জাতীয়
আ.লীগের এমপিকে হাতিয়ার করে সীমান্তে অবৈধ ভোলাহাট ফিলিং স্টেশন অনুমোদন

জ্বালানী তেল বিক্রয়ের লক্ষ্যে সীমান্তের শূন্য লাইন থেকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ৮ কিলোমিটারের মধ্যে কোনো প্রকার ফিলিং স্টেশন স্থাপন করা যাবে না। বাংলাদেশ সরকারের গেজেটে জারিকৃত এমন আইন থাকা সত্ত্বেও বিপুল অর্থের বিনিময়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্ত এলাকায় মাত্র ২.৪ কিলোমিটারের মধ্যে জ্বালানী তেল বিক্রয়ের লক্ষ্যে ‘মেসার্স ভোলাহাট ফিলিং স্টেশন’ নামে অবৈধভাবে অনুমোদন নেওয়া হয়েছে। এতে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-০২ এর সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) মু. জিয়াউর রহমানকে হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করা হয়। ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে যমুনা অয়েল কোম্পানী লিমিটেড হতে অবৈধ অনুমোদনের ব্যবস্থা করেন এমপি মু. জিয়াউর রহমান। তখন তিনি বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতিও ছিলেন।
সূত্র জানায়, সাবেক এমপি মু. জিয়াউর রহমান মেসার্স ভোলাহাট ফিলিং স্টেশনের স্বত্তাধিকারী মো. আব্দুল লতিফের সঙ্গে মোটা অংকের অর্থের চুক্তিতে এই অবৈধ অনুমোদনের ব্যবস্থা করে দেন। সে সময়ে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি পদে থাকায় এমপির জন্য এই অসাধ্য কাজটি করা সম্ভব হয়েছে। তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার করে এই অবৈধ অনুমোদনের ব্যবস্থা করে দেন। প্রতিটি ক্ষেত্রেই এমপি সরাসরি সংশ্লিষ্ট সকল দপ্তরে গিয়ে হুমকি ও তার পরামর্শ মোতাবেক পরবর্তীতে মালিক আব্দুল লতিফ অর্থ প্রদানের চুক্তিতে বিভিন্ন দফতর হতে অবৈধ এনওসি বা অনুমোদন লাভ করে।
এবিষয়ে জানতে চাইলে মেসার্স ভোলাহাট ফিলিং স্টেশনের স্বত্তাধিকারী মো. আব্দুল লতিফ অর্থসংবাদকে বলেন, অভিযোগের বিষয়ে স্বাক্ষাতে কথা বলবো। আমি মোবাইলে বক্তব্য দেই না।
যমুনা ওয়েল কোম্পানী লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোস্তফা কুদরত-ই-ইলাহীর সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তা সম্ভব হয়নি। বেশ কয়েকবার তার মুঠোফোনে কল করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
আইন অনুযায়ী, প্রস্তাবিত ফিলিং স্টেশনটি সীমান্তের শূন্য লাইন হতে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ৮ কিলোমিটারের মধ্যে স্থাপন করা যাবে না। এবিষয়ে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় কর্তৃক বাংলাদেশ গেজেট জারি করা হয়। যা জ্বালানী তেল বিক্রয়ের লক্ষ্যে নতুন ফিলিং স্টেশন/সার্ভিস স্টেশন স্থাপনে ডিলার নিয়োগ সংক্রান্ত নীতিমালা (সংশোধিত), ২০১৪ অনুযায়ী মেসার্স ভোলাহাট ফিলিং স্টেশনটি অবৈধ। ২০১৪ সালের সরকারি গেজেটে বিপিসি কর্তৃক কোন নতুন ফিলিং স্টেশন স্থাপনের প্রস্তাব অনুমোদিত হওয়ার পর বিপণন কোম্পানীগুলো কর্তৃক বেশকিছু শর্তসমূহ প্রতিপালন করতে হবে বলে উল্লেখ করা হয়। তার মধ্যে অন্যতম হলো প্রস্তাবিত ফিলিং স্টেশনটি সীমান্তের শূন্য লাইন হতে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ৮ কিলোমিটারের মধ্যে স্থাপন করা যাবে না। তবে আইনভঙ্গ করে, বিপুল অর্থের বিনিময়ে ও প্রভাব খাটিয়ে যমুনা ওয়েল কোম্পানী লিমিটেড হতে ভোলাহাট ফিলিং স্টেশনের অবৈধ অনুমোদন নেওয়া হয়।
এছাড়া, এরআগে বিপিসির সাবসিডিয়ারি কোম্পানি পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা কর্তৃক সারাদেশে ফিলিং স্টেশনের কিছু ডিলারের বিরুদ্ধে ভেজাল ও পরিমাপে কম তেল সরবরাহের অভিযোগে নতুন ফিলিং স্টেশন/সার্ভিস স্টেশন স্থাপনের অনুমোদন বন্ধ রাখে সরকার।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের আদেশে বলা হয়, ভেজাল তেল ও পরিমাপে কম সরবরাহের কারণে ভোক্তা সাধারণ প্রতারিত ও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। এতদসত্ত্বেও, দেশের প্রত্যন্ত বা বিভিন্ন স্থানে নতুন ডিলার নিয়োগের আবেদন পাওয়া যাচ্ছে এবং পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা কর্তৃক ডিলার নিয়োগের কার্যক্রম গ্রহণ করা হচ্ছে। প্রত্যন্ত এলাকায় আরো নতুন ফিলিং স্টেশন স্থাপিত হলে ভেজাল রোধ ও সঠিক পরিমাপে জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করা দূরূহ হবে। বিপিসি ও এর সাবসিডিয়ারি কোম্পানী কর্তৃক জ্বালানি তেল বিপণন ব্যবস্থায় ভেজাল রোধে ও সঠিক পরিমাপে জ্বালানি সরবরাহে কার্যকর্মী জরুরী ব্যবস্থা গড়ে তোলা না পর্যন্ত নতুন কোন ফিলিং স্টেশন বা সার্ভিস স্টেশন স্থাপনের অনুমোদন আপাতত বন্ধ থাকবে। অথচ এমন আদেশ থাকলেও আইন বর্হিভূতভাবে মেসার্স ভোলাহাট ফিলিং স্টেশনের অনুমোদন দেওয়া হয়।
সম্প্রতি তদন্ত পূর্বক অবৈধ, দুর্নীতি ও বিপুল অর্থের বিনিময়ে আইন বর্হিভূতভাবে অনুমোদিত ফিলিং স্টেশনটির অনুমতি বাতিলসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে আইনের আওতায় আনার অনুরোধ জানিয়ে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় উপদেষ্টা বারবর চিঠি পাঠানো হয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়, আইনভঙ্গ করে, বিপুল অর্থের বিনিময়ে ও প্রভাব খাটিয়ে ভোলাহাট উপজেলা, চাঁপাইনবাবগঞ্জে সীমান্ত এলাকায় ২.৪ কিলোমিটারের মধ্যে ‘মেসার্স ভোলাহাট ফিলিং স্টেশন’ নামে যমুনা ওয়েল কোম্পানী লিমিটেড হতে অবৈধ অনুমোদন নেওয়া হয়েছে। সাবেক এমপি মু. জিয়াউর রহমান মেসার্স ভোলাহাট ফিলিং স্টেশনের স্বত্তাধিকারী মো. আব্দুল লতিফের সঙ্গে মোটা অংকের অর্থের চুক্তিতে এই অবৈধ অনুমোদনের ব্যবস্থা করে দেন। বিগত ফ্যাসিস্ট সরকার নিজেই নতুন কোন ফিলিং স্টেশন অনুমোদনের বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল কিন্তু উল্লিখিত নিষেধাজ্ঞাকালীন সময়েই ফিলিং স্টেশনটি অনুমোদন করে।
বিষয়টি তদন্ত পূর্বক অবৈধ, দুর্নীতি ও বিপুল অর্থের বিনিময়ে আইন বর্হিভূতভাবে অনুমোদিত ফিলিং স্টেশনটির অনুমতি বাতিলসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে আইনের আওতায় আনার জন্য চিঠিতে অনুরোধ করা হয়।
অর্থসংবাদ/এসএম/কাফি

জাতীয়
জুলাই ঘোষণাপত্র পাঠ করলেন প্রধান উপদেষ্টা

জুলাই ঘোষণাপত্র পাঠ করলেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) বিকেল ৫টা ২২ মিনিটে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় অনুষ্ঠানস্থল পাঠ শুরু করেছেন প্রধান উপদেষ্টা।
ঘোষণাপত্রে উল্লেখিত বিষয়গুলো নিচে তুলে ধরা হলো :
১। যেহেতু উপনিবেশবিরোধী লড়াইয়ের সুদীর্ঘকালের ধারাবাহিকতায় এই ভূখণ্ডের মানুষ দীর্ঘ ২৩ বছর পাকিস্তানের স্বৈরশাসকদের বঞ্চনা ও শোষণের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিল এবং নির্বিচার গণহত্যার বিরুদ্ধে গণপ্রতিরোধ গড়ে ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ স্বাধীনতা ঘোষণা করে জাতীয় মুক্তির লক্ষ্যে রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছিল;
২। যেহেতু, বাংলাদেশের আপামর জনগণ দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে এই ভূখণ্ডে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে বিবৃত সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচারের ভিত্তিতে উদার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বিনির্মাণের আকাঙ্ক্ষাকে বাস্তবায়নের জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করেছে;
৩। যেহেতু স্বাধীন বাংলাদেশের ১৯৭২ সালের সংবিধান প্রণয়ন পদ্ধতি, এর কাঠামোগত দুর্বলতা ও অপপ্রয়োগের ফলে স্বাধীনতা-পরবর্তী আওয়ামী লীগ সরকার মুক্তিযুদ্ধের জনআকাঙ্ক্ষা পূরণে ব্যর্থ হয়েছিল এবং গণতন্ত্র ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যকারিতা ক্ষুণ্ণ করেছিল;
৪। যেহেতু স্বাধীনতা-পরবর্তী আওয়ামী লীগ সরকার স্বাধীনতার মূলমন্ত্র গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার বিপরীতে বাকশালের নামে সাংবিধানিকভাবে একদলীয় শাসনব্যবস্থা কায়েম করে এবং মতপ্রকাশ ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা হরণ করে, যার প্রতিক্রিয়ায় ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর দেশে সিপাহি-জনতার ঐক্যবদ্ধ বিপ্লব সংঘটিত হয় এবং পরবর্তী সময়ে একদলীয় বাকশাল পদ্ধতির পরিবর্তে বহুদলীয় গণতন্ত্র, মতপ্রকাশ ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা পুনঃপ্রবর্তনের পথ সুগম হয়,
৫। যেহেতু আশির দশকে সামরিক স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে দীর্ঘ নয় বছর ছাত্র-জনতার অবিরাম সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ১৯৯০ সালের গণঅভ্যুত্থান সংঘটিত হয় এবং ১৯৯১ সালে পুনরায় সংসদীয় গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয়।
৬। যেহেতু দেশি-বিদেশি চক্রান্তে সরকার পরিবর্তনের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ব্যাহত হওয়ায় ১/১১-এর ষড়যন্ত্রমূলক ব্যবস্থার মাধ্যমে বাংলাদেশে শেখ হাসিনার একচ্ছত্র ক্ষমতা, আধিপত্য ও ফ্যাসিবাদের পথ সুগম করা হয়;
৭। যেহেতু গত দীর্ঘ ষোল বছরের ফ্যাসিবাদী, অগণতান্ত্রিক এবং গণবিরোধী শাসনব্যবস্থা কায়েমের লক্ষ্যে এবং একদলীয় রাষ্ট্র ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার অতি উগ্র বাসনা চরিতার্থ করার অভিপ্রায়ে সংবিধানের অবৈধ ও অগণতান্ত্রিক পরিবর্তন করা হয় এবং যার ফলে একদলীয় একচ্ছত্র ক্ষমতা ও আধিপত্য প্রতিষ্ঠার পথ সুগম হয়;
৮। যেহেতু শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সরকারের দুঃশাসন, গুম-খুন, আইন-বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হরণ এবং একদলীয় স্বার্থে সংবিধান সংশোধন ও পরিবর্তন বাংলাদেশের সব রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করে;
৯। যেহেতু, হাসিনা সরকারের আমলে তারই নেতৃত্বে একটি চরম গণবিরোধী, একনায়কতান্ত্রিক ও মানবাধিকার হরণকারী শক্তি বাংলাদেশকে একটি ফ্যাসিবাদী, মাফিয়া এবং ব্যর্থ রাষ্ট্রের রূপ দিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করে;
১০। যেহেতু, তথাকথিত উন্নয়নের নামে শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী নেতৃত্বে সীমাহীন দুর্নীতি, ব্যাংক লুট, অর্থ পাচার ও অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংসের মধ্য দিয়ে বিগত পতিত দুর্নীতিবাজ আওয়ামী লীগ সরকার বাংলাদেশ ও এর অমিত অর্থনৈতিক সম্ভাবনাকে বিপর্যস্ত করে তোলে এবং এর পরিবেশ, প্রাণবৈচিত্র্য ও জলবায়ুকে বিপন্ন করে;
১১। যেহেতু শেখ হাসিনার ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক দল, ছাত্র ও শ্রমিক সংগঠনসহ সমাজের সর্বস্তরের জনগণ গত প্রায় ষোল বছর যাবত নিরন্তর গণতান্ত্রিক সংগ্রাম করে জেল-জুলুম, হামলা-মামলা, গুম-খুন ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়;
১২। যেহেতু বাংলাদেশে বিদেশি রাষ্ট্রের অন্যায় প্রভুত্ব, শোষণ ও খবরদারিত্বের বিরুদ্ধে এ দেশের মানুষের ন্যায়সংগত আন্দোলনকে বহিঃশক্তির তাঁবেদার আওয়ামী লীগ সরকার নিষ্ঠুর শক্তিপ্রয়োগের মাধ্যমে দমন করে;
১৩। যেহেতু অবৈধভাবে ক্ষমতা অব্যাহত রাখতে আওয়ামী লীগ সরকার তিনটি প্রহসনের নির্বাচনে (২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪-এর জাতীয় সংসদ নির্বাচন) এ দেশের মানুষকে ভোটাধিকার ও প্রতিনিধিত্ব থেকে বঞ্চিত করে;
১৪। যেহেতু, আওয়ামী লীগ আমলে ভিন্নমতের রাজনৈতিক নেতা-কর্মী, শিক্ষার্থী ও তরুণদের নিষ্ঠুরভাবে নির্যাতন করা হয় এবং সরকারি চাকরিতে একচেটিয়া দলীয় নিয়োগ ও কোটাভিত্তিক বৈষম্যের কারণে ছাত্র, চাকরিপ্রত্যাশী ও নাগরিকদের মধ্যে চরম ক্ষোভের জন্ম হয়;
১৫। যেহেতু বিরোধী রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের ওপর চরম নিপীড়নের ফলে দীর্ঘদিন ধরে জনরোষের সৃষ্টি হয় এবং জনগণ সব বৈধ প্রক্রিয়া অবলম্বন করে ফ্যাসিবাদবিরোধী লড়াই চালিয়ে যায়;
১৬। যেহেতু, সরকারি চাকরিতে বৈষম্যমূলক কোটাব্যবস্থার বিলোপ ও দুর্নীতি প্রতিরোধে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে আওয়ামী লীগ সরকার কর্তৃক ব্যাপক দমন-পীড়ন, বর্বর অত্যাচার ও মানবতাবিরোধী হত্যাকাণ্ড চালানো হয়, যার ফলে সারা দেশে দল-মত নির্বিশেষে ছাত্র-জনতার উত্তাল গণবিক্ষোভ গণঅভ্যুত্থানে রূপ নেয়;
১৭। যেহেতু ফ্যাসিস্ট শক্তির বিরুদ্ধে অদম্য ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে রাজনৈতিক দল, ধর্মীয়, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, পেশাজীবী, শ্রমিক সংগঠনসহ সমাজের সব স্তরের মানুষ যোগদান করে এবং আওয়ামী ফ্যাসিবাদী বাহিনী রাজপথে নারী-শিশুসহ প্রায় এক হাজার মানুষকে নির্বিচারে হত্যা করে, অগণিত মানুষ পঙ্গুত্ব ও অন্ধত্ব বরণ করে এবং আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়ে সামরিক বাহিনীর সদস্যরা জনগণের গণতান্ত্রিক লড়াইকে সমর্থন প্রদান করে;
১৮। যেহেতু, অবৈধ শেখ হাসিনা সরকারের পতন, ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ ও নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের লক্ষ্যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে জনগণ অসহযোগ আন্দোলন শুরু করে, পরবর্তী সময়ে ৫ আগস্ট ঢাকা অভিমুখে লংমার্চ পরিচালনা করে এবং ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনরত সব রাজনৈতিক দল, ছাত্র-জনতা তথা সর্বস্তরের সব শ্রেণি, পেশার আপামর জনসাধারণের তীব্র আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়ে গণভবনমুখী জনতার উত্তাল যাত্রার মুখে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা ৫ আগস্ট ২০২৪ তারিখে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়;
১৯। যেহেতু বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক সংকট মোকাবিলায় গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ব্যক্ত জনগণের সার্বভৌমত্বের প্রত্যয় ও প্রয়োগ রাজনৈতিক ও আইনি উভয় দিক থেকে যুক্তিসঙ্গত, বৈধ ও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত;
২০। যেহেতু জনগণের দাবি অনুযায়ী এরপর অবৈধ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ ভেঙে দেওয়া হয় এবং সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুসারে সুপ্রিম কোর্টের মতামতের আলোকে সাংবিধানিকভাবে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে ৮ আগস্ট ২০২৪ তারিখে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হয়;
২১। যেহেতু, বাংলাদেশের সর্বস্তরের জনগণের ফ্যাসিবাদবিরোধী তীব্র আকাঙ্ক্ষা এবং ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ফ্যাসিবাদ, বৈষম্য ও দুর্নীতিমুক্ত সমাজ ও রাষ্ট্র বিনির্মাণের অভিপ্রায় প্রকাশিত হয়;
২২। সেহেতু, বাংলাদেশের জনগণ সুশাসন ও সুষ্ঠু নির্বাচন, ফ্যাসিবাদী শাসনের পুনরাবৃত্তি রোধ, আইনের শাসন এবং অর্থনৈতিক ও সামাজিক ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে বিদ্যমান সংবিধান ও সব রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের গণতান্ত্রিক সংস্কার সাধনের অভিপ্রায় ব্যক্ত করছে;
২৩। সেহেতু, বাংলাদেশের জনগণ বিগত ষোল বছরের দীর্ঘ ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলন-সংগ্রাম কালে এবং ২০২৪ সালের জুলাই গণঅভ্যুত্থানকালীন সময়ে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার কর্তৃক সংঘটিত গুম-খুন, হত্যা, গণহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধ ও সব ধরনের নির্যাতন, নিপীড়ন এবং রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি লুণ্ঠনের অপরাধগুলোর দ্রুত উপযুক্ত বিচারের দৃঢ় অভিপ্রায় ব্যক্ত করছে;
২৪। সেহেতু, বাংলাদেশের জনগণ জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সব শহীদকে জাতীয় বীর হিসেবে ঘোষণা করে শহীদদের পরিবার, আহত যোদ্ধা এবং আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতাকে প্রয়োজনীয় সব আইনি সুরক্ষা দেওয়ার অভিপ্রায় ব্যক্ত করছে।
২৫। সেহেতু, বাংলাদেশের জনগণ যুক্তিসঙ্গত সময়ে আয়োজিতব্য অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ একটি নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত জাতীয় সংসদে প্রতিশ্রুত প্রয়োজনীয় সাংবিধানিক সংস্কারের মাধ্যমে দেশের মানুষের প্রত্যাশা, বিশেষত তরুণ প্রজন্মের আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী আইনের শাসন ও মানবাধিকার, দুর্নীতি, শোষণমুক্ত, বৈষম্যহীন ও মূল্যবোধসম্পন্ন সমাজ এবং গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার অভিপ্রায় ব্যক্ত করছে।
২৬। সেহেতু বাংলাদেশের জনগণ এই প্রত্যাশা ব্যক্ত করছে যে, একটি পরিবেশ ও জলবায়ুসহিষ্ণু অন্তর্ভুক্তিমূলক ও টেকসই উন্নয়ন কৌশলের মাধ্যমে বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের অধিকার সংরক্ষিত হবে।
২৭। বাংলাদেশের জনগণ এই অভিপ্রায় ব্যক্ত করছে যে, ছাত্র-গণঅভ্যুত্থান ২০২৪-এর উপযুক্ত রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক স্বীকৃতি প্রদান করা হবে এবং পরবর্তী নির্বাচনে নির্বাচিত সরকারের সংস্কারকৃত সংবিধানের তফসিলে এ ঘোষণাপত্র সন্নিবেশিত থাকবে।
২৮। ৫ আগস্ট ২০২৪ সালে গণঅভ্যুত্থানে বিজয়ী বাংলাদেশের জনগণের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন হিসেবে এই ঘোষণাপত্র প্রণয়ন করা হলো।
জাতীয়
জুলাই শহীদদের জাতীয় বীর ঘোষণা

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সকল শহীদকে জাতীয় বীর হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। এ ছাড়া শহীদদের পরিবার, আহত যোদ্ধা ও আন্দোলনকারী ছাত্রজনতাকে প্রয়োজনীয় সকল আইনি সুরক্ষা দেওয়া হবে।
মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) বিকেলে রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা এই ঐতিহাসিক ঘোষণা দেন।
ঘোষণাপত্রের ২৪ নম্বর অংশে তিনি বলেন, বাংলাদেশের জনগণ জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সকল শহীদদের জাতীয় বীর হিসেবে ঘোষণা করে শহীদদের পরিবার, আহত যোদ্ধা এবং আন্দোলনকারী ছাত্রজনতাকে প্রয়োজনীয় সকল আইনি সুরক্ষা দেওয়ার অভিপ্রায় ব্যক্ত করছে।
জাতীয়
ডেঙ্গুতে আরও ৩ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৩১৯

গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে আরও তিনজনের মৃত্যু হয়েছে এবং সারাদেশে ৩১৯ ডেঙ্গুরোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোলরুম থেকে পাঠানো ডেঙ্গুবিষয়ক এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর মধ্যে বরিশাল বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৭২ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৪৯ জন, ঢাকা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৫৮ জন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ২৭ জন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৬২ জন, খুলনা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৩৬ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ১১ জন, রংপুর বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) চারজন রয়েছেন।
২৪ ঘণ্টায় ২৯২ ডেঙ্গুরোগী হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন। চলতি বছরে এ যাবত মোট ২১ হাজার ৩৬ রোগী হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন।
চলতি বছরের ৫ আগস্ট পর্যন্ত মোট ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে ২২ হাজার ৩৮৪ জন। এর মধ্যে ৫৮ দশমিক ছয় শতাংশ পুরুষ এবং ৪১ দশমিক চার শতাংশ নারী রয়েছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে আরও তিনজন মারা গেছে। চলতি বছরে এ যাবত ডেঙ্গুতে মোট ৮৯ জন মারা গেছেন। মৃত তিনজনের মধ্যে দুই জন চট্টগ্রাম বিভাগের, আরেকজন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বাসিন্দা।
২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে এক লাখ এক হাজার ২১৪ জন এবং ডেঙ্গুতে মোট মৃত্যুবরণ করেছে ৫৭৫ জন।
২০২৩ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মোট এক হাজার ৭০৫ জনের মৃত্যু হয়, পাশাপাশি ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয় মোট তিন লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন।
কাফি
জাতীয়
শেখ পরিবার ও আ.লীগ কর্মীরা একঝাঁক কাপুরুষ: প্রেস সচিব

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, শেখ পরিবার এবং আওয়ামী লীগ কর্মীরা একঝাঁক কাপুরুষ। তারা টানা ১৫ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকতে পেরেছে শুধু একটি কারণেই। সেটি হলো- তারা হাজার হাজার পুলিশ, সেনা ও নিরাপত্তা কর্মকর্তাকে তাদের ইচ্ছাধীন হত্যাকারী বাহিনীতে পরিণত করতে পেরেছিল।
মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে তার ভেরিফায়েড অ্যাকাউন্টে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে তিনি এসব কথা লেখেন।
তিনি লেখেন, যদি এই কিলিং স্কোয়াডগুলোর কোনো সহযোগিতা না থাকত, তাহলে শেখ হাসিনা, তার পরিবার এবং আওয়ামী লীগের এই বাহিনী বহু বছর আগেই নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতো।
শেখ হাসিনা এবং তার দল আওয়ামী লীগকে দীর্ঘদিন ধরে পর্যবেক্ষণের পর এ সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন বলে স্ট্যাটাসের শুরুতে উল্লেখ করেন তিনি।
স্ট্যাটাসে শফিকুল আলম আরও লেখেন, গত বছরের জুলাইয়ে, যখন আমাদের তরুণ-তরুণীরা এই ডেথ স্কোয়াডগুলোর বিরুদ্ধে রাজপথে দাঁড়িয়েছিল, তখন আওয়ামী লীগ কর্মীরা বুঝতে পেরেছিল- তারা কয়েক মিলিয়ন বিপ্লবীর মুখোমুখি দাঁড়ানোর সাহস রাখে না। তারা পালিয়ে গিয়েছিল, হাওয়া হয়ে গিয়েছিল। আমি নিশ্চিত, তারা আর কখনো ফিরতে পারবে না। কাপুরুষেরা কখনোই ফিরে আসতে পারে না!
জাতীয়
মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে গ্যাস বেলুন বিস্ফোরণ, আহত ১০

রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস’ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানস্থলে গ্যাস বেলুন বিস্ফোরণ হয়েছে। এ ঘটনায় অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে সবাইকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
আহতরা হলেন- মাজহারুল ইসলাম (২৭), বিল্লাল (৪৫), ফাহাত (২০), মো. মুনসুর ইসলাম (৩৮), শরীফ (৩২), পলাশ (২১), মো. হাবিবুল্লাহ (২৩), মো. ইয়াসিন (২৫), মিশু (২৩) ও মিহাত (১৭)।
মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) দুপুরে এ ঘটনা ঘটে। দুপুর সোয়া ২টার দিকে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স সদরদপ্তরের ডিউটি অফিসার রাফি আল ফারুক এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
রাফি আল ফারুক বলেন, ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানের স্টেজের সামনে বেলুনে আগুন ধরে যায়। তবে আগুন দ্রুত নিভে যায়, আমাদের নির্বাপণ করতে হয়নি।ঘটনাস্থলে আমাদের একাধিক টিম রয়েছে।’
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মঞ্চের পাশে থাকা একটি স্পিকারের তারে শর্টসার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত। মুহূর্তেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে আশপাশের কিছু বেলুনে। এতে ঘটনাস্থলে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে এবং কয়েকজন মানুষ আহত হন। তাৎক্ষণিকভাবে সাধারণ মানুষদের আশ্বস্ত করেন সঞ্চালকরা। ঘটনার পরপরই সঞ্চালকরা দর্শনার্থীদের শান্ত থাকার আহ্বান জানান।