অর্থনীতি
অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ যত দীর্ঘ হবে, অর্থনীতির ক্ষতি তত বাড়বে: ড. ফাহমিদা খাতুন

অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ যত দীর্ঘ হবে, অর্থনীতির ক্ষতি তত বাড়বে বলে মন্তব্য করেছেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন।
তিনি বলেন, ‘একটি দেশের স্থিতিশীলতার জন্য নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। রাজনীতি ও অর্থনীতি পাশাপাশি চলে। অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ যত দীর্ঘ হবে, অর্থনীতির ক্ষতি তত বাড়বে।’
আজ শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি আয়োজিত ‘ব্যাংকিং খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে ছায়া সংসদ’ বিতর্ক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ড. ফাহমিদা বলেন, ‘ব্যাংক একীভূতকরণের প্রক্রিয়াটি জটিল। বাংলাদেশ ব্যাংক যদিও ২ বছরের কথা বলছে, তবে ৩ থেকে ৪ বছর লেগে যাবে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে ব্যাংকের সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি। ব্যাংকের লাইসেন্স জনগণের কল্যাণের জন্য নয়, বরং ব্যক্তিস্বার্থে দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক আইনের ফাঁক-ফোকর দিয়ে লুটপাটে সহযোগিতা করেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক দেশের ব্যাংকখাতের শৃঙ্খলা ফেরাতে একীভূতকরণ এর দিকে হাঁটছে। যদিও দেশে এর আগে একীভূতকরণের ভালো কোনো উদাহরণ নেই।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক ৫টি ব্যাংক একীভূত করতে পরিকল্পনা নিয়েছে। একীভূত হওয়ার পর এ পাঁচ ব্যাংকের সম্পদ হবে মোট ব্যাংক খাতের ৮.৪ শতাংশ। অনুমোদিত মূলধন ধরা হয়েছে ৪০ হাজার কোটি টাকা। প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানো এবং দক্ষতা উন্নয়নের মাধ্যমে খরচ কমানোর পরিকল্পনা রয়েছে। তবে এ উদ্যোগ ব্যর্থ হলে দায়ভার বর্তমান কর্তৃপক্ষকেই নিতে হবে। আর সফল হলে ব্যাংক খাত আরও অনেক দূর এগিয়ে যাবে।’
ড. ফাহমিদা বলেন, ‘সফলতার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা জরুরি। পাশাপাশি ব্যাংক খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে নতুন আইন প্রণয়ন দরকার এবং যারা আইন বাস্তবায়ন করবেন তাদের সততাও নিশ্চিত করতে হবে।
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিগত অনেক ভুল ছিল। যথেষ্ট আইনি ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও আওয়ামী সরকার বাংলাদেশ ব্যাংককে সঠিকভাবে কাজ করতে দেয়নি। চাকরি হারানোর ভয়ে কেউ রাজনৈতিক প্রভাব মেনে নিয়েছে, আবার কেউ ক্ষমতার অপব্যবহার করে সুবিধা নিয়েছে। আর্থিক খাতের মাফিয়াদের অনৈতিক সুবিধা প্রদানে ব্যাংক কার্যত সহায়ক হয়েছে। তখন দেশে মাফিয়া ইকোনমি শাসন করছিল। আশা করি এখন তার অবসান হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘চোখের সামনে সবচেয়ে ভালো ব্যাংক ইসলামী ব্যাংকসহ বেশ কয়েকটি ব্যাংক লুণ্ঠিত হয়েছে। চোর–ডাকাতরা বৈদেশিক মুদ্রায় এসব ব্যাংকের আমানতকারীদের টাকা আত্মসাৎ করে বিদেশে পাচার করেছে। রাজনৈতিক বিবেচনায় যে কয়টি ব্যাংক অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল, সেগুলো এখন অতি দুর্বল অবস্থায় আছে। মালিকদের মূল উদ্দেশ্যই ছিল অর্থ আত্মসাৎ করা ও বিদেশে পাচার করা।’
