আন্তর্জাতিক
ইরানকে দুই সপ্তাহ সময় দিলেন ট্রাম্প

ইরানে হামলা চালাতে যুক্তরাষ্ট্রের পরিকল্পনায় অনুমোদন দিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে হামলা শুরুর বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেননি তিনি। গতকাল রাতে হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, ইরানের বিষয়ে দুই সপ্তাহের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেবেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
ইরান–ইসরায়েল সংঘাত শুরুর পর মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক উপস্থিতি বৃদ্ধির মধ্যেই ইরানের হামলার অনুমোদন দিলেন ট্রাম্প। গতকাল বৃহস্পতিবার ছিল ইরান–ইসরায়েল সংঘাতের সপ্তম দিন। এদিন ও আগের রাতে ইরানে পারমাণবিক স্থাপনাসহ বিভিন্ন এলাকায় হামলা চালায় ইসরায়েল। অন্যদিকে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় ইসরায়েলের বিরসেবা শহরের একটি হাসপাতাল। তেল আবিবের কয়েকটি এলাকায়ও হামলা করা হয়। গতকাল রাত একটায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলার খবর পাওয়া গেছে।
হোয়াইট হাউসের প্রেস সচিব ক্যারোলাইন লেভিট গতকাল রাতে এক ব্রিফিংয়ে ট্রাম্পের বার্তা পড়ে শোনান। হোয়াইট হাউসে অনুষ্ঠিত ওই ব্রিফিংয়ে প্রেস সচিব বলেন, ইরান–ইসরায়েল সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্র ‘সরাসরি যুক্ত’ হবে কি না, তা নিয়ে ‘নানা জল্পনাকল্পনা’ চলছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছেন, ‘নিকট ভবিষ্যতে ইরানের সঙ্গে আলোচনা হওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। আলোচনা না-ও হতে পারে। এর ওপর ভিত্তি করে (সংঘাতে) যাব কি যাব না, সে বিষয়ে আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেব।’
হোয়াইট হাউসের প্রেস সচিব বলেন, ইরানের সঙ্গে যেকোনো চুক্তির ক্ষেত্রে ‘ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ না করার বিষয়টি’ অন্তর্ভুক্ত থাকতে হবে। তিনি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আগের অবস্থান তুলে ধরে বলেন, ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের সুযোগ দেওয়া যাবে না।
এর আগে ইরানে হামলার পরিকল্পনায় ট্রাম্পের অনুমোদনের খবর সামনে আনে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিবিএস ও ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল। যুক্তরাষ্ট্রের একজন জ্যেষ্ঠ গোয়েন্দা কর্মকর্তার বরাতে গতকাল সিবিএস জানায়, ইরানের ফর্দো পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার কথা ভাবছেন ট্রাম্প। তবে ইরান নিজেদের পারমাণবিক প্রকল্পগুলো বন্ধে রাজি হবে, এমন আশায় এখনো হামলা শুরুর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেননি তিনি।
গত বুধবার ইরান–ইসরায়েল সংঘাতে জড়ানোর বিষয়ে হোয়াইট হাউসে ট্রাম্পকে প্রশ্ন করেছিলেন সংবাদিকেরা। স্পষ্ট জবাবের দিকে না গিয়ে তিনি বলেছিলেন, ‘আমি এটি করতে পারি, না–ও পারি।’ তবে ট্রাম্প শেষ পর্যন্ত যে সিদ্ধান্তই নেন না কেন, তা পেন্টাগন বাস্তবায়ন করতে প্রস্তুত আছে বলে গতকাল মার্কিন সিনেট কমিটিকে জানিয়েছেন দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ।
ইরানে হামলার পরিকল্পনায় অনুমোদনের খবরের দিকে ইঙ্গিত করে পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে একটি পোস্ট দেন ট্রাম্প। তিনি লেখেন, ইরান নিয়ে তাঁর ভাবনা সম্পর্কে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল–এর কোনো ধারণা নেই।’
চলমান সংঘাতে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু যে যুক্তরাষ্ট্রকে পাশে চান, তা আগে থেকেই বলে আসছেন বিশ্লেষকেরা। মধ্যপ্রাচ্যে সামরিক শক্তিও বাড়াচ্ছে ওয়াশিংটন। গতকাল পর্যন্ত মার্কিন একটি বিমানবাহী রণতরিসহ কয়েকটি যুদ্ধজাহাজ আরব সাগরে অবস্থান করছিল। আরেকটি রণতরি মধ্যপ্রাচ্যে যাচ্ছে। বেশ কিছু সামরিক উড়োজাহাজও ইউরোপ থেকে মধ্যপ্রাচ্যের পথে রয়েছে।
শেষ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র যদি ইরানে হামলা চালায়, তাহলে মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন ঘাঁটিগুলোয় তেহরান হামলা শুরু করতে পারে বলে মনে করেন মার্কিন গবেষণা প্রতিষ্ঠান কুইন্সি ইনস্টিটিউটের নির্বাহী ভাইস প্রেসিডেন্ট ট্রিটা পারসি। সিএনএনকে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে লড়াই দীর্ঘমেয়াদি হলে তেহরান হয়তো শেষ পর্যন্ত টিকতে পারবে না। তবে লড়াইটা ওয়াশিংটনের জন্যও সহজ হবে না।
গত বুধবার রাতে ইরানের মধ্যাঞ্চলে আরাক শহরে অবস্থিত খোনদাব পরমাণু স্থাপনায় হামলার দাবি করেছে ইসরায়েল। পরমাণু স্থাপনার কাছে ভারী পানির একটি পারমাণবিক চুল্লিতেও হামলার দাবি করা হয়েছে। ভারী পানির চুল্লিগুলো প্লুটোনিয়াম তৈরির কাজে ব্যবহার করা হয়। এগুলো সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের মতোই। নতুন করে হামলা হয়েছে নাতাঞ্জ পরমাণু স্থাপনায়ও।
তবে ভারী পানির ওই চুল্লিতে কোনো তেজস্ক্রিয় পদার্থ ছিল না বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের আওতাধীন পারমাণবিক নজরদারি সংস্থা আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (আইএইএ)। খোনদাব পরমাণু স্থাপনায় হামলার নিন্দা জানিয়েছে ইরান। পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার মাধ্যমে ইসরায়েল আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে যাচ্ছে বলে এক বিবৃতিতে উল্লেখ করেছে তারা।
এ ছাড়া গতকাল ও আগের দিন বুধবার রাতভর ইরানের বেসামরিক বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা চালায় ইসরায়েল। রাজধানী তেহরানের বিভিন্ন এলাকা থেকে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। এতে অনেকে আহত হন বলে জানিয়েছে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ। ওয়াশিংটনভিত্তিক সংস্থা হিউম্যান রাইটস অ্যাকটিভিস্টসের হিসাবে, ইসরায়েলের হামলায় ইরানে এখন পর্যন্ত অন্তত ৬৩৯ জন নিহত হয়েছেন।
তবে ইসরায়েলের হামলায় হতাহতের বিষয়ে হালনাগাদ তথ্য দিচ্ছে না ইরান। সর্বশেষ গত সোমবার সকালে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেওয়া হিসাব অনুযায়ী, তখন পর্যন্ত ২২৪ জন নিহত হয়েছিলেন। আহত হয়েছিলেন ১ হাজার ২৭৭ জন।
সাত দিন ধরে চলা ইসরায়েলের হামলায় ইরানের বেশ কয়েকজন শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া পারমাণবিক স্থাপনা, ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদনকেন্দ্র, গ্যাসক্ষেত্র, জ্বালানি তেল পরিশোধনাগার, সম্প্রচারমাধ্যম, বিমানবন্দরসহ সামরিক-বেসামরিক স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। গতকাল ইরানের দুই–তৃতীয়াংশ ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণব্যবস্থা ধ্বংসের দাবি করেছেন ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র এফিন ডেফরিন।
গতকাল ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে বিরসেবা শহরে সোরোকা হাসপাতাল ইরানের ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ইরানের ইসলামি বিপ্লবী গার্ড কোর (আইআরজিসি) জানিয়েছে, সোরোকা হাসপাতাল নয়, কাছেই ইসরায়েলের একটি সামরিক ও গোয়েন্দা কার্যালয় ছিল তাদের লক্ষ্য। এর আগে সোমবার ইরানের কেরমানশাহ প্রদেশে একটি হাসপাতালে হামলা চালিয়েছিল ইসরায়েল।
গতকাল ওই হামলার পর ইসরায়েলের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, হামলায় হাসপাতালের ছাদ ধসে যায়। আহত হন কয়েকজন। পরে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে লেখেন, সোরোকা হাসপাতালসহ ইসরায়েলের বিভিন্ন অঞ্চলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইরানের ‘সন্ত্রাসী স্বৈরশাসকেরা।’ এ জন্য তাদের ‘চড়া মূল্য’ দিতে হবে।
গতকাল তেল আবিবেও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইরান। হামলায় বহুসংখ্যক মানুষ আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে ইসরায়েলের জরুরি সেবা কর্তৃপক্ষ। হামলায় তেল আবিবের কাছে রামাত গান এলাকায় কয়েকটি ভবনের ক্ষয়ক্ষতি হয়। বাণিজ্যিক এই এলাকার বাসিন্দা ইয়ানিভ (৩৪) রয়টার্সকে বলেন, এটি ছিল ভয়ানক। ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে তাঁর কানে তালা লেগে যায়। পুরো ভবন কেঁপে ওঠে।
রামাত গানে হামলার সময় সেখানে অবস্থিত লিথুয়ানিয়ার দূতাবাস ভবন থেকে ২০০ মিটার দূরে একটি ক্ষেপণাস্ত্র পড়ে। এতে কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি বলে জানিয়েছে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, গতকাল ইরানের হামলার জেরে কমপক্ষে ২৭১ জনকে চিকিৎসাকেন্দ্রে নেওয়া হয়েছে। হামলায় ইসরায়েলে সর্বশেষ গত সোমবার ২৪ জনের মৃত্যুর খবর জানিয়েছিল দেশটির সরকার।
চলমান সংঘাতের মধ্যে ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিকে আবার হত্যার হুমকি দিয়েছে ইসরায়েল। দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ গতকাল সাংবাদিকদের বলেন, ‘ইসরায়েল রাষ্ট্রকে ধ্বংস করা তাঁর লক্ষ্য…এমন একজন মানুষকে আর বেঁচে থাকার সুযোগ দেওয়া যায় না।’ খামেনিকে হত্যা এই ‘যুদ্ধের’ একটি লক্ষ্য বলে উল্লেখ করেছেন কাৎজ। গত মঙ্গলবারও খামেনিকে হত্যার হুমকি দিয়েছিলেন কাৎজ।
খামেনিকে সম্ভাব্য হত্যার বিষয়ে বুধবার রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গে আয়োজিত অর্থনীতিবিষয়ক সম্মেলনের ফাঁকে ভ্লাদিমির পুতিনকে প্রশ্ন করেছিলেন সাংবাদিকেরা। জবাবে রুশ প্রেসিডেন্ট বলেন, তিনি সবকিছুই শুনেছেন। তবে খামেনিকে হত্যার বিষয়টি নিয়ে আলোচনাও করতে চান না। তিনি বিশ্বাস করেন, এই সংঘাত বন্ধে শান্তিপূর্ণ সমাধানে পৌঁছানো সম্ভব।
এরই মধ্যে গতকাল এক্সে একটি পোস্ট দেন আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি। তিনি বলেন, তেহরানের বিরুদ্ধে লড়াই করতে ইসরায়েল যুক্তরাষ্ট্রের কাছে সহায়তা চাইছে। এটা প্রমাণ করে ইসরায়েলের শাসনব্যবস্থা কতটা দুর্বল ও অক্ষম।
ইরানে ইসরায়েলের হামলার বিরুদ্ধে স্থানীয় সময় বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ও নিউইয়র্ক শহরে বিক্ষোভ হয়েছে। এই সংঘাতে যেন যুক্তরাষ্ট্র না জড়ায়, বিক্ষোভ থেকে সে দাবিও করা হয়। বুধবার ওয়াশিংটনে হোয়াইট হাউসের সামনে বিক্ষোভকারীদের অনেকের হাতে ছিল ‘ইরানে হস্তক্ষেপ বন্ধ করুন’, ‘গণহত্যায় অর্থ দেওয়া বন্ধ করুন’ লেখা প্ল্যাকার্ড।
নিউইয়র্কে বিক্ষোভের একটি ভিডিওতে দেখা যায়, শত শত মানুষ শহরটির ম্যানহাটান এলাকায় মিছিল করছেন। তাঁরা ইরানে যুক্তরাষ্ট্রের হামলার হুমকি এবং ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলের হামলার প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনের জন্য সরকারের নিন্দা জানান।
ইরানে যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ চায় না রাশিয়াও। গতকাল ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ সতর্ক করে বলেন, ইরানে যুক্তরাষ্ট্র হামলা চালালে সংঘাত ভয়াবহ আকার ধারণ করবে। গতকাল ফোনালাপ করেন ভ্লাদিমির পুতিন ও চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং। ফোনালাপে চলমান সংঘাতে রাশিয়া মধ্যস্থতা করতে আগ্রহী বলে জানান পুতিন। সি আহ্বান জানান ইরান–ইসরায়েল যুদ্ধবিরতির।
ইরান নিয়ে আলোচনা করতে গতকাল যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামির সঙ্গে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর সাক্ষাৎ করার কথা ছিল বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর। এ ছাড়া আজ শুক্রবার ইরান ও ইসরায়েল সংঘাত নিয়ে জরুরি বৈঠকে বসছে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ। ইরান, রাশিয়া, চীন, পাকিস্তান ও আলজেরিয়ার অনুরোধে এ বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছে।

আন্তর্জাতিক
পরমাণু ইস্যুতে ‘রেড লাইন’ স্পষ্ট করলো ইরান

পরমাণু প্রকল্প ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা বিশ্বের উদ্দেশ্যে কিছু ‘রেড লাইন’ দিয়ে রেখেছে ইরান। অস্ট্রেলিয়ার ডিকিন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইরানবিষয়ক বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক শাহরাম আকবারজাদেহ এক সাক্ষাৎকারে এ তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ইরানের পক্ষ থেকে কূটনৈতিক আলোচনা সফল করার জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ শর্ত থাকছে, যা অগ্রাহ্য করলে পরিস্থিতি আরও সংকটময় হয়ে উঠতে পারে।
ইরান পরমাণু প্রকল্প নিয়ে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের সঙ্গে সহযোগিতা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তবে একইসঙ্গে তারা স্পষ্টভাবে জানিয়েছে যে, এই প্রকল্প কখনও সামরিক বা অস্ত্র তৈরির কাজে ব্যবহার করবে না। এই স্বচ্ছতা ও সহযোগিতার বিনিময়ে ইরান পশ্চিমা বিশ্বের পক্ষ থেকে আরোপিত নিষেধাজ্ঞাগুলো থেকে মুক্তি চায়। এটাই ইরানের প্রথম রেড লাইন। পশ্চিমা বিশ্ব যদি এই প্রথম রেডলাইনকে সম্মান করে, তাহলে এখনই এ ইস্যুতে একটি কূটনৈতিক সমাধানে পৌঁছানো সম্ভব।
ইরানের দ্বিতীয় রেডলাইনটি হলো- তারা যুক্তরাষ্ট্র বা অন্য কোনো রাষ্ট্রের ‘গুন্ডামি’র সামনে নতিস্বীকার করবে না। সংঘাতের হুমকি কিংবা সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতাকে হত্যার হুমকিকে ইরানের শাসকগোষ্ঠী এবং জনগণ ‘গুন্ডামি’ হিসেবে বিবেচনা করে।
তাই ভয়ভীতি বা অন্য কোনো কারণে ইরানের জনগণ আত্মসমর্পণ করবে, কিংবা আপসের পথ খুঁজবে- এমনটা আপনি আশা করতে পারেন না, আলজাজিরাকে বলেন শাহরাম আকবারজাদেহ।
ইরানের রেড লাইনগুলো স্পষ্ট করে দেয় যে, পরমাণু ইস্যুতে শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য দুই পক্ষেরই দায়িত্বশীল ও সম্মানজনক ভূমিকা প্রয়োজন। কূটনৈতিক সমঝোতার মাধ্যমে যদি এই সীমাবদ্ধতাগুলো মানা যায়, তাহলে মধ্যপ্রাচ্যের জন্য শান্তি ও স্থিতিশীলতা অর্জন সম্ভব। অন্যথায়, অগ্রাহ্য হলে সংঘাতের ঝুঁকি বাড়বে এবং উত্তেজনা দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে।
আন্তর্জাতিক
ফের স্টুডেন্ট ভিসা চালু করছে যুক্তরাষ্ট্র, থাকছে শর্ত

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর ঘোষণা করেছে, তারা আবারও আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের ভিসা অ্যাপয়েন্টমেন্ট গ্রহণ শুরু করছে। তবে এবার থেকে সব আবেদনকারীর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম (সোশ্যাল মিডিয়া) অ্যাকাউন্ট প্রকাশ্যে রাখতে হবে এবং এ নিয়ে বাড়তি যাচাই-বাছাই করা হবে।
সরকারি কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, তারা যেন আবেদনকারীদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ঘেঁটে দেখে কোনো ধরনের বিদ্বেষমূলক মনোভাব আছে কি না—বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক, সংস্কৃতি, সরকার, প্রতিষ্ঠান কিংবা দেশটির প্রতিষ্ঠার মূলনীতির প্রতি।
ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন নির্দেশনার আওতায় পড়বে এফ ভিসা। যেটি মূলত শিক্ষার্থীদের জন্য ব্যবহৃত হয়।
এম ভিসা ও জি ভিসাও (কারিগরি শিক্ষার্থী ও এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রামের শিক্ষার্থীদের জন্য) এর প্রভাবের মধ্যে পড়বে।
যেসব আবেদনকারী নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্রোফাইল প্রাইভেট রাখবেন, তাদের গোপন কিছু লুকানোর চেষ্টা করছেন বলে সন্দেহ করা হতে পারে।
একজন সিনিয়র কর্মকর্তা বলেন, মার্কিন নাগরিকদের প্রত্যাশা হলো তাদের সরকার দেশকে নিরাপদ রাখতে সম্ভাব্য সব পদক্ষেপ নেবে। ট্রাম্প প্রশাসন প্রতিদিন সেটাই করছে।
ভিসা কর্মকর্তাদের আরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, তারা যেন এমন ব্যক্তিদের চিহ্নিত করেন যারা ঘোষিত বিদেশি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর প্রতি সমর্থন জানায়, তাদের সাহায্য করে বা জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি তৈরি করে; কিংবা যারা অবৈধভাবে ইহুদিবিরোধী হয়রানি বা সহিংসতায় জড়িত।
এই পদক্ষেপটি ট্রাম্প প্রশাসনের যুক্তরাষ্ট্রের অভিজাত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিরুদ্ধে শুরু করা কঠোর নজরদারির অংশ। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো অত্যন্ত বামপন্থি হিসেবে বিবেচনা করেন এবং অভিযোগ করেন, ক্যাম্পাসে ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভ চলাকালে এসব বিশ্ববিদ্যালয় ইহুদি-বিরোধিতার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়নি।
ট্রাম্পের এই কঠোর অভিযানের অংশ হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য শত শত কোটি ডলারের সরকারি অর্থসহায়তা স্থগিত, ছাত্রদের বিতাড়ন এবং ভিসা বাতিলের চেষ্টাও করেছে এ প্রশাসন। তবে এসব উদ্যোগের অনেকটাই মার্কিন আদালত অবরুদ্ধ করে দিয়েছে।
আন্তর্জাতিক
ইসরায়েলি হামলায় ইরানে নিহত ৬৩৯

ওয়াশিংটনভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যাকটিভিস্টস জানিয়েছে, ইসরায়েলের লাগাতার হামলায় ইরানজুড়ে এখন পর্যন্ত অন্তত ৬৩৯ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছে ১৩২০ জনের বেশি।
সংঘাতের সপ্তম দিনে এ তথ্য জানিয়েছে সংস্থাটি। সংগঠনটি আরও জানিয়েছে, নিহতদের মধ্যে ২৬৩ জন বেসামরিক নাগরিক এবং ১৫৪ জন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য রয়েছেন।
২০২২ সালে মাশা আমিনির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে ইরানে ছড়িয়ে পড়া সরকারবিরোধী বিক্ষোভের সময়ও এই সংগঠন বিশদ হতাহতের তথ্য দিয়েছিল। তাদের দাবি, ইরানের অভ্যন্তরে তৈরি করা একটি তথ্যসূত্রের নেটওয়ার্ক এবং স্থানীয় প্রতিবেদন যাচাই করে এই পরিসংখ্যান নিশ্চিত করা হয়েছে।
ইরানের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত নিয়মিতভাবে হতাহতের সংখ্যা জানানো হয়নি। সবশেষ যে তথ্য তারা দিয়েছে, তাতে বলা হয়েছিল, ইসরায়েলি হামলায় ২২৪ জন নিহত এবং ১,২৭৭ জন আহত হয়েছেন।
গত ১৩ জুন ইরান-ইসরায়েল সংঘাত শুরুর পর থেকে দুই দেশের সামরিক বাহিনীর পাল্টাপাল্টি হামলা অব্যাহত রয়েছে। ইসরায়েলে ইরানি হামলায় এখন পর্যন্ত ২৪ জনের প্রাণহানির তথ্য পাওয়া গেছে।
আন্তর্জাতিক
ইরান আত্মসমর্পণ করবে না: খামেনি

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি বলেছেন, ইরান চাপিয়ে দেওয়া যুদ্ধের মতো চাপিয়ে দেওয়া শান্তিরও বিরোধিতা করবে। এই জাতি কারও চাপের মুখে কখনো আত্মসমর্পণ করবে না। বুধবার (১৮ জুন) টেলিভিশনে সম্প্রচারিত এক ভাষণে এই কথা বলেন তিনি।
খামেনি বলেন, যারা ইরান ও তার ইতিহাস সম্পর্কে জানে, তারা জানে— হুমকির ভাষায় ইরানিদের কিছু বোঝানো যায় না।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাম্প্রতিক বক্তব্যের ইঙ্গিত দিয়ে খামেনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, মার্কিনিরা জানুক— যুক্তরাষ্ট্র যদি সামরিক হস্তক্ষেপ করে, তবে তার ফলাফল হবে অপূরণীয়।
আন্তর্জাতিক
পাহাড়ের নিচে ইরানের পরমাণু কেন্দ্র, ধ্বংস করতে পারবে না ইসরায়েল

ইরানের পরমাণু কর্মসূচিকে ধ্বংস করার জন্য বদ্ধপরিকর ইসরায়েল। তারা মনে করে, ইরান পরমাণু বোমার অধিকারী হলে তা ইসরায়েল রাষ্ট্রের অস্তিত্বকে হুমকির মুখে ফেলবে। আর এজন্য ইরানের পরমাণু কেন্দ্রে আঘাত হানতে এবং সরাসরি সামরিক সংঘাতের ঝুঁকি নিতে দ্বিধা করেননি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।
তবে এক্ষেত্রে ইসরায়েল যে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা ছাড়া এককভাবে সফল হতে পারবে না, তা স্পষ্ট করে তুলে ধরেছেন সাবেক ইসরায়েলি কূটনীতিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক আলোন পিঙ্কাস।
আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘ইসরায়েল একা ইরানের পারমাণবিক-সামরিক অবকাঠামো ধ্বংস করতে সক্ষম নয়। এর জন্য প্রয়োজন বিশেষ ধরনের বাংকার ধ্বংসকারী বোমা, ভারী বোমারু বিমান এবং উন্নত ডেলিভারি সিস্টেম, যেগুলো কেবল যুক্তরাষ্ট্রেরই আছে।’
বিশেষত, ইরানের দক্ষিণে অবস্থিত ‘ফোর্ডো’ ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্রকে ধ্বংস করা ইসরায়েলের পক্ষে সম্ভব নয়। কারণ এটি পাহাড়ের নিচে এবং অত্যন্ত সুরক্ষিতভাবে গড়ে তোলা হয়েছে। সাধারণ বিমান হামলা বা ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে এই কেন্দ্রের কোনো ক্ষতি হবে না। তাই ইসরায়েল যতই সফলতা দাবি করুক এই কেন্দ্র ধ্বংস করা যে ততটা সহজ নয়।
পিঙ্কাস বলেন, ‘এ কারণেই নেতানিয়াহু বারবার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে সংঘাতে সরাসরি যুক্ত করার চেষ্টা করছেন। কারণ ইসরায়েল জানে, শুধু এখনকার হামলায় কিছুটা প্রতীকী লাভ হলেও, পরমাণু হুমকি দূর হবে না। এই জটিল ও গভীর স্থাপনার বিরুদ্ধে কার্যকর হামলা চালানো যুক্তরাষ্ট্রের অংশগ্রহণ ছাড়া সম্ভব নয়।’
উল্লেখ্য, ইরানের মোট ১৩টির বেশি পারমানবিক স্থাপনা রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে গবেষণা স্থাপনা, পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, ইউরেনিয়াম রূপান্তর কেন্দ্র, ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র এবং পারমাণু কেন্দ্রের জন্য প্রয়োজনীয় হেভি ওয়াটার উৎপাদন কেন্দ্র। এছাড়াও একাধিক ইউরেনিয়াম খনি রয়েছে ইরানের।
জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) সর্বশেষ প্রতিবেদনের তথ্য অনুসারে, চলতি বছরের মে মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত ইরানে মোট সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের মজুত ছিল প্রায় ৯ হাজার ২৪৭ দশমিক ৬ কেজি বা ২০১৫ সালের চুক্তিতে নির্ধারিত সীমার চেয়ে ৪৫ গুণ বেশি।
মোট মজুত ইউরেনিয়ামের মধ্যে ৪০৮ দশমিক ৬ কেজি ৬০ শতাংশ পর্যন্ত সমৃদ্ধ করেছে ইরান, যা পারমাণবিক অস্ত্র তৈরিতে প্রযোজ্য সমৃদ্ধকরণের চেয়ে সামান্য কম। পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির জন্য ইউরেনিয়াম ৯০ শতাংশ পর্যন্ত সমৃদ্ধ করতে হয়।
ভিয়েনাভিত্তিক সংস্থা আইএইএর সংজ্ঞা অনুযায়ী, তাত্ত্বিকভাবে ইরানের কাছে বর্তমানে যে পরিমাণু অস্ত্র তৈরির উপযোগী ইউরেনিয়াম রয়েছে, আরও কিছু পরিশোধন করলে তা দিয়ে দেশটি প্রায় ১০টি পারমাণবিক বোমা তৈরি করতে পারবে।
যদিও ইরান বরাবরই বলে আসছে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির কোনো অভিপ্রায় তাদের নেই। তবে চলতি সপ্তাহে ইরানের ভূখণ্ডে ইসরায়েলের সরাসরি হামলা ও চলমান পরিস্থিতি ইরানকে পরমাণু অস্ত্র তৈরির দিকেই নিয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করছেন অনেকে।
কাফি