পুঁজিবাজার
ড. আনিসুজ্জামানের কাছে ফোর্স সেল বন্ধসহ বিনিয়োগকারীদের একগুচ্ছ দাবি পেশ

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী কাছে পুঁজিবাজারের উন্নয়নে ফোর্স সেল বন্ধসহ একগুচ্ছ দাবি পেশ করেছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীদের সংগঠনগুলোর নেতারা। একই সঙ্গে পুঁজিবাজার সংক্রান্ত বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের প্রতিনিধির সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৯ মে) দুপুর ১২টায় প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী ও বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের সঙ্গে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় এ দাবি করেছেন বিনিয়োগকারীরা। সভা শেষে সাংবাদিকদের এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন বিএসইসির মুখপাত্র ও পরিচালক মো. আবুল কালাম।
সভায় প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী ও বিএসইসি চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ, বিএসইসির কমিশনার মো. মোহসিন চৌধুরী, মো. আলী আকবর উপস্থিত ছিলেন।
বিএসইসির মুখপাত্র ও পরিচালক মো. আবুল কালাম বলেন, বিনিয়োগকারীরা ফোর্স সেলের কারণে অনেকে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন; ফোর্স সেল কিভাবে বন্ধ করা যায় সেবিষয় তারা কথা বলেছেন।
তিনি আরও বলেন, বিনিয়োগকারীদের সংগঠনগুলোর প্রতিনিধিরা পুঁজিবাজারের বিভিন্ন সমস্যা ও সমাধান নিয়ে আলোচনা করেছেন। এবং ওনাদের কিছু বক্তব্য ও রেকর্ডপত্র ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরীর কাছে হস্থান্তর করেছেন। ব্যাক্তিগতভাবে বক্তব্যের মাধ্যমেও বিশেষ বিষয়গুলো নিয়ে এসেছেন, যেমন ৬১৭টি বিও অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করা, পেনশন ফান্ড এবং লাইফ ফান্ডের টাকা কিভাবে বাজারে এনে তারল্য সৃষ্টি করা যায়; এবিষয় কথা বলেছেন। বাংলাদেশ ব্যাংক এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলোর অধীনে যে ব্যাংকগুলো আছে; তারা কিভাবে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করে তারল্য বাড়াতে পারে সেবিষয় কথা বলেছেন।
সভায় প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারীর কাছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের অপসারণ চেয়েছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীদের সংগঠনগুলোর নেতারা। তাদের দাবি, এরই মধ্যে মাকসুদ কমিশনের অযোগ্য নেতৃত্বে শেয়ারবাজার ধংসের পথে ধাবিত। এ বাজারকে রক্ষা করতে হলে তার অপসারনের বিকল্প নেই। বিনিয়োগকারীরা শেয়ারবাজারের চলমান শোচণীয় অবস্থার জন্য বিএসইসির চেয়ারম্যানের অযোগ্যতা প্রধান দায়ী করেছেন।
বিনিয়োগকারীরা বলেন, মাকসুদ শেয়ারবাজার বুঝেন না। এটা শুধু সাধারন বিনিয়োগকারীদের কথা না। এই কথা এখন বিএসইসির সাবেক স্বনামধন্য চেয়ারম্যানসহ স্টেকহোল্ডারদের। তাই মাকসুদের অপসারন করা উচিত।
বাংলাদেশ ক্যাপিটাল মার্কেট ইনভেস্টর এসোসিয়েশনের নেতাদের দাবি, পুঁজিবাজারে প্রতিদিন যেভাবে রক্তক্ষরণ হচ্ছে, তা কোনভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। এভাবে চলতে থাকলে শেয়ারবাজার নামের খাতটি মাটির সাথে মিশে যাবে। এ খাতের সংশ্লিষ্টরা নিংশ্ব হয়ে যাবেন। শেয়ারবাজারের সাথে জড়িত মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকারেজ হাউজগুলোও অনেক ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। এভাবে অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এতে করে চাকরী হারিয়ে বেকার হয়ে পড়ছেন অনেকে।
বিএসইসি জানিয়েছে, বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের টেকসই উন্নয়ন ও সংস্কারের জন্য বিএসইসি নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। বিএসইসির সাথে সাথে বর্তমান সরকারও দেশের পুঁজিবাজারের টেকসই উন্নয়ন ও সংস্কারের বিষয়ে অত্যন্ত আন্তরিক। পুঁজিবাজারের অংশীজনদের মতামত এবং তাদের সাথে নিয়েই বাজারের টেকসই উন্নয়ন ও সংস্কার বাস্তবায়ন সম্ভব বলে মনে করে বিএসইসি। সংস্কারের চলমান প্রক্রিয়া অনুসরণ করে দেশের পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট সকলের মতামত, অংশগ্রহণ ও সহযোগিতায় একটি স্বচ্ছ ও সমৃদ্ধ পুঁজিবাজার গড়ে তুলতে বিএসইসি বদ্ধপরিকর।
এর আগে গত ১১ মে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনায় পুঁজিবাজার উন্নয়ন ও শক্তিশালীকরণের লক্ষ্যে পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বৈঠকে পুঁজিবাজার নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা ৫টি নির্দেশনা দিয়েছে, সেগুলো হলো- সরকারের মালিকানা রয়েছে এমন মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিগুলোকে সরকারের শেয়ার কমিয়ে পুঁজিবাজারে অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ; বেসরকারি খাতের দেশীয় বড় কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত করার ক্ষেত্রে উৎসাহিত করতে প্রনোদনাসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ; স্বার্থান্বেষী মহলের কারসাজি রুখতে বিদেশি বিশেষজ্ঞদের নিয়ে এসে তিন মাসের মধ্যে পুঁজিবাজার সংস্কার করা; পুঁজিবাজারে অনিয়মের সঙ্গে জড়িতদের প্রত্যকের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ; এবং বড় ধরনের ঋণ প্রয়েজন এমন ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলোকে ব্যাংক ঋণ নির্ভরতা কমিয়ে পুঁজিবাজার থেক বন্ড ও ইক্যুইটির মাধ্যমে তহবিল সংগ্রহে আগ্রহী করে তোলার ব্যবস্থা গ্রহণ।
এদিকে নিয়ন্ত্রক সংস্থার বর্তমান রাশেদ মাকসুদ কমিশন কোনভাবেই বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা ফিরিয়ে আনতে পারছেন না। গত ৮ মাস যাবৎ রাশেদ মাকসুদের অপসারণের দাবিতে বিনিয়োগকারীরা আন্দোলন করলেও অর্থ উপদেষ্টা এর আসকারায় রাশেদ মাকসুদ ক্রমেই বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। সংস্কারের নামে শেয়ারবাজারে পতন অব্যাহত রাখতে বর্তমান কমিশন সব ধরণের আয়োজন করে রেখেছে বলেই অভিযোগ তুলছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।
উল্লেখ্য, এই মাকসুদের অপসারনের দাবিতে শেয়ারবাজারের সব শ্রেণীর বিনিয়োগকারীরা একমত। এরইমধ্যে তাকে অপসারনের দাবিতে রাজপথে কাফন ও কফিন মিছিল করেছে বিনিয়োগকারীরা।
কাফি

অর্থনীতি
আয়করে অর্ধশতাধিক পরিবর্তন: পুঁজিবাজার বিকাশেও প্রস্তাব

আসন্ন বাজেটে আয়কর খাতে অর্ধশতাধিক পরিবর্তনের প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে কিছু ক্ষেত্রে কর বাড়ছে, আবার কিছু ক্ষেত্রে কমছে। ব্যক্তির করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়ানো এবং পাঁচ শতাংশ করের স্ল্যাব তুলে দেওয়ার মতো পরিবর্তন আনা হচ্ছে। করদাতার ওপর চাপ কমানো এবং পুঁজিবাজারের বিকাশেও বেশ কিছু ইতিবাচক প্রস্তাব থাকছে।
ব্যবসা ও বিনিয়োগের জন্য ক্ষতিকর বলে বিবেচিত কর আইনের বিভিন্ন বিষয়ে বিশেষজ্ঞ ও খাত সংশ্লিষ্টরা প্রাক-বাজেট আলোচনায় আপত্তি তুলেছিলেন। সেই আপত্তিগুলো বিবেচনায় নিয়ে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বাজেটে বেশ কিছু ইতিবাচক প্রস্তাব করবেন বলে জানা গেছে। পাশাপাশি কর আদায় বাড়ানোর জন্যও কিছু প্রস্তাব থাকবে।
ব্যক্তিগত আয়করে পরিবর্তন: ব্যক্তির করমুক্ত আয়ের সীমা ২৫ হাজার টাকা বাড়িয়ে ৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা করা হচ্ছে। অন্যদিকে, জুলাই যোদ্ধাদের করমুক্ত আয়ের সীমা হচ্ছে ৫ লাখ ২৫ হাজার টাকা। ব্যক্তির কর নির্ধারণেও পরিবর্তন আসছে: ৫ শতাংশের কর স্ল্যাব বাতিল হচ্ছে, ফলে করের হার হবে আয়ের ১০ থেকে ৩০ শতাংশ। অঞ্চলভেদে ন্যূনতম করের বিধান বাতিল করে সারা দেশে সবার জন্য ন্যূনতম আয়কর ৫ হাজার টাকা করা হচ্ছে। নতুন করদাতাদের উৎসাহ দিতে ন্যূনতম কর ১ হাজার টাকা করা হবে।
পুঁজিবাজারের জন্য প্রস্তাবনা: শেয়ারবাজার সংক্রান্ত বেশ কিছু প্রস্তাব থাকছে বাজেটে, যা বাজারকে টেকসই ও গতিশীল করতে সাহায্য করবে। মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর কর সাড়ে ৩৭ শতাংশ থেকে কমিয়ে সাড়ে ২৭ শতাংশ করা হচ্ছে। তালিকাভুক্ত কোম্পানির কর্পোরেট কর ২২.৫ শতাংশই থাকছে, তবে এর কঠোর শর্ত শিথিল করা হচ্ছে। এই সুবিধা পেতে হলে শুধু আয় ব্যাংকের মাধ্যমে হতে হবে। এছাড়া ব্রোকারেজ হাউজের উৎসে কর কমিয়ে ০.০৩ শতাংশ করা হচ্ছে।
অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন:
- কোম্পানি ও করদাতাদের দাবি মেনে নিয়ে অতিরিক্ত কর পরের বছরগুলোতে সমন্বয় করার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে।
- কৃষি আয় ৫ লাখ টাকার বেশি হলে কর আরোপ করা হবে।
- বেসরকারি চাকরিজীবীদের করমুক্ত ব্যয় ৫০ হাজার টাকা বাড়ছে এবং পারকুইজিট সীমা দ্বিগুণ হচ্ছে।
- বাবা-মা, স্বামী-স্ত্রীর পাশাপাশি আপন ভাই-বোনের মধ্যে দানও করমুক্ত হচ্ছে।
উৎসে কর ও আমদানি শুল্কে পরিবর্তন:
- ঠিকাদারের উৎসে কর ২ শতাংশ কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হচ্ছে।
- কৃষিপণ্য সরবরাহে উৎসে কর অর্ধেক হচ্ছে।
- জমি বিক্রিতে ক্যাপিটাল গেইন ট্যাক্স ৫ শতাংশ কমিয়ে ১৩ শতাংশ করা হচ্ছে।
- তবে, ১৫২টি পণ্য আমদানিতে ২ শতাংশ অগ্রিম আয়কর আরোপ করা হচ্ছে।
- ইন্টারনেট সেবার উৎসে কর কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হচ্ছে এবং সিগারেট কোম্পানির উৎসে কর বাড়িয়ে ৫ শতাংশ করা হচ্ছে।
- মোবাইল অপারেটরদের টার্নওভার কর কমিয়ে দেড় শতাংশ করা হচ্ছে।
- রিসাইকেল শিল্প, গ্যাস বিতরণ, তেল পরিশোধনাগার, বিদ্যুৎ কেনায় উৎসে কর কমানো হচ্ছে।
কর অব্যাহতি ও রিটার্ন সংক্রান্ত পরিবর্তন:
- মৎস্য ও পোল্ট্রি খাতের কর অব্যাহতি বাতিল করা হচ্ছে, তবে প্রান্তিক খামারিদের উৎসাহ দিতে এ খাতের ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত আয় করমুক্ত থাকবে।
- সরকারি কিছু প্রতিষ্ঠানকে রিটার্ন দেওয়ার বাধ্যবাধকতা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হচ্ছে।
- উৎসে করের রিটার্ন প্রতিমাসের পরিবর্তে তিন মাস পরপর দিতে হবে।
- ক্রেডিট কার্ড পাওয়াসহ ১২টি সেবা পেতে রিটার্ন জমার প্রমাণ দেখানোর শর্ত শিথিল করা হচ্ছে; কর নিবন্ধন থাকলেই মিলবে এসব সেবা।
পুঁজিবাজার
লোকসানে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক পিএলসি গত ৩১ মার্চ,২০২৫ তারিখে সমাপ্ত প্রথম প্রান্তিকের (জানুয়ারি’২৫-মার্চ’২৫) অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। গত বছরের একই সময়ে শেয়ারপ্রতি মুনাফা হলেও আলোচ্য প্রান্তিকে কোম্পানিটির লোকসান হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৯ মে) অনুষ্ঠিত ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদের বৈঠকে আলোচিত প্রান্তিকের আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা ও অনুমোদনের পর তা প্রকাশ করা হয়। কোম্পানি সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।
সূত্র মতে, চলতি হিসাববছরের প্রথম প্রান্তিকে সমন্বিতভাবে ব্যাংকটির শেয়ার প্রতি ৪ টাকা ৭৬ পয়সা লোকসান হয়েছে। গত বছর একই সময়ে সমন্বিতভাবে ৩০ পয়সা আয় হয়েছিল।
আলোচিত সময়ে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি অর্থের প্রবাহ বা ক্যাশ-ফ্লো ছিলো মাইনাস ১৭ টাকা ৮০ পয়সা। আগের বছরে যা ছিলো মাইনাস ১৮ টাকা ৫৩ পয়সা।
গত ৩১ মার্চ,২০২৫ তারিখে সমন্বিতভাবে ব্যাংকটির শেয়ার প্রতি নিট সম্পদ মূল্য (এনএভিপিএস) ছিল ১১ টাকা ৬৪ পয়সা।
এসএম
পুঁজিবাজার
লভ্যাংশ সংক্রান্ত তথ্য জানালো এনআরবি ব্যাংক

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংক খাতের কোম্পানি এনআরবি ব্যাংক পিএলসি গত ৩১ ডিসেম্বর,২০২৪ তারিখে সমাপ্ত হিসাববছরের জন্য লভ্যাংশ সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত জানিয়েছে। কোম্পানিটি আলোচিত বছরের জন্য শেয়ারহোল্ডারদের কোনো লভ্যাংশ দেবে না।
বৃহস্পতিবার (২৯ মে) অনুষ্ঠিত ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদের বৈঠকে সর্বশেষ হিসাববছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা ও অনুমোদনের পর লভ্যাংশ সংক্রান্ত এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ব্যাংক সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।
সূত্র মতে, সমাপ্ত ২০২৪ সালে সমন্বিতভাবে ব্যাংকটির শেয়ার প্রতি ১১ পয়সা আয় হয়েছে। আগের বছর শেয়ার প্রতি ১ টাকা ৩৫ পয়সা আয় হয়েছিল।
সর্বশেষ বছরে সমন্বিতভাবে শেয়ার প্রতি ক্যাশ ফ্লো ছিল ৬ টাকা ৫৯ পয়সা, যা আগের বছর ৫ টাকা ৪ পয়সা ছিল।
গত ৩১ ডিসেম্বর,২০২৪ তারিখে সমন্বিতভাবে ব্যাংকটির শেয়ার প্রতি নিট সম্পদ মূল্য (এনএভিপিএস) ছিল ১১ টাকা ৬৬ পয়সা।
আগামী ২১ সেপ্টেম্বর, রোববার সকাল ১১টায় হাইব্রিড পদ্ধতিতে ব্যাংকটির বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) অনুষ্ঠিত হবে। এর জন্য রেকর্ড তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে ২১ জুলাই।
এসএম
পুঁজিবাজার
লোকসানে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংক খাতের কোম্পানি সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক পিএলসি গত ৩১ মার্চ,২০২৫ তারিখে সমাপ্ত প্রথম প্রান্তিকের (জানুয়ারি’২৫-মার্চ’২৫) অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। গত বছরের একই সময়ে শেয়ারপ্রতি মুনাফা হলেও আলোচ্য প্রান্তিকে কোম্পানিটির লোকসান হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৯ মে) অনুষ্ঠিত ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদের বৈঠকে আলোচিত প্রান্তিকের আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা ও অনুমোদনের পর তা প্রকাশ করা হয়। কোম্পানি সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।
সূত্র মতে, চলতি হিসাববছরের প্রথম প্রান্তিকে ব্যাংকটির সমন্বিত শেয়ারপ্রতি ১ টাকা ৪১ পয়সা লোকসান হয়েছে। গত বছর একই সময়ে সমন্বিতভাবে ১৭ পয়সা আয় হয়েছিল।
আলোচিত সময়ে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি অর্থের প্রবাহ বা ক্যাশ-ফ্লো ছিলো মাইনাস ২১ টাকা ১৯ পয়সা। আগের বছরে যা ছিলো মাইনাস ৭৮ পয়সা ছিল।
গত ৩১ মার্চ,২০২৫ তারিখে সমন্বিতভাবে ব্যাংকটির শেয়ার প্রতি নিট সম্পদ মূল্য (এনএভিপিএস) ছিল ১৬ টাকা ৭৪ পয়সা।
এসএম
পুঁজিবাজার
রাশেদ মাকসুদ কমিশনের অযোগ্যতার ভয়াবহ তথ্য আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও

পুঁজিবাজারে ধারাবাহিক দরপতন অব্যাহত আছে। এতে পুঁজি হারিয়ে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। গত বছরের জুলাই-আগস্টে গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর পুঁজিবাজারে গতিশীলতা ফিরে আসার প্রত্যাশায় ফের সক্রিয় হন বিনিয়োগকারীরা। তবে, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ দায়িত্ব নেওয়ার দীর্ঘ ৯ মাসেও তা দৃশ্যমান না হওয়া আশাহত বিনিয়োগকারীরা। ফলে কমিশনের ওপর আস্থাহীনতায় পুঁজিবাজার ছাড়ছেন বিনিয়োগকারীরা। এছাড়াও, রাশেদ মাকসুদ দায়িত্ব নেওয়ার পর স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে কমিশনের দূরত্ব হয়েছে। ফলে কমিশনের ওপর আস্থা হারিয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কমিশনকে উৎখাত করতে আন্দোলন করেছে। যে কমিশনকে বাজারের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, সেই কমিশন নিজের শৃঙ্খলাই ফিরিয়ে আনতে পারেনি।
দীর্ঘদিন ধরে দেশের গণমাধ্যমগুলো রাশেদ মাকসুদ কমিশনের অযোগ্যতার এমন সব তথ্য তুলে ধরে আসছে। এবার জার্মানভিত্তিক গণমাধ্যম ডয়চে ভেলেতে এ ভয়াবহ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
২০১৬ সালের ২০ জুন পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীর সংখ্যা ছিলো ৩২ লাখ ৭৬৬ জন। আর গত বছরের ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের দিন পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারী ছিল ১৬ লাখ ৬৮ হাজার ৮৯৫ জন। তবে গত ২৫ মে এই সংখ্যা কমে ১৬ লাখ ৯০ হাজার ২২৭ জনে দাঁড়িয়েছে। গত বছরের ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে সরকার পতনের পর তিন দিন দেশে কোনো সরকার ছিল না। নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন হতে যাচ্ছে-এমন খবরে পুঁজিবাজারের সূচক বেড়েছিল। কিন্তু সরকার গঠনের পর থেকে আবার তা কমতে থাকে।
বাংলাদেশ ক্যাপিটাল মার্কেট ইনভেস্টর অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এস এম ইকবাল হোসেন বলেন, পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীরা ভাষাহীন হয়ে গেছে। গত ১৫ বছরের পুঁজিবাজারকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করা হয়েছে। মুহাম্মদ ইউনুস সরকার গঠনের পর মানুষ আশা করেছিল পুঁজিবাজার ভালো হবে। গত ৫ আগস্টের পর যখন কমিশনে চেয়ারম্যান ছিলেন না তখন ইনডেক্স ভালো বেড়েছিল। আমরা ধারণা করেছিলাম পুঁজিবাজার এভাবেই চলবে এবং বিনিয়োগকারীরা তাদের পুঁজি ফিরে পাবেন।
বিএসইসি চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের সমালোচনা করে ইকবাল হোসেন বলেন, মার্কেটের ধারাবাহিক পতন এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে পুঁজিবাজারে আস্থা ফিরিয়ে আনার পরিবর্তে বিনিয়োগকারীরা আরও আস্থা হারিয়েছে। তিনি দায়িত্বে নেওয়ার পর পুঁজিবাজারের সূচক ১২০০ পড়ে গেছে। পুঁজিবাজার থেকে ১ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকার মতো ক্যাপিটাল লস হয়েছে।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের ব্রোকারেজদের সংগঠন ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিবিএ) সভাপতি সাইফুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, কনফিডেন্সের অভাবে বিনিয়োগকারীদের ধরে রাখা যাচ্ছে না। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর ২০ শতাংশ ইনডেক্স হারিয়েছি।
মোবারক হোসেন নামে এক সাধারণ বিনিয়োগকারী জার্মানভিত্তিক গণমাধ্যমকে বলেন, দেড় বছর আগে একটি শেয়ার ৩৪৪ টাকায় কিনেছিলাম। ফ্লোর প্রাইজ তোলার আগেও দাম ছিল ২৩৭ টাকা। এখন এই শেয়ারের দাম নেমে এসেছে ৬৭ টাকায়। জিপিএইচ ইস্পাতের ফ্লোর প্রাইজ ৩৪ টাকা থাকলে এর দাম এখন ১৭ টাকা ৬০ পয়সায় নেমেছে। আমার কেনা সব শেয়ারের দাম তলানিতে নেমেছে। আমরা পরিচিত একজনের এক কোটি টাকার শেয়ার আছে, তিনি এখন ২০ লাখও পাবেন না। সবই লুটপাট হয়ে গেছে।
শরিফুল ইসলাম নামে আরেক বিনিয়োগকারী বলেন, সাইফ পাওয়ারের ৩০ টাকার শেয়ারের দাম এখন ৭ টাকা। ভালো-মন্দ সব শেয়ারের দামই কমেছে। আমার যতগুলো শেয়ার আছে সবগুলোর দাম কমেছে, আমি এখন অনেকটা নিঃস্ব। সামনে কি আছে তা কেউ বলতে পারবে না।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সামনে ঢাকার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মোতালেব হোসেন বলেন, আগের সরকার শেয়ারবাজারে লুটপাট করেছে। কিন্তু এই সরকারের যাওয়ার সময় ঘনিয়ে এলেও তারা শেয়ারবাজার ঠিক করেনি। কে ক্ষমতায় থাকবে আর কে ক্ষমতায় থাকবে না সেটি দেখে বড় বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগ করবে না, এটাই স্বাভাবিক। এই সরকার আর কতদিন ক্ষমতায় থাকবে তা কেউ বলতে পারছে না।
অভিযোগ রয়েছে, আওয়ামী লীগ সরকারের সময় পুঁজিবাজারে নতুন কোম্পানি তালিকাভুক্তিতে কারসাজি হলেও তখনকার নিয়ন্ত্রণ কমিশন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এখন এসব কোম্পানির প্রকৃত অবস্থা সামনে আসার পর সেগুলোর শেয়ারের দাম পড়ে গেছে। অন্যদিকে ভালো কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দামও প্রতিনিয়ত কমছে।
কমিশন সূত্র জানায়, কোম্পানি তালিকাভুক্তি থেকে শুরু করে পুঁজিবাজারে বিভিন্ন কারসাজির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বিগত কমিশনের সময় অভিযোগ দাখিল করা হয়। কিন্তু ওই কমিশন তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের একজন কর্মকর্তা বলেন, বর্তমান কমিশন আগের অভিযোগের বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ায় বাজারে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। নতুন করে বড় বিনিয়োগকারীরা আর আসছে না। আগে যারা বিনিয়োগ করেছিলেন তারাও সরে যাচ্ছেন। বিনিয়োগকারীদের মনে ভয় ধরেছে। বাজারে তার প্রভাব পড়েছে। আগে বাজার চাঙা করে নিয়ন্ত্রণ কমিশন এসবে হাত দিলে ভালো হতো।
এরআগে, রাশেদ মাকসুদের অপসারণ দাবিতে দীর্ঘদিন ঘরে আন্দোলন করে আসছে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। পুঁজি হারিয়ে নিঃস্ব সাধারণ বিনিয়োগকারীরা বহু বার প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে। রাশেদ কমিশনে আস্থা না পেয়ে তাঁর পদত্যাগের দাবিতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির কার্যালয়ের মূল গেটে তালা ঝুলিয়ে দেয় বিনিয়োগকারীরা। এছাড়াও, তার অপসারণের দাবিতে কফিন ও কাফন মিছিল করেছে ক্ষতিগ্রস্ত বিক্ষুদ্ধ বিনিয়োগকারীরা।
এসএম