Connect with us

মত দ্বিমত

আসুন দেশ গড়ার আগে নিজেকে গড়ি

Published

on

খুলনা পাওয়ার

যদি একটি জাতির খারাপ হতে ৫৪ বছর লাগে, তাহলে এক বছরে কীভাবে ভালো হওয়া সম্ভব? যদি বাংলাদেশের মানুষ সত্যিকার অর্থে দুর্নীতিমুক্ত, সৎ, সুশিক্ষিত, ন্যায়পরায়ণ এবং সৃজনশীল হতে চায়, তবে সেটা কি মাত্র এক বছরের মধ্যে সম্ভব? প্রকৃত সত্য হলো—৫৪ বছরের দুর্নীতির আগুন এক বছরে নিভিয়ে ভালো কিছু করা যায় না।

বর্তমান বাস্তবতা হলো, গত ৯ মাসে একজন নেতাকর্মীও বুকে হাত রেখে বলতে পারবে না যে, তারা কোনো ভালো কাজ করেছে। যেখানে ড. ইউনূসের মতো একজন বিশ্ববিখ্যাত ব্যক্তি তার পুরো সময় (৯ মাস) এক উন্নত বাংলাদেশ গড়ার প্রচেষ্টায় নিয়োজিত রেখেছেন, সেখানে কোনো রাজনৈতিক দলের কোনো নেতাকে দেখি না, যিনি মন থেকে তার প্রচেষ্টাকে সমর্থন কিংবা সহায়তা করেছেন। তাদের পক্ষ থেকে ভালো কিছু করার কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপও চোখে পড়েনি।

আমি মনে করি, যতদিন ড. ইউনূস সুস্থ আছেন, আমাদের তার প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা উচিত এবং তার ন্যায়পরায়ণতা, ম্যানেজমেন্ট কৌশল ও গ্রহণযোগ্যতা থেকে শেখা উচিত। একই সঙ্গে, দেশের সমস্ত দুর্নীতিবাজ ও অপকর্মীদের চিহ্নিত করা জরুরি। শুধু আওয়ামী লীগের পেছনে সময় নষ্ট না করে, বিএনপি, জামায়াতসহ অন্যান্য দলের সন্ত্রাসী ও দুর্নীতিবাজদেরও বিচারের আওতায় আনুন। তারপর নিরপেক্ষ নির্বাচন করুন—তখন সফলতা আসবে। না হলে, ‘যে লাউ, সে কদু’—আজ এই মুহূর্তে লিখে রাখুন, আমি বলছি।

বিএনপি নানা কৌশলে নির্বাচন নিয়ে দেশবাসীকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। এর পেছনে কী কূটনৈতিক ষড়যন্ত্র বা গোপন উদ্দেশ্য রয়েছে—কেউ কি তা খুঁজে দেখেছে? নাকি সবাই চোখ বন্ধ করে নাটক দেখে চলেছে? আওয়ামী লীগের দীর্ঘ দিনের দুর্নীতি, লুটপাট ও দুঃশাসনের ফলেই ৫ই আগস্টে স্বৈরাচারের পতন ঘটেছে।

নেতাকর্মীরা দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছে, অথচ রাষ্ট্রের মূল চাবিকাঠি এখনো তাদের হাতে। রাষ্ট্রপতি থেকে শুরু করে প্রশাসনের প্রতিটি স্তরে আজও আওয়ামী লীগের বিষাক্ত শেকড় ছড়িয়ে আছে। তাহলে প্রশ্ন আসে—যারা আওয়ামী লীগের সমর্থক ছিল, তাদের রাজনীতি করতে বাধা দেওয়া কেন? কেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এ বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা দিচ্ছে না? আজ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মাঠে নেই, তবুও দুর্নীতি, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি আগের চেয়েও বেড়েছে। যদি এই লুটেরা কর্মকাণ্ড বন্ধ না হয়, তাহলে প্রশ্ন থেকেই যায়—স্বৈরাচারের পতনের নামে এই নাটক কেন মঞ্চস্থ হলো?

কে কার সঙ্গে প্রহসন করছে?
আজকের বাস্তবতায় চোখ মেললেই দেখা যায়—লুটপাট বেড়েছে, অনিয়ম চরমে উঠেছে, দুর্নীতি দানবের মতো মাথা তুলেছে। রাস্তা দখল করা সেই ছাত্ররা আজ দেশের ক্ষতিগ্রস্ত সন্ত্রাসী খেলোয়াড়ে পরিণত হয়েছে। তাহলে কোথায় গেল দেশপ্রেম? কোথায় সেই ত্যাগের চেতনা? সত্যি কথা হলো—এত রক্ত, এত বিসর্জন—সবকিছু কি ছিল শুধু দুর্নীতির পালাবদলের জন্য? পৃথিবী তো ভুলে যায়নি—জনগণ কি আবারও প্রতারিত হলো? আওয়ামী লীগ অতীতে ভারতের দালালি করে ক্ষমতায় টিকে ছিল। আজ বিএনপি-জামাতও ভারতের তল্পিবাহক হতে মরিয়া।

ঘটনা কী? উদ্দেশ্য কী? নাকি দেশ বিক্রির হাট বসেছে?
ড. ইউনূসের মতো একজন স্বাধীন মেরুদণ্ডসম্পন্ন নেতা থাকার কারণেই তারা পুরোপুরি ভারতের গোলামী করতে পারছে না—এটাই তাদের আসল ব্যথা। তাই তারা হাওয়া গরম করে দ্রুত নির্বাচন চাইছে। আমি শেখ হাসিনার আমলেও প্রবাস থেকে লিখতাম। তখনও সব লেখা ছাপা হতো না, তবে অন্তত ৬০% অপ্রিয় সত্য আলো দেখতে পেত। আর এখন? ৩০% লেখাও প্রকাশ পায় না, আর যদি প্রকাশিত হয়, সেটিও উঠিয়ে নেওয়া হয়।

বিশ্বাস না হলে, কালবেলা পত্রিকা দেখুন। তাই, কেউ এসে আমাকে বুঝিয়ে লাভ নেই— আওয়ামী লীগের পতনের পর বাংলাদেশ স্বর্গ হয়ে গেছে—না, হয়নি। আর এভাবে হবে না। ড. ইউনূসের মতো ন্যায়বান নেতার নেতৃত্বে যদি সত্যিকারের দেশপ্রেমিক শক্তি একত্রিত হতো, তবে পরিবর্তন সম্ভব ছিল।কিন্তু আজ বাংলাদেশের মাটি সেই মনমানসিকতা হারিয়ে ফেলেছে।

আজ রাজনীতি মানে দুর্নীতির নতুন মোড়ক, দেশপ্রেম মানে লুটপাটের নতুন লাইসেন্স। এখনো সময় আছে—যারা সত্যিকারে বাংলাদেশকে ভালোবাসো, তারা জেগে ওঠো। নইলে, এই মাতৃভূমি দুর্বৃত্তদের হাতে বিক্রি হয়ে যাবে—চিরতরে। যদি আমার কথা মনে ধরে, তবে আসুন, সবাই মিলে একবার হলেও মন থেকে শতভাগ চেষ্টা করি। দেখবেন—সুজলা-সুফলা শস্যশ্যামলা এই বাংলাদেশে প্রকৃতির অফুরন্ত সম্পদ আমাদের জীবনকে কীভাবে সমৃদ্ধ করতে পারে, তা উপলব্ধি করতে পারবেন।

দেশে উল্লেখযোগ্য কোনো খনিজ সম্পদ না থাকলেও আছে পদ্মা, মেঘনা, যমুনার প্রবাহিত জীবনরক্ত। নদীর পানি আমাদের মাটি উর্বর করে তুলেছে, যার ফলশ্রুতিতে ধান, পাট, শাক-সবজি, ফলমূলসহ শতধরনের ফসল জন্মায়। ইলিশ, সুপারি, নারিকেল, ধান, বিভিন্ন রবিশস্য—এসবই আমাদের প্রধান সম্পদ। এগুলোর দিকেই নজর দিন।

আমরা বিশাল জনগোষ্ঠীর দেশ। এই জনগণকে চোর বানাবেন না, মানুষ বানান। তখনই গোটা বিশ্বের কাছে আমাদের গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে। গরুর মতো ‘নির্বাচন, নির্বাচন’ বলে অকারণে জাগর কেটে সময় নষ্ট না করে, বাস্তবভিত্তিক কাজ করুন। পারস্পরিক সহায়তায় এগিয়ে চলুন। দেখবেন, আমরা সকলেই ভালো থাকবো।

সর্বোপরি, নতুন প্রজন্মের কাছে বলি:
আমি চল্লিশ বছর দেশের বাইরে থেকেও দেশের অন্নের অপচয় করিনি। সর্বদা চেষ্টা করেছি একজন সৎ, নিষ্ঠাবান, সৃজনশীল মানুষ হিসেবে দেশের জন্য কিছু ভালো করতে। কখনো কোনো রিটার্ন আশা করিনি, এমনকি দেশে ফিরি না। আমি যখন পারি, তোমরাও পারবে। কারণ, তোমরাই তো দেশের সব সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছো—তোমাদের তো আমার চেয়ে বেশি দরদ থাকা উচিত, তাই না? আমি দেশের মালিক। আমার অধিকার তোমাদের হাতে তুলে দিয়েছি। বিনিময়ে শুধু একটাই আশা—তোমরা ভালো হয়ে যাও। এবার, নিজেদের সংশোধন করে দেশটাকে গড়তে হবে—কারণ দেশটা আমাদের সকলের।

লেখক: রহমান মৃধা, সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন

শেয়ার করুন:-
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

মত দ্বিমত

এতো দেখছি নতুন বোতলে পুরনো মাদক!

Published

on

খুলনা পাওয়ার

‘ভারত থাকলে আমি থাকব, যা খুশি তাই করব’—এই মানসিকতা নতুন নয়। ‘দেশ পরে, আমি আগে’—এমন আত্মকেন্দ্রিকতা আমরা ইতিহাসে বহুবার দেখেছি। ৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধেই তো আমরা দেখেছি—কারা জীবন হাতে নিয়ে রাস্তায় নেমেছে, আর কারা দেশ ছেড়ে পালিয়েছে। আজ যখন দেখি শেখ পরিবারের নাম করে দেশপ্রেমের নাটক চলছে, তখন প্রশ্ন জাগে—সত্যিই কারা এই দেশের হয়ে লড়েছিল?

