Connect with us
৬৫২৬৫২৬৫২

মত দ্বিমত

আগে ছিল ঘুষখোর, পরে দুর্নীতিবাজ, এখন হয়েছে চাঁদাবাজ: উন্নয়নের উল্টো পদচিহ্ন

Published

on

ব্লক

বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয় উন্নয়নের গল্প আজকাল পত্রিকার পাতায়, টেলিভিশনের ঘোষণায় কিংবা নেতার মুখে মুখে শোনা যায়—‘দেশ বদলে গেছে’, ‘উন্নয়ন দৃশ্যমান’, ‘স্বপ্নের পদ্মা সেতু হয়েছে’, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তব’। কথাগুলো শুনতে যেমন চমকপ্রদ, বাস্তবে তেমনই একটা নির্মম প্রশ্নও উঁকি দেয়—এই উন্নয়নের সুবিধাভোগী কারা? এবং উন্নয়ন বলতে আমরা কি কেবল ভবন, সেতু, কিংবা GDP বুঝি, নাকি মানুষ ও মনুষ্যত্বেরও কোনো মানদণ্ড আছে? একসময় যাদের আমরা বলতাম ঘুষখোর, তারা ছিল লোকচক্ষুর আড়ালে; একটা টেবিলের নিচে টাকার খাম গলিয়ে দিতো, লজ্জা একটু ছিল, ভয়ও ছিল আইনের। তারপর তারা হলো দুর্নীতিবাজ—পদে বসে ক্ষমতার খোলস গায়ে দিয়ে টেন্ডার ভাগাভাগি, ব্যাংক লোন লুট, প্রজেক্ট বাজেট ফাঁকি—সবই নীতির নামে বৈধ করে ফেললো। এখন তারা চাঁদাবাজ, যারা আর লুকায় না, প্রকাশ্যেই বলে—‘এক্সট্রা দিতে হবে ভাই, নাহলে কাজ হবে না।’ এটা শুধু দুর্নীতির বিবর্তন নয়, এটা একটা জাতির বিবেক হারানোর ইতিহাস।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

বাংলাদেশের সংবিধানে লেখা আছে— ‘রাষ্ট্রের প্রধান দায়িত্ব হবে জনগণের কল্যাণ সাধন।’ কিন্তু বাস্তবে রাষ্ট্র যেন এক সিন্ডিকেট চালিত পণ্যবাজার—যেখানে প্রশাসন, পুলিশ, রাজনীতি, ব্যবসা এমনকি বিচারব্যবস্থাও অনেক ক্ষেত্রে একটি জালায় বাঁধা, যার মধ্যে সৎ থাকতে গেলে ডুবে যেতে হয়। ১৯৭১-এর যুদ্ধ ছিল একটি মুক্তির স্বপ্ন। তখন সেনাবাহিনীর সর্বোচ্চ পদ ছিল মেজর জেনারেল, সীমিত শক্তি, সীমিত সুযোগ, কিন্তু ছিল একরকম দেশপ্রেম। সময়ের সাথে সাথে যখন পদোন্নতি হলো—লেফটেন্যান্ট জেনারেল, তারপর জেনারেল—তখন কি শুধু দপ্তর বড় হলো, নাকি লোভও বড় হলো? একদিকে জিপি লাইন, পাজেরো, প্রটোকল, অন্যদিকে গরিব রিকশাচালক, অসুস্থ কৃষক, চাকরির জন্য হাহাকার করা তরুণ। উন্নয়নের তুলাদণ্ড কি দু’পাশে সমান ভার বহন করেছে? রাষ্ট্র যখন নাগরিকের ভরণপোষণের দায়িত্ব পালন করতে ব্যর্থ হয়, তখন নাগরিক হয় নিঃস্ব—অথবা বিক্রি হয়ে যায়। আজকের যুবক চাকরির আশায় ঘুষ দেয়, শিক্ষকতা পেতে ঘুষ দেয়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য হতে ঘুষ দেয়। তারপর যখন সে চাকরিটা পায়, তখন প্রথম কাজ হয় সেই ঘুষের টাকা সুদে আসলে তুলতে হবে—ঘুষ খেতে হবে, চাঁদা তুলতে হবে, মানুষকে জিম্মি করতে হবে। এভাবে দুর্নীতি একটা চাকরির অনুষঙ্গ হয়ে যায়, আর চাঁদাবাজি হয়ে যায় নৈতিকতার পরিণতি।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

যে রাষ্ট্রের হাসপাতাল অচল, শিক্ষাব্যবস্থা লুটেরাদের হাতে, বিচারব্যবস্থা পক্ষপাতদুষ্ট, গণমাধ্যম ভীত, সেই রাষ্ট্র কিসের উন্নয়ন দেখাচ্ছে? রাষ্ট্র যদি মানুষকে সুশিক্ষা, সুবিচার, এবং নিরাপদ জীবন দিতে না পারে, তাহলে সেটা কেবল একটি ক্ষমতার যন্ত্র—যা দুর্নীতিবাজ, ঘুষখোর, আর চাঁদাবাজদের জন্য অপারেশনাল। একটা সময় ছিল—স্কুলের দেওয়ালে লেখা থাকত, “জ্ঞানই শক্তি”, কিংবা “কৃষিই জাতির মেরুদণ্ড”। কিন্তু আজকে এই কথাগুলো কেবল দেয়ালে রয়ে গেছে, বাস্তবতায় তারা মুছে গেছে। বরং এখন যেন রাষ্ট্রের অদৃশ্য সংবিধান হচ্ছে—‘ঘুষ দাও, চাঁদা দাও, অন্যথায় তোমার অস্তিত্ব থাকবে না।’

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

আমরা যে প্রজন্ম তৈরি করছি, তারা চোখ থাকতেও অন্ধ। একদিকে প্রশ্নপত্র ফাঁস, অন্যদিকে স্কুলশিক্ষকের গায়ে হাত তোলা—এই সবই একই সমাজের চিত্র। আজকের শিক্ষা ব্যবস্থায় নেই নৈতিকতা, নেই চিন্তার স্বাধীনতা, নেই কর্মমুখী দিকনির্দেশনা।

বিশ্ববিদ্যালয় এখন দলীয় অফিসে রূপ নিয়েছে, আর ছাত্ররাজনীতি মানে অস্ত্র, দখল আর ভয় দেখানো। শিক্ষক হয়ে উঠেছেন শোষণ ও নিয়ন্ত্রণের যন্ত্র, আর ছাত্র হয়ে উঠেছে ক্ষমতাবানের ভবিষ্যৎ বাহিনী।

জেনে হোক কিংবা না জেনে, আমরা গড়ে তুলছি এক নিষ্প্রভ, মেধাহীন ও চাটুকার প্রজন্ম—যাদের হাতে তুলে দিচ্ছি প্রশ্নফাঁস, গাইড বই, কোচিং নির্ভরতা, ঘুষ দিয়ে পাওয়া নিয়োগপত্র, আর ক্যাম্পাসজুড়ে দলীয় ক্যাডারতন্ত্র। যে শিক্ষার হাত ধরে জাতি গড়ার কথা ছিল, সেই শিক্ষাই আজ জাতি ভাঙার কারখানায় পরিণত হয়েছে।

আমরা মুখে সৃজনশীলতার কথা বলি, অথচ পাঠ্যবই মুখস্থ ছাড়া পাসের সুযোগ নেই। আমরা নৈতিকতার কথা বলি, অথচ শিক্ষকের চাকরি হয় টাকার বিনিময়ে। যেখানে শিক্ষকই ঘুষ দিয়ে আসেন শ্রেণিকক্ষে, সেখানে ছাত্র কেন শিখবে সততার পাঠ? আর যখন রাষ্ট্র নিজেই শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে ‘তেল মন্ত্রণালয়’তে রূপ দেয়, তখন তরুণ প্রজন্মের মেরুদণ্ড ভেঙে যাওয়াটাই তো স্বাভাবিক।

