জাতীয়
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্র ছাড়া সব কমিটি স্থগিত

কেন্দ্রীয় কমিটি বাদে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সারাদেশের সব কমিটির কার্যক্রম স্থগিত করেছে সংগঠনটি।
রবিবার (২৭ জুলাই) সন্ধ্যায় শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে আয়োজিত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন সংগঠনটির সভাপতি রিফাত রশিদ।
তিনি বলেন, গত কালকের ঘটনাসহ আমরা বেশ কিছু ঘটনা দেখতে পেয়েছি, যেখানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানার ব্যবহার করে অনেক ধরনের অপকর্ম করার চেষ্টা করা হয়েছে। আমরা যেদিন আত্মপ্রকাশ করেছিলাম এ সম্পর্কে সেদিনই সতর্ক করেছিলাম, এ ধরনের কোনো কিছু বরদাস্ত করা হবে না। কিন্তু আমরা পরে দেখেছি, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ইন্ধনে তারা দুর্নীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়েছে। যেটি এই মুহূর্তে নিয়ন্ত্রণ করা আমাদের পক্ষে প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
কমিটি বিলুপ্তের ঘোষণা দিয়ে রিফাত বলেন, উপরোক্ত পরিস্থিতি বিবেচনায় অর্গানোগ্রামের জরুরি মিটিং ডাকা হয়েছিল। সেখানে অর্গানোগ্রামের চারজন উপস্থিত ছিলেন এবং তাদের সম্মিলিত পরামর্শে আমরা একটি সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটি ব্যতীত সারাদেশের সব কার্যক্রম আজ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্থগিত করা হলো।
তিনি আরও বলেন, এর মধ্য দিয়ে আগামী কার্যক্রম কোন উপায়ে পরিচালিত হবে সে ব্যাপারে আমরা বসবো, একটা রূপরেখা তৈরি হবে। ওই সময়গুলোতে ছাত্র আন্দোলন অভ্যুত্থানের প্ল্যাটফর্ম। এই প্লাটফর্ম কোনো দুর্নীতি ও অনিয়ম বরদাস্ত করবে না।

জাতীয়
আহতদের চিকিৎসায় সহায়তা অব্যাহত রাখার আশ্বাস চীনের

মাইলস্টোন ট্র্যাজেডিতে আহতদের চিকিৎসায় সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে বাংলাদেশ সফররত চীনের মেডিকেল দল। রোববার (২৭ জুলাই) ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে তারা এ আশ্বাস দেন।
ঢাকায় চীনা দূতাবাসের পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সাক্ষাতে অধ্যাপক ইউনূস বাংলাদেশের জনগণের পক্ষ থেকে চীনা মেডিকেল দলের দ্রুত সাড়া ও পূর্ণ সহযোগিতার জন্য আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, স্বাস্থ্যসেবা খাতে বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা ও নিয়মিত যোগাযোগ অব্যাহত থাকলে দুই দেশের জনগণ উপকৃত হবে।
এসময় ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন প্রাণহানির ঘটনায় শোক প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও চীন সুখ-দুঃখের প্রকৃত বন্ধু। রাষ্ট্রদূত আরও জানান, আহতদের চিকিৎসায় চীন তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী সহায়তা দিতে প্রস্তুত রয়েছে। পাশাপাশি, স্বাস্থ্যখাতে জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা বিনিময়, সক্ষমতা উন্নয়ন ও অবকাঠামো নির্মাণে যৌথ সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।