একদা পাকিস্তানি সরকার আমাদের সম্পদ লুটে নিয়ে যেত—এটা ছিল ভয়াবহ। আজ শেখ হাসিনার সরকার একই কায়দায় দেশের অর্থ পাচার করে বিদেশে বানিয়েছে ‘বেগমপাড়া’। তফাৎ কোথায়? তখন নাম ছিল পাকিস্তান, আজ নাম ‘গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ’। আর যখন এই চক্রের সদস্যরা পালিয়ে যায়, তখন বারবার প্রশ্ন জাগে—আসল রাজাকার কারা? যারা যুদ্ধ করেনি? নাকি যারা নিরাপদ আশ্রয়ে থেকে পরে দেশটাকে পণ্য বানিয়ে বিদেশে চলে গেছে?

একটি সত্য চাপা পড়লে ইতিহাস বিকৃত হয়। ‘আওয়ামী লীগ’ নামে যে দলটি একদিন গণমানুষের শক্তি ছিল, আজ কি সেটিই এই লুটেরা চক্র? না, একেবারেই নয়। আমরা যারা ছিলাম—যুদ্ধ করেছি, মিছিল করেছি, রাস্তায় ছিলাম—আমরাও তো আওয়ামী লীগেরই অংশ ছিলাম। কিন্তু সেই দল আর এই দল এক নয়। সবার পলায়ন ঘটেনি। আমরা রয়ে গিয়েছিলাম, লড়াই করেছি, আজও দেশেই আছি—কাজ করে যাচ্ছি।

আমরা রাজনীতি করি না, গুণ্ডামি করি না, চাঁদাবাজিও না। আমরা দেশ গড়ি, মানুষের জন্য কাজ করি। আমরা Good for Nothing নই—আমরা দেশের ভিতরে Good for Everything।

তাই আমাদের বক্তব্য পরিষ্কার:
অপরাধী অপরাধীই—সে যেই দলের হোক না কেন। সে আওয়ামী লীগ হোক, বিএনপি, জামাত, শিবির বা অন্য যেকোনো দল—আইনের শাসনের আওতায় তার বিচার হতেই হবে। কিন্তু আওয়ামী লীগ নামের ট্যাগ থাকলেই সাধারণ মানুষকে দমন করা, নির্যাতন চালানো—এটা চলতে পারে না।

৭০ শতাংশ মানুষ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ছিল—তারা সক্রিয়ভাবে যুদ্ধে অংশ নিয়েছে, দেশ স্বাধীন করেছে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, যারা যুদ্ধে ছিল না—তারাই এখন রাষ্ট্রের মালিক হয়ে বসে আছে। আর যারা ছিল, যারা লড়েছিল, রক্ত দিয়েছিল—তারা এখনো উপেক্ষিত।

দেখা যাচ্ছে, যারা দেশেই থেকে গিয়েছে, তারা হয়তো দুর্নীতিগ্রস্ত—তবুও তারা দেশের উন্নয়নে কিছু না কিছু করছে। অন্যদিকে, যারা কৌশলে ক্ষমতা নিয়ে দেশ লুটেছে, নিজেরা বিদেশে বসে দেশ চালিয়েছে—তারা এখনো বিচারহীন। এই বিভাজন আমাদের বুঝতে হবে।

সত্য চেপে রাখলে প্রকৃত অপরাধীরা রয়ে যায় ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। তারা ইতিহাসকে বিকৃত করে, জনগণকে বিভ্রান্ত করে। তাদের চিহ্নিত করুন। বিচারের আওতায় আনুন। কিন্তু যারা একসময় বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নে বিশ্বাস করেছিল, সাধারণ মানুষ হিসেবে আশাবাদী ছিল—তাদের দোষ দিয়ে ইতিহাসকে কলঙ্কিত করবেন না।

জিয়াউর রহমান নিজেও আওয়ামী লীগের অংশ ছিলেন, যুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছেন। কিন্তু যখন দেখেছেন শেখ পরিবার দেশের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করছে, তখন সরে দাঁড়িয়েছেন। আমরাও তাই করেছিলাম—বিশ্বাস করেছিলাম, পরে প্রতারণা দেখেছি।

আজ অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি আমাদের বিনীত আহ্বান: আপনার দায়িত্ব সংস্কার করা, বিশৃঙ্খলা নয়। সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের জীবনে যেন নতুন করে হতাশা না আসে—এই দায়িত্ব আপনাকে নিতেই হবে।

আমরা কেউ ভারতের গোলাম না, না শেখ পরিবারের, না কোনো দলের। আমরা দেশের, মানুষের। সেই দায়িত্ব থেকেই বলছি: এই দেশ কারো বাপের সম্পত্তি নয়। এটা সৎ, মহৎ, কর্মঠ মানুষের দেশ। যারা দুর্নীতির সংস্কৃতিতে জড়িত, তারা সবাই অপরাধী—দলের নামে হোক, বা ব্যক্তিগত সুবিধার নামে।

শুধু একটি দলের দুর্নীতিকে টার্গেট করলে হবে না। বিএনপির নামেও আজ চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী কার্যকলাপ হচ্ছে। তারা বলে বেড়ায়—“আমরা পেছনে থাকি, তোরা ওপরে থাক”—এই অপসংস্কৃতিও এখন বিএনপির নামেই প্রতিষ্ঠিত।

প্রশ্ন হচ্ছে: তাহলে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না কেন? আওয়ামী লীগের দুর্নীতিবাজ আর বিএনপির চাঁদাবাজের মধ্যে পার্থক্যটা কোথায়? অথবা অন্য দলের গডফাদারদের সঙ্গে?

স্বৈরাচার থেকে মুক্ত হয়ে যদি আমরা নতুন এক স্বরাচারের শৃঙ্খলে বন্দি হই—তাহলে কেন ঝরেছিল এত রক্ত? কেন মায়েরা সন্তান হারিয়েছিলেন, তরুণেরা জীবন দিয়েছিল?

২০২৪ সালের জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থান কোনো ব্যক্তি পরিবর্তনের জন্য ছিল না— তা ছিল রাষ্ট্র কাঠামোর মৌলিক রূপান্তরের জন্য। যদি সেই কাঠামো অপরিবর্তিত থাকে, পুরনো শোষণ শুধু নতুন মুখে ফিরে আসে— তাহলে আমাদের সংগ্রাম ব্যর্থই থেকে যাবে।

এই মুহূর্তে আমাদের প্রধান দায়িত্ব: আর কোনো ফ্যাসিবাদ যেন এই দেশে মাথা তুলে দাঁড়াতে না পারে। এই লড়াই কোনো গদির জন্য নয়, কোনো গোষ্ঠীর জয়গান নয়— এটি ন্যায়ের, মানবিকতা আর অন্তর্ভুক্তির রাষ্ট্রব্যবস্থা নির্মাণের লড়াই।

যে-ই করুক, দলের নাম যেটাই হোক- অপরাধ করলে তার বিরুদ্ধে সমান ব্যবস্থা নিতে হবে। না হলে আমরা শুধু এক শোষকের জায়গায় আরেক শোষক বসাচ্ছি।

দলের নাম দিয়ে কারো গায়ে ‘অভিজাতত্বের চাদর’ জড়িয়ে দিলে এই সমাজ কখনো বদলাবে না। আমরা দেখেছি—জামায়াত, বিএনপি, আওয়ামী লীগ এমনকি তথাকথিত স্বাধীন প্ল্যাটফর্ম—সবখানেই একই অপরাধ, শুধু রং বদলেছে।

এই সুবিধাবাদী কালচার, বংশানুক্রমিক দুর্নীতির নেটওয়ার্ক—যদি ভেঙে না ফেলা যায়, তাহলে সরকার বদলালেও থাকবে ‘যে লাউ, সেই কদু’। সুতরাং, আজ সময় সত্য বলার।

সংস্কারের নামে ভণ্ডামি নয়।
দেশটা কারো ব্যক্তিগত সম্পত্তি নয়—এটি সেইসব মানুষের, যারা ন্যায়ের পক্ষে, মানুষের পক্ষে। দল নয়, ব্যক্তি নয়—নীতি হোক নেতৃত্বের ভিত্তি। মুখ নয়—মনোভাব বদলাক।

যারা এখনো বলে, ‘আমরা ঐ দলের লোক, ক্ষমতায় গেলে সব ঠিক করে ফেলব’—তাদের জিজ্ঞেস করি: তোমরা নিজে কি বদলেছো? যদি বদল না আসেই, তাহলে আগামীকালও পুরনো লোক, পুরনো পদ্ধতি, পুরনো মিথ্যাচারই চলবে!

আমরা চাই—একটি নতুন বাংলাদেশ, যেখানে বিচার হবে কর্ম ও সততার ভিত্তিতে—না কারো রক্তের সম্পর্ক দেখে, না দলের ট্যাগ দেখে। সৎ মানুষই হোক এই দেশের কান্ডারি। আর তা কেবল কথায় নয়, কাজে প্রমাণ করেই দেখাতে হবে।

লেখক: রহমান মৃধা, সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন

শেয়ার করুন:-
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
পুরো সংবাদটি পড়ুন

মত দ্বিমত

যোগ্যতা বনাম ক্ষমতা: তন্ত্রের আয়নায় মানুষের মুক্তি-সংকট

Published

on

খুলনা পাওয়ার

ভূমিকা: প্রশ্নের শিকড়ে ফিরে যাওয়া যোগ্য ব্যক্তি কখন অযোগ্য হয়ে পড়ে?
এই প্রশ্নে লুকিয়ে আছে হাজার বছরের রাজনীতি, রাষ্ট্রচিন্তা এবং সমাজব্যবস্থার মূল সংকট। কেউ জন্মসূত্রে রাজা, কেউ নির্বাচনে বিজয়ী, কেউ ধর্মীয় নেতারূপে, কেউ সৈনিক থেকে শাসক। কিন্তু প্রায়শই দেখা যায়—ক্ষমতা তাদের পরিবর্তন করে, কিংবা সিস্টেমই তাদের বিকৃত করে দেয়।

যোগ্যতা তখন শুধু একটি শুরুর দাবি হয়ে থাকে—বাস্তব শাসনে তা হয় বিকৃত, পরিত্যক্ত কিংবা বিক্রিত। এই বিশ্লেষণে আমরা ফিরে যাব রাজতন্ত্র, পরিবারতন্ত্র, প্রজাতন্ত্র, একনায়কতন্ত্র, ধর্মতন্ত্রের ইতিহাসে। দেখব—কে কিভাবে ‘যোগ্য’ হয়েছিলেন, এবং কেন কালের প্রবাহে ‘অযোগ্য’ হয়ে উঠলেন।

শেষত, আমরা দাঁড়াব বর্তমান বাস্তবতায়—যেখানে একমাত্র প্রশ্ন হবে, মানুষের মুক্তির জন্য কোন তন্ত্র সবচেয়ে প্রয়োজনীয়?

