অর্থনীতি
শুধু আইএমএফ-বিশ্ব ব্যাংক নয়, সরকারের উদ্যোগেও সংস্কার হচ্ছে: অর্থ উপদেষ্টা

দেশের আর্থিক খাতের সংস্কার শুধু বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের প্রস্তাবেই নয়, বরং সরকারের নিজস্ব উদ্যোগেও হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।
বুধবার (৯ জুলাই) হোটেল সোনারগাঁওয়ে আয়োজিত অডিট অ্যান্ড অ্যাকাউন্টিং সামিটে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, অনেকেই মনে করছেন আর্থিক খাতের সংস্কার বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের প্রস্তাবেই হচ্ছে। কিন্তু বাস্তবে এমনটা না। সরকারের নিজস্ব উদ্যোগেও সংস্কার হচ্ছে। তবে তারা ভালো পদক্ষেপ নিলে আমরা কেনো তা নেব না?
সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতে অডিটিং-অ্যাকাউন্টিং বড় বিষয়। তবে যারা এসব কাজে জড়িত তাদের স্বচ্ছতা ও সততা সবার আগে বড় বিষয়। অনেক প্রতিষ্ঠান পেপার সাবমিট করেন, যার বেশিরভাগই মানসম্পন্ন না।
এনবিআরের ক্ষেত্রে অডিট করা খুবই জরুরি উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, এনবিআরের মতে প্রতি ১০০ জনে ৭০ জনই শূন্য ট্যাক্স দেয়, এটা অবিশ্বাসযোগ্য। যারা ৭০ ভাগ তথ্য দিচ্ছে, তাদের হিসাব খতিয়ে দেখা উচিত। আবার ১৮ লাখ রিটার্ন জমা পড়ছে সে তথ্যেও গড়মিল থাকতে পারে।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, যারা অডিট করেন, তাদের অন্তর দৃষ্টি দিয়ে অডিট কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে।
বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ানো বিষয়ে তিনি বলেন, যদি আমরা বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে চাই তাহলে অডিটিং এবং অ্যাকাউন্টিংকে গুরুত্ব দিতে হবে।
অনুষ্ঠানে এফআরসির চেয়ারম্যান ড. সাজ্জাদ হোসেন ভূঁইয়া প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। এ সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর, দুদক চেয়ারম্যান আব্দুল মোমেন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
কাফি

অর্থনীতি
৮ কোটি টাকা পর্যন্ত ঋণ পাবে স্টার্টআপ, সুদের হার ৪ শতাংশ

স্টার্টআপ বা নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য বড় সুখবর দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। দেশের ২১ বছর বা তার বেশি বয়সী যে কেউ এখন থেকে নতুন ব্যবসা শুরু করতে চাইলে ব্যাংক থেকে সহজ শর্তে ঋণ নিতে পারবেন।
মঙ্গলবার (৯ জুলাই) এ সংক্রান্ত একটি মাস্টার সার্কুলার জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছে, নতুন এই নীতিমালা দেশের তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য বড় সুযোগ তৈরি করবে। এতে করে উদ্ভাবনী উদ্যোগ বাড়বে, কর্মসংস্থান তৈরি হবে এবং টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত হবে। এটি টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) অর্জনেও সহায়তা করবে।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, নতুন উদ্যোক্তাদের বড় ধরনের সুযোগ তৈরির এই ঋণের সুদের হার হবে মাত্র ৪ শতাংশ। এ ছাড়া, ব্যাংকগুলো এখন শুধু ঋণ নয়, চাইলে বিনিয়োগও করতে পারবে। এ জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক একটি ভেঞ্চার ক্যাপিটাল কোম্পানি গঠন করবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন নির্দেশনার ফলে এখন নতুন উদ্যোক্তাদের ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে পারবেন। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, এই সিদ্ধান্ত দেশে স্টার্টআপ সংস্কৃতি আরও জোরদার করবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন নীতিমালায় বলা হয়েছে, ব্যাংকগুলো তাদের নিজস্ব স্টার্টআপ তহবিল থেকে এখন শুধু ইক্যুইটি বা অংশীদার ভিত্তিতে বিনিয়োগ করতে পারবে। আর বাংলাদেশ ব্যাংকের ৫০০ কোটি টাকার তহবিল থেকে দেওয়া যাবে ৪ শতাংশ সুদে ঋণ। তবে এই তহবিল ছাড়া অন্য কোনো উৎস থেকে নতুন করে ঋণ বা বিনিয়োগ করা যাবে না। আগে যেসব ঋণ বা বিনিয়োগ অনুমোদন হয়েছে, সেগুলোর অর্থ ছাড় দেওয়া যাবে।
সার্কুলারে আরও বলা হয়েছে, নতুন নিয়মে ঋণের পরিমাণও বাড়ানো হয়েছে। আগে সর্বোচ্চ ১ কোটি টাকা দেওয়া হতো, এখন ধাপে ধাপে ২ কোটি থেকে ৮ কোটি টাকা পর্যন্ত দেওয়া যাবে। অর্থায়নের জন্য উদ্যোক্তার বয়স কমপক্ষে ২১ বছর হতে হবে। তবে সর্বোচ্চ বয়সের কোনো সীমা নেই। যেসব স্টার্টআপ ইতোমধ্যেই চালু আছে, সেগুলোও এই সুবিধা পাবে। তবে কোম্পানির বয়স ১২ বছরের বেশি হলে এই সুবিধা পাওয়া যাবে না।
তবে ব্যাংকগুলো নিজেরা যে পুরোনো স্টার্টআপ তহবিল তৈরি করেছিল, তা থেকে এখন নতুন করে ঋণ দেওয়া যাবে না। আগে যে ঋণ অনুমোদন করা হয়েছে, সেগুলোর অর্থ বিতরণ চালিয়ে যাওয়া যাবে। এতদিন ব্যাংকগুলো কেবল পুরোনো বা চলমান ব্যবসাকে ঋণ দিত। নতুন উদ্যোক্তারা সেই সুযোগ থেকে বঞ্চিত ছিলেন, কারণ ব্যাংকারদের মনে হতো নতুন ব্যবসার ঝুঁকি বেশি। তবে এখন সেই ধারণা বদলেছে।
অর্থনীতি
সরকারি খরচে গাড়ি কেনা ও বিদেশ ভ্রমণ বন্ধ

সরকারি ব্যয়ে কৃচ্ছ্রসাধনের লক্ষ্যে ২০২৫-২৬ অর্থবছরে সব ধরনের যানবাহন ক্রয় খাতে বরাদ্দ দেওয়া অর্থের ব্যয় বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে সরকার। একই সঙ্গে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কৃষি মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট স্থাপনা বাদে নতুন আবাসিক, অনাবাসিক ও অন্যান্য ভবন স্থাপনা নির্মাণ বন্ধ রাখার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।
পাশাপাশি সরকারি অর্থায়নে সব ধরনের বৈদেশিক সেমিনার, সিম্পোজিয়াম, ওয়ার্কশপে অংশগ্রহণ বন্ধ থাকবে। তবে অত্যাবশ্যকীয় বিবেচনায় কিছু ক্ষেত্রে বিদেশ ভ্রমণের সুযোগ রাখা হয়েছে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের বাজেট অনুবিভাগ-১ থেকে এ সংক্রান্ত একটি নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। উপসচিব মোহাম্মদ জাকির হোসেন এতে সই করেন ৮ জুলাই।
এতে বলা হয়েছে, চলমান সংকোচনমূলক নীতির প্রেক্ষাপটে সরকারি ব্যয়ে কৃচ্ছ্রসাধনের লক্ষ্যে ২০২৫-২৬ অর্থবছরে সব মন্ত্রণালয়, বিভাগ, অন্যান্য প্রতিষ্ঠান এবং আওতাধীন অধিদপ্তর, পরিদপ্তর, দপ্তর, স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা, পাবলিক সেক্টর করপোরেশন এবং রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোম্পানির পরিচালন ও উন্নয়ন বাজেটে কতিপয় খাতে বরাদ্দ করা অর্থ ব্যয়ে সরকার কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এ সিদ্ধান্তের মধ্যে রয়েছে, চলতি অর্থবছরের বাজেটে পরিচালন বাজেটের আওতায় সব ধরনের থোক বরাদ্দ থেকে ব্যয় বন্ধ থাকবে। সব ধরনের যানবাহন ক্রয় খাতে বরাদ্দ করা অর্থ ব্যয় বন্ধ থাকবে। তবে ১০ বছরের অধিক পুরোনো টিওঅ্যান্ডইভুক্ত যানবাহন প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে অর্থ বিভাগের অনুমোদনক্রমে ব্যয় নির্বাহ করা যাবে।
পরিচালন বাজেটের আওতায় শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কৃষি মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট স্থাপনা ব্যতীত নতুন আবাসিক, অনাবাসিক ও অন্যান্য ভবন স্থাপনা নির্মাণ বন্ধ থাকবে। তবে চলমান নির্মাণ কাজ ন্যূনতম ৫০ শতাংশ সম্পন্ন হয়ে থাকলে অর্থ বিভাগের অনুমোদনক্রমে ব্যয় নির্বাহ করা যাবে- বলে নির্দেশনায় উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া ভূমি অধিগ্রহণ খাতে বরাদ্দ করা অর্থ ব্যয় বন্ধ থাকবে।
অন্যদিকে চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে উন্নয়ন বাজেটের আওতায় সব ধরনের যানবাহন ক্রয় বন্ধ থাকবে- বলে নির্দেশনায় উল্লেখ করা হয়েছে। একই সঙ্গে ভূমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে অধিগ্রহণ কার্যক্রমের সব আনুষ্ঠানিকতা প্রতিপালন করে অর্থ বিভাগের পূর্বানুমোদন গ্রহণ সাপেক্ষে ব্যয় করা যাবে।
এতে বলা হয়েছে, পরিকল্পনা কমিশনের অনুকূলে ‘বিশেষ প্রয়োজনে উন্নয়ন সহায়তা’ খাতে জিওবি বাবদ সংরক্ষিত এবং মন্ত্রণালয়, বিভাগের অনুকূলে ‘থোক বরাদ্দ’ হিসেবে সংরক্ষিত জিওবির সম্পূর্ণ অংশ অর্থ বিভাগের পূর্বানুমোদন গ্রহণ সাপেক্ষে ব্যয় করা যাবে।
এছাড়া পরিচালন ও উন্নয়ন বাজেটের আওতায় সরকারি অর্থায়নে সকল ধরনের বৈদেশিক সেমিনার, সিম্পোজিয়াম, ওয়ার্কশপে অংশগ্রহণ বন্ধ থাকবে- বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে অত্যাবশ্যকীয় বিবেচনায় সীমিত আকারে যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিয়ে কয়েকটি ক্ষেত্রে বিদেশ ভ্রমণ করা যাবে। এর মধ্যে রয়েছে-
>> পরিচালন ও উন্নয়ন বাজেটের আওতায় সরকারি অর্থায়নে এবং বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা, বিশ্ববিদ্যালয়, দেশ কর্তৃক প্রদত্ত স্কলারশীপ, ফেলোশিপ-এর আওতায় বৈদেশিক অর্থায়নে মাস্টার্স ও পিএইচডি কোর্সে অধ্যয়নের নিমিত্ত বিদেশ ভ্রমণ।
>> বিদেশি সরকার, প্রতিষ্ঠান, উন্নয়ন সহযোগীদের সম্পূর্ণ অর্থায়নে আয়োজিত বৈদেশিক প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ।
>> পরিচালন ও উন্নয়ন বাজেটের আওতায় সরকারি অর্থায়নে স্টাডি ট্যুর ব্যতীত পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ বৈদেশিক প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করা যাবে। তাছাড়া, অভ্যন্তরীণ প্রশিক্ষণের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ মৌলিক ও আবশ্যিক প্রশিক্ষণের বৈদেশিক অংশ উপযুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়, প্রতিষ্ঠানে আয়োজন করা যাবে।
>> প্রি শিপমেন্ট ইন্সপেকশন (পিএসআই), ফ্যাক্টরি অ্যাকসেপ্ট টেস্ট (এফএটি)-এর আওতায় বিদেশ ভ্রমণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অথরিটি-এর ২০২৪ সালের ২ জানুয়ারির ১ নম্বর স্মারকে জারি করা পরিপত্র কঠোরভাবে অনুসরণ করতে হবে।
>> সব বিদেশ ভ্রমণের ক্ষেত্রে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের ২০২৪ সালের ৯ ডিসেম্বরের ১২ নম্বর স্মারকে জারি করা পরিপত্র অনুসরণ করতে হবে।
অর্থনীতি
আর ৭-৮ মাস আমরা সরকারে থাকছি: অর্থ উপদেষ্টা

অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, আমরা এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে দীর্ঘদিন থাকছি না, খুব বেশি হলে হয়তো ৭-৮ মাস। বিশেষ করে প্রধান উপদেষ্টা এবং আমি কিছু মৌলিক সংস্কার করতে খুবই সিরিয়াস। আমরা কোনো দীর্ঘমেয়াদি বা মধ্যমেয়াদি সংস্কার করব না।
বুধবার (৯ জুলাই) রাজধানীর একটি হোটেলে অনুষ্ঠিত ‘অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড অডিটিং সামিট’–এ ‘বাংলাদেশের অর্থনৈতিক শাসনে এফআরসির ভূমিকা ও প্রভাব’ শীর্ষক বিষয়ে বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
উপদেষ্টা বলেন, যতটুকু সংস্কার শুরু হয়েছে, আমরা তা বাস্তবায়নের চেষ্টা করব। আমরা অনেক প্রতিবন্ধকতা ও বাধার সম্মুখীন হচ্ছি। বহু জটিল বিষয় আছে যেগুলো বাইরে থেকে বুঝতে পারবেন না।
এই সংস্কার প্রক্রিয়ায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি ব্যবসায়ী ও ঋণদানকারী সংস্থাগুলোর সমর্থনের প্রশংসা করেন তিনি। বলেন, তারা খুব ভালো সমর্থন দিয়েছে।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ফাইনান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিলের (এফআরসি) চেয়ারম্যান ড. মো. সাজ্জাদ হোসেন ভূঁইয়া।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আব্দুল মোমেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মানসুর, ঢাকায় বিশ্বব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত কান্ট্রি ডিরেক্টর সোলেয়মান কুলিবালি প্রমুখ।
উদ্বোধনী অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন অর্থ বিভাগের সচিব ড. মো. খায়রুজ্জামান মজুমদার। এ সময় স্বাগত বক্তব্য দেন বিশ্বব্যাংকের লিড গভর্ন্যান্স স্পেশালিস্ট সুরাইয়া জান্নাত।
বাংলাদেশ চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস ইনস্টিটিউটের (আইসিএবি) সভাপতি এন কে এ মবিন এবং কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্ট্যান্টস ইনস্টিটিউটের (আইসিএমএবি) সভাপতি মাহতাব উদ্দিন আহমেদও অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।
অর্থনীতি
রপ্তানির আড়ালে পাচার বন্ধে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কড়া নির্দেশ

রপ্তানির নামে আন্ডার ও ওভার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে অর্থপাচার রোধে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর প্রতি কঠোর নির্দেশনা জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর জানিয়েছেন, দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেওয়া এ ধরনের অনিয়ম যে কোনো মূল্যে বন্ধ করতে হবে।
মঙ্গলবার (৮ জুলাই) বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাণিজ্যিক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের মধ্যে অনুষ্ঠিত ব্যাংকার্স সভায় এসব নির্দেশনা দেওয়া হয়। অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর এটিই ছিল প্রথম উচ্চপর্যায়ের এ ধরনের বৈঠক। এতে গভর্নরের পাশাপাশি ডেপুটি গভর্নর, নির্বাহী পরিচালক এবং সব ব্যাংকের এমডিরা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক শেষে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের এমডি সৈয়দ মাহবুবুর রহমান জানান, আমদানি দায় পরিশোধের পরও যারা গ্রাহকের নামে ফোর্স লোন সৃষ্টি করছে না-সেসব ব্যাংককে সতর্ক করা হয়েছে। এখন থেকে এলসি দায় পরিশোধের পরই অবিলম্বে ফোর্স লোন তৈরি করতে হবে। একই সঙ্গে অর্থপাচার রোধে কঠোর নজরদারির নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।
অর্থনীতিতে দুর্নীতি ও অনিয়ম তদন্তে গঠিত শ্বেতপত্র কমিটির তথ্যে উঠে এসেছে- গত ১৫ বছরে প্রতিবছর গড়ে ১৬ বিলিয়ন ডলার করে অর্থপাচার হয়েছে। সবমিলিয়ে যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ২৮ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা। শেখ হাসিনার দীর্ঘ শাসনামলে অর্থনীতিতে এ অপচয়ের চিত্রই উঠে এসেছে ওই প্রতিবেদনে।
সভায় ব্যাংক খাতের স্থিতিশীলতা ফেরাতে আরও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সৈয়দ মাহবুবুর রহমান জানান, জুলাইয়ের রাজনৈতিক সহিংসতায় নিহত ও আহতদের পরিবারের সহায়তায় একটি ‘ব্যাংকার্স ফান্ড’ গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকসহ সব বাণিজ্যিক ব্যাংক অংশ নেবে। প্রাথমিকভাবে ফান্ডের পরিমাণ হতে পারে ২৫ কোটি টাকা।
অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা আনার অংশ হিসেবে সঞ্চয়পত্রের বিকল্প হিসেবে ট্রেজারি বিল ও বন্ডে সাধারণ জনগণের বিনিয়োগ উৎসাহিত করার উদ্যোগ নেওয়ার কথাও সভায় জানানো হয়। কারণ বর্তমানে এসব ঋণপত্রে সঞ্চয়পত্র ও ব্যাংক আমানতের চেয়ে বেশি সুদ পাওয়া যাচ্ছে। এক বছর মেয়াদি ট্রেজারি বিলে বর্তমানে সুদের হার ১১ দশমিক ৬০ শতাংশ এবং দীর্ঘমেয়াদি বন্ডে সর্বোচ্চ ১২ দশমিক ১৭ শতাংশ। এগুলো করমুক্ত, বিক্রয়যোগ্য এবং বিনিয়োগের সীমাবদ্ধতাও নেই।
ডিজিটাল ব্যাংকিং প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, গ্রাহকদের অনলাইন ও মোবাইল ব্যাংকিংয়ে উৎসাহিত করতে ব্যাংকগুলোকে প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি অবকাঠামো গড়ে তোলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এতে ব্যাংকে না গিয়েই ঘরে বসে ব্যাংকিং সেবা গ্রহণ করা যাবে, সময় ও খরচ দুটোই কমবে।
তিনি আরও বলেন, এলসি দায় পরিশোধের পরই গ্রাহকের নামে ফোর্স লোন চালু করার বিষয়টি এখন থেকে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। নন-ব্যাংকিং কার্যক্রম কিংবা অনিয়মের কোনো সুযোগ আর রাখা হবে না।
এদিকে, ১ জুলাই অর্থ মন্ত্রণালয় জারি করা পরিপত্রে চার ধরনের সঞ্চয়পত্রের সুদহার কমানো হয়েছে। নতুন নিয়মে পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রে সাড়ে সাত লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগে সুদহার দাঁড়িয়েছে ১১ দশমিক ৮৩ শতাংশ, আগে যা ছিল ১২ দশমিক ৩৭ শতাংশ। তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রে এখন সুদহার ১১ দশমিক ৮২ শতাংশ (পূর্বে ১২.৩০), পারিবারিক সঞ্চয়পত্রে ১১ দশমিক ৯৩ শতাংশ (পূর্বে ১২.৫০) এবং পেনশনার সঞ্চয়পত্রে ১১ দশমিক ৯৮ শতাংশ (পূর্বে ১২.৫৫) নির্ধারণ করা হয়েছে।
অর্থনীতি
সিঙ্গাপুর থেকে ৫৩১ কোটি টাকায় এলএনজি কিনবে সরকার

দেশের জ্বালানি চাহিদা মেটাতে স্পট মার্কেট থেকে এক কার্গো এলএনজি আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। সিঙ্গাপুর থেকে এই এক কার্গো এলএনজি আনতে ব্যয় হবে ৫৩১ কোটি ৫৫ লাখ ৮০ হাজার ৩৪৫ টাকা।
মঙ্গলবার (৮ জুলাই) সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠত সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠকে এই এলএনজি আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে ‘পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা, ২০০৮’ অনুসরণে আন্তর্জাতিক কোটেশন প্রক্রিয়ায় স্পট মার্কেট থেকে ১ কার্গো (২৮-২৯ জুলাই ২০২৫ সময়ে ৩২তম) এলএনজি আমদানির প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি।
পেট্রোবাংলা থেকে এই ১ কার্গো এলএনজি সরবরাহের জন্য এমএসপিএ স্বাক্ষরকারী চুক্তিবদ্ধ ২৩টি প্রতিষ্ঠানের কাছে দরপ্রস্তাব আহ্বান করা হলে ৫টি প্রতিষ্ঠান দরপ্রস্তাব দাখিল করে। দাখিল করা ৫টি প্রস্তাবই কারিগরি ও আর্থিকভাবে রেসপনসিভ হয়।
দরপত্রের সব প্রক্রিয়া শেষে প্রস্তাব মূল্যায়ন কমিটি’র (পিইসি) সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান সিঙ্গাপুরের ভাইটল এশিয়া প্রাইভেট লিমেটেড থেকে এই এক কার্গো এলএনজি আনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। প্রতি এমএমবিটিইউ’র দাম ধরা হয়েছে ১২.৬২ মার্কিন ডলার। এতে এক কার্গো বা ৩৩ লাখ ৬০ হাজার এমএমবিটিইউ এলএনজি আমদানিতে ব্যয় হবে ৫৩১ কোটি ৫৫ লাখ ৮০ হাজার ৩৪৫ টাকা।
কাফি