আন্তর্জাতিক
ইসরায়েলের সিসি ক্যামেরা হ্যাক করেছে ইরান, শহরজুড়ে আতঙ্ক

ইসরায়েলের বাসাবাড়ি ও বিভিন্ন স্থাপনায় থাকা সিসিটিভি হ্যাক করে তাৎক্ষণিক গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করছে ইরান। এরপর করা হচ্ছে টার্গেট নির্ধারণ। এমন পরিস্থিতিতে ইসরায়েলজুড়ে দেখা দিয়েছে নতুন আতঙ্ক। এ তথ্য জানিয়ে হুঁশিয়ারি দিচ্ছেন দেশটির সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা। এই কৌশল আগেও হামাস ও রাশিয়া বিভিন্ন সংঘাতে ব্যবহার করেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্বব্যাপী দ্রুত সম্প্রসারিত হওয়া ব্যক্তিগত নজরদারি বাজারে ব্যবহৃত অনেক ক্যামেরা দুর্বল পাসওয়ার্ড, পুরোনো ফার্মওয়্যার এবং ভুল ইনস্টলেশনের কারণে সহজেই হ্যাক করা যায়।
গত সপ্তাহে ইরানি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র তেল আবিবের উঁচু ভবনগুলোতে আঘাত হানে। এরপর সরকারি রেডিওতে নাগরিকদের সতর্ক করে ইসরায়েলের জাতীয় সাইবার ডিরেক্টরেটের সাবেক উপপরিচালক রাফায়েল ফ্রাঙ্কো বলেন, ‘গত দুই-তিন দিন ধরে ক্যামেরাগুলোর মাধ্যমে ক্ষেপণাস্ত্র কোথায় আঘাত হেনেছে তা জানার চেষ্টা করছে ইরান, যাতে ভবিষ্যতে আরও নির্ভুলভাবে হামলা করা যায়। তাই আপনারা ক্যামেরা বন্ধ করুন অথবা পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করুন।’
উল্লেখ্য, ফ্রাঙ্কো বর্তমানে সাইবার নিরাপত্তা সংস্থা কোড ব্লু পরিচালনা করছেন।
ইসরায়েল ও ইরানের চলমান সংঘাতের মধ্যে সাইবার আক্রমণের সংখ্যাও বেড়ে গেছে। ইসরায়েলপন্থী হ্যাকার গ্রুপ ‘প্রিডেটরি স্প্যারো’ ইরানের একটি প্রধান ব্যাংক ও একটি ক্রিপ্টো এক্সচেঞ্জে সাইবার আক্রমণের দায় স্বীকার করেছে। অন্যদিকে, ইরানের রাষ্ট্রীয় মিডিয়া জানিয়েছে, ইসরায়েল দেশটির গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোয় পূর্ণাঙ্গ সাইবার আক্রমণ চালিয়েছে।
ইসরায়েলের জাতীয় সাইবার ডিরেক্টরেটের এক মুখপাত্র জানান, ‘যুদ্ধ পরিকল্পনায় ইরান বারবার ব্যবহার করছে ইন্টারনেট সংযুক্ত ক্যামেরা। আমরা দেখেছি, যুদ্ধ চলাকালীন এই ধরনের প্রচেষ্টা বাড়ছে।’
হামাস এর আগেও এই কৌশল ব্যবহার করেছে। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামলার আগে গাজা সীমান্তবর্তী ইসরায়েলি এলাকায় থাকা হাজার হাজার ব্যক্তিগত ও সরকারি ক্যামেরা হ্যাক করে হামাস বিশাল তথ্য সংগ্রহ করে বলে জানান সাইবার ডিরেক্টরেটের সদ্য সাবেক পরিচালক গ্যাবি পোর্টনয়।
তিনি আরও জানান, ‘হামাসের গোয়েন্দা সংগ্রহ ছিল বিপর্যয়কর। তাদের হামলার প্রস্তুতিতে এগুলোর ভূমিকা ছিল স্পষ্ট।’
রাশিয়াও ইউক্রেন আক্রমণের পর এই পদ্ধতি ব্যবহার করেছে বলে জানা গেছে।