গত ২১ জুলাই দুপুরে রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়ি এলাকায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাসে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৩৫ জন নিহত হয়েছেন, যাদের অধিকাংশই মাইলস্টোনের শিক্ষার্থী।
দগ্ধদের চিকিৎসা সহায়তায় বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) ঢাকায় আসে চীনের পাঁচ সদস্যের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও নার্স দল। ওইদিন সকালে জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের চিকিৎসকদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হন চীনের কুনমিংয়ের একটি হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরাও।
জাতীয়
প্রয়োজনে আহতদের ভারতে নেওয়া হবে: ভারতীয় চিকিৎসক দল

মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তে আহতদের প্রয়োজন হলে ভারতে নিয়ে চিকিৎসা দেওয়ার প্রস্তুতি রয়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ সফররত ভারতীয় চিকিৎসক দলের প্রধান।
রোববার (২৭ জুলাই) প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে তিনি এ প্রতিশ্রুতি দেন।
ঢাকাস্থ ভারতীয় হাইকমিশনের পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। তবে ভারতীয় হাইকমিশনের পক্ষ থেকে প্রতিনিধিদলে থাকা চিকিৎসকদের নাম গণমাধ্যমে প্রকাশ করা হয়নি।
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎকালে চিকিৎসক দলের প্রধান বলেন, বাংলাদেশকে চিকিৎসা সরঞ্জাম, পুনর্বাসন সহায়তা বা রোগী স্থানান্তরের প্রয়োজন হলে ভারত সব ধরনের সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত। যদি কোনো রোগীকে ভারতে নেওয়ার প্রয়োজন হয়, সেটিও দ্রুত সমন্বয়ের মাধ্যমে সম্ভব।
ভারতীয় চিকিৎসক দল জানায়, তারা ঢাকায় এসেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নির্দেশে। মাইলস্টোনে বিমান বিধ্বস্তের পর বাংলাদেশকে সহায়তার প্রতিশ্রুতি দেন মোদী। শোকবার্তায় তিনি বলেন, দুর্ঘটনার শিকারদের দ্রুত চিকিৎসা ও পুনর্বাসনে ভারত সব ধরনের সহায়তা দিতে প্রস্তুত।
হাইকমিশনের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ভারতীয় চিকিৎসক দল বাংলাদেশের জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট পরিদর্শন করে সেখানকার চিকিৎসা কার্যক্রমে সন্তোষ প্রকাশ করেন।
দিল্লির আরএমএল হাসপাতাল ও সাফদারজং হাসপাতাল থেকে আসা এই মেডিকেল টিমে রয়েছেন দুজন বার্ন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও দুজন নার্সিং অ্যাসিস্ট্যান্ট। ভারতে বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারির জন্য এই দুই প্রতিষ্ঠানের সুনাম রয়েছে।
ভারতীয় হাইকমিশন জানায়, চিকিৎসকরা ২৩ জুলাই ঢাকায় আসেন। গত কয়েকদিনে চারটি পরামর্শমূলক সেশন শেষে গুরুতর আহত রোগীদের অবস্থা পর্যালোচনার একটি চূড়ান্ত রাউন্ড সম্পন্ন করে সোমবার (২৮ জুলাই) ভারতে ফিরে যাবেন।
জাতীয়
সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন নির্ধারণে ২২ সদস্যের কমিশন

সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক ও অর্থলগ্নী প্রতিষ্ঠান, সরকারি মঞ্জুরিপ্রাপ্ত বিশ্ববিদ্যালয় এবং রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য নতুন বেতন কাঠামো নির্ধারণে ২২ সদস্যের জাতীয় বেতন কমিশন গঠন করেছে সরকার। কমিশনের প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার তারিখ থেকে ৬ মাসের মধ্যে সরকারের কাছে এই সুপারিশমালা জমা দিতে হবে।
এ ছাড়া কমিশন বিদ্যমান বেতন, ভাতা ও অন্যান্য সুবিধা পর্যালোচনা করে সুপারিশমালা জমা দেবে। রোববার (২৭ জুলাই) অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮ এর ধারা ১৫-এ দেওয়া ক্ষমতাবলে জাতীয় বেতনস্কেলের আওতাভুক্ত প্রজাতন্ত্রের সব শ্রেণির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য জাতীয় বেতন কমিশন, ২০২৫ গঠন করা হয়েছে। সাবেক অর্থ সচিব জাকির আহমেদ খানকে সভাপতি করে কমিশনের পূর্ণকালীন সদস্য করা হয়েছে সাবেক সচিব ড. মোহাম্মদ আলী খান, সাবেক হিসাব মহানিয়ন্ত্রক মো. মোসলেম উদ্দীন এবং সাবেক রাষ্ট্রদূত মো. ফজলুল করিমকে।
কমিশনের খণ্ডকালীন সদস্যরা হলেন—সাবেক মহা-হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক আহমেদ আতাউল হাকিম, সাবেক সরকারি কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ জাহিদ হোসাইন, সাবেক সচিব ড. জিশান আরা আরাফুন্নেসা, মেজর জেনারেল (অব.) এ আই এম মোস্তফা রেজা নূর, বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর ড. মো হাবিবুর রহমান, সাবেক গ্রেড-১ কর্মকর্তা মিজু তহমিনা বেগম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. মাকছুদুর রহমান সরকার, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের এনিমেল ব্রিডিং অ্যান্ড জেনেটিক্স বিভাগের প্রফেসর ড. মোহাম্মদ সামছুল আলম ভূঁঞা, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)-এর ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রফেসর ড. এ কে এম মাসুদ, বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক সৈয়দ আতিকুল হক, বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের মহাপরিচালক অধ্যাপক এ কে এনামুল হক, সশস্ত্র বাহিনীর একজন প্রতিনিধি (প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক মনোনীত), আইন ও বিচার বিভাগের একজন প্রতিনিধি আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় (আইন ও বিচার বিভাগ কর্তৃক মনোনীত), জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন প্রতিনিধি (জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কর্তৃক মনোনীত), জননিরাপত্তা বিভাগের একজন প্রতিনিধি, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় (জননিরাপত্তা বিভাগ কর্তৃক মনোনীত), ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড একাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশ’র প্রেসিডেন্ট, ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বারস অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্টি (এফবিসিসিআই)-এর সভাপতি এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (প্রবিধি, বাস্তবায়ন, আইন ও রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান)।
কমিশনের সদস্যসচিব হিসাবে দায়িত্ব পালন করবেন সরকারের একজন সচিব অথবা অতিরিক্ত সচিব। যিনি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে নিয়োগপ্রাপ্ত হবেন। কমিশন প্রয়োজনে খণ্ডকালীন সদস্য কো-অপ্ট করতে পারবে।