তিনি আরও বলেন, ‘এজন্য আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে স্থিতিশীল সরকার প্রয়োজন। যে সরকার অতীতের অনিয়ম থেকে শিক্ষা নিয়ে সংস্কার কার্যক্রম গ্রহণ করবে। যত দ্রুত সম্ভব একটি গ্রহণযোগ্য ও সুষ্ঠু নির্বাচন প্রয়োজন। ফেব্রুয়ারিতে যদি একটি ভালো নির্বাচন হয়, তাহলে দেশে স্থিতিশীলতা ফিরবে, বিনিয়োগ বাড়বে এবং আর্থিক খাতে সুশাসন ফিরে আসবে।’
বিতর্কে সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটি (সরকারি দল) ও সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজ (বিরোধী দল) অংশ নেয় এবং বিরোধী দল জয় লাভ করে।

অর্থনীতি
বেনাপোলে ৫ দিন আমদানি-রপ্তানি বন্ধ থাকবে

এবার সনাতন ধর্মাবলম্বীদের শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে পাঁচ দিন যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ থাকবে।
এ সময়ে বেনাপোল বন্দরে পণ্য উঠানামা, খালাস এবং বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে পাসপোর্টধারী যাত্রী পারাপার স্বাভাবিক থাকবে বলে জানান বেনাপোল চেকপোস্ট ইমিগ্রেশনের ওসি ইলিয়াস হোসেন মুন্সি।
ভারতের পেট্রাপোল বন্দর ক্লিয়ারিং এজেন্ট স্টাফ ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কার্ত্তিক চক্রবর্তী বলেন, পূজায় কাল রোববার (২৮ সেপ্টেম্বর) থেকে বৃহস্পতিবার (২ অক্টোবর) পর্যন্ত পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে বেনাপোল বন্দরের সঙ্গে সব ধরনের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য বন্ধ থাকবে।
আগামী শনিবার (৪ অক্টোবর) সকাল থেকে আবারও এ বন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য স্বাভাবিকভাবেই চালু হবে বলে জানান তিনি।
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মুজিবর রহমান বলেন, পাঁচদিন আমদানি-রপ্তানি বন্ধ থাকার বিষয়টি ওপারের সিঅ্যান্ডএফ থেকে চিঠি দিয়ে আমাদেরকে জানিয়েছে।
ভারতে দুর্গাপূজা উপলক্ষে পাঁচ দিন ছুটি থাকার কারণে পেট্রাপোল বন্দরে আটকা পড়বে শত শত পন্যবাহী ট্রাক। যার অধিকাংশই বাংলাদেশের শতভাগ রপ্তানিমুখী গার্মেন্টস শিল্পের কাঁচামাল।
বেনাপোল আন্তর্জাতিক চেকপোস্ট ইমিগ্রেশন পুলিশের ওসি ইলিয়াস হোসেন মুন্সি বলেন, ছুটিতে পণ্য পরিবহণ বন্ধ থাকলেও পাসপোর্টধারি যাত্রী পারাপার স্বাভাবিক থাকবে।
বেনাপোল স্থলবন্দরের পরিচালক (ট্রাফিক) মো. শামীম হোসেন রেজা বলেন, আমাদের সরকারি ছুটি ১ ও ২ অক্টোবর। তবে আগামীকাল রোববার, সোমবার এবং মঙ্গলবার বেনাপোল বন্দর অভ্যন্তরে খালাস প্রক্রিয়া ও কাস্টমসের কার্যক্রম চলমান থাকবে বলে এক পত্রের মাধ্যমে জানতে পেরেছি। এ সময়ের মধ্যে বন্দরে পণ্য খালাস করে ভারতীয় খালি ট্রাক সে দেশে ফিরে যেতে পারবে।
অর্থনীতি
এনবিআর ভাগ হলে ‘ভয়ংকর’ পরিস্থিতির আশঙ্কা

রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশ নিয়ে এনবিআর বিলুপ্ত ও ভাগ করার সিদ্ধান্তকে ‘ভয়ংকর’ বলে মন্তব্য করেছেন সংস্কার কমিটির সদস্য ফরিদ উদ্দিন। তিনি সতর্ক করেছেন, বিদ্বেষ থেকে নেওয়া এ সিদ্ধান্ত জাতির জন্য মারাত্মক পরিণতি বয়ে আনতে পারে।
এনবিআরকে বিলুপ্ত করে রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা নামে দুই ভাগ করার অধ্যাদেশে পরামর্শক কমিটির সুপারিশ ঠিকঠাক প্রতিফলিত হয়নি বলে মনে করেন ফরিদ উদ্দিন।