গত ১৩ জুন ইসরায়েল ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালানোর পর ইরান পাল্টা প্রতিশোধ হিসেবে তেল আবিবে শত শত ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন ছোড়ে। ইরান জানিয়েছে, ইসরায়েলি হামলায় তাদের ২০০ জনেরও বেশি নিহত হয়েছে। ইসরায়েলে এখন পর্যন্ত ২৪ জন নিহত ও ৮০০-এর বেশি মানুষ আহত হয়েছে বলে সরকারি সূত্রে জানা গেছে। তথ্যসূত্র: ব্লুমবার্গ
কাফি

আন্তর্জাতিক
খামেনি ক্ষমতাচ্যুত হলে ইরানে কী হবে

ইসরায়েল সাম্প্রতিক হামলাগুলোর মাধ্যমে ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিকে ক্ষমতাচ্যুত করার ইঙ্গিত দিচ্ছে। তবে বিশ্লেষকদের মতে, ১৯৭৯ সালের ইসলামি বিপ্লবের পর থেকে চলে আসা এই ধর্মীয় নেতৃত্ব যদি সরে যায়, তাহলে নতুন যে নেতৃত্ব আসবে, তারা যে কম কট্টর হবে, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। বরং এতে আরও বড় ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হতে পারে।
ইসরায়েল এখন শুধু ইরানের পারমাণবিক বা ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র স্থাপনায় আঘাত করছে না, বরং দেশটির রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার সংস্থা আইআরআইবিতেও হামলা চালিয়েছে। এতে অনেকে ধারণা করছেন, ইসরায়েলের লক্ষ্য শুধু ইরানের সামরিক সক্ষমতা ধ্বংস করা নয়, বরং দেশটির ক্ষমতার কেন্দ্রে থাকা খামেনিকেও সরিয়ে দেওয়া।
কিন্তু তিন দশকের বেশি সময় ক্ষমতায় থাকা এই নেতাকে যদি সত্যিই সরিয়ে দেওয়া হয়, এরপর কী হবে—এই প্রশ্নটিই এখন সবচেয়ে বড়।
২০০৩ সালে ইরাকে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন আগ্রাসন এবং ২০১১ সালে লিবিয়ায় ন্যাটো অভিযানের পরের পরিস্থিতি ইউরোপীয় নেতাদের আজও আতঙ্কিত করে। উভয় দেশ থেকে একনায়ক সরানো গেলেও দেশ দুটি বছরের পর বছর ধরে রক্তাক্ত সহিংসতায় জর্জরিত ছিল। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ জি৭ সম্মেলনে সম্প্রতি বলেছেন, “আজকের দিনে সেনা অভিযানের মাধ্যমে ইরানের শাসন পরিবর্তন করতে চাওয়া সবচেয়ে বড় ভুল। কারণ, এতে ভয়াবহ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে।”
বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, যদি খামেনি ও তাঁর ঘনিষ্ঠদের অপসারণ করা হয়, তবে যে শূন্যতা সৃষ্টি হবে, তা হয়তো ভরাট হবে ইরানের বিপ্লবী গার্ড (আইআরজিসি) বা সেনাবাহিনীর কট্টর অংশের দ্বারা। থিংকট্যাংক কার্নেগি এনডাওমেন্টের গবেষক নিকোল গ্রাজেউস্কি বলেন, “ইসরায়েলের হামলা শুধুই পারমাণবিক কর্মসূচির নিষিদ্ধকরণ নয়, বরং তারা শাসনব্যবস্থার পরিবর্তন চাইছে এবং তা স্পষ্ট।” তিনি আরও বলেন, “যদি শাসনব্যবস্থা ভেঙে পড়ে, তাহলে এক উদার ও গণতান্ত্রিক সরকার গঠনের আশা করা যেতে পারে। তবে বিপ্লবী গার্ড বা আইআরজিসির মতো সংগঠিত শক্তির উত্থানও হতে পারে।”