প্রজ্ঞাপনে কমিশনের কার্যপরিধিতে বলা হয়েছে, সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক ও অর্থলগ্নী প্রতিষ্ঠান, সরকারি মঞ্জুরিপ্রাপ্ত বিশ্ববিদ্যালয় এবং রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য বিদ্যমান বেতন, ভাতা ও অন্যান্য সুবিধা পর্যালোচনা করে কমিশন কী কী বিষয়ে সুপারিশ করবে, তা প্রজ্ঞাপনে নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে।
এর মধ্যে রয়েছে—কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য একটি সময়োপযোগী ও যথোপযুক্ত বেতন কাঠামো নির্ধারণ। বিশেষায়িত চাকরিধারীদের বেতন কাঠামো নির্ধারণ। বেতন-ভাতার ওপর আরোপযোগ্য কর (আয়কর) জাতীয় বেতন স্কেলের আওতাভুক্ত কর্মকর্তা ও কর্মচারী কর্তৃক সরাসরি পরিশোধ করার ক্ষেত্রে বেতন কাঠামো স্থিরীকরণ। বেতন-বহির্ভূত অন্যান্য সুবিধা, যেমন-বাড়িভাড়া, চিকিৎসা, যাতায়াত, আপ্যায়ন, প্রেষণ, কার্যভার, মহার্ঘ, উৎসব এবং শ্রান্তিবিনোদন ইত্যাদি ভাতা নিরূপণ। মূল্যস্ফীতির সাথে সামঞ্জস্য রেখে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন সমন্বয়ের পদ্ধতি নিরূপণ।
এ ছাড়া যথোপযুক্ত বা সময়োপযোগী পেনশনসহ অবসর সুবিধাদি নির্ধারণ। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাজের মান নিরূপণ, মূল্যায়নপূর্বক বেতন-ভাতা কাঠামোয় প্রতিফলন। সরাসরি সেবা (টেলিফোন, গাড়ি, মোবাইল ফোন ইত্যাদি) সংক্রান্ত প্রাধিকারগুলো আর্থিক সুবিধায় নগদায়ন এবং রেশন সুবিধা যৌক্তিকীকরণ। উচ্চতর গ্রেড ও ইনক্রিমেন্ট প্রাপ্তিতে বেতনক্রম নিরীক্ষাক্রমে কোনো অসংগতি পরিলক্ষিত হলে তা দুরীকরণের সুপারিশ প্রণয়ন।
সুপারিশ প্রণয়নে কমিশন যেসব বিষয় বিবেচনা করবে:
পিতা-মাতাসহ অনুর্ধ্ব ছয়জনের একটি পরিবারের জীবন-যাত্রার ব্যয়। অনূর্ধ্ব দুই সন্তানের শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে ব্যয়। দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, সরকারের সম্পদ পরিস্থিতি, প্রশাসনিক ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার জন্য সম্পদের প্রয়োজনীয়তা। সংশ্লিষ্ট সংস্থা, প্রতিষ্ঠানের আয়-ব্যয়ের অবস্থা। দারিদ্র্য নিরসনের উদ্দেশ্যে প্রয়োজনীয় সম্পদ যোগান ও ক্রমান্বয়ে স্বনির্ভরতা অর্জনের উপায়। জনপ্রশাসনে মেধাবী ও দক্ষ কর্মকর্তা নিয়োগ এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দক্ষতা ও কর্মোদ্যোগ বৃদ্ধি করে সেবার মান উন্নয়ন।
জাতীয়
ছাত্ররা রক্ত দিয়ে ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারকে উৎখাত করেছে: প্রধান উপদেষ্টা

বাংলাদেশকে আসিয়ান সদস্য রাষ্ট্র হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করতে মালয়েশিয়ার সহায়তা চেয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। রোববার (২৭ জুলাই) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় মালয়েশিয়ার পিপলস জাস্টিস পার্টির (পিকেআর) সহ-সভাপতি ও দেশটির প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের মেয়ে নুরুল ইজ্জাহ আনোয়ার তার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে এলে তিনি এ আহ্বান জানান।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমরা আসিয়ানের অংশ হতে চাই এবং এ লক্ষ্যে আপনাদের সহায়তা প্রয়োজন।
তিনি জানান, বাংলাদেশ ২০২০ সালে আসিয়ানের খাতভিত্তিক সংলাপ অংশীদার হওয়ার জন্য আবেদন করে।
প্রধান উপদেষ্টা আশা প্রকাশ করে আরও বলেন, মালয়েশিয়া এ বিষয়ে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে এবং বাংলাদেশের আবেদন বাস্তবায়নে সহায়তা করবে যাতে বাংলাদেশ পর্যায়ক্রমে আসিয়ানের পূর্ণ সদস্য হতে পারে।
সাক্ষাতের শুরুতে নুরুল ইজ্জাহ ঢাকার মাইলস্টোন স্কুলে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া প্রশিক্ষণ বিমান দুর্ঘটনায় নিহতদের প্রতি শোক প্রকাশ করেন।
এটি আমাদের দেশের জন্য একটি মর্মান্তিক ও দুঃখজনক ঘটনা। আমরা অনেককে হারিয়েছি, জবাবে বলেন প্রধান উপদেষ্টা।
প্রধান উপদেষ্টা নুরুল ইজ্জাহকে তার রাজনৈতিক দলের সহ-সভাপতি পদে মনোনয়ন পাওয়ার জন্য অভিনন্দন জানান।
আপনাকে অভিনন্দন জানাই। আপনি আপনার রাজনৈতিক দলে সহ-সভাপতি হয়েছেন, বলেন তিনি।
প্রধান উপদেষ্টা বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিবর্তন ও অন্তর্বর্তী সরকারের নেওয়া সংস্কার কার্যক্রম তুলে ধরেন।
আমরা একটি সংস্কার প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। আমাদের ছাত্ররা বুকের রক্ত দিয়ে ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারকে উৎখাত করেছে। এটি ছিল তরুণদের নেতৃত্বে শুরু হওয়া আন্দোলন, পরে সর্বস্তরের মানুষ এতে যুক্ত হয়, বলেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, জুলাই বিদ্রোহের চেতনায় রাস্তাঘাট, দেয়াল রাঙিয়ে দিয়েছে ছাত্রসমাজ।
বাংলাদেশে মালয়েশিয়ান বিনিয়োগ বাড়ানোর আহ্বান জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এশিয়ার বেশিরভাগ দেশেই দ্রুত বয়স বাড়ছে। কিন্তু বাংলাদেশে এখনো বিপুলসংখ্যক তরুণ জনগোষ্ঠী রয়েছে। আমাদের অর্ধেক জনগণ ২৭ বছরের নিচে। আপনারা এখানে শিল্প স্থাপন করুন এবং বাংলাদেশ থেকে পণ্য রপ্তানি করুন। এতে উভয় দেশেরই লাভ হবে।
সাক্ষাতে প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী এবং সিনিয়র সচিব ও টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) সমন্বয়কারী লামিয়া মোরশেদ উপস্থিত ছিলেন।
জাতীয়
এক ব্যক্তি সর্বোচ্চ ১০ বছর প্রধানমন্ত্রী, একমত সব দল

এক ব্যক্তি জীবনে সর্বোচ্চ ১০ বছর প্রধানমন্ত্রীর পদে থাকতে পারবেন বলে একমত হয়েছে রাজনৈতিক দলগুলো। একইসঙ্গে স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠনেও ঐকমত্য হয়েছেন দলগুলোর নেতারা।
রবিবার (২৭ জুলাই) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে চলমান দ্বিতীয় ধাপের সংলাপের ১৯তম দিনে কমিশনের সহ-সভাপতি আলী রীয়াজ এ কথা জানান। সংলাপে আওয়ামী লীগ ও তাদের মিত্র জাতীয় পার্টি এবং ১৪ দলীয় জোটের কাউকে ডাকা হয়নি। অন্যদিকে বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপিসহ ৩০টি রানৈতিক দল সংলাপে অংশ নিয়েছে।
আলী রীয়াজ বলেন, আমরা একটা বিষয়ে একমত হয়েছিলাম কিন্তু সেটা বলা হয়নি। সেটা হলো এক ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সর্বোচ্চ ১০ বছর দায়িত্বপালন করবেন। সনদে প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ ১০ বছর উল্লেখ করব। এ বিষয়ে আমরা কি একমত হয়েছি?
এসময় আলী রীয়াজ বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, সালাহউদ্দিন আহমদ একটি শর্ত দিয়েছিলেন, সেটাকি এখনো আছে?
