অর্থনীতি
আবারও ইতিহাসের সর্বোচ্চ স্বর্ণের দাম

দেশের বাজারে আবারও বাড়ানো হয়েছে সোনার দাম। সবচেয়ে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের এক ভরি (১১.৬৬৪ গ্রাম) সোনার দাম ৩ হাজার ৩৩ টাকা বাড়িয়ে নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ৬৫ হাজার ২০৯ টাকা। দেশের বাজারে সোনার এত দাম আগে কখনো হয়নি।
স্থানীয় বাজারে তেজাবী সোনার (পাকা সোনা) দাম বাড়ার পরিপ্রেক্ষিতে এই দাম বাড়ানো হয়েছে। আগামীকাল বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) থেকে নতুন দাম কার্যকর করা হবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস)।
এর আগে গত ১৩ এপ্রিল সবচেয়ে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের এক ভরি সোনার দাম ৪ হাজার ১৮৭ টাকা বাড়িয়ে নির্ধারণ করা হয় ১ লাখ ৬৩ হাজার ২১৪ টাকা। এতদিন দেশের বাজারে এটিই সোনার সর্বোচ্চ দাম ছিল। এই রেকর্ড দাম নির্ধারণ করার একদিন পর অর্থাৎ ১৪ এপ্রিল সোনার দাম কিছুটা কমানো হয়। এখন আবার দাম বাড়ানো হলো। এতে অতিতের সকল রেকর্ড ভেঙে নতুন উচ্চতায় উঠেছে সোনা।
বুধবার (১৬ এপ্রিল) বাজুস স্ট্যান্ডিং কমিটি অন প্রাইসিং অ্যান্ড প্রাইস মনিটরিং কমিটি বৈঠকে করে এই দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পরবর্তীতে কমিটির চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমান সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
নতুন মূল্য অনুযায়ী, সবচেয়ে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের এক ভরি সোনার দাম ৩ হাজার ৩৩ টাকা বাড়িয়ে নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ৬৫ হাজার ২০৯ টাকা। ২১ ক্যারেটের এক ভরি সোনার দাম ২ হাজার ৮৯২ টাকা বাড়িয়ে ১ লাখ ৫৭ হাজার ৬৯৭ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
এছাড়া ১৮ ক্যারেটের এক ভরি সোনার দাম ২ হাজার ৪৮৪ টাকা বাড়িয়ে ১ লাখ ৩৫ হাজার ১৭৪ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর সনাতন পদ্ধতির এক ভরি সোনার দাম ২ হাজার ১২২ টাকা বাড়িয়ে ১ লাখ ১১ হাজার ৬৫৯ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
গত ১৪ এপ্রিল সবচেয়ে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের এক ভরি সোনার দাম ১ হাজার ৩৮ টাকা কমিয়ে নির্ধারণ করা হয় ১ লাখ ৬২ হাজার ১৭৬ টাকা। ২১ ক্যারেটের এক ভরি সোনার দাম ৯৯১ টাকা কমিয়ে ১ লাখ ৫৪ হাজার ৮০৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়।
এছাড়া ১৮ ক্যারেটের এক ভরি সোনার দাম ৮৫১ টাকা কমিয়ে ১ লাখ ৩২ হাজার ৬৯০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। আর সনাতন পদ্ধতির এক ভরি সোনার দাম ৭৩৪ টাকা কমিয়ে ১ লাখ ৯ হাজার ৫৩৭ টাকা নির্ধারণ করা হয়।। আজ বুধবার এ দামেই সোনা বিক্রি হয়েছে।
সোনার দাম বাড়ানো হলেও অপরিবর্তিত রয়েছে রুপার দাম। ২২ ক্যারেটের এক ভরি রুপার দাম ২ হাজার ৫৭৮ টাকা, ২১ ক্যারেটের এক ভরি রুপার দাম ২ হাজার ৪৪৯ টাকা, ১৮ ক্যারেটের এক ভরি রূপার দাম ২ হাজার ১১১ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির এক ভরি রুপার দাম ১ হাজার ৫৮৬ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
কাফি

অর্থনীতি
স্বল্প-কার্বন চাল উৎপাদনে ১.৫ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে এডিবি

গেটস ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) এবং সিজিআইএআর আজ (সোমবার) একটি নতুন উদ্যোগ চালু করেছে। যা স্থায়ী এবং স্বল্প-কার্বন নির্গমনভিত্তিক চাল উৎপাদনে বিনিয়োগ বাড়াতে সহায়তা করবে। বাংলাদেশ, কম্বোডিয়া, চিন, পাকিস্তান এবং ফিলিপাইনে এ চালের উৎপাদন বাড়াতে বড় বিনিয়োগের পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এশিয়া এবং প্যাসিফিকের লাখ লাখ দুর্বল ক্ষুদ্র কৃষক পরিবারের জীবন উন্নত করতেও এটি সহায়তা করবে।
সোমবার (৯ জুন) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায় এডিবি।
ভাত এই অঞ্চলের জীবনরেখা উল্লেখ করে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এটি প্রতিদিন এই অঞ্চলের মোট জনসংখ্যার অর্ধেকের বেশি মানুষের খাবারের চাহিদা মেটায় এবং মিলিয়ন মিলিয়ন গ্রামীণ দরিদ্র মানুষের জীবিকার ভিত্তি। তবে ধান চাষ বাড়তি চাপের মুখোমুখি হচ্ছে। উৎপাদন কমে যাওয়া এবং জল সম্পদের সংস্থাপন থেকে শুরু করে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনে নানা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছে। এই চ্যালেঞ্জগুলোর সমাধান করা না হলে, খাদ্য নিরাপত্তা এবং সবচেয়ে দরিদ্র এবং ঝুঁকিতে থাকা সম্প্রদায়গুলোর উন্নয়নকে বিপদে ফেলবে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ধান এশিয়ায় খাদ্য নিরাপত্তার জন্য অপরিহার্য। এটি এই অঞ্চলের ক্যালরির এক চতুর্থাংশেরও বেশি এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় প্রয়োজনীয় ক্যালরির অর্ধেকের চাহিদা মেটায়। শত শত মিলিয়ন ছোট কৃষকের জন্য, ধান শুধুমাত্র খাদ্য নয়, এটি তাদের জীবিকা নির্বাহের উৎস।
এডিবির সহ সভাপতি ফাতিমা ইয়াসমিন বলেন, আজ সেই জীবিকা ক্রমবর্ধমানভাবে চরম আবহাওয়া এবং পরিবেশগত অবক্ষয়ের কারণে হুমকির মুখে। গেটস ফাউন্ডেশনের সঙ্গে সমন্বিতভাবে অর্থায়িত নবনির্মিত এডিবি–সিজিআইএআর ক্লিয়ারিং হাউজ ফ্যাসিলিটির মাধ্যমে এই উদ্যোগটি অঞ্চলের সবচেয়ে দরিদ্র জনগণের জন্য টেকসই পানি ব্যবহার, অন্তর্বর্তী মূল্য শৃঙ্খল এবং উন্নত পুষ্টির সঙ্গে স্থিতিস্থাপক, উচ্চ ফলনশীল এবং নিম্ন-নিষ্ক্রিয় কৃষি অনুশীলনকে উৎসাহিত করবে।
এডিবির বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এডিবি ২০২৫-২০৩০ সালের মধ্যে এই প্রকল্পের মাধ্যমে ১ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি বিনিয়োগ করার পরিকল্পনা করছে যা টেকসই উপায়ে উৎপাদনশীলতার উন্নয়ন করতে, কঠোর জলবায়ু পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে এবং পানি ও কার্বনের পরিমাণ কমাতে সাহায্য করবে। এটি ২০৩০ সালের মধ্যে খাদ্যব্যবস্থা রূপান্তরের জন্য এডিবির ৪০ বিলিয়ন ডলারের বৃহত্তর প্রতিশ্রুতির একটি অংশ, যা মে মাসে ঘোষণা করা হয়েছিল।
আন্তর্জাতিক চাল গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইআরআরআই) এর ডিরেক্টর জেনারেল ইয়ভন পিন্টো বলেন, এই যৌথ উদ্যোগটি এডিবির সঙ্গে সিজিআইএআর এর কৌশলগত সহযোগিতাকে আরও জোরদার করবে।
তিনি বলেন, এডিবি এবং গেটস ফাউন্ডেশনসহ অংশীদারদের সঙ্গে আমরা এশিয়ার চাল খাতের টেকসই এবং স্থিতিস্থাপক রূপান্তর করতে পারি এবং বর্তমানে ও ভবিষ্যতে লাখ লাখ ক্ষুদ্র কৃষকের জীবনকে পরিবর্তন করতে পারি।
অর্থনীতি
দেরিতে লবণ দেওয়ায় চামড়ার কাঙ্ক্ষিত দাম মেলেনি: শিল্প উপদেষ্টা

চলতি বছরে কোরবানির পশুর চামড়ার দাম কমে যাওয়ার পেছনে দেরিতে লবণ সরবরাহকেই দায়ী করছেন শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান।
সোমবার (৯ জুন) ঈদের দুই দিন পর সাভারের চামড়া শিল্পনগরী পরিদর্শনে যান শিল্প উপদেষ্টা। পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ মন্তব্য করেন।
আদিলুর রহমান খান বলেন, চামড়ায় দেরিতে লবণ দেওয়ার কারণে চলতি বছর কোরবানির পশুর চামড়ায় অনেকে কাঙ্ক্ষিত দাম পাননি। তবে লবণজাত চামড়ার দর ঠিকই আছে। সরকার তৎপর ছিল বলেই এ বছর খুব কম সংখ্যক চামড়া নষ্ট হয়েছে।
চামড়ার দাম কমার বিষয়ে আড়তদার ও মৌসুমি ব্যবসায়ীদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ ও সিন্ডিকেটের অভিযোগ উঠার প্রসঙ্গ উঠলে তিনি জানান, চামড়া শিল্পের সুরক্ষায় সরকার সব ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। চলতি বছর ৩০ হাজার টন লবণ বিতরণ করা হয়েছে।
ল্যাম্পি স্কিন রোগের কারণে চলতি বছর ৩০ শতাংশ চামড়া নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা আছে বলেও উল্লেখ করা হয় সংবাদ সম্মেলনে।
এদিকে গত বছরের তুলনায় এবার কাঁচা চামড়ার দাম বেশি বলে দাবি করেছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দিন। রোববার (০৮ জুন) রাজধানীতে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।
উপদেষ্টা বলেন, আমরা চামড়ার দাম নির্ধারণ করেছিলাম লবণসহ। ৭০০-৮০০ টাকায় চামড়া বিক্রি হচ্ছে। কিছু মৌসুমি ব্যবসায়ী চামড়া নিয়ে আধা পচা করে ফেলছে। এই আধা পচা চামড়া এই দামে বিক্রি হওয়া অনেক বেশি। যেটা ভালো চামড়া সেটা এক হাজার দুশ থেকে এক হাজার তিনশ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
তিনি বলেন, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই লবণ দেওয়া চামড়া সরকার নির্ধারিত দামেই বিক্রি করছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে সোশ্যাল ও মেইনস্ট্রিম মিডিয়ায় চামড়ার দাম নিয়ে ভুল তথ্য ছড়ানো হচ্ছে। কিছু অসাধু ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মিলে চামড়ার বাজারে ধস নামানোর পরিকল্পনা ছাড়া আর কিছুই না।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্যানুসারে, এ বছর কোরবানির পশুর চাহিদা প্রায় ১ কোটি ৩ লাখ ৮০ হাজার। সেখানে গরু-ছাগলসহ কোরবানির জন্য প্রস্তুত ছিল প্রায় ১ কোটি ২৪ লাখ ৪৭ হাজার পশু। চলতি বছর কোরবানির ঈদের মৌসুমে ৮০ থেকে ৮৫ লাখ চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছেন ট্যানারি মালিকরা।
অর্থনীতি
ব্যাংক খাতে কমেছে কোটিপতি গ্রাহকের সংখ্যা

দেশের ব্যাংক খাতে কোটি টাকার বেশি আমানত থাকা গ্রাহকের সংখ্যা কমে গেছে। গত বছরের ডিসেম্বর শেষে দেশের ব্যাংক খাতে কোটি টাকার বেশি আমানত থাকা গ্রাহকের সংখ্যা ছিল এক লাখ ২২ হাজার ৮১টি। চলতি বছরের মার্চ শেষে সেই সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে এক লাখ ২১ হাজার ৩৬২টিতে। অর্থাৎ, তিন মাসে ৭১৯টি হিসাব কমেছে।
কোটি টাকার গ্রাহকের সংখ্যা কমার কারণ হিসেবে ব্যাংক খাত সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, এ ধরনের পরিবর্তনের পেছনে একাধিক কারণ রয়েছে। বিশেষ করে, সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের ফলে কিছু বিত্তশালী ব্যক্তির ব্যাংক হিসাব তলব ও জব্দ করা হচ্ছে। এর মধ্যে সাবেক এমপি, মন্ত্রী এবং দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের ব্যাংক হিসাবও অন্তর্ভুক্ত। এ কারণে অনেক বড় আমানতকারী গ্রাহক তাদের অর্থ সরিয়ে নিচ্ছেন।
এ ছাড়া বেশ কিছু বড় প্রতিষ্ঠানও তাদের ব্যাংক হিসাব কমিয়ে দিচ্ছে। ব্যাংকিং খাতে প্রতিষ্ঠানের হিসাব সংখ্যা বেড়ে গেলেও এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে একাধিক অ্যাকাউন্ট থাকার কারণে একক হিসাবের সংখ্যা কমতে পারে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলেছেন, কোটি টাকার হিসাব মানেই কোটিপতি ব্যক্তির হিসাব নয়। কারণ ব্যাংকে এক কোটি টাকার বেশি অর্থ রাখার তালিকায় ব্যক্তি ছাড়া অনেক প্রতিষ্ঠানও রয়েছে। আবার ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান কতটি ব্যাংক হিসাব খুলতে পারবে, তার কোনো নির্দিষ্ট সীমা নেই। ফলে এক প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির একাধিক হিসাব আছে। পাশাপাশি অনেক সরকারি সংস্থারও কোটি টাকার হিসাব রয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, কোটি টাকার হিসাবধারী গ্রাহকের সংখ্যা কমলেও এসব অ্যাকাউন্টে জমা টাকার পরিমাণ বেড়েছে।
২০২৪ সালের ডিসেম্বর শেষে এসব অ্যাকাউন্টে জমা ছিল ৭ লাখ ৭৫ হাজার কোটি টাকা, যা চলতি বছরের মার্চ শেষে বেড়ে দাঁড়ায় ৭ লাখ ৮৩ হাজার ৬৫৩ কোটি টাকা।
এ ছাড়া আলোচিত সময় ব্যাংক খাতে মোট হিসাবের সংখ্যা ও জমার পরিমাণ দুটোই বেড়েছে।
ব্যাংক খাতে মোট অ্যাকাউন্টের (হিসাব) সংখ্যা ১৬ কোটি ৩২ লাখ ৪৭ হাজার ৫৩২টি। এসব হিসাবে মোট আমানতের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১৮ লাখ ৮৩ হাজার ৭১১ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০২৪ সালের মার্চ শেষে দেশের ব্যাংক খাতে মোট অ্যাকাউন্টের (হিসাব) সংখ্যা ১৬ কোটি ৫৭ লাখ ৬ হাজার ৮২১টি। এসব হিসাবে মোট আমানতের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১৯ লাখ ২৩ হাজার ৫০৪ কোটি টাকা।
গত ডিসেম্বর শেষে ব্যাংক খাতে মোট হিসাব ছিল ১৬ কোটি ৩২ লাখ ৪৭ হাজার ৫৩২টি। এসব হিসাবে মোট আমানতের স্থিতি ছিল ১৮ লাখ ৮৩ হাজার ৭১১ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে দেশে কোটিপতি আমানতকারী ছিল ৫ জন, ১৯৭৫ সালে তা ৪৭ জনে উন্নীত হয়। ১৯৮০ সালে কোটিপতি হিসাবধারীর সংখ্যা ছিল ৯৮টি। এরপর ১৯৯০ সালে ৯৪৩টি, ১৯৯৬ সালে ২ হাজার ৫৯৪ জন, ২০০১ সালে ৫ হাজার ১৬২টি, ২০০৬ সালে ৮ হাজার ৮৮৭টি এবং ২০০৮ সালে ছিল ১৯ হাজার ১৬৩টি।
২০২০ সালের ডিসেম্বর শেষে কোটি টাকা আমানতকারীর সংখ্যা দাঁড়ায় ৯৩ হাজার ৮৯০টি। ২০২১ সালের ডিসেম্বর বেড়ে তা দাঁড়ায় ১ লাখ ১৯৭৬টিতে। ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সেই হিসাবের সংখ্যা ছিল এক লাখ ৯ হাজার ৯৪৬টি। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে দাঁড়ায় এক লাখ ১৬ হাজার ৯০৮টিতে। গত বছরের জুনে এমন হিসাবের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় এক লাখ ১৮ হাজার ৭৮৪টিতে, সেপ্টেম্বরে এক লাখ ১৭ হাজার ১২৭টিতে এবং ডিসেম্বরে বেড়ে দাঁড়ায় এক লাখ ২২ হাজার ৮১টিতে।
অর্থনীতি
প্রবাসী আয়ের শীর্ষে ঢাকা, পিছিয়ে লালমনিরহাট

চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের ১১ মাসে (জুলাই-মে) দেশে দুই হাজার ৭৫০ কোটি ৬৩ লাখ ডলার প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স এসেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স এসেছে ঢাকা জেলায়, ৯২৬ কোটি ১৩ লাখ ডলার। আর সবচেয়ে কম রেমিট্যান্স এসেছে লালমনিরহাটে, মাত্র ২ কোটি ৪১ লাখ ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ জেলাভিত্তিক প্রবাসী আয়ের তথ্য থেকে এ চিত্র পাওয়া গেছে। এতে দেখা গেছে, দেশের আটটি বিভাগের মধ্যে বরাবরের মতো ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের জেলাগুলোয় প্রবাসী আয়ের প্রবাহ সবচেয়ে বেশি। আর রংপুর ও ময়মনসিংহ বিভাগে সবচেয়ে কম।
বিভাগভিত্তিক তথ্যে দেখা যায়, গত জুলাই-মে সময়ে সবচেয়ে বেশি প্রবাসী আয় এসেছে ঢাকা বিভাগে, যা মোট রেমিট্যান্সের ৪৯ শতাংশ। এরপর রয়েছে চট্টগ্রামে ২৭ শতাংশ, সিলেটে ৮ দশমিক ৮৬ শতাংশ, খুলনায় ৪ দশমিক ৪৭ শতাংশ, রাজশাহীতে ৩ দশমিক ৪১ শতাংশ ও বরিশালে প্রায় ৩ শতাংশ। আর মোট রেমিট্যান্সের মধ্যে সবচেয়ে কম প্রবাসী আয় এসেছে দুই বিভাগে– রংপুরে ১ দশমিক ৫৭ শতাংশ এবং ময়মনসিংহে ২ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের ১১ মাসে দেশে সবচেয়ে বেশি প্রবাসী আয় এসেছে ঢাকা জেলায়। এরপর রয়েছে যথাক্রমে চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, সিলেট ও নোয়াখালী জেলার অবস্থান। জুলাই-মে সময়ে ঢাকা জেলায় ২১৩ কোটি ৮৭ লাখ ডলার, চট্টগ্রাম জেলায় ২২৫ কোটি ডলার প্রবাসী আয় এসেছে। এ ছাড়া কুমিল্লায় ১৪৪ কোটি, সিলেটে ১২৫ কোটি ও নোয়াখালী জেলায় ৮৩ কোটি ডলার প্রবাসী আয় এসেছে।
কম রেমিট্যান্সের আসছে যেসব জেলায়
চলতি অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে প্রবাসী আয়ে সবচেয়ে পিছিয়ে রয়েছে লালমনিরহাট জেলা। এই জেলায় আলোচিত সময়ে প্রবাসী আয় এসেছে মাত্র দুই কোটি ৪১ লাখ ডলার। প্রবাসী আয় কম আসার তালিকায় অপর চারটি জেলা হলো– রাঙামাটি, বান্দরবান, পঞ্চগড় ও ঠাকুরগাঁও। রাঙামাটিতে দুই কোটি ৪৬ লাখ, বান্দরবানে দুই কোটি ৪৮ লাখ ডলার, পঞ্চগড়ে ৩ কোটি ও ঠাকুরগাঁওয়ে ৩ কোটি ৪৯ লাখ ডলারের প্রবাসী আয় এসেছে।
চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ১৯১ কোটি ৩৭ লাখ ৭০ হাজার ডলার রেমিট্যান্স এসেছে এবং আগস্টে এসেছে ২২২ কোটি ১৩ লাখ ২০ হাজার মার্কিন ডলার, সেপ্টেম্বরে ২৪০ কোটি ৪১ লাখ, অক্টোবরে ২৩৯ কোটি ৫০ লাখ মার্কিন ডলার, নভেম্বরে ২২০ কোটি ডলার, ডিসেম্বরে ২৬৪ কোটি ডলার, জানুয়ারিতে ২১৯ কোটি এবং ফেব্রুয়ারিতে ২৫২ কোটি ৮০ লাখ ডলার, মার্চে ৩২৯ কোটি ডলার, এপ্রিলে ২৭৫ কোটি ডলার এবং মে মাসে ২৯৭ কোটি রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। অর্থাৎ বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর টানা ৮ মাসে দুই বিলিয়ন এবং মার্চে তিন বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিট্যান্স এসেছে বাংলাদেশে।
অর্থনীতি
সরকার নির্ধারিত দামে বিক্রি হচ্ছে না চামড়া, হতাশ মৌসুমি ব্যবসায়ীরা

রাজধানীতে সরকার নির্ধারিত দামে বিক্রি হচ্ছে না কাঁচা চামড়া। প্রতিবারের মতো এবারও ঢাকায় কোরবানির গরুর কাঁচা চামড়া মানভেদে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অথচ ঢাকায় সর্বনিম্ন কাঁচা চামড়ার দাম ১ হাজার ৩৫০ টাকা নির্ধারণ করে দেয় সরকার। এ ছাড়া বরাবরের মতো ছাগলের চামড়ায় আগ্রহ নেই ব্যাপারিদের।
রাজধানীর মোহাম্মদপুর, সায়েন্সল্যাব ও পুরান ঢাকার পোস্তা এলাকায় ঘুরে ও ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
সরেজমিন দেখা গেছে, এ বছর বেশির ভাগ গরুর কাঁচা চামড়া ৭০০ থেকে সর্বোচ্চ ৯০০ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। ছোট চামড়ার দাম ৬০০ টাকা পর্যন্ত উঠছে। গত বছরও গরুর কাঁচা চামড়ার এ রকম দাম ছিল। এ ছাড়া এবার ছাগলের চামড়া প্রতিটি বিক্রি হচ্ছে ৫ থেকে ১০ টাকা, যা গতবারও একই রকম ছিল।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্যানুসারে, এ বছর কোরবানির পশুর চাহিদা প্রায় ১ কোটি ৩ লাখ ৮০ হাজার। সেখানে গরু-ছাগলসহ কোরবানির জন্য প্রস্তুত ছিল প্রায় ১ কোটি ২৪ লাখ ৪৭ হাজার পশু। চলতি বছর কোরবানির ঈদের মৌসুমে ৮০ থেকে ৮৫ লাখ চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছেন ট্যানারিমালিকেরা।
গত ২৬ মে কোরবানির পশুর চামড়ার দর নির্ধারণ করে দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এতে ঢাকায় গরুর প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয় ৬০-৬৫ টাকা, যা গত বছর ছিল ৫৫-৬০ টাকা। ঢাকার বাইরের গরুর প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৫৫-৬০ টাকা, যা গত বছর ছিল ৫০-৫৫ টাকা। এ ছাড়া ঢাকায় সর্বনিম্ন কাঁচা চামড়ার দাম ১ হাজার ৩৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। আর ঢাকার বাইরে সর্বনিম্ন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১ হাজার ১৫০ টাকা। এ ছাড়া খাসির লবণযুক্ত চামড়া ২২ থেকে ২৭ টাকা ও বকরির চামড়া ২০-২২ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
পুরান ঢাকার লালবাগের পোস্তার আড়তগুলো কাঁচা চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণের অন্যতম বড় জায়গা। আজ বিকেল চারটার দিকে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, রিকশা, ভ্যান ও ট্রাকে করে মৌসুমি ব্যবসায়ী ও মাদ্রাসার কর্মকর্তারা চামড়া নিয়ে আসছেন। আড়তদারেরা দরদাম করে চামড়া কিনছেন। এ ছাড়া পাইকারি ব্যবসায়ীরা সড়কের ওপর চেয়ার নিয়ে বসে চামড়া কিনছেন।
একাধিক আড়তদার ও পাইকারি ব্যবসায়ী জানান, একেকটি গরুর চামড়া ৭০০ থেকে ৯০০ টাকায় কিনছেন। মাঝারি আকারের গরু কোরবানি হয় বেশি। সেই চামড়া তাঁরা কিনছেন ৭০০ থেকে ৮০০ টাকার মধ্যে।
পোস্তায় শহীদুল ইসলাম নামের একজন ব্যবসায়ী প্লাস্টিকের চেয়ারে বসে চামড়া কিনছিলেন। বিকেল সাড়ে চারটা পর্যন্ত শতাধিক চামড়া কিনেছেন। জানতে চাইলে তিনি বলেন, মৌসুমি ব্যবসায়ীরা না বুঝে বেশি দামে চামড়া কিনে নিয়ে আসেন। তবে বাজার ভালো নয়। তিনি জানান, ৭০০ থেকে ৯০০ টাকায় চামড়া কিনছেন তাঁরা।
চামড়া কেনায় তদারকি করছিলেন সুমন অ্যান্ড সন্সের স্বত্বাধিকারী মো. শরীফ। তিনি জানান, প্রতিটি গরুর চামড়া ৭০০ থেকে ৯০০ টাকায় কিনছেন। তাঁর ভাষ্য, একেকটি চামড়া প্রক্রিয়াজাত করতে লবণ ও শ্রমিকের মজুরি বাবদ খরচ পড়ে যাবে ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা। বাজার মন্দা, সে জন্য গতবারের চেয়ে কিছুটা কমে কিনছেন।
বিকেলে রাজধানীর কলাবাগান এলাকা থেকে গরুর ১৩টি কাঁচা চামড়া বিক্রির জন্য সায়েন্স ল্যাবরেটরি এলাকায় নিয়ে আসেন মৌসুমি ব্যবসায়ী কাউছার আহমেদ। কোরবানিদাতাদের কাছ থেকে এসব চামড়া তিনি ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা দরে কিনে আনেন এবং বিক্রির জন্য দাম হাঁকেন ১ হাজার ২০০ টাকা করে। কিন্তু কোনো আড়তদার বা ট্যানারি প্রতিষ্ঠান ৭৫০ টাকার ওপরে দাম দিতে চায়নি। শেষ পর্যন্ত ৭৫০ টাকা দরেই সবগুলো চামড়া বিক্রি করেন তিনি।
কাউছার আহমেদ বলেন, যে আকারের চামড়া বিক্রির জন্য তিনি নিয়ে এসেছিলেন, সেগুলোর দাম হওয়া উচিত অন্তত ৮৫০ থেকে ৯০০ টাকা। কিন্তু একপ্রকার লোকসান করেই চামড়া বিক্রি করতে হলো। সারা দিনের ভ্যান ভাড়া ও একজন সহকারীর মজুরি দিয়ে তাঁর কাছে আর কিছু থাকবে না।
সায়েন্স ল্যাব এলাকাতেই মৌসুমি বিক্রেতাদের কাছ থেকে চামড়া কিনে রাখছিলেন কালাম ব্রাদার্স ট্যানারির পরিচালক সাজেদুল খায়ের। চলতি বছর এই ট্যানারিটির এক দেড় লাখ লবণযুক্ত চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্য আছে। পাশাপাশি কোরবানি ঈদের দুই দিনে তারা অন্তত ১০ হাজারের মতো কাঁচা চামড়া সংগ্রহ করবে।
সাজেদুল খায়ের বলেন, আজকে মৌসুমি বিক্রেতাদের কাছ থেকে ৭৫০ থেকে ৮৫০ টাকার মধ্যে বেশির ভাগ গরুর চামড়া কিনেছেন। তাঁদের হিসাবে, গত বছরের তুলনায় প্রতিটি গরুর চামড়ায় ৩০ থেকে ৫০ টাকা বাড়তি দাম পাওয়া যাচ্ছে।
খুব বড় আকারের চামড়া দেড় হাজার টাকায়ও বিক্রি হতে দেখা গেছে। যেমন রাজধানীর মোহাম্মদপুর টাউন হল এলাকায় আজ দুপুরে চামড়া কিনছিলেন মৌসুমি ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, সকাল থেকে তিনি ৬০টির বেশি চামড়া কিনেছেন। ৩২ লাখ টাকায় কেনা দুটি গরুর চামড়া তিনি মোট তিন হাজার টাকা দিয়ে কিনেছেন। অর্থাৎ প্রতিটির দাম পড়েছে দেড় হাজার টাকা।
বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএ) সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান সাখাওয়াত উল্লাহ বলেন, এ বছর ছোট গরুর চামড়া বেশি। তবে সার্বিকভাবে চামড়ার সরবরাহ ভালো। তাঁদের হিসাবে, গত বছরের তুলনায় প্রতিটি চামড়ায় ১০০ থেকে ১৫০ টাকা বেশি দাম রয়েছে। তিনি জানান, চলতি বছর ট্যানারি প্রতিষ্ঠানগুলো পাঁচ থেকে ছয় লাখ কাঁচা চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্য নিয়েছে। মূলত কাঁচা চামড়ার দাম তথা বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্যানারি প্রতিষ্ঠানগুলো সরাসরি কাঁচা চামড়া কিনে থাকে।