পরামর্শক কমিটির এ সদস্য বলছেন, অধ্যাদেশটি বাতিলের দাবিতে এনবিআর কর্মীরা আন্দোলনে নামার ফলে এখন যদি ‘বিদ্বেষ’ থেকে সংস্থাটিকে দুই ভাগ করা হয়, তাহলে তা জাতির জন্য ‘ভয়ংকর’ পরিস্থিতি তৈরি করবে।
শনিবার ঢাকার গুলশানে এনবিআর সংস্কার বিষয়ক গোলটেবিলে তিনি এ পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেন।
মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই) ও পলিসি এক্সচেঞ্জ অব বাংলাদেশ (পিইবি) এ বৈঠক আয়োজন করে।
ফরিদ উদ্দিন বলেন, “রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা নামে ভাগ করার বিষয়টা এখানে (সংস্কার প্রতিবেদন) আমরা এনেছি। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি আমরা কমিটি থেকে যে সুপারিশ করেছি, আসলে সেভাবে বিষয়টা হয় নাই ।
“আমি কিন্তু সরকারকে বলেছি, ‘‘আমার দৃষ্টিভঙ্গি থেকে, যদি ভুল হয়, এটা কোনো বিদ্বেষ থেকে বা যদি ভুল করে করা হয়, তাহলে এটা জাতির জন্য ‘ভয়ংকর’ অবস্থা, পরিস্থিতি হবে।”
গত ১২ মে রাতে এনবিআর বিলুপ্ত করে ‘রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশ, ২০২৫’ জারি করে সরকার। পরের দিন থেকে আন্দোলনে নামেন দেশের প্রধান রাজস্ব আহরণকারী সংস্থাটির কর্মীরা। অবস্থান, কলমবিরতিসহ কর্মবিরতির মতো টানা কর্মসূচি পালন করেন তারা।
তাদের দাবি ছিল, প্রতিষ্ঠানটির শীর্ষ পদে প্রশাসন ক্যাডার থেকে আসা সচিবদের যেন না বসানো হয়। এর পরিবর্তে বিসিএস (কর) ও বিসিএস (শুল্ক ও আবগারি) ক্যাডারের অভিজ্ঞদেরকেই যেন নিয়োগ দেওয়া হয়। তাদের দাবির মুখে অধ্যাদেশ বাস্তবায়ন থেকে সরে আসে সরকার। তখন সরকারের তরফে সংশোধনের কথা বলা হয়।
পরে এনবিআরকে বিলুপ্ত করে রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ নামে যে দুই ভাগ করা হচ্ছে, সেগুলোর শীর্ষ পদে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অভিজ্ঞ সরকারি কর্মচারীদের দায়িত্ব দেওয়ার বিধান রাখা হচ্ছে সংশোধিত অধ্যাদেশে।
এটিসহ ‘রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ এর সংশোধনে ১১টি পরিবর্তন আনার প্রস্তাব করা হয়েছে।
পরামর্শক কমিটির কোন সুপারিশ অধ্যাদেশে রাখা হয়নি, তা নিয়ে প্রশ্ন করলে ফরিদ উদ্দিন একটি কাগজ তুলে ধরেন এবং সবাইকে পাঠাবেন বলে জানান।
সংস্কার কমিটির এ সদস্য বলেন, “সরকার যে অধ্যাদেশটা দিয়েছে, তাতে কী বলা আছে, আমি এই শিটে বলেছি। আর কী হওয়া উচিত, তাও আমি কিন্তু এক পাশে দিয়েছি। এই নথিটা আপনাদের পড়া উচিত, এটা নিয়ে আলোচনা করা উচিত।
“কারণ এখানে যদি ভুল হয়, যদি ভুল সরকার করে বা এই দুই বিভাগের সমন্বয়টা কীভাবে হবে, এই সমন্বয় যদি ভুল হয়, তাহলে কিন্তু এখন যে অবস্থা আছে, তার চেয়ে ‘ভয়ংকর’ পরিস্থিতি হবে।”
ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ করে তিনি বলেন, “এখন তো একটা জায়গা আছে (এনবিআরের), কিন্তু এখন যদি ওটা একটা বিউরোক্র্যাসি হয়, আর এটা (এনবিআর) যদি আলাদা হয়, তাহলে পরিস্থিতি আপনাদের জন্য আরও ‘ভয়াবহ হবে’। কাজেই ভুলটা যেন না হয়, সেজন্য আমি অনুরোধ করি, আপনারা এটা পড়েন। পড়ার পর আপনাদের মতামতটা সরকারকে দেন। বিভিন্ন ফোরামে কিংবা সংবাদমাধ্যমে সবকিছু জানান।
সঠিকভাবে কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়ন রাজনৈতিক ‘কমিটমেন্টের ব্যাপার’ বলে মন্তব্য করেন কমিটির আরেক সদস্য এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আব্দুল মজিদ।