আমরা দেশজ উৎপাদনের চেয়ে আমদানিকে বড় করে তুলেছি। কৃষক যখন মাঠে ফসল পচিয়ে ফেলে দেয়, তখনই বাজারে ঢুকে পড়ে বিদেশি চাল, ডাল, পেঁয়াজ। কৃষকের পাশে দাঁড়ায় না কেউ—না সরকার, না মিডিয়া, না ব্যাংক। ঘুষ দিয়ে তাকে কিনতে হয় সেচের পানি, দালালের কাছ থেকে নিতে হয় সরকারি বীজ-সার। আর সে ফসল যখন ফলায়, তখন বাজারে দাম থাকে না।

শিল্পখাতের চিত্র আরও করুণ। একের পর এক কলকারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, দক্ষ জনশক্তি পাড়ি জমাচ্ছে বিদেশে—দেশে রয়ে যাচ্ছে শুধু অব্যবস্থা আর আমলাতন্ত্রের জঞ্জাল। আমরা এখন একটা “ভোগী জাতি”—নিজে কিছু উৎপাদন না করেই শুধু ভোগ করতে চাই। চীন, ভারত কিংবা তুরস্কের ওপর নির্ভর করেই চলছে আমাদের অর্থনীতি। অথচ সরকার বলে—“আমরা মধ্যম আয়ের দেশে পৌঁছেছি।” প্রশ্ন হলো—এই উন্নয়ন কার জন্য? যেখানে গার্মেন্টস শ্রমিক ১২ ঘণ্টা খেটে ১২ হাজার টাকা পায়, আর এক প্রকল্প পরিচালক ১ কোটি টাকায় গাড়ি কেনে—সেটি কি উন্নয়ন, নাকি লুণ্ঠনের ছদ্মবেশ? সবচেয়ে ভয়াবহ চিত্র যুবসমাজে। তারা শিক্ষিত হচ্ছে, কিন্তু কর্মসংস্থান পাচ্ছে না। মেধাবী যুবক যখন মাসের পর মাস, বছরের পর বছর বেকার থাকে, তখন একসময় সে বাধ্য হয় বিকল্প খুঁজতে—আর সেই বিকল্পের নাম হয় ‘যুবলীগ’ বা ‘যুবদল’। সেখানে চাকরি নেই, কিন্তু পিস্তল আছে; বেতন নেই, কিন্তু চাঁদা আছে; ভবিষ্যৎ নেই, কিন্তু মাদক আছে। রাষ্ট্র তার সবচেয়ে সম্ভাবনাময় শক্তি—তরুণ সমাজকে—নিজেই অস্ত্র তুলে দিচ্ছে, গডফাদারদের ছত্রছায়ায় গড়ে তুলছে একেকটি সন্ত্রাসী ইউনিট।

আজকের ছাত্র রাজনীতি মানেই চাঁদাবাজি, নিয়োগ বাণিজ্য, টিকটকে ‘লাইভ মারামারি’। একজন তরুণ যখন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করেও তিন বছর ধরে চাকরি খুঁজে পায় না, তখন তার স্বপ্ন আর কৃষি, স্টার্টআপ, প্রযুক্তি কিংবা শিল্পের দিকে যায় না—গিয়ে পড়ে রাজনৈতিক ছত্রছায়ার বন্দুকের নিচে। রাষ্ট্র যখন তার যুবসমাজকে স্বপ্ন না দিয়ে অস্ত্র দেয়, তখন সে রাষ্ট্র কেবল মেরুদণ্ডহীনই হয় না—সে আত্মঘাতী হয়ে ওঠে।

গণতন্ত্রে বলা হয়, “মানুষই মালিক।” কিন্তু বাংলাদেশের বাস্তবতায় সাধারণ মানুষ যেন কেবল ভোটের দিনই মানুষ, তারপর সে হয়ে যায় এক নির্বাক, অধিকারহীন ভিখারি। রাস্তা বানানো হয় ভিআইপি’র জন্য, হাসপাতালের উন্নয়ন হয় বিশেষ গোষ্ঠীর জন্য, আর নীতি নির্ধারিত হয় কর্পোরেট ক্লাবের কাচঘেরা কক্ষে বসে। কৃষক, শ্রমিক, প্রবাসী শ্রমজীবী—তারা যেন কেবল উন্নয়নের ভাষণকে অলংকৃত করার জন্য ব্যবহৃত হয়, কিন্তু নীতির কেন্দ্রে নয়।

প্রশ্নটা বারবার ফিরে আসে—এই রাষ্ট্রটা কার? যাদের ঘামে পথ তৈরি হয়, গায়ে রোদ লাগে, তারাই কি এই রাষ্ট্রের মালিক? না কি তারা, যাদের টাকা সুইস ব্যাংকে, সন্তান বিদেশে পড়ে, বছরে একবার দেশে আসে, আর টকশোতে দেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করে? রাষ্ট্র হওয়া উচিত সেই মানুষের, যিনি অন্যের ঘর তৈরি করতে গিয়ে নিজের ঘর বানাতে পারেন না। রাষ্ট্র হওয়া উচিত সেই শিক্ষকের, যিনি ছাত্রকে স্বপ্ন দেখান অথচ বেতন পান দেরিতে। রাষ্ট্রের কাজ হলো অসম্ভবকে সম্ভব করা, প্রতিভাকে জায়গা করে দেওয়া, শ্রমিকের ঘামে মাথা উঁচু করা। কিন্তু আজ রাষ্ট্র বন্দি—ধনীদের হাতে, ক্ষমতাবানদের শিকলে। আর যারা রাষ্ট্র চালায়, তারা মানুষকে দেখে ভোটের সংখ্যা হিসেবে, হৃদয়ের সত্তা হিসেবে নয়।

এই প্রশ্ন আজ আমাদের সামনে দাঁড় করিয়েছে—আমরা কাদের জন্য রাষ্ট্র গড়ছি? এমন এক রাষ্ট্র, যেখানে ঘুষ ছাড়া চাকরি হয় না, হাসপাতালে সেবা নয় বরং রাজনৈতিক সভার জন্য স্টেজ বানানো জরুরি, যেখানে মেধার চেয়ে পরিচয়, সততার চেয়ে সদস্যপদ বেশি কার্যকর। সেই রাষ্ট্রের কোনো গর্ব থাকতে পারে না। কেন এক সৎ শিক্ষক হতাশ হয়ে আত্মহত্যা করেন, আর এক চাঁদাবাজ যুবক জনপ্রতিনিধি হয়ে ওঠে? কেন উন্নয়ন মানেই হয় ভবন, রাস্তা, ব্যানার আর বিজ্ঞাপন—কিন্তু সেই উন্নয়নে থাকে না সাধারণ মানুষের স্বপ্ন, কান্না, জীবন?

আমরা চাই এমন এক রাষ্ট্র, যেখানে শিক্ষক হবেন জাতির শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি, যুবক হবে হিরো, কৃষক হবে গর্বের প্রতীক। যেখানে পুলিশ হবে মানুষের রক্ষক, কোনো দলের নয়। বিশ্ববিদ্যালয় হবে আলোর মিনার, যেখানে ছড়াবে জ্ঞানের শক্তি, মাদকের ভয় নয়। এখন সময় প্রশ্ন তোলার। এখন সময় “না” বলার। না ঘুষকে, না দুর্নীতিকে, না চাঁদাবাজিকে। রাষ্ট্র যদি মানুষের না হয়—তবে মানুষকেই রাষ্ট্র হয়ে উঠতে হবে।

আসুন, আমরা ভণ্ড মুখোশটা সরাই। জিডিপি নয়, আমরা বিচার করি—মানুষ হাসছে কি না। যদি মানুষ না থাকে, তাহলে উন্নয়ন কিসের জন্য? আজ দুর্নীতি আর অপরাধ নয়, সামাজিক দক্ষতা হয়ে উঠেছে। সৎ মানুষকে আমরা বলি বোকা, নির্লজ্জ চাঁদাবাজকে বলি স্মার্ট। এই মানসিকতা না বদলালে ‘উন্নয়ন’ কেবল কাগজে থাকবে—মানুষের জীবনে আসবে না।

আজ প্রয়োজন একটি নৈতিক মুক্তিযুদ্ধ—একটি সাহসী, সৎ ও গণমুখী সংগ্রাম, যেখানে চাঁদাবাজিকে ঘৃণা করা হবে, ঘুষখোরদের জনতার কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হবে, আর রাষ্ট্র একদিন সাহস করে নিজের আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে বলবে— জনগণ রাষ্ট্রের কর্মচারীদের সেবক নয়, বরং কর্মচারীরাই জনগণের সেবক; এটাই একটি মানবিক, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের সত্যিকার আত্মা। যদি প্রতিজ্ঞা করি—আমি আবার জনগণের রাষ্ট্র হতে চাই। আমরা কি প্রস্তুত সেই প্রতিশ্রুতি পালন করতে?

রহমান মৃধা, সুইডেন প্রবাসী বাংলাদেশি, গবেষক, লেখক ও সাবেক পরিচালক, ফাইজার। Rahman.Mridha@gmail.com

শেয়ার করুন:-

মত দ্বিমত

নির্বাচনের প্রাক্কালে নুরুল হকের ওপর হামলা: রাজনৈতিক অস্থিরতার নতুন সংকেত

Published

on

ব্লক

সারাদেশে যখন নানা অপ্রীতিকর ঘটনার পর প্রশাসন নীরব ভূমিকা পালন করছে, তখন হঠাৎ করে নুরুল হক নুরের ওপর হামলার ঘটনা দেশজুড়ে নতুন করে আলোড়ন তুলেছে। প্রত্যক্ষ ভিডিওচিত্র ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনায় দেখা গেছে, হামলায় সেনা এবং পুলিশের সদস্যরাও সরাসরি অংশ নিয়েছে। নুর বর্তমানে ঢাকা মেডিকেল কলেজের আইসিইউতে মুমূর্ষু অবস্থায় চিকিৎসাধীন। এ ঘটনা শুধু একটি রাজনৈতিক হামলা নয়, বরং আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের প্রেক্ষাপটে একটি বড় ধরনের রাজনৈতিক সংকেত বহন করছে।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

সরকার সদ্য ঘোষণা করেছে যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে। এই সময়সীমা নিয়ে আগে থেকেই নানা রাজনৈতিক বিতর্ক ছিল। সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান এর আগে নির্বাচন দ্রুত আয়োজনের পক্ষে মত দিয়েছেন। অপরদিকে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস সময় নিয়ে সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজনের ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। এই দ্বন্দ্বপূর্ণ প্রেক্ষাপটেই নুরের ওপর হামলার ঘটনা পরিস্থিতিকে আরও উত্তপ্ত করে তুলেছে।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

হামলার ঘটনার পর জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় দফতর থেকে পাঠানো বিবৃতিতে জাতীয় পার্টির সন্ত্রাসীদের দায়ী করা হয়েছে এবং এটিকে আওয়ামী ফ্যাসিবাদের দোসরদের কাজ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। জামায়াত গভীর উদ্বেগ ও তীব্র নিন্দা জানিয়ে আহতদের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করেছে এবং দোষীদের গ্রেফতার ও শাস্তির দাবি জানিয়েছে। অন্যদিকে গণঅধিকার পরিষদের নেতাকর্মীরা বলছেন, এটি একটি পরিকল্পিত আক্রমণ যা তরুণ প্রজন্মের রাজনীতিকে স্তব্ধ করার চেষ্টা।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

গণঅধিকার পরিষদের উচ্চতর পরিষদ সদস্য ও গণমাধ্যম সমন্বয়ক আবু হানিফ সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন যে, প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস নুরুল হক নুরের শারীরিক অবস্থার খোঁজ নিয়েছেন এবং তদন্ত করে হামলায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।
এছাড়া, অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান নুরের ওপর হামলাকে গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে উল্লেখ করেছেন এবং জাতীয় পার্টির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছেন। উচ্চতর পরিষদ সদস্য ও গণমাধ্যম সমন্বয়কের মন্তব্যে জানা গেছে- “হামলার পরপরই প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস নুরুল হক নুরের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন। তিনি নুরকে আশ্বাস দেন যে, ঘটনাটি তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে দ্রুত বিচারিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” ড. ইউনূসের এই ফোনালাপকে অনেকেই ইতিবাচক ইঙ্গিত হিসেবে দেখছেন। বিশেষ করে রাজনৈতিক সহিংসতার পরিবেশে এটি একটি আস্থা ফেরানোর প্রতীকী বার্তা। তবে পর্যবেক্ষকদের মতে, এই আশ্বাস কার্যকর প্রমাণিত হবে কি না তা নির্ভর করবে সরকারের পরবর্তী পদক্ষেপের ওপর। অতীতে বহুবার আশ্বাস দেওয়া হলেও বিচার হয়নি—তাই এবার সত্যিকার অর্থে সেনা ও পুলিশের সদস্যরা যদি দায়ী প্রমাণিত হন এবং তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়, তবে এটি নতুন সরকারের বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়াবে। অন্যথায় এটি উল্টো ড. ইউনূসের নিরপেক্ষতা নিয়েই প্রশ্ন তুলবে।

এই ঘটনার সঙ্গে আরও একটি তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হলো, সেনাপ্রধানের সদ্যসমাপ্ত চীন সফরের পরপরই এই অপ্রত্যাশিত হামলা সংঘটিত হলো। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই প্রেক্ষাপট ঘটনার পেছনে আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক বার্তাও বহন করতে পারে। ফলে দেশীয় রাজনীতি যেমন অস্থিরতার মধ্যে পড়েছে, তেমনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও এ ঘটনা নজর কাড়বে।

বর্তমান পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হচ্ছে, নির্বাচনের আগে দেশে স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশ নিশ্চিত করা যাবে কি না। নুরের ওপর হামলার মতো ঘটনা যদি অব্যাহত থাকে, তবে তা নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা ও অংশগ্রহণকে গুরুতরভাবে প্রভাবিত করবে। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমঝোতা এবং সহিংসতা নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকারের আন্তরিকতা এখন সবচেয়ে বড় পরীক্ষার মুখে।

রহমান মৃধা
গবেষক ও লেখক
(সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন)
Rahman.Mridha@gmail.com

শেয়ার করুন:-
পুরো সংবাদটি পড়ুন

মত দ্বিমত

প্রকৌশল খাতে বৈষম্য কাটাতে হবে লাইসেন্স ও জবাবদিহির মাধ্যমে

Published

on

ব্লক

বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের এক সংযোগস্থলে দাঁড়িয়ে। শিল্পায়ন, অবকাঠামো নির্মাণ ও প্রযুক্তি খাতে প্রকৌশলীরা মেরুদণ্ডস্বরূপ। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে প্রকৌশলীদের দুই শাখা—স্নাতক প্রকৌশলী এবং প্রকৌশলে ডিপ্লোমাধারীদের মধ্যে টানাপোড়েন আমাদের উন্নয়নযাত্রাকে অকারণে জটিল করে তুলেছে।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

শাহবাগে স্নাতক প্রকৌশলীদের তিন দফা দাবির আন্দোলন, পুলিশের হামলা এবং পাল্টা আন্দোলনে ডিপ্লোমাধারীদের অংশগ্রহণ—সব মিলিয়ে প্রকৌশল খাত এখন এক অস্থির বাস্তবতার মুখোমুখি। তবে এ সংকট কেবল বাংলাদেশি বাস্তবতায় সীমাবদ্ধ নয়। বিশ্বজুড়ে প্রকৌশল পেশাকে কীভাবে নিয়ন্ত্রণ ও মানসম্মত করা হয়, তা থেকে শিক্ষা নিয়ে আমরা সমাধানের পথ খুঁজতে পারি। ইউরোপ ও আমেরিকায় ‘ইঞ্জিনিয়ার’ শব্দটি কেবল ডিগ্রি অর্জনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

যুক্তরাষ্ট্রে Professional Engineer (PE) লাইসেন্স ছাড়া কেউ সরকারি প্রকল্পে সই করতে বা ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে পরিচয় দিতে পারেন না। জার্মানিতে ‘Ingenieur’ উপাধি আইন দ্বারা সংরক্ষিত। শুধু ডিগ্রি থাকলেই চলবে না, প্রফেশনাল রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক। যুক্তরাজ্যে Chartered Engineer (CEng) হতে হলে বহু বছরের অভিজ্ঞতা, দক্ষতা যাচাই এবং নৈতিকতার শর্ত পূরণ করতে হয়। অর্থাৎ, উন্নত বিশ্বে প্রকৌশলীরা শিক্ষা, অভিজ্ঞতা, নৈতিকতা এবং লাইসেন্স-এই চার ধাপ পেরিয়েই প্রকৌশলী পরিচয় পান। বাংলাদেশে এখনো এ ধরনের কাঠামো না থাকায় দ্বন্দ্ব ও দুর্নীতির সুযোগ তৈরি হয়েছে।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

বাংলাদেশে স্নাতক প্রকৌশলীরা বলছেন, ডিপ্লোমাধারীরা কোটার মাধ্যমে তাদের পদ দখল করছে। এতে মেধাবী স্নাতকরা কর্মক্ষেত্রে বঞ্চিত হচ্ছেন। অন্যদিকে ডিপ্লোমাধারীরা মনে করেন, তারাও প্রকৌশলী পরিচয়ের অধিকারী এবং তাদের জন্য বাড়তি পদায়ন দরকার। ফলে উভয়পক্ষেই তীব্র রেষারেষি তৈরি হয়েছে, অথচ বাস্তবে দুই দলের কাজই পরিপূরক।

প্রশ্ন হচ্ছে-এই বিভাজন কাটিয়ে কীভাবে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা যায়? বাংলাদেশে দুর্নীতিগ্রস্ত প্রকৌশলীর সংখ্যা কম নয়। কেউ কোটি টাকার বালিশ সরবরাহে অনিয়ম করেন, কেউ সেতু নির্মাণে খরচ ফুলিয়ে দেন। ডিগ্রিধারী হওয়া সত্ত্বেও তারা দেশের ক্ষতির কারণ হন। অন্যদিকে ইতিহাস বলে, অনেক মহৎ স্থাপনা—যেমন তাজমহল—গড়ে উঠেছিল এমন মানুষের হাতে, যাদের আধুনিক অর্থে ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি ছিল না। তারা মেধা, সৃজনশীলতা ও নিষ্ঠার মাধ্যমে ইতিহাস সৃষ্টি করেছিলেন।

অতএব প্রশ্নটা ডিগ্রির নয়; প্রশ্নটা হচ্ছে নৈতিকতা, দায়বদ্ধতা ও দেশপ্রেমের। একজন মাঝারি মানের কিন্তু সৎ প্রকৌশলী দেশের জন্য অনেক বেশি মঙ্গলজনক, একজন উচ্চ ডিগ্রিধারী দুর্নীতিবাজ প্রকৌশলীর চেয়ে। প্রতিবছর হাজার হাজার বাংলাদেশি প্রকৌশলী ইউরোপ-আমেরিকায় পাড়ি দিচ্ছেন। বিদেশে কঠোর নিয়ম ও জবাবদিহির মধ্যেও তারা সফল হচ্ছেন, অথচ দেশে থাকলে দুর্নীতির জালে জড়িয়ে পড়তে হয় বা হতাশায় পেশা ছাড়তে হয়। এর ফলে বাংলাদেশে দক্ষ জনশক্তির সংকট তৈরি হচ্ছে, যা দীর্ঘমেয়াদে অর্থনীতি ও উন্নয়নের পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াবে। এই সংকট থেকে উত্তরণের জন্য প্রথমত প্রকৌশলীদের জন্য লাইসেন্স ও নৈতিকতা কোড চালু করতে হবে। প্রকৌশলী হতে হলে শুধু ডিগ্রি নয়, পরীক্ষিত দক্ষতা ও নৈতিক মানদণ্ডে উত্তীর্ণ হতে হবে। লাইসেন্স ছাড়া কেউ ‘প্রকৌশলী’ পরিচয় ব্যবহার করতে পারবে না।
দ্বিতীয়ত স্নাতক প্রকৌশলী ও ডিপ্লোমাধারীদের জন্য আলাদা কিন্তু মর্যাদাপূর্ণ ক্যারিয়ার পথ তৈরি করতে হবে। এতে রেষারেষি কমবে, কাজের দক্ষতা বাড়বে। তৃতীয়ত প্রশাসনিক ক্যাডার দিয়ে প্রকৌশল সংস্থা চালালে পেশাগত সমস্যা সমাধান হয় না, তাই প্রকৌশলীদের নেতৃত্বে আলাদা ক্যাডার গড়ে তুলতে হবে। চতুর্থত ডিপ্লোমাধারীদের জন্য উচ্চশিক্ষার সেতুবন্ধন তৈরি করতে হবে-কারিগরি বোর্ডের আওতায় সমমান সনদ ও ক্রেডিট ট্রান্সফারের সুযোগ দিলে দক্ষ ডিপ্লোমাধারীরা চাইলে দ্রুত স্নাতক হতে পারবেন।

অবশেষে সবার জন্য নিয়মিত প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক করতে হবে এবং দুর্নীতির দায়ে প্রকৌশলীদের লাইসেন্স বাতিলের ব্যবস্থা রাখতে হবে। বাংলাদেশে আজ প্রকৌশল খাত এক সড়কবাঁকে দাঁড়িয়ে। দ্বন্দ্ব, কোটা, দুর্নীতি আর মেধাপাচারের এই সংকট কাটাতে হলে আমাদের বুঝতে হবে-শুধু ডিগ্রি বা পদবী নয়, প্রকৌশলীর প্রকৃত পরিচয় হলো মেধা, সততা, দায়িত্বশীলতা ও দেশপ্রেম। যেদিন বাংলাদেশ প্রকৌশল পেশাকে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে দাঁড় করাতে পারবে, সেদিনই আমাদের উন্নয়ন টেকসই হবে।

রহমান মৃধা
গবেষক ও লেখক
(সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন)
Rahman.Mridha@gmail.com 

শেয়ার করুন:-
পুরো সংবাদটি পড়ুন

মত দ্বিমত

বাংলাদেশের নির্বাচন: এক অদৃশ্য গণতন্ত্রের গল্প

Published

on

ব্লক

যেকোনো সময় নির্বাচনের দিন ঘোষণা হতে পারে, কিন্তু নির্বাচন বাস্তবে অনুষ্ঠিত হবে না। রাজধানীর রাস্তায় দিনভর মানুষ, যানবাহন আর সন্ত্রাসের আতঙ্ক যেন এক অদৃশ্য যুদ্ধের ময়দান তৈরি করেছে। যে দেশের রাষ্ট্রনীতি ভেজাল, দুর্নীতি ও স্বার্থপরতার মিশ্রণে ভরা, সেখানে প্রকৃত গণতন্ত্রের জন্ম অসম্ভব। রাজনৈতিক দলগুলো চাঁদাবাজি, ধান্দাবাজি এবং একে অপরকে নিপীড়নের ওপর দাঁড়িয়ে দৌড়ায়—এমন দেশে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে বলে ধারণা রাখা অমূলক। দূরপরবাসী হলেও আমি নিয়মিত দেশের পরিস্থিতি খুঁটিয়ে যাচাই করছি, সংবাদ খুঁটিয়ে দেখছি, তাই বলতে বাধ্য হচ্ছি—এবারের নির্বাচন সঠিক সময়ে হচ্ছে না।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

বর্তমান পরিস্থিতি স্পষ্ট করে দেখাচ্ছে, ড. ইউনূসকে দিয়ে হয়ত হুকুম চালানো হচ্ছে, পুলিশ বাহিনীকে দিয়ে দমন করা হচ্ছে এবং রাস্তায় চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সুযোগ সৃষ্টি করা হচ্ছে। স্কুলফেরত যুবক থেকে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা বেকার—সবাই যেন সেই অন্ধকারের নৃশংস খেলার অংশ। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে অরাজকতা ও অস্থিরতা বৃদ্ধি পাচ্ছে, আর নির্বাচনের পথ ক্রমশ বাধাগ্রস্ত হয়ে উঠছে।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

ড. ইউনূস আশা করেছিলেন, নতুন প্রজন্ম শেখ হাসিনার সরকারের পতন ঘটিয়ে দেশের নেতৃত্ব নতুনভাবে গ্রহণ করতে পারবে। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন—রাস্তায় নামা অধিকাংশ মানুষ ছিল টোকাই, যুবলীগ, যুবদল, শিবিরসহ দিনমজুরি; এরা জীবনকে ঝুঁকিতে ফেলে, গুলির আঘাতের ভয় উপেক্ষা করে লড়েছে। স্বৈরাচার সরকারের পতনের পর দেশের নেতৃত্ব এলিট সম্প্রদায়ের হাতে চলে গেছে—এভাবেই মূল সিদ্ধান্তগ্রহণ চলছে। নতুন দল গঠনের স্বপ্নের কর্মীরা এখন সীমিত সংখ্যক, তাদের শক্তি ও প্রভাব আগের মতো নেই। অন্যদিকে, তারেক জিয়ার যুবদলের সদস্যসংখ্যা দ্বিগুণ, কারণ এখানে যুবলীগও যোগ দিয়েছে। বিদেশে বসে গডফাদার হিসেবে তারেক জিয়া চাঁদাবাজি চালাচ্ছেন, কোনো প্রতিকূলতা ছাড়াই, আর দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে তার প্রভাব অদৃশ্যভাবে বিরাজ করছে।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

তারেক জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেনেড হামলার মামলা ছিল মূল অভিযোগ। যদি এটি সত্য হয়, তাহলে আরও স্পষ্ট—তিনি সন্ত্রাসীর সঙ্গে সম্পৃক্ততা বজায় রেখে বিদেশে অবস্থান করার সময়ও সেই প্রভাব ধরে রেখেছেন এবং প্রবাস থেকে দেশের রাজনৈতিক লড়াই নিয়ন্ত্রণ করছেন। ড. ইউনূস লন্ডনে তার সঙ্গে দেখা করেছেন এবং রাজনৈতিক কৌশল ও পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করেছেন। দেশে ফিরে, ড. ইউনূস একটি চাঞ্চল্যকর রাজনৈতিক রোডম্যাপ উপস্থাপন করেছেন। যদিও নির্বাচনের রোডম্যাপ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে অরাজকতা সৃষ্টি হয়েছিল, নির্বাচনের সময় নির্ধারিত হওয়ার পরও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মধ্যে মতপার্থক্য ও দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে। সম্ভবত এটাই মূল উদ্দেশ্য—দেশে আপাতত নির্বাচন হওয়া সম্ভব হচ্ছে না।

রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার আভাস যখন ঘনীভূত হয়, তখন সবার দৃষ্টি চলে যায় সশস্ত্র বাহিনীর দিকে। তাদের মূল দায়িত্ব হলো দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা, আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখা এবং সন্ত্রাস দমন করা। কিন্তু বাস্তবতার চাপ ও রাজনৈতিক খেলার মধ্যে তাদের ভূমিকা হয়ে ওঠে অপেক্ষমাণ, আর নির্বাচনী প্রক্রিয়ার ওপর তাদের প্রভাবও অনিশ্চিত। তারা কি কেবল সীমান্ত রক্ষা করবে, নাকি দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতায় সক্রিয় হস্তক্ষেপ করবে—এই প্রশ্ন এখনও উন্মুক্ত, প্রতিটি মুহূর্তে পরিস্থিতি বদলে যেতে পারে।

অনেকে মনে করেন, ড. ইউনূস ইচ্ছাকৃতভাবে সময় নষ্ট করছেন। তিনি পুরনো জেনারেলদের অবসরের অপেক্ষা করছেন, যাতে নতুন নেতৃত্বের সঙ্গে সমন্বয় সহজ হয়। পাশাপাশি, তারেক জিয়ার গ্রেনেড হামলার মামলার গোপন তথ্য এবং রাজনৈতিক দরকষাকষির দিকে নজর রাখছেন। এভাবে, শর্তের ভিত্তিতে, তারেক জিয়ার রাজনৈতিক দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে সম্ভবত তাকে নিরাপদভাবে দেশে ফেরার সুযোগ তৈরি করা হচ্ছে।

এদিকে, দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক অস্থিরতার সবচেয়ে বড় শিকার হচ্ছে যুবসমাজ। বেকারত্ব, শিক্ষার অভাব ও সামাজিক সুযোগের ঘাটতি অনেক যুবককে চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস এবং অপরাধের পথে ঠেলে দিচ্ছে। বিশেষ করে যুবলীগ, যুবদলসহ যারা দিনমুজুরি করে বা রাস্তায় ঘুরে সহিংস রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত, তারা শুধু রাজনৈতিকই নয়, সামাজিকভাবেও বিপর্যয় সৃষ্টি করছে। একদিকে স্কুলফেরত ছাত্র, অন্যদিকে রাস্তায় অস্ত্র হাতে—এই চরম দৃশ্য প্রতিদিন শহরকে আতঙ্কিত করছে, আর সাধারণ মানুষ যেন নিরস্ত্র অবস্থায় এই অরাজকতার সাক্ষী হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

নিষিদ্ধ বা হিংসাত্মক রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড, অপকর্মকে রাজনৈতিকভাবে উৎসাহিত করা, এবং যুবসমাজকে কেবল অপরাধী হিসেবে আখ্যায়িত করা—এই সমস্ত প্রথা অবশ্যই বর্জনীয়। এগুলো রাষ্ট্র ও সমাজের জন্য ক্ষতিকর এবং গণতান্ত্রিক সংস্কারের পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়।

অন্যদিকে করণীয়গুলো স্পষ্ট। প্রথমে শিক্ষার ও কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি করতে হবে, যাতে যুবসমাজ জীবিকার সন্ধানে অপরাধে না জড়িয়ে পড়ে। নৈতিক ও নাগরিক শিক্ষা দিতে হবে, শৃঙ্খলা, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও সামাজিক দায়বোধের সঙ্গে পরিচিত করতে হবে। রাজনৈতিক দলের স্বচ্ছতা ও নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করা জরুরি—যুবরাজনীতিতে চাঁদাবাজি ও সহিংসতা সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ হতে হবে। সামাজিক পুনর্বাসন ও মেন্টরশিপের মাধ্যমে অপরাধে জড়িত যুবকদের পুনর্গঠন করা এবং তাদের ইতিবাচক দিকনির্দেশনা দেওয়া প্রয়োজন। পাশাপাশি মানসিক ও সামাজিক সহায়তা প্রদান করতে হবে, যাতে যুবকরা মানসিক চাপ ও বিভ্রান্তি থেকে বের হয়ে সচেতন ও সৎ পথে চলতে পারে।

সব মিলিয়ে দেখা যাচ্ছে, দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে সশস্ত্র বাহিনী অপেক্ষমাণ, ড. ইউনূস সময়ক্ষেপণ করছেন, তারেক জিয়া আড়ালে গডফাদার হিসেবে সক্রিয়, যুবসমাজ বেকারত্ব ও অরাজকতায় আক্রান্ত, আর সাধারণ জনগণ অস্থিরতার বন্দি। বাংলাদেশের গণতন্ত্র এখনও ‘অদৃশ্য চুক্তি’ ও ‘গোপন আলোচনার’ ওপর নির্ভরশীল। রাষ্ট্র ভেজালে ভরা থাকলে নির্বাচন থেকে সংসদ পর্যন্ত খাঁটি গণতন্ত্রের জন্ম নেওয়া সম্ভব নয়।

ভবিষ্যতে গণতন্ত্রের পুনরুদ্ধার সম্ভব, তবে এর জন্য প্রয়োজন সশস্ত্র বাহিনীর নিরপেক্ষ ভূমিকা, নতুন নেতৃত্বের উত্থান যেখানে শিক্ষিত, নীতিনিষ্ঠ ও স্বার্থবিহীন প্রজন্ম দেশের নেতৃত্ব গ্রহণ করবে, আন্তর্জাতিক নজরদারি ও চাপের মাধ্যমে নির্বাচনের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা, রাজনৈতিক সংস্কারের উদ্যোগ গ্রহণ করে দলগুলোকে পুনর্গঠন ও স্বচ্ছতা ও দায়িত্বশীলতা নিশ্চিত করা এবং যুবসমাজকে পুনঃনির্দেশনা, শিক্ষা, কর্মসংস্থান, নৈতিক শিক্ষা ও সামাজিক সুযোগের মাধ্যমে অপরাধ ও সহিংসতা থেকে দূরে রাখা। এই শর্তগুলো পূরণ হলে তবেই বাংলাদেশে খাঁটি গণতান্ত্রিক নির্বাচন ও স্থিতিশীল সমাজ প্রতিষ্ঠা সম্ভব হবে; নাহলে নির্বাচন ও রাজনৈতিক প্রক্রিয়া কেবল প্রতারণা ও অরাজকতার খেলা হয়ে থাকবে।

রহমান মৃধা, সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন। Rahman.Mridha@gmail.com

শেয়ার করুন:-
পুরো সংবাদটি পড়ুন

মত দ্বিমত

চাঁদাবাজির লাইসেন্স: বাংলাদেশের রাজনীতির কালো খোলস

Published

on

ব্লক

চাঁদাবাজি বাদ দিয়ে কাজ করুন, দেখবেন সংস্কার এমনিতেই হয়ে গেছে।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

কেউ রাজনীতি করবে না বাংলাদেশে, যেদিন দেখবেন দুর্নীতি আর চাঁদাবাজি বন্ধ হয়ে গেছে। কিন্তু এই বন্ধ করার জন্য যে সংস্কার প্রয়োজন, সেটি হলো রাজনীতি অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করা—মানে লাইসেন্স বাতিল করা। লাইসেন্সটা কী জানেন? রাজনীতি। সব চাঁদাবাজিই কোনো না কোনো রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় জন্ম নেয়। তার মানে কি বুঝাতে পারলাম?

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

স্বপ্ন দেখছেন এবং আপনাকে স্বপ্ন দেখানো হচ্ছে—একজন দেশের বড় নেতা হবেন প্রধানমন্ত্রী। অথচ তিনি জীবনে কোনো কাজ করেননি! মানুষ হিসেবে তো আমাদের জন্ম হয়েছে কাজ করার জন্য। এখন যদি কাজ বলতে কেবল চাঁদাবাজির সংগঠন চালানো বোঝায়, তবে বন্ধ করে দেওয়া হোক সকল সৃজনশীল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শিল্প প্রতিষ্ঠান এমনকি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাসহ দেশের প্রতিটি প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশ এগুলোর কিছুই ডিজার্ভ করে না।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

আশ্চর্য লাগে, এআই প্রযুক্তির যুগেও বাংলাদেশে দিনদুপুরে চাঁদাবাজি হয়, আর প্রতিটি রাজনৈতিক লাইসেন্সধারী সংগঠন বিদ্যমান আইন অনুযায়ী চলতে থাকে—এর চেয়ে লজ্জার আর কী হতে পারে! এখন সবাই উঠে পড়ে লেগেছে পুরো দেশটিই যেন চাঁদাবাজদের নেত্রাধীন হয়ে যায়। আর সেই গুরুত্বপূর্ণ কাজটি সম্পন্ন করার দায়িত্ব যাকে দেওয়া হয়েছে, তিনি আর কেউ নন—তিনি হচ্ছেন নোবেল বিজয়ী প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ভাবতেই গা শিউরে ওঠে!

কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে—কোথায় থামবে এই দুর্নীতি ও চাঁদাবাজির মহোৎসব? মানুষ কি সত্যিই রাজনীতি ছাড়া চলতে পারবে না? উত্তর হচ্ছে, পারবেই। শর্ত হচ্ছে, রাজনৈতিক লাইসেন্স বাতিল করে দেশের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে জনগণের সেবার জন্য খাঁটি পেশাগত নীতির ভিত্তিতে পুনর্গঠন করতে হবে। তখনই বোঝা যাবে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কীভাবে আলোকিত মানুষ গড়তে পারে, শিল্প প্রতিষ্ঠান কীভাবে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারে, এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কীভাবে সত্যিকারের ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে পারে।

আমরা ভুলে গেছি—রাষ্ট্র হলো মানুষের জন্য, মানুষের শ্রম ও মেধার বিকাশের জন্য। অথচ এখানে রাষ্ট্র যেন কেবল একদল লুটেরার সম্পত্তি। প্রতিটি রাস্তায়, প্রতিটি বাজারে, প্রতিটি প্রশাসনিক দপ্তরে দেখা যায় চাঁদাবাজির অশুভ ছায়া। যে ছায়ার কারণে এক কৃষক তার ফসলের দাম পায় না, এক শিক্ষক তার প্রাপ্য সম্মান পায় না, এক যুবক তার স্বপ্ন পূরণের সুযোগ পায় না।

তাহলে পথ কী? পথ একটাই—রাজনীতির নামে চাঁদাবাজির বাজার বন্ধ করতে হবে। রাষ্ট্রকে এমন এক নতুন সামাজিক চুক্তির পথে হাঁটতে হবে যেখানে নাগরিকের কাজই হবে রাজনীতি, কিন্তু সেটা হবে কর্ম ও সৃজনশীলতার রাজনীতি। যেখানে ভোট মানে দলবাজি নয়, বরং কাজের হিসাব। যেখানে নেতা মানে ক্ষমতার আসনে বসা ব্যক্তি নয়, বরং সেবার মানদণ্ডে দাঁড়ানো একজন প্রকৃত মানুষ।

যদি এই সংস্কার না হয়, তবে বাংলাদেশ কখনোই দুর্নীতি ও চাঁদাবাজির কালো খোলস ভেদ করতে পারবে না। আমরা কেবল এক প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্মের হাতে হস্তান্তর করব হতাশা, ব্যর্থতা আর অচল রাজনীতির অভিশাপ।

কিন্তু যদি হই আমরা দৃঢ়, যদি সত্যিই চাই পরিবর্তন—তাহলে নতুন প্রজন্মকেই নেতৃত্ব নিতে হবে। রাজনীতির লাইসেন্স বাতিল করে নাগরিক সমাজকে করতে হবে জবাবদিহির আসল শক্তি। তখনই চাঁদাবাজি থামবে, দুর্নীতি ভাঙবে, এবং বাংলাদেশ তার প্রকৃত সম্ভাবনায় উন্মোচিত হবে।

অন্যথায়, একদিন মানুষ বলবে— “বাংলাদেশ ছিল এক সম্ভাবনার দেশ, কিন্তু তার সম্ভাবনা শেষ করে দিয়েছে রাজনীতির নামে চাঁদাবাজির লাইসেন্স।”

রহমান মৃধা, সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন। Rahman.Mridha@gmail.com

শেয়ার করুন:-
পুরো সংবাদটি পড়ুন

মত দ্বিমত

সামান্য কিছু বালু আমেরিকা থেকে আনতে দিলো না, অথচ…

Published

on

ব্লক

সামারে সুইডেনে পাকিস্তানি আম পাওয়া যায়, খেতেও বেশ ভালো। ছোটবেলায় বাংলাদেশে গ্রামেই বেশি সময় কেটেছে। আম, জাম, লিচু, কাঠাল, খেজুরের রস—এসব ছিলো সেই বেহেস্তের খাবারের মতো, যাকে বলে অমৃত। তো বহু বছর দেশের বাইরে থাকতে থাকতে দই-এর সাধ ঘোলে মেটাতে হয় মাঝেমধ্যে। যার ফলে সামারে আমদুধ দিয়ে মুড়ি খাওয়ার সাধ জাগে। আম যেমনই হোক, তা মেলে, তবে সেই মুড়ি কোথায়? শেষে স্টকহোমের একটি বাংলাদেশি দোকান থেকে মুড়ি কিনলাম। ওমা! মুড়ি তেলে ভেজেছে, কেমন একটা বিশ্রী গন্ধ! মেজাজটাই খারাপ হয়ে গেল। দোকানে গিয়ে বিষয়টি বলতেই ভদ্রলোক বললেন, “বাংলাদেশ থেকে এগুলোই আসে।” আমি শুধু বললাম—ঘটনা কী? শাকসবজি, মাছ-ফলে ফরমালিন, মুড়িতে তেলের গন্ধ, মসলায় ইটের গুঁড়া—এসব সাত সমুদ্র তের নদী পার হয়ে কীভাবে এলো? ভদ্রলোক হেসে বললেন, “যেভাবে আমরা এসেছি ভাই।” আমার আর বলার কিছু ছিল না।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

পরে বেশ কয়েক বছর কেটে গেছে। সম্ভবত ১৯৯৬ সালের দিকে ছুটিতে গিয়েছিলাম ক্যালিফোর্নিয়ার লস এঞ্জেলসে। সাগরের বালু এত পরিষ্কার এবং সাদা দেখে মনে পড়ে গেলো ছোটবেলার কথা। মাকে দেখেছি পরিষ্কার বালু গরম করে চাল দিয়ে মুড়ি ভাজতে। ভাবলাম, কিছু বালু সুইডেনে নিয়ে যাবো। যে ভাবনা, সেই কাজ। ব্যাগ ভরে কয়েক কেজি বালু নিয়ে লস এঞ্জেলস বিমানবন্দরে হাজির। চলছে চেকিং—নানা ধরনের প্রশ্ন: ব্যাগে কী আছে, কে প্যাক করেছে, অস্ত্রপাতি আছে কি না ইত্যাদি। ব্যাগের ওজন একটু বেশি হয়ে গেছে। কিছু ওজন কমাতে হবে অথবা অতিরিক্ত চার্জ দিতে হবে।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

আমি ডেস্কে জিঙ্গেস করলাম, “কত?”
উত্তরে বলল, “২০০ ডলার।”
ভাবলাম, তাহলে কিছু বালু রেখে যাই। একটু সাইডে গিয়ে বালু ঢালছি আরেকটি পলিথিনের ব্যাগে। হঠাৎ পুলিশ এসে হাজির। তারা জিজ্ঞেস করল, “এটা কী? কোথা থেকে এলো?” আমি সব বললাম। পুলিশ তো হতবাক! বলল, “জীবনে অনেক কিছু চোরাচালান হতে দেখেছি, কিন্তু বালু চোরাচালান এই প্রথম। তবে কী নিয়মকানুন আছে, সেটা জানা নেই। তোমাকে অপেক্ষা করতে হবে, তদন্ত করতে হবে।”

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

আমি বললাম, “আরে ভাই, এটা খাঁটি বালি, কোনো ভেজাল নেই। আমি নিজে হাতে সাগর থেকে তুলেছি।”
পুলিশ বলল, “তবুও পরীক্ষা করতে হবে। অন্য কিছু এর সঙ্গে জড়িত আছে কিনা তা জানতে হবে। রাষ্ট্রের প্রাকৃতিক সম্পদ পাচার—এটা তদন্তের বিষয়।”

আমি তো হঠাৎ অবাক! ঘাম ছুটে গেল শরীরে। এ যেন মহাবিপদ! এদিকে প্লেন ছেড়ে দেবে, ফ্লাইট মিস হবে, সাথে বালু চোরের খেতাব, জেল-জরিমানা—আর কত কী! আমি আছি আমার রাজ্যে—কে কী বলবে, কী হবে না হবে এসব নিয়ে। এরমধ্যে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এল। হঠাৎ কোনো যান্ত্রিক সমস্যার কারণে প্লেন এক ঘণ্টা দেরিতে ছাড়বে—এটাও কেউ এসে জানিয়ে গেল। একটু স্বস্তি পেলাম, কিন্তু আমার কী হবে সেটা নিয়ে ভাবছি।

কর্তৃপক্ষের সাথে বেশ কিছুক্ষণ কথা হলো। আমার পরিচয়সহ সব ঘটনা জানার পর বিষয়টি বুঝতে পেরে আমাকে ছেড়ে দিলো, তবে বালু রেখে দিল। শুধু বললো, রাষ্ট্রের সম্পদ এভাবে নেওয়া উচিত নয়। যদিও বালুর বিষয়ে প্লেনে ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য নির্দিষ্ট কোনো নির্দেশনা নেই, তবুও নিতে পারবে না। আমি মনে মনে ভাবলাম—তুই তোর বালু নে, আমার আর মুড়ি ভাজার শখ নেই। বালু রেখে চলে এলাম।

ঘটনাটি পরে সুইডেনে এসে আলোচনা করেছি, কিন্তু বিষয়টি নিয়ে আর ভাবিনি। যদিও সেদিন লস এঞ্জেলস বিমানবন্দরে আমার বারোটা বাজতে গিয়েছিল, ভাগ্যিস মানসিক চাপ, শ্বাসকষ্ট আর ঘাম ছাড়া অন্য কোনো বিপদ হয়নি। তবে আমদুধ দিয়ে মুড়ি খাওয়ার শখ সেদিন লস এঞ্জেলসের বিমানবন্দরে রেখে এসেছি।

ভেজাল খাবার এড়াতে এবং দেশি খাবারের টান মেটাতে আমি এখানে নিজের মতো কৃষিপণ্য উৎপাদন করি। তবে আম আর ধান এখনও উৎপাদন সম্ভব হয়নি। সময়-সুযোগ হলে চেষ্টা করবো, ইনশাআল্লাহ। আজ হঠাৎ বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সম্পদ—পাথর উত্তোলন আর সেগুলো রাতারাতি শেষ হয়ে যাওয়ার খবর পড়ে সেই দিনের ঘটনার কথা মনে পড়ে গেল। মনে হলো, বেচারা দেশবাসীর হয়তো ঘর-দুয়ার সাজানোর শখ হয়েছিল পাথর দিয়ে—যেমনটি আমার হয়েছিল বালু দিয়ে মুড়ি ভাজার। প্রকৃতির সম্পদ লুট করে যেমন দেশ ফাঁকা হয়, তেমনি ভেজাল খাবারে মানুষের মনও শূন্য হয়ে যায়।

রহমান মৃধা
গবেষক ও লেখক
সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন
Rahman.Mridha@gmail.com

শেয়ার করুন:-
পুরো সংবাদটি পড়ুন

পুঁজিবাজারের সর্বশেষ

ব্লক ব্লক
পুঁজিবাজার14 hours ago

ব্লকে ৩৬ কোটি টাকার লেনদেন

সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ব্লকে মোট ৩১টি কোম্পানির শেয়ার লেনদেন হয়েছে। কোম্পানিগুলোর মোট ৬২ লাখ ৬৫ হাজার...

ব্লক ব্লক
পুঁজিবাজার14 hours ago

শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের উদ্যোক্তার শেয়ার বিক্রয়

পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক পিএলসির এক উদ্যোক্তা পূর্বঘোষণা অনুযায়ী শেয়ার বিক্রয় সম্পন্ন করেছেন।  AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন × ঢাকা...

ব্লক ব্লক
পুঁজিবাজার15 hours ago

ইউনাইটেড ফাইন্যান্সের ক্রেডিট রেটিং সম্পন্ন

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি ইউনাইটেড ফাইন্যান্স পিএলসির ক্রেডিট রেটিং সম্পন্ন করা হয়েছে।  AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন × ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)...

ব্লক ব্লক
পুঁজিবাজার15 hours ago

পিপলস লিজিংয়ের সর্বোচ্চ দরপতন

সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) শেয়ার দর পতনের শীর্ষে উঠে এসেছে পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেড। ডিএসই...

ব্লক ব্লক
পুঁজিবাজার15 hours ago

দর বৃদ্ধির শীর্ষে ইভেন্স টেক্সটাইলস

সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস রোববার (৩১ আগস্ট) দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেনে অংশ নেয়া কোম্পানিগুলোর মাঝে দর বৃদ্ধির...

ব্লক ব্লক
পুঁজিবাজার17 hours ago

লেনদেনের শীর্ষে লাভেলো আইসক্রিম

সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেনের শীর্ষে উঠে এসেছে তৌফিকা ফুডস অ্যান্ড লাভেলো আইসক্রিম পিএলসি। ডিএসই...

ব্লক ব্লক
পুঁজিবাজার17 hours ago

সূচকের সঙ্গে লেনদেন বেড়েছে পুঁজিবাজারে

সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) মূল্যসূচকের ইতিবাচক প্রবণতায় লেনদেন শেষ হয়েছে। একই সঙ্গে টাকার অংকের...

Advertisement
AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

সোশ্যাল মিডিয়া

তারিখ অনুযায়ী সংবাদ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
 
১০১১১৩
১৫১৬১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
৩০  
ব্লক
অর্থনীতি8 hours ago

বিদেশি সফটওয়্যার ছাড়াই কার্ড ইস্যু করতে পারবে দেশের ব্যাংকগুলো

ব্লক
খেলাধুলা9 hours ago

বিসিবি নির্বাচনের কমিশন গঠন আগামীকাল

ব্লক
ক্যাম্পাস টু ক্যারিয়ার9 hours ago

বাকৃবি অনির্দিষ্টকালের জন‍্য বন্ধ ঘোষণা, হল ত্যাগের নির্দেশ

ব্লক
জাতীয়9 hours ago

নির্বাচনের বিকল্প কিছু ভাবলে সেটা হবে বিপজ্জনক: প্রধান উপদেষ্টা

ব্লক
রাজনীতি10 hours ago

ফেব্রুয়ারিতেই নির্বাচনের আশ্বাস প্রধান উপদেষ্টার: ফখরুল

ব্লক
অর্থনীতি10 hours ago

বাংলাদেশ ব্যাংকে নির্বাহী পরিচালক পদে পদোন্নতি পেলেন ৪ কর্মকর্তা

ব্লক
ক্যাম্পাস টু ক্যারিয়ার11 hours ago

চবিতে স্থানীয় সন্ত্রাসী হামলার প্রতিবাদে ইবিতে বিক্ষোভ

ব্লক
কর্পোরেট সংবাদ11 hours ago

বিকাশ-বিজ্ঞানচিন্তার আয়োজনে বিজ্ঞান উৎসবের ৩য় আসর শুরু

ব্লক
জাতীয়12 hours ago

পলিথিন ব্যবহারে আর কোনো ছাড় নয়: পরিবেশ উপদেষ্টা

ব্লক
কর্পোরেট সংবাদ12 hours ago

হজযাত্রীদের সেবায় ইউসিবির হজ এজেন্সি সম্মেলন

ব্লক
অর্থনীতি8 hours ago

বিদেশি সফটওয়্যার ছাড়াই কার্ড ইস্যু করতে পারবে দেশের ব্যাংকগুলো

ব্লক
খেলাধুলা9 hours ago

বিসিবি নির্বাচনের কমিশন গঠন আগামীকাল

ব্লক
ক্যাম্পাস টু ক্যারিয়ার9 hours ago

বাকৃবি অনির্দিষ্টকালের জন‍্য বন্ধ ঘোষণা, হল ত্যাগের নির্দেশ

ব্লক
জাতীয়9 hours ago

নির্বাচনের বিকল্প কিছু ভাবলে সেটা হবে বিপজ্জনক: প্রধান উপদেষ্টা

ব্লক
রাজনীতি10 hours ago

ফেব্রুয়ারিতেই নির্বাচনের আশ্বাস প্রধান উপদেষ্টার: ফখরুল

ব্লক
অর্থনীতি10 hours ago

বাংলাদেশ ব্যাংকে নির্বাহী পরিচালক পদে পদোন্নতি পেলেন ৪ কর্মকর্তা

ব্লক
ক্যাম্পাস টু ক্যারিয়ার11 hours ago

চবিতে স্থানীয় সন্ত্রাসী হামলার প্রতিবাদে ইবিতে বিক্ষোভ

ব্লক
কর্পোরেট সংবাদ11 hours ago

বিকাশ-বিজ্ঞানচিন্তার আয়োজনে বিজ্ঞান উৎসবের ৩য় আসর শুরু

ব্লক
জাতীয়12 hours ago

পলিথিন ব্যবহারে আর কোনো ছাড় নয়: পরিবেশ উপদেষ্টা

ব্লক
কর্পোরেট সংবাদ12 hours ago

হজযাত্রীদের সেবায় ইউসিবির হজ এজেন্সি সম্মেলন

ব্লক
অর্থনীতি8 hours ago

বিদেশি সফটওয়্যার ছাড়াই কার্ড ইস্যু করতে পারবে দেশের ব্যাংকগুলো

ব্লক
খেলাধুলা9 hours ago

বিসিবি নির্বাচনের কমিশন গঠন আগামীকাল

ব্লক
ক্যাম্পাস টু ক্যারিয়ার9 hours ago

বাকৃবি অনির্দিষ্টকালের জন‍্য বন্ধ ঘোষণা, হল ত্যাগের নির্দেশ

ব্লক
জাতীয়9 hours ago

নির্বাচনের বিকল্প কিছু ভাবলে সেটা হবে বিপজ্জনক: প্রধান উপদেষ্টা

ব্লক
রাজনীতি10 hours ago

ফেব্রুয়ারিতেই নির্বাচনের আশ্বাস প্রধান উপদেষ্টার: ফখরুল

ব্লক
অর্থনীতি10 hours ago

বাংলাদেশ ব্যাংকে নির্বাহী পরিচালক পদে পদোন্নতি পেলেন ৪ কর্মকর্তা

ব্লক
ক্যাম্পাস টু ক্যারিয়ার11 hours ago

চবিতে স্থানীয় সন্ত্রাসী হামলার প্রতিবাদে ইবিতে বিক্ষোভ

ব্লক
কর্পোরেট সংবাদ11 hours ago

বিকাশ-বিজ্ঞানচিন্তার আয়োজনে বিজ্ঞান উৎসবের ৩য় আসর শুরু

ব্লক
জাতীয়12 hours ago

পলিথিন ব্যবহারে আর কোনো ছাড় নয়: পরিবেশ উপদেষ্টা

ব্লক
কর্পোরেট সংবাদ12 hours ago

হজযাত্রীদের সেবায় ইউসিবির হজ এজেন্সি সম্মেলন