অর্থনীতি
নগদের গ্রাহকদের অর্থ ঝুঁকিতে: বাংলাদেশ ব্যাংক

মোবাইল আর্থিক সেবা (এমএফএস) প্রতিষ্ঠান ‘নগদ’ লিমিটেডের গ্রাহকদের টাকা ও তথ্যের নিরাপত্তা এখন ঝুঁকিতে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংক আরও উল্লেখ করেছে যে ‘নগদ’-এর ব্যাংক হিসাবগুলোর স্বাক্ষরদাতা পরিবর্তনের চেষ্টা চলছে এবং প্রতিষ্ঠানটির ফরেনসিক অডিট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, যা কেপিএমজি সম্পন্ন করছিল।
রবিবার (১ জুন) রাতে গণমাধ্যমে পাঠানো এক লিখিত বিবৃতিতে বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়, প্রকৃত অর্থ জমা ছাড়াই ‘নগদ’ অতিরিক্ত কমপক্ষে ৬৪৫ কোটি টাকার ই-মানি ইস্যু করেছে। এতে করে ডাক বিভাগ তথা সরকারের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে সমপরিমাণ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মতে, এই অতিরিক্ত ই-মানি ইস্যু রাষ্ট্রের বৈধ মুদ্রা ব্যবস্থার ওপর আঘাত, যা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একচেটিয়া অর্থ ইস্যুর ক্ষমতাকে চ্যালেঞ্জ করে।
এ ছাড়া অনুমোদনহীন ৪১টি পরিবেশকের মাধ্যমে প্রায় ১ হাজার ৭১১ কোটি টাকা ‘নগদ’ থেকে উত্তোলন করা হয়েছে, যা মূলত বিভিন্ন সরকারি ভাতা বিতরণের অর্থ ছিল। এ ঘটনায় বাংলাদেশ ব্যাংক চলতি বছরের ৩ ফেব্রুয়ারি মতিঝিল থানায় মামলা দায়ের করেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক আরও জানিয়েছে, একটি ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মের ১৮ হাজার ২৩৩ জন গ্রাহকের হিসাবে বেআইনিভাবে অর্থ পাঠানোর কারণে ‘নগদ’-এর ক্ষতি হয়েছে ১৪৪ কোটি টাকা।
সম্প্রতি ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব ‘নগদ’ নিয়ে গভর্নরের উদ্দেশে একটি আধা সরকারি চিঠি দেন, যা তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও প্রকাশ করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিবৃতিতে জানানো হয়, ৭ মে সুপ্রিম কোর্টের চেম্বার জজ আদালতের স্থগিতাদেশের ফলে বাংলাদেশ ব্যাংক নিযুক্ত প্রশাসক ও তার দল ‘নগদ’-এর কার্যক্রমে অংশ নিতে পারছেন না। এ সুযোগে মামলার আসামি ও ‘নগদ’-এর সাবেক এমডি তানভীর আহমেদ মিশুক নিজেকে বৈধ এমডি দাবি করে মামলার অন্য আসামি শাফায়েত আলমকে ই-মেইলের মাধ্যমে ‘নগদ’-এর সিইও হিসেবে নিয়োগ দেন। যদিও এতে পরিচালনা পর্ষদের কোনো অনুমোদন ছিল না।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, প্রশাসক দলের ই-মেইল, ফাইন্যান্স ও আইটি বিভাগের নিয়ন্ত্রণ, এমনকি ই-মানি ব্যবস্থাপনার বিভিন্ন সিস্টেমে প্রবেশাধিকার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, যার ফলে ১২ মে থেকে প্রশাসক দল কার্যক্রমে নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে।
সবশেষে বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়, আন্তর্জাতিক অডিট ফার্ম কেপিএমজিকে দিয়ে ‘নগদ’-এর পূর্ণাঙ্গ ফরেনসিক অডিট করার উদ্যোগ নেওয়া হলেও এখন তাদেরকে কোনো সহায়তা দেওয়া হচ্ছে না, ফলে অডিট কার্যক্রম থেমে গেছে।
এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ব্যাংক মনে করছে, ‘নগদ’-এর গ্রাহকদের অর্থ ও তথ্য বর্তমানে চরম ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।

অর্থনীতি
চাঁদপুরে ইউসিবির এটিএম বুথ বন্ধ, গ্রাহকদের চরম দুর্ভোগ

ঈদুল আযহার ছুটি শুরুর প্রথম দিন থেকেই ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের (ইউসিবি) গ্রাহকরা চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন। নেটওয়ার্ক সমস্যার অজুহাতে রাজধানী সহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় ব্যাংকের এটিএম বুথ হঠাৎ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, ফলে নগদ টাকা উত্তোলন করতে না পেরে বিপাকে পড়েছে ব্যাংকটির অসংখ্য গ্রাহক। তেমনি চাঁদপুর শহর ও বাবুরহাট এলাকা ঘুরে অন্য ব্যাংকের এটিএম বুথ খোলা থাকলেও ইউসিবির বুথ বন্ধ পাওয়া গেছে।
জানা গেছে, চাঁদপুর শহর ও বাবুরহাটে ইউসিবির দুটি শাখা রয়েছে। এতে বৃহস্পতিবার সকালে কিছু গ্রহক টাকা উঠাতে পারলেও দুপুর ১টার পর থেকে বন্ধ হয়ে যায় বুথের কার্যক্রম। এতে স্থানীয় গ্রাহক সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নাড়িরটানে গ্রামে ঈদ করতে আসা ঘরমুখো মানুষ গুলো টাকা না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়েছেন। ইউসিবির এটিএম বুথে টাকা না পেয়ে গ্রাহকদের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।
চাঁদপুরের বিভিন্ন এলাকায় ইউসিবির এটিএম বুথে গিয়ে দেখা গেছে, বুথের দরজায় সাঁটানো রয়েছে “ছুটির কয়েকটা দিন এই এটিএম বন্ধ থাকবে” লেখা নোটিশ। এতে যাদের জরুরি নগদ টাকা প্রয়োজন ছিল, তারা চরম বিপাকে পড়েছেন।
ব্যাংকটির অন্য একটি বুথের সামনে সাঁটানো এক নোটিশে লেখা রয়েছে, “পবিত্র ঈদ-উল-আযহা উপলক্ষ্যে আগামী ৫ জুন, বৃহস্পতিবার থেকে ১২ জুন, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ব্যাংক বন্ধ থাকবে। কোর ব্যাংকিং সফটওয়্যার আপগ্রেডেশনের জন্য আগামী ৯ জুন সোমবার থেকে ১৪ জুন শনিবার পর্যন্ত ইউসিবির সকল ব্যাংকিং সেবা সাময়িকভাবে বন্ধ থাকবে”। তবে আগামী ৯ জুন থেকে এটিএম বন্ধ রাখার কথা থাকলেও আজ ৫ জুন থেকেই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে এসব বুথ।
অন্যদিকে ঈদের বন্ধে এটিএম বুথের নিরাপত্তা ও টাকা রাখার বিষয়ে আগাম সতর্কতা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে ঈদের ছুটি শুরুর প্রথম দিন থেকেই টাকা পাওয়া যাচ্ছে না ইউসিবির এটিএম বুথে। বেশির ভাগ ব্যাংক অন্য ব্যাংকের কার্ড দিয়ে টাকা উত্তোলন বন্ধ বা সীমিত করেছে। বিভিন্ন বুথ ঘুরে টাকা তুলতে না পেরে বিড়ম্বনায় পড়ছেন অনেকে।
বাংলাদেশ ব্যাংক গত সোমবার এটিএম বুথ, এমএফএস, ইন্টারনেট ব্যাংকিং, পয়েন্ট অব সেলস, কিউআর কোড ও অনলাইন ই-পেমেন্ট গেটওয়েতে নিরবচ্ছিন্ন সেবা দেওয়ার নির্দেশ দেয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এমন নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও ইউসিবির বুথ বন্ধ করে দেওয়াকে প্রতারণা বলছেন গ্রাহকরা।
ঢাকা থেকে ঈদ উদযাপন করতে আসা মনির হোসেন জানান, টাকা না পেলে সমস্যায় পড়তে হবে। মো. সোহেল আকন টাকা না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। একাধিক গ্রাহক জানান, কোনো আগাম নোটিশ ছাড়াই এভাবে বুথ বন্ধ করে দেওয়ার কারণে বাজার করা, পরিবহন খরচসহ নানা কাজে বিপর্যয় ঘটেছে।
এ ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকেই। গ্রাহকরা দ্রুত সমস্যার সমাধান এবং ভবিষ্যতে এমন পরিস্থিতি এড়াতে আগাম প্রস্তুতির দাবি জানিয়েছেন ইউসিবি কর্তৃপক্ষের প্রতি।
ইউসিবির বুথ বন্ধ করে দেওয়ার বিষয়ে জানতে ইউসিবির ম্যানেজিং ডিরেক্টর (এমডি) মোহাম্মদ মামদুদুর রশিদের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিরি রিসিভ করেননি। এ কারণে তার মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
এবিষয়ে জানতে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খানের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করে তার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তা সম্ভব হয়নি।
অর্থসংবাদ/কাফি
অর্থনীতি
ঈদের আগে রিজার্ভ ছাড়াল ২৬ বিলিয়ন ডলার

রেমিট্যান্সের উচ্চ প্রবৃদ্ধি ও রপ্তানি আয় ইতিবাচক থাকায় বাড়ছে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার মোট মজুত বা রিজার্ভ। বাংলাদেশ ব্যাংকের সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, ৪ জুন পর্যন্ত দেশে বৈদেশিক মুদ্রার মোট বা গ্রোস রিজার্ভ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৬ দশমিক ০৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাব পদ্ধতি বিপিএম-৬ অনুযায়ী, রিজার্ভ বেড়ে হয়েছে ২০ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন ডলার। তবে, ব্যয়যোগ্য রিজার্ভ এখনো ১৬ বিলিয়নের ঘরে রয়েছে।
শুক্রবার (৬ জুন) বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান এসব তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি জানান, রিজার্ভ বৃদ্ধি পাওয়ায় বৈদেশিক লেনদেনে চাপ কমেছে। বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় মূল্য বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়ার পরও ডলারের দাম ১২৩ টাকার মধ্যে স্থিতিশীল রয়েছে। একইসঙ্গে, এখন অনেক ব্যাংক গ্রাহকদের চাহিদা অনুযায়ী ঋণপত্র খুলতে পারছে, যার ফলে পণ্যের সরবরাহ ও দাম স্বাভাবিক অবস্থায় রয়েছে।
এর আগে, গত ৬ মে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) মার্চ ও এপ্রিল মাসের আমদানি বিল বাবদ ১ দশমিক ৮৮৩ বিলিয়ন (১৮৮ কোটি ৩০ লাখ) মার্কিন ডলার পরিশোধ করার পর মোট রিজার্ভ ২৫ বিলিয়ন ডলারে নেমে যায়; বিপিএম-৬ কমে নামে ২০ বিলিয়ন ডলারে।
তারও আগে, ৪ মে মোট রিজার্ভ ছিল ২৭ দশমিক ৩৫ বিলিয়ন ডলার; আর বিপিএম-৬ বা প্রকৃত রিজার্ভ ছিল ২১ দশমিক ৯৭ বিলিয়ন ডলার।
মোট রিজার্ভ থেকে স্বল্পমেয়াদি দায় বিয়োগ করলে নিট বা প্রকৃত রিজার্ভের পরিমাণ পাওয়া যায়। তবে, এর বাইরে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের আরেকটি হিসাব রয়েছে, তা হলো ব্যয়যোগ্য রিজার্ভ। এ তথ্য আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করে না কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সেখানে আইএমএফের এসডিআর খাতে থাকা ডলার, ব্যাংকগুলোর বৈদেশিক মুদ্রা ক্লিয়ারিং হিসাবে থাকা বৈদেশিক মুদ্রা এবং আকুর বিল বাদ দিয়ে ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভের হিসাব করা হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সেই হিসাবে দেশের ব্যয়যোগ্য প্রকৃত রিজার্ভ এখন ১৬ বিলিয়ন ডলার। প্রতি মাসে ৫ বিলিয়ন ডলার হিসেবে এ রিজার্ভ দিয়ে তিন মাসের বেশি আমদানি ব্যয় মেটানো যাবে। সাধারণত একটি দেশের ন্যূনতম ৩ মাসের আমদানি খরচের সমান রিজার্ভ থাকতে হয়।
দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রিজার্ভ উঠেছিল ২০২২ সালের আগস্টে। ওই সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভে ছিল ৪৮ দশমিক শূন্য ৬ বিলিয়ন ডলার। সেখান থেকে প্রতি মাসে কমতে কমতে সরকার পতনের আগে গত জুলাই শেষে তা ২০ দশমিক ৩৯ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছিল। তবে, সরকার পতনের পর আর রিজার্ভ থেকে কোনো ডলার বিক্রি করছে না বাংলাদেশ ব্যাংক।
মূলত, রেমিট্যান্সে প্রবৃদ্ধি ও রপ্তানি আয় বাড়ার কারণেই রিজার্ভ বাড়ছে বলে অভিমত অর্থনীতিবিদদের। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ঈদের আগে চলতি জুন মাসের প্রথম তিন দিনে ৬০ কোটি ৪০ লাখ মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা দেশে পাঠিয়েছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। দেশীয় মুদ্রায় (প্রতি ডলার ১২৩ টাকা) যার পরিমাণ দাঁড়ায় ৭ হাজার ৪২৯ কোটি টাকার বেশি।
এর আগে, গেল মে মাসে প্রবাসীরা দেশে পাঠিয়েছেন ২৯৭ কোটি মার্কিন ডলার, যা দেশের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মাসিক প্রবাসী আয়। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ ছিল ৩৬ হাজার ৫৩১ কোটি টাকারও বেশি।
এছাড়া, চলতি বছরের মার্চ মাসে বৈধপথে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স এসেছে ৩২৯ কোটি ডলার। দেশীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ ৪০ হাজার কোটি টাকার বেশি। একক মাসে এত বেশি পরিমাণ রেমিট্যান্স আগে কখনো আসেনি বাংলাদেশে।
চলতি অর্থবছর ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই থেকে ৩ জুন পর্যন্ত প্রবাসীরা মোট ২ হাজার ৮১১ কোটি ডলার দেশে পাঠিয়েছেন। যা আগের অর্থবছরের তুলনায় প্রায় ২৯ দশমিক ৮০ শতাংশ বেশি। আগের অর্থবছরে একই সময়ে রেমিট্যান্স এসেছিল দুই হাজার ১৬৬ কোটি মার্কিন ডলার।
এদিকে বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ সংকট ও বৈশ্বিক প্রতিকূলতার মধ্যেও পণ্য রপ্তানিতে শক্ত অবস্থান ধরে রেখেছে বাংলাদেশ। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, গেল মে মাসে বাংলাদেশ থেকে ৪৭৩ কোটি ৭৮ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে, যা আগের বছরের একই মাসের তুলনায় ১১ দশমিক ৪৫ শতাংশ বেশি।
এছাড়া ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই থেকে মে— এই ১১ মাসে দেশের মোট পণ্য রপ্তানি আয় দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৪৯৫ কোটি মার্কিন ডলার। যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১০ শতাংশ বেশি।
কাফি
অর্থনীতি
ইউসিবির এটিএম বুথে মিলছে না টাকা, বিপাকে গ্রাহকরা

ঈদুল আযহার ছুটি শুরুর প্রথম দিনেই ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের (ইউসিবি) গ্রাহকরা চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন। নেটওয়ার্ক সমস্যার অজুহাতে ব্যাংকের বেশিরভাগ এটিএম বুথ হঠাৎ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, ফলে নগদ টাকা উত্তোলনে ব্যর্থ হয়েছেন বহু গ্রাহক।
বৃহস্পতিবার (৫ জুন) রাতে রাজধানীর মতিঝিল-দিলকুশা সহ বিভিন্ন এলাকায় ইউসিবির এটিএম বুথে গিয়ে দেখা গেছে, বুথের দরজায় সাঁটানো রয়েছে “ছুটির কয়েকটা দিন এই এটিএম বন্ধ থাকবে” লেখা নোটিশ। এতে যাদের জরুরি নগদ টাকা প্রয়োজন ছিল, তারা চরম বিপাকে পড়েছেন।
ব্যাংকটির আরও একটি বুথের সামনে সাঁটানো এক নোটিশে লেখা রয়েছে, “পবিত্র ঈদ-উল-আযহা উপলক্ষ্যে আগামী ৫ জুন, বৃহস্পতিবার থেকে ১২ জুন, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ব্যাংক বন্ধ থাকবে। কোর ব্যাংকিং সফটওয়্যার আপগ্রেডেশনের জন্য আগামী ৯ জুন সোমবার থেকে ১৪ জুন শনিবার পর্যন্ত ইউসিবির সকল ব্যাংকিং সেবা সাময়িকভাবে বন্ধ থাকবে”। তবে আগামী ৯ জুন থেকে এটিএম বন্ধ রাখার কথা থাকলেও আজ ৫ জুন থেকেই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে এসব বুথ।
অন্যদিকে ঈদের বন্ধে এটিএম বুথের নিরাপত্তা ও টাকা রাখার বিষয়ে আগাম সতর্কতা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে ঈদের ছুটি শুরুর প্রথম দিনেই টাকা পাওয়া যাচ্ছে না ইউসিবির এটিএম বুথে। বেশির ভাগ ব্যাংক অন্য ব্যাংকের কার্ড দিয়ে টাকা উত্তোলন বন্ধ বা সীমিত করেছে। বিভিন্ন বুথ ঘুরে টাকা তুলতে না পেরে বিড়ম্বনায় পড়ছেন অনেকে।
ভুক্তভোগীরা জানান, ঈদের বাজার ও ভ্রমণের ব্যস্ত সময়ে এমন ভোগান্তি তাদের পরিকল্পনা ব্যাহত করেছে। অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আগাম নোটিশ না দিয়ে এমন গুরুত্বপূর্ণ সময় বুথ বন্ধ রাখা গ্রাহকসেবার চরম ব্যর্থতা। এসব ছলচাতুরি ও প্রতারণার ছাড়া কিছুই না।
এ নিয়ে ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন গ্রাহকরা। মতিঝিল এলাকায় একজন গ্রাহক বলেন, “ঈদের ছুটি শুরুর প্রথম দিনেই এমন সংকট মেনে নেওয়া যায় না। টাকা না থাকলে জরুরি কেনাকাটা, যাতায়াত-সব কিছুই বন্ধ হয়ে যায়।” এমন সময়ে এ ধরনের সিদ্ধান্তে ভোগান্তি চরমে উঠেছে। গ্রাহকরা দ্রুত বুথ সচল এবং বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার থেকে টানা ১০ দিনের ছুটি শুরু হয়েছে। বন্ধের মধ্যেও রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় সীমিত পরিসরে কয়েকদিন ব্যাংক চলবে। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশের ১৮টি পশুর হাটসংলগ্ন এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের একটি হাটসংলগ্ন ব্যাংক শাখা গতকাল থেকে ঈদের আগের রাত পর্যন্ত খোলা থাকবে। এ ছাড়া আজ ৫ জুন ঢাকা মহানগর, আশুলিয়া, টঙ্গী, গাজীপুর, সাভার, ভালুকা, নারায়ণগঞ্জ ও চট্টগ্রামের তৈরি পোশাক সংশ্লিষ্ট শাখা এবং ঈদের পর ১১ ও ১২ জুন ওষুধ শিল্পসহ আমদানি, রপ্তানিমুখী শিল্পপ্রতিষ্ঠানের জন্য ঢাকা, চট্টগ্রাম ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক এলাকার বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনকারী শাখা খোলা রাখতে হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংক গত সোমবার এটিএম বুথ, এমএফএস, ইন্টারনেট ব্যাংকিং, পয়েন্ট অব সেলস, কিউআর কোড ও অনলাইন ই-পেমেন্ট গেটওয়েতে নিরবচ্ছিন্ন সেবা দেওয়ার নির্দেশ দেয়।
এবিষয়ে জানতে ইউসিবির ম্যানেজিং ডিরেক্টর (এমডি) মোহাম্মদ মামদুদুর রশিদের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তার মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
এবিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান অর্থসংবাদ’কে বলেন, এটিএম বুথের নিরাপত্তা ও পর্যাপ্ত টাকা রাখার বিষয়ে আগে থেকেই সতর্ক করা হয়েছে। তবে ইউসিবির বুথ বন্ধ থাকার নোটিশের বিষয়ে আমরা অবগত না। ব্যাংককে শাস্তি দেওয়া আমাদের উদ্দেশ্য না। আমাদের উদ্দেশ্য গ্রাহকের সেবা নিশ্চিত করা।
অর্থসংবাদ/কাফি
অর্থনীতি
ঈদের একদিন আগে ফের বাড়ল সোনার দাম

দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম আবারও বাড়ানো হয়েছে। সব থেকে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের এক ভরি (১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রাম) স্বর্ণের দাম দুই হাজার ৪১৪ টাকা বাড়িয়ে নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে এক লাখ ৭২ হাজার ৩৩৫ টাকা।
স্থানীয় বাজারে তেজাবি স্বর্ণের (পাকা স্বর্ণ) দাম বাড়ার পরিপ্রেক্ষিতে এই দাম বাড়ানো হয়েছে। আগামী শুক্রবার (৬ জুন) থেকে নতুন দাম কার্যকর করা হবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস)।
বৃহস্পতিবার (৫ জুন) বাজুস স্ট্যান্ডিং কমিটি অন প্রাইসিং অ্যান্ড প্রাইস মনিটরিং কমিটি বৈঠকে করে এই দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়। পরবর্তীতে কমিটির চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমান সই করা এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এর আগে সর্বশেষ ২২ মে সব থেকে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের দাম দুই হাজার ৮২৩ টাকা বাড়িয়ে এক লাখ ৬৯ হাজার ৯২১ টাকা নির্ধারণ করা হয়। আজ আবারও দাম বাড়ানো হলো।
এর আগে গত সাড়ে চার মাসে ২৪ বার স্বর্ণের দাম বাড়ানো হয়েছে। গত ২২, ১৮, ১৫, ৭, ৯ মে, ২৩, ২২, ২০, ১৭, ১৩, ১১ এপ্রিল, ২৮, ২৬, ১৯, ১৭, ৫ মার্চ ২, ৬, ১১, ১৮ ও ২১ ফেব্রুয়ারি এবং ১৬, ২৩ ও ৩০ জানুয়ারি স্বর্ণের দাম বাড়ানো হয়। তবে দেশের ইতিহাসে ২৪ এপ্রিল সব চেয়ে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের দাম পাঁচ হাজার ৩৪২ টাকা বাড়িয়ে নির্ধারণ করা হয় এক লাখ ৭২ হাজার ৫৪৫ টাকা। যা অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে নতুন উচ্চতায় উঠে স্বর্ণের দাম।
এ ছাড়া গত ১৬, ১৩ ১১, ৯, ৩ মে, ২৪, ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২ ও ৯ মার্চ এবং ৮, ১৪, ২৩ এপ্রিল স্বর্ণের দাম কমানো হয়।
নতুন মূল্য অনুযায়ী, সব থেকে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের দাম দুই হাজার ৪১৪ টাকা বাড়িয়ে নির্ধারণ করা হয়েছে এক লাখ ৭২ হাজার ৩৩৫ টাকা। ২১ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের দাম দুই হাজার ২৯৮ টাকা বাড়িয়ে এক লাখ ৬৪ হাজার ৪৯৭ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
এ ছাড়া ১৮ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের দাম এক হাজার ৯৭১ টাকা বাড়িয়ে এক লাখ ৪০ হাজার ৯৯৪ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর সনাতন পদ্ধতির এক ভরি স্বর্ণের দাম এক হাজার ৬৯১ টাকা বাড়িয়ে এক লাখ ১৬ হাজার ৬৪০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
এদিকে স্বর্ণের দাম বাড়ানো হলেও অপরিবর্তিত রয়েছে রূপার দাম। ২২ ক্যারেটের এক ভরি রুপার দাম দুই হাজার ৮৪৬ টাকা। ২১ ক্যারেটের এক ভরি রুপার দুই হাজার ৭১৮ টাকা। এ ছাড়া ১৮ ক্যারেটের এক ভরি রূপার দাম দুই হাজার ৩৩৩ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির এক ভরি রূপার এক হাজার ৭৫০ টাকা।
এর আগে ২২ মে সব থেকে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের দাম দুই হাজার ৮২৩ টাকা বাড়িয়ে এক লাখ ৬৯ হাজার ৯২১ টাকা, ২১ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের দাম দুই হাজার ৬৯৪ টাকা বাড়িয়ে এক লাখ ৬২ হাজার ১৯৯ টাকা, ১৮ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের দাম দুই হাজার ৩০৯ টাকা বাড়িয়ে এক লাখ ৩৯ হাজার ২৩ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির এক ভরি স্বর্ণের দাম এক হাজার ৯৭২ টাকা বাড়িয়ে এক লাখ ১৪ হাজার ৯৪৯ টাকা নির্ধারণ করা হয়।
কাফি
অর্থনীতি
টানা ১০ দিন বেনাপোল বন্দরে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ

পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে আজ থেকে ১০ দিন বেনাপোল-পেট্রাপোল বন্দরের মধ্যে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। তবে এসময়ে পাসপোর্টধারী যাত্রীদের যাতায়াত স্বাভাবিক থাকবে।
বৃহস্পতিবার (৫ জুন) দুপুরে বিষয়টি নিশ্চিত করেন বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সাজেদুর রহমান।
তিনি বলেন, ঈদুল আজহা উপলক্ষে ৫ জুন থেকে ১৪ জুন পর্যন্ত সরকারি ছুটি থাকায় দুই দেশের মধ্যে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। আগামী ১৫ জুন সকাল থেকে পুনরায় বন্দরের কার্যক্রম শুরু হবে।
এ বিষয়ে বেনাপোল বন্দরের উপ-পরিচালক মামুন কবির তরফদার জানান, মুসলিম সম্প্রদায়ের অন্যতম বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আজহা উপলক্ষে ৫ জুন থেকে ১৪ জুন পর্যন্ত ১০ দিন বেনাপোল-পেট্রাপোল বন্দরের আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। তবে ১৫ জুন সকাল থেকে পুনরায় বাণিজ্যিক কার্যক্রম সচল হবে।
তিনি আরও বলেন, এই সময়ের মধ্যে যাতে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে, সে লক্ষ্যে বন্দর এলাকায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
কাফি