তন্ত্র মানে কী?
তন্ত্র মানে শাসনের কাঠামো। এই কাঠামোই ঠিক করে, কে শাসক হবে, কীভাবে ক্ষমতা অর্জন হবে, জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক কেমন হবে, আর দায়বদ্ধতার ধরণ কেমন হবে।
সাধারণভাবে পাঁচটি তন্ত্র চিহ্নিত করা যায়:
১. রাজতন্ত্র (Monarchy)
২. পরিবারতন্ত্র / বংশতন্ত্র (Dynastic politics)
৩. প্রজাতন্ত্র / গণতন্ত্র (Republic/Democracy)
৪. একনায়কতন্ত্র / সামরিক শাসন (Autocracy/Military rule)
৫. ধর্মতন্ত্র (Theocracy)

আমরা দেখব—এই পাঁচটি তন্ত্রেই ‘যোগ্য’ মানুষ শাসনে আসেন, কিন্তু সময়ের সাথে কেউ অযোগ্য হয়ে পড়েন। প্রশ্ন হলো—কেন?

যোগ্যতার সংজ্ঞা: আমাদের অবস্থান
আমরা যেই যোগ্যতার কথা বলছি, তা চার স্তরের উপর প্রতিষ্ঠিত:
১. নৈতিকতা: ব্যক্তির নীতিবোধ, মানবিকতা, স্বচ্ছতা
২. দক্ষতা ও শিক্ষা: রাষ্ট্রচিন্তা, অর্থনীতি, ইতিহাস, বিজ্ঞান-প্রযুক্তি, সাংস্কৃতিক জ্ঞান
৩. কর্মদক্ষতা: বাস্তব সিদ্ধান্ত গ্রহণের যোগ্যতা, প্রশাসনিক সক্ষমতা
৪. জনসম্পৃক্ততা: মানুষের কণ্ঠস্বর শোনা, বেকারত্ব দূরীকরণ, দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান, সামাজিক দায়বদ্ধতা।
এই চারটি উপাদান মিলেই গঠিত হয় প্রকৃত যোগ্যতা। এই যোগ্যতা ছাড়া কেউ নেতা হতে পারেন না—আর যদি হনও, তারা ক্ষমতার ভার বহন করতে পারেন না।

রাজতন্ত্র ও পরিবারতন্ত্রের আয়নায় যোগ্যতা ও অযোগ্যতার বিবর্তন
রাজতন্ত্র— জন্মগত শ্রেষ্ঠত্ব না ঐতিহাসিক জড়তা?
রাজতন্ত্রের ভিত্তি দাঁড়িয়ে আছে এক অদ্ভুত দাবির ওপর—“একজন মানুষ, কেবলমাত্র একটি নির্দিষ্ট বংশে জন্মেছে বলেই, সে অন্য সবার চেয়ে অধিক যোগ্য।” এটি আদিতে ঈশ্বরদত্ত বা ঐশ্বরিক অনুমতির দাবির সঙ্গে যুক্ত ছিল।

ইতিহাসের কয়েকটি দৃষ্টান্ত:
• ফারাও (মিশর): নিজেকে ঈশ্বরের প্রতিনিধি দাবি করতেন।
• চীনের রাজবংশ: “Mandate of Heaven”-এর ধারক ছিলেন।
• ইংল্যান্ডের রাজতন্ত্র: রাজা/রানী ছিলেন রাষ্ট্রপ্রধান এবং চার্চের প্রধান।
• ভারতীয় উপমহাদেশে: মুঘল ও অন্যান্য রাজাদের শাসন ছিল জন্মভিত্তিক উত্তরাধিকার নির্ভর।

কেন তারা যোগ্য ছিলেন (বা মনে করা হতো):
•উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত, কূটনৈতিক, সংস্কৃতিতে পারদর্শী
•সেনাপতি ও প্রশাসক হিসেবে প্রস্তুত করা হতো ছোটবেলা থেকে

কেন তারা অযোগ্য হয়ে উঠতেন:
• জন্ম-যোগ্যতা কোনও বাস্তব দক্ষতা বা মূল্যবোধ নিশ্চিত করে না
• অধিকাংশ উত্তরসূরি শাসকেরা অহংকারী, অলস বা নির্মম হয়ে ওঠেন
• জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক দুর্বল হয়ে পড়ে
• নেতৃত্ব হয় এক বদ্ধবৃত্ত—কোনো বিকল্প বা সংশোধন নেই

রাজতন্ত্র একসময় শৃঙ্খলা এনেছিল, কিন্তু সময়ের ব্যবধানে এটি মানুষের মধ্যে বৈষম্য, ক্ষমতার অপব্যবহার ও অযোগ্যতার চক্র তৈরি করে। জন্মই নেতৃত্বের মাপকাঠি হতে পারে না—এটি চরম অন্যায় এবং অমানবিক।

পরিবারতন্ত্র — গণতন্ত্রের মুখোশে বংশানুক্রমিক আধিপত্য
পরিবারতন্ত্র হলো গণতন্ত্রের বিকৃত রূপ—যেখানে শাসক নির্বাচিত হলেও, ক্ষমতা এক পরিবারের মধ্যেই ঘুরপাক খায়। এটি আধুনিক কালে রাজতন্ত্রের উত্তরাধিকার।

বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, ফিলিপাইন, উত্তর কোরিয়া, শ্রীলংকা—সবখানেই এই প্রবণতা লক্ষণীয়:
• শেখ পরিবার বনাম জিয়া পরিবার (বাংলাদেশ)
• গান্ধী পরিবার (ভারত)
• ভুট্টো পরিবার (পাকিস্তান)
• কিম বংশ (উ. কোরিয়া)

যোগ্যতা বলে দাবি করা হয়:
• ‘ঐতিহ্য’, ‘অভিজ্ঞতা’, ‘পরিচিতি’, এবং ‘জনসম্পৃক্ততা’

আসলে ঘটে যা:
• পরিবারতন্ত্র রাজনীতিকে একটি ব্যক্তিগত ব্যবসায় পরিণত করে
• দুর্নীতি, আত্মীয়করণ (nepotism), এবং লুটপাট বেড়ে যায়
• যুবসমাজ বা নতুন নেতৃত্ব উঠে আসার সুযোগ পায় না
• দলগত শৃঙ্খলার চেয়ে পারিবারিক আনুগত্য বড় হয়ে দাঁড়ায়

জনগণের ক্ষতি কোথায়:
• একই চক্রের মধ্যে সমস্যার সমাধান অসম্ভব
• উন্নয়ন ও নীতিনির্ধারণ হয় ক্ষমতা রক্ষার কৌশলে, জনগণের কল্যাণে নয়

পরিবারতন্ত্রের মধ্যে জন্ম ও সম্পর্কের যোগ্যতাকে অগ্রাধিকার দেয়া হয়, যা গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের সঙ্গে সরাসরি সাংঘর্ষিক। একে গণতন্ত্রের নামে একটি ব্যক্তিমালিকানাধীন রাষ্ট্রব্যবস্থা বলা চলে।

সংক্ষিপ্ত অন্তর্বর্তী সংলাপ:
রাজতন্ত্র একসময় শৃঙ্খলা এনেছিল
পরিবারতন্ত্র আধুনিক রাজতন্ত্রে রূপান্তরিত হয়েছে
কিন্তু উভয় তন্ত্রেই
যোগ্যতা = বংশ,
যোগ্যতা ≠ শিক্ষা, দক্ষতা, মূল্যবোধ, জনসম্পৃক্ততা।
আধুনিক তন্ত্রে যোগ্যতার মৃত্যুকাহিনি
গণতন্ত্র—সংখ্যার রাজনীতিতে গুণমানের পতন

গণতন্ত্র একসময় মানুষের স্বপ্ন ছিল। স্বাধীন মত প্রকাশ, জন-ইচ্ছার প্রতিফলন, এবং প্রতিনিয়ত পরিবর্তনের সুযোগ—এসব ছিল এই ব্যবস্থার প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিশ্রুতি। কিন্তু ধীরে ধীরে গণতন্ত্র সংখ্যার খেলায় পরিণত হয়, যেখানে “কতজন বলছে” সেটাই ঠিক, “কে কী বলছে” তা নয়।

এই ব্যবস্থায় যোগ্যতা মূল্য পায় তখনই, যখন তা জনপ্রিয় হয়। একসময় নেতৃত্ব পেতে হলে লাগত দূরদর্শিতা, নৈতিকতা ও সেবার ইতিহাস, আজ তা মুছে গেছে নির্বাচনী কৌশল, গণমাধ্যমের প্রভাব এবং অর্থবলের ছায়ায়। আর এই ছায়ার মধ্যেই হারিয়ে যায় প্রকৃত যোগ্যরা—যারা কথা বলেন মানুষের অধিকারের পক্ষে, উন্নয়নের স্থায়ী রূপরেখা নিয়ে।

এইভাবে গণতন্ত্র পরিণত হয় ‘ভোট-সর্বস্ব ব্যবস্থায়’, যেখানে সত্য নয়, আবেগ বিক্রি হয়—যেখানে যোগ্যতা নয়, পরিচিতি আর প্রতিশ্রুতি জিতে যায়। জনগণ বিভ্রান্ত হয় মিডিয়ার নাটকে, রাজনৈতিক ধর্মীয় উস্কানিতে, আর সেখানে দাঁড়িয়ে এক সময়কার যোগ্য ব্যক্তিটিও জনসমর্থনহীন হয়ে পড়ে, হয়ে যায় ‘অযোগ্য’।

একনায়কতন্ত্র—শৃঙ্খলার নামে চিন্তার হত্যাকাণ্ড
একনায়কতন্ত্র আসে সংকটকে পুঁজি করে—“দেশে বিশৃঙ্খলা চলছে”, “বিচারব্যবস্থা দুর্বল”, “রাজনীতি দুষ্টু খেলোয়াড়ে ভরা”—এইসব যুক্তি দিয়ে যখন ক্ষমতা তুলে দেওয়া হয় একজন বা এক গোষ্ঠীর হাতে, তখনই শুরু হয় এক ভিন্ন খেলাধুলা।

প্রথমে মনে হয়, কেউ একজন দৃঢ় হাতে হাল ধরেছে। উন্নয়ন হয়, শৃঙ্খলা ফিরে আসে, ঘুষ-দুর্নীতি কমে যায়। কিন্তু ধীরে ধীরে দেখা যায়—যে কথা বলছে না, সে-ই টিকে আছে। আর যে প্রশ্ন তোলে, সে ‘অবিশ্বস্ত’, ‘রাষ্ট্রদ্রোহী’, ‘বিদেশি এজেন্ট’। এইখানেই যোগ্য ব্যক্তি পরিণত হয় অযোগ্যতে। কারণ একনায়কের প্রয়োজন চাটুকার, চিন্তাশীল নয়। রাষ্ট্র তখন চালায় ‘একজনের অভিমত’, দেশের কণ্ঠ হয়ে ওঠে ‘একটা মঞ্চ’—আর সেখানে হাজার চিন্তাশীল মানুষের মধ্যে একজনও টিকে না।