পরে এ নিয়ে কথা বলতে গিয়ে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, আমরা একবার বলেছিতো বলেছি- ১০ বছরের বেশি কোনো ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী পদে বহাল থাকবেন না। আমি বলেছিলাম সংবিধান ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের কমিটি থাকলে বিষয়টি মানব না। আমরা এ হাউজের মতামতের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন নিয়োগ সংক্রান্ত বিধান সংবিধানে যুক্ত করব। এর বাইরে বিষয়ে আলোচনা হলে আমাদের শর্ত বহাল থাকবে। আশা করি সেটা বিবেচনা করবেন। এখন ১০ বছরের বিষয়ে আপনারা ঘোষণা দিতে পারেন। বরং এটা আমাদের প্রস্তাব।
এর আগে আলোচনার শুরুতে বাংলাদেশ পুলিশের পেশাদারিত্ব ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে ‘স্বাধীন পুলিশ কমিশন’ গঠনের প্রস্তাব রাজনৈতিক দলগুলোর সামনে উপস্থাপন করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। পরে দলগুলো আলোচনা করে স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠনে একমত হয়। তবে আইনি কাঠামো নিয়ে আলোচনা করবে।
এ বিষয়ে আলী রীয়াজ বলেন, পুলিশ কমিশনের বিষয়ে আমরা একমত। গঠন প্রক্রিয়া নিয়ে আমরা আলোচনা করব। বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো আলাপ-আলোচনায় একটি স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠনে একমত হয়েছে। যা পুলিশের জবাবদিহিতা ও দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করবে।
পুলিশ কমিশনের প্রস্তাবে বলা হয়, পুলিশ বাহিনী যেন একটি শৃঙ্খলিত বাহিনী হিসেবে আইনসম্মত ও দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে, তা নিশ্চিত করা হবে কমিশনের অন্যতম লক্ষ্য। একই সঙ্গে পুলিশ সদস্য ও সাধারণ নাগরিক—উভয়পক্ষের অভিযোগ নিষ্পত্তির দায়িত্বও এই কমিশনের ওপর ন্যস্ত থাকবে।
প্রস্তাব অনুযায়ী, বাংলাদেশ পুলিশ কমিশন (যা ‘কমিশন’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে) গঠিত হবে একজন অবসরপ্রাপ্ত আপিল বিভাগের বিচারপতির নেতৃত্বে, যিনি ৭২ বছরের নিচে হবেন। কমিশনের সদস্য সচিব হবেন অবসরপ্রাপ্ত একজন অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (অ্যাডিশনাল আইজিপি) পদমর্যাদার পুলিশ কর্মকর্তা, যিনি ৬২ বছরের নিচে থাকবেন।
কমিশনে সরকার ও বিরোধী দল উভয়পক্ষের প্রতিনিধিত্ব থাকবে। এদের মধ্যে থাকবেন—সংসদে সরকার দলের নেতা (লিডার অব দ্য হাউস), বিরোধীদলীয় নেতা, জাতীয় সংসদের স্পিকার এবং ডেপুটি স্পিকার (যিনি বিরোধীদল থেকে হবেন) একজন করে প্রতিনিধি। এ ছাড়া একজন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী, যিনি হাইকোর্ট বিভাগে অন্তর্ভুক্ত এবং কমপক্ষে ১৫ বছরের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন একজন মানবাধিকার কর্মী, যিনি কমপক্ষে ১০ বছরের বাস্তব অভিজ্ঞতা সম্পন্ন এবং একজন অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত আইজিপি পদমর্যাদার পুলিশ কর্মকর্তা সদস্য হিসেবে থাকবেন।
খসড়ায় বলা হয়েছে, কমিশনের অন্তত দুইজন সদস্য নারী হতে হবে। কিছু নির্ধারিত সদস্য বাছাইয়ের জন্য একটি বাছাই কমিটি গঠনের প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছে, যার সদস্য থাকবেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান এবং ১০ বছরের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন একজন হাইকোর্ট বিভাগের বিচারক।
কমিশনের চেয়ারপারসন ও সদস্য সচিব পূর্ণকালীন দায়িত্ব পালন করবেন, বাকি সাতজন সদস্য স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। তবে বৈঠকে উপস্থিতি ও অন্যান্য দাপ্তরিক দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে আইন অনুযায়ী সম্মানী বা ভাতা গ্রহণ করতে পারবেন।
কমিশনের চেয়ারম্যান, সদস্য সচিব ও অন্যান্য সদস্যদের দায়িত্ব, ক্ষমতা, জবাবদিহিতা, পদত্যাগ এবং অপসারণের পদ্ধতি একটি আইন দ্বারা নির্ধারিত হবে। প্রস্তাবে আরও বলা হয়েছে, কমিশনের নীতিগত ও নির্বাহী সিদ্ধান্ত গ্রহণে সদস্যদের সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে তা অনুমোদিত হবে।