ব্যাংক
যোগ্য অডিট ফার্মের তালিকা প্রকাশ করলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক
ব্যাংক ও নন ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান বা এনবিএফআইগুলোর আর্থিক প্রতিবেদন নিরীক্ষার জন্য যোগ্য ৩৯টি অডিট ফার্মের তালিকা প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আগে এই তালিকায় ৩১টি প্রতিষ্ঠান ছিল। যোগ্য তালিকায় নতুন করে জায়গা পেয়েছে ৮টি অডিট ফার্ম।
সোমবার (৫ ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশ ব্যাংক যোগ্য অডিট ফার্মগুলোর হালনাগাদ তালিকা প্রকাশ করেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈধ অডিট ফার্মগুলো হলো- এ কাশেম অ্যান্ড কোং, এ ওয়াহাব অ্যান্ড কোং, একনাবিন, আহমদ জাকের অ্যান্ড কোং, আহসান মনঞ্জুর অ্যান্ড কোং, অনিল সালাম ইদ্রিস অ্যান্ড কোং, অরুন অ্যান্ড কোম্পানি , আজিজ হালিম খায়ের চৌধুরী, বাসু ব্যানার্জি নাথ অ্যান্ড কোং, চৌধুরী ভট্টাচার্য অ্যান্ড কোং, দাস চৌধুরী দত্ত অ্যান্ড কোং, দেওয়ান নজরুল ইসলাম অ্যান্ড কোং, জি কিবরিয়া অ্যান্ড কোং, হুদা ভাসি চৌধুরী অ্যান্ড কোং, হক ভট্টাচার্য দাস অ্যান্ড কোং, হাওলাদার ইউনুস অ্যান্ড কোং, হোসাইন ফরহাদ অ্যান্ড কোং, ইসলাম আফতাব কামরুল অ্যান্ড কোং, ইসলাম জাহিদ অ্যান্ড কোং, কে এম আলম অ্যান্ড কোং, কাজী জহির খান অ্যান্ড কোং, খান ওয়াহাব শফিক রহমান অ্যান্ড কোং, এম জে আবেদিন অ্যান্ড কোং, এম এম রহমান অ্যান্ড কোং, এম জেড ইসলাম অ্যান্ড কোং, এমএবিএস অ্যান্ড জে পার্টনার্স, মাহমুদ সবুজ এন্ড কো., মাহফেল হক অ্যান্ড কোং, মালেক সিদ্দিকী ওয়ালী, মাসিহ মুহিত হক অ্যান্ড কোং, এমআরএইচ দে অ্যান্ড কোং, নূরুল ফারুক হাসান অ্যান্ড কোং, পিনাকী অ্যান্ড কোম্পানি, রহমান রহমান হক (কেপিএমজি), এস কে বরুয়া অ্যান্ড কোং, সফিক বসাক অ্যান্ড কোং, স্নেহাশীষ মাহমুদ অ্যান্ড কোং, সাইফুল সামসুল আলম অ্যান্ড কোং, জোহা জামান কবির রশিদ অ্যান্ড কোং।
নতুন জায়গা পাওয়া ৮ অডিট ফার্ম
এ ওয়াহাব অ্যান্ড কোং, অনিল সালাম ইদ্রিস অ্যান্ড কোং, কাজী জহির খান অ্যান্ড কোং, এমআরএইচ দে অ্যান্ড কোং, মাহমুদ সবুজ এন্ড কো., এস কে বরুয়া অ্যান্ড কোং, সফিক বসাক অ্যান্ড কোং, স্নেহাশীষ মাহমুদ অ্যান্ড কোং।
দ্য ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশের (আইসিএবি) তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠান থেকে যোগ্য অডিট ফার্মের নাম প্রকাশ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সর্বশেষ ২০২৩ সালের নভেম্বরে ৩১টি প্রতিষ্ঠানের নাম প্রকাশ করা হয়েছিল। এবারও কিছু প্রতিষ্ঠান নতুন তালিকায় স্থান পেয়েছে।
অর্থসংবাদ/এমআই
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
ব্যাংক
ব্যাংকিং খাত সংস্কারে ৬ সদস্যের টাস্কফোর্স গঠন
ব্যাংকিং খাত সংস্কারের লক্ষ্যে ৬ সদস্যের একটি টাস্কফোর্স গঠন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আজ বুধবার (১১ সেপ্টেম্বর) কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
টাস্কফোর্সের সদস্যরা হলেন- প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়-সংক্রান্ত বিশেষ দূত ড. লুৎফে সিদ্দিকী, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর মুহাম্মদ এ. (রুমি) আলী, ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান মেহরিয়ার এম হাসান, বিশ্ব ব্যাংক গ্রুপের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন, জেডএনআরএফ ইউনিভার্সিটি অব ম্যানেজমেন্ট সাইন্স ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. এম জুবায়দুর রহমান ও হুদা ভাসি চৌধুরী এন্ড কোংয়ের পার্টনার সাব্বির আহমেদ।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছে, আর্থিক স্থিতিশীলতা রক্ষার্থে ব্যাংকিং খাতের বর্তমান আর্থিক পরিস্থিতি, মন্দ সম্পদ এবং ঝুঁকিসমূহ নিরূপণ, দুর্বল ব্যাংকগুলোর আর্থিক সূচক পর্যালোচনা, ঋণের প্রকৃত অবস্থা নিরূপণ, প্রভিশন ঘাটতি নিরূপণ, তারল্য পরিস্থিতি পর্যালোচনা, নিট মূলধন নির্ণয়, সম্পদের প্রকৃত মূল্য নির্ধারণ, সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের মন্দ সম্পদকে পৃথকীকরণ সংক্রান্ত কার্যক্রম পরিচালনা করবে এই টাস্কফোর্স।
টাস্কফোর্সের মাধ্যমে সংকটকালীন প্রতিঘাতসক্ষমতা অর্জনে ব্যাংকের সুশাসন এবং ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা শক্তিশালীকরণ প্রক্রিয়ার আওতায় রেগুলেটরি ফ্রেমওয়ার্ক উন্নয়ন, ব্যাংকের সিদ্ধান্ত গ্রহণে রাজনৈতিক এবং করপোরেট প্রভাব সীমিতকরণ, ব্যাংকের মালিকানা সংস্কার ইত্যাদি সংক্রান্ত প্রস্তাবনা প্রদান, প্রবলেম ব্যাংকের জন্য রিকভারি এবং রেজুলেশন ফ্রেমওয়ার্ক ও সংশ্লিষ্ট গাইডলাইন প্রস্তুতকরণ, দুর্বল ব্যাংকগুলোর জন্য বিভিন্ন নীতিগত ব্যবস্থা বা পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে বলেও জানানো হয়েছে।
সেই সঙ্গে টাস্কফোর্স আর্থিক খাত সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন আইন যেমন ব্যাংক কোম্পানি আইন, বাংলাদেশ ব্যাংক অর্ডার, ইত্যাদি সংস্কার এবং অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি, ব্যাংক অধিগ্রহণ, একীভূতকরণ আইন প্রণয়ন, সংস্কার ও যুগোপযোগীকরণের প্রস্তাব প্রদান করবে। পাশাপাশি ব্যাংকিং খাতের শ্বেতপত্র প্রকাশের পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
কাফি
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
ব্যাংকখাত সংস্কারে ১৭৫ কোটি ডলার দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক-এডিবি
দেশের ব্যাংকখাত সংস্কারে বিশ্বব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ঋণ দিচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের আধুনিকায়ন এবং সক্ষমতা বাড়ানোর কাজেও এই ঋণ ব্যয় করা হবে। এ জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক নতুন একটি প্রকল্প হাতে নিচ্ছে। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকেও সহায়তার আশ্বাস মিলেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সূত্র মতে, প্রাথমিকভাবে বিশ্বব্যাংক থেকে ৪০ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণের বিষয়ে আলোচনা শুরু করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। বর্তমান পরিস্থিতিতে ঋণের পরিমাণ বাড়িয়ে ৪৫ কোটি ডলার করা নিয়ে এখন আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক। পাশাপাশি এডিবি দেশের ব্যাংক খাত সংস্কারে ১৩০ কোটি ডলার ঋণ দেওয়ার আগ্রহ দেখিয়েছে। এই ঋণ দুর্বল হয়ে পড়া ব্যাংকগুলোকে পুনর্মূলধন হিসেবে দেওয়া যায় কি না, তা নিয়েও আলোচনা শুরু হয়েছে।
আওয়ামী লীগের টানা সাড়ে ১৫ বছরে খেলাপি ঋণ নথিপত্রে যতটা বেড়েছে, তাতে আর্থিক খাতের ভয়ংকর চিত্র প্রতিফলিত হয়েছে। যেমন এই সময়ে শুধু ব্যাংক খাতেই খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১ লাখ ৮৮ হাজার ৯১০ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত জুন মাসের শেষে খেলাপি ঋণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ১১ হাজার ৩৯১ কোটি টাকা। ফলে দেশের ব্যাংকগুলো থেকে বিতরণ করা ঋণের ১২ দশমিক ৫৬ শতাংশই এখন খেলাপি হয়ে পড়েছে। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ যখন সরকার গঠন করে, তখন মোট খেলাপি ঋণ ছিল ২২ হাজার ৪৮১ কোটি টাকা।
গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ব্যাংক খাত সংস্কারে জোর দেয় নতুন অন্তর্বর্তী সরকার। এই সরকার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে অর্থনীতিবিদ আহসান এইচ মনসুরকে। এরপর ১০টি ব্যাংক ও ১টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করা হয়। এর মধ্যে ৯টির মালিকানা ও নিয়ন্ত্রণ ছিল বহুল আলোচিত এস আলম গ্রুপের হাতে। এসব ব্যাংক থেকে এস আলম গ্রুপ নামে-বেনামে প্রায় দুই লাখ কোটি টাকা বের করে নিয়েছে, যা আদায় করা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছে পর্ষদ পরিবর্তিত হওয়া ব্যাংকগুলো। তারল্য–সংকটে পড়ে এসব ব্যাংকের স্বাভাবিক লেনদেন কার্যক্রম ইতিমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে। এই ব্যাংকগুলোর কর্মকর্তাদের বেতনও অনিয়মিত হয়ে পড়েছে।
এ জন্য ব্যাংক খাত সংস্কারে কমিশন গঠনের পরিবর্তে দ্রুত তিনটি টাস্কফোর্স করার পরিকল্পনা করছে সরকার। কারণ, কমিশন গঠন করে সুপারিশ প্রণয়ন ও তা বাস্তবায়নে দীর্ঘ সময় লেগে যাবে। এর পরিবর্তে টাস্কফোর্সের মাধ্যমে শিগগিরই সংস্কার শুরু করতে চায় নিয়ন্ত্রক সংস্থা। টাস্কফোর্সের মধ্যে একটি হবে, খেলাপি ঋণ ব্যবস্থাপনা–সংক্রান্ত, আরেকটি বাংলাদেশ ব্যাংক শক্তিশালীকরণ বিষয়ে। অন্য টাস্কফোর্স হবে পাচার হওয়া অর্থ দেশে ফেরত আনা নিয়ে।
জানা গেছে, ব্যাংক খাত সংস্কারে টাস্কফোর্সগুলো যাতে যথাযথ ভূমিকা রাখতে পারে, সে জন্য দেশি-বিদেশি সর্বোচ্চ কারিগরি জ্ঞান ও সহায়তা নেওয়ার চেষ্টা করা হবে। এ জন্য যে পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন, তা–ও কম সুদের বিদেশি উৎস থেকে সংগ্রহের চেষ্টা চলছে। এতে সাড়া দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। সংস্থাটি ৪০ কোটি ডলার দিতে পারে, যার সুদের হার হবে ৬-৬.৫০ শতাংশের মধ্যে। একই রকম সুদে এডিবি থেকে ১৩০ কোটি ডলার ঋণ পাওয়া নিয়ে এখন আলোচনা হচ্ছে। এডিবি প্রথম বছরে ৫০ কোটি ডলার, দ্বিতীয় বছরে ৫০ কোটি ডলার ও তৃতীয় বছরে ৩০ কোটি ডলার ঋণসহায়তা দিতে পারে।
জানা গেছে, বিশ্বব্যাংকের ঋণে নতুন প্রকল্প নেওয়া হবে। আর এডিবির ঋণের অর্থও এই প্রকল্পে ব্যবহার করা হতে পারে অথবা এডিবির জন্য পৃথক প্রকল্প গঠন করা হতে পারে। এডিবি ঋণ দেবে বাজেট–সহায়তা হিসেবে। আইএমএফ থেকেও কারিগরি জ্ঞান নেওয়ার চেষ্টা চলছে।
ব্যাংক খাতের তদারকিতে যুক্ত, বাংলাদেশ ব্যাংকের এমন একজন কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে বলেন, সামনে ব্যাংকের খেলাপি ঋণ আরও বাড়বে। এসব ঋণ আগে থেকেই খেলাপি হয়ে ছিল, যা এত দিন গোপন করা হয়েছিল। পুরো সমস্যা চিহ্নিত হলেই পূর্ণাঙ্গ সংস্কার করতে সুবিধা হবে। ২০১৩ সালের আগে ব্যাংকিং আইন ও নীতি অনেকটা আন্তর্জাতিক মানে ছিল। এরপর ধীরে ধীরে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নামিয়ে আনা হয়েছে। এর ফলে ব্যাংক খাত বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকও নতজানু হয়ে গেছে। রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে ব্যাংক খাতকে দুর্বল করে ফেলা হয়েছে। এ জন্য পুরো খাতে বড় ধরনের সংস্কার আনতে হবে।
ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান ও ব্র্যাক ব্যাংকের এমডি সেলিম আর এফ হোসেন সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, দেশের ব্যাংক খাতে আসল পচন শুরু হয় ২০১৭ সালে। তখন একটি শিল্পগোষ্ঠীকে দেশের একটি বড় বেসরকারি ব্যাংক সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণের সুযোগ করে দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর আগে পরিস্থিতি অতটা খারাপ ছিল না। মূলত বিশেষ গোষ্ঠীকে সুবিধা দিতে বাংলাদেশ ব্যাংক নিজেই আপসের পথে গেছে।
২০১৭ সালে আওয়ামী লীগ সরকার রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে ইসলামী ব্যাংককে ‘জামায়াতমুক্ত’ করার উদ্যোগ নেয়। তখন প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থাকে ব্যবহার করে ব্যাংকটির মালিকানা ও ব্যবস্থাপনার নিয়ন্ত্রণ নেয় বিদায়ী আওয়ামী লীগ সরকারের ঘনিষ্ঠ এস আলম গ্রুপ। ব্যাংকটির ঋণের অর্ধেকেই এস আলম গ্রুপ নিয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন ব্যাংকটির নতুন চেয়ারম্যান ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সহায়তা চায় গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত তীব্র সংকটে থাকা গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক পিএলসি বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে ৪ কোটি ৭০ লাখ টাকা তারল্য সহায়তা চেয়েছে। রপ্তানিমুখী পোশাক শিল্পের বেতন ভাতা পরিশোধের জন্য গ্রাহকের জমানো টাকা ফেরত দিতে না পারায় ব্যাংকটি এই তারল্য সহায়তা চেয়েছে।
মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংকে এই সংক্রান্ত একটি চিঠি দিয়েছে গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ।
সাম্প্রতিককালে ব্যাংক খাতে ইসলামী ধারার অধিকাংশ ব্যাংক দৈনিক চাহিদা পূরণে হিমশিম খাচ্ছে। তারল্য সংকট ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক নগদ সহায়তা বন্ধের কারণে চাহিদামতো গ্রাহকদের আমানত ফেরত দিতে পারছে না ডজনখানেক বাণিজ্যিক ব্যাংক। তাই ব্যাংকগুলো বাধ্য হয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ধার করে চলছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে রেপোতে ধার নিতে হলে বন্ড অথবা যে কোনো সম্পদ জামানত রাখতে হয়। কিন্তু গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের জামানত শেষ হয়ে যাওয়ার কারণে এখন বিশেষ সুবিধা চাচ্ছে ব্যাংকটি।
গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক ছিল এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলমের নিয়ন্ত্রণে। গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর ব্যাংকটিকে এস আলম মুক্ত করা হয়। গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক ছাড়াও ব্যাপক সমালোচিত এস আলমের নিয়ন্ত্রণে থাকা সব ব্যাংকে নতুন পর্ষদ দেওয়া হয়েছে।
ব্যাংকখাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ব্যাংকের তারল্য সংকট এক দিনে তৈরি হয়নি। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নরসহ হাতে গোনা কিছু মানুষের ভুলের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ব্যাংক খাত। অনিয়ম ও দুর্নীতিতে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যাংকগুলোকে এত দিন নগদ সহায়তা দিয়ে আসছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কিন্তু সরকার বদলের সঙ্গে সঙ্গে তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
২০১৩ সালে যাত্রা করে গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক (সাবেক এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক)। কিছুদিন পর গ্লোবাল ইসলামীতে এমডি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় আলোচিত প্রশান্ত কুমার (পি কে) হালদারকে। এ ব্যাংক যা ঋণ দিয়েছে, তার বেশির ভাগই ট্রেডিং প্রতিষ্ঠানের নামে।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিশেষ সহায়তা শেষ হওয়ায় দুর্বল ব্যাংকগুলো জামানত হিসেবে বিল বন্ড রেখে স্বল্পমেয়াদি (একদিন) ঋণ নিচ্ছে। তারপরও টাকা তুলতে আমানতকারীদের চাপ সামলাতে পারছেন না তারা। এই সুযোগে অপেক্ষাকৃত শক্তিশালী ব্যাংকগুলোতে আমানত বেড়েছে বহুগুণ।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
ব্যাংক
ছাত্র আন্দোলনে হুমকিদাতা এনআরবিসি ব্যাংকের চেয়ারম্যান অর্থ দিলেন সমন্বয়কদের!
আওয়ামী সরকারের পতনে এনআরবিসি ব্যাংকের চেয়ারম্যান পারভেজ তমালের পল্টি। দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত ছিলেন এনআরবিসি ব্যাংকের চেয়ারম্যান এসএম পারভেজ তমাল। আওয়ামী সরকার ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় রাজনৈতিক ক্ষমতা ব্যবহার করে ব্যাংকের অর্থ লুটপাটসহ বিভিন্ন অপকর্মের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। তবে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর নিজের অবস্থান টিকিয়ে রাখতে শিক্ষার্থীদের পক্ষে থাকার সুর করে আচরণের ভোল পাল্টেছেন তিনি। এনআরবিসি ব্যাংকের কোন কর্মকর্তা তৎকালীন কোটা সংস্কার আন্দোলনে শামিল হলে চাকরিচ্যুত করার হুমকি দিয়ে সতর্ক করেছিলেন। একইসঙ্গে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এ সংক্রান্ত কোন পোস্ট শেয়ার ও মন্তব্য করলে, তাকে প্রশাসনিক হয়রানির হুমকিও দিয়েছিলেন তিনি। অথচ তৎকালীন সরকার পতনের পর আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের অর্থ সহায়তা দিয়ে অতীত অপকর্মের ইতি টানতে মরিয়া পারভেজ তমাল। অর্থসংবাদের এক অনুসন্ধানে এ তথ্য উঠে এসেছে।
সূত্র বলছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় শেখ হাসিনার হয়ে কাজ করেছেন পারভেজ তমাল। এমনকি এনআরবিসি ব্যাংকের কোন কর্মকর্তা তৎকালীন কোটা সংস্কার আন্দোলনে শামিল হলে এবং এ সংক্রান্ত কোন মন্তব্য করলে তাকে প্রশাসনিক হয়রানির হুমকিও দিয়েছিলেন তিনি। এছাড়া কেউ যাতে আন্দোলনে শামিল হয়ে দেরি করে ব্যাংকে না ঢুকতে পারে এজন্য তদারকিও করা শুরু করেছিলেন। আন্দোলনের তীব্রতা বাড়ার সাথে সাথে তার নির্দেশে গত ১৭ জুলাই রাতে এ সংক্রান্ত একটি নির্দেশনা এনআরবিসি ব্যাংকের প্রত্যেক শাখা প্রধান বরাবর পাঠানো হয়। যার তথ্য প্রমাণ অর্থসংবাদের অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে।
ব্যাংকের ওই নির্দেশনায় বলা হয়, ব্যাংকে কর্মরত সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের কোটা সংস্কার দাবির আন্দোলনকে কেন্দ্র করে কোন সমাবেশে শামিল হওয়া বা সামজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কোটা সংস্কার সংক্রান্ত কোন ধরনের কোন মন্তব্য, এই সংক্রান্ত কোন তথ্য শেয়ার করা বা পোস্ট করা থেকে বিরত থাকতে হবে। এই ব্যাপারে মানব সম্পদ বিভাগ হতে প্রেরিত সূত্রপত্র ‘চ’ ই-মেইলে উল্লেখিত নির্দেশনা যথাযথভাবে অনুসরণ করার জন্য নির্দেশনা দেয়া হলো। এই আদেশের ব্যত্যয় হলে তার বিরুদ্ধে মানব সম্পদ বিভাগের নীতিমালা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ব্যাংক এবং ব্যাংকের আশেপাশে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করে যথাসময়ের মধ্যে কর্তব্য স্থানে যোগদান করার নির্দেশনাও দেওয়া হয় সেই চিঠিতে।
সূত্র জানায়, এনআরবিসি ব্যাংকের চেয়ারম্যান পারভেজ তমাল নিজের অবস্থান টিকিয়ে রাখতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের ম্যানেজ করার পাঁয়তারার গুঞ্জন উঠেছে। যার প্রমাণ হিসেবে সম্প্রতি ৫০ লক্ষ টাকা অনুদানের চেক হস্তান্তরের অনুষ্ঠানের বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর নিজের ক্ষমতা ধরে রাখতে ছাত্রদের পক্ষে সুর তুলেন পারভেজ তমাল। পাশাপাশি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আহত ও বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ব্যক্তিদের চিকিৎসা এবং পুনর্বাসনের জন্য ব্যাংকের কর্পোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতা (সিএসআর) তহবিল থেকে ৫০ লাখ টাকা প্রদান করা হয়। যার চেক হস্তান্তর করা হয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসানত আবদুল্লাহর নিকট। সেই অনুদানের ছবি ঢালাওভাবে প্রচারের জন্য বিভিন্ন গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি পাঠানো হয়। ফলে জনমনে প্রশ্ন উঠেছে পারভেজ তমাল আসলে কোন পক্ষের লোক? শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর কোন উদ্দেশ্য হাসিলে তিনি ভোল পাল্টাচ্ছেন? এছাড়া সাবেক প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠাভাজন হয়েও হঠাৎ ছাত্রদের পক্ষে সুর তোলার কারণে সমালোচনার ঝড় বইছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
ছাত্র-জনতার জন্য অনুদান দেওয়া অনুষ্ঠানে ব্যাংকের চেয়ারম্যান এসএম পারভেজ তমাল বলেন, নতুন বাংলাদেশ গড়তে যারা স্বপ্ন দেখেছে, তাঁদের স্বপ্ন বাস্তবায়নে এনআরবিসি ব্যাংক পাশে থাকবে। আহতদের চিকিৎসা ও অনুদানের পাশাপাশি ভবিষ্যতে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করবে এনআরবিসি ব্যাংক। এছাড়া, আহত শিক্ষার্থীদের বৃত্তির ব্যবস্থা করবে। শহীদ পরিবারে কর্মক্ষম সদস্যদের কর্মসংস্থানেরও ব্যবস্থা করা হবে। অথচ কিছুদিন আগেও শেখ হাসিনার সমর্থনে কথা বলছিলেন আওয়ামী ঘনিষ্ঠ ব্যাংক চেয়ারম্যান পারভেজ তমাল।
এ বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসানাত আবদুল্লাহর মুঠোফোনে অর্থসংবাদের অফিস থেকে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি। একাধিকবার তাঁর মুঠোফোনে কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। একইসঙ্গে অপর সমন্বয়ক সারজিস আলমের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
তবে এ ব্যাপারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের পরিচিত মুখ সাইয়েদ আব্দুল্লাহ ফেসবুকে লিখেন, ঝোঁপ বুঝে কোপ মেরে ছাত্রদের কাছে ইমেজ প্রতিষ্ঠিত করে ব্যাংকের চেয়ারম্যান হিসাবে টিকে থাকার রাস্তা ক্লিয়ার করার মিশনে আছে এনআরবিসি ব্যাংকের চেয়ারম্যান এবং ব্যাংকে তার ঘনিষ্ঠজনরা। এসময় পারভেজ তমাল এবং তার ঘনিষ্ঠজনদের বিরুদ্ধে দুদক এবং সাংবাদিকদের জরুরি তদন্ত শুরু করতে অনুরোধ করেন তিনি।
এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে এনআরবিসি ব্যাংকের চেয়ারম্যান পারভেজ তমাল এর মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
সূত্র বলছে, হাসিনা সরকারের সাফাই গাইতে গিয়ে ব্যাংক থেকে নামে-বেনামে বিভিন্ন অনুদান প্রদান করেছেন এনআরবিসি ব্যাংকের চেয়ারম্যান। এসবের মধ্যে বঙ্গবন্ধুর নামে শিক্ষাবৃত্তি, শেখ মুজিবুর রহমানের জীবন, কর্ম নিয়ে ‘প্ল্যানেট’ ম্যাগাজিনের বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ, বঙ্গবন্ধু যুবমেলায় এনআরবিসির অনুদান, বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্টে ব্যাংক থেকে কোটি টাকা প্রদান, বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন ঘিরে ব্যাংক থেকে বই ও ইফতার বিতরণ করেছেন। এছাড়া শেখ হাসিনার আশ্রয়ণ প্রকল্পে ব্যাংক থেকে কোটি টাকার অনুদানও দিয়েছিলেন তিনি।
জানা যায়, নিজেকে রাশিয়ান অলিগার্ক পরিচয় দেওয়া পারভেজ তমাল রাশিয়া বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি ছিলেন। নিজের নাম আর পদবী ব্যবহার করে দেশ ছেড়ে পালানো সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমলে আওয়ামী লীগের ঊর্ধ্বতন নেতাদের সহায়তায় ঋণ জালিয়াতি, কমিশন বানিজ্য, নিয়োগ বানিজ্য, শেয়ার কারসাজি, মানিলন্ডারিং, বিদেশে অর্থ পাচার, গ্রাহকের কোম্পানী দখলসহ বিবিধ আর্থিক দুর্নীতিতে লিপ্ত থাকার অভিযোগ রয়েছে পারভেজ তমালের বিরুদ্ধে।
এর আগে নিয়মবহির্ভূতভাবে ঘনিষ্ট কর্মকর্তাদের বেতন বৃদ্ধিসহ নানা অনিয়মের অভিযোগে এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের চেয়ারম্যান এসএম পারভেজ তমালের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বাংলাদেশ ব্যাংকে তমালের বিরুদ্ধে ব্যাংকটির এক স্পন্সর শেয়ারহোল্ডারের অভিযোগের সূত্র ধরে এ তদন্ত করা হয়।
অভিযোগে বলা হয়, বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং রেগুলেশন অ্যান্ড পলিসি ডিপার্টমেন্টের সার্কুলারকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে তমাল পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদন ছাড়া ৩৮০০ কর্মকর্তা কর্মচারীকে বাৎসরিক ইনক্রিমেন্ট না দিয়ে শুধু ২৭ জন কর্মকর্তাকে ৫ থেকে ১৩টি পর্যন্ত ইনক্রিমেন্ট দিয়েছেন। যা নিয়মবহির্ভূত ও দেশের ব্যাংকিং ইতিহাসে বিরল। এছাড়া তমাল ও তার পিএস আসিফ ইকবাল পরিচালকদের সভায় প্রতি বৈঠকে উপস্থিতি ফি ৭ হাজার ২০০ টাকা বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক নির্ধারিত হলেও তারা প্রতি বৈঠকে জনপ্রতি ৫০ হাজার টাকা অতিরিক্ত অন্যায়ভাবে গ্রহণ করছেন, যা ব্যাংক কোম্পানি আইনের সম্পূর্ণ পরিপন্থি। একইসঙ্গে তমাল পারভেজ বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়মকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে মতিঝিল ও গুলশানে ২টি অফিস ব্যবহার করছেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন ব্যতিরেকে এনআরবিসি ম্যানেজমেন্ট নামক একটি বিধিবহির্ভূত প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেছেন বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়। তবে রাজনৈতিক ক্ষমতার অপব্যবহারে নিজের বিরুদ্ধে করা এ তদন্ত শুরুর কয়েকদিনের মধ্যে ইতি টানান প্রভাবশালী পারভেজ তমাল।
এর আগে ২০২৩ সালের ১১ জুলাই দুদকের উপপরিচালক আবু বকর সিদ্দিক বাদী হয়ে অর্থপাচার ও নিয়মবহির্ভূত ঋণ প্রদানের অভিযোগে এনআরবিসি ব্যাংকের ১১ জন কর্মকর্তাসহ মোট ১৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। মামলার এজহারে বলা হয়, আসামিগণ পরস্পর যোগসাজশে অসৎ উদ্দেশ্যে অন্যায়ভাবে লাভবান হওয়ার অভিপ্রায়ে অপরাধমূলক বিশ্বাস ভঙ্গ ও অসদাচরণের মাধ্যমে পর্যাপ্ত জামানত ছাড়াই উত্তরোত্তর ঋণ বৃদ্ধিপূর্বক ৭৪ কোটি ৬০ লাখ ৩৩ হাজার ৮০৪ টাকা (সুদসহ ৭৮ কোটি ৫৭ লাখ ০২ হাজার ২৭৩ টাকা) পরিশোধ ও আদায় না করে আত্মসাৎ করেন। এছাড়া ৫ কোটি ৯৭ লাখ ৬৩ হাজার ৭৫ টাকা সমমূল্যের পণ্যের রপ্তানীমূল্য বাংলাদেশে প্রত্যাবাসন না করে পাচার করা হয়। এতে এনআরবিসি ব্যাংকের চেয়ারম্যান পারভেজ তমালের যোগসাজশ রয়েছে বলে জানা গেছে। তবে নিজের সংশ্লিষ্টতা থাকায় উচ্চ মহলের সহযোগিতায় দুদকের এ তদন্ত ধামাচাপা দেওয়া হয়। যা পরবর্তী প্রতিবেদনে প্রকাশ করবে অর্থসংবাদ।
এমআই
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
ব্যাংক
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ৫১ বিভাগের দায়িত্ব পেলেন চার ডেপুটি গভর্নর
ছাত্রজনতার বৈষম্যবিরোধেী আন্দোলনে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বাংলাদেশ ব্যাংকের শীর্ষ কয়েকটি পদেও রদবদল হয়েছে। এর ফলে সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক পেয়েছে নতুন দুই ডেপুটি গভর্নর। এমন পরিস্থিতির মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চার ডেপুটি গভর্নরের কাজের পরিধি ভাগ করে দিয়েছে আর্থিক খাতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুরের অনুমতিতে ডেপুটি গভর্নরদের এসব বিভাগের দায়িত্ব ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ জানা গেছে।
সূত্র জানায়, বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর ১ পদে রয়েছেন নূরুন নাহার। তিনি দায়িত্ব পেয়েছেন- হিউম্যান রিসোর্সেস ডিপার্টমেন্ট ১, হিউম্যান রিসোর্সেস ডিপার্টমেন্ট ২, ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ, এসএমই এন্ড স্পেশাল প্রোগ্রামস ডিপার্টমেন্ট, ক্রেডিট গ্যারান্টি ডিপার্টমেন্ট, কৃষি ঋণ বিভাগ, বাংলাদেশ ব্যাংক ট্রেনিং একাডেমি, এক্সপেন্ডিচার ম্যানেজমেন্ট ডিপার্টমেন্ট ১, এক্সপেন্ডিচার ম্যানেজমেন্ট ডিপার্টমেন্ট ২, ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটি সচিবালয়, ডিপার্টমেন্ট অব কারেন্সী ম্যানেজমেন্ট, টাকা জাদুঘর বিভাগ, সাসটেইনেবল ফাইন্যান্স ডিপার্টমেন্ট এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা বিভাগের।
ডেপুটি গভর্নর ২ পদে রয়েছেন ড. মো. হাবিবুর রহমান। তিনি দায়িত্ব পেয়েছেন- চিফ ইকোনমিস্টস ইউনিট, পরিসংখ্যান বিভাগ, মনিটারি পলিসি ডিপার্টমেন্ট, ইনফরমেশন এন্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজি ডিপার্টমেন্ট, একাউন্টস এন্ড বাজেটিং ডিপার্টমেন্ট, গবেষনা বিভাগ, ফাইন্যান্সিয়াল সেক্টর সাপোর্ট এন্ড স্ট্র্যাটেজিক প্ল্যানিং ডিপার্টমেন্ট, ডিপোজিট ইন্স্যুরেন্স ডিপার্টমেন্ট, ডিপার্টমেন্ট অব কমিউনিকেশন্স এন্ড পাবলিকেশন্স, ন্যাশনাল ফাইন্যান্সিয়াল ইনক্লুশন স্ট্র্যাটেজি (এনএফআইএস) এডমিনিস্ট্রেটিভ ইউনিট, ফিন্যান্সিয়াল ইনক্লুশন ডিপার্টমেন্টন্ট, ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরো এবং ভেট ম্যানেজমেন্ট ডিপার্টমেন্টের।
বাংলাদেশ ব্যাংকে ডেপুটি গভর্নর ৩ হিসেবে সদ্য নিয়োগ পেয়েছেন মো. জাকির হোসেন চৌধুরী। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পর বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘ডেপুটি গভর্নর ৩’ পদে দায়িত্ব পালন করা খুরশিদ আলম পদত্যাগ করেন। এরপর সার্চ কমিটির মাধ্যমে বাছাই করে জাকির হোসেনকে একই পদে দায়িত্ব প্রদান করা হয়।
ডেপুটি গভর্নর জাকির হোসেন চৌধুরী যেসব বিভাগের দায়িত্ব পেলেন- বৈদেশিক মুদ্রা নীতি বিভাগ, ফরেন এক্সচেঞ্জ অপারেশন ডিপার্টমেন্ট, বৈদেশিক মুদ্রা বিনিয়োগ বিভাগ, ডিপার্টমেন্ট অব অফসাইট সুপারভিশন, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বাজার বিভাগ, পেমেন্ট সিস্টেমস ডিপার্টমেন্ট, কমন সার্ভিসেস ডিপার্টমেন্ট-১, কমন সার্ভিসেস ডিপার্টমেন্ট-২, আইন বিভাগ, স্পেশাল স্টাডিজ সেল, ইন্টিগ্রেটেড সুপারভিশন ম্যানেজমেন্ট ডিপার্টমেন্ট এবং ফিন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটি এন্ড কাস্টমার সার্ভিসেস ডিপার্টমেন্ট।
অপরদিকে ডেপুটি গভর্নর-৪ হিসেবে সম্প্রতি নিয়োগ পেয়েছেন ড. মো. কবির আহাম্মদ। তিনি যেসব বিভাগের দায়িত্ব পেলেন- ব্যাংক পরিদর্শন বিভাগ-১, ব্যাংক পরিদর্শন বিভাগ-২, ব্যাংক পরিদর্শন বিভাগ-৩, ব্যাংক পরিদর্শন বিভাগ-৪, ব্যাংক পরিদর্শন বিভাগ-৫, ব্যাংক পরিদর্শন বিভাগ-৬, ব্যাংক পরিদর্শন বিভাগ-৭, ব্যাংক পরিদর্শন বিভাগ-৮, বৈদেশিক মুদ্রা পরিদর্শন বিভাগ,আর্থিক প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন বিভাগ,ফরেক্স রিজার্ভ এন্ড ট্রেজারী ম্যানেজমেন্ট ডিপার্টমেন্ট এবং ফিন্যান্সিয়াল স্ট্যাবিলিটি ডিপার্টমেন্ট।
এর আগে ছাত্র- জনতার আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট দেশ তার পালিয়ে যান সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর পরের দিন থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বস্তরের কর্মকর্তারা ‘দুর্নীতিবাজ’ শীর্ষ কর্মকর্তাদের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ করতে শুরু করেন। এমন পরিস্থিতির মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার সহ কয়েকজন শীর্ষ কর্মকর্তা পদত্যাগ করেন। অন্য যারা পদত্যাগ করেন- ডেপুটি গভর্নর-১ কাজী ছাইদুর রহমান, ডেপুটি গভর্নর-৩ খুরশিদ আলম, বাংলাদেশ ফাইনান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) প্রধান মাসুদ বিশ্বাস ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতি উপদেষ্টা আবু ফারাহ মো. নাসের।