অর্থনীতি
আপাতত ছাপানো টাকা বাজারে ছাড়বে না বাংলাদেশ ব্যাংক

মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণ করতে নতুন সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আপাতত ছাপানো টাকা বাজারে ছাড়বে না কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বরং আগে ছাড়া টাকার কিছু অংশ পর্যায়ক্রমে তুলে নেবে। এর অংশ হিসাবে ইতোমধ্যে বেশকিছু টাকা তুলে নিয়েছে। টাকা ছাড়িয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সরকারকে ঋণের জোগানও বন্ধ করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিজস্ব উৎস বা ছাপানো টাকায় যেসব তহবিল গঠন করা হয়েছে, সেগুলোয় নতুন করে অর্থের জোগান বন্ধ করা হয়েছে। একই সঙ্গে এসব টাকায় আপাতত আর নতুন তহবিল গঠন করা হবে না।
মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতির নিয়ন্ত্রণ করতেই কেন্দ্রীয় ব্যাংক এসব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করছে। এর প্রভাবে ইতোমধ্যে বাজারে টাকার প্রবাহ কমে গেছে। এতে সরকারি ও বেসরকারি দুই খাতেই ঋণপ্রবাহ কমেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বাণিজ্যিক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোয় তারল্যের জোগানও ব্যয়বহুল করা হয়েছে। ফলে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ধার করছে কম। এর মাধ্যমে বাজারে টাকার প্রবাহে লাগাম পড়েছে। ফলে মানুষের চাহিদা কমবে। এতে মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতিতে লাগাম পড়বে।
তবে অনেকেই মনে করেন, এককভাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষে মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। কারণ, ইউরোপ-আমেরিকার মূল্যস্ফীতির সঙ্গে বাংলাদেশের মিল নেই। এদেশে মূল্যস্ফীতি যতটুকু না টাকার প্রবাহ বাড়ার কারণে বৃদ্ধি পায়, এর চেয়ে বেশি বাড়ে ত্রুটিযুক্ত বাজারব্যবস্থার কারণে।
সূত্র জানায়, কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বাজারে সবচেয়ে বেশি টাকার জোগান আসে সরকারকে ঋণ দেওয়ার মাধ্যমে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরকারকে যে ঋণ দেয়, এর প্রায় পুরোটাকেই বলা হয় ছাপানো টাকা। এসব টাকা বাজারে এলে মুদ্রার সরবরাহ কয়েকগুণ বেড়ে যায়। এতে চাহিদা বাড়ে। ফলে মূল্যস্ফীতির হার বেড়ে যায়।
চলতি অর্থবছরের শুরু থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সরকারকে দেওয়া নতুন ঋণ বন্ধ করা হয়েছে। এর বিপরীতে আগের দেওয়া ঋণ সরকার পরিশোধ করছে। গত অর্থবছর কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সরকার ঋণ নিয়েছিল প্রায় ৯৮ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের জানুয়ারি পর্যন্ত সরকার কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে নিট কোনো ঋণ নেয়নি। তবে আগের ঋণ বাবদ প্রায় ৩১ হাজার কোটি টাকা পরিশোধ করেছে। ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সরকারের নেওয়া ঋণের স্থিতি কমেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক নিজস্ব উৎস থেকে টাকার জোগান দিয়ে বিভিন্ন তহবিল গঠন করেছে। এসব তহবিল থেকে ঋণ দেওয়ার মাধ্যমে বাজারে ছাপানো টাকা প্রবেশ করে। এতে মূল্যস্ফীতির হার বাড়ে। এ কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সম্প্রতি সিদ্ধান্ত নিয়েছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অর্থায়নে চলমান তহবিলগুলোয় নতুন করে আর কোনো অর্থের জোগান দেবে না। ওইসব তহবিল আগের সীমার মধ্যে থেকে লেনদেন হবে। একই সঙ্গে চাহিদা থাকার পরও নতুন করে কোনো তহবিল গঠন করবে না।
