Connect with us
৬৫২৬৫২৬৫২

মত দ্বিমত

ইলন মাস্ক: প্রযুক্তির দুনিয়ায় বিপ্লবের এক অপ্রতিরোধ্য যাত্রা

Published

on

বিএসসি

ইলন মাস্ক, সেই নামটি যা বিশ্বের প্রান্তে প্রান্তে ছড়িয়ে পড়েছে, তার অবদান প্রযুক্তির প্রতিটি দিকেই স্পষ্ট। সাধারণ মানুষ তাকে শুধু টেসলা, স্পেসএক্স, সোলারসিটি কিংবা হাইপারলুপ এর মতো বিপ্লবী উদ্ভাবনী প্রকল্পের উদ্যোক্তা হিসেবে জানে, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তিনি শুধুমাত্র একজন উদ্ভাবক নন, বরং একটি অসীম সাহসী ব্যবসায়ী এবং ভবিষ্যৎবিদ।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

ইলন মাস্কের জীবনে চড়াই-উতরাই ছিলো। এলন মস্কের জন্ম দক্ষিণ আফ্রিকায় ১৯৭১ সালে, এবং সেই শিশুকাল থেকে শুরু হয় তাঁর আগ্রহের যাত্রা। ছোটবেলা থেকেই তিনি প্রযুক্তির প্রতি গভীর আগ্রহ তৈরি করেন, আর এই আগ্রহই একদিন তাকে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় প্রযুক্তি সংস্থাগুলোর প্রধান কর্ণধারে পরিণত করে। পেপাল, টেসলা এবং স্পেসএক্স প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে তাঁর নয়া ব্যবসায়িক সম্রাজ্যের সূচনা হয়।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

তবে তার জীবন সহজ ছিল না। টেসলা এর উত্থান থেকে শুরু করে, স্পেসএক্স এর অস্থির যাত্রা এবং সর্বশেষ হাইপারলুপ এর মতো অসম্ভব পরিকল্পনা, প্রতিটি পদক্ষেপে ছিলো অগণিত চ্যালেঞ্জ, বিতর্ক এবং তার উপরে উচ্চাকাঙ্ক্ষী অঙ্গীকার। অনেকেই মনে করেছিলেন, তাঁর প্রকল্পগুলো শুধুমাত্র আর্থিক সংকট এবং অস্থিরতার দিকে এগিয়ে যাবে, কিন্তু ইলন মাস্কের দৃঢ় সংকল্প এবং ভবিষ্যৎমুখী ভাবনা তাকে সর্বত্র সফলতার চূড়ায় পৌঁছে দেয়।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

পৃথিবী বদলে দেওয়ার যাত্রা
বিশ্বে তাঁর শিরোনামে যেসব প্রতিষ্ঠানগুলো জনপ্রিয়তা পেয়েছে, সেগুলোর মধ্যে অন্যতম টেসলা। টেসলা একসময় শুধুমাত্র একটি স্বপ্ন ছিলো, যা অনেকের কাছে অসম্ভব মনে হয়েছিলো। কিন্তু মাস্ক তার ব্যক্তিগত জীবনের চ্যালেঞ্জ ও ভাঙাচোড়া সম্পর্ক সত্ত্বেও, নিজস্ব প্রযুক্তির ওপর বিশ্বাস রেখে সেই অসম্ভবকেও সম্ভব করেছেন। প্রযুক্তিগত দিক থেকে, টেসলা এর বৈদ্যুতিক গাড়ি, শক্তি সংরক্ষণ এবং পরিবেশবান্ধব যন্ত্রপাতি বিপ্লব সৃষ্টি করেছে।

আরেকটি দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী প্রকল্প হলো স্পেসএক্স, যার লক্ষ্য ছিল মহাকাশে বাণিজ্যিকভাবে প্রবেশের জন্য একটি নতুন পথ সৃষ্টি করা। মাস্ক স্পেসএক্সের মাধ্যমে পৃথিবী থেকে বাইরের মহাকাশে মানুষের যাত্রা শুরু করতে চেয়েছিলেন এবং সেখানেও তাঁর আগ্রহ সফল হয়েছে।

ব্যক্তিগত জীবন ও একাধিক বিবাহ
তবে, প্রযুক্তির জগতের পাশাপাশি ইলন মাস্কের ব্যক্তিগত জীবনও বিভিন্ন দিক থেকে আলোচিত। ট্যালুলাহ রেইলি, জাস্টিন মাস্ক, এবং গ্রিমস এর মতো ব্যক্তিত্বের সঙ্গে তার একাধিক সম্পর্ক এবং বিবাহ, তাঁর জীবনকে আরো জটিল করে তুলেছিলো। এসব সম্পর্কের পাশাপাশি, তার সন্তানদের প্রতিও তিনি গভীরভাবে মনোযোগী ছিলেন, তবে অনেকেই তাঁর জীবনযাত্রা এবং ব্যক্তিগত সম্পর্কগুলো নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। তাছাড়া, রোলিং স্টোন এর এক সাক্ষাৎকারে তিনি নিজেই জানিয়েছেন, তিনি ব্যস্ততার কারণে নিজের সন্তানদের সঙ্গ যথেষ্ট সময় দিতে পারেননি এবং এই বিষয়টি তার কাছে ‘রিগ্রেট’ ছিলো।

রাজনৈতিক অন্তর্দ্বন্দ্ব এবং ট্রাম্প প্রশাসন
এদিকে, ইলন মাস্কের রাজনৈতিক অবস্থানও গত এক দশক ধরে অনেক পরিবর্তিত হয়েছে। একসময় তিনি বিল গেটস এবং বারাক ওবামা এর প্রতি সমর্থন জানিয়েছিলেন, কিন্তু বর্তমানে তিনি নিজের অবস্থান অনেকটাই মধ্যপন্থী হিসাবে তুলে ধরেন। ট্রাম্প প্রশাসনের সময় তার কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত এবং মন্তব্য শিরোনাম হয়েছে। সেখান থেকে, তিনি খুবই বিতর্কিত পরিসরে পড়েছিলেন, কারণ তিনি ট্রাম্পের বেশ কিছু সিদ্ধান্তের সমর্থক ছিলেন। তবে, একসময় তিনি এই প্রশাসন থেকে সরে গিয়ে, নিজের ব্যক্তিগত কর্মকাণ্ড এবং ব্যবসায়িক দিক আরও শক্তভাবে পুনর্নির্মাণে মনোনিবেশ করেছেন।

ব্যবসায়িক দিক থেকে নতুন সিদ্ধান্ত
বর্তমানে, ইলন মাস্কের সিদ্ধান্ত ছিলো ট্রাম্প প্রশাসন থেকে সরে গিয়ে, তার নিজস্ব ব্যবসায়িক দুনিয়ায় ফিরে যাওয়া। সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ‘X’ এর ওপর তার কাজের মাধ্যমে তিনি বিশ্বজুড়ে যোগাযোগের নতুন এক দিগন্ত খুলে দিতে চান, যেখানে তার লক্ষ্য প্রযুক্তি, যোগাযোগ এবং সামাজিক সংস্কৃতি নিয়ে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি সৃষ্টি করা। তবে, ইলন মাস্কের মতো একজন বিশাল ব্যক্তিত্বের জন্য নতুন সিদ্ধান্ত সবসময়ই বিস্ময়ের সৃষ্টি করে। টেসলা, স্পেসএক্স, বোরিং কোম্পানি-এর মতো বিপ্লবী উদ্যোগের পাশাপাশি, তাঁর চিন্তাধারা ভবিষ্যতের প্রতি আশাবাদী। অর্থনৈতিক দিক থেকে তিনি বিপুল লাভের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন, তবে তার রাজনৈতিক অবস্থান এবং ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে চলমান বিতর্ক তাকে সবার চোখে আরও আলাদা করে তোলে।

সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রভাব: এক নতুন দিগন্তে ইলন মাস্ক
ইলন মাস্ক, যিনি প্রযুক্তির বিশ্বে সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তিত্বদের মধ্যে একজন, তিনি ভবিষ্যতের দিকে আরও একধাপ এগিয়ে চলেছেন। তবে, শুধু প্রযুক্তির উদ্ভাবনই নয়, সামাজিক এবং রাজনৈতিক ক্ষেত্রেও তার অবদান ও প্রভাব লক্ষণীয়। ইলন মাস্কের কাজের উদ্দেশ্য শুধু পৃথিবী পরিবর্তন নয়, বরং সমাজের মানসিকতাও পরিবর্তন করা। তিনি বিশ্বাস করেন যে, বিশ্বায়ন এবং উন্নত প্রযুক্তি পৃথিবীকে সমৃদ্ধ করবে এবং কেবল নির্দিষ্ট কিছু মানুষের জন্য নয়, বরং সবার জন্য সুফল বয়ে আনবে।

অর্থনৈতিক শক্তি: ভবিষ্যতে কি অপেক্ষা করছে?
মাস্কের ব্যবসায়িক দিক থেকে, তার প্রতিষ্ঠানগুলোর আর্থিক অবস্থা অত্যন্ত শক্তিশালী, এবং তার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সেগুলোর মধ্যে নতুন উচ্চতায় পৌঁছানোর ব্যাপারে। টেসলা এখন একটি গুরুত্বপূর্ণ কোম্পানি, যেটি বিদ্যুৎচালিত গাড়ির বাজারে একাধিক বিপ্লব ঘটিয়েছে। শুধু গাড়ি নয়, তাদের শক্তি সংরক্ষণ প্রযুক্তি, সোলার প্যানেল, এবং নতুন নকশার ব্যাটারি প্রযুক্তি কোম্পানিকে অর্থনৈতিক দিক থেকে আরও শক্তিশালী করেছে।

তবে, স্পেসএক্স-এর প্রভাব অনেক বিস্তৃত। মহাকাশের বাজারে সাশ্রয়ী ও উন্নত প্রযুক্তি এনে স্পেসএক্স মানুষকে মহাকাশে প্রেরণের জন্য প্রস্তুত করেছে। এলন মাস্কের লক্ষ্য, শুধু পৃথিবী বা রোবোটিক প্রযুক্তির মাধ্যমেই মানুষের জীবন উন্নত করা নয়, বরং মঙ্গলগ্রহের উপনিবেশ স্থাপন করা। এটি একটি দুরূহ পরিকল্পনা হলেও মাস্ক তার অসীম বিশ্বাসের সাথে এগিয়ে যাচ্ছেন। তিনি বিশ্বাস করেন, মঙ্গলগ্রহের জন্য উপনিবেশ স্থাপন একমাত্র উপায় হতে পারে যদি পৃথিবী কখনো বিপদে পড়ে বা মানবজাতি একটি নতুন স্থান খুঁজে পায়।