তিনি বলেন, “এটা রাজনৈতিক কমিটমেন্টের ব্যাপার। কারণ হচ্ছে, দেখা গেল যে পরবর্তীকালে আমরা যে সেপারেট করেছিলাম, সেটা শোনাও হয়নি। বাতিলও করা হয়নি। ওভাবেই রয়েছে।
“সেজন্যই ভয় হয়, শুধু আমরা রিপোর্ট দিলাম, একটা অর্ডিন্যান্স জারি হয়ে গেল… ফরিদ যেটা বারবার বলছে। দেখা গেল যে বাস্তবায়নের সময় যদি আবার ওইটা না থাকে, ‘পলিটিক্যাল কমিটমেন্ট’ যদি না থাকে।”
প্রতিবেদনের ওপর ব্যবসায়ীদের মতামত চেয়ে তিনি বলেন, “আমরা আপনাদের সবার কথা নিয়ে একসঙ্গে সরকারকে দিয়ে দেই। অর্থাৎ পরবর্তীকালে সরকার যখন না শুনতে যাবে, আপনারা খুব বড় গলায় বলতেও পারবেন যে, সংস্কারটা দেওয়া হয়েছিল, কী করলেন? এজন্য কিন্তু আমরা এটা পার্টিসিপেটরি করার চেষ্টা করেছি।”
এনবিআর সংস্কার এখন যেভাবে করা হচ্ছে, তা আসলেই ব্যবসায়ী সমাজ চাচ্ছে কিনা, তা নিয়ে ‘প্রচুর বিভ্রান্তি’ রয়েছে বলেও মনে করেন কেউ কেউ।
এমসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি নিহাদ কবির বলেন, “এনবিআর সংস্কার কমিটি দ্বারা চমৎকার কাজ হয়েছে। কিন্তু আমরা দেখছি না যে, তাতে খুব বেশি গতি বা মনোযোগ পাওয়া যাচ্ছে। প্রতিবেদনটি রয়েছে, কিন্তু আমরা জানি না সেই প্রতিবেদনের পরিণতি কী হবে। অতীতের অভিজ্ঞতার আলোকে বলতে পারি, আমরা আত্মতুষ্টিতে ভুগতে পারি না যে এই প্রতিবেদনটি বাস্তবায়নে পর্যাপ্ত মনোযোগ দেওয়া হবে, যেখানে প্রচুর কঠোর পরিশ্রম করা হয়েছে।
“আরেকটি বিষয় আমরা দেখেছি, তা হলো, আমরা হঠাৎ করে এনবিআরকে আলাকা করা দেখেছি। আমরা দেখেছি যে, বোর্ডটি নিজেই আর থাকবে না। বর্তমান কর্মকর্তারা অর্থ মন্ত্রণালয়ে ন্যস্ত হবে। এটি কীভাবে কাজ করবে এবং আমরা কি আসলেই এ ধরনের সংস্কার খুঁজছি কিনা, তা নিয়ে আমাদের মনে ‘প্রচুর বিভ্রান্তি’ রয়েছে।”
নিহাদ কবিরের মতো পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান মাশরুর রিয়াজ বলেন, “সংস্কারে এ কমিটি চমৎকার ‘ইনেশিয়েটিভ’ ছিল। তারা বিভিন্ন স্টেকহোল্ডার সঙ্গে আলোচনা করে সুপারিশ দিয়েছে। তবে তাদের সুপারিশ বাস্তবায়নে সরকারের মধ্যে আগ্রহের অভাব দেখা যাচ্ছে।”
পৃথক যেভাবে করা হচ্ছে, তা সরকারের ‘রাইট ডিসিশন’ কিনা, সেই প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, “এই পৃথকীকরণ ‘ইফেক্টিভ’ না হলে এখন তো এক জায়গায় ‘হ্যাসেল’ হয়, তখন দুটি আলাদা বিভাগে ‘টু স্টেপ হ্যাসেল’ হবে।”
অর্থনীতি
দুর্গাপূজায় টানা ৮ দিন বাংলাবান্ধায় আমদানি-রপ্তানি বন্ধ

সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রধান উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে টানা আট দিন বন্ধ থাকবে পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরের আমদানি ও রপ্তানি।
আজ শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) থেকে আগামী শনিবার (৪ অক্টোবর) পর্যন্ত বন্দরে কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর লিমিটেডের ইনচার্জ আবুল কালাম আজাদ এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।
স্থলবন্দর সূত্র জানায়, ভারতের ফুলবাড়ি এক্সপোর্টার অ্যান্ড ইম্পোর্টার ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন, ফুলবাড়ি ২ বর্ডার লোকাল ট্রাক অনার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন, ফুলবাড়ী সিএন্ডএফ অ্যাসোসিয়েশন ও ফুলবাড়ী ট্রাক ড্রাইভার অ্যাসোসিয়েশনের যৌথ সভায় আসন্ন দুর্গাপূজা উপলক্ষে ২৭ সেপ্টেম্বর থেকে ৪ অক্টোবর পর্যন্ত ৮ দিন বন্দরের আমদানি-রপ্তানি বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
আগামী ৫ অক্টোবর রোববার থেকে আবার সচল হবে দেশের একমাত্র চতুর্দেশীয় এই শুল্ক স্টেশন। তবে আমদানি রপ্তানি বন্ধের সময়ও ইমিগ্রেশন চেকপোস্টের কার্যক্রম স্বাভাবিক থাকবে।
বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর ইমিগ্রেশন পুলিশের ইনচার্জ কেফায়েতুল্লাহ ওয়ারেস বলেন, দুর্গাপূজা উপলক্ষে স্থলবন্দরের আমদানি রপ্তানি বন্ধ থাকলেও বন্দর দিয়ে পাসপোর্ট ও ভিসাধারী যাত্রীরা বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও ভুটানে যাতায়াত করতে পারবেন। দুর্গা পূজার ছুটিতে বন্দর ঘিরে সার্বিক নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর লিমিটেডের ইনচার্জ আবুল কালাম আজাদ বলেন, শুক্রবার সাপ্তাহিক বন্ধের পর শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে টানা আট দিন বন্ধ থাকবে বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরের আমদানি ও রপ্তানি।
অর্থনীতি
বিএফআইইউ প্রধান নিয়োগে ৫ সদস্যের কমিটি

বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) প্রধান কর্মকর্তা নিয়োগে পাঁচ সদস্যের বাছাই কমিটি গঠন করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। গতকাল বৃহস্পতিবার জারি করা প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়, কমিটির নেতৃত্ব দেবেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর।
কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন—আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারেক, লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ মহীউদ্দীন, আইসিএবি সভাপতি এন কে এ মবিন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মোসাদ্দেক হোসেন কামাল।
তবে কতদিনের মধ্যে এই কমিটি নতুন প্রধানের নাম সুপারিশ করবে, তা প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ নেই।
এর আগে চলতি মাসের শুরুতে বিএফআইইউ প্রধান এ এফ এম শাহীনুল ইসলামের চুক্তি বাতিল করে সরকার। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার একটি বিতর্কিত ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর ১৮ আগস্ট তাকে প্রথমে ছুটিতে পাঠানো হয়। পরে অর্থ মন্ত্রণালয়ের গঠিত তদন্ত কমিটি ভিডিওটির সত্যতা নিশ্চিত করলে তার নিয়োগ চুক্তি বাতিল করা হয়।
অর্থনীতি
চড়া মাছ-সবজির দাম, স্থিতিশীল মাংসের বাজার

সপ্তাহ ব্যবধানে রাজধানীর বাজারে ফের বেড়েছে শাক-সবজির দাম। ইলিশের দাম কেজিতে ১০০ টাকা কমলেও এখনও তা বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে। তবে স্থিতিশীল রয়েছে মুরগি ও অন্যান্য মাংসের দাম।
শুক্রবার (২৬ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর কারওয়ান বাজার ঘুরে এ চিত্র দেখা যায়।
বৃষ্টি ও সরবারহ ঘাটতির অজুহাতে গত কয়েকমাস ধরেই অস্থির রাজধানীর সবজির দাম। মাঝে কিছুটা ওঠানামা করলেও চলতি সপ্তাহে ফের বেড়েছে দাম। এতে বিপাকে পড়েছেন ভোক্তারা।
শুক্রবার বাজারে সবজি কিনতে আসা আমিনুল ইসলাম জানান, সবজির দাম ফের লাগামছাড়া হয়ে উঠেছে। দেখার কেউ নেই। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে ব্যবসায়ীরা বাজার অস্থির করে তুলছে।