ইরানের বিরোধী দলগুলোর মধ্যে সবচেয়ে পরিচিত মুখ হলেন যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী রেজা পাহলভি, যিনি ইরানের সাবেক প্রেসিডেন্ট শাহ মোহাম্মদ রেজা পাহলভির পুত্র। রেজা পাহলভি ইসরায়েলের সঙ্গে তার পিতার সময়কার উষ্ণ সম্পর্ক ফিরিয়ে আনার পক্ষে এবং এই নতুন সম্পর্ককে ‘সাইরাস চুক্তি’ নামে অভিহিত করার প্রস্তাব করেছেন। তবে রেজা পাহলভি ইরান ও প্রবাসীদের মাঝে সর্বজনগ্রাহ্য নন। তার ইসরায়েলপ্রীতি ও জাতীয়তাবাদ বিরোধীদের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করেছে, বিশেষ করে ইসরায়েলি বিমান হামলার নিন্দা না করায়।
আরেকটি সংগঠিত বিরোধী দল হচ্ছে পিপলস মুজাহিদিন অব ইরান (এমইকে)। এই সংগঠনের নেত্রী মরিয়ম রাজাভি ইউরোপীয় পার্লামেন্টে বলেছেন, “ইরানের জনগণ এই সরকারের পতন চায়।” তবে এমইকের অতীতে ইরাক-ইরান যুদ্ধে সাদ্দাম হোসেনের পাশে থাকার কারণে অনেক ইরানির মধ্যেই এদের প্রতি ঘৃণা রয়েছে।
অটোয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক থমাস জুনো বলেন, “ইরানে ইসলামি প্রজাতন্ত্রের বিকল্প হিসেবে সংগঠিত, গণতান্ত্রিক শক্তির অভাব রয়েছে। সবচেয়ে ভয়ংকর বিকল্প হতে পারে বিপ্লবী গার্ডের সেনা অভ্যুত্থান কিংবা ধর্মতন্ত্রের জায়গায় সামরিক একনায়কতন্ত্রের সূচনা।”
বিশ্লেষকেরা সতর্ক করেছেন যে, ইরানের জটিল জাতিগত গঠনের দিকটিও ভবিষ্যতের অস্থিরতার কারণ হতে পারে। দেশটিতে পার্সিদের পাশাপাশি রয়েছে বড় সংখ্যায় কুর্দি, আরব, বালুচ ও তুর্কি সংখ্যালঘু। গবেষক নিকোল গ্রাজেউস্কি বলেন, “বিদেশি শত্রুরা ইরানের এই জাতিগত বিভাজনকে কাজে লাগাতে পারে।”
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক থিংকট্যাংক সুফান সেন্টার জানিয়েছে, ইরানি শাসনব্যবস্থার টিকে থাকা এখন অনেক দেশের দৃষ্টিতে এক ‘কৌশলগত ব্যর্থতা’। তারা সতর্ক করে বলেছেন, পোস্ট-রেজিম চেঞ্জ পরিস্থিতির কারণে ইরান ‘ইরাক ২.০’ হয়ে উঠতে পারে, যার প্রভাব শুধু এই অঞ্চলেই নয়, গোটা বিশ্বেই পড়বে।
ইরানে খামেনি ও ইসলামি প্রজাতন্ত্রের পতনের সম্ভাবনা ঘিরে অনেক প্রশ্ন সামনে এসেছে। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, খামেনির পতন হলে ইরানে কী ধরনের নেতৃত্ব আসবে? দেশটি কি আরও কট্টর সামরিক শাসনে ঢুকে পড়বে, নাকি ভেঙে পড়বে গোষ্ঠীগত সহিংসতায়? এই প্রশ্নগুলোর কোনো নিশ্চিত উত্তর নেই। তবে ইতিহাসের অভিজ্ঞতা থেকে বলা যায়, ‘শাসন পরিবর্তন’ যতটা আকর্ষণীয় ধারণা মনে হয়, বাস্তবে তা ততটাই বিপজ্জনক এবং অনিশ্চিত পরিণতির দিকে নিয়ে যেতে পারে।
আন্তর্জাতিক
মধ্যপ্রাচ্য নিয়ে উদ্বেগে যুক্তরাষ্ট্রের পুঁজিবাজারে পতন