বহু যোগ্য শিক্ষাবিদ, অর্থনীতিবিদ, বিজ্ঞানী বা কর্মী—যারা স্বাধীনভাবে চিন্তা করে—তারা এই ব্যবস্থায় হয় নির্বাসিত, নয় নিঃশব্দ।

ধর্মতন্ত্র—নৈতিকতার নামে জ্ঞানের নিধন
ধর্ম, মূলত মানুষের ভিতরকার মূল্যবোধ গঠনের জন্য। কিন্তু রাষ্ট্র যখন ধর্ম দিয়ে পরিচালিত হয়, তখন ধর্ম হয় শাসনের হাতিয়ার। নৈতিকতার জায়গায় আসে ভয়, আত্মোপলব্ধির জায়গায় আসে বিধান। ধর্মতন্ত্রে যোগ্যতা নির্ধারিত হয় ঈশ্বরের নামে ক্ষমতাপ্রাপ্ত কয়েকজন মানুষের ব্যাখ্যার মাধ্যমে। তারা ধর্মের যে অংশকে চায়, সেটুকু তুলে ধরে; বাকি ইতিহাস, বৈজ্ঞানিক জ্ঞান, সমাজতত্ত্ব—সব হয় ‘নিষিদ্ধ’ জ্ঞান। এখানে যোগ্যতা মানে হয় ‘ধর্মীয় ব্যাখ্যা জানা’, কিন্তু তার সঙ্গে বাস্তব রাষ্ট্র পরিচালনার জ্ঞান, অর্থনীতি বা প্রযুক্তির জ্ঞান—তা অপ্রয়োজনীয় হয়ে পড়ে। তাই একজন ধর্মীয় নেতা রাষ্ট্রনায়ক হতে পারেন, অথচ তিনি সমাজের জটিল বাস্তবতা বুঝেন না। যারা বোঝেন, তারা ‘অবিশ্বাসী’ বা ‘ভ্রান্ত’। এই অবস্থায় একসময় যোগ্য ব্যক্তি—যিনি মানুষের মুক্তি, শিক্ষা, সমতা ও আধুনিকতা নিয়ে কাজ করেন—তাকে রাষ্ট্রশত্রু হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।

সম্মিলিত উপলব্ধি:
তিনটি আধুনিক তন্ত্র—গণতন্ত্র, একনায়কতন্ত্র, ধর্মতন্ত্র—প্রথমদিকে মানুষকে আশ্বাস দিয়েছিল পরিবর্তনের, মুক্তির, ন্যায়ের। কিন্তু সময়ের সাথে তারা সকলেই যোগ্যতার পরিবর্তে বেছে নিয়েছে তাদের স্বার্থ রক্ষাকারীদের।
• গণতন্ত্রে যোগ্যতা হারায় সংখ্যার ভারে,
• একনায়কতন্ত্রে হারায় মতপ্রকাশের বন্ধনে,
• ধর্মতন্ত্রে হারায় জ্ঞান ও মানবিকতার অবদমনে।

এই বাস্তবতায় প্রশ্ন উঠে—তাহলে আমরা কোন পথে যাব? আমরা কোন যোগ্যতা চাই? এবং সে উত্তর খুঁজতেই প্রয়োজন পরবর্তী পদক্ষেপ, যেখানে প্রস্তাব করা হবে এক নতুন রাষ্ট্রব্যবস্থার রূপরেখা—যেখানে মানুষ, নীতি ও দক্ষতা হবে কেন্দ্রবিন্দু।

তাহলে কেমন তন্ত্র চাই মানুষকে মানুষের মতো বাঁচাতে?
মানুষমুখী রাষ্ট্রব্যবস্থা — এক ‘নৈতিক দক্ষগণতন্ত্র’-এর নকশা
কেন সব তন্ত্র ব্যর্থ হলো মানুষের কাছে?
রাজতন্ত্র বলল, “আমার জন্মই আমার যোগ্যতা”—মানুষ হারালো মর্যাদা
পরিবারতন্ত্র বলল, “আমার বংশই আমার অধিকার”—মানুষ হারালো সম্ভাবনা
গণতন্ত্র বলল, “সংখ্যাই সত্য”—মানুষ হারালো বিচার
*একনায়ক বলল, “আমি আইন”—মানুষ হারালো কণ্ঠ
*ধর্মতন্ত্র বলল, “ভয়েই শান্তি”—মানুষ হারালো স্বাধীনতা

এতগুলো তন্ত্র থাকতেও যদি মানুষ হয় গৃহহীন, বেকার, অপমানিত, নিপীড়িত—তবে প্রশ্ন জাগে, রাষ্ট্র কার জন্য? তন্ত্র কার জন্য?

বিকল্প কী? — এক নতুন প্রস্তাবনা: নৈতিক দক্ষগণতন্ত্র (Moral Meritocracy-based Democracy)
আমরা একটি এমন তন্ত্র কল্পনা করি— যেখানে নেতৃত্ব নির্ধারিত হবে নৈতিকতা, দক্ষতা, জনদায়িত্ব, এবং সাধারণ মানুষের সঙ্গে বাস্তব সংযোগ-এর ভিত্তিতে। এই তন্ত্রের চারটি স্তম্ভ হবে:

১. নৈতিকতা:
• রাষ্ট্রনায়ক হতে হলে তার জীবনচরিত, সম্পদের উৎস, ও নীতিনৈতিকতা জনসমক্ষে স্বচ্ছভাবে উন্মুক্ত হতে হবে
• দুর্নীতিমুক্ত ও জনহিতকর কাজের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে

২. দক্ষতা:
• রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও প্রযুক্তিগত জ্ঞান থাকা আবশ্যক
• নেতৃত্বে আসার আগে পাবলিক সার্ভিস, নীতিনির্ধারণ, বা সমন্বয় কাজে অভিজ্ঞতা থাকা চাই

৩. গণপ্রতিনিধিত্ব:
• নিরপেক্ষ প্ল্যাটফর্ম ও নির্বাচনী ব্যবস্থার মাধ্যমে প্রার্থীদের যাচাই-বাছাই
• স্থানীয় জনগণকে নেতৃত্ব নির্ধারণে সক্রিয় ও শিক্ষিত ভূমিকা নিতে সক্ষম করে তোলা

৪. মানবিকতা:
• রাষ্ট্র হবে লাভের জন্য নয়, মানুষের জন্য
• সুবিধাবঞ্চিত, প্রান্তিক, সংখ্যালঘুদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে

বাস্তবায়নের রূপরেখা (Action Framework)
১. শিক্ষাব্যবস্থা সংস্কার:
নৈতিকতা, গণতন্ত্র, অর্থনীতি ও প্রযুক্তিনির্ভর জীবনমুখী পাঠ্যক্রম চালু
২. রাজনৈতিক সংস্কৃতি সংস্কার:
নেতৃত্বের যোগ্যতা নির্ধারণে নির্বাচন কমিশনের পাশে একটি Merit Assessment Council গঠন
৩. মিডিয়া ও তথ্যপুঞ্জের ভূমিকা:
স্বচ্ছতা ও সচেতনতার জন্য তথ্য প্রকাশ বাধ্যতামূলক করা
জনগণকে ভুল তথ্য থেকে রক্ষা করে বাস্তব তথ্যের অধিকার নিশ্চিত করা
৪. প্রবাসী ও তরুণদের অংশগ্রহণ:
বিশ্বব্যাপী দক্ষ জনশক্তিকে রাষ্ট্র গঠনে অন্তর্ভুক্ত করা
নতুন প্রজন্মকে প্রযুক্তি ও মানবিক চিন্তায় শক্তিশালী করা
চূড়ান্ত উপলব্ধি: মানুষই রাষ্ট্রের কেন্দ্রবিন্দু
মানুষ শুধুই ভোটার নয়, মানুষ হলো রাষ্ট্রের অস্তিত্বের কারণ।
অতএব, যে রাষ্ট্র বা তন্ত্র মানুষের যোগ্যতা, মর্যাদা ও জীবনের গুণগত মান উন্নয়নে প্রতিশ্রুত নয়—তা অযোগ্য রাষ্ট্রব্যবস্থা।

উপসংহার:
যেখানে মানুষ বড়, তন্ত্র নয়—সেই রাষ্ট্রই সত্যিকারের মানবিক রাষ্ট্র। রাজা, পিতা, একনায়ক কিংবা ইমাম নয়—আমাদের প্রয়োজন এমন এক রাষ্ট্রনায়ক, যিনি শিক্ষা, মানবতা, দক্ষতা ও জবাবদিহিতার আলোয় পরিচালিত। এবং সে রাষ্ট্রব্যবস্থাকে আমরা নাম দেব —নৈতিক দক্ষগণতন্ত্র। কে সেই সুন্দর কে!

লেখক: রহমান মৃধা, সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন

শেয়ার করুন:-
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
পুরো সংবাদটি পড়ুন

মত দ্বিমত

লুণ্ঠন আর লাশের ভাণ্ডারে পরিণত বাংলাদেশ: রাজনীতি নয়, মাফিয়া সিন্ডিকেটের দখলদারি

Published

on

খুলনা পাওয়ার

দেশটা আজ আর রাষ্ট্র নয়-এটা এখন ভাইয়ে ভাইয়ে ভাগ করা এক কর্পোরেট পাঁয়তারা, যেখানে নামমাত্র ভিন্ন দুই দল আসলে এক লুণ্ঠনবাজ চক্রের দুই শাখা মাত্র।

বিএনপি এখন মুখে গণতন্ত্রের বুলি আওড়ায়, আর হাতে নেয় আওয়ামী দস্যুদের ফেলে যাওয়া সম্পদের দখল। পালিয়ে যাওয়া আওয়ামী নেতারা কাঁধে চোরাই সম্পত্তির ব্যাগ আর পেছনে সেনা প্রটোকল নিয়ে দেশ ছাড়ছে, আর বিএনপি সেই দখলদারির লেজ লুটিয়ে দেশটাকে নিজের করে নিচ্ছে—এই নোংরা নাটক আর কতকাল চলবে?

সেনাবাহিনীর এক নির্লজ্জ অংশ এখন এই লুণ্ঠনের সহযাত্রী। তারা অস্ত্র দিয়ে নয়, নীরব সহযোগিতায় দিচ্ছে ‘সেফ একজিট’, যেন জাতিকে বিক্রি করে দেওয়া একটি লুকানো প্যাকেজ ডিল। যেই আওয়ামী লীগ এক দশক ধরে জনগণকে গিলে খেয়েছে, সেই দলের দালালরা আজ বিদেশে ঘর তোলে—আর বিএনপি দেশীয় লুটপাটে নেমে পড়ে। এ যেন ‘চোর বদল, চুরি নয়’!