তবে বিক্রেতারা বলছেন, গত কয়েকদিনের বৃষ্টিতে বাজারে সবজির সরবারহ কমেছে। এতে কেজিতে ১০-১৫ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।
রাজধানীর কারওয়ান বাজারের সবজি বিক্রেতা আনিস বলেন, সবজির দাম কিছুটা বেড়েছে। প্রতি বছর এই সময় সবজির দাম কিছুরা চড়া থাকে। কারণ এসময় গ্রীষ্ম ও বর্ষাকালীন সবজির শেষের দিকে থাকে এবং শীতকালীন আগাম সবজি বাজারে আসতে শুরু করে।
বাজারঘুরে দেখা যায়, মানভেদে প্রতি কেজি ধুন্দল ৪০-৫০ টাকা, শসা ৫০-৮০ টাকা, পেঁপে ২০ টাকা, ঝিঙে ৬০-৮০ টাকা, কহি ৫০-৬০ টাকা, আলু ২০-২৫ টাকা, আমড়া ৬০ টাকা ও কচুর মুখি ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া প্রতি কেজি করলা ৮০ টাকা, ঢ্যাঁড়শ ৭০-৮০ টাকা, টমেটো ১২০-১৪০ টাকা, বরবটি ৬০ টাকা, মূলা ৮০ টাকা, পটোল ৭০ টাকা, কাঁকরোল ৬০ টাকা, বেগুন ৮০-১০০ টাকা ও কচুর লতি বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা।
আর প্রতি পিস লাউ ৬০-৭০ টাকা ও চালকুমড়া বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়। এছাড়া প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ ১৬০ টাকায় বেচাকেনা হচ্ছে।
এদিকে, বাজারে স্থিতিশীল রয়েছে মুরগি ও অন্যান্য মাংসের দাম। বাজারে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৭০ টাকা, সোনালি মুরগি ২৮০-৩০০ টাকা, লাল লেয়ার ২৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া প্রতিকেজি সাদা কক ২৯০ টাকা এবং দেশি মুরগি ৬০০-৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
গরু ও খাসির মাংসের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। প্রতি কেজি গরুর মাংস ৭৬০-৮০০ টাকা, খাসির মাংস ১ হাজার ২০০ টাকা ও ছাগলের মাংস ১ হাজার ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
স্থিতিশীল রয়েছে ডিমের দামও। প্রতি ডজন লাল ডিম ১৩০ টাকা ও সাদা ডিম ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া প্রতি ডজন হাঁস ও দেশি মুরগির ডিম যথাক্রমে ২২০-২৩০ ও ২৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে কেজিতে ১০০ টাকা কমেছে ইলিশের দাম। বর্তমানে ১ কেজি ওজনের ইলিশ ২১০০ টাকা, ৭০০-৮০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ১৭৫০-১৮৫০ টাকা, ৫০০-৬০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ১৫০০ টাকা ও দেড় কেজি ওজনের ইলিশ ৩০০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
ক্রেতা আসিফ বলেন, ভরা মৌসুমেও রুপালি ইলিশ ২ হাজার টাকার ওপরে কিনতে হচ্ছে। এবার ২৫০০ টাকায়ও কিনেছি। এত দাম হলে এক সময় ইলিশ খাওয়াই বাদ দিতে হবে।
অন্যান্য মাছের দাম রয়েছে আগের মতোই চড়া। প্রতিকেজি বোয়াল ৭৫০-৯০০, কোরাল ৮০০-৮৫০, আইড় ৭০০-৮০০, চাষের রুই ৩৮০-৪৫০, কাতল ৪৫০, তেলাপিয়া ১৮০-২২০, পাঙাশ ১৮০-২৩৫ এবং পাবদা ও শিং ৪০০-৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া চাষের ট্যাংরা ৭৫০-৮০০, কাঁচকি ৬৫০-৭০০ এবং মলা ৫০০-৫৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
চালের বাজারে কোনো বিশেষ পরিবর্তন হয়নি। কারওয়ানবাজারের চাল ব্যবসায়ী রাকিব বলেন, ‘নতুন করে দাম বাড়েনি। তবে কমার কোনো সম্ভাবনা নেই। প্রতিকেজি মিনিকেট চাল ৮য-৮৫ টাকা, নাজিরশাইল ৮৫-৯২ টাকা ও মোটা চাল ৫৬-৬২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।’