ইরান ও ইসরায়েলের চলমান সংঘাতের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র-চীন প্রযুক্তি যুদ্ধের কারণে আন্তর্জাতিক পুঁজিবাজারে বড় ধরনের পতন দেখা গেছে। বিশেষ করে সেমিকন্ডাক্টর বা চিপ শিল্পের শেয়ারে ব্যাপক দরপতন হয়েছে, যা মার্কিন বাজারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। শনিবার (২১ জুন) ফ্রান্স ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম এএফপির প্রতিবেদনে এই তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাজার সূচকগুলোর মধ্যে ডাউ জোন্স ইন্ডাস্ট্রিয়াল এভারেজ সামান্য ০.১ শতাংশ বাড়লেও, প্রধান সূচক এসঅ্যান্ডপি ৫০০ ০.২ শতাংশ কমে ৫ হাজার ৯৬৭ পয়েন্টে নেমে এসেছে। প্রযুক্তি খাতের সূচক নাসডাক কম্পোজিট ০.৫ শতাংশ কমে ১৯ হাজার ৪৪৭ পয়েন্টে বন্ধ হয়েছে। বিশেষভাবে উল্লেখ করার মতো বিষয় হলো, সেমিকন্ডাক্টর কোম্পানিগুলোর শেয়ারে ব্যাপক বিক্রি দেখা গেছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের চীনে প্রযুক্তি সরবরাহে শর্তাবলী কঠোর করার সম্ভাবনা এবং ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের তীব্রতায় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। বাজারে ‘ডি-রিস্কিং’ অর্থাৎ ঝুঁকি কমানোর প্রবণতা দেখা দিয়েছে, যেখানে বিনিয়োগকারীরা নিরাপদ সম্পদে বিনিয়োগ করতে শেয়ার বিক্রি করছেন।
৫০ পার্ক ইনভেস্টমেন্টসের বিশেষজ্ঞ অ্যাডাম সারহান বলেন, “মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধ অব্যাহত এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হস্তক্ষেপের আশঙ্কায় বাজারে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় বিনিয়োগকারীরা নিরাপত্তাহীনতায় বিক্রি করছে।”
মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভ সুদের হার অপরিবর্তিত রাখলেও, শুল্ক নীতির কারণে মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির আশঙ্কা কমাতে ব্যাংকগুলো সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। কোম্পানি পর্যায়ে, যদিও ক্রোগার ও কারম্যাক্সের মতো কিছু কোম্পানির শেয়ার উন্নতি করেছে, তবুও সামগ্রিক বাজার পরিস্থিতি নেতিবাচক থাকায় সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মনোবল কমেছে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধের অচলাবস্থার কারণে বিশ্বব্যাপী অর্থনীতির ওপর চাপ বাড়তে পারে, যা পুঁজিবাজারের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে থাকবে।
আন্তর্জাতিক
শান্তির পথে প্রধান অন্তরায় নেতানিয়াহু সরকার: এরদোয়ান

ইস্তাম্বুলে অনুষ্ঠিত ইসলামি সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) শীর্ষ সম্মেলনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী বেনঞ্জামিন নেতানিয়াহুর নেতৃত্বাধীন ইসরায়েল সরকারই এই অঞ্চলের শান্তির পথে সবচেয়ে বড় বাধা।
এরদোয়ান আরও বলেন, নেতানিয়াহু সরকার একের পর এক আক্রমণ ও উসকানিমূলক পদক্ষেপ নিয়ে গোটা মধ্যপ্রাচ্যকে অস্থিতিশীল করে তুলছে।