সূত্র জানায়, বর্তমানে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ১ লাখ ৩৮ হাজার কোটি টাকার ১৯টি তহবিল রয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটি তহবিলের মেয়াদ শেষ হয়েছে, তবে এগুলোর ঋণ এখনো বাজারে রয়েছে। এর মধ্যে করোনার সময় গঠন করা হয়েছে ১৪টি তহবিল। বাকি তহবিলগুলো বিভিন্ন সময়ে করা হয়েছে। এর মধ্যে বড় শিল্প ও সেবা খাতের উদ্যোক্তাদের চলতি মূলধন জোগান দিতে দুই দফায় ৮০ হাজার কোটি টাকার তহবিল গঠন করা হয়। এর মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক দিয়েছে ৪০ হাজার কোটি টাকা। ক্ষুদ্র, কুটির ও মাঝারি শিল্পে চলতি মূলধন দিতে দুই দফায় ৬০ হাজার কোটি টাকার তহবিল গঠন করা হয়। এর মধ্যে কেন্দ্রীয় দিয়েছে ৩০ হাজার কোটি টাকা।
রপ্তানি খাতে কম সুদে ঋণ দিতে ৩০ হাজার কোটি টাকার তহবিল গঠন করা হয়েছে। যার পুরোটাই কেন্দ্রীয় ব্যাংক দিয়েছে বৈদেশিক মুদ্রায়। প্রিশিপমেন্ট খাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক দিয়েছে ৭ হাজার কোটি টাকার তহবিল। পেশাজীবীদের জন্য দেড় হাজার কোটি টাকা এবং কৃষি খাতে পুনঃঅর্থায়ন করতে দুই দফায় দেওয়া হয়েছে ৮ হাজার কোটি টাকা। স্বল্প-আয়ের মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে ৩ হাজার কোটি টাকার পুনঃঅর্থায়ন স্কিম ও গ্রামীণ কর্মসংস্থানে ৩ হাজার ২০০ কোটি টাকার তহবিল রয়েছে। এসএমই খাতের জন্য ২ হাজার কোটি টাকার ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কিম রয়েছে।
ক্ষুদ্রঋণ খাতে চলতি মূলধন দিতে দুটি তহবিলে ৩ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ, গ্রিন অর্থায়ন তহবিল ৩ হাজার কোটি, পরিবেশবান্ধব শিল্পঋণ দিতে ৪০০ কোটি, ডিজিটাল খাতে ঋণ দিতে ৫০০ কোটি, ক্ষুদ্রশিল্পে মেয়াদি ঋণ দিতে ৩ হাজার কোটি; গম-ভুট্টার উৎপাদন বাড়াতে ১ হাজার কোটি; কুটির, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে পুনঃঅর্থায়ন স্কিমে ২৫ হাজার কোটি; জাহাজ নির্মাণ খাতে ২ হাজার কোটি, আমদানির বিকল্প পণ্য উৎপাদনে ৫ হাজার কোটি এবং সিনেমা হল নির্মাণে ১ হাজার কোটি টাকার তহবিল রয়েছে। এসব ঋণের সুদহার কম বলে উদ্যোক্তাদের বেশ আগ্রহ রয়েছে।
এ ছাড়া বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিজস্ব উৎস থেকে টাকার জোগান দেওয়া বন্ধ করা হয়েছে। ফলে বাজারে টাকার প্রবাহ কমেছে। চলতি অর্থবছরের জুলাই-জানুয়ারিতে টাকার প্রবাহ কমেছে প্রায় ৩ শতাংশ। গত অর্থবছরের একই সময়ে বেড়েছিল প্রায় ৯ শতাংশ। গত অর্থবছর থেকে এখন পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংক সংকোচনমুখী মুদ্রানীতি অনুসরণ করছে। এতে টাকার প্রবাহ কমেছে।
টাকার প্রবাহ কমার কারণে ব্যাংকগুলোর ঋণ বিতরণের সক্ষমতা কমেছে। ফলে ঋণপ্রবাহও কমেছে। গত অর্থবছরের জুলাই-জানুয়ারিতে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ বেড়েছিল ১০ শতাংশের বেশি। চলতি অর্থবছরের একই সময়ে বেড়েছে ৫ শতাংশ। সরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ গত অর্থবছরের ওই সময়ে বেড়েছিল প্রায় ৪ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের একই সময়ে কমেছে ৯ শতাংশ। ঋণপ্রবাহ কমায় অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের গতি কমেছে। এতে উৎপাদন কমছে, কমবে জিডিপির প্রবৃদ্ধি। এর মাধ্যমে মূল্যস্ফীতির হার কমানোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
সূত্র জানায়, কেন্দ্রীয় ব্যাংক সব সময়ই টাকা ছাপানোর কাজটি করে। সেগুলো ভল্টে জমা রাখা হয়। ভল্টে থাকা টাকাকে মৃত বা মূল্যহীন বলা হয়। বাজারে এলে তা জীবন পায় বা মূল্যবান হয়। চাহিদা অনুযায়ী এগুলোকে বাজারে ছাড়া হয়। এ প্রক্রিয়ায় ছাপানো টাকা বাজারে আসে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর নিজস্ব সম্পদ বা আমানতকারীদের অর্থের মাধ্যমে। এতে মূল্যস্ফীতির হার বৃদ্ধিতে খুব বেশি ভূমিকা রাখে না। তবে সরকারকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অর্থে বিশেষ তহবিল বা ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিজস্ব উৎস থেকে ঋণ দিলে সেগুলো হয় ছাপানো টাকা। এসব অর্থ বাজারে এসে মুদ্রা সরবরাহ বাড়িয়ে দিয়ে মূল্যস্ফীতি ঘটায়। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক জিডিপির আকার বাড়ার সঙ্গে টাকার প্রবাহও বাড়িয়ে থাকে। যে কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিজস্ব উৎস থেকে টাকার জোগান দেয়।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

অর্থনীতি
দেশের বাজারে বাড়ল সোনার দাম, ভরি ১৫৩৪৭৫ টাকা

ঈদের আগে দেশের বাজারে সোনার দাম বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস)। সবচেয়ে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের এক ভরি (১১.৬৬৪ গ্রাম) সোনার দাম ২ হাজার ৬১৩ টাকা বাড়িয়ে ১ লাখ ৫৩ হাজার ৪৭৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
স্থানীয় বাজারে তেজাবী সোনার (পাকা সোনা) দাম বাড়ার পরিপ্রেক্ষিতে রোববার (১৬ মার্চ) এ দাম বাড়ানো হয়েছে।
সোমবার (১৭ মার্চ) থেকে নতুন দাম কার্যকর করা হবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস)।
কাফি
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
১৫ দিনেই রেমিট্যান্স এলো ২০ হাজার কোটি টাকা

চলতি বছরের মাস মার্চে নতুন রেকর্ড হতে পারে রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয়ে। ভাঙতে পারে অতীতে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্সের রেকর্ড। মার্চের প্রথম ১৫ দিনে ১৬৫ কোটি ৬১ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন বিভিন্ন দেশে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিরা। বাংলাদেশি মুদ্রায় (প্রতি ডলার ১২২ টাকা হিসাবে) যার পরিমাণ ২০ হাজার ২০৪ কোটি টাকার বেশি।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সবশেষ তথ্য বলছে, চলতি মাস মার্চে প্রতিদিন আসছে ১১ কোটি ডলারের (১৩৪৭ কোটি টাকা) বেশি। রেমিট্যান্স আসার এ ধারা অব্যাহত থাকলে মাসের পুরো সময়ে তিন বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাতে পারে রেমিট্যান্স। যা দেশের ইতিহাসে নতুন রেকর্ড গড়তে পারে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, নতুন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই দেশ থেকে অর্থপাচার কমেছে। একই সঙ্গে কমেছে হুন্ডি কারবারির দৌরাত্ম্যও। অন্য দিকে, খোলা বাজারের মতোই ব্যাংকে রেমিট্যান্সের ডলারের দাম পাওয়া যাচ্ছে। এসব কারণে প্রবাসীরা বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠাতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। তাছাড়া আসন্ন ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে আরও বেশি বেড়েছে রেমিট্যান্স আসার গতি।
প্রাপ্ত তথ্য বলছে, আলোচিত সময়ে (মার্চে প্রথম ১৫ দিন) ১৬৫ কোটি ৬১ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন বিভিন্ন দেশে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিরা। এর মধ্যে রাষ্ট্র মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে রেমিট্যান্স এসেছে ৩৭ কোটি ১১ লাখ ডলারের বেশি, বিশেষায়িত দুই ব্যাংকের মধ্যে এক ব্যাংকের (কৃষি ব্যাংক) মাধ্যমে রেমিট্যান্স এসেছে ১৩ কোটি ডলার। আর বেসরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিট্যান্স এসেছে ১১৫ কোটি ১৬ লাখ ২০ হাজার ডলার এবং বিদেশি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ৩১ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স।
এ সময়ে কোনো রেমিট্যান্স আসেনি এমন ব্যাংকের সংখ্যা ৭টি। এসব ব্যাংকের মধ্যে রয়েছে রাষ্ট্র মালিকানাধীন বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক বা বিডিবিএল, বিশেষায়িত রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক। বেসরকারি ব্যাংকের মধ্যে রয়েছে আইসিবি ইসলামী ব্যাংক ও পদ্মা ব্যাংক। এছাড়া বিদেশি ব্যাংকগুলোর মধ্যে রয়েছে হাবিব ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান, স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া এবং উরি ব্যাংক।
চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের ৮ মাসে রেমিট্যান্স এসেছে এক হাজার ৮৪৯ কোটি ডলার। যা গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্রথম ৮ মাসে ছিল এক হাজার ৪৯৪ কোটি ডলার। সে হিসেবে গত অর্থবছরের প্রথম ৮ মাসের চেয়ে চলতি অর্থবছরের প্রথম ৮ মাসে রেমিট্যান্স বেড়েছে ৩৫৫ কোটি ডলার।
কাফি
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
করমুক্ত আয়সীমা ৪ লাখ টাকা করার প্রস্তাব সিপিডির

ব্যক্তি-শ্রেণি করদাতাদের বার্ষিক করমুক্ত আয়সীমা সাড়ে তিন লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে চার লাখ টাকা করার সুপারিশ করেছে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। বর্তমানে একজন করদাতার করমুক্ত আয়সীমা সাড়ে তিন লাখ টাকা আছে। ২০২৫-২৬ অর্থবছরে তা আরও ৫০ হাজার টাকা বাড়ানোর কথা বলেছে সিপিডি।
রবিবার (১৬ মার্চ) রাজধানীর ধানমন্ডি সিপিডি কার্যালয়ে ‘২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট: সিপিডির সুপারিশ’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এই সুপারিশ করা হয়।
সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম, সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানসহ আরও অনেকে।
বর্তমান ব্যক্তিশ্রেণির করদাতাদের ওপর ৫, ১০, ১৫, ২০ ও ২৫ শতাংশ হারে কর বসে। প্রথম সাড়ে তিন লাখ টাকার ওপর কর নেই। পরের প্রথম এক লাখ টাকার জন্য ৫ শতাংশ, পরবর্তী ৪ লাখ টাকার জন্য ১০ শতাংশ, পরবর্তী ৫ লাখ টাকার জন্য ১৫ শতাংশ, পরবর্তী ৫ লাখ টাকার জন্য ২০ শতাংশ এবং বাকি অর্থের ওপর ২৫ শতাংশ হারে কর বসবে।
এছাড়া মহিলা করদাতা এবং ৬৫ বছরের বেশি বয়সীদের জন্য করমুক্ত আয়সীমা হলো চার লাখ টাকা। তৃতীয় লিঙ্গের করদাতা এবং প্রতিবন্ধী স্বাভাবিক ব্যক্তি করদাতার করমুক্ত আয়সীমা হবে পৌনে পাঁচ লাখ টাকা। গেজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধা করদাতার করমুক্ত আয়ের সীমা পাঁচ লাখ টাকা হবে। আর প্রতিবন্ধী ব্যক্তির পিতামাতা বা আইনানুগ অভিভাবকের প্রত্যেক সন্তান বা পোষ্যর জন্য করমুক্ত আয়ের সীমা আরও ৫০ হাজার টাকা বেশি হবে।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
নয় ব্যাংককে ২৯ হাজার কোটি টাকা ধার দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক

গত আগস্টে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর আমানতকারীরা কয়েকটি ব্যাংক থেকে আমানত তুলতে ভিড় করেন। এতে তীব্রতর হয় তারল্য সংকট। সংকটে টাকা ছাপিয়ে দুর্বল ব্যাংকগুলোকে ধার দিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। নতুন গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুরের আমলে ৯টি ব্যাংককে প্রায় সাড়ে ২৯ হাজার কোটি টাকা ধার দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এরমধ্যে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংককে (এসআইবিএল) ৫ হাজার ৫০০ কোটি টাকা এবং ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংককে সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। টাকা ছাপিয়ে ন্যাশনাল ব্যাংককে ৫ হাজার কোটি টাকা, ইউনিয়ন ব্যাংককে ২ হাজার কোটি টাকা, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংককে ২০০ কোটি টাকা, আইসিবি ইসলামী ব্যাংককে ১০ কোটি টাকা, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংককে ২ হাজার কোটি টাকা, এক্সিম ব্যাংককে ৮ হাজার ৫০০ কোটি টাকা এবং এবি ব্যাংককে ২০০ কোটি টাকা ধার দেওয়া হয়েছে।
এসব ব্যাংককে টাকা ধার দেওয়া হয় জামানত ছাড়া। বিদায়ী বছরের শেষ দিকে এক সংবাদ সম্মেলনে গভর্নর জানান, বলেছিলাম আমরা আর টাকা ছাপাব না। আগের সে অবস্থান থেকে সাময়িকভাবে সরে এসেছি, পুরোপুরিভাবে নয়। সংকটে থাকা ব্যাংকগুলোকে যে পরিমাণ তারল্য সহায়তা দেওয়া হবে সমপরিমাণ টাকা বাজার থেকে বন্ড ছাড়ার মাধ্যমে তুলে ফেলবো। অর্থাৎ এক হাতে টাকা দেবো, অন্য হাতে বাজার থেকে তুলে নেবো।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন হলে বছরে ক্ষতি ৮ বিলিয়ন ডলার

এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনে বছরে ৮ বিলিয়ন ডলার ক্ষতি হতে পারে বলে জানিয়েছেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন।
তিনি বলেন, গ্র্যাজুয়েশন পরবর্তী সময়ে ইউরোপের বাজারে শুল্কছাড় সুবিধা উঠে যাবে। এ ছাড়া জলবায়ু অর্থায়নের ক্ষেত্রেও উন্নয়ন সহযোগিতা কমবে। আমাদের ব্যবসায়ীরা এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রস্তুত নন।
গতকাল রাজধানীর এফডিসিতে এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের চ্যালেঞ্জ নিয়ে আয়োজিত ছায়া সংসদে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
সিপিডির নির্বাহী পরিচালক বলেন, বিগত সরকারের সময় যে অর্থনৈতিক তথ্য দেওয়া হয়েছিল, তা ছিল গোঁজামিলনির্ভর ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। অর্থনৈতিক ডেটা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহারে বাংলাদেশ ছিল অন্যতম অগ্রগণ্য দেশ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোকে (বিবিএস) নির্দেশ দেওয়ার মাধ্যমে তারা মনমতো ডেটা ব্যবহার করত। এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের পরে বাংলাদেশকে কমার্শিয়াল রেটে ঋণ নিতে হবে, যা পরিশোধ করা ও ঋণের শর্ত পূরণ করা কঠিন।
তিনি বলেন, চীনের ঋণের ব্যাপারে সব সময় একটা সংশয় থাকে। অন্যান্য দেশের ঋণের ক্ষেত্রে কমপ্লায়েন্স স্পষ্ট থাকলেও চীনের ক্ষেত্রে তা থাকে না। কোনোভাবেই ঋণের ফাঁদে পা দেওয়া যাবে না। গত ১৫ বছরে ঋণের টাকা ব্যাপক অপচয়, দুর্নীতি ও লুটপাট হয়েছে। ঋণ পরিশোধে বাস্তবভিত্তিক কোনো পরিকল্পনা না থাকায় এই ঋণ বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বৈদেশিক ঋণ নেওয়ায় সতর্কতা ও ঋণ ব্যবস্থাপনায় সুশাসন এবং জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে।
ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিলেও প্রশ্ন হচ্ছে, ‘আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের ভুয়া তথ্যের ভিত্তিতে আমরা উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ হতে যাচ্ছি কি না?
তিনি বলেন, বিগত সরকারের আমলের অর্থনৈতিক উন্নয়নকে ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে দেখানো হতো। ভুল, মিথ্যা ও অতিরঞ্জিত তথ্য দিয়ে উন্নয়নের মিথ্যা গল্প শোনানো হতো। দেশের রিজার্ভ, জিডিপি, রপ্তানি আয়, দারিদ্র্যবিমোচন, খাদ্য উৎপাদন, বাল্যবিয়ে এমনকি প্রকৃত জনসংখ্যা নিয়েও মিথ্যাচার করা হয়েছিল বিগত সময়ে। সরকার যেভাবে চাইত বিবিএস সেভাবেই তথ্য পরিসংখ্যান দিত। অবস্থা এতটাই খারাপ ছিল, সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত এক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যকে বোগাস বলে আখ্যায়িত করেছিলেন।
তিনি আরও বলেন, বিদেশে রোড শোর নামে রাষ্ট্রীয় অর্থ অপচয় করে প্রমোদভ্রমণ করা হয়েছে। দেশের খেলাপি ঋণের প্রকৃত তথ্য কখনো জানতে দেওয়া হয়নি। যে পরিমাণে ঋণ আদায় হতো, তার চেয়ে বেশি অবলোপন হতো। ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন পাঁচ তারকা হোটেলে বসে সুদহার ও ডলারের মূল্য নির্ধারণ করে দিত। সরকার, কিছু রাজনীতিবিদ, আমলা ও ব্যবসায়ী এই চার চক্রের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গিয়েছিল আওয়ামী সরকার।
যদিও অর্থনীতিবিদদের অনেকেই মনে করেন, গত এক দশকের বেশি সময় সরকার যে ডেটা ম্যানিপুলেট করেছে, এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের জন্য তা মোকাবিলা করা সম্ভব। তবে বিগত সরকারের আমলে আর্থিক খাতের অনিয়ম-দুর্নীতি, জ্বালানি সংকট, উচ্চ মূল্যস্ফীতি, সুদহার বৃদ্ধি, এফডিআই কমে যাওয়া, বেসরকারি বিনিয়োগের ঘাটতিসহ বর্তমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় ২০২৬-এ বাংলাদেশের জন্য এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের চ্যালেঞ্জে পড়ার শঙ্কা রয়েছে।
তবে এলডিসি থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে প্রায় দেড় বছরের বেশি সময় হাতে আছে। তাই এর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আমাদের এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে। এতে দেশের মর্যাদা আরও বাড়বে, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকর্ষণ করবে। নতুন শিল্প-কারখানা স্থাপনের সুযোগ বাড়বে, অধিক কর্মসংস্থান তৈরি হবে। অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আয় বাড়বে।