এদিকে, ড. ইউনূস হয়ে উঠেছেন সেই অদ্ভুত প্রতীক, যিনি পর্দার আড়ালে থেকে আন্তর্জাতিক মহলকে সান্ত্বনা দেন—“বাংলাদেশে সংস্কার চলছে!”
সংস্কার? নাকি ব্যর্থতার মেকআপ? তিনি কি বুঝেন না, এই সংস্কারের নামেই হচ্ছে আরেক দফা জনগণকে ধোঁকা দেওয়ার আয়োজন?

এই মুহূর্তে দেশটা কোথায় দাঁড়িয়ে?
• প্রশাসন বিক্রি হয়ে গেছে দলীয় কর্মীদের কাছে।
• বিচারব্যবস্থা নিরপেক্ষ নয়, ভয়পেয়ে চুপ।
• নিরাপত্তা বাহিনী দুইদলের পালাক্রমে ব্যবহৃত হচ্ছে সন্ত্রাসীদের পেটোয়া বাহিনী হিসেবে।
• সাংবাদিকতা হয় দালালি, না হয় নিপীড়নের শিকার।
• বিশ্ববিদ্যালয়গুলো জ্ঞানের চর্চা নয়—দলের দালাল তৈরির কারখানা।
• আর রেমিট্যান্স যোদ্ধারা? তারা এখনো ডলার পাঠাচ্ছে সেই দেশকে, যাকে শাসন করছে চোর আর মাফিয়ারা।

এইবার আমাদের সহ্য করার সীমা পেরিয়ে গেছে।

করোনার মতো বিশ্বব্যাপী মহামারির সময় যেভাবে সবাই এক হয়েছিল, এখন সময় এসেছে সেই ঐক্যের থেকেও বড় এক যুদ্ধে নামার—এইবার লক্ষ্য দুর্নীতির মূলোৎপাটন।

দুর্নীতি আর দলবাজি এখন ভাইরাসের চেয়েও ভয়ংকর।
এটা শুধুমাত্র অর্থ চুরি করে না—এটা ভবিষ্যৎ খায়, স্বপ্ন নষ্ট করে, আত্মসম্মান ছিঁড়ে ফেলে।

একটি প্রস্তাবিত সংগ্রামী চেতনা: “রাষ্ট্র পুনর্গঠনের যুদ্ধ”

১. এই আন্দোলনের কোনো দল থাকবে না—থাকবে কেবল জনগণ বনাম চোর।
২. নেতৃত্ব আসবে প্রবাসীদের কাছ থেকে—যারা দলবাজির ঊর্ধ্বে, এবং এই দেশটাকে ভালোবেসেই বাঁচিয়ে রেখেছে।
3. সাংবাদিক, লেখক, শিল্পী, কৃষক, শ্রমিক—সবাইকে একাট্টা হতে হবে এক কণ্ঠে: “চোরের দেশ চাই না, আমাদের দেশ ফেরত চাই!”
4. আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে জানাতে হবে—এবার আর নির্বাচন নয়, নির্মূল চাই!

এইবার, কোনো নরম কথা নয়। এইবার, ঘৃণার ঘৃণিত রাজনীতিকে শেষ করে দিতে হবে।

এই যুদ্ধ গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার নয়—এটা গণতন্ত্রকে নতুন করে গড়ার যুদ্ধ।
যারা এই রাষ্ট্রকে পঁচিয়ে তুলেছে, তাদের আর শুধরে দেওয়ার সুযোগ নেই।
তাদের বিচার করতে হবে—জনগণের কাঠগড়ায়, ইতিহাসের আদালতে।

এইবার—জাগতে হবে, দাঁড়াতে হবে, প্রতিরোধ গড়তে হবে।
না হলে আগামী প্রজন্ম আমাদের ক্ষমা করবে না।

আমাদের বিপ্লবের নীলনকশা (Manifesto of National Moral Uprising)।
• অপ্রিয় সত্য থাকে
• করণীয় এবং বর্জনীয় স্পষ্টভাবে চিহ্নিত হয়
• একটি ধারাবাহিক জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক কর্মপন্থা উপস্থাপিত হয়
• প্রবাসীদের, তরুণদের, এবং সচেতন নাগরিকদের জাগ্রত করে তোলা যায়

জাতীয় নৈতিক জাগরণের রোডম্যাপ

(Remittance Fighters’ Manifesto for Moral Revolution)

প্রথম অধ্যায়: বাস্তবতা ও বোধোদয়
• দেশ এখন লুণ্ঠনের রাষ্ট্রে পরিণত: রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নয়—দুই পক্ষই এখন মাফিয়া সিন্ডিকেট
• সেনাবাহিনীর এক অংশ, প্রশাসন, আদালত, পুলিশ—সবই দখল ও দুর্নীতির অংশীদার
• রেমিট্যান্স যোদ্ধারা দেশের অর্থনীতি বাঁচালেও, তাদের কোনো স্বীকৃতি নেই
• আন্তর্জাতিক দৃষ্টিতে বাংলাদেশের গণতন্ত্র এখন প্রশ্নবিদ্ধ ও ভণ্ডামীতে পূর্ণ

দ্বিতীয় অধ্যায়: লক্ষ্যে অবিচলতা

আমাদের চূড়ান্ত দাবি:

১. দুর্নীতিমুক্ত গণতান্ত্রিক প্রশাসন পুনর্গঠন
২. রাজনৈতিক দলগুলোর অর্থনৈতিক ও প্রশাসনিক দখলদারিত্বের অবসান
৩. প্রবাসীদের ভোটাধিকার ও নেতৃত্বে বাস্তব ক্ষমতায়ন
৪. একটি সত্যিকারের জনগণের সংবিধান পুনর্গঠন প্রক্রিয়া
৫. আন্তর্জাতিক স্বচ্ছ তদন্ত—দুই দল, সেনাবাহিনী, এবং সরকারি কর্মচারীদের বিরুদ্ধে

তৃতীয় অধ্যায়: করণীয় ও সংগ্রামের রূপরেখা

১. দেশে ও বিদেশে সমান্তরাল সচেতনতামূলক আন্দোলন:
• সোশ্যাল মিডিয়ায় সংঘবদ্ধ ক্যাম্পেইন (truth bombs, exposé series)
• প্রবাসী সম্মেলন ও রেমিট্যান্স প্ল্যাটফর্ম গঠন
• স্বাধীন সাংবাদিক ও লেখকদের মাধ্যমে তথ্য প্রকাশ

২. জাতীয়ভাবে নিরপেক্ষ সংগঠন গঠন:
• “জাতীয় নৈতিক আন্দোলন পরিষদ”—দলনিরপেক্ষ, প্রবাসীবান্ধব সংগঠন
• স্থানীয় পর্যায়ে দুর্নীতিবিরোধী গণজাগরণ কমিটি

৩. আন্তর্জাতিক লবিং ও চিঠি প্রেরণ:
• UN, EU, Human Rights Watch, Transparency International-এর কাছে গণচিঠি
• বিভিন্ন দেশের সংসদ সদস্যদের কাছে প্রবাসীদের সরাসরি চিঠি
• মিডিয়াতে লেটার-টু-এডিটর প্রচার

চতুর্থ অধ্যায়: বর্জনীয় বিষয়সমূহ
• ভোট ছাড়া নির্বাচনকে স্বীকৃতি দেওয়া
• রাজনৈতিক দলের মুখপাত্র বা দালালদের বিশ্বাস করা
• নিরবতা—কারণ, নিরবতা মানে অপরাধে অংশগ্রহণ

পঞ্চম অধ্যায়: আত্মপ্রতিরোধ ও আত্মমর্যাদার বিপ্লব
• কোনো রাজনৈতিক চক্রের অধীনে নয়—নিজেদের নেতৃত্বে নিজেদের দেশ গড়ার সময় এখন
• এই আন্দোলন হবে যুদ্ধ নয়, বিবেকের সংঘাত
• এই যুদ্ধ হবে অস্ত্র নয়, তথ্য, নৈতিকতা, জনসমর্থনের বিপ্লব

শেষ ঘোষণা:

“এইবার থামাতে হবে। এইবার নামতে হবে।
এইবার, বিপ্লব না হলে দেশ থাকবে না।”

রেমিট্যান্স যোদ্ধার রায়:
দুর্নীতিমুক্ত গণতন্ত্র আগে, তারপরই নির্বাচন।”

রহমান মৃধা, গবেষক ও লেখক
(সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন)
Rahman.Mridha@gmail.com

শেয়ার করুন:-
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
পুরো সংবাদটি পড়ুন

মত দ্বিমত

বাংলাদেশ আর আমি- এ যেন এক অভিন্ন সত্তা

Published

on

খুলনা পাওয়ার

বাংলাদেশ আর আমি– এ যেন এক অভিন্ন সত্তা। চাইলে দেশটিকে ছেড়ে থাকতে পারি না, আবার তার মিথ্যা, শোষণ আর দুর্নীতির রাজনীতির কারণে কাছে যেতেও পারি না। ভালোবাসার বাঁধনে আবদ্ধ বলে পেছন ফিরে তাকাই, কিন্তু দেশের রক্তচোষা রাজনীতিবিদদের কুকর্ম আর মিথ্যাচার আমাকে আটকে রাখে।

আমি বিশ্বাস করি—আল্লাহ্র আলোকিত পথে হাঁটাই মুক্তির একমাত্র উপায়। সেই পথেই চলি, যেখানে সত্য আছে, যেখানে প্রিয় মানুষদের আদর্শিক ছায়া পড়ে। কিন্তু, দুঃখের বিষয়, যাদের হাতে দেশ ছিল—তারাই দেশকে পদদলিত করেছে, পথভ্রষ্ট করেছে, মানুষের স্বপ্ন ভেঙে চুরমার করেছে।

তাই আজ দূর থেকে দেশের জন্য কাজ করি। দেশের মানুষকে ভালোবেসে, তাদের চোখের জল দেখে আজ আমি কলম তুলে নিই, বুকের ভেতর জমা ক্ষোভ ছড়িয়ে দিই প্রতিটি শব্দে। কারণ দেশের জন্য কিছু করতে হলে, মুখে বুলি না ঝাড়লেও চলে, কাজে প্রমাণ দিতে হয়।

কিন্তু, হায়! যখনই দেখি কেউ সাহস করে দেশের হাল ধরতে চায়, নতুন করে গড়তে চায় স্বপ্নের বাংলাদেশ—ঠিক তখনই সেই পুরনো গলাবাজ, সেই চেনা মুখগুলো গলা ফাটিয়ে চিৎকার শুরু করে: ‘নির্বাচন চাই! ভোট চাই!’

তাদের প্রশ্ন করি—কোথায় ছিল এই ভোটের অধিকার, যখন তোমরা ক্ষমতায় ছিলে?

১. শেখ মুজিবুর রহমান নির্বাচনের বাইরে ক্ষমতায় ছিলেন প্রায় ১.৫ বছর।
২. জিয়াউর রহমান ছিলেন ৪.৫ বছর, সেনাশাসনের মুখোশে।
৩. হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ছিলেন পুরো ১০ বছর—সরাসরি সামরিক শাসক!
৪. ২০০৬ সালে খালেদা জিয়া ক্ষমতা ছাড়ার সময়ও নির্বাচনের নামে নাটক চলেছে।
৫. আর শেখ হাসিনা—২০০৯ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত, একের পর এক পাতানো নির্বাচন, রাষ্ট্রীয় দমন-পীড়ন আর ভুয়া উন্নয়নের গল্পে জনগণকে ধোঁকা দিয়েছেন।

তাহলে প্রশ্ন জাগে—এই সময়গুলোতে কোথায় ছিল জনগণের প্রকৃত অধিকার? আপনারা ক্ষমতায় গিয়েছেন, বারবার গিয়েছেন—কিন্তু কী দিয়েছেন জাতিকে? শিক্ষিত বেকারত্ব, পাটকলের গেট বন্ধ, চিকিৎসাহীন মৃত্যু, দুর্নীতির পাহাড়, আর দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার হাহাকার! নিজেরা ফকির থেকে কোটি টাকার মালিক হয়েছেন, আর দেশের মানুষ আজও ভাতের জন্য দাঁড়ায় রাস্তায় লাইনে!

এখন যখন বাংলাদেশ তার সত্যিকারের অভিভাবককে পেয়েছে, তখনই শুরু হয়েছে কণ্ঠরোধের ষড়যন্ত্র—‘নির্বাচন চাই, নির্বাচন চাই!’ এই আওয়াজ এখন যেন শুধুই বিরক্তিকর প্যাঁচপ্যাঁচানি।

ভাইরে, বিপ্লব কখনও ব্যালট চায় না। ইতিহাসের প্রতিটি মৌলিক পরিবর্তন এসেছে বিপ্লবী শক্তির হাত ধরে, জনগণের ভরসা আর নেতৃত্বের আস্থায়। বিপ্লব মানেই স্বতঃসিদ্ধ বৈধতা। আমেরিকার স্বাধীনতা আন্দোলন, ফরাসি বিপ্লব, রাশিয়ার অক্টোবর বিপ্লব—সবই ছিল রাজনীতির প্রচলিত নিয়ম ভেঙে নতুন পথ রচনা করার গল্প।

আজ বাংলাদেশের মানুষ আর ভোটের জন্য গলা ফাটায় না—তারা চায় একজন আদর্শবান, ন্যায়পরায়ণ শাসক। একজন মানুষ, যে লুটপাট করবে না, ক্ষমতাকে দান হিসেবে নয়—দায়িত্ব হিসেবে নেবে। যে কৃষকের ঘাম বুঝবে, ছাত্রের চোখে স্বপ্ন দেখবে, বৃদ্ধের মুখে শান্তির হাসি আনবে।

আর যারা দিনভর রাস্তায় নেমে নির্বাচন, নির্বাচন বলে গলা ফাটায়—তাদের বলি, যে নিজের সংসার চালাতে পারে না, সে দেশ চালাবে কীভাবে? রাজনীতি আজ ব্যবসা নয়, চাকরি নয়—এটা সেবা। আর যদি সেবা না পারেন, সোজা কাজ করুন, ঘাম ঝরান, পরিবারকে খাওয়ান, দেশের জন্য সৎভাবে আয় করুন।

আমি বিদেশে থেকেও দেশের জন্য কাজ করি। আপনি দেশে থেকে পারবেন না কেন? দেশপ্রেম মানে ব্যানার নয়, ব্যালট নয়—দেশপ্রেম মানে নিজের যোগ্যতাকে দেশের কল্যাণে উৎসর্গ করা।

আজ আমাদের প্রয়োজন সৎ নেতৃত্ব, আদর্শিক কাঠামো আর জাতীয় ঐক্য। ভোট নয়, দল নয়, ক্ষমতা নয়—আমরা চাই বাংলাদেশ গড়ে উঠুক নতুন ন্যায়ের ভিতের ওপর।

তাই বলছি— নোভোটিং এট দিস মোমেন্ট! বিপ্লবী সরকারের জন্য ভোট লাগে না! কারণ, সত্যিকারের বিপ্লব কখনও ব্যালটে আসে না—সে আসে মানুষের মঙ্গল আর ইতিহাসের অনিবার্যতার হাত ধরে!

লেখক: রহমান মৃধা, সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন

শেয়ার করুন:-
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
পুরো সংবাদটি পড়ুন

মত দ্বিমত

দুর্নীতির দুষ্টচক্রে আজ সমাজ বিভক্ত

Published

on

খুলনা পাওয়ার

রতনে রতন চেনে-এই প্রবাদটি আমাদের বর্তমান রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার নির্মম প্রতিফলন। ক্ষমতার অধিকারীরা নিজেদের স্বার্থে সিদ্ধান্ত বদলাতে পারে, কিন্তু যেখানে রাষ্ট্রীয় দুর্নীতি, পরিবারতন্ত্র এবং দলীয় সন্ত্রাস শাসনব্যবস্থার ভিত্তি হয়ে ওঠে, সেখানে পরিবর্তনের কোনো সুযোগ থাকে না। বাংলাদেশের বর্তমান শাসকগোষ্ঠী এমন এক দানবীয় ক্ষমতার বলয়ে আবদ্ধ, যেখানে জনগণের অধিকার, স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা দলীয় স্বার্থের কাছে তুচ্ছ হয়ে গেছে। শাসকের আশীর্বাদপুষ্ট সন্ত্রাসী বাহিনী, দুর্নীতিবাজ রাজনৈতিক কর্মী ও প্রশাসনের দুর্নীতিগ্রস্ত অংশ সমাজের প্রতিটি স্তরে অন্যায়কে প্রতিষ্ঠিত করেছে।

ক্ষমতার লোভে অন্ধ এই স্বৈরতান্ত্রিক গোষ্ঠী দলীয় পরিচয়ে অপরাধীদের রক্ষা করছে, তাদের হাতে তুলে দিচ্ছে রাষ্ট্রীয় সম্পদ আর জনগণের রক্ত-ঘাম ঝরানো উপার্জন। ২০২৪ সালের রাজনৈতিক বিপ্লবের পর দেশের অপরাধীরা আরও নির্লজ্জভাবে প্রকাশ্যে আসছে—যারা একসময় ছায়ার আড়ালে ছিল, তারা এখন দলের আনুগত্যের পুরস্কার হিসেবে চাঁদাবাজি, দখলবাজি আর ভয়ংকর সন্ত্রাসের লাইসেন্স পাচ্ছে। একদিকে ক্ষমতাধরদের ভোগবিলাস বাড়ছে, অন্যদিকে সাধারণ মানুষ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম নিয়ে হাহাকার করছে। রাষ্ট্রের প্রতিটি প্রতিষ্ঠান আজ দলীয় স্বার্থ রক্ষার যন্ত্রে পরিণত হয়েছে, যেখানে ন্যায়বিচার, গণতন্ত্র ও জনগণের অধিকার একরকম বিলুপ্ত।

বিশ্বের দিকে তাকালে দেখি, ডোনাল্ড ট্রাম্প, এলন মাস্কের মতো ব্যক্তিত্বরা সম্পদের পাহাড় গড়ার পাশাপাশি নতুন নতুন চিন্তাধারা দিয়ে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তারা নিজের অবস্থান আরও শক্তিশালী করতে উদ্ভাবন, প্রযুক্তি ও ব্যবসায় মনোযোগ দিচ্ছেন, বিশ্বকে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে এগিয়ে নিচ্ছেন। অথচ আমাদের দেশে রাজনীতি মানেই ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে রাখা, দলীয় দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেওয়া এবং জনগণের সম্পদ লুটপাট করা। যখন আধুনিক বিশ্ব নতুন বিপ্লবের পথে হাঁটছে, তখন আমরা এক গোষ্ঠীর শোষণের যাঁতাকলে নিষ্পেষিত হচ্ছি।

পরিবর্তনের পথে সবচেয়ে বড় বাধা হচ্ছে পুরনো চিন্তাভাবনা, দলীয় লেজুড়বৃত্তি ও স্বৈরতান্ত্রিক মানসিকতা। পুরো বিশ্ব যখন ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে, তখন আমরা দলীয় স্বার্থের বলি হয়ে ধ্বংসের দিকে এগোচ্ছি। শাসকগোষ্ঠীর মূল লক্ষ্য জনগণের কল্যাণ নয়, বরং ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করা।

বাংলাদেশের বর্তমান বাস্তবতা আরও ভয়ংকর। এখানে সুস্পষ্ট পরিকল্পনা বা দূরদর্শী নেতৃত্ব নেই, আছে শুধু ক্ষমতার লড়াই। শাসকেরা জনগণকে মিথ্যা আশ্বাসের ফাঁদে ফেলে, ঠিক যেমন হামিলনের বাঁশিওয়ালা গ্রামবাসীদের ভুল পথে চালিত করেছিল। জনগণের সামনে কোনো বাস্তবসম্মত লক্ষ্য নেই, শুধু চোখ ধাঁধানো প্রতিশ্রুতি আর শাসকদের চাটুকারিতায় গড়া এক বিভ্রান্তিকর ভবিষ্যৎ। ক্ষমতার এই দানবীয় প্রতিযোগিতায় রাষ্ট্রের সম্পদ লুটপাট হচ্ছে, দুর্নীতি আরও গভীরে প্রোথিত হচ্ছে, আর সাধারণ মানুষ নিঃস্ব হয়ে পড়ছে।

এই বাস্তবতা কি আমাদের ভবিষ্যতকে অন্ধকারে ঠেলে দেবে? নাকি আমরা সাহসী হয়ে সত্যিকারের পরিবর্তনের পথে হাঁটব?

বারবার রক্ত দিয়ে স্বৈরশাসকের পতন ঘটানোর চেয়ে, আমাদের পুরো শাসনব্যবস্থার কাঠামোই বদলাতে হবে, যেন কোনো স্বৈরাচারী বা পরিবারতান্ত্রিক সরকার আর জন্ম নিতে না পারে। আমাদের দায়িত্ব শুধু ভোট দেওয়া নয়, বরং রাষ্ট্রের প্রতিটি স্তরে সচেতনভাবে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা। সমাজের প্রতিটি মানুষকে তাদের অধিকার, স্বাধীনতা ও ন্যায়বিচারের জন্য রুখে দাঁড়াতে হবে। দুর্নীতিবাজ শাসক ও তাদের সন্ত্রাসীদের রুখতে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই।

যদি আমরা আজও চুপ করে থাকি, তবে আগামী প্রজন্মের জন্য আমরা এক নিঃস্ব, পরাধীন ও ধ্বংসপ্রাপ্ত রাষ্ট্র রেখে যাব। তাই সময় এখনই—দুর্নীতির বিরুদ্ধে জেগে ওঠার, অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর এবং একটি সত্যিকারের গণতান্ত্রিক, ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার!

একটি সৃজনশীল, উন্নত এবং সমৃদ্ধ সমাজ গঠনের মূল ভিত্তি হলো— শিক্ষার উন্নতি, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের চর্চা, অর্থনৈতিক সমতা প্রতিষ্ঠা এবং সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা। এই উপাদানগুলোই একটি দেশকে উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয়ে যায়। কিন্তু দুঃখজনকভাবে, আমাদের বাস্তবতা একেবারেই ভিন্ন। এখানে শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য হারিয়ে গেছে; শিক্ষাব্যবস্থা হয়ে উঠেছে ক্ষমতাসীনদের হাতের পুতুল, যেখানে জ্ঞানার্জনের চেয়ে বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে দুর্নীতি, দলীয়করণ ও ব্যক্তিস্বার্থ।

একটি সমাজ তখনই টিকে থাকে যখন তার জনগণ শুধুমাত্র বেঁচে থাকার তাগিদে দৌড়ায় না, বরং নিজেদের অধিকারের জন্য সংগ্রাম করে এবং ভবিষ্যতের জন্য একটি সুষ্ঠু রাষ্ট্র গড়ে তুলতে সচেষ্ট হয়। কিন্তু আমাদের সমাজের প্রতিটি স্তরে এখন এমন একটি বাস্তবতা তৈরি হয়েছে, যেখানে মানুষের চেতনা ভোঁতা হয়ে গেছে। তারা রাষ্ট্রীয় অবিচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা দূরে থাক, বরং নিজেদের অধিকার নিয়েই বিভ্রান্ত।

বিশ্বের এক প্রান্তে যখন ধর্মীয় মূল্যবোধ, যেমন রমজান মাস, মানুষকে আত্মশুদ্ধি ও নৈতিকতার শিক্ষা দেয়, তখন সেই একই সমাজের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষা বোর্ড দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হলে তা নিছক ব্যক্তিগত ব্যর্থতা নয়— বরং রাষ্ট্রীয় কাঠামোর ভয়ানক দুর্বলতার প্রমাণ। এটি প্রমাণ করে যে, দুর্নীতি এখন শুধুমাত্র ব্যক্তির চরিত্র নষ্ট করছে না, বরং পুরো রাষ্ট্রযন্ত্রকে এক সাংবিধানিক অস্থিতিশীলতার দিকে ঠেলে দিয়েছে।

এই পরিস্থিতিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হলো— এভাবে আর কতদিন চলতে থাকবে? যদি সত্যিই আমাদের সমাজকে সুষ্ঠু, ন্যায্য এবং উন্নত ভবিষ্যতের দিকে পরিচালিত করতে হয়, তাহলে এই দুর্নীতিগ্রস্ত কাঠামো ভেঙে ফেলা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।

একটি বিপরীত চিত্র স্পষ্ট হয়ে উঠছে: বাংলাদেশে দুর্নীতি, সন্ত্রাসী কার্যক্রম ও পারিবারিক শাসন ব্যবস্থা রাষ্ট্র পরিচালনার মূল হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে। জনগণ এমন এক শাসকশ্রেণীর হাতে বন্দি, যারা কোনো পরিবর্তন চায় না— তাদের একমাত্র লক্ষ্য হলো নিজেদের ক্ষমতা ও পারিবারিক স্বার্থ টিকিয়ে রাখা।

এটি অনেকটা হামিলনের গ্রামবাসীদের মতো, যারা প্রথমে বুঝতেই পারেনি যে তারা ভুল পথে চলছে। বাংলাদেশের জনগণও যদি নিজেদের অধিকার, স্বাধীনতা এবং ন্যায়ের ব্যাপারে সচেতন না হয়, তবে তারা চিরকাল শাসকের পথ অনুসরণ করতেই থাকবে, নিজেদের ভবিষ্যতকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেবে।

আজকের বাংলাদেশ ভয়াবহ এক রাজনৈতিক বাস্তবতার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে। রাষ্ট্রীয় দুর্নীতি, পরিবারতন্ত্র এবং সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড এখন দেশের প্রতিটি স্তরে গভীরভাবে প্রবেশ করেছে। এটি এমন একটি কাঠামো, যেখানে জনগণ নিজেদের অধিকার ভুলে গিয়ে শাসকদের প্রতি অন্ধ আনুগত্য প্রদর্শন করছে। কিন্তু এই আনুগত্য কোনো উন্নয়ন বা কল্যাণ বয়ে আনবে না— বরং এটি হামিলনের বাঁশিওয়ালার গল্পের মতো জনগণের জীবনকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাবে।

এই সন্ত্রাসী শক্তি, দুর্নীতি এবং অযোগ্য নেতৃত্ব দেশের সম্ভাবনাকে ধ্বংস করছে। দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়, যতদিন না আমরা এই কাঠামোকে ভেঙে নতুন ব্যবস্থা গড়তে পারি। জনগণের উচিত অন্ধ আনুগত্যের পথ ছেড়ে সচেতন ও শিক্ষিত হয়ে নতুন দিগন্তের দিকে এগিয়ে যাওয়া। অন্যথায়, দেশের ভবিষ্যৎ অন্ধকারের অতলে তলিয়ে যাবে।
একটি কার্যকর, ন্যায়সংগত ও আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ে তোলার একমাত্র উপায় হলো পুরোনো, দুর্নীতিগ্রস্ত কাঠামোর পরিবর্তে নতুন কাঠামো তৈরি করা।

এই কাঠামোর ভিত্তি হবে—

শিক্ষায় স্বচ্ছতা ও দক্ষতা। প্রশাসনে জবাবদিহিতা। বিচারব্যবস্থায় নিরপেক্ষতা। অর্থনীতিতে সমতা ও ন্যায়বিচার।

কিন্তু বর্তমান বাস্তবতায়, রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিটি খাতই দলীয়করণ ও দুর্নীতির শিকার, যার ফলে কাঠামোগত সংস্কার ছাড়া কোনো উন্নয়ন সম্ভব নয়।

বিশেষ করে শিক্ষাব্যবস্থা আজ দলীয়করণ, দুর্নীতি ও প্রশাসনিক অব্যবস্থাপনার জালে বন্দি। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক শিক্ষাপর্যন্ত সর্বত্র দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার দৃষ্টিগোচর হয়—

প্রশাসনিক পদে দলীয় নিয়োগ: বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও প্রশাসনিক পদগুলোতে রাজনৈতিক আনুগত্যকে প্রাধান্য দিয়ে নিয়োগ দেওয়া হয়, ফলে যোগ্যদের জায়গা সংকুচিত হয়ে যায়।
🔴 ভর্তি ও নিয়োগ বাণিজ্য: অর্থের বিনিময়ে ছাত্র ভর্তি ও শিক্ষক নিয়োগ করা হয়, ফলে প্রকৃত মেধাবীরা বঞ্চিত হয় এবং শিক্ষার মান ধ্বংস হয়ে যায়।
🔴 ক্যাম্পাসে দলীয় সন্ত্রাস: ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠন ক্যাম্পাসে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে— হলে সিট বাণিজ্য, সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপর হামলা, এবং ভিন্নমত দমন এখন স্বাভাবিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
🔴 পরীক্ষায় অনিয়ম ও সেশনজট: প্রশ্নফাঁস, প্রভাবশালীদের হস্তক্ষেপ এবং প্রশাসনিক দুর্নীতির কারণে প্রকৃত মূল্যায়ন অসম্ভব হয়ে উঠেছে।
🔴 শিক্ষাকে ব্যবসায় পরিণত করা: উচ্চশিক্ষার ব্যয়বৃদ্ধি, সরকারি প্রতিষ্ঠানে ঘুষ সংস্কৃতি এবং কোচিং বাণিজ্যের কারণে সাধারণ মানুষের জন্য শিক্ষার সুযোগ সীমিত হয়ে পড়েছে।

যে শিক্ষাব্যবস্থায় রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতি ঢুকে গেছে, সেখান থেকে পাস করা শিক্ষার্থীরা ভবিষ্যতে রাষ্ট্রের দায়িত্বে গেলে কীভাবে দুর্নীতিমুক্ত থাকবে?

আজকের শিক্ষার্থী যখন ঘুষ দিয়ে চাকরি নেয়, তখন সে ভবিষ্যতে সৎ থাকার কথা ভাববেই বা কেন? ফলে, এই চক্র বন্ধ না হলে দুর্নীতি কেবল আরও শক্তিশালী হয়ে টিকে থাকবে।

এই ভয়ংকর বাস্তবতা থেকে মুক্তি পেতে হলে আমাদের রুখে দাঁড়াতে হবে।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দলীয় হস্তক্ষেপ বন্ধ করতে হবে। দুর্নীতিবাজ প্রশাসকদের অপসারণ করতে হবে। স্বাধীন ও নিরপেক্ষ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নিশ্চিত করতে হবে। শিক্ষার মানোন্নয়ন নিশ্চিত করতে হবে, যাতে যোগ্যতা ও মেধা ফিরে আসে।

এখন সময় এসেছে দেশের জনগণের জেগে ওঠার। যদি আমরা পরিবর্তন না আনি, তাহলে শাসকগোষ্ঠীর লুটপাট অব্যাহত থাকবে এবং আমাদের ভবিষ্যৎ চিরতরে ধ্বংস হয়ে যাবে।

সত্যিকার পরিবর্তনের জন্য— সংগ্রাম শুরু হোক আজই!

বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক অবস্থা চরম দুর্নীতি, সন্ত্রাস ও পরিবারতন্ত্রের বেড়াজালে বন্দি। এই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে হলে একটি নতুন কাঠামো গড়ে তুলতে হবে, যেখানে সুশাসন, ন্যায়বিচার এবং প্রগতিশীল সমাজের ভিত্তি স্থাপন করা হবে। এটি শুধু রাজনৈতিক পরিবর্তনের প্রশ্ন নয়, বরং গোটা রাষ্ট্রব্যবস্থার আমূল সংস্কার ছাড়া উন্নয়ন সম্ভব নয়।

একটি কার্যকর রাষ্ট্রের প্রথম শর্ত হলো দক্ষ, স্বচ্ছ ও রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত প্রশাসন। বর্তমান প্রশাসন দলীয় আনুগত্যের ভিত্তিতে পরিচালিত হয়, যেখানে মেধা ও দক্ষতার কোনো মূল্য নেই। এটি পরিবর্তন করতে হলে—

রাজনৈতিক হস্তক্ষেপহীন প্রশাসন: প্রশাসনের সকল নিয়োগ ও পদোন্নতি শুধুমাত্র মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে দিতে হবে, যাতে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো প্রকৃত দক্ষ লোক দ্বারা পরিচালিত হয়।
ডিজিটাল প্রশাসন: সরকারি কার্যক্রমে ব্লকচেইন ও এআই প্রযুক্তি সংযুক্ত করতে হবে, যাতে দুর্নীতির সুযোগ কমে এবং স্বচ্ছতা নিশ্চিত হয়।
নাগরিক সেবার সহজলভ্যতা: প্রশাসনিক হয়রানি বন্ধে অনলাইন পোর্টাল, একক হেল্পডেস্ক এবং ডিজিটাল সেবা সম্প্রসারণ করতে হবে, যাতে জনগণ দ্রুত ও কার্যকর সেবা পায়।

বর্তমান বিচারব্যবস্থা রাজনৈতিক প্রভাব ও দুর্নীতির শিকার। বিচারব্যবস্থার স্বাধীনতা ছাড়া ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। এজন্য—
স্বাধীন বিচার বিভাগ: বিচারব্যবস্থাকে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক হস্তক্ষেপমুক্ত করতে হবে এবং আদালতকে পূর্ণ স্বাধীনতা দিতে হবে।
দ্রুত ও ডিজিটাল বিচার: মামলা নিষ্পত্তির দীর্ঘসূত্রিতা দূর করতে অনলাইন কোর্ট ও ই-জুডিশিয়ারি ব্যবস্থা চালু করতে হবে, যাতে বিচার সহজ ও দ্রুত হয়।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংস্কার: পুলিশ ও অন্যান্য বাহিনীগুলোকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করে তাদেরকে জনগণের সেবায় আরও কার্যকর করতে হবে।

দুর্নীতি ও অর্থনৈতিক বৈষম্যের কারণে দেশের সম্পদ কিছু গোষ্ঠীর হাতে কেন্দ্রীভূত হচ্ছে। অর্থনীতিকে পুনর্গঠনের জন্য—

ব্যাংক ও শেয়ারবাজারের জবাবদিহিতা: ব্যাংক লুট ও শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারির বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রণয়ন ও প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।
ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য সহায়তা: নতুন ব্যবসা ও স্টার্টআপগুলোকে স্বল্পসুদে ঋণ এবং কর সুবিধা দিতে হবে, যাতে অর্থনীতি উৎপাদনমুখী হয়।
অর্থপাচার রোধ: কালো টাকা বৈধ করার সুযোগ বন্ধ করতে হবে এবং বিদেশে অর্থপাচার কঠোরভাবে দমন করতে হবে।

বাংলাদেশে এখনো শ্রেণিভেদ, বৈষম্য ও ক্ষমতার অপব্যবহার প্রকট। একটি সমান সুযোগের সমাজ গড়তে হলে—
সমান অধিকার ও সুযোগ: শিক্ষা, চাকরি ও অন্যান্য ক্ষেত্রে শ্রেণিভিত্তিক বৈষম্য দূর করতে হবে।
দুর্নীতিগ্রস্তদের সামাজিক বর্জন: দুর্নীতিবাজ ব্যক্তিদের সমাজে গ্রহণযোগ্যতা কমাতে হবে এবং তাদেরকে সামাজিকভাবে প্রত্যাখ্যান করতে হবে।
জনসচেতনতা বৃদ্ধি: জনগণকে তাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন করা এবং রাষ্ট্রের অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী করে তুলতে হবে।

বিশ্ব এখন চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের যুগে, কিন্তু বাংলাদেশ এখনো দুর্নীতিগ্রস্ত ও সেকেলে প্রশাসনিক কাঠামোর মধ্যে আটকে আছে। এর পরিবর্তন আনতে হলে—

ডিজিটাল প্রশাসন ও বিচার ব্যবস্থা: ব্লকচেইন ও এআই প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে সরকারি কার্যক্রম স্বচ্ছ ও দক্ষ করতে হবে।
ডিজিটাল অর্থনীতি: সকল লেনদেন স্বচ্ছ করতে হবে এবং ফিনটেক ও ক্যাশলেস অর্থনীতির সম্প্রসারণ করতে হবে, যাতে কালো টাকার লেনদেন কমে।
প্রযুক্তিনির্ভর সামাজিক ও স্বাস্থ্যসেবা: টেলিমেডিসিন, অনলাইন শিক্ষা এবং ডিজিটাল কল্যাণমূলক কার্যক্রম সহজলভ্য করতে হবে।

বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি অনেকটা হামিলনের গ্রামবাসীদের মতো—যেখানে জনগণ অন্ধভাবে নেতৃত্বের পেছনে ছুটছে, কিন্তু তারা বুঝতে পারছে না যে এই পথ তাদের ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।

এই পরিস্থিতি থেকে মুক্তির একমাত্র পথ হলো কাঠামো ভেঙে একটি নতুন সুশাসন, ন্যায়বিচার ও গণতন্ত্রভিত্তিক রাষ্ট্র গড়ে তোলা। এজন্য—

শিক্ষাব্যবস্থা সংস্কার করতে হবে, যাতে মেধা ও নৈতিকতা অগ্রাধিকার পায়। প্রশাসনকে দুর্নীতি ও দলীয়করণমুক্ত করতে হবে, যাতে যোগ্য ও দক্ষ নেতৃত্ব তৈরি হয়। অর্থনৈতিক নীতিগুলোকে দুর্নীতিমুক্ত করে জনগণের জন্য সমৃদ্ধির সুযোগ তৈরি করতে হবে।

এটি শুধু রাজনৈতিক পরিবর্তন নয়, বরং পুরো শিক্ষাব্যবস্থায়, সামাজিক মনোভাব এবং প্রশাসনিক কাঠামোয় আমূল পরিবর্তন আনতে হবে।

আমাদের অন্ধ আনুগত্য ও রাজনৈতিক সন্ত্রাসের বেড়াজাল থেকে মুক্তি পেতে হবে। কাঠামো ভেঙে নতুন ব্যবস্থা তৈরি করতে হবে। দুর্নীতি ও পরিবারতন্ত্রকে চিরতরে উৎখাত করতে হবে। সুশাসন, গণতন্ত্র ও সমাজের উন্নয়ন ছাড়া বাংলাদেশের মুক্তি সম্ভব নয়।

এখনই নতুন কাঠামো গড়ার সময়! সুশাসন, ন্যায়বিচার ও জনগণের ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করতে হলে আমাদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। বাংলাদেশকে প্রকৃত অর্থে একটি সুষ্ঠু, স্বচ্ছ ও স্বাধীন দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে হলে এখনই এই পরিবর্তন আনতে হবে!

রহমান মৃধা, গবেষক ও লেখক
(সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন)
Rahman.Mridha@gmail.com

শেয়ার করুন:-
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
পুরো সংবাদটি পড়ুন

পুঁজিবাজারের সর্বশেষ

খুলনা পাওয়ার খুলনা পাওয়ার
পুঁজিবাজার4 hours ago

মুনাফায় খুলনা পাওয়ার

অর্থসংবাদ whatsapp চ্যানেল ফলো করুন পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি খুলনা পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (কেপিসিএল) গত ৩১ মার্চ,২০২৪ তারিখে সমাপ্ত তৃতীয় প্রান্তিকের...

খুলনা পাওয়ার খুলনা পাওয়ার
পুঁজিবাজার4 hours ago

তাল্লু স্পিনিং মিলসের তৃতীয় প্রান্তিক প্রকাশ

অর্থসংবাদ whatsapp চ্যানেল ফলো করুন পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বস্ত্র খাতের খাতের কোম্পানি তাল্লু স্পিনিং মিলস পিএলসি গত ৩১ মার্চ,২০২৫ তারিখে সমাপ্ত...

খুলনা পাওয়ার খুলনা পাওয়ার
পুঁজিবাজার4 hours ago

ব্যাংক এশিয়ার লভ্যাংশ ঘোষণা

অর্থসংবাদ whatsapp চ্যানেল ফলো করুন পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংক খাতের কোম্পানি ব্যাংক এশিয়া পিএলসি গত ৩১ ডিসেম্বর,২০২৪ তারিখে সমাপ্ত হিসাববছরের জন্য...

খুলনা পাওয়ার খুলনা পাওয়ার
পুঁজিবাজার4 hours ago

লিগ্যাসি ফুটওয়্যারের লোকসান বেড়েছে ১১৪ শতাংশ

অর্থসংবাদ whatsapp চ্যানেল ফলো করুন পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ট্যানারি খাতের কোম্পানি লিগ্যাসি ফুটওয়্যার লিমিটেড গত ৩১ মার্চ,২০২৫ তারিখে সমাপ্ত তৃতীয় প্রান্তিকের...

খুলনা পাওয়ার খুলনা পাওয়ার
পুঁজিবাজার4 hours ago

ওইম্যাক্সের আয় কমেছে ৪৬ শতাংশ

অর্থসংবাদ whatsapp চ্যানেল ফলো করুন পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি ওইম্যাক্স ইলেকট্রোডস লিমিটেড গত ৩১ মার্চ,২০২৫ তারিখে সমাপ্ত তৃতীয় প্রান্তিকের (জানুয়ারি’২৫-মার্চ’২৫) অনিরীক্ষিত...

খুলনা পাওয়ার খুলনা পাওয়ার
পুঁজিবাজার5 hours ago

বঙ্গজের তৃতীয় প্রান্তিক প্রকাশ

অর্থসংবাদ whatsapp চ্যানেল ফলো করুন পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত খাদ্য খাতের কোম্পানি বঙ্গজ লিমিটেড গত ৩১ মার্চ,২০২৫ তারিখে সমাপ্ত তৃতীয় প্রান্তিকের (জুলাই’২৪-মার্চ’২৫)...

খুলনা পাওয়ার খুলনা পাওয়ার
পুঁজিবাজার5 hours ago

এমটিবির আয় কমেছে ১১ শতাংশ

অর্থসংবাদ whatsapp চ্যানেল ফলো করুন পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংক খাতের কোম্পানি মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক পিএলসি (এমটিবি) গত ৩১ মার্চ,২০২৫ তারিখে সমাপ্ত...

Advertisement
Advertisement
AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

সোশ্যাল মিডিয়া

তারিখ অনুযায়ী সংবাদ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
 
১০
১১১৩১৫১৬
১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭৩০৩১