সামাজিক যোগাযোগ ও ডিজিটাল বিপ্লব
একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত আসে যখন মাস্ক ট্রাম্প প্রশাসন থেকে সরে গিয়ে তার নিজের ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম এবং সম্প্রচার ব্যবসার দিকে মনোযোগ দেন। তার এক্স (X) সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মটি সামাজিক যোগাযোগের দুনিয়াতে নতুন অধ্যায় রচনা করার জন্য প্রস্তুত। এখানে গণতন্ত্র এবং বিশ্বের নেতাদের প্রতি সংলাপের মাধ্যমে সমাজের প্রভাব পরিবর্তন করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তার একমাত্র উদ্দেশ্য হলো সোশ্যাল মিডিয়ায় সঠিক তথ্য প্রবাহ, যাতে বিভ্রান্তি এবং মিথ্যা তথ্য রোধ করা যায়।

তিনি মনে করেন, ডিজিটাল স্পেসে তাকে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে। তবে এক্স তার নিজস্ব সামাজিক সংলাপকে পরবর্তী স্তরে নিয়ে যেতে সক্ষম হবে, বিশেষত যখন তার মতো একটি ব্যক্তিত্ব সামগ্রিকভাবে নতুন প্রযুক্তি এবং রাজনৈতিক চিন্তাভাবনাকে প্রভাবিত করে।

ব্যক্তিগত জীবন: কোনো পরিবর্তন আসছে?
এদিকে, ইলন মাস্কের ব্যক্তিগত জীবনও অতীতে ছিল বিতর্কিত এবং চ্যালেঞ্জপূর্ণ। একাধিক বিবাহ এবং সন্তানের মধ্যে তার সম্পর্ক অনেকাংশেই আলোচিত। তবে, তার বর্তমান জীবনে, গ্রিমসের সাথে তার সম্পর্কটিকে তিনি প্রযুক্তি, সামাজিক যোগাযোগ এবং শিল্পের একটি মেলবন্ধন হিসেবে দেখতে শুরু করেছেন। তার সন্তানদের প্রতি গভীর সম্পর্ক, যেখানে তিনি অনেক সময় কাজে মগ্ন থাকলেও তার সন্তানদের পাশে দাঁড়াতে চেষ্টা করেন। তবে, তার নিজস্ব জীবনের অবিচ্ছিন্ন চাপ তাকে কখনো কখনো বিশেষ মুহূর্তগুলো উপভোগ করতে বাধা দেয়।

রিগ্রেট এবং নতুন শিখন
ইলন মাস্ক নিজেই বিশ্ববিদ্যালয়ের আকাশছোঁয়া জীবন থেকেও বলতে দ্বিধা করেন যে, কিছু বিষয়, যেমন অতিরিক্ত কাজের চাপ বা পরিবারে তার উপস্থিতির অভাব, তিনি অতীতে রিগ্রেট করেন। তবে, তিনি একে একটি শিক্ষণীয় বিষয় হিসেবে দেখেন এবং মনে করেন, ‘সবকিছু একসাথে থাকা সম্ভব নয়, তবে পরবর্তী সময়ে অন্যদের পাশে থাকতে পারা যাবে’।

রাজনৈতিক ভূমিকা: বিশ্বকে একত্রিত করা
এদিকে, রাজনীতি এবং বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক অবস্থান নিয়ে মাস্কের চিন্তাধারা খুবই মৌলিক এবং ব্যক্তিগত। তার মতো একজন প্রযুক্তিবিদ ও ব্যবসায়ী, বিশ্বের সরকারগুলোর মধ্যে প্রযুক্তি ভিত্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রতি একেবারেই আগ্রহী। বিশ্ব অর্থনীতির উন্নতি এবং বিশ্বব্যাপী সমস্যাগুলোর সমাধান সম্ভব করতে তিনি বিশ্বাস করেন, গ্লোবাল প্রযুক্তির একীভূত সহযোগিতা এবং সামাজিক ন্যায়বিচার প্রয়োজন।

মাস্ক জানেন যে, তার পদক্ষেপ শুধু প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন নয়, বরং রাজনৈতিক, সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক প্রভাবের ক্ষেত্রেও হতে হবে। তিনি চান, বিশ্বকে একীভূত করা, যেখানে সবার কাছে সুযোগ থাকবে।

শেষ কথা: অতীতের শিক্ষা, বর্তমানের সংগ্রাম এবং ভবিষ্যতের রূপকল্প
ইলন মাস্কের জীবনে যতই প্রতিকূলতা বা সমালোচনা আসুক না কেন, তিনি একটি নতুন পৃথিবী গড়ার পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। তার উদ্দেশ্য শুধু ব্যবসা নয়, বরং বিশ্বের ভবিষ্যৎ। উন্নত প্রযুক্তি, কর্মসংস্থান, গ্রহের সুরক্ষা এবং বৈষম্য দূরীকরণ—এগুলোই তার চূড়ান্ত লক্ষ্য।

তবে, পৃথিবীর পরিবর্তন এত সহজ নয়। মাস্কের পথে চ্যালেঞ্জ থাকবে, অনেকটা ট্রাম্প প্রশাসন থেকে সরে গিয়ে নতুন দিশা খোঁজা যেমন ছিলো, তেমনি প্রতিটি পদক্ষেপ নতুন উত্তরণের কথা বলে। শেষমেশ, ইলন মাস্ক আজ যেভাবে ভবিষ্যতের রূপান্তরের জন্য কাজ করছেন, তাতে একদিন তিনি হয়তো একটি নতুন যুগের সূচনা করবেন, যা প্রযুক্তি, সমাজ এবং অর্থনীতির দিক থেকে ইতিহাসে চিরকাল স্মরণীয় হয়ে থাকবে।

পরিশেষে, ইলন মাস্কের যাত্রা অবিরাম, দৃঢ়বিশ্বাসী এবং অপ্রতিরোধ্য- এটি প্রযুক্তির ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়, যা কেবল ভবিষ্যতের জন্য নয়, বর্তমানে পৃথিবীকে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে দেখার সুযোগ সৃষ্টি করছে।

লেখক: রহমান মৃধা, সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন

শেয়ার করুন:-

মত দ্বিমত

আমি একজন গ্রামের ছেলে, আর এই পরিচয়েই আমি গর্বিত

Published

on

বিএসসি

আমি একজন গ্রামের ছেলে। কাদামাটির পথ পেরিয়ে, ঝড়বৃষ্টি মাথায় নিয়ে, হারিকেনের আলোয় বই পড়ে বড় হয়েছি। গ্রামের স্কুলে কয়েক বছর, তারপর মহকুমা (বর্তমানে জেলা) শহরের এক স্কুলে, এরপর ঢাকার রেসিডেনসিয়াল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ (ডিআরএমসি)—এইভাবেই আমার শিক্ষার পথচলা। সেখান থেকে এইচএসসি পাস করে পাড়ি জমাই সুদূর সুইডেনে। তখনও বুঝিনি, জীবনের সবচেয়ে সহজ প্রশ্নগুলো কাউকে কতটা অস্বস্তিতে ফেলতে পারে, আর সত্য কথা বলাও কখন যেন দোষের হয়ে দাঁড়ায়।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

বাংলা ভাষা আমি শিখেছি গ্রামে—মায়ের মুখে, মাটির গন্ধে। উচ্চারণ হয়তো শহুরে নয়, কিন্তু হৃদয়ভরা। অনেকের কাছে এই ভাষা ‘ভাঙা’ বলে মনে হতে পারে, কিন্তু এই ভাঙা ভাষাতেই আমি লিখে যাচ্ছি বিগত দশ বছর ধরে। আমি জানি, শব্দে শুধু ব্যাকরণ নয়, হৃদয়ের সত্তাও লাগে। আমার ভাষা কাগজের জন্য নয়, জীবনের জন্য।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

আজ আমি বিশ্বের শীর্ষ ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানির একজন পরিচালক। এটি কোনো একদিনের ঘটনা নয়—তিন দশকের শ্রম, অধ্যবসায়, বৈশ্বিক প্রশিক্ষণ, ব্যবস্থাপনার নানা স্তরে অর্জিত অভিজ্ঞতা এবং ব্যর্থতার মুখে অটল থাকার সাধনা এই পরিচয়ের পেছনে আছে। কিন্তু এত কিছু সত্ত্বেও, হঠাৎ দুইদিন আগে আমার দেশ পত্রিকার এক সাংবাদিক ভাই টেলিফোনে বললেন— “আপনি তো তেমন ভালো লেখক না। আমি তো আপনার থেকেও অনেক ভালো মানের—বড় বড় প্রফেসরদের লেখাও ঠিক করে দেই। এমনকি সজিবদের লেখাও না করে দেই। আর আপনি তো…!” তিনি জানতে চাইলেন, আমার পড়াশোনা কী? প্রতিদিন কীভাবে লিখি? এআই-এর সাহায্য নিই কিনা? প্রশ্ন করে গেলেন কিন্তু শোনার মতো সময় তাঁর ছিল না।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

সুযোগ পেলে বলতাম—আমার বন্ধুরা কেউ বুয়েটের নামকরা প্রফেসর, কেউ সিনিয়র সজিব, কেউ জেনারেল, কেউবা আন্তর্জাতিক সংস্থায় উচ্চপদে কর্মরত। আমি নিজেও একজন পরিচালক—প্রডাকশন ও সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্টে ৩০ বছরের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন। বিশ্বের বহু নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশিক্ষণ নিয়েছি। কিন্তু পাশ্চাত্যে এসব গৌরবের কথা কেউ শুনতে চায় না, বোঝেও না পেছনের লড়াইয়ের ইতিহাস। কেউ জানতে চায় না আমার বাবা-মা কে ছিলেন বা কী করেছিলেন। এখানে শুধু দেখা হয়—এই মুহূর্তে আপনি কী করছেন, আপনার আসিভমেন্ট এবং অ্যাসাইনমেন্ট কী?
তবুও তিনি আমাকে শুনিয়ে দিলেন অনেক কিছু। বাংলাদেশে আজ পরিচয় ছাড়া, টাইটেল ছাড়া, বা নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর বাইরে থেকে কিছু করতে গেলে—তা যেন অসম্ভব। আপনি কী লিখলেন, সেটা বড় কথা নয়; আপনি কে লিখলেন—সেটাই মুখ্য। আর তাই এ দেশে দিন দিন ‘আম’ আর ‘ছালা’ দুটোই যেন হারিয়ে যেতে বসেছে।

হতে পারে, এই লেখাটি পড়ে সেই সাংবাদিক ভাই আর আমার লেখা ছাপাবেন না। কিছু যায় আসে না তবুও, আমি লিখব। কারণ আমি নিজে যেটা ভালো মনে করি এবং জানি সেটাই বলি এবং সেটাই লিখি।

আমার মতো যারা প্রবাসে আছে, তাদের প্রায় ১০০ ভাগই এই একই অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে গেছে বা যাচ্ছে। আপনি চাইলে নিচের কিছু লাইন পড়ে, যে কোনো একজন প্রবাসী বাংলাদেশিকে জিজ্ঞেস করুন—তাদের মুখেই আপনি আমার এই একই ধরনের কথা শুনবেন।

আর ঠিক এই জায়গা থেকেই আমরা বুঝতে পারি— প্রবাসে থাকা প্রতিটি বাঙালি আসলে এক একটি জীবন্ত বারুদ। বাঙালি যে এক একটি জীবন্ত বারুদ—অর্থাৎ শক্তি, সম্ভাবনা ও বিস্ফোরণের জাতি, সেটা সত্যিকার অর্থে উপলব্ধি করতে হলে আপনাকে দেশের বাইরে থাকা প্রবাসী বাঙালিদের দিকে তাকাতে হবে। তাকাতে হবে আমার মতো মানুষের দিকে, যিনি গ্রামের কাদামাটি পেরিয়ে আজ সুইডেনের মতো উন্নত রাষ্ট্রে অবস্থান করছেন; জানতে হবে আমার মতো লক্ষ লক্ষ প্রবাসীর সংগ্রাম, আত্মত্যাগ, আর সফলতার গল্প—যা বলা হয় না, লেখা হয় না, তবুও নিঃশব্দে ইতিহাস হয়ে ওঠে।
বাংলাদেশে থেকে আমরা নিয়ম ভাঙি, দায়িত্ব এড়িয়ে যাই, অনেক সময় কাজ ফাঁকি দেই। অথচ বিদেশে গিয়েই সেই একই মানুষটি নিয়ম মানে, সময় মেনে চলে, আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়। কেন? কারণ সে জানে—এখানে চাটুকারিতায় কাজ হয় না, এখানে নাম বা পরিচয়ে চাকরি মেলে না, এখানে যোগ্যতা ছাড়া মূল্য নেই।

এই প্রবাসী বাঙালিরা মাসে মাসে রেমিট্যান্স পাঠিয়ে দেশের অর্থনীতির রক্তসঞ্চালন সচল রেখেছে। এর পেছনে আছে অমানুষিক শ্রম, সীমাহীন ত্যাগ, এবং এক ধরনের নিঃশব্দ দায়বোধ—দেশের প্রতি, মাটির প্রতি, মানুষজনের প্রতি। প্রবাসে থেকেও তারা দেশকে বুকে আগলে রেখেছে।

কিন্তু এই পরিবর্তনের মূল কারণ কী? কারণ প্রবাসে বিচার-ব্যবস্থা কাজ করে, রাষ্ট্র দাঁড়ায় নিয়মে, ব্যবস্থাপনায় থাকে জবাবদিহি। আপনি যত বড় পদেই থাকুন, ভুল করলে জবাবদিহি করতে হবে। এখানেই মানুষ সোজা হয়ে যায়। আর বাংলাদেশে? সেখানে দায়িত্ব জবাবদিহি ছাড়া, ক্ষমতা প্রশ্নের ঊর্ধ্বে, বিচার শুধু গরিবের জন্য।

বিদেশে যে বাঙালি উচ্চশিক্ষিত নয়, সেও কয়েক বছরের পর বাড়ি কেনে, গাড়ি কেনে, সন্তানকে ভালো স্কুলে পাঠায়। অথচ ঐ দেশেরই বহু নাগরিক একটা ঘরের জন্য আজীবন লড়াই করে যায়। কারণ বাঙালি জানে—সঞ্চয় কাকে বলে, কীভাবে ভবিষ্যতের কথা ভাবতে হয়, কীভাবে পরিবার গড়ে তুলতে হয়। এটা শুধু টাকার হিসেব নয়—এ এক গভীর জীবনদর্শনের প্রতিচ্ছবি।

আপনি যদি প্রবাসী বাঙালির উঠানে যান, দেখবেন—পুঁইশাক, লাউ, কুমড়ো, ঢেঁড়শে ছাওয়া এক টুকরো বাংলাদেশ। এমনকি যে ছেলেটি দেশে একটি গাছও লাগায়নি, তাকেও দেখবেন বিদেশে এসে সবজির বাগান করছে। এটা শুধু খাওয়ার জন্য নয়—এটা তার শিকড় ছড়িয়ে নিজের একটি জগৎ গড়ে তোলার আকাঙ্ক্ষা।

এই প্রবণতা কেবল ঘরের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়—ইউরোপের বহু দেশে প্রবাসী বাঙালিরাই বহুজাতিক সবজির বানিজ্যিক চাষ শুরু করেছে। মধ্যপ্রাচ্যে কৃষিকে প্রাণ দিয়েছে বাংলাদেশিরা। দক্ষিণ আফ্রিকা ও আফ্রিকার অনেক অঞ্চলে নতুন নতুন সবজির আবাদ শুরু হয়েছে তাদের হাত ধরে।

আমি নিজেই এক জলন্ত প্রমাণ—শীতপ্রধান সুইডেনে ছোট্ট একটি সবুজ বাংলাদেশ গড়ে তুলেছি, সুইডিশদের নিয়েই। তারপর যারা দেশে ‘ব্যর্থ’ ট্যাগ নিয়ে ঘুরেছে—তাদেরই আপনি আজ দেখবেন ইউরোপ, আমেরিকার বড় বড় গবেষণাগারে পিএইচডি করছে, পোস্টডকে যুক্ত। কেউ বৈশ্বিক সম্মেলনে দেশের প্রতিনিধি, কেউ আন্তর্জাতিক সংস্থায় শীর্ষ পদে। কেন? কারণ বিদেশে তার শ্রম, মেধা, মনন—সবকিছুরই মূল্য রয়েছে। বিচার হয় কাজ দিয়ে, পরিচয় দিয়ে নয়।

আজ আমেরিকার এমন কোনো বিশ্ববিদ্যালয় নেই, যেখানে বাংলাদেশি নেই। অথচ সেই জাতিকেই আমরা দেশে অবহেলা করি, অবজ্ঞা করি, সুযোগ না দিয়ে বিদেশে পাঠিয়ে দিই। সেখানে তারা নিজেদের সক্ষমতা দিয়ে শুধু নিজেরাই দাঁড়ায় না—বাংলাদেশের নামও তুলে ধরে।

বিদেশে যাদের ফুল ফোটে, দেশে তাদের পা ছুঁড়েই মারা হয়। তাহলে প্রশ্ন—এই উদ্ভাসন আমাদের দেশে হয় না কেন? উত্তর একটাই: সিস্টেম।

আমাদের দেশে আজও বিচার হয় কে করল সেটা দেখে, কী করল সেটা নয়। দুর্নীতি হয় প্রকাশ্যে—তারপর বিচার হয় না। ক্ষমতা চলে কিছু গোষ্ঠীর হাতে, আর বাকি মানুষজন শুধু ভোট দিয়ে দায় সারে।

দেশে সংস্কারের নামে এক বছর পার হয়েছে—কিন্তু বাস্তবতা হলো, দেশ আগের চেয়ে আরও দশগুণ খারাপ হয়েছে। বেকারত্ব বেড়েছে, দ্রব্যমূল্য অস্বাভাবিক, বিচারব্যবস্থা মেরুদণ্ডহীন, মিডিয়া নিস্তব্ধ, জনগণ হতাশ।
এখানে আপনি যতই মেধাবী হন—আপনি যদি দলীয় ছাতার নিচে না থাকেন, আপনি কোথাও যাবেন না।

এখন দরকার মৌলিক পরিবর্তন—শুধু মুখে নয়, বাস্তবে।
• ব্যবস্থাপনার রূপান্তর—সিস্টেমটাই বদলাতে হবে।
• যে কেউ হোক, যে দলেরই হোক, দুর্নীতিতে যুক্ত হলে শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
• ক্যাশ-নির্ভরতা পুরোপুরি তুলে ডিজিটাল পেমেন্ট শতভাগ বাধ্যতামূলক করতে হবে।
• প্রশাসনে কঠিন মনিটরিং চালু করতে হবে—স্বাধীন, স্বচ্ছ এবং প্রযুক্তিনির্ভর।
• বিচারব্যবস্থায় ১০০% জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে—কে করল সেটা নয়, কী করল সেটা বিচার্য হতে হবে।
• নীতিনির্ধারণে দল নয়, জাতীয় স্বার্থই হবে প্রধান বিবেচ্য।

এই বোধ যতদিন আমাদের মাঝে না আসবে, ততদিন প্রবাসেই গড়ে উঠবে নতুন বাংলাদেশ, আর দেশীয় বাংলাদেশ শুধু প্রতিভার রক্ত দিয়ে বন্যা বইয়ে দেবে। এটাই বাস্তবতা। এটাই আজকের সবচেয়ে অপ্রিয়, কিন্তু সবচেয়ে প্রয়োজনীয় সত্য। জাগো বাংলাদেশ জাগো

রহমান মৃধা
গবেষক, লেখক ও সাবেক পরিচালক, ফাইজার সুইডেন
Rahman.Mridha@gmail.com

শেয়ার করুন:-
পুরো সংবাদটি পড়ুন

মত দ্বিমত

জিরো থেকে হিরো, আবার হিরো থেকে জিরো?

Published

on

বিএসসি

থ্রি জিরোর (Zero Poverty, Zero Unemployment, Zero Net Carbon Emission) স্বপ্ন দেখিয়ে যিনি গোটা বিশ্বে প্রশংসা কুড়িয়েছিলেন, আজ সেই মানুষটাই জাতির সামনে দাঁড়িয়ে এক ভয়াবহ প্রশ্নচিহ্ন হয়ে উঠেছেন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তার ভাবমূর্তি ধীরে ধীরে ক্ষয়ে যাচ্ছে, আর এখন তো প্রশ্ন উঠছে—এই যাত্রার শেষ প্রান্তে প্রফেসর ড. মুহম্মদ ইউনূস নিজেই জিরো হয়ে যাচ্ছেন না তো?

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

এটা শুধুমাত্র আমার প্রশ্ন নয়। এটা গোটা জাতির এক চাপা কণ্ঠস্বর, এক ব্যর্থ স্বপ্নের অদৃশ্য বিলাপ।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

একদিন যে আস্থা নিয়ে আমরা তাঁকে দায়িত্ব দিয়েছিলাম, আজ সেই আস্থাই পরিণত হয়েছে চরম হতাশায়। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে যে ভূমিকা তাঁর পালন করার কথা ছিল, বাস্তবে তা এক কথায় বললে “গুড ফর নাথিং”। পদের ভার ছিল পাহাড়সম, কিন্তু দায়িত্ব পালনে ছিলেন হাওয়ার মতো হালকা। দীর্ঘ এক বছর ধরে এই পদ আঁকড়ে রেখেছেন, কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে—এই দায়িত্ব তিনি আদৌ বোঝেন কি?

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

সোনালী প্রতিশ্রুতির কালো পরিণতি
গ্রামীণ ব্যাংকের সাফল্য থেকে নোবেল, আন্তর্জাতিক সম্মান থেকে বিলিয়ন ডলারের প্রজেক্ট—সবকিছুই এক অনন্য ব্র্যান্ডে পরিণত করেছিল ইউনূস নামকে। কিন্তু কী লাভ সেই ব্র্যান্ডের, যদি সেটি দেশের অভ্যন্তরে ন্যূনতম বিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে না পারে?

৩জিরোর কথা বলেছিলেন তিনি, অথচ তার নিজের প্রতিষ্ঠানেই দেখা গেছে শ্রমিক শোষণ, লভ্যাংশ-বঞ্চনা আর নৈতিক দ্বিচারিতা। বিশ্বকে বুঝিয়েছেন আমরা বাঙালিরা সামাজিক ব্যবসার অগ্রদূত। অথচ দেশের ভেতরে তিনি এক পুঁজি-আধিপত্যবাদী ব্যবস্থার দালাল হিসেবেই চিহ্নিত হচ্ছেন দিনকে দিন।

নিরব জাতি, মুখোশধারী নেতৃত্ব
সবচেয়ে বিস্ময়ের বিষয় হলো, জাতি আজও নিরব। এতদিন যারা তাঁর পাশে থেকেছেন, তাঁর সঙ্গে একসাথে ছবি তুলেছেন, তাঁর নামে মঞ্চে উঠেছেন—তাঁরাই আজ মুখে কুলুপ এঁটেছেন। এই নীরবতা কি সম্মতির ছায়া? নাকি নিজেদের স্বার্থে চোখ বুঁজে থাকার সহজ বুদ্ধি?

একজন ব্যক্তি যখন আন্তর্জাতিক খ্যাতির ভারে জাতীয় দায়বদ্ধতা ভুলে যান, তখন তাকে আর নেতা বলা যায় না—তাকে বলা হয় এক ব্যর্থ প্রতীক, এক সময়ের গৌরব যা এখন ইতিহাসের গ্লানিতে পরিণত হয়েছে।

এখন সময় প্রশ্ন তোলার
ড. ইউনূসের অনুসারীরা নিশ্চয় বলবেন, এটা একটি পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র, একটি রাজনৈতিক চরিত্র হননের প্রয়াস। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, যদি সত্যিই ষড়যন্ত্র হয়ে থাকে, তাহলে কেন তিনি বারবার জাতীয় সংলাপ, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির প্রক্রিয়া থেকে দূরে থাকেন?

জাতি এখন আর ফুল দিয়ে বরণ করে নেওয়ার মুডে নেই। জাতি এখন প্রশ্ন করতে জানে। এবং এ প্রশ্ন তোলা সময়ের দাবি—নোবেল কি প্রশ্নের ঊর্ধ্বে? আন্তর্জাতিক খ্যাতি কি জাতীয় ব্যর্থতা আড়াল করার পর্দা হতে পারে?

শেষ কথা
সময় এসেছে ‘ইউনূস ইজ এন আইকন’ এই মনস্তাত্ত্বিক মোহ ভেঙে ফেলার। তাঁকে অব্যাহতভাবে প্রশ্ন করতে হবে, তাঁকে ঘিরে থাকা নৈতিক ধোঁয়াশা সরাতে হবে। কারণ ইতিহাস কাউকে ছাড়ে না—আর জাতির প্রত্যাশা কাউকে অন্ধ আনুগত্যের সুযোগ দেয় না।

তাঁর যদি সত্যিই কিছু দেবার থাকে জাতিকে, তবে সেটা এখন—এই মুহূর্তে—দায়িত্ব নিয়ে সামনে আসা, স্বচ্ছতা দেখানো এবং ব্যর্থতা স্বীকার করার মধ্যেই নিহিত।

রহমান মৃধা, গবেষক, লেখক ও সাবেক পরিচালক, ফাইজার সুইডেন। Rahman.Mridha@gmail.com

শেয়ার করুন:-
পুরো সংবাদটি পড়ুন

মত দ্বিমত

সাহাবুদ্দীন আহমদের আয়নায় রাষ্ট্রীয় নৈতিকতার হারানো মানচিত্র

Published

on

বিএসসি

দেশ যখন দুঃসময়ে, নেতৃত্ব যখন প্রশ্নবিদ্ধ, তখন কিছু নাম, কিছু জীবনচর্যা আমাদের সামনে উঠে আসে আলো হয়ে—অন্ধকারে পথ দেখানোর জন্য। বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ ছিলেন তেমনই এক মানুষ, যাঁর জীবনের প্রতিটি অধ্যায় আজও রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য এক পরিপাটি নৈতিক সংবিধান হয়ে আছে।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

এই মানুষটিকে স্মরণ করা মানে কেবল একজন প্রাক্তন রাষ্ট্রপতিকে শ্রদ্ধা জানানো নয়, বরং একটি ভঙ্গুর রাষ্ট্রনৈতিক বাস্তবতায় সততা ও সংযমের চর্চা ফেরত আনার আহ্বান। আজকের বাংলাদেশ যখন রাষ্ট্রীয় দায়িত্বকে ব্যক্তি সুবিধার সমার্থক করে ফেলেছে, তখন সাহাবুদ্দীন আহমদের জীবন যেন আমাদের মুখের ওপর একটি বিপরীত, নির্মম প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয়—ক্ষমতা কী শুধুই ভোগের জন্য?

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

তিনি অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি হয়েছিলেন দেশের ইতিহাসের এক চরম সংকটকালে। তখন রাজনৈতিক দলগুলো তাঁকে নিরপেক্ষ অভিভাবক হিসেবে গ্রহণ করেছিল। কিন্তু রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পদে বসেও তিনি কখনো বঙ্গভবনের আড়ম্বর নিজের জীবনে ঢুকতে দেননি। রাষ্ট্রপতির জন্য নির্ধারিত গাড়ি, পোশাক, আয়োজন—সবকিছুর ভেতরে তিনি খুঁজে নেন ন্যূনতমের সৌন্দর্য। নিজের পরিবারের প্রতিদিনকার বাজারের খরচ পর্যন্ত নিজের পকেট থেকে দিতেন, রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে নিতেন না।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

একবারের জন্যও তাঁর স্ত্রী বঙ্গভবনে আসেননি। সন্তানরা থেকেছেন আড়ালে, রাষ্ট্রীয় সুবিধার ছায়া পর্যন্ত গায়ে লাগতে দেননি। তাঁর বিদেশে থাকা ছেলের সঙ্গে ফোনে কথা বলার বিল সতেরশো টাকা—সেটিও নিজে দিয়েছেন, রাষ্ট্রকে দেননি। ভিডিও ক্যাসেট বানিয়ে রাষ্ট্রপতির ভাষণ সংরক্ষণ করতে চাইলেও রাষ্ট্রীয় বাজেট থেকে কিছু না নিয়ে বাংলাদেশ টেলিভিশনকে দিয়েছেন নিজের কেনা ক্যাসেট।

এই সংযমের চর্চা কেবল কাগজে-কলমে নয়, জীবনের প্রতিটি খুঁটিনাটিতে। এমনকি সহকর্মী বিচারপতির পর্দার কাপড়ের দাম বেশি পড়ে গেলে, তিনি বলেন: “আপনি সাড়ে চার হাজার টাকা দিয়ে দিন, বাকিটা সরকার দেবে।” রাষ্ট্রীয় খরচে সৌখিনতা বরদাশত নয়—এই ছিল তাঁর নীতিতে কঠোরতা।

এই জীবনের গায়ে কোনো রাজনীতির গন্ধ ছিল না, ছিল শুধু এক শুদ্ধ মানুষের নীরব প্রতিজ্ঞা—রাষ্ট্র আমার সুবিধার উৎস নয়, এটি আমার দায়বদ্ধতার মঞ্চ। তিনটি রাজনৈতিক জোট যখন তাঁকে অনুরোধ করে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব নিতে, তিনি তখনও বলেন, “আমি এই শর্তে রাজি—যে নির্বাচনের পর আমি যেন ফিরে যেতে পারি প্রধান বিচারপতির পদে।”

আজকের বাংলাদেশে যাঁরা একবার ক্ষমতায় বসেন, তাঁরা আর নামতে চান না। কিন্তু সাহাবুদ্দীন আহমদ নিজে চাইছিলেন ফিরে যেতে তাঁর আসল জায়গায়—যেখানে তিনি আইন রক্ষা করতেন, নীতি রক্ষা করতেন, নিজের আত্মাকে রক্ষা করতেন।

তাঁর সন্তানরাও বাবার মতোই ছিলেন মিতভাষী, আত্মপ্রবঞ্চনামুক্ত, রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় অপ্রবেশকারী। কলকাতায় রাষ্ট্রপতির মেয়েরা সরকারি গাড়িতে উঠতে রাজি হননি, সাধারণ গেস্টহাউসে থেকেছেন, শপিং মলে গিয়ে কাপড় কেনার সময় ভেবেছেন—বাবা যদি দাম বেশি দেখে, পরে হয়তো গ্রহণই করবেন না! ভাবা যায়, এমন এক রাষ্ট্রনায়কের সন্তান?

সাহাবুদ্দীন আহমদের এই গল্পগুলো আজ প্রজন্মের কাছে যতটা বিস্ময়কর, ততটাই অনুপ্রেরণার। অথচ এই দেশ তাঁকে নিয়ে বড় কোনো প্রচারণা চালায়নি। আমরা জানি ভারতের এপিজে আবদুল কালামকে। জানি কেন তিনি জনপ্রিয়। অথচ আমাদের নিজস্ব সাহাবুদ্দীন আহমদ আজও নিভৃত এক কিংবদন্তি—শ্রদ্ধায় নয়, অবহেলায় ঢাকা।

এমন এক মানুষ আমাদের রাজনৈতিক ইতিহাসে একবার এসেছিলেন, যেন বলে দিয়ে যান—রাষ্ট্রপ্রধান মানেই আড়ম্বর নয়, ভোগ নয়; রাষ্ট্রপ্রধানও হতে পারেন সাদামাটা, স্বচ্ছ এবং এক আদর্শে প্রতিষ্ঠিত সাধক। আজ এই কথাগুলো শোনা আরও জরুরি হয়ে উঠেছে, কারণ চারদিকে আমরা যা দেখছি তা হলো ঠিক উল্টো—লুটপাট, আত্মীয়প্রীতি, এবং আত্মসুখের রাষ্ট্রায়ন।

এই মুহূর্তে দেশের সর্বোচ্চ পর্যায়ে যাঁরা দায়িত্বে আছেন—তাঁদের জন্য সাহাবুদ্দীন আহমদ কেবল একজন সাবেক রাষ্ট্রপতি নন; তিনি এক আয়না, যার সামনে দাঁড়ালে নিজেদের মুখ দেখা যায়। যারা সত্যিকারের জনসেবক হতে চান, তাঁদের উচিত সাহাবুদ্দীনের জীবন অধ্যয়ন করা — দেখার জন্য, ক্ষমতার চূড়ায় থেকেও কেমন করে একজন মানুষ সংযম, সততা ও আত্মমর্যাদাকে জীবনের একমাত্র পোশাক বানিয়ে নিতে পারেন।

আমরা এখন এমন এক সময়ে আছি, যেখানে বিশ্বাস ও আস্থার সংকট, দায়িত্বে নৈতিকতার অনুপস্থিতি, আর নেতৃত্বে আত্মনিমগ্নতার ব্যাধি প্রকট। এই মুহূর্তে সাহাবুদ্দীন আহমদের জীবনের গল্পগুলো ছড়িয়ে দেওয়া শুধু অতীত চর্চা নয়—এটা ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুতি।

আমরা যদি কখনো সত্যিকারের নেতৃত্বের সন্ধান করতে চাই, সাহাবুদ্দীন আহমদের মতো মানুষের দিকে তাকাতে হবে—যিনি ক্ষমতার শিখরে থেকেও মাথা নিচু রেখেছিলেন, নিজের পরিবারকেও রেখেছিলেন নীতির নিচে।

এই দেশে সাহাবুদ্দীন আহমদ ছিলেন—এটা আমাদের সৌভাগ্য। কিন্তু যদি তাঁকে অনুসরণ না করি, তাহলে সে সৌভাগ্যই একদিন হয়ে উঠবে এক অবর্ণনীয় আফসোস।

রহমান মৃধা
গবেষক, লেখক ও সাবেক পরিচালক, ফাইজার সুইডেন
Rahman.Mridha@gmail.com

শেয়ার করুন:-
পুরো সংবাদটি পড়ুন

মত দ্বিমত

যোগ্যতা, নিষ্ঠা ও সততা: সত্যিকারের গণতন্ত্রের মূল ভিত্তি

Published

on

বিএসসি

গণতন্ত্র শব্দটি উচ্চারণ করা যত সহজ, তার নৈতিক ভার বহন করা ততটাই কঠিন। আমরা প্রায়শই গণতন্ত্রকে বুঝি একটি নির্বাচনী পদ্ধতি হিসেবে—যেখানে জনগণ ভোট দেয়, সরকার গঠিত হয়, সংখ্যাগরিষ্ঠতা নির্ধারণ করে নীতি। কিন্তু এই সংখ্যাগরিষ্ঠতা যদি গড়ে ওঠে অসৎ, প্রভাবশালী কিংবা অর্থবিত্তনির্ভর প্রার্থীদের মধ্যে, যারা জনগণের প্রতিনিধিত্ব নয় বরং ক্ষমতার ভাগাভাগি করতে আসে—তবে সেটি গণতন্ত্রের বিজয় নয়, বরং তার পরাজয়।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

নির্বাচন তখন কেবল একটি আনুষ্ঠানিকতা হয়ে দাঁড়ায়, যেখানে ভোটের বাক্সে পড়ে থাকে মানুষের প্রত্যাশা, অথচ উত্থিত হয় দুর্নীতির দাপট, গোষ্ঠীস্বার্থের বিভাজন আর নৈতিক শূন্যতা। কেবল ভোট গ্রহণের মাধ্যমে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হয় না—যদি সেই ভোটে জনগণের সামনে প্রকৃত পছন্দ না থাকে, যদি প্রার্থী বাছাই হয় অনৈতিক, দলীয় সুবিধা ও টাকার বিনিময়ে—তবে গণতন্ত্রের ভিত নিজেই ধসে পড়ে।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

একটি মানচিত্র রাষ্ট্র হতে পারে মাত্র কাগজে-কলমে, কিন্তু একটি জাতিকে গণতান্ত্রিক করতে হলে চাই এমন নেতৃত্ব, যারা জনগণের হৃদয় থেকে উঠে আসে। চাই এমন নেতৃত্ব, যার ভিত্তি নীতিতে, দায়বদ্ধতায় ও মানবিকতায় গাঁথা। কারণ গণতন্ত্র কেবল ভোটের সংখ্যা নয়—গণতন্ত্র মানে মানুষের প্রতি আস্থা, নৈতিকতার প্রতি শ্রদ্ধা, এবং ভবিষ্যতের প্রতি প্রতিশ্রুতি।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

গণতন্ত্রের কথা যখন বলি, তখন আমাদের চোখে ভেসে ওঠে ব্যালট বাক্স, ভোটার সারি, নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন, কিংবা সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে সরকার গঠনের আনুষ্ঠানিক রূপরেখা। কিন্তু প্রশ্ন হলো—এই দৃশ্যপটটি কি যথেষ্ট?

একটি ভোটগ্রহণ যদি নিয়মমাফিক, শান্তিপূর্ণ ও সময়মতো অনুষ্ঠিত হয়, তবু যদি সেই নির্বাচনে প্রার্থী নির্বাচনের প্রক্রিয়া হয় অনৈতিক, স্বার্থান্বেষী এবং পুঁজিশ্রেণিনির্ভর, তাহলে সেই গণতন্ত্রের ভিত কতটা দৃঢ়? গণতন্ত্র কি কেবল সেই কাঠামো, যেখানে টাকার জোর, গোষ্ঠীর ক্ষমতা ও দলীয় আনুগত্যই মনোনয়নের মানদণ্ড হয়ে দাঁড়ায়? তাহলে সেখানে জনগণের ভূমিকা কী? একজন ভোটার কি শুধু সংখ্যার অংক, না কি তিনি জাতির নৈতিক ভবিষ্যতের রচয়িতা? নির্বাচনের প্রক্রিয়ায় যদি জনগণের সামনে প্রকৃত বিকল্প না থাকে—যদি প্রার্থী বাছাই হয় সৎ, যোগ্য ও দায়বদ্ধতার ভিত্তিতে নয়, বরং দুর্নীতি, ভয় এবং ক্ষমতার পৃষ্ঠপোষকতায়—তাহলে সেই গণতন্ত্র একটি নিঃসাড় প্রহসন ছাড়া আর কিছুই নয়।

রাষ্ট্র গঠন করা যায় সীমান্ত টেনে, পতাকা টাঙিয়ে, সংবিধান লিখে। কিন্তু একটি জাতিকে সত্যিকারের গণতান্ত্রিক জাতিতে রূপ দিতে হলে চাই নৈতিকতা, যোগ্যতা ও জনগণের প্রতি দায়বদ্ধ নেতৃত্ব। চাই এমন নেতৃত্ব, যারা জনগণের ভালোবাসা অর্জন করে; যারা ব্যালট পায় ভয় দেখিয়ে নয়, আস্থা জাগিয়ে। কারণ গণতন্ত্র মানে কেবল সরকার গঠন নয়—গণতন্ত্র মানে মানুষের মর্যাদা, ভবিষ্যতের প্রতি নৈতিক দায়, আর নেতৃত্বের চরিত্রের ওপর জাতির বিশ্বাস স্থাপন।

কেমন প্রার্থী চাই—জনগণের প্রতিনিধি না হলে কিসের গণতন্ত্র? গণতন্ত্র কেবল সংখ্যার খেলা নয়, এটি হলো বিশ্বাস ও প্রতিনিধিত্বের পবিত্র চুক্তি।

কিন্তু সেই চুক্তি তখনই অর্থহীন হয়ে যায়, যখন নির্বাচনে দাঁড়ানো প্রার্থীরা জনগণের প্রতিনিধি হয়ে ওঠেন না—বরং হয়ে ওঠেন দল, ধনিকশ্রেণি বা গোষ্ঠীস্বার্থের বাহক।

প্রকৃত গণতন্ত্র চায় মানবিক, বিবেকবান, এবং দায়িত্বশীল নেতৃত্ব—যেখানে একজন প্রার্থীর পরিচয় হবে তাঁর মানুষের প্রতি ভালোবাসা, সততা, জবাবদিহি ও জনসেবার মানসিকতা দিয়ে।

একজন যোগ্য প্রার্থীর মধ্যে থাকতে হবে:

• জনগণের কণ্ঠস্বর হয়ে উঠবার সাহস,
• এলাকার সমস্যা বোঝার জ্ঞান ও আন্তরিকতা,
• সংসদে গিয়ে নীতিনির্ধারণে সক্রিয়ভাবে অংশ নেওয়ার সক্ষমতা,
• এবং—সবচেয়ে জরুরি—নিজেকে দেশ ও মানুষের সেবায় উৎসর্গ করার অটল মানসিকতা।

তিনি জনপ্রিয় নন, হবেন প্রাসঙ্গিক। তিনি বড় পোস্টারে নয়, থাকবেন মানুষের বিশ্বাসে। তাঁর পরিচয় হবে না কোনো মিডিয়া-মেড প্রভাবশালী নেতা হিসেবে, বরং তিনি হবেন আস্থা, সততা ও সক্রিয় দায়বদ্ধতার প্রতীক।

তিনি দলীয় সিদ্ধান্তে মনোনীত হবেন না, তাঁকে মনোনীত করবে জনতার বিবেক। এবং এটি কোনো কল্পলোকের আকাশকুসুম ভাবনা নয়—এটি আমাদের ন্যায্য দাবি। জনগণের দাবি, গণতন্ত্রের দাবি, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের দাবি। কারণ, যদি প্রতিনিধি না হন জনগণেরই, তবে তিনি কিসের প্রতিনিধি?

যদি তাঁর হৃদয়ে না থাকে মানুষের জন্য ব্যথা, তবে তাঁর হাতে ব্যালট তুলে দেওয়া মানে নিজেদের ভাগ্য নিজ হাতে নষ্ট করা। গণতন্ত্রকে যদি সত্যিকারের গণতন্ত্র করতে হয়, তাহলে নেতা হতে হবে আদর্শের, প্রতিশ্রুতির, এবং সেবার প্রতীক—ক্ষমতার নয়।

ভয়মুক্ত ভোটাধিকার—গণতন্ত্রের প্রাণস্পন্দন। একটি সত্যিকারের গণতন্ত্রের মূলে আছে ভোটারদের ভয়মুক্ত ও স্বাধীন নির্বাচনাধিকারের মর্যাদা। কোনো নাগরিক যেন কোনো ভয়, হুমকি, দমনে বা লোভ-প্রলোভনে আটকা পড়ে ভোট দিতে বাধ্য না হয়—এটাই হতে হবে আমাদের নির্বাচনী প্রক্রিয়ার অপরিহার্য শর্ত। ভোটার যখন ভোট দেয়, তখন তাঁর হাতে থাকতে হবে একটি শক্তিশালী অস্ত্র—বিবেকের স্বাধীনতা ও গর্বের অনুভূতি। ভোট হতে হবে ভয়ভীতির নয়, বরং নিশ্চিত বিশ্বাসের প্রকাশ। আমাদের সবাইকে নিশ্চিত করতে হবে যে, ভোটারের পছন্দের ওজন আছে, তাঁর ভোটের প্রতি শ্রদ্ধা আছে, এবং তাঁর ভোটই নির্ধারণ করে দেশের ভবিষ্যৎ পথচলা। কেউ যেন না বলে—“আমার ভোট কোনো কিছু বদলাতে পারে না।”

ভোটের আগে ছড়িয়ে পড়তে হবে ভয়ের নয়, আত্মবিশ্বাস ও উৎসাহের জোয়ার। ঘরে ঘরে, কমিউনিটি থেকে শুরু করে সমাজের সর্বত্র যেন শোনা যায়—“আমি ভোট দেব কারণ আমি বিশ্বাস করি।” এমন বিশ্বাস গড়ে তোলার জন্য দরকার এমন প্রার্থী, যাঁরা সত্যিকার অর্থে জনগণের আস্থা অর্জন করেছেন, যাঁরা ভোটারের স্বপ্ন ও প্রত্যাশার প্রতিফলন। ভয়মুক্ত ভোটাধিকার হলে গণতন্ত্র বাঁচে, শক্তিশালী হয়, এবং মানুষের প্রত্যাশা বাস্তবায়ন হয়। এটাই হবে আমাদের ন্যায্য অধিকার, আমাদের জাতির গৌরব।

এই অচল অবস্থা থেকে উত্তরণের পাঁচটি রূপান্তরমূলক পথ;

গণতন্ত্রের বর্তমান সংকট কোনো সাময়িক সমস্যা নয়—এটি একটি নৈতিক, কাঠামোগত ও সাংস্কৃতিক বিপর্যয়।
এ অবস্থা থেকে উত্তরণ চাইলে শুধু প্রতিরক্ষা নয়—পুনর্নির্মাণ করতে হবে গণতন্ত্রকে, গড়ে তুলতে হবে এমন এক কাঠামো যা নেতৃত্বে আনে সততা, প্রজ্ঞা ও জনকল্যাণ। এ জন্য জরুরি পাঁচটি নির্ভুল ও অনিবার্য পরিবর্তন—যা একযোগে প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো, রাজনৈতিক সংস্কৃতি ও নাগরিক অংশগ্রহণকে নতুন করে গড়ে তুলবে:

১. নৈতিক নীতিমালা-ভিত্তিক মনোনয়ন প্রক্রিয়া: রাজনীতিতে নৈতিক ফিল্টার চাই।

রাজনৈতিক দলগুলোকে আর আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নেওয়ার অবকাশ নেই। তাদের অবশ্যই এখনই যৌথভাবে একটি ন্যূনতম নৈতিক নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে, যার ভিত্তিতে মনোনয়ন দেওয়া হবে। অতীতে দুর্নীতি, সহিংসতা বা ক্ষমতার অপব্যবহারে জড়িত—এমন কেউ মনোনয়নের যোগ্য হতে পারেন না। নৈতিকতা আর দলীয় আনুগত্যকে এক পাল্লায় তোলা যাবে না। এই শর্তটি হতে হবে অনড়, অচলযোগ্য এবং সর্বজনগ্রাহ্য।

২. নির্বাচন কমিশনের তথ্য যাচাই ও সর্বজনীন উন্মোচন: গোপন নয়, স্বচ্ছতা চাই।

নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব শুধু ভোট আয়োজন নয়, নির্বাচনের নৈতিক কাঠামো নিশ্চিত করাও তার কাজ। প্রার্থীদের আর্থিক, সামাজিক ও আইনগত পটভূমি—সহ সব তথ্য কঠোরভাবে যাচাই করতে হবে। এবং তা জনসমক্ষে প্রকাশ করতে হবে, যাতে ভোটাররা অন্ধ নয়, সচেতনভাবে ভোট দিতে পারেন। ভোটার যেন জানেন—আমি যাকে ভোট দিচ্ছি, সে কে? তাঁর অতীত কী? তাঁর জনসেবা কতটা প্রমাণিত?

৩. “Public Scrutiny Platform”: জনগণের হাতে নেতার হিসাব চাই।

একটি স্বাধীন ও সর্বজনসম্পৃক্ত “Public Scrutiny Platform” গঠনের আহ্বান জানাতে হবে, যেখানে সাধারণ মানুষ, সাংবাদিক ও সুশীল সমাজ মিলে প্রার্থীদের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ ও যাচাই করতে পারবে। এটি হবে নাগরিক পর্যায়ে একটি জবাবদিহিমূলক শক্তি, যেখান থেকে কেউ রেহাই পাবে না। রাজনীতিকে বাঁচাতে হলে—নেতাদেরও মানুষের সামনে দাঁড়াতে হবে খোলা হাতে ও খোলা চোখে।

৪. রাজনৈতিক শিক্ষা পাঠ্যক্রমে সংযুক্তি: সচেতন নাগরিক ছাড়া গণতন্ত্র অর্থহীন।

রাজনৈতিক অশিক্ষা গণতন্ত্রের সবচেয়ে বড় শত্রু। আজ আমাদের দরকার রাজনৈতিক সাক্ষরতা (Political Literacy)—যাতে নতুন প্রজন্ম বুঝে তাদের অধিকার, দায়িত্ব ও রাষ্ট্রের কাঠামো। এই বিষয়টি মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাক্রমেই অন্তর্ভুক্ত করতে হবে, যেন ছাত্রছাত্রীরা বড় হয়ে কেবল পাস নয়, পৃথিবীর সবচেয়ে বড় পরীক্ষায়—নাগরিকত্বে—পাস করতে পারে।

৫. তরুণ সমাজ ও শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে নৈতিক জাগরণ: নেতৃত্ব ফিরিয়ে আনুক তার আসল রূপ।

এই সময়ের সবচেয়ে বড় শক্তি হলো তরুণদের বিবেক ও তাদের প্রশ্ন করার সাহস। তাঁরা শুধু ভোটার হয়ে থাকবে না—হবে পরিবর্তনের মূল চালক। তাঁরা প্রচার চালাক, বিতর্কে যুক্ত হোক, সৎ প্রার্থীর জন্য গণজোয়ার তৈরি করুক—এভাবেই শুরু হবে নতুন ধারার রাজনীতি। নেতৃত্ব কেবল অভিজ্ঞতায় নয়—নৈতিকতাতেও জন্ম নিতে পারে, এবং সেই জন্ম দিতে পারে আজকের শিক্ষার্থী, আজকের তরুণ, আজকের সোচ্চার নাগরিক। এই পাঁচটি স্তম্ভ দিয়েই গড়ে উঠতে পারে একটি নৈতিক, জবাবদিহিমূলক ও মানবিক গণতন্ত্র। এটা কোনো স্বপ্ন নয়, এটা এখন সময়ের দাবি। এবং এই দাবির পক্ষে দাঁড়ানোর সাহস আজ আমাদের সবার থাকা উচিত। আমরা কী চাই—সুন্দর নির্বাচন, না সৎ নির্বাচন?

আমরা যেন আর কেবল “সুষ্ঠু নির্বাচন চাই” এই নিরাপদ বাক্যে আটকে না থাকি। আমরা বলি—“আমরা চাই এমন নির্বাচন, যেখানে প্রার্থীরা হবেন নৈতিক, যোগ্য ও জনগণের সত্যিকারের প্রতিনিধি।” আমরা আর “কম খারাপ” কে বেছে নেওয়ার সংস্কৃতি চাই না। আমরা চাই, “সেরা মানুষটি”—সততার প্রতীক, জনসেবার সৈনিক, মানুষের আশা ও আস্থার বাহক—তাঁর হাতে তুলে দিতে দায়িত্ব।

এই সিদ্ধান্ত শুধু রাজনৈতিক নয়, এটি নৈতিক।এটি কেবল একটি ভোট নয়—এটি একটি জাতির আত্মাকে বাঁচিয়ে রাখার লড়াই। গণতন্ত্রের সৌন্দর্য তখনই ফুটে ওঠে, যখন তা কেবল নিয়ম নয়—প্রতিটি মানুষের মঙ্গলচিন্তার আঙিনায় দাঁড়ায়। এবং সেই গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ তখনই উজ্জ্বল, যখন নেতৃত্বের ভিত্তি হয় সততা, দায়িত্ব ও ভালোবাসা। গণতন্ত্র মানে কেবল ব্যালট নয়—এটি বিবেকের প্রতি শ্রদ্ধা, মানুষের প্রতি ভালোবাসা, এবং সত্যের পক্ষে দাঁড়ানোর সাহস।

রাজনীতি যদি সৎ মানুষের জায়গা না হয়, তবে অসৎ মানুষের আসন নিশ্চিত হয়। যেখানে ভালো মানুষ চুপ থাকে, সেখানেই দুর্নীতি কথা বলে। এখনই সময়—নির্বাচনের নামে চলা প্রহসনের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর। এখনই সময়—যোগ্যতা, নিষ্ঠা ও সততার পক্ষে কণ্ঠ মেলানোর। গণতন্ত্রকে রক্ষা করার একটাই উপায়— তাকে নৈতিকতা দিয়ে পূর্ণ করা, মানুষ দিয়ে অর্থবহ করা, এবং বিবেক দিয়ে পরিচালিত করা।

রহমান মৃধা
লেখক ও গবেষক, সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন
rahman.mridha@gmail.com

শেয়ার করুন:-
পুরো সংবাদটি পড়ুন

মত দ্বিমত

খাদ্য, নৈতিকতা ও নেতৃত্ব: জাতিকে আলোর পথে নিতে যাঁরা নিঃশব্দে কাজ করছেন

Published

on

বিএসসি

সুইডিশ ভাষায় কিছু শব্দ রয়েছে যেগুলোর মধ্যে এক ধরনের অন্তর্নিহিত শক্তি ও গভীর তাৎপর্য লুকিয়ে থাকে। এমনই একটি শব্দ ‘livsmedel’—অর্থাৎ ‘জীবনের উপকরণ’। শব্দটি শুধু খাদ্য বোঝায় না, বোঝায় এমন কিছু যা আমাদের পুষ্টি দেয়, শক্তি জোগায়, এবং মানুষ হিসেবে বেঁচে থাকার সামর্থ্য গড়ে তোলে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, আজকের বাজারে আমরা যে খাদ্য কিনছি—তা কি সত্যিই জীবনের উপকরণ? নাকি সেগুলো এমন কিছু, যা ধীরে ধীরে আমাদের ঠেলে দিচ্ছে রোগব্যাধি, ক্লান্তি, নির্ভরশীলতা আর নিঃশব্দ বিষক্রিয়ার দিকে?

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

আমরা প্রায়ই বলি, সুইডেন এমন একটি দেশ যেখানে গুণমান (quality) পরিমাণের (quantity) চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। ‘লগোম’—অর্থাৎ পরিমিতিবোধ—এখানে একপ্রকার সাংস্কৃতিক বিশ্বাস। কিন্তু বাস্তবে, খাদ্যের ক্ষেত্রে আমরা এমন এক বৈশ্বিক ব্যবস্থার অংশ হয়ে পড়েছি, যেখানে ‘লগোম’-এর জায়গা দখল করে নিয়েছে—‘যত সস্তা সম্ভব’, ‘যত দীর্ঘ সময় সংরক্ষণযোগ্য’, এবং ‘শিল্পের সুবিধার জন্য যতটা সম্ভব প্রক্রিয়াজাত’ এই নীতিগুলো।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

আজ আমরা সুইডেনে বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে যে খাবার আমদানি করছি, তা দেখতে যতই ঝকঝকে হোক না কেন, তার পুষ্টিমান প্রায়শই শূন্য। এসব খাবারে থাকে সংরক্ষণের রাসায়নিক, কৃত্রিম রং, স্বাদ বাড়ানোর উপাদান, ফিলার—আরও কত কী! এই তালিকা শুধু দীর্ঘ নয়, দিনে দিনে আরও দীর্ঘতর হচ্ছে। শিল্পোন্নত দেশ হওয়া সত্ত্বেও সুইডেন কৃষিক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তনের উদ্যোগ নিয়েছে। তারা বলছে—livsmedel, এই শব্দটির প্রকৃত মর্যাদা আমাদের ফিরিয়ে আনতেই হবে।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

অথচ বাংলাদেশের মতো দেশে এখনো এমন কোনো সুদূরপ্রসারী উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না, যা দেশের মানুষের মৌলিক অধিকার—‘ভেজালমুক্ত ভাতে-মাছে বাঙালির বাঙালিত্ব’—পুনরুদ্ধারে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। আমাদের নিজেদের জিজ্ঞেস করতে হবে—আমরা কী চাই? এমন খাদ্য যা সত্যিকার অর্থে আমাদের বাঁচিয়ে রাখে, নাকি এমন কিছু, যা ধীরে ধীরে আমাদের ভেতর থেকে ভেঙে দেয়?

এখানেই আসে স্বনির্ভরতার প্রসঙ্গ। আমাদের সাহস করে বলতে হবে—নিজের খাদ্য নিজেই উৎপাদন করতে না পারলে, স্বাধীনতা অর্থহীন। মহামারির সময় আমরা এক ঝলক দেখেছিলাম—যখন বিশ্বব্যাপী সরবরাহব্যবস্থা ভেঙে পড়ে, তখন কীভাবে খাদ্যনিরাপত্তা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ে।

আজকের পৃথিবীতে, যেখানে যুদ্ধ, জলবায়ু পরিবর্তন এবং ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা ক্রমেই বাড়ছে, সেখানে নিজের খাদ্য নিজে উৎপাদনের সক্ষমতা শুধু যুক্তিসঙ্গত নয়—জীবনের জন্য অপরিহার্য। আমাদের দরকার এমন খাবার যা শুধু পেট ভরে না, আমাদের বিশ্বাস, স্বাস্থ্য ও মর্যাদাও রক্ষা করে। আমাদের দরকার নিরাপদ খাবার। প্রকৃত খাবার। এমন খাবার, যার উৎস আমরা জানি—আর যেটি কেবল আহার নয়, এক ধরনের আশ্বাস।

আমি সুদূর প্রবাসে বসে যখন এ রকম একজন মাটি-কেন্দ্রিক, বিজ্ঞানমনস্ক, দেশপ্রেমিক মানুষের কর্মযজ্ঞ দেখি, তখন এক প্রশ্ন আমাকে তাড়া করে ফেরে—দেশের মানুষ কেন এমন একজন সম্পদকে চিনতে ব্যর্থ হচ্ছে? কেন এমন একজন দূরদর্শী কৃষিবিজ্ঞানীর আলোর রেখা আমরা জাতীয় নীতিতে পরিণত করতে পারছি না?

খাদ্যই উন্নয়নের মূল: কৃষকের পাশে ড. আলী আফজাল এবং একটি জাতির কৃতজ্ঞতা

যেহেতু জীবন ধারণের সবকিছুই শুরু হয় খাদ্য দিয়ে। খাদ্য শুধু আমাদের শরীরের জ্বালানি নয়—এটি মনের বিকাশ, সৃজনশীলতা এবং উন্নয়নের ভিত্তি। পুষ্টিকর ও নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত না হলে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কর্মক্ষমতা ও সমাজব্যবস্থার ভিত্তি ভেঙে পড়ে। একজন রাজনীতিবিদ হোন বা প্রকৌশলী, শিক্ষক হোন বা সেনা সদস্য—সবার অস্তিত্বের পেছনে নির্ভরতা এক জায়গাতেই খাদ্য।

কিন্তু যে মানুষগুলো প্রতিদিন আমাদের এই খাদ্যের নিশ্চয়তা দেন—কৃষক, খামারী, মৎস্যজীবী ও গ্রামীণ পরিশ্রমজীবী জনগোষ্ঠী—তাঁদের অবদান আজও সমাজ ও রাষ্ট্রে ন্যায্য সম্মান পায় না। বরং অবহেলা, অনিশ্চয়তা ও মধ্যস্বত্বভোগীদের চাপে তাঁরা পিছিয়ে থাকেন। এই বাস্তবতায় একজন মানুষ দীর্ঘদিন ধরে নিরবে, কিন্তু দৃঢ়তার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি মাগুরার সন্তান, আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত কৃষিবিজ্ঞানী, সফল উদ্যোক্তা এবং দূরদর্শী সমাজগঠক—ড. মো. আলী আফজাল।

একজন কৃষকের সন্তান থেকে কৃষি-নেতা হওয়ার গল্প

১৯৬৭ সালের ২২ মার্চ মাগুরার মোহাম্মদপুর উপজেলার বালিদিয়া গ্রামে জন্ম নেওয়া ড. আফজালের শিকড় পল্লির মাটিতে। কৃষকের সন্তান হিসেবে তিনি জানতেন, কৃষির প্রকৃত সমস্যা কী, এবং সেগুলোর সমাধান কোন পথে সম্ভব। শিক্ষা ও গবেষণায় অসাধারণ কৃতিত্ব অর্জনের পর তিনি শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি সম্পন্ন করেন এবং ২০ বছর ধরে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটে (BARI) কাজ করেন প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা হিসেবে। এ সময় তিনি ২২টি নতুন ফসল উদ্ভাবন করেন এবং ৮২টিরও বেশি গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশ করেন। কিন্তু তিনি শুধু গবেষণাগারে সীমাবদ্ধ থাকেননি। গবেষণাকে মাঠে, কৃষকের হাতে, অর্থনৈতিক বাস্তবতায় রূপ দিতে চেয়েছিলেন। সেই চিন্তা থেকেই ২০০৯ সালে মাত্র ৩০ হাজার টাকা নিয়ে ৫ জন সহকর্মীকে নিয়ে প্রতিষ্ঠা করেন Krishibid Group Bangladesh (KGB)—যা আজ দেশের অন্যতম বৃহৎ কৃষি-ভিত্তিক শিল্পগোষ্ঠীতে পরিণত হয়েছে।

এক ছাতার নিচে কৃষির পূর্ণ সমাধান

বর্তমানে KGB-এর অধীনে ৩৩টি কোম্পানি রয়েছে যা মাটি ও বীজের গুণমান, সার, কীটনাশক, আধুনিক যন্ত্রপাতি, পশুখাদ্য, দুগ্ধজাত পণ্য, মাছ-মাংস উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বাজারজাতকরণের সাথে যুক্ত। কৃষকদের জন্য এটি একটি বাস্তব “ওয়ান-স্টপ সার্ভিস” ব্যবস্থা, যা তাদের শুধু প্রযুক্তিগত সহায়তা নয়—আর্থিক সুরক্ষা ও আত্মবিশ্বাসও দিচ্ছে।

KGB-তে বর্তমানে ৬৫০০ জন বিনিয়োগকারী রয়েছেন, যাঁদের অনেকেই সরাসরি কৃষক বা কৃষক পরিবারের সদস্য। গত দুই দশকে এই বিনিয়োগকারীদের গড় বার্ষিক রিটার্ন ১৯%, যেখানে মোট Tk ২৫০ কোটি বিনিয়োগের বিপরীতে Tk ৩১৫ কোটি ফেরত দেওয়া হয়েছে—এটাই প্রমাণ করে, এই উদ্যোগ শুধুমাত্র ব্যবসায়িক নয়, এটি একটি সামাজিক বিনিয়োগ ও কৃষক-ক্ষমতায়নের মডেল।

স্থানীয় উদ্যোগ, বৈশ্বিক দৃষ্টিভঙ্গি

ড. আফজাল শুধু বাংলাদেশেই নয়, আন্তর্জাতিক পর্যায়েও কৃষি গবেষণা ও উন্নয়নে কাজ করেছেন। তিনি তাইওয়ান, অস্ট্রেলিয়া ও সিরিয়া-তে কাজ করেছেন উন্নত ফসল উদ্ভাবন এবং খাদ্য নিরাপত্তা বিষয়ে, যা তাঁর দর্শনে এক বৈশ্বিক মাত্রা এনেছে। তিনি বুঝতে পেরেছেন—যে জাতি খাদ্যে স্বনির্ভর নয়, সে কখনো স্বাধীন নয়।

রাজনীতির আহ্বান: নীতির মানুষকে নেতৃত্বে চাই

যদিও ড. আলী আফজাল এখনো সরাসরি রাজনীতিতে যুক্ত হননি, কিন্তু আমাদের সমাজে আজ এমন নেতৃত্বের অভাব গভীরভাবে অনুভূত হয়—যেখানে জ্ঞান, সততা ও জনসেবার মানসিকতা একত্রে থাকে। তাঁর মতো মানুষদের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত করা মানে হলো নীতিনির্ভর উন্নয়ন নিশ্চিত করা। আমরা চাই, আগামী দিনে তিনি বাংলাদেশের কৃষিনীতি নির্মাণ ও বাস্তবায়নে সক্রিয়ভাবে নেতৃত্ব দিন—এমনকি ভবিষ্যতের একজন যোগ্য ও জনমুখী কৃষিমন্ত্রী হিসেবেও তাঁর অংশগ্রহণ দেশ ও জাতির জন্য আশীর্বাদ হবে।

একজন মানুষের পেছনে একটি জাতির স্বপ্ন

ড. আফজাল আজ শুধুমাত্র একজন সফল ব্যক্তি নন, তিনি একটি দর্শনের প্রতীক—যে দর্শন বলে: “কৃষক যদি বাঁচে, দেশ বাঁচে। খাদ্য যদি নিরাপদ হয়, জাতি সুস্থ থাকে।” আমি সুদূর প্রবাসে বসে যখন এ রকম একজন মাটি-কেন্দ্রিক, বিজ্ঞানমনস্ক, দেশপ্রেমিক মানুষের কর্মযজ্ঞ দেখি, তখন এক প্রশ্ন আমাকে তাড়া করে ফেরে—দেশের মানুষ কেন এমন একজন সম্পদকে চিনতে ব্যর্থ হচ্ছে? কেন এমন একজন দূরদর্শী কৃষিবিজ্ঞানীর আলোর রেখা আমরা জাতীয় নীতিতে পরিণত করতে পারছি না?

আমি বহু বছর বিশ্বের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছি। এখন, সুইডেনের মতো শীতল আবহাওয়ায়, কঠিন বাস্তবতার মধ্যেও কৃষিকাজে নিজেকে যুক্ত রেখেছি—শুধু একটি বার্তা ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য:
“খাদ্য কেবল পেট ভরানোর মাধ্যম নয়; এটি সভ্যতা ও নৈতিকতার বিষয়।” নিরাপদ খাদ্য মানে সুস্থ জাতি, আর ভেজাল মানে বিপর্যয়।

বাংলাদেশে ড. আলী আফজালের মতো একজন বিজ্ঞানী ও সংগঠক থাকা সত্ত্বেও, আমরা আজও কেন নিরাপদ ও ভেজালমুক্ত খাদ্যের জন্য হাহাকার করছি? কেন এখনও কৃষকের ঘাম ও পরিশ্রম যথাযথ সম্মান পাচ্ছে না? কেন জাতি তার প্রকৃত নায়ক ও পথপ্রদর্শককে চিনতে এত বিলম্ব করছে? এই প্রশ্নগুলো শুধুমাত্র প্রশ্ন নয়; এগুলো সময়ের কাছে আমাদের দায়। জবাব চাই, জাগরণ চাই। জাগো বাংলাদেশ, জাগো!

আমি ১৯৮৬ সাল থেকে আমার বড় ভাই প্রফেসর ড. মান্নান মৃধাকে দেখছি—তিনি কেবল একজন শিক্ষাবিদ নন, বরং নিবেদিত সমাজসেবক ও গবেষক, যিনি দেশের শিক্ষা ও গ্রামীণ উন্নয়নে অগ্রদূত। তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে তিনি দেশের গ্রামীণ কৃষকদের পাশে থেকে মাঠ পর্যায়ের গবেষণামূলক কাজ করে যাচ্ছেন। তার নেতৃত্বে এলাকার প্রথম গবাদি ফার্ম গড়ে উঠেছে, মাছচাষসহ বিভিন্ন কৃষি প্রযুক্তির উন্নয়ন হয়েছে। তার গবেষণার মূল লক্ষ্য সঠিক চাষাবাদ পদ্ধতি প্রচলন ও কৃষকের জীবনমান উন্নয়ন।

তাঁর কাজের কেন্দ্রবিন্দু শুধুমাত্র কৃষি নয়; তিনি সমাজের প্রান্তিক শ্রেণীর ক্ষমতায়নে দৃঢ় বিশ্বাসী। এলাকার শিশুশিক্ষা থেকে শুরু করে সকল স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও প্রান্তিক কৃষকদের টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে তিনি নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন। অসংখ্য শিক্ষার্থী ও গবেষকের তিনি পথপ্রদর্শক, যারা দেশের কৃষি ও গ্রামীণ উন্নয়নে অবদান রাখছেন।

একই লক্ষ্য নিয়ে তিনি আজও নিরলস পরিশ্রম করছেন—বাংলাদেশী মানুষের জীবনে মৌলিক পরিবর্তন আনা, তাদের ভাগ্যে নতুন আলো জ্বালানো, এবং একটি উন্নত, মানবিক ও সম্মানজনক সমাজ গড়ে তোলা, যেখানে প্রতিটি কৃষক ও গ্রামীণ জনগণ সুশিক্ষিত, স্বাবলম্বী ও মর্যাদাবান জীবন যাপন করবে।

আমরা ড. মান্নান মৃধা ও ড. আলী আফজালের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা জানাই। প্রার্থনা করি তারা দীর্ঘদিন সুস্থ ও সক্রিয় থাকুন, কৃষক ও দেশের মানুষের পাশে থেকে জাতিকে আলোর পথে নিয়ে যান। যেন বাংলাদেশের প্রতিটি শিশুর মুখে নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাদ্যের হাসি ফুটে ওঠে—এটাই আমাদের সম্মিলিত আশা ও স্বপ্ন।

রহমান মৃধা
গবেষক, লেখক ও সাবেক পরিচালক, ফাইজার সুইডেন
Rahman.Mridha@gmail.com

কাফি

শেয়ার করুন:-
পুরো সংবাদটি পড়ুন

পুঁজিবাজারের সর্বশেষ

বিএসসি বিএসসি
পুঁজিবাজার8 minutes ago

লেনদেনের শীর্ষে বিএসসি

সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেনের শীর্ষে উঠে এসেছে বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন (বিএসসি)। ডিএসই সূত্রে এই তথ্য জানা...

বিএসসি বিএসসি
পুঁজিবাজার28 minutes ago

সূচক বেড়েছে ৬১ পয়েন্ট, কমেছে লেনদেন

সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) মূল্যসূচকের ইতিবাচক প্রবনতায় লেনদেন শেষ হয়েছে। এদিন ডিএসইর প্রধান সূচক...

বিএসসি বিএসসি
পুঁজিবাজার49 minutes ago

এশিয়া ইন্স্যুরেন্সের পর্ষদ সভার তারিখ নির্ধারণ

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি এশিয়া ইন্স্যুরেন্স পিএলসি পর্ষদ সভার তারিখ ঘোষণা করেছে। আগামী ২৬ জুলাই দুপুর ২টায় কোম্পানিটির পর্ষদ সভা অনুষ্ঠিত...

বিএসসি বিএসসি
পুঁজিবাজার54 minutes ago

কর্ণফুলী ইন্স্যুরেন্সের পর্ষদ সভার তারিখ নির্ধারণ

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি কর্ণফুলী ইন্স্যুরেন্স পিএলসি পর্ষদ সভার তারিখ ঘোষণা করেছে। আগামী ২৭ জুলাই বিকাল সাড়ে ৪টায় কোম্পানিটির পর্ষদ সভা...

বিএসসি বিএসসি
পুঁজিবাজার1 hour ago

সেন্ট্রাল ইন্স্যুরেন্সের পর্ষদ সভার তারিখ ঘোষণা

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি সেন্ট্রাল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড পর্ষদ সভার তারিখ ঘোষণা করেছে। আগামী ২৬ জুলাই বিকাল ৩টায় কোম্পানিটির পর্ষদ সভা...

বিএসসি বিএসসি
পুঁজিবাজার2 hours ago

পর্ষদ সভার তারিখ জানালো হাইডেলবার্গ ম্যাটেরিয়ালস

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি হাইডেলবার্গ ম্যাটেরিয়ালস বাংলাদেশ পিএলসি পর্ষদ সভার তারিখ ঘোষণা করেছে। আগামী ২৪ জুলাই দুপুর ২টা ৪৫মিনিটে কোম্পানিটির পর্ষদ...

বিএসসি বিএসসি
পুঁজিবাজার2 hours ago

বোনাস বিওতে পাঠিয়েছে যমুনা ব্যাংক

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি যমুনা ব্যাংক পিএলসি গত ৩১ ডিসেম্বর,২০২৪ তারিখে সমাপ্ত হিসাববছরের জন্য ঘোষিত লভ্যাংশের বোনাস শেয়ার বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাবে...

Advertisement
AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

সোশ্যাল মিডিয়া

তারিখ অনুযায়ী সংবাদ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
 
১০১১
১৩১৫১৬১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭৩০৩১  
বিএসসি
পুঁজিবাজার8 minutes ago

লেনদেনের শীর্ষে বিএসসি

বিএসসি
পুঁজিবাজার28 minutes ago

সূচক বেড়েছে ৬১ পয়েন্ট, কমেছে লেনদেন

বিএসসি
পুঁজিবাজার49 minutes ago

এশিয়া ইন্স্যুরেন্সের পর্ষদ সভার তারিখ নির্ধারণ

বিএসসি
পুঁজিবাজার54 minutes ago

কর্ণফুলী ইন্স্যুরেন্সের পর্ষদ সভার তারিখ নির্ধারণ

বিএসসি
অর্থনীতি1 hour ago

বাণিজ্যঘাটতি কমাতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে গম আমদানির চুক্তি সই

বিএসসি
অর্থনীতি1 hour ago

বিনিয়োগ সম্ভাবনা প্রসারে চীন সফরে বাংলাদেশের প্রতিনিধি দল

বিএসসি
পুঁজিবাজার1 hour ago

সেন্ট্রাল ইন্স্যুরেন্সের পর্ষদ সভার তারিখ ঘোষণা

বিএসসি
পুঁজিবাজার2 hours ago

পর্ষদ সভার তারিখ জানালো হাইডেলবার্গ ম্যাটেরিয়ালস

বিএসসি
পুঁজিবাজার2 hours ago

বোনাস বিওতে পাঠিয়েছে যমুনা ব্যাংক

বিএসসি
পুঁজিবাজার2 hours ago

প্রগতি লাইফ ইন্স্যুরেন্সের পর্ষদ সভার তারিখ ঘোষণা

বিএসসি
পুঁজিবাজার8 minutes ago

লেনদেনের শীর্ষে বিএসসি

বিএসসি
পুঁজিবাজার28 minutes ago

সূচক বেড়েছে ৬১ পয়েন্ট, কমেছে লেনদেন

বিএসসি
পুঁজিবাজার49 minutes ago

এশিয়া ইন্স্যুরেন্সের পর্ষদ সভার তারিখ নির্ধারণ

বিএসসি
পুঁজিবাজার54 minutes ago

কর্ণফুলী ইন্স্যুরেন্সের পর্ষদ সভার তারিখ নির্ধারণ

বিএসসি
অর্থনীতি1 hour ago

বাণিজ্যঘাটতি কমাতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে গম আমদানির চুক্তি সই

বিএসসি
অর্থনীতি1 hour ago

বিনিয়োগ সম্ভাবনা প্রসারে চীন সফরে বাংলাদেশের প্রতিনিধি দল

বিএসসি
পুঁজিবাজার1 hour ago

সেন্ট্রাল ইন্স্যুরেন্সের পর্ষদ সভার তারিখ ঘোষণা

বিএসসি
পুঁজিবাজার2 hours ago

পর্ষদ সভার তারিখ জানালো হাইডেলবার্গ ম্যাটেরিয়ালস

বিএসসি
পুঁজিবাজার2 hours ago

বোনাস বিওতে পাঠিয়েছে যমুনা ব্যাংক

বিএসসি
পুঁজিবাজার2 hours ago

প্রগতি লাইফ ইন্স্যুরেন্সের পর্ষদ সভার তারিখ ঘোষণা

বিএসসি
পুঁজিবাজার8 minutes ago

লেনদেনের শীর্ষে বিএসসি

বিএসসি
পুঁজিবাজার28 minutes ago

সূচক বেড়েছে ৬১ পয়েন্ট, কমেছে লেনদেন

বিএসসি
পুঁজিবাজার49 minutes ago

এশিয়া ইন্স্যুরেন্সের পর্ষদ সভার তারিখ নির্ধারণ

বিএসসি
পুঁজিবাজার54 minutes ago

কর্ণফুলী ইন্স্যুরেন্সের পর্ষদ সভার তারিখ নির্ধারণ

বিএসসি
অর্থনীতি1 hour ago

বাণিজ্যঘাটতি কমাতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে গম আমদানির চুক্তি সই

বিএসসি
অর্থনীতি1 hour ago

বিনিয়োগ সম্ভাবনা প্রসারে চীন সফরে বাংলাদেশের প্রতিনিধি দল

বিএসসি
পুঁজিবাজার1 hour ago

সেন্ট্রাল ইন্স্যুরেন্সের পর্ষদ সভার তারিখ ঘোষণা

বিএসসি
পুঁজিবাজার2 hours ago

পর্ষদ সভার তারিখ জানালো হাইডেলবার্গ ম্যাটেরিয়ালস

বিএসসি
পুঁজিবাজার2 hours ago

বোনাস বিওতে পাঠিয়েছে যমুনা ব্যাংক

বিএসসি
পুঁজিবাজার2 hours ago

প্রগতি লাইফ ইন্স্যুরেন্সের পর্ষদ সভার তারিখ ঘোষণা