অন্যদিকে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর ‘আলোচনা চালিয়ে যেতে’ আগ্রহের কথা জানিয়েছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা। আর কূটনৈতিক আলোচনায় রাজি থাকলেও ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি বলেছেন, ‘আগ্রাসন বন্ধ হলেই ইরান এ বিষয়ে বিবেচনা করবে।’
ইরান ও ইসরায়েল সংঘাত বন্ধের প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে শুক্রবার সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় কূটনৈতিক বৈঠকে বসেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি এবং ইউরোপীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা।
বৈঠক শেষে গণমাধ্যমে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে ইউরোপীয় কমিশনের ভাইস-প্রেসিডেন্ট কাজা ক্যালাস বলেন, ‘আঞ্চলিক উত্তেজনা কারো জন্যই লাভজনক নয়, তাই আমাদের আলোচনার সুযোগ খোলা রাখা উচিত।
তিনি জানান, উভয় পক্ষই পারমাণবিকসহ বৃহত্তর বিষয় নিয়ে আলোচনায় সম্মত হয়েছে। ইরানের সঙ্গে ‘চলমান আলোচনা’ অব্যাহত রাখতে ‘আগ্রহী’ বলে জানান যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামিও। সূত্র: আল-জাজিরা
আন্তর্জাতিক
ইন্টারনেট ব্ল্যাকআউট: ৬০ ঘণ্টা ধরে বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন ইরান

বিশ্বব্যাপী ইন্টারনেট অ্যাক্সেস থেকে ৬০ ঘণ্টা ধরে বিচ্ছিন্ন রয়েছে ইরান। ইন্টারনেট সংযোগ পর্যবেক্ষণকারী প্রতিষ্ঠান নেটব্লকস এ তথ্য জানিয়েছে। খবর আলজাজিরার। নেটব্লকস মনিটর অনুসারে, ইরান দীর্ঘ গত ৬০ ঘণ্টা ধরে বিশ্বব্যাপী ইন্টারনেট অ্যাক্সেস থেকে বিচ্ছিন্ন।
ইন্টারনেট বন্ধের ফলে জনসাধারণের রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ, অবাধ যোগাযোগ এবং নিরাপত্তা সতর্কতা অনুসরণ করার ক্ষমতা মারাত্মকভাবে সীমিত হচ্ছে বলে জানিয়েছে মনিটরটি।
ইরান সরকারের আরোপিত অবরোধের ফলে এই বিভ্রাট দেখা দিয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সরকারের মতে, ইসরায়েলি সাইবার হামলা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য এ পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।
নেটব্লকসের গবেষণা পরিচালক ইসিক মাতের বিবিসিকে বলেন, ‘২০১৯ সালের নভেম্বরের পর ইরানে আমরা এই প্রথম এমন প্রায় পূর্ণ সংযোগ বিচ্ছিন্নতা দেখতে পাচ্ছি। এমনকি ২০২২ সালের মাহসা আমিনির প্রতিবাদের সময়েও এতটা সীমাবদ্ধতা ছিল না।’
বিবিসি ইরানে মুক্তভাবে কাজ করতে পারে না। ফলে ইন্টারনেট বন্ধ থাকা এবং সাধারণ নাগরিকদের অনলাইনে তথ্য শেয়ার করতে না পারা, পরিস্থিতি বুঝে ওঠা ও যাচাই করার ক্ষমতা সীমিত।
তবে ইসিক মাতের আরও বলেছেন, ইতিহাস ঘেঁটে দেখা যায়, ইরান সাধারণত অভ্যন্তরীণ কোনো ইস্যুতে ইন্টারনেট বন্ধ করে দেয়। কিন্তু আন্তর্জাতিক সংঘাতের সময় তারা সাধারণত আন্তর্জাতিক যোগাযোগ চালু রাখার চেষ্টা করে। এবারকার পরিস্থিতি সেই ধারার বাইরে।
এদিকে নেটব্লকস সংস্থাটি এক্স মাধ্যমে এক পোস্টে ইরানে ইন্টারনেট বিচ্ছিন্নতার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
প্রসঙ্গত, গত ১৩ জুন থেকে ইরানের বিভিন্ন স্থানে, বিশেষ করে পারমাণবিক স্থাপনা লক্ষ্য করে হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল। জবাবে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে হামলা অব্যাহত রেখেছে তেহরান। পাল্টাপাল্টি এ হামলায় উভয় দেশের বহু মানুষ হতাহত হয়েছেন।
কাফি
আন্তর্জাতিক
পরমাণু ইস্যুতে ‘রেড লাইন’ স্পষ্ট করলো ইরান

পরমাণু প্রকল্প ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা বিশ্বের উদ্দেশ্যে কিছু ‘রেড লাইন’ দিয়ে রেখেছে ইরান। অস্ট্রেলিয়ার ডিকিন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইরানবিষয়ক বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক শাহরাম আকবারজাদেহ এক সাক্ষাৎকারে এ তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ইরানের পক্ষ থেকে কূটনৈতিক আলোচনা সফল করার জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ শর্ত থাকছে, যা অগ্রাহ্য করলে পরিস্থিতি আরও সংকটময় হয়ে উঠতে পারে।
ইরান পরমাণু প্রকল্প নিয়ে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের সঙ্গে সহযোগিতা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তবে একইসঙ্গে তারা স্পষ্টভাবে জানিয়েছে যে, এই প্রকল্প কখনও সামরিক বা অস্ত্র তৈরির কাজে ব্যবহার করবে না। এই স্বচ্ছতা ও সহযোগিতার বিনিময়ে ইরান পশ্চিমা বিশ্বের পক্ষ থেকে আরোপিত নিষেধাজ্ঞাগুলো থেকে মুক্তি চায়। এটাই ইরানের প্রথম রেড লাইন। পশ্চিমা বিশ্ব যদি এই প্রথম রেডলাইনকে সম্মান করে, তাহলে এখনই এ ইস্যুতে একটি কূটনৈতিক সমাধানে পৌঁছানো সম্ভব।
ইরানের দ্বিতীয় রেডলাইনটি হলো- তারা যুক্তরাষ্ট্র বা অন্য কোনো রাষ্ট্রের ‘গুন্ডামি’র সামনে নতিস্বীকার করবে না। সংঘাতের হুমকি কিংবা সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতাকে হত্যার হুমকিকে ইরানের শাসকগোষ্ঠী এবং জনগণ ‘গুন্ডামি’ হিসেবে বিবেচনা করে।
তাই ভয়ভীতি বা অন্য কোনো কারণে ইরানের জনগণ আত্মসমর্পণ করবে, কিংবা আপসের পথ খুঁজবে- এমনটা আপনি আশা করতে পারেন না, আলজাজিরাকে বলেন শাহরাম আকবারজাদেহ।
ইরানের রেড লাইনগুলো স্পষ্ট করে দেয় যে, পরমাণু ইস্যুতে শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য দুই পক্ষেরই দায়িত্বশীল ও সম্মানজনক ভূমিকা প্রয়োজন। কূটনৈতিক সমঝোতার মাধ্যমে যদি এই সীমাবদ্ধতাগুলো মানা যায়, তাহলে মধ্যপ্রাচ্যের জন্য শান্তি ও স্থিতিশীলতা অর্জন সম্ভব। অন্যথায়, অগ্রাহ্য হলে সংঘাতের ঝুঁকি বাড়বে এবং উত্তেজনা দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে।