয়।
এক বছর যেহেতু ৩৬৫ দিন ছয় ঘণ্টায় হয়, তাই বাড়তি এই ছয় ঘণ্টাকে সমন্বয় করার জন্য সেই রোমান সময় থেকে লিপ ইয়ার চিহ্নিত করা হয়েছে।
গ্রেট গ্রেগরিয়ান লিপ
সময় গণনা শতাব্দী ধরে চলে আসছে, কিন্তু এই গণনা পদ্ধতি সঠিক নয়। সৌর বছর আসলে একটু ছোট- সুনির্দিষ্টভাবে বললে ১১ মিনিট ১৪ দশমিক ৭৮৪ সেকেন্ড কম।
আদতে মনে হতে পারে এটি এমন কোন বড় পার্থক্য নয়, যা তাৎক্ষণিক প্রভাব ফেলতে পারে। তবে বছরের পর বছর ধরে, এই বাড়তি মিনিট/ সেকেন্ড যোগ হয়ে সেটি বড় ব্যবধান তৈরি করে।
এ কারণেই ত্রয়োদশ পোপ গ্রেগরি ১৫৮২ সালে তার ক্যালেন্ডারে থাকা অসঙ্গতিগুলো ঠিক করার জন্য কিছু পরিবর্তন এনেছিলেন। এটি প্রধানত ধর্মীয় কারণে করা হয়, কেননা এই সময়ের ব্যবধানের কারণে কয়েকশ বছরে ইস্টারের সূচনা তিন দিন আগ-পিছ হয়ে যায়। তবে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার এখন পর্যন্ত বিশ্বে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত মানসম্মত প্রতিষ্ঠিত ক্যালেন্ডার।
যারা ক্যাথলিক চার্চের সাথে যুক্ত ছিল, প্রথমে তারা এই ক্যালেন্ডার গ্রহণ করে। পরবর্তী চার দশকে লিপ ইয়ার নির্মূল করার পরিবর্তে, তারা অক্টোবর মাস থেকে এক লাফে ১০ দিন কমিয়ে দেয়।
১৫৮২ সালে ৫ অক্টোবর বৃহস্পতিবারের পরের দিন ১৪ অক্টোবর শুক্রবার করা হয়। অন্যান্য প্রোটেস্ট্যান্ট জাতি ও সাম্রাজ্যগুলো শুরুতে এই ক্যালেন্ডার গ্রহণে অনিচ্ছুক ছিল, কিন্তু অবশেষে তারাও এই পরিবর্তিত ক্যালেন্ডার গ্রহণ করে।
যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও এর আমেরিকান উপনিবেশগুলো এই পরিবর্তন সাদরে গ্রহণ করে। তবে নতুন ক্যালেন্ডারে সমন্বয় করতে গিয়ে ১৭৫২ সালে তাদেরকেও ১২ দিন কমাতে হয়েছিল। তারা ২ সেপ্টেম্বর থেকে এক লাফে ১৪ সেপ্টেম্বরে পদার্পণ করে।
সুইডিশ পার্সিমনি ও ৩০ ফেব্রুয়ারির প্রবর্তন
সুইডেন যখন গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয়, তখন তারা হঠাৎ করে ওই দিনগুলোকে একসঙ্গে বাদ দিতে চায়নি। তারা ধীরে ধীরে এই পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়াকে উপযুক্ত বলে মনে করেছিল।
এজন্য তারা টানা ৪০ বছরের জন্য ফেব্রুয়ারির লিপ দিনগুলো এড়িয়ে যায়, যতক্ষণ না সেগুলো সামঞ্জস্যপূর্ণ হচ্ছে।
তাদের এতদিনের অনুসরণ করা জুলিয়ান ক্যালেন্ডার অনুসারে ১৭০০ সালে একটি লিপ ইয়ার ছিল, কিন্তু তারা ফেব্রুয়ারি মাস শুধুমাত্র ২৮ দিনেই কাটায়। একইভাবে ১৭০৪, ১৭০৮ সাল লিপ ইয়ার হলেও তারা ফেব্রুয়ারি মাস ২৮ দিনেই সীমাবদ্ধ রাখতে চেয়েছিলেন।
কিন্তু, ওই সময়ে যুদ্ধ শুরু হয়ে যায় এবং অন্যান্য অগ্রাধিকারমূলক কাজের মধ্যে এই লিপ ইয়ার না কাটানোর পরিবর্তনের কথা তারা ভুলে যায়। কয়েক বছর পরে, সম্রাট দ্বাদশ চার্লস বুঝতে পেরেছিলেন যে সুইডেনের ক্যালেন্ডারটি জুলিয়ান বা গ্রেগরিয়ান কোনটিই নয়।
এরপর তিনি ক্যালেন্ডার প্রণয়নে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করেন এবং আগের সব পরিবর্তন বাতিল করেন। কিন্তু, যেহেতু তারা ইতোমধ্যেই ১৭০০ সালের অধিবর্ষ বাদ দিয়েছিল, তাই তিনি আদেশ দেন যেন ১৭১২ অর্থাৎ আরেকটি লিপ ইয়ারে ২৯ ফেব্রুয়ারির পাশাপাশি আরেকটি অতিরিক্ত দিন যোগ করা হয়।
এভাবে জুলিয়াস সিজারের সময় থেকে ইতিহাসে প্রথম ও একটিমাত্র বারের জন্য ৩০ ফেব্রুয়ারি তারিখটি তৈরি করা হয়েছিল।
শেষ পর্যন্ত, সুইডেন উত্তর ইউরোপে তার প্রতিবেশী দেশগুলোর উদাহরণ অনুসরণ করে। দেশটি ১৭৫৩ সালে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার গ্রহণ করে এবং একই পদ্ধতিতে বছরে ১০ দিন এক সঙ্গে ক্যালেন্ডার থেকে বাদ দিয়ে দেয়।
অন্যান্য ৩০ ফেব্রুয়ারি
বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীতে ৩০ ফেব্রুয়ারি তারিখটি ব্যবহার করতে দেখা গেছে। রে ব্র্যাডবিউরির ছোট গল্প “দ্য লাস্ট নাইট অফ দ্য ওয়ার্ল্ড”-এ ৩০ ফেব্রুয়ারি ভয়াবহ ঘটনা ঘটবে বলে উল্লেখ করা হয়েছিল।
ব্রিটিশ লেখক জন রোনাল্ড রিয়েল টলকিয়েন তার ফ্যান্টাসি উপন্যাস ‘দ্য হবিট এবং দ্য লর্ড অফ দ্য রিংসে’ ৩০ ফেব্রুয়ারির কথা উল্লেখ করেন। তার বই অনুযায়ী হবিটরা একটি ক্যালেন্ডার তৈরি করে যেখানে ফেব্রুয়ারি মাস ছিল ৩০ দিনে। তবে বাস্তব জগতেও এই তারিখের ব্যবহার হতে দেখা গেছে।
যখন কোন মানুষের মৃত্যুর তারিখ অজানা থাকে তখন তাদের সমাধি প্রস্তর বা এপিটাফে জন্ম তারিখ হিসেবে ৩০শে ফেব্রুয়ারি দিনটিকে রেকর্ড করা হয়।
১৭৯২ সালে ফরাসি বিপ্লব চলাকালে দেশটি তাদের গণিতবিদ গিলবার্ট রোমের ডিজাইন করা একটি ‘প্রজাতন্ত্রী’ ক্যালেন্ডার গ্রহণ করে। এই ক্যালেন্ডারে ধর্মীয় রেফারেন্স বাদ দেওয়া হয় এবং মাসগুলোর নতুন নাম দেওয়ার চেষ্টা করা হয় – নতুন নামে প্রাকৃতিক ঘটনা এবং কৃষি খাতের নানা বিষয়কে প্রাধান্য দেয়া হয়েছিল। কিন্তু ক্যালেন্ডারের নতুন এ সংস্করণের স্থায়িত্ব ছিল খুব সংক্ষিপ্ত।
এরপর ১৮১৪ সালে নেপোলিয়নের উৎখাতের পর, ফ্রান্স দ্রুতই ত্রয়োদশ গ্রেগরির তৈরি এবং জুলিয়াস সিজারের সংস্করণের ক্যালেন্ডারে ফিরে আসে।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

অন্যান্য
সোনার মুদ্রার জাদু

অনেক দূরের এক দেশে, যেখানে মানুষ স্বপ্ন দেখে, কিন্তু বাস্তবতা তাদের স্বপ্নকে বারবার গলা টিপে ধরে। সেখানে জন্ম নিল এক শিশু, যার চোখে ছিল সমুদ্রের গভীরতা আর মন ছিল আকাশের মতো বিস্তৃত। তার নাম ছিল “নুরান”—অর্থাৎ, যিনি আলো ছড়ান।
নুরান বড় হলো এমন এক সমাজে, যেখানে ধনী আরও ধনী হয়, আর গরিবেরা দিন গোনে কখন ভাতের থালায় ভাত উঠবে। কিন্তু সে থেমে থাকল না। তার মনে হলো, যদি আলো এক জায়গায় থাকে, তবে অন্ধকার কখনোই দূর হবে না। আলো ছড়িয়ে দিতে হবে।
সে জানতো, সে একা কিছু করতে পারবে না, তবে যদি একে একে হাজারো মানুষ একে অপরকে সাহায্য করতে শুরু করে, তবে সে সমাজ বদলে যেতে পারে। নুরান একদিন এমন এক সোনার মুদ্রা তৈরি করল, যা ছিল জাদুর মুদ্রা। এই মুদ্রার শক্তি ছিল এমন—যদি এটি একজন গরিব মানুষের হাতে পড়ে, তবে তা তার জীবনের পরিবর্তন আনতে সাহায্য করবে। তবে, শর্ত ছিল একটাই- যদি সে এই সাহায্য নিয়ে অন্য কাউকে সাহায্য না করে, তবে মুদ্রাটি তার কাছে কোনো মূল্যহীন হয়ে যাবে।
ধীরে ধীরে, এই মুদ্রার জাদু ছড়িয়ে পড়তে লাগল। একে একে শত শত, হাজার হাজার মানুষ নিজেদের ভাগ্য বদলাতে থাকল, কিন্তু তারা সবাই আরও কাউকে সাহায্য করতে থাকল। ফলস্বরূপ, সমাজের চেহারাই বদলে গেল। একে অপরকে সাহায্য করার এই প্রক্রিয়া ক্রমেই একটি আন্দোলনে পরিণত হলো, যার শেকড় গেড়ে নিল মানবতার আদর্শ।
এই খবর ছড়িয়ে পড়ল রাজ্যের বাইরে, মহাদেশের বাইরে, গোটা বিশ্বে। বড় বড় রাজারা নুরানের এই জাদুর মুদ্রার রহস্য জানতে চাইল, কিন্তু সে শুধু বলল, এটি কোনো জাদু নয়, এটি শুধু বিশ্বাসের শক্তি।
একদিন, নুরানের সম্মানে এক বিশাল স্বর্ণমুদ্রা তৈরি করা হলো, যা শুধু তার অর্জনকেই নয়, বরং পুরো বিশ্বের জন্য এক অনুপ্রেরণা হিসেবে রইল। আর সেই মুদ্রার একপাশে লেখা রইল—আলো একা নয়, আলো ছড়াতে জানলে তবেই তা সত্যিকারের আলো।
এই রূপকথা কোনো কল্পকাহিনি নয়, এটি আমাদের সময়ের এক সত্য গল্পের প্রতিচ্ছবি। এটির সাথে গভীর সম্পর্ক রয়েছে আমাদের সমাজের বর্তমান চিত্রের। এটি একটি মূর্ত প্রতীক—একটি আদর্শ, যা বিশ্বকে দেখাচ্ছে যে, শুধুমাত্র প্রতিটি ব্যক্তি নিজের উন্নতি নয়, বরং ঐক্যবদ্ধভাবে মানবতার কল্যাণে কাজ করলেই আসবে পরিবর্তন।
ঠিক সেই সোনার মুদ্রার মতোই, মানবতার ইতিহাসে খোদাই করে রাখা হয়েছে এক বিশেষ স্বর্ণমুদ্রা—যার গায়ে জ্বলজ্বল করছে আলফ্রেড নোবেলের স্মৃতি। এটি কেবল ধাতুর নয়, এটি একটি আদর্শের প্রতীক, একটি পরিবর্তনের প্রতিশ্রুতি।
আর এই বিজয়ের মুদ্রাটি অর্জন করেছেন আমাদেরই একজন, যিনি অর্থনীতিকে কেবল সংখ্যার খেলা হিসেবে দেখেননি, বরং সেটিকে ব্যবহার করেছেন মানবতার কল্যাণে, দারিদ্র্যমোচনের এক অনন্য হাতিয়ার হিসেবে। তিনি কেবল একজন ব্যক্তি নন, বরং একটি নতুন যুগের স্থপতি, যার দর্শন বিশ্বকে দেখিয়েছে “সম্ভাবনার অর্থনীতি”—একটি এমন কাঠামো যেখানে অর্থ কেবল শক্তি নয়, বরং মুক্তির পথ।
এই অর্জন শুধু ব্যক্তিগত নয়, এটি এক বৈশ্বিক আন্দোলনের সূচনা, যা হতে পারে দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার প্রথম পদক্ষেপ। একটি মানবিক সমাজ, একটি সত্যিকারের স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার জন্য যে সংগ্রাম, তার মশাল হাতে তুলে নিয়েছেন তিনি।
বলছি নোবেল লরিয়েট ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কথা—যিনি অর্থনীতিকে দাঁড় করিয়েছেন মানবকল্যাণের পক্ষে, দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে, এবং পেয়েছেন শান্তির জন্য নোবেল পুরস্কার।
আমরা পেয়েছি তাকে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের পর হতভাগ্য মানুষের ভাগ্যের চাকা ঘোরানোর এক অগ্রদূত হিসেবে। কিন্তু প্রশ্ন হলো—আমরা কী সত্যিই তার সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সেই লড়াইয়ে শতভাগ নিষ্ঠা নিয়ে এগিয়ে চলেছি? নাকি আমরা নিজেরাই বাধা ও কাঁটা হয়ে সেই চলার পথকে আরও কঠিন করে তুলছি?
তিনি দেখিয়েছেন যে দারিদ্র্য কোনো অভিশাপ নয়, বরং এটি একটি অব্যবস্থাপনার ফল। তিনি দেখিয়েছেন, অর্থনীতির সঠিক ব্যবহারে সমাজের প্রান্তিক মানুষও নিজের ভাগ্য গড়ে তুলতে পারে। কিন্তু আমরা কী তার সেই শিক্ষাকে গ্রহণ করছি? নাকি সংকীর্ণ স্বার্থ আর বিভক্তির রাজনীতির ফাঁদে পড়ে সেই পরিবর্তনের গতিকে রুদ্ধ করে দিচ্ছি?
এই অর্জন কেবল একজন মানুষের নয়, এটি আমাদের সবার। এটি শুধু সম্মানের নয়, এটি দায়িত্বেরও। এখন সময় এসেছে আত্মজিজ্ঞাসার—আমরা কি সত্যিই ন্যায়ের পক্ষে? নাকি অজান্তেই অবিচারের শিকলে নিজেদের বন্দি করে ফেলেছি?
—জাগো বাংলাদেশ, জাগো!
লেখক: রহমান মৃধা, সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অন্যান্য
প্রত্যাবাসী অভিবাসী কর্মীদের সহায়তায় ইউসিবি ও রেইজ প্রকল্পের চুক্তি

ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক (ইউসিবি) পিএলসি এবং ওয়েজ আর্নার্স ওয়েলফেয়ার বোর্ডের (ডব্লিউইডব্লিউবি) অধীনে রিকভারি অ্যান্ড অ্যাডভান্সমেন্ট অব ইনফরমাল সেক্টর এমপ্লয়মেন্ট (রেইজ) প্রকল্প, উদ্যোক্তা উন্নয়নে প্রত্যাবাসী অভিবাসী কর্মীদের আর্থিক সহায়তা প্রদানের লক্ষ্যে সম্প্রতি প্রবাসী কল্যাণ ভবনে একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষর করেছে।
ইউসিবির অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক আদনান মাসুদ এবং রেইজ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ও যুগ্ম সচিব ড. এটিএম মাহবুব-উল করিম চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। উভয় প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
এই অংশীদারিত্বের মাধ্যমে বিদেশফেরত কর্মীদের ব্যবসা শুরু বা সম্প্রসারণের জন্য আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হবে। যা তাদের অর্থনীতিতে পুনরায় একীভূত হতে সাহায্য করবে। ইউসিবি তাদের স্ব-কর্মসংস্থানের জন্য বিশেষায়িত আর্থিক সেবা প্রদান করবে।
এসময় আদনান মাসুদ বলেন, এই উদ্যোগ বিদেশফেরত অভিবাসীদের ক্ষমতায়ন করবে এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান রাখবে।
ড. মাহবুব-উল করিম বলেন, টেকসই ব্যবসা গড়ে তুলতে আর্থিক সহায়তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ডব্লিউইডব্লিউবি পরিচালিত রেইজ প্রকল্প প্রত্যাবাসী অভিবাসী কর্মীদের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং উদ্যোক্তা উন্নয়নে কাজ করে। ইউসিবির সাথে এই সহযোগিতা তাদের সফলতার জন্য প্রয়োজনীয় সম্পদ নিশ্চিত করবে।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অন্যান্য
স্টার্লিংক বনাম বাংলাদেশ স্যাটেলাইট: ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ ও অর্থনৈতিক বাস্তবতা

রাতের আকাশে যখন তাকানো হয়, তখন অসংখ্য তারা দেখা যায়। কিন্তু কিছু তারা যেন অন্যদের চেয়ে আলাদা—তারা স্থির নয়, বরং পৃথিবীর চারপাশে ঘুরে চলেছে নিরন্তর। এগুলো আসলে সাধারণ তারা নয়, স্যাটেলাইট। মানুষ এখন তথ্য আদান-প্রদানের জন্য মহাকাশের এই ছোট্ট ধাতব বস্তুগুলোর উপর অনেক বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে।
একদিকে স্টার্লিংক, যা সারা বিশ্বে দ্রুতগতির ইন্টারনেট পরিষেবা দিতে মহাকাশে বিশাল এক নেটওয়ার্ক তৈরি করেছে। অন্যদিকে, বাংলাদেশ স্যাটেলাইট-১, বাংলাদেশের প্রথম নিজস্ব কৃত্রিম উপগ্রহ, যা দেশের সম্প্রচার এবং যোগাযোগ ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করার জন্য উৎক্ষেপণ করা হয়েছিল।
কিন্তু প্রযুক্তির জগতে প্রতিনিয়ত পরিবর্তন আসছে। স্টার্লিংক ক্রমশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে, এবং এতে প্রশ্ন ওঠে—বাংলাদেশে স্টার্লিংকের বিস্তার কি বাংলাদেশ স্যাটেলাইটের ভবিষ্যৎকে হুমকির মুখে ফেলবে? নাকি এই দুটি প্রযুক্তি পাশাপাশি টিকে থাকতে পারবে?
স্টার্লিংক: উচ্চগতির ইন্টারনেটের নতুন দিগন্ত
স্টার্লিংক মূলত একটি স্যাটেলাইট-ভিত্তিক ইন্টারনেট পরিষেবা, যা স্পেসএক্স কোম্পানি পরিচালনা করছে। এটি পৃথিবীর কক্ষপথে হাজার হাজার লো-আর্থ অরবিট (LEO) স্যাটেলাইট স্থাপন করে, যা ব্যবহারকারীদের দ্রুতগতির ইন্টারনেট সরবরাহ করে। স্টার্লিংকের ইন্টারনেট সংযোগ তৈরি হয় খুবই সহজভাবে—সিগন্যাল প্রথমে মহাকাশে থাকা স্যাটেলাইট থেকে ব্যবহারকারীর ডিশ অ্যান্টেনার মাধ্যমে গ্রহণ করা হয়, তারপর সেই সংকেত রাউটারের মাধ্যমে ইন্টারনেট সংযোগে রূপান্তরিত হয়। এর ফলে দূরবর্তী কিংবা দুর্গম স্থানেও সহজেই ইন্টারনেট পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হয়।
এই প্রযুক্তির অন্যতম প্রধান সুবিধা হলো বিশ্বব্যাপী কাভারেজ। যেখানে ভূ-ভিত্তিক ইন্টারনেট অবকাঠামো পৌঁছাতে পারে না, সেখানে স্টার্লিংক পৌঁছে যায়। তাছাড়া, এটি প্রচলিত ভূ-স্থির কক্ষপথের স্যাটেলাইটের তুলনায় অনেক কম উচ্চতায় থাকে, ফলে ইন্টারনেট সেবার গতি বেশি এবং ল্যাটেন্সি কম হয়। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো, এটি অত্যন্ত দ্রুত সম্প্রসারিত হচ্ছে—স্পেসএক্স ক্রমাগত নতুন স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করছে, যা নেটওয়ার্ককে আরও শক্তিশালী করছে।
বাংলাদেশ স্যাটেলাইট: সংকট ও সম্ভাবনা
২০১৮ সালে বাংলাদেশ স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণ করা হয়, যা বাংলাদেশের প্রথম যোগাযোগ উপগ্রহ। এটি ভূপৃষ্ঠ থেকে অনেক দূরে, Geostationary Earth Orbit (GEO)-তে স্থিতিশীল অবস্থানে রয়েছে। এই স্যাটেলাইট মূলত টেলিভিশন সম্প্রচার, টেলিযোগাযোগ ও ইন্টারনেট সেবা, সরকারি ও সামরিক যোগাযোগ এবং দুর্যোগকালীন জরুরি সেবা দেওয়ার জন্য ব্যবহার করা হয়। বাংলাদেশি টিভি চ্যানেলগুলো বিদেশি স্যাটেলাইটের ওপর নির্ভর না করে বাংলাদেশ স্যাটেলাইটের মাধ্যমে সম্প্রচার চালাতে পারে, এবং দূরবর্তী এলাকায় ইন্টারনেট সংযোগ স্থাপনের জন্য এটি ব্যবহার করা যেতে পারে।
কিন্তু এখন প্রশ্ন হলো, স্টার্লিংক যদি বাংলাদেশে জনপ্রিয় হয়ে যায়, তাহলে বাংলাদেশ স্যাটেলাইটের ভবিষ্যৎ কী হবে?
স্টার্লিংক যেহেতু উচ্চগতির ইন্টারনেট পরিষেবা সরবরাহ করে এবং এতে ল্যাটেন্সি কম, তাই যারা দ্রুতগতির সংযোগ চায়, তারা সহজেই এটি বেছে নিতে পারে। বাংলাদেশ স্যাটেলাইট-১ যেহেতু একটি GEO স্যাটেলাইট, তাই এর উচ্চ ল্যাটেন্সি একটি বড় সীমাবদ্ধতা। স্টার্লিংক যদি বাংলাদেশে প্রবেশ করে এবং সহজলভ্য হয়ে যায়, তাহলে বাংলাদেশ স্যাটেলাইটের ইন্টারনেট পরিষেবা থেকে আয় কমে যেতে পারে।
তবে, বাংলাদেশ স্যাটেলাইটের গুরুত্ব পুরোপুরি হারিয়ে যাবে না। কারণ এটি শুধু ইন্টারনেট সেবা দেওয়ার জন্য নয়, বরং সামরিক ও সরকারি নিরাপদ যোগাযোগ, টেলিভিশন সম্প্রচার, এবং দুর্যোগকালীন ব্যাকআপ পরিষেবা দেওয়ার জন্যও ব্যবহৃত হয়। বিশেষ করে, সরকারি প্রতিষ্ঠান ও সামরিক বাহিনী এখনও এই স্যাটেলাইটের ওপর নির্ভরশীল। এছাড়া, স্টার্লিংকের সেবার খরচ তুলনামূলক বেশি, যা বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের জন্য সহজলভ্য নাও হতে পারে।
বাংলাদেশ স্যাটেলাইট: অর্থনৈতিক বাস্তবতা
এই স্যাটেলাইট নির্মাণে বাংলাদেশ প্রায় ৩,০০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে। তবে এখন পর্যন্ত এটি প্রত্যাশিত পরিমাণে রাজস্ব আয় করতে পারেনি। বাংলাদেশের বেশিরভাগ টিভি চ্যানেল এখনও বিদেশি স্যাটেলাইট ব্যবহার করছে, এবং আন্তর্জাতিক বাজারে স্যাটেলাইটের ব্যান্ডউইথ বিক্রির পরিকল্পনা থাকলেও তেমন সাফল্য আসেনি। ফলে, এটি এখনো লাভজনক হতে পারেনি, বরং এটি পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য আরও অর্থের প্রয়োজন হচ্ছে, যা সরকারের জন্য আর্থিক চাপ সৃষ্টি করছে। যদি নতুন বাণিজ্যিক পরিকল্পনা তৈরি করা না হয়, তাহলে এটি দীর্ঘমেয়াদে ঋণের বোঝা হয়ে দাঁড়াতে পারে।
নামের রাজনীতি ও বাস্তবতা
শুধু বাংলাদেশ স্যাটেলাইট নয়, বাংলাদেশের অনেক বড় প্রকল্পই রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের নামে নামকরণ করা হয়। এটি শুধু বাংলাদেশে নয়, বিশ্বের অনেক দেশেই দেখা যায়। মূলত, সরকার বা ক্ষমতাসীন দল তাদের কৃতিত্বকে জনগণের মনে গেঁথে রাখতে চায়। তবে প্রকল্পের নামের চেয়ে এর কার্যকারিতা এবং টেকসই পরিকল্পনা বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
বাংলাদেশ স্যাটেলাইট প্রকল্পের ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে শুধু নাম নয়, কার্যকর নীতিমালার দিকেও গুরুত্ব দেওয়া জরুরি। নামের চেয়ে কর্মদক্ষতা এবং অর্থনৈতিক সম্ভাবনাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ—সেটিই হতে হবে মূল লক্ষ্য।
বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কি টিকে থাকতে পারবে?
শেষ পর্যন্ত, স্টার্লিংক ও বাংলাদেশ স্যাটেলাইট একে অপরের সরাসরি প্রতিদ্বন্দ্বী নয়, তবে স্টার্লিংকের জনপ্রিয়তা বাংলাদেশ স্যাটেলাইটের কিছু পরিষেবা থেকে রাজস্ব কমিয়ে দিতে পারে। তাই, সরকার যদি বাংলাদেশ স্যাটেলাইট প্রকল্পকে লাভজনক করতে চায়, তাহলে—
• দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে এর পরিষেবা গ্রহণে উৎসাহিত করতে হবে।
• আন্তর্জাতিক বাজারে ব্যান্ডউইথ বিক্রির কৌশল তৈরি করতে হবে।
• দ্বিতীয় স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের আগে প্রথম স্যাটেলাইটকে লাভজনক করার পরিকল্পনা নিতে হবে।
প্রশ্ন হলো- বাংলাদেশ কি বাংলাদেশ স্যাটেলাইটকে লাভজনক করতে পারবে, নাকি এটি কেবলমাত্র একটি রাজনৈতিক প্রতীক হিসেবেই থেকে যাবে?
রহমান মৃধা, সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন। rahman.mridha@gmail.com
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অন্যান্য
নীতি সহায়তা চেয়ে এনবিআরকে বিজিবিএর পাঁচ প্রস্তাব

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) প্রাক-বাজেট আলোচনায় বেশ কয়েকটি নীতি সহায়তা চেয়ে প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ গার্মেন্টস বায়িং হাউজ অ্যাসোসিয়েশন (বিজিবিএ)।
বিজিবিএর সহসভাপতি এ কে এম সাইফুর রহমান এ সহায়তা চেয়ে পাঁচটি প্রস্তাব দিয়েছেন। এগুলো হলো- অগ্রিম আয়কর (এআইটি) সাড়ে ৭ শতাংশ করা, নমুনার জন্য একটি পৃথক পাস বই চালু, লোকাল সোর্স ফ্যাব্রিক ও ট্রিমস ব্যবহার করে রপ্তানির অনুমতি, রপ্তানির পর শুল্ক প্রত্যাহার এবং আন্তর্জাতিক ট্রেড মেলার জন্য ভর্তুকি।
এ ছাড়াও পোশাক রপ্তানি বাড়ানোর ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখবে এমন কিছু সহায়তা চেয়েছেন সাইফুর রহমান।
বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) দুপুরে আগারগাঁওয়ের এনবিআর ভবনে এ আলোচনায় বিভিন্ন সংগঠনের ব্যবসায়ী নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
এনবিআর সভাপতিকে উদ্দেশ করে বাংলাদেশ টেরি টাওয়েল অ্যান্ড লিনেন ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শাহদাত হোসেন সোহেল বলেন, ব্যবসায়ীরা নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। আপনি দুর্নীতি বন্ধ করুন। ব্যবসায়ীরা আপনাদের সবকিছু দেবে। চট্টগ্রাম পোর্টের বিভিন্ন জায়গায় অনেক কিছু ঘটে। আমার কাছে অনেক তথ্য রয়েছে। ভয়েস ম্যাসেজসহ আপনাকে পাঠিয়েছিলাম। এখনও বন্ধ হয়নি। আপনার কাছে আবারও অনুরোধ করবো, আপনার সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তারা অনেক শক্তিশালী। মেম্বার সাহেবও আপনার থেকে শক্তিশালী।
অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ জানিয়ে বাংলাদেশ প্লাস্টিক গুডস ম্যানুফ্যাকচারার অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট কে এম ইকবাল বলেন, কদিন আগে পানগাঁও স্টেশনে দুটি কন্টেইনার আটকানো হয় আমান প্ল্যাস্টিকে। দুটির ডিউটি সাত কোটি টাকা দাবি করা হয়। ওই ছেলেটা এক সময় আত্মহত্যা করতে চেয়েছিল। আমি ওকে ফিরিয়ে এনেছি। সরকার পরিবর্তনের পর সেই কনটেইনার ছেলেটি কোটি টাকা দিয়ে ছাড়িয়েছে।
আলোচনায় বাংলাদেশ টেরি টাওয়েল অ্যান্ড লিলেন ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন উৎসে কর্তনের হার হ্রাস, নগদ প্রণোদনা থেকে উৎসে কর কর্তনের হার কমানো এবং ১০ কাউন্ট ও ২০ কাউন্ট সুতায় শুল্ক ও কর কমানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়।
রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা পূরণে সরকারের নীতি সহায়তা চায় বাংলাদেশ গার্মেন্ট অ্যাক্সেসরিজ অ্যান্ড প্যাকেজিং ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএপিএমইএ)। পাশাপাশি আসন্ন বাজেটে রপ্তানির বিপরীতে প্রযোজ্য উৎসে কর অর্ধেক কমানোর দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।
সংগঠনটি আগামী ৫ বছরের জন্য উৎসে কর ১ শতাংশ থেকে কমিয়ে ০.৫০ শতাংশ করার, ব্যক্তি পর্যায়ে করমুক্ত আয়ের সীমা সাড়ে ৩ লাখ থেকে বাড়িয়ে ৪ লাখ টাকা করার, কোম্পানির ক্ষেত্রে সঞ্চয়ী আমানত, স্থায়ী আমানত ইত্যাদির সুদ/মুনাফার ওপর উৎসে কর ২০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করার প্রস্তাব করেছে।
বন্ডেড ওয়্যারহাউস সুবিধা প্রদান, নগদ সহায়তার ওপর ১০ শতাংশ হারে অগ্রিম আয়কর প্রত্যাহারের প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুডস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএফএফইএ)। বাংলাদেশ বিস্কুট, ব্রেড ও কনফেকশনারি প্রস্তুতকারক সমিতি কেক, বিস্কুট ও কনফেকশনারি পণ্যে শুল্ক অব্যাহতি চেয়েছে।
তথ্য প্রযুক্তিখাতে কর অব্যাহতি ২০৩১ সাল পর্যন্ত অব্যাহত রাখার দাবি জানিয়েছে বেসিস। পাশাপাশি ডিজিটাল পেমেন্ট ইকোসিস্টেম গড়ে ওঠার আগে ক্যাশলেস ট্রানজেকশনের শর্ত শিথিল করার, দেশি সফটওয়্যার ও তথ্য প্রযুক্তির ওপর ভ্যাট প্রত্যাহার, সফটওয়্যার রপ্তানিতে প্রণোদনা ৬ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করার প্রস্তাব দিয়েছে।
প্লাস্টিকের খেলনা প্রস্তুতে ২৪ ধরনের কাঁচামাল আমদানিতে করছাড় চেয়েছে বাংলাদেশ প্লাস্টিক গুডস ম্যানুফ্যাকচারার অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিপিজিএমইএ)।
বাংলাদেশ এলপিজি অটোগ্যাস স্টেশন অ্যান্ড কনভারসন ওয়ার্কশপ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন এলপিজি অটোগ্যাস সেক্টরকে ট্যাক্স হলিডে সুবিধা প্রদান, এলপিজি কনভারসন কিট, সিলিন্ডার ও অন্যান্য যন্ত্রপাতি আমদানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা চেয়েছে। পাশাপাশি ভোক্তা পর্যায়ে অটোগ্যাসের বিক্রয়মূল্যের সঙ্গে সংযোজিত মূসক প্রত্যাহারের প্রস্তাব করেছে।
আমদানি করা ১৪টি কাঁচামালে কর ছাড় চেয়েছে বাংলাদেশ ফার্নিচার শিল্প মালিক সমিতি। রপ্তানির উদ্দেশে উৎপাদিত পণ্যের কাঁচামাল আমদানিতে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য কাঁচামাল বাবদ আরোপযোগ্য শুল্ক ও করের বিপরীতে শতভাগ ব্যাংক গ্যারান্টির মাধ্যমে বন্ড সুবিধা দেওয়ার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ ফার্নিচার এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন।
দি বাংলাদেশ জুয়েলারি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন হিরা আমদানির রপ্তানিতে মূসকের ওপর ২০ শতাংশ ভর্তুকি ও স্বর্ণের গহনার ক্ষেত্রে তিন বছরের জন্য মূসকের ওপর ৫০ শতাংশ ভর্তুকি প্রদানের প্রস্তাব করেছে। আর বাংলাদেশ গার্মেন্ট বায়িং হাউস অ্যাসোসিয়েশন ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে এআইটি ৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করেছে।
বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএম) ২০৩০ সাল পর্যন্ত ১৫ শতাংশ হারে আয়কর দেওয়ার দাবি জানায় সংগঠনটি।
বিটিএমএর পরিচালক মোশাররফ হোসেন বলেন, ভারতীয় সুতার প্রভাবে তারা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। ৭-৮ কোটি টাকার সুতা অবিক্রিত রয়েছে। আমরা মুনাফা করতে পারছি না।
এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, করপোরেট কর যেটা নেই সেটা আয়ের ওপর পারসেন্টেজ। গত ৫-৭ বছরে করপোরেট কর অনেক কমিয়েছি। কমাতে কমাতে ২৫ শতাংশে এনেছি। ১০০ টাকা লাভ হলে ২৫ টাকা সরকারকে দেবেন। আপনাদের লাভ হয় না বলছেন। তাহলে সরকারকে টাকা দেওয়ার দরকার নেই। সেক্ষেত্রে আপনার রিডিউস রেট যেটা আছে ১৫ শতাংশ সেটা আপনাদের কেন দরকার। আমাকে বোঝান। এই ১২-১৫ শতাংশ কার দরকার, যার অনেক লাভ হয়। ২৫ শতাংশ হলে হাজার কোটি টাকা ট্যাক্স দেয়। রেগুলার ট্যাক্স রেট হলে সমস্যা কী। পাশাপাশি ভারতীয় সুতা এত কম দামে আসে কীভাবে?
তবে ১৫ শতাংশ কর হার রাখার যুক্তিতে নানান বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সদস্যরা। এ বিষয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, আপনার ১৫ শতাংশ কেন হবে। এটার কোনো লজিক দেখি না। এটাতে আপনাদের বদনাম হচ্ছে। বলা হচ্ছে টেক্সটাইল খাতে কর হার কম। আপনারা রেগুলার রেটে চলে আসেন। ট্যাক্স হলে দেবেন, না হলে দেবেন না।
তিনি বলেন, গত কয়েক মাসে আমরা অনেক কর অব্যাহতি বাতিল করেছি। সে সব অব্যাহতি এ বছরের জুনে শেষ হবে, একটাও আর নতুন করে বাড়বে না। সবচেয়ে বেশি আপনাদের কথা শুনেছি। আপনারা বোঝাতে পারছেন না কেন। আরও বোঝান। দরকার হলে আজকে সারাদিন শুনবো। আমরা কেউ বুঝবো না এটা তো হয় না।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অন্যান্য
গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও আইন প্রতিষ্ঠার জন্য মুক্ত মত প্রকাশের গুরুত্ব

একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের মূল ভিত্তি হলো নাগরিকদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, আইনের শাসন এবং মানবাধিকার নিশ্চিত করা। সুইডেন একটি গণতান্ত্রিক দেশ, যেখানে জনগণের অধিকার সংরক্ষিত, তারা রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ব্যক্তিদেরও প্রকাশ্যে সমালোচনা করতে পারে, প্রশ্ন তুলতে পারে এবং সরকারি নীতির জবাবদিহিতা দাবি করতে পারে। জনগণের এই অধিকারই একটি শক্তিশালী গণতন্ত্রের পরিচয় বহন করে।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে যখন আমরা গণতন্ত্রের চর্চার কথা বলি, তখন দেখা যায় যে, সেখানে এখনো মতপ্রকাশের স্বাধীনতা বাধাগ্রস্ত হয়, বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের কারাগারে পাঠানো হয়, সাধারণ জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করা হয় না, এবং দেশকে এক ধরনের পারিবারিক শাসনের দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। অথচ, আইনের শাসন, জনগণের মৌলিক অধিকার, এবং গণতন্ত্রের সর্বোত্তম অনুশীলন নিশ্চিত করা গেলে বাংলাদেশেও সুইডেনের মতো উন্মুক্ত আলোচনা ও জবাবদিহিতার সংস্কৃতি গড়ে উঠতে পারে।
এবার সুইডেনে বর্তমান সংকট ও সরকারের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করা যাক
‘দেশীয় সন্ত্রাসবাদ’ মোকাবিলার জন্য সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ ঘোষণা করুন
সরকার ও সুইডিশ ডেমোক্র্যাট (Sverigedemokraterna – SD) দল থেকে অপরাধ মোকাবিলায় খালি কথা ও প্রতীকী রাজনীতি আর সহ্য করা যাবে না। এখন প্রধানমন্ত্রী উলফ ক্রিস্টারসন (Ulf Kristersson) – যিনি মোডারেট পার্টির (Moderata samlingspartiet – M) নেতা, তাকে স্পষ্ট করতে হবে যে, “দেশীয় সন্ত্রাসবাদ” মোকাবিলা করতে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া হবে, লিখেছেন সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট (Socialdemokraterna – S) দলের প্রাক্তন সংসদ সদস্য।
আজকের সুইডেনে, ইউরোপের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর মাফিয়া গোষ্ঠী থাকতে পারে, যারা ঠান্ডা মাথায় তাদের শত্রুদের হত্যা করছে, সাধারণ মানুষের বসতবাড়িতে বিস্ফোরণ ঘটাচ্ছে, এবং দোকান ও ভবন লক্ষ্য করে বোমা হামলা চালাচ্ছে। মাত্র ২৮ দিনে দেশে ৩২টি বিস্ফোরণ ঘটেছে, যার বেশিরভাগই রাজধানী স্টকহোমে।
১৩-১৪ বছর বয়সী শিশুদের, যাদের বেশিরভাগই অভিবাসী পটভূমি থেকে এসেছে এবং যারা সুইডেনে একটি সুন্দর ভবিষ্যতের আশা হারিয়ে ফেলেছে, তারা গ্যাংস্টার ও মাফিয়াদের হাতে ঘাতকের ভূমিকায় পরিণত হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী ও তার সরকার এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় কী করছে? গত দুই বছরে, তারা শুধুই একের পর এক হাস্যকর সংবাদ সম্মেলন ডেকেছে এবং নিজেদের গৃহীত ‘শক্তিশালী’ পদক্ষেপের প্রশংসা করেছে। কিন্তু বাস্তবে, হত্যা ও বিস্ফোরণের সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে এবং নাগরিকদের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতাও ক্রমাগত বেড়ে চলেছে।
প্রধানমন্ত্রী উলফ ক্রিস্টারসন যখন এই পরিস্থিতিকে ‘দেশীয় সন্ত্রাসবাদ’ বলে আখ্যা দেন, তখন ধরে নেওয়া যায় যে তিনি তার কথার গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতন। তাহলে, তিনি কি নিম্নলিখিত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে চান?
• গ্যাং সদস্যদের “সন্ত্রাসী” হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা?
• সন্ত্রাসবিরোধী আইন প্রয়োগ করা, যার ফলে সমাজ ও নাগরিকদের ওপর বড় ধরনের প্রভাব পড়তে পারে?
• বিচারিক প্রক্রিয়া ছাড়াই অ-নাগরিকদের নির্বাসিত করা?
• বহিষ্কৃত ব্যক্তিদের জন্য আজীবনের জন্য সুইডেনে প্রবেশ নিষিদ্ধ করা?
• পুলিশের মধ্যে একটি বিশেষ সন্ত্রাসবিরোধী ইউনিট গঠন করা, যা শুধুমাত্র গ্যাং সংক্রান্ত সন্ত্রাস মোকাবিলার জন্য দায়ী থাকবে?
• সন্ত্রাস মোকাবিলায় অভিজ্ঞ দেশগুলোর (যেমন জার্মানি, ইতালি, স্পেন ও আয়ারল্যান্ড) সঙ্গে সহযোগিতা ও শিক্ষা বিনিময় বৃদ্ধি করা?
প্রধানমন্ত্রী কি এই পদক্ষেপগুলো বাস্তবায়ন করতে চান? এই ধরনের পদক্ষেপ কি আইনের শাসনের ভিত্তিতে পরিচালিত একটি রাষ্ট্রে গ্রহণযোগ্য? এটি কি মাফিয়া ও সহিংসতা দমনের কার্যকর সমাধান?
সরকার ও SD দল, খালি প্রতিশ্রুতি যথেষ্ট হয়েছে, প্রতীকী রাজনীতিও আর চলবে না। আপনারা গ্যাং অপরাধ দমন ও সহিংসতা বন্ধ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। এখন স্পষ্টভাবে বলুন—আপনারা কীভাবে তা বাস্তবায়ন করবেন?
গণতন্ত্র ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার একটি গ্রহণযোগ্য উদাহরণ
একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, জনগণের ভোটাধিকার, আইনের শাসন ও মানবাধিকার নিশ্চিত করা জরুরি। উদাহরণস্বরূপ, দক্ষিণ আফ্রিকার গণতান্ত্রিক আন্দোলন এবং নেলসন ম্যান্ডেলার নেতৃত্ব গণতন্ত্রের একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। বর্ণবাদী শাসনের বিরুদ্ধে দীর্ঘ সংগ্রামের পর, দক্ষিণ আফ্রিকা যখন গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে, তখন তারা মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়।
সরকারের সমালোচনা করার অধিকার নিশ্চিত করা হয়, যাতে জনগণ তাদের দাবি সঠিকভাবে জানাতে পারে এবং রাষ্ট্রের কর্মকাণ্ডের জবাবদিহি নিশ্চিত করতে পারে।
সুইডেন ও বাংলাদেশের মতো দেশগুলোর জন্য এই উদাহরণ গুরুত্বপূর্ণ। সুইডেনে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রয়েছে, কিন্তু সরকার এখনো গ্যাং সহিংসতা দমনে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হচ্ছে। অন্যদিকে, বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক চর্চার সীমাবদ্ধতা জনগণের কণ্ঠরোধ করছে, যা শুধু রাজনৈতিক নয়, বরং সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রভাবও সৃষ্টি করছে।
তাই, একটি কার্যকর গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হলে, সরকারকে অবশ্যই জনগণের মতামত গ্রহণ করতে হবে, স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক নীতি প্রণয়ন করতে হবে এবং সর্বস্তরে বাকস্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে। শুধু আইন প্রণয়ন করলেই যথেষ্ট নয়, আইনের যথাযথ প্রয়োগ, শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান এবং জনগণের অধিকার সংরক্ষণই প্রকৃত গণতন্ত্রের ভিত্তি।
এটি শুধু রাজনৈতিক লড়াই নয়, বরং একটি জাতির ভবিষ্যৎ নির্ধারণের সংগ্রাম। যখন নাগরিকদের কণ্ঠরোধ করা হয়, তখন কেবল গণতন্ত্র নয়, বরং একটি দেশের সার্বিক উন্নয়ন, সামাজিক ন্যায়বিচার ও জনগণের মৌলিক অধিকারও হুমকির মুখে পড়ে। শুধুমাত্র শক্তিশালী আইন নয়, বরং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের চর্চাই একটি সমাজকে সন্ত্রাসবাদ, সহিংসতা, দুর্নীতি ও স্বৈরতন্ত্র থেকে মুক্ত করতে পারে।
বাংলাদেশের জন্য বাস্তবসম্মত প্রস্তাব
বাংলাদেশে সুইডেনের মতো গণতান্ত্রিক চর্চা প্রতিষ্ঠা এবং আইনের শাসন, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও মানবাধিকারের নিশ্চয়তা দেওয়া সম্ভব, তবে এটি অর্জন করতে হলে সুনির্দিষ্ট কিছু কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। যেমন:
✅ গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা, যেখানে সাংবাদিকরা নির্ভয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করতে পারবে এবং সরকারের কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করতে পারবে, যা গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করবে।
✅ বিচারব্যবস্থাকে আরও স্বাধীন ও শক্তিশালী করা, যাতে বিচারপ্রক্রিয়া কোনও রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ ছাড়া সঠিকভাবে পরিচালিত হয় এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়।
✅ সরকারের কার্যক্রমে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা, বিশেষ করে নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা, সুশাসন এবং সরকারি নীতিনির্ধারণে জনগণের মতামতের প্রতিফলন ঘটানো।
✅ বিরোধী মতের প্রতি সহনশীলতা বৃদ্ধি করা, যাতে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক গোষ্ঠী নির্বিঘ্নে তাদের মত প্রকাশ করতে পারে এবং একটি ভারসাম্যপূর্ণ গণতান্ত্রিক পরিবেশ গড়ে ওঠে।
✅ শিক্ষাব্যবস্থায় গণতন্ত্র ও নাগরিক অধিকার সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা, যাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম গণতন্ত্রের মূল্যবোধ বুঝতে পারে এবং সক্রিয়ভাবে নাগরিক দায়িত্ব পালন করতে পারে।
এসব পদক্ষেপ বাংলাদেশকে শুধু একটি কার্যকর গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করবে না, বরং সহিংসতা, সন্ত্রাসবাদ ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে কার্যকর প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সহায়ক হবে।
গণতন্ত্র কেবল একটি শাসনব্যবস্থা নয়, এটি একটি মূল্যবোধ, যা জনগণের অধিকার, স্বাধীনতা ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে কাজ করে। তাই, একটি প্রকৃত গণতান্ত্রিক সমাজ গঠনের জন্য শুধু সরকার নয়, জনগণকেও সচেতন ও সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে।
রহমান মৃধা, সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন। rahman.mridha